এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ৭ || নুর নাফিসা খুশি || SA Alhaj

এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ৭
নুর নাফিসা খুশি

[পার্ট_৬ এ আমি একটা ভুল করে ফেলেছি। সেটা হলো ১২ বছর আগে মাহিরের বয়স ছিলো ১৪ আর খুশির ৪। এখানে খুশির বয়স টা ৪ না ৮ হবে আমি ভুল করে ইংরেজি 8 দিয়ে ফেলছি। আরেকটা যায়গায় রাত 8 টা দেওয়া আছে ওখানেও ৮ হবে।রাত ৮ টায়। খুশির বয়স ৮ বছর আর মাহিরের ১৪। আমি খুব করে সরি এতো বড় মিসটেক করে ফেলেছি। পরের বার খেয়াল রাখবো।আর হ্যাঁ আরেকটা কথা আমার এই ভুলটা হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া আর কেউ কমেন্টে বলেননি আপনারা কি মন দিয়ে গল্প পড়েন না?]

রামপুরের ছোট একটা সরকারী হাসপাতালে বসে আছে সবাই। ডাক্তার খুশিকে দেখছে। মাহির খুশির এই অবস্থার জন্য নিজেকে দায় করে পাগলামি করছিলোম বাড়ির সবায় শান্ত করেছে মাহিরকে। কিছুক্ষন পরে ডাক্তার বেরিয়ে আসে।মাহির দৌড়ে ডাক্তারের কাছে গিয়ে বলে,
“ডাক্তার আঙ্কেল খুশি কেমন আছে?ঠিক আছে তো খুশি?”
“খুশি একদম ঠিক আছে বাবা।সামান্য মাথায় ব্যাথা পেয়েছে শুধু।গুরুতর আঘাত পায়নি।কিছুক্ষন পরে বাড়িতে নিয়ে যেতে পারবে।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

ডাক্তারের কথায় সবায় যেনো নিজের প্রান ফিরে পেল।খুশি যে তাদের চোখের মনি।কিছুক্ষন পরে খুশির সঙ্গে সবাই দেখা করলো কিন্তু মাহির করলো না। সে ভয় পাচ্ছে যদি খুশি তাকে ভুল বুঝে আরও বেশি ভয় পায় তাই।
মাথা নিচু করে সবার সামনে দারিয়ে আছে মাহির।অর্জুন বাড়ির সবাই কে বলে দিয়েছে মাহির ভাইয়া খুশি কে ধাক্কা দিয়ে সিড়ি থেকে ফেলে দিয়েছে।খুশির আম্মু ভীষন রেগে আছে। আগে থেকেই তিনি লক্ষ্য করেছিলেন মাহিরকে খুশির প্রতি একটু বেশি বাড়াবাড়ি করতে। মাহিরকে কিছু বলার সুযোগই দেওয়া হয়নি। খুশির আম্মু তাকে থাপ্পর বসিয়ে দিয়েছে। মাহিরা চুপ করে দেখেছে শুধু, নিজের ছেলের দোষ মনে করে। খুশির আম্মু বলে,

“তুমি আমার মেয়ের কাছ থেকে দূরে থাকবে মাহির। আমার মেয়ের ধারের কাছেও যেনো না দেখি তোমাকে। বড় আপা তোমার ছেলেকে বলে দাও আমার কথা যাতে মাথায় থাকে।আমি এখনই আমার মেয়েকে নিয়ে নিজের বাড়িতে চলে যাচ্ছি।”
কথা গুলো বলেই উপরে চলে যায় খুশির আম্মু।কারণ খুশি উপরে আছে।নিচে কি হলো না হলো কিছুই জানে না খুশি। মাহির একটা কথাও বলেনি, চুপ করে ছিলো।কারণ ভুল টা যে তারই।কিন্তু খুশি তার থেকে দূরে থাকবে এটা মাহির কোনোমতেই মেনে নিতে পারছে না। তবুও চুপ করে আছে। খুশির আম্মু খুশি কে কোলে করে নিচে নিয়ে আসে।খুশি ঘুমিয়ে আছে এখন।খুশির আম্মু খুশির আব্বুকে বলে,

” তুমি এখানে দাঁড়িয়ে কি করছো?চলোআমার সঙ্গে।”
খুশির আব্বু বলে,
“রেগে এমন করা টা ঠিক না মুনতাহা।আগে মাহিরের কথা তো শুনে নাও।ও কি সত্যিই খুশি কে ধাক্কা দিয়েছে কি না?”
“ও কি বলবে আর অর্জুন তো নিজেই দেখেছে”
“অর্জুন ছোট।কি দেখতে কি দেখেছে।আর সব সময় চোখের দেখা ঠিক হয় না।”
” তুমি যাবে কি না?”(রাগ নিয়ে বলে খুশির আম্মু)

আরিয়ান সাহেব (খুশির আব্বু?আর নিজের বউ এর মুখে কথা বললো না চলে যেতে লাগে। যাওয়ার আগে মাহিরের আম্মু আব্বুর কাছে মাফ চেয়ে নিলেন, তারা যাতে ভুল না বুঝে। মাহিরের আম্মুও মুচকি হেসে বলে সব ঠিক হয়ে যাবে। খুশির আব্বু আম্মু খুশিকে নিয়ে যখন চলে যায় মাহির বাধা দিতে যায় কিন্তু মাহিরা আটকে ফেলে। মাহির নিজের ভিতরের রাগ নিয়ে রুমে চলে যায়। ছোট থেকেই মুনতাহা অনেক রাগী ছিলো। দুই বোন মাহিরা,মুনতাহা।মাহিরা শান্ত প্রকৃতির মেয়ে হলেও মুনতাহা ছিল তার উলটো,রাগী। সবাই মুনতাহার রাগের সাথে পরিচিত। তাই মুনতাহার সিদ্ধান্তে কেউ বাধা দিল না। রাগ কমলে সে নিজেই আসবে খুশিকে নিয়ে আর বড় আপার কাছে ক্ষমাও চাইবে।

আজ ৫ দিন খুশিকে দেখতে পায়না মাহির। এই ৫ দিনে ৫ হাজার বার মনে হয় খুশির বাড়ির কাছে গেছে। কিন্তু দেখা করার কোনো রাস্তা পায়নি। নিজেকে কেমন পাগল পাগল মনে হচ্ছে মাহিরের। খুশির সঙ্গে দেখা যে করেই হোক করতে হবে তাকে। খুশি এখন অনেকটাই সুস্থ হয়ে গেছে। কিন্তু খুশির আম্মু বাড়ি থেকে বেরোতে দেয়না খুশিকে।
সকাল ১০ টা বাজে, খুশির আম্মু বাইরে বেরিয়েছে কিছু কেনা কাটা করার জন্য। সেই সুযোগে বাড়িতে ঢুকে মাহির। কিন্তু বাড়িতে ঢুকেই সামনে পরে খুশির আব্বু।কিন্তু খুশির আব্বু কিছু না বলে শুধু বলে,
“খুশি উপরের রুমে আছে। তুমি যাও।”

মাহির খুশিতে গদগদ হয়ে দৌড়ে খুশির রুমে যায়। কিন্তু ভিতরে ঢুকার সাহস পাচ্ছে না যদি খুশি তাকে ভয় পায়। আবার চলে যেতে চায় তখন। মাহির এসব ভেবে আবার চলে যেতে নিচ্ছিল তখনি রুমের ভিতর থেকে খুশি বলে,
“আরে ভাইয়া তুই চলে যাচ্ছিস কেন?আমার সাথে দেখা করবি না?”
মাহির এক বুক খুশি নিয়ে খুশির দিকে এগিয়ে যায়।
“জানিস ভাইয়া আমি না পরে গেছিলাম। আমার মাথায় অনেক ব্যাথা লেগেছে। এই দেখ,এখানে ফেটেও গেছিলো। সবাই আমাকে দেখতে এসেছিলো। তুই কেন আসিস নি ভাইয়া?”
খুশির কথা শুনে যা বুঝলো খুশি সিড়ি থেকে কি করে পরেছে তা কিছুই মনে নেই। মাহির বলে,

” এই তো এসেছি এখন।কেমন আছিস পুচকি?”
“এখন ভালো আছি।তবে আম্মু আমাকে খেলতে দিচ্ছে না।বাইরেও যেতে দিচ্ছে না।তাই ভাল নেই আমি।”(গাল ফুলিয়ে বলে খুশি)
” তুই আমার সাথে যাবি? ”
“কোথায়?
” ঘুরতে।”
“ইয়ে! অনেক মজা হবে,তাই না ভাইয়া।”
“হুম।”

মাহির খুশি কে নিয়ে বেরিয়ে পরে বাইরে।রামপুর গ্রামের নদীর পারে বড় একটা বটগাছ আছে সেখানে অনেক বাচ্চারা মিলে একটা দোলনা লাগিয়েছে। মাহির সেখানে খুশিকে নিয়ে যায়।খুশিকে দোলনায় বসিয়ে দোল দিতে লাগে। আর খুশি আনন্দে খিল খিল করে হাসে। খুশির হাসি দেখে মাহির ও হাসে। আজ যেনো তার মনেও শান্তি লাগছে। মাহিরের এই কয়দিনে বুঝা হয়ে গেছে খুশিকে ছাড়া সে থাকতে পারবে না। মাহির ওতোটাও ছোট না যে বুঝবে না। সারাদিন অনেক ঘুরাঘুরি করে দুইজনে। মাহির যখন বুঝতে পারলো তাদের দেরি হয়ে গেছে তখন খুশিকে বলে,

“চল তোকে বাড়িতে নিয়ে যাই।”
” ভাইয়া আমি নানু বাড়িতে যাব।খালামনির সঙ্গে দেখা করব।”
“আচ্ছা।”
বলেই খুশিকে নিয়ে আসে জমিদার বাড়িতে।বাড়িতে ঢুকতেই সামনে তাকিয়ে দেখে বাড়ির সবাই আছে। খুশির আম্মু রেগে তাকিয়ে আছে মাহিরের দিকে। খুশি মাহিরের পিঠ থেকে নামে। মাঝ রাস্তায় মাহিরের পিঠে চড়ে এসছে খুশি।
” আম্মু তুমিও এখানে আছো। ভালোই হয়েছে।আমরা আবার আড্ডা দিব সবাই মিলে।”
মাহির বলে,

“অর্জুন খুশিকে উপরে নিয়ে যা।”
অর্জুন ভাইয়ার কথা শুনে খুশিকে উপরে নিয়ে যায়। খুশি উপরে যেতেই খুশির আম্মু বলে,
“আমি তোমাকে বলেছিলাম মাহির আমার মেয়ের কাছে যাবে না। তো কোন সাহসে খুশি কে বাইরে নিয়ে গেছো তুমি।”
“খালামনি খুশিকে ছেড়ে আমি থাকতে পারবো না।” আমি ভালোবাসি খুশিকে।”
বাড়ি ভর্তি সবার সামনে ভয় ছাড়াই বলে ফেললো মাহির।
“এটা তোমার ভালোবাসা না মাহির।আবেগ,এই বয়সে এইরকম হবে স্বাভাবিক।কিন্তু তুমি খুশিকে ছেড়ে দাও।”(খুশির আম্মু)
“এটা কোন আবেগ না খালামনি।”
“১০ বছর পর এই ভালোবাসা থাকবে না।”
“আর যদি থাকে তো?”

” থাকে তো আমি নিজে তোমাদের বিয়ে দেব। তার আগে আমার একটা শর্ত মানতে হবে তোমাকে।”
“কি শর্ত?”
” ১২ বছর খুশির সঙ্গে তুমি কোনো যোগাযোগ করতে পারবে না। এমন কি তোমার মুখটাও দেখাবে না খুশিকে। তারপরেও যদি তোমার ভালোবাসা একই থাকে তখন বিয়ের কথা ভাববো আমরা।
“ঠিক আছে আমি তোমার শর্তে রাজি কিন্তু আমারও একটা শর্ত আছে।”
” তোমার আবার কি শর্ত?”(ভ্রু কুচকে তাকিয়ে বলে খুশির আম্মু)

“এটাই যে ১২ বছর পরও যদি আমার একই ফিলিংস থাকে খুশি কে নিয়ে তখন আমার কথায় খুশিকে চলতে হবে। খুশির এইচ এস সি পরিক্ষার পরে খুশিকে কলকাতা শহরে আনা হবে আর আমার পছন্দ মতো কলেজে ভর্তি হতে হবে। এক কথায় আমি যা বলবো তাই করতে হবে। তোমাদের কোন কথাও চলবে না।”
” এটা কি ধরনের শর্ত মাহির।”(খুশির আম্মু)
“এটাই মানতে হবে নয়তো আমি খুশি কে ছাড়ছি না। আর জোর করে আমার থেকে আলাদা করতে চাইলে আমি নিজের ক্ষতি করে ফেলবো।”
মাহিরের কথায় সবায় ভড়কে যায়। মাহিরা নিজের ছোট বোনের কাছে হাত জোর করে বলে মাহিরের শর্তমেনে নিতে,তার যে একটাই ছেলে। মুনতাহাও মাহিরকে খুব ভালোবাসে।তিনি কখনই চায়না মাহিরের কোন ক্ষতি হোক। তাই মাহিরের শর্তে রাজি হয়ে যায়।

এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ৬

মাহির ছোট থেকেই বুদ্ধিমান ছেলে।সুযোগকে কাজে লাগাতে জানে। মাহির আগেই বুঝেছিল যে এমন কিছুই হবে বাড়িতে গিয়ে।তাই রাস্তায় আসতে আসতে অনেক কিছুই ভেবে রাখে।সেদিন রাতেই মাহির ও তার আব্বু আম্মু কলকাতা চলে আসে খুশির সাথে দেখা না করেই। তার কিছু দিন পরে মাহির বিদেশে চলে যায় পড়াশোনা করতে। খুশির কথা সব সময় তার মনে পরেছে। কিন্তু খুশিকে পাওয়ার জন্যই ১০ বছর প্যারিসে থেকেছে। এইদিকে খুশি মাহির যাওয়ার পর দুই-তিনদিন শুধু জিজ্ঞেস করেছে মাহির ভাইয়া কোথায়। তখন সবাই বলেছে কলকাতা চলে গেছে। তারপরে আর কিছুই বলে নি খুশি।দিন যতো যেতে লাগে খুশির মাথা থেকে মাহিরের মুখ মুছে যেতে লাগে।

১০ বছর পরে মাহির কলকাতায় আসে।এসেই কলকাতার মেডিকেল কলেজে ঢুকে।২ বছরের মাথায় কলেজের ভিপিও হয়ে যায়।
বর্তমানে…
সব কথা মনে করে মাহিরের চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরে।
সেই খুশিকে নিয়ে ১৪ বছরের মাহিরের যে ভালোবাসা ছিলো এখন ২৬ বছরে এসেও তার থেকে হাজার হাজার গুন ভালোবাসা বেরেছে। খুশি কলকাতা আসার একদিন আগেই খুশির আব্বুর কাছে খুশির ছবি দেখেছে। পরের দিন কলেজে খুশিকে র‍্যাগ করতে যে ছেলে গুলো ছিলো তাদেরকেও মাহিরই র‍্যাগিং করতে বলেছিল। খুশি ভিতু নাকি সাহসি তা দেখার জন্য। কিন্তু খুশির কান্ড দেখে দূর থেকে মাহির হা করে তাকিয়ে ছিলো।মেয়ে ছোট বেলার থেকে আরও বেশি সাংঘাতিক হয়েছে ভেবে।

এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ৮