এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ১৮ || নুর নাফিসা খুশি || SA Alhaj

এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ১৮
নুর নাফিসা খুশি

” আমি এখন থেকে তোমার কাছে কাছেই থাকবো মাহির দা।আমি জানি আমি তোমার কাছে থাকলে একদিন ঠিকই বলবে ভালোবাসি। আমি তোমার কাছে শোনার জন্য ওয়েট করে আছি।আমিও তোমাকে ভালোবাসি কিন্তু আগে তোমাকেই বলতে হবে।”
দুইজন দুইজনকে ভালোবাসে কিন্তু কেউ কাউকে বলতে চায় না। মাহির চায় খুশি আগে বলুক আর খুশি চায় মাহির আগে বলুক। দুইজনের এই নিরবতায় ভালোবাসায় না কোন বিপদ এসে ভর করে। আদৌ কি খুশি আগে বলবে মাহির ভালোবাসি বা মাহির কি বলবে খুশি তোকে অনেক ভালোবাসি, অনেক অনেক অনেক বেশি!”
সন্ধ্যায়,

খুশি মন খারাপ করে বসে আছে রুমে।সবাই যে যার রুমে রেডি হচ্ছে কিন্তু খুশি এখনো বসে আছে। কারণ তার কাছে পার্টিতে যাওয়ার মতো ড্রেস নেই।এর আগে খুশি কখনো পার্টিতে যায় নি তাই সে জানেও না পার্টিতে কেমন ড্রেস পরে যেতে হয়। ইউটিউবে দেখেছে পার্টি ড্রেস কিন্তু ওগুলা ওর কাছে নেই আর যা ভালো ড্রেস আছে তা গ্রাম থেকে নিয়েই আসে নি। এর মাঝে খুশি একবার লুকিয়ে রুকশাকে দেখে এসেছে।রুকশা অনেক সুন্দর করে সেজেছে অনেক সুন্দর একটা ড্রেস পরে।
যখন মন খারাপ করে বসে ছিলো তখন খুশির ফোনে টিং করে আওয়াজ এলো। ফোন হাতে নিয়ে দেখে মাহিরের মেসেজ। খুশি মেসেজ পড়ে,

“তোর আলমারিতে একটা প্যাকেট রাখা আছে দেখ।”(মেসেজে লেখা)
খুশি উঠে কৌতুহল নিয়ে আলমারি খুলে দেখে সত্যি একটা প্যাকেট রাখা, শপিং ব্যাগ। খুশি বার করে দেখে অনেক সুন্দর একটা গাউন।সাদা আর হালকা গোলাপি কালারের। আরেকটা কালো শাড়িও আছে অনেক সুন্দর।খুশি খুশিতে লাফিয়ে উঠে এতো সুন্দর ড্রেস দেখে। খুশি তাড়াতাড়ি করে গাউনটা নিয়ে পরে নিল।সঙ্গে কিছু সাজগোজ এর জিনিসও আছে।
নিচে মাহির, মাহিরের আম্মু, আব্বু, ফুফি,রুকশা খুশির জন্য ওয়েট করছে খুশি এখনো নিচে আসেনি। এইদিকে ফুফি বলে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” মাহির বাবা তুমি রুকশাকে নিয়ে চলে যাও আমরা খুশিকে নিয়ে আসছি পরে।”
“না ফুফি তোমরা যাও।আমার একটা কাজ আছে, আব্বু তুমি সবাইকে নিয়ে যাও।”
এই বলে মাহির আর কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে উপরে চলে গেলো। এতে ফুফি আর রুকশা দুই জনেই রেগে গেলেও কিছু বলে না।মাহিরের আব্বু সবাইকে নিয়ে চলে গেলো।
মাহির সোজা খুশির রুমে ঢুকে সামনে তাকিয়ে হা হয়ে যায়।খুশিকে অনেক কিউট লাগছে দেখতে।একদম পরীর মতো সাদা গাউনে প্রিন্সেস লাগছে।
মাহির হা করে খুশিকে দেখতে ব্যস্ত তখন খুশি মাহিরের কাছে এসে বলে,

” বললি না আমাকে কেমন লাগছে?”
খুশির কথায় মাহিরের ধ্যান ভাঙ্গে।খুশি কে বলে,
“একদম প্রিন্সেসের মতো অনেক সুন্দর। এবার কি যেতে পারি আমরা?সবাই চলে গেছে।”
মাহিরের প্রশংসা পেয়ে খুশি অনেক খুশি হয়। মাহিরকে বলে,
“হুম হুম চল।”

মাহির আর খুশি বেড়িয়ে পরে পার্টির উদ্দেশ্যে। পার্টি
টা একটা বড় হোটেলে থ্রো করেছে। এইদিকে পার্টিতে মাহিরের বাবা মাহিরের জন্য ওয়েট করছে।বাকিসব গেস্ট চলে এসেছে শুধু মাহির আর খুশি আসেনি এখনো। তখনি সবার চোখ এন্ট্রি দরজার দিকে যায়।খুশি আর মাহির হাত ধরে হেঁটে আসছে। দুইজনকেই অসম্ভব সুন্দর লাগছে। খুশি সাদা গাউন। মাহির কালো প্যান্ট,সাদা শার্ট,কালো ব্লেজার । সবার মুখ থেকে ওয়াও সো কিউট কাপল বের হয়ে আসছে। এসব দেখে ফুফি ও তার মেয়ে রিকশা থুক্কু রুকশা জ্বলে পুড়ে শেষ হচ্ছে।অগ্নি দৃষ্টিতে মাহির আর খুশির দিকে তাকিয়ে আছে।

মাহির,খুশি এসে তার আব্বু আম্মুর কাছে দাঁড়ালো। তখন খুশি দেখলো অথৈ ও তার সঙ্গে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।খুশি সেদিকে চলে গেলো। এই ফাঁকে রুকশা মাহিরের শরীর ঘেসে দাঁড়ালো। কিন্তু মাহির রুকশার কাছ থেকে একটু দূরে সরে এসে খুশি যেদিকে গেছে সেদিকে চলে আসে মাহির।
“মান্নু তুই এখানে?”(খুশি)
” হুম ভাইয়ের সঙ্গে এসেছি।এটা আমার ভাই, আবির।” (অথৈ তার সঙ্গে থাকা ছেলেটাকে দেখিয়ে বলল)
তখন মাহির এসে আবিরকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“কেমন আছিস।”(মাহির)
” ভালো কোনরকম তুই?”(আবির)
“আমিও।

এইদিকে অথৈ, খুশি দুইজনেই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।দুইজনে এক সঙ্গে বলে,
” ভাইয়া তোমরা একেঅপরকে চিনো?”
“হুম অনেক আগে থেকেই আমরা অনেক ভালো ফ্রেন্ড।” (আবির)
” তুমিই তাহলে আবিরের এক মাত্র বোন, পিচ্চু।”(মাহির অথৈকে বলল)
“হুম ভাইয়া।”
তখনি পিছন থেকে আরেকটা ছেলে এসে মাহিরের মাথায় টোকা দিল। মাহির পিছনে তাকিয়ে দেখে তার কলিজার বেস্টু রোদ। রোদকে দেখে এবার খুশি,অথৈ এর চোখ বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম।এই দিকে আবির রোদকে দেখে রেগে গেছে। আবির রাগ নিয়ে বলে,

” এই ছেলে এখানে কি করছে মাহির।”
এবার রোদও খেয়াল করলো আবির আর অথৈকে। মাহির বলে,
“তোকে বলেছিলাম না প্যারিসে আমার রোদ এর সঙ্গে পরিচয় হয়েছে,আমরা অনেক ভালো বন্ধু।এটাই সেই রোদ।”(মাহির)
আবির রেগে কিছু বলে না চুপ করে দাঁড়িয়েই আছে। এই দিকে অথৈ এর হাত পা কাঁপছে।তার ভালো করেই জানা আছে তার ভাই কতোটা রাগী। আর রোদ যা করেছে এতে কখনো আবির রোদকে ক্ষমা করবে না। রোদ মাহিরের কানে কানে কি যেনো বললো। তখন মাহিরের মনে পরল রোদের করা কান্ড। মাহির ও ভালো জানে আবিরের রাগ।মাহির বলে,

” আব,,আবির তুই আমার সঙ্গে আয় কথা আছে।”
বলেই মাহির আবিরকে নিয়ে চলে গেলো অন্য দিকে। রোদ এই সুযোগে অথৈ এর কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। এসব দেখে খুশি বলে,
“মান্নু তুই থাক আমি গেলাম।”
বলেই কেটে পরলো খুশি।

মাহির যখন প্যারিসে যায় তখন সেখানে রোদের সঙ্গে পরিচয় হয় মাহিরের।রোদ ও পড়াশোনা করতেই গেছিলো। এক সঙ্গে থাকতে থাকতে বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে উঠে তারা।এক সঙ্গে পড়াশোনা শেষ করে নিজের দেশে ফিরে তারা। দেশে ফিরেই রোদ তার বাবার বিজনেসে লেগে যায় যদিও রোদ দাক্তারি নিয়ে পড়াশোনা করেছে।আর মাহির পড়াশোনা শেষ করেও আবার কলেজে আসে। একদিন অথৈ এর সঙ্গে দেখা হয় রোদের। তখন থেকেই পছন্দ করে অথৈকে।এক বছর পর যখন মাহির কলকাতা মেডিকেল কলেজের ভিপি হয়ে যায় আর অথৈও সেই কলেজে ভর্তি হয়। তাই মাহিরের সাহায্যে কলেজের টিচার হয়ে ঢুকে রোদ।রোদ যখন অথৈকে জোর করে বিয়ে করে তারপর মাহিরকে সব খুলে বলে। কিন্তু মাহিরের কথাটা মাথা থেকে বের হয়ে গেছিলো।একটু আগে রোদ মনে করিয়ে দেওয়ায় আবিরকে নিয়ে অন্য দিকে চলে যায় বুঝাতে।

“রোদ খারাপ না আবির। অথৈ কে খুব ভালোবাসে। আমরা এক সঙ্গে প্যারিসে থেকেছি।কখনো কোন মেয়ের দিকে কুনজরে তাকাতে দেখিনি আমি রোদকে,আর কোনো খারাপ অভ্যাস।” (মাহির)
“ওর সাহস কি করে হয় আমার কাছ থেকে আমার বোনকে তুলে নিয়ে বিয়ে করতে।”(রেগে আবির)
” এটা ও ভুল করেছে কিন্তু পরে বুঝতে পেরে নিজেও কষ্ট পেয়েছে।তুই এই বিয়েটা মেনে নে আবির। তুই আমাকে বিশ্বাস করিস না?অথৈ তোর বোন মানে আমারও বোন আর আমি আমাদের বোনের ক্ষতি কি করে করবো। তুই আমাকে বিশ্বাস করে রোদের হাতে অথৈকে দে। অথৈ ভালো থাকবে অনেক।”

আরও অনেক কথা বলে আবিরকে। অনেক বলার পর আবির রাজি হয় এই সম্পর্কে।আবির মাহির আবার অথৈ, রোদ,খুশির কাছে যায়।রোদ অথৈ এর কাছে ছিলো একদম।আবির কে আসতে দেখে দূরে সরে দাঁড়ালো।মাহির,আবিরকে রোদের কাছে আসতে দেখে খুশি ও চলে আসে কি বলবে তা শোনার জন্য। আবির রোদ কে বলে,
“সময় করে একদিন তোমার আম্মু আব্বুকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে এসো।”
আবিরের এই কথা অথৈ যেনো বুঝতেই পারলো না। যখন বুঝতে পারলো তখন অবাকের চরম পর্যায়ে চলে যায় অথৈ।তার ভাই রাজি এই সম্পর্কে!রোদের খুশি দেখে কে!সে পারে না লাফিয়ে আবিরকে জরিয়ে ধরতে।কিন্তু বউ এর বড় ভাই বলে কথা,সম্মান দিতে হবে না?তাই মাহিরকে জরিয়ে ধরে বলে,

“থ্যাংকিউ মাহির।”
“এই ব্যাটা লুচুমি করিস ক্যান!দূরে সরে দাঁড়া।”
মাহিরের কথায় আবির খুশি রোদ হেসে দেয়। অথৈ চুপ সে বুঝতে পারছে না কি করবে। রোদ কে মেনে নিবে নাকি না।
তখন মাহিরের আব্বুর কথা শোনা গেল।

” লেডিস অ্যান্ড জেন্টালম্যান আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ আমাদের ছোট একটা খুশির দিনে শামিল হওয়ার জন্য। আজকের পার্টি দেওয়ার কারণ আমার একমাত্র ছেলে মাহির চৌধুরী(মাহির কে ইশারায় ডাকে।মাহিরও তার বাবার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়) চৌধুরী ইন্ডাস্ট্রি এর এমডি হওয়ার উপলক্ষে আজ আমি আমার বিজনেসের সব কিছু মাহিরের হাতে তুলে দিতে চাই। আমাদের অফিসের সকল স্টাফ আমাকে যেমন করে সহযোগিতা করেছেন আশা করি আমার ছেলেকেও করবেন। আর এতোদিন আমরা যে বড় ডিল টা নিয়ে কাজ করেছি সেটা সাকসেস হয়েছে।সবাই কে আবারও ধন্যবাদ আমাদের সাথে থাকার জন্য।”
আরও অনেক কিছু বলে মাহিরের আব্বু কেক নিয়ে আসে।কেক কাটার সময় মাহির তার আশেপাশে সবাইকে দেখলো।কিন্তু খুশি নেই।এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখে খুশি এক সাইডে দাঁড়িয়ে আছে। মাহিরের আব্বু বলে।

“মাহির কেক কাটো।”
” ওয়েট আব্বু।”
বলেই মাহির খুশির কাছে গিয়ে খুশির হাত ধরে নিয়ে আসে।তারপর কেক কাটে। কিন্তু ব্যাপার টা মাহিরের আব্বুর ভালো লাগে নি।সঙ্গে ফুফি ও রুকশারও না।
কেক কাটার পরে রুকশা এসে মাহিরের হাত ধরে ডান্স ফ্লোরে নিয়ে যায়।ওকে নিয়ে ডান্স করতে লাগে এতে খুশির অনেক রাগ উঠে।কিন্তু কিছু বলে না। একে একে অনেকে কাপল এসে ডান্স শুরু করে। রোদ জোর করে অথৈকে নিয়ে আসে ডান্স করতে। খুশি একা দাঁড়িয়ে দেখছে সবার নাচ।মাহিরেরও ভালো লাগছে না রুকশার সঙ্গে। কিন্তু রুকশা ছাড়ছে না আর এতো লোকের সামনে কিছু বলতেও পারছে না মাহির। খুশি একা দাঁড়িয়ে ছিলো তখন আবির আসে খুশির কাছে আর বলে,
“তুমি আমার সঙ্গে ডান্স করবে?”(আবির)

এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ১৭

খুশি মাহিরের ওপরে রেগে আবিরকে হ্যাঁ বলে দেয়। তারপর আবির খুশিকে নিয়ে ডান্স করতে লাগে।এটা মাহির দেখে রেগে মেগে শেষ।পারে না খুশিকে ঠাস করে থাপ্পড় দিতে। আবির খারাপ না মাহির জানে, কিন্তু নিজের ভালোবাসার মানুষকে অন্য কারো সঙ্গে কেউই দেখতে পারবে না। ডান্স করার এক সময় মাহির রুকশাকে ঘুরিয়ে অন্য পাশে দিয়ে দেয় আর খুশি ঘুরে এসে মাহিরের কাছে আসে। মানে কাপল চেঞ্জ হয় তবে রোদ এসব থেকে দূরে ছিলো কারন সে অথৈকে অন্য কারো সঙ্গে দিবেনা তাই। আবিরের কাছে অন্য একটা মেয়ে আসে আর রুকশা অন্য একটা ছেলের সঙ্গে।কিন্তু রুকশা রেগে ডান্স না করেই চলে যায়।

মাহির খুশির কোমড় শক্ত করে ধরে আছে এক হাতে আর ডান্স করছে। খুশি রেগে ছিলো তাই মাহিরের কাছ থেকে দূরে যাওয়ার চেষ্টা করেছে কিন্তু মাহির আরও কাছে টেনে নিয়ে আসছে। খুশির একদম কাছে গিয়ে বলে।
” দূরে যাচ্ছিস কেন? ভালো লাগছে না? আবির কে ভালো লেগেছে?”
“কি যা তা বলছিস ভাইয়া!”
” আমি তোর ভাইয়া না।”
এই দিকে রোদ অথৈ কে বলে,

“আমি ভাবতেও পারিনি তোমার ভাই রাজি হয়ে যাবে। আমি খুশিতে পাগল হয়ে যাবো।”
অথৈ রোদের দিকে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে,” সত্যি খুব ভালোবাসে আমাকে উনি নয়তো এতো খুশি হতো না।ওনার চোখ মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে উনি কতোটা খুশি।আমার কি ওনাকে একবার সুযোগ দেওয়া উচিত?”

এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ১৯