এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ৮ || নুর নাফিসা খুশি || SA Alhaj

এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ৮
নুর নাফিসা খুশি

ও হে শ্যাম তোমারে আমি
নয়নে নয়নে রাখিবো
অন্য কেউরে না আমি চাইতে দেবো ।
“শ্যামটা কে তোর?”
মাহিরের কথা শুনে পিছনে ঘুরে তাকায় খুশি। সকাল সকাল উঠে ছাদে এসে ফুল গাছের সামনে দাঁড়িয়ে গান গাইছিল খুশি।তখনি পিছন থেকে মাহির এসে এই প্রশ্ন করে।
” আছে,তোমাকে বলবো কেন?”(খুশি)
“মানে কি! তোর বিএফ আছে?”(রেগে জিজ্ঞেস করে মাহির)
” না থাকার কি আছে ভাইয়া।”
“খুশি!”(চিৎকার করে)

” আআআ ভাইয়া কান টা গেলো আমার।আমি তো তোমার কাছেই আছি।এতো জোরে ডাকতে হয়?”(কানে হাত দিয়ে বলে খুশি)
মাহির নিজের রাগ কন্ট্রল করার চেষ্টা করছে কিন্তু খুশির কথা শুনে তা আর পারছে না। মাহিরের মন চাইছে খুশিকে এখনই দুইটা থাপ্পড় মেরে দিতে। মাহির তবুও নিজের রাগ কন্ট্রল করে বলে,
“তো বিয়ে কবে করছিস? বয়স তো আর কম হলো না এবার বিয়ে টা করেই ফেল।”(দাঁতে দাঁত চেপে বলে মাহির)
“এ কি বলো ভাইয়া,আমার বড় ভাইয়া থাকতে আমি আগে বিয়ে করতে পারি?”(মুচকি হেসে বলে খুশি)
“কে তোর বড় ভাইয়া?এক্স

” ওমা!কে আবার? তুমি,তোমারও তো বয়স কম হলো না ভাইয়া,তুমি কেন বিয়ে করছো না হুম? কাউকে ভালো-টালো বাসো নাকি ভাইয়া?”
“হ্যাঁ ছোট বোন আমি তোর বড় ভাইয়া লাগি।আর হ্যাঁ তোর ভাবি আছে,আমরা কিছু দিনের মধ্যে বিয়ে করবো।” (রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বলে চলে গেলো মাহির সেখান থেকে)
খুশি মাহিরের যাওয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো। বুঝতে পারছে না কি বললো মাহির। খুশি নিজে নিজেই বলে।
” সত্যি প্রেমিকা আছে নাকি বজ্জাতটার?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“ওই ব্যাটা তোকে না বলেছিলাম খুশির দিকে খেয়াল রাখবি,খবর রাখবি।তো খুশির বিএফ এলো কই থেকে বল?”(প্রচন্ড রেগে ফোনে কাকে যেনো বলে কথা গুলো মাহির)
” ভাই আমি ঠিক ভাবেই খবর রেখেছি।এমন কি কোন ছেলে খুশির কাছেই আসতে দেইনি।”(ফোনের ওই পাশ থেকে)
“আব্বে শালা খুশি নিজে আমাকে বলেছে আজ,ওর বিএফ আছে।”
” হয়তো মিথ্যা বলেছে ভাই।আমি যতদূর জানি খুশির বিএফ নেই।”
“আমি যদি জানতে পারি খুশির সত্যি বিএফ আছে তো তোর খবর করে ছাড়বো অর্জুন।”(বলেই ফোন কেটে দিল মাহির)
ওই পাস থেকে অর্জুন নিজে নিজে বলে।

” কি ঝামেলায় পরলাম রে বাবা।এই কোম হতচ্ছারা খুশির বিএফ বের হলো। সত্যি সত্যি যদি খুশির বিএফ থাকে? আল্লাহ,মাহির ভাই তো আমার খবর করে ছাড়বে। আল্লাহ রক্ষা করো আমাকে।”
মাহির খুশির সঙ্গে যোগাযোগ না রাখলেও বাকি সবার সঙ্গে ঠিকই যোগাযোগ রেখেছিলো। অর্জুনকে মাহির যাওয়ার আগে সব কিছু বুঝিয়ে দেয় তাকে কি কি করতে হবে। খুশির সব খবর অর্জুনই মাহির কে দিতো। অর্জুন অনেক বার খুশির ছবি দিতে চেয়েছিল মাহিরকে কিন্তু মাহিরের একটাই কথা একেবারে দেখবে বড় হয়ে কেমন হয়েছে পুচকিটা। অর্জুন খুশিকে স্কুল নিয়ে যাওয়া থেকে বাড়ি নিয়ে আসা করতো।কখনো কোন ছেলের সঙ্গে মিশতে দেয়নি। একদিন এক ছেলে খুশি কে প্রোপজ করেছিল,অর্জুন তাকে কি মারটাই না মেরেছিল। মাহিরের ছোট ভাই আর ভালো ফ্রেন্ড অর্জুন।

কলেজে অথৈ একটা টেবিলে বসে পা দুলাচ্ছে আর কানে হেডফোন গুজে গান শুনছে।আজ অথৈ অনেক আগেই কলেজে এসে বসে আছে,খুশি এখনো আসে নি।অনেক বিরক্ত লাগছিলো অথৈ এর।তাই কানে হেডফোন গুজে গান শুনতে লেগেছে। অথৈ একবার গান শুনতে লাগলে কোনদিকে ধ্যান থাকে না তার। গান অনেক ভালোবাসে অথৈ। পিছন থেকে সেই কখন থেকে কেউ একজন তাকে ডেকেই যাচ্ছে, তার দিকে কোন খেয়াল নেই অথৈর।সে মনের সুখে গান শুনছে। হঠাৎ খেয়াল করলো অথৈ আর কোন গান শুনতে পাচ্ছে না।খুব বিরক্তি নিয়ে কানে হাত দিল অথৈ।কিন্তু একি! কানে তো হেডফোন নেই। অথৈ চমকে উঠে দাঁড়িয়ে চারিদিকে তাকিয়ে দেখতে লাগে। যখনই পিছনে তাকায় অথৈ ভুত দেখার মতো চমকে দু পা পিছিয়ে যায়।কারণ সামনে তার জম,রোদ দাঁড়িয়ে আছে। অথৈ বলে,

“স্যার আপনি!কিছু দরকার ছিলো নাকি?”(জোর করে হেসে বলে)
“ইউ স্টুপিড গার্ল!এতোক্ষন ধরে ডেকেই যাচ্ছি, শুনতে পাচ্ছিলে না?”
“সরি স্যার,আমি আসলে…” (অথৈ কে থাকিয়ে)
” থাক আর বলতে হবে না,তোমার সো কলড এক্সকিউজ। আমার সঙ্গে এসো,ফাস্ট। ”
“কোথায় স্যার?”
” একটা প্রশ্নও শুনতে চাই না।তাড়াতাড়ি আসো।”
বলেই হাঁটা ধরলো রোদ। অথৈ ও পিছু পিছু গেলো। রোদ অথৈকে তার অফিস রুমে নিয়ে গিয়ে একটা খুব বড় না হলেও ছোট খাটো মিনি লাইব্রেরির সামনে দাঁড়া করালো। অথৈ বলে,
“স্যার এগুলা কি?”

” তোমার চশমাটা ভালো করে পরিস্কার করে আবার দেখো।”(নিজের চেয়ারে বসে বলে রোদ)
“স্যার আমি সব দেখতে পাচ্ছি।কিন্তু আপনি আমাকে এই এলোমেলো লাইব্রেরির কাছে কেন নিয়ে এলেন?”
” কারণ তুমি লাইব্রেরিটা পরিস্কার করে গুছিয়ে দিবে তাই। ”
“মানে কি স্যার!আমি কি আপনার পিয়ন নাকি যে এসব করবো? আমি পারবো না।”
“আমার পিয়ন আজ আসেনি আর তুমি আমার স্টুডেন্ট।আমি যা বলবো তাই করতে হবে তোমাকে।”
“কিন্তু আমিই কেন?অন্য কাউকে নিয়ে আসুন।”

“আমার একটা স্টুডেন্ট লাগতো আর তোমার থেকে ইউজলেস স্টুডেন্ট তো একটাও নেই তাই তোমাকে এনেছি। তোমার একটু কাজও শিখা হবে।”
রোদের কথায় অথৈ রেগে আগুন।কিন্তু কিছুই বলতে পারছে না। রাগটা নিজের ভিতরে রেখেই কাজে লেগে পরে অথৈ।কারণ এই রোদের সঙ্গে কথায় পারবে না সে।রোদ মুচকি মুচকি হাসছে অথৈর কাজ করা দেখে।

এই দিকে খুশি আজ মাহিরের পিছু নিয়েছে।মাহিরের সাথে কলেজ যেয়েই ছাড়বে আজ কোনোমতেই গাড়ি থেকে নামবে না। আজও খালামনির কথায় খুশি কে নিয়ে এসেছে নিজের গাড়িতে মাহির। কিন্তু মাঝপথে সেই আগের মতো খুশিকে নামানোর চেষ্টা করছে মাহির।কিন্তু খুশি তো নাছড়বান্দা।কোনোতেই নামবে না গাড়ি থেকে। মাহির এমনিতেই খুশির উপর অনেক রেগে আছে তার উপরে খুশির এই জেদ।কখন না থাপ্পর পরে গালে।
“না না না, আমি গাড়ি থেকে নামব না।তুমি নেমে যাও এতো প্রবলেম থাকলে। আজ তো আমি এই গাড়িতে কলেজ যেয়েই ছাড়বো।”(গাড়ির সিট অনেক জোরে জড়িয়ে ধরে আছে খুশি যাতে মাহির জোর করে নামাতে না পারে তাই।)
খুশির এই বাচ্চামি দেখে মাহিরের হাসিও পাচ্ছে আবার রাগও উঠছে।কিন্তু এটা তো মাহির হাসি কে সাইডে রেখে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে খুশির দিকে।

এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ৭

“দেখো ভাইয়া এমন রাক্ষসের মতো আমার দিকে তাকিয়ে থেকে কোন লাভ নেই। আমি যাবোই তোমার সঙ্গে। ”
মাহির আর কথা বাড়ালো না।অনেক জোরে গাড়ি চালাতে লাগলো। খুশি এবার ভালো হয়ে বসে সিটে। কিন্তু মাহিরের এতো জোরে গাড়ি চালানো পছন্দ হলো না খুশির। অনেক ভয় করছে তার।এতো জোরে কেউ গাড়ি চালায় নাকি।
“ভাইয়া আস্তে চালাও না। এতো জোরে গাড়ি চালালে এক্সিডেন্ট হবে।আমার ভয় করছে,ভাইয়া প্লিজ।”
” কেন? এখন কিসের ভয়? খুব শখ না!আমার গাড়িতে যাওয়ার?এখন শখ মিটা।”

খুশি সত্যি অনেক ভয় পাচ্ছে।খুশি আর না পেরে মাহিরকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। খুশি এমন করে জরিয়ে ধরাতে মাহির চমকে উঠে।শরীরে যেনো বিদ্যুৎ খেলে গেলো মাহিরের।গাড়ির স্পিডও কমিয়ে দেয় মাহির। কিছুক্ষণ পর খুশি বুঝতে পারলো গাড়ি আর চলছে না।আস্তে আস্তে মাথা তুলে দেখে কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে গাড়ি। আর খুশি যখন দেখল মাহিরের বুকে মাথা রেখে সে তখনি তাড়াতাড়ি উঠে যায় খুশি।আর বলে,
“সরি ভাইয়া,আমি ভয় পেয়ে গেছিলাম তাই…”
“এখন থেকে আমার গাড়িতে আসবি না বা আমার সঙ্গেও না।”
বলেই চলে গেলো মাহির।খুশি কিছুক্ষন কি যেনো ভেবে সেও চলে গেলো।

এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ৯