এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ১৭ || নুর নাফিসা খুশি || SA Alhaj

এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ১৭
নুর নাফিসা খুশি

খুশি রোদের রুম থেকে দৌড়ে বাইরে এসে থমকে দাঁড়ায় কারণ কিছুটা দূরে মাহির আর রুকশা হেসে হেসে কথা বলছে।তা দেখেই মাথায় আগুন জ্বলে উঠে খুশির। এতো কিসের কথা থাকে এদের। খুশি কিছু না ভেবেই তাদের কাছে চলে গেলো।খুশি কে তাদের কাছে আসতে দেখে মাহির বলে,

“কিছু দরকার?”(ভ্রু কুচকে)
” দরকার ছাড়া আসতে পারি না?”
“সেটা না। বাট তুই তো কলেজে আমার কাছে আসিস না তাই বললাম।”
খুশি কিছু বলতে নিচ্ছিল তখনি রুকশা বলে।
” তোমার ক্লাস নেই? শুধু শুধু ঘুরে বেরাচ্ছ কেন?”(বিরক্ত হয়ে)
“আমার ক্লাস আছে কি নেই,ঘুরে বেড়াব নাকি পড়াশোনা করবো সেটা আমার ব্যাপার।তোমাকে চিন্তা করতে হবে না রিকশা আপা।”

” রিকশা আপা মানে কি ননসেন্স।আমি রুকশা।”(রেগে)
খুশি আবার পালটা জবাব দেওয়ার আগেই মাহির বলে,
“খুশি ভুলে যাস না রুকশা তোর বড়। সম্মান দিয়ে কথা বলবি।যা এখান থেকে,ক্লাসে যা।(একটু রাগ নিয়ে বললো মাহির)
মাহিরের কথায় রুকশা অনেক খুশি হলেও খুশি অনেক কষ্ট পেল।ওকে এই রিকশার সামনে অপমান করলো!খুশি কিছু বলল না,শুধু মাহিরের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে চলে গেলো সেখান থেকে।
ক্লাসে খুশি বসে রাগে ফুসফুস করছে তখনি অথৈ এসে খুশির মাথায় চাটি দিয়ে বলে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“তোর মতো বেস্ট ফ্রেন্ড থাকলে শত্রুর প্রয়োজন পরে না।”
“আমার মতো বেস্ট ফ্রেন্ড পেয়ে তোর নিজেকে গর্ভবতী থুক্কু ভাগ্যবতী মনে করা উচিত বুঝলি।”
” আহা আসছে দেখ।”
তখনি স্যার চলে আসে ক্লাসে।দুইজনে চুপ করে ক্লাস করতে থাকে। কিন্তু দুই মিনিট পরেই খুশির আর ক্লাস করতে মোটেও ভালো লাগছে না। এই টাকলু স্যারের বকবক খুশির অসহ্য লাগছে। বার বার বাইরের দিকে চোখ যাচ্ছে খুশির মাহির আছে কি দেখার জন্য।

“আচ্ছা ওই রিকশা আপা কি চলে গেছে নাকি এখনো ভাইয়ার সঙ্গে ঢলাঢলি করছে। এই মেয়ের এতো সাহস কি করে হয় আমার মাহিরদার সঙ্গে চিপকে থাকে।”(বিরবির করে বলে খুশি জানালার দিকে তাকিয়ে)
খুশি যখন এসব নিয়ে চিন্তায় ছিলো তখন পাশ থেকে অথৈ খুশিকে কনুই দিয়ে গুতা দেয় কিন্তু খুশি পাত্তা দেয়না।এরপর বার বার যখন গুতা দেয় তখন খুশি বিরিক্ত হয়ে অথৈ এর দিকে তাকায়। অথৈ এর দিকে তাকাতেই অথৈ ইশারায় সামনে তাকাতে বলে।খুশি বিরক্ত নিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখেই তো মুখের রং উড়ে যায় খুশির। কারণ টাকলু স্যার রেগে মেগে খুশির দিকেই তাকিয়ে আছে। খুশি জোর পূর্বক মুখে হাসি নিয়ে স্যারের দিকে তাকায়। স্যার বলে,

“স্ট্যান্ড আপ ।” (রেগে)
খুশি দাঁড়িয়ে যায় স্যারের কথায়। স্যার আবার বলে,
” কোথায় মন থাকে তোমার? বাইরে কি দেখছিলে আর পড়ায় মন ছিল না কেন?”
“বাইরে আমার কলিজা নিয়ে টানাটানি হচ্ছে।তো আমি বাইরে তাকিয়ে থাকবো না তো আপনার এই টাকলু মাথার দিকে তাকিয়ে থাকব নাকি।(মনে মনে বলে খুশি)

” কি হলো জবাব দিচ্ছ না কেন?”(স্যার আরও রেগে বলে)
“আরে টাকলু স্যার কুল কুল এতো রেগে ফুলছেন কেন। একেই তো পেট মোটা আবার রাগে ফুলাচ্ছেন। আপনি তো উড়ে যাবেন আমি নিশ্চিত।”(আবারও মনে মনে বলে খুশি)
স্যার এবার প্রচন্ড বিরক্ত হয় খুশির এমন চুপ থাকা দেখে।রেগে বলে,
” বেরিয়ে যাও আমার ক্লাস থেকে।বাইরে গিয়ে কান ধরে দাঁড়াও যাও।”

খুশি কিছু না বলে টুক করে বেড়িয়ে গেলো ক্লাস থেকে। যেনো তার কাছে এই টাকলু স্যারের ক্লাস করার থেকে বাইরে কান ধরে থাকা অনেক ভালো। বাইরে এসে কান ধরে দাঁড়িয়ে পরে খুশি। এই নিয়ে দুই বার কলেজে কান ধরা খেল। একবার মাহির, এইবার স্যার। খুশি মনে মনে বলে,
“আমাজে রাগ দেখানোর জন্য বাড়ি গিয়ে তুই বউ এর হাতে ঝাড়ু পিটুনি খাবি। হুহ,বলে দিলাম টাকলু স্যার। আমাকে ভালো করে বললেও তো হতো যে ক্লাস থেকে বেড়িয়ে যাও। এতো রাগ করা লাগে ক্যান?”(বিরবির করে বলছে খুশি)

তখনি খুশি দেখে মাহির তার দিকেই এগিয়ে আসছে। খুশি ভালো করেই জানে মাহির তাকে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলে মজা নিবে,কথাও শুনাবে। তাই খুশি নিচে দিকে মুখ করে নেয় যাতে মাহির দেখলেও মুখ দেখতে না পারে। কিন্তু ওটা মাহির আর মাহিরের চোখে খুশি ফাঁকি দিতে পারবে,এটা কি করে হয়। মাহির সোজা এসে খুশির সামনে এসে দাঁড়ায় পকেটে হাত ভরে।

” এতো বড় মেয়ে হয়েও কান ধরে বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে লজ্জা লাগে না তোর?”
খুশি এবার মুখ তুলে মাহিরের দিকে তাকায় আর মনে মনে বলে,
“তোর জন্যই তো কান ধরা খেলাম রে হতচ্ছাড়া।” (মনে মনে)
” এভাবে তাকিয়ে কি দেখছিস?কথা বলা বন্ধ হয়ে গেছে নাকি?”
“আমি কান ধরি আর যাই করি তোমার দেখার দরকার কি। তুমি যাও না সম্মানের সঙ্গে তোমার রিকশা থুক্কু রুকশার সঙ্গে ঘুরো গিয়ে হাতে হাত ধরে।”(অভিমান নিয়ে বলে খুশি মাহিরকে)

” তা তো অবশ্যই যাবো।কিন্তু তার আগে জানতে হবে না আমার ছোট বোন কেন কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে।” (মজা করে বলে মাহির)
“কে তোমার ছোট বোন?”
” ওমা কেন তুই তো আমার ছোট বোন। আর কে আবার।”
খুশি রেগে মেগে বলে।
“লাগবে না বড় ভাই তোমার জানা আমি কেন কান ধরেছি। ”
মাহির কিছু বলার আগেই স্যার বেসিয়ে আসে ক্লাস থেকে। মাহির কে দেখে স্যার বলে,

” আরে মাহির তুমি এখানে? কোন দরকার ছিলো নাকি?”
“না স্যার তেমন কিছু না। এই মেয়ে এখানে কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে কেন?”
” আর বলো না।ক্লাসে অমনোযোগী হয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে বসে ছিলো।কিছু জিজ্ঞেস করলে কোন জবাব দেয়না।বাইরে কান ধরতে বলায় সুরসুর করে এসে কান ধরেছে।”
মাহির বুঝতে পারে খুশি কেন বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিলো।তাই কিছু বলে না। স্যার বলে,

“এই মেয়ে যাও ক্লাসে বসো গিয়ে।তোমার শাস্তি শেষ।”
বলেই স্যার চলে যায়।খুশি ক্লাসে যেতে লাগে মাহিরকে পাশ কাটিয়ে তখন মাহির বলে,
” বাড়িতে যেতে হবে আর ক্লাস করা লাগবে না। আম্মু ডেকেছে তাই তোকে নিতে এসেছি।”
“কেন? এখনো তো আমার ক্লাস আছে তিনটা।”
” করা লাগবে না আমি স্যারকে বলে দিয়েছি। ”
“আচ্ছা।”

খুশি ক্লাস রুমে গিয়ে অথৈকে বাই বলে মাহিরের সঙ্গে চলে যায় বাড়িতে। রুকশা আগেই বাড়ি চলে গেছে নিজের গাড়ি করে।
বাড়িতে এসে সবাই ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেতে বসে। আজ খুশি আগে এসেই মাহিরের পাসশে বসে পরে। তাই রুকশা কে না চাইতেও খুশির পাশে বসতে হয়। খুশি তার খালামনিকে বলে,
” খালামনি আজ কি কিছু হবে?কলেজ থেকে জলদি আসতে বললে যে।”
“আজ মাহিরের আব্বু একটা সারপ্রাইজ পার্টি রেখেছে সন্ধ্যায়।আমরা সবাই যাবো।তার আগে একটু রেস্টের প্রয়োজন তাই আগেই ডেকে নিয়েছি সবাই কে।”
” ওহ আচ্ছা।”

খুশির মন খারাপ হয়ে যায় কারণ পার্টিতে যাওয়ার মতো তার কাছে কোন ভালো ড্রেসই নেই। কি পরে যাবে সে।
খাবার খাওয়ার সময় পরে আরেক ঝামেলায়।ভাত এর থালায় ইলিশ মাছ আর ইলিশ মাছের কাটার জন্য খুশি ইলিশ মাছ খায় না।কেউ কাটা বেছে দিলে খায়। নিজের বাড়িতে তো তার আম্মু নয়তো আব্বু বেছে দিত আর খুশি খেয়ে নিতো। কিন্তু এখন কি করবে। মুখ ছোট করে ভাত এর থালার দিকে তাকিয়ে আছে খুশি।

আড়চোখে মাহিরকে দেখল।সে দিব্বি মাছের কাঁটা বেছে বেছে রাখছে। খুশি মন খারাপ করে মাছ সাইডে রেখে বাকি তরকারি দিয়ে খেতে লাগে ভাত। তখনি সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে মাহির তার সব কাঁটা বাছা মাছ খুশির কাছে দিয়ে দেয় আর খুশির মাছটা নিয়ে নেয়। এতে খুশি খুশি তো হয়ই তার চেয়ে বেশী অবাক ও।হয় সবার দিকে একবার তাকিয়ে দেখে কেউ দেখেনি।সবাই নিজের মতো খাচ্ছে।খুশিও মুচকি হেসে খেতে শুরু করে।

মাহির সবার চোখ ফাঁকি দিতে পারলেও তার ফুপির চোখে ফাঁকি দিতে পারেনি।সে সবটাই দেখেছে। কিন্তু বুঝতে দেয়নি। তার মোটেও পছন্দ না খুশিকে আর খুশির প্রতি তার ভাই,ভাবি, মাহিরের এতো কেয়ার দেখে তার গা জ্বলে উঠে। সে তো প্যারিস থেকে ইন্ডিয়া অন্য কারনে এসেছে। সেটা না করে যাবে না এখান থেকে। কিন্তু তার চিন্তা হচ্ছে এই খুশি কে নিয়ে। তার কাজে বাধা হয়ে দাঁড়াবে না তো?কিন্তু তার কাজে যেই বাধা হয়ে দাঁড়াবে তাকেই শেষ করে দিবে সে।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে সব নিজের রুমে চলে যায় রেস্ট নিতে। খুশি নিজের রুমে এসে শুয়ে পরে।কিন্তু তার ঘুম আসছে না। বার বার মাহিরের কথা মনে পরছে। খুশি উঠে রুম থেকে বের হয়ে চুপি চুপি মাহিরের দিকে যায়। মাহিরের রুমের কাছে এসে পুরো বাড়িটা একবার দেখে নিল কেউ দেখছে কি না।কেউ নেই দেখে টুক করে মাহিরের রুমে ঢুকে যায় খুশি। আস্তে করে দরজাটা বন্ধ করে মাহিরের দিকে তাকায়। দেখে মাহির ঘুমিয়ে আছে। খুশি আস্তে আস্তে গিয়ে মাহিরের পাশে মাহিরকে জরিয়ে ধরে শুয়ে পরে। মাহির মাত্রই ঘুমিয়েছে তাই ঘুমটা ওতো গভির ছিলো না। তাই খুশি তার পাশে শোয়া মাত্র মাহির বুঝে যায় আর লাফিয়ে উঠে।পাশে খুশিকে দেখে বলে,

“তুই এখানে কি করছিস?”(অবাক হয়ে)
” ঘুমাবো তাই এসেছি।আমার একা ভালো লাগে না।”
“তোর মাথা খারাপ!কেউ দেখলে কি ভাববে?আল্লাহ!”
” দেখবে না,আমি দরজা লাগিয়ে দিয়েছি।তুইও ঘুমা আয়।”
“তুই কেন আমার কাছে ঘুমাবি?নিজের রুমে যা।”
” যাবো না। ছোট বেলায় তো কতো ঘুমিয়েছি তোর কাছে।এখন ঘুমালেও কিছু হবে না।”
“আমরা এখনো ছোট নেই খুশি।তুই যা।”
” যাবো না আমি।তুই ঘুমা আর আমিও ঘুমাই।”

এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ১৬

খুশি এটা বলেই চাদর গায়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে। মাহির খুশিকে ডেকেও আর খুশির সারা পেল না। মাহির বাধ্য হয়ে সোফায় গিয়ে শুয়ে পরে। আর মনে মনে বলে,
“তোর কি হয় মাঝে মধ্যে বুঝি না।এমন জেদ কেউ দেখলে খারাপ ভাববে।তুই একটা বার বল ভালোবাসি। তোকে তখনই বিয়ে করে নিজের কাছে রাখবো।কোথাও যেতে দিব না। কিন্তু এখন এক সঙ্গে থাকা যে সম্ভব না।আমি আর তুই এখন ছোট নেই।তুই আমার কাছে থাকলে আমি নিজেকে হারিয়ে ফেলি। তাই আমি তোকে নিজের রুমে আসতে না করেছিলাম। কিন্তু তুই তো তুই-ই,যেটা করার সেটা না করে উল্টোটা করবি।”

এসব কথা ভেবে মাহিরও এক সময় ঘুমিয়ে পরে। এই দিকে খুশি এখনো ঘুমাইনি।ঘুমানোর নাটক করছিল। খুশি মাহিরের দিকে তাকিয়ে ভাবে,
” আমি এখন থেকে তোমার কাছে কাছেই থাকবো মাহির দা।আমি জানি আমি তোমার কাছে থাকলে একদিন ঠিকই বলবে ভালোবাসি। আমি তোমার কাছে শোনার জন্য ওয়েট করে আছি।আমিও তোমাকে ভালোবাসি কিন্তু আগে তোমাকেই বলতে হবে।”

দুইজন দুইজনকে ভালোবাসে কিন্তু কেউ কাউকে বলতে চায় না। মাহির চায় খুশি আগে বলুক আর খুশি চায় মাহির আগে বলুক। দুইজনের এই নিরবতায় ভালোবাসায় না কোন বিপদ এসে ভর করে। আদৌ কি খুশি আগে বলবে মাহির ভালোবাসি বা মাহির কি বলবে খুশি তোকে অনেক ভালোবাসি, অনেক অনেক অনেক বেশি!”
সন্ধায়,

এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ১৮