এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ২০ || নুর নাফিসা খুশি || SA Alhaj

এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ২০
নুর নাফিসা খুশি

রাত ৮ নাগাদ বাড়িতে ফিরলো মাহির রুকশা। মাহির খুব বিরক্ত হয়েছে আজ। রুকশা কেনা কাটা তেমন কিছুই করেনি,মাহিরকে নিয়ে ঘুরে বেরিয়েছে শুধু। মাহির বাড়িতে এসেই দুইটা প্যাকেট নিয়ে উপরে চলে যায় নিজের রুমে।আগে ফ্রেশ হয়ে নেয় বাইরে থেকে এসেছে তাই।ফ্রেশ হয়ে ড্রেশ চেঞ্জ করে। মাহির একটু অবাক হলো কারন সে এসেছে ১০ মিনিট হতে চললো কিন্তু খুশি এখনো তার রুমে এলো না।মাহির ভাবে,

“রাগ করে মুখ ফুলিয়ে বসে নেই তো আবার রুকশা কে নিয়ে বাইরে গেছি তাই। নাকি আমার আসা দেখেনি।হয়তো রুমে আছে,আচ্ছা দেখি তো।”
বলে মাহির বেডে রাখা খুশির বলা জিনিস গুলো নিয়ে খুশির রুমে যায়। রুমে ঢুকে দেখে খুশি নেই। ওয়াশরুমে আছে ভেবে ওয়াশরুমের দরজায় টোকা দিতে যেয়ে দেখে দরজা আগে থেকেই খোলা। মানে খুশি নেই।
” গেলো কই মেয়েটা?ছাদে গেলো নাকি?কিন্তু এখন তো রাত ৮ টা ৩০ মিনিট।একা ছাদে যাবে না ভুতের ভয়ে।তাহলে কি নিচে আছে?”

নিজে নিজে এই কথা গুলো বলছিল মাহির তখনি খেয়াল করে পড়ার টেবিলের দিকে।দেখে অবাক হয় মাহির।কারন এখানে খুশির পড়ার সামগ্রী থাকে, কিন্তু এখন ফাঁকা। মাহিরের এবার বুক টা ছ্যাত করে উঠে। চট জলদি মাহির খুশির জামা কাপড়ের আলমারি খুলে সেখানে দেখে কোন ড্রেস নেই খুশির।শুধু মাহিরের দেওয়া সেদিনের পার্টি ড্রেস আর দুইটা শাড়ি আছে।যা মাহির দিয়েছিল। দেখেই মাহিরের রাগ মাথায় উঠে যায়।রুম থেকে বের হয়ে নিচে যায় মাহির আর চিৎকার করে তার আম্মু মাহিরাকে ডাকে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“আম্মুউউউউউ!”
ছেলের এমন ঘর ফাঁটানো ডাক শুনে দৌড়ে আসে মাহিরের আম্মু।মাহিরা চৌধুরী যেনো ছেলের ডাকেরই অপেক্ষা করছিলো।সে জানতো তার ছেলে খুশিকে না পেয়ে তার কাছেই আসবে। মাহিরের ডাক শুনে মাহিরের আম্মু সহ আব্বু,ফুফি,রুকশাও আসে। মাহির ওর আম্মুকে বলে,
” খুশি কোথায় আম্মু?”

মাহিরের আম্মু ভয়ে চুপ করে আছে। তিনি জানেন মাহির যদি শুনে খুশি এই বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে তো বাড়িতে সুনামি আসবে। মাহির আম্মুকে চুপ দেখে আবার বলে,
“আমি কিছু জিজ্ঞেস করছি আম্মু খুশি কোথায়?”(রেগে)
” খুশি এই বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে।ওর নাকি এখানে থাকতে ভালো লাগে না। তাই হোস্টেলে চলে গেছে।
আম্মুর কথা শুনে মাহিরের রাগের সঙ্গে অবাকও হয়। তখন রুকশা বলে,

“এই বাড়িতে থেকে হয়তো তার কোন ছেলের সঙ্গে ঘুরাঘুরি করা হয় না তাই চলে…….
রুকশার কথাটা বলা শেষ হয়নি তার আগেই সজোরে একটা থাপ্পর পরে রুকশার গালে। উপস্থিত সবাই মাহিরের আচমকা এই কাজ দেখে অবাক হয়।রুকশা গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ফুফি বলে উঠে,
” মাহির তোমার সাহস হয় কি করে তুমি আমার মেয়ের গায়ে হাত তোলো?”

“আমার সাহসের কিছুই দেখোনি তুমি। আর এই যে তুই,কোন মুখে কার কথা বলছিস তোর ধারণা আছে? আর একবার খুশির নামে উলটা পালটা বললে দাঁড়িয়ে থাকার অবস্থায় থাকবি না।”(রেগে বলে মাহির)
রুকশা রাগে সেখান থেকে চলে যায় নিজের রুমে। মাহির বলে,
” হোস্টেলে থাকার ব্যবস্থা কে করে দিয়েছে?”
মাহিরের এই প্রশ্নে মাহিরের আব্বু ঘাবরে যায় তিনিও জানেন তার ছেলে কতটা রাগি। মাহিরের আব্বু কিছু বলতে যাবে তার আগেই ফুফি বলে,

“খুশি এসে ভাইকে জোর করছিলো যাতে তাকে হোস্টেলে থাকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয় তাই ভাই বাধ্য হয়ে করে দিয়েছে।”
বোনের কথায় মাহিরের আব্বু ও সায় দিল। মাহির রেগে পাশে থাকা ফুলদানি টা ছুড়ে ভেঙ্গে ফেললো। এতে মাহিরের আব্বু আম্মু দুইজনেই চমকে যায়। মাহির উপরে গিয়ে গাড়ির চাবি আর প্যাকেট দুইটা নিয়ে বেড়িয়ে পরে হোস্টেলের উদ্দেশ্যে। বাড়ি থেকে বের হয়ে যেই না গাড়িতে উঠতে যাবে তখনই লতিফা আসে মাহিরের কাছে। লতিফা কে দেখে মাহির বলে,

” কিছু বলবি?”
“জি ভাইজান।”(মাথা নিচু করে)
” এসে শুনবো এখন শুনার সময় নেই।”
“ভাইজান খুশি আফা নিজ থাইক্কা এই বাড়ি ছাড়ে নাই।”
লতিফার কথায় থমকে দাঁড়ালো মাহির।
” যা বলছিস খুলে বল।”(মাহির)

ফুফি আর মাহিরের আব্বু যখন খুশিকে কথা শুনাচ্ছিল,বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার কথা বলছিল তখন লতিফা খুশিকে ডাকতে গিয়ে শুনে ফেলে সব। যা যা হয়েছে লতিফা সব মাহির কে বলে। সবটা শুনে মাহিরের রাগ যেনো শতগুন বেরে যায়। কিন্তু এখন কিছুই করা যাবে না। আগে খুশি কে নিয়ে আসা জরুরি।তাই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরে হোস্টেলের উদ্দেশ্যে। মাহির সোজা হোস্টেলে গিয়ে হোস্টেলের ম্যানেজারকে জিজ্ঞেস করে খুশি কোন রুমে। যেহেতু মাহির এই কলেজের ভিপি তাই হোস্টেলের খবরও মাহিরকে দেওয়া হয়। কিন্তু ম্যানেজার যা বলে তা শুনে মাহিরের আত্মা বের হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়।
“স্যার মিস খুশির নামে হোস্টেলে রুম ঠিক করা হয়েছিল।ঠিক কিন্তু উনি এখনো হোস্টেলে আসেনি।”

” মানে কি! ভালো করে দেখে বলুন।”
“স্যার আমি ভালো করে দেখেই বলছি উনি আসে নি।”
মাহিরের এবার ভয়ে অবস্থা খারাপ।খুশি কই গেলো ভেবে। মাহির জলদি তাদের ড্রাইভারকে ফোন করে।
” কাকা খুশিকে কোথায় রেখে গেছিলেন আপনি?”
“মাহির বাবা খুশিতো গাড়ি তে যায়নি। একাই চলে গেছে। আমি কত করে বললাম রেখে আসি। কিন্তু একটা কথাও শুনে নি আমার।”

ড্রাইভারের কথা শুনে মাথা চক্কর দিয়ে উঠে মাহিরের। এখন রাত ১০ টা বাজে। কই গেছে খুশি?কোথায় খুজবে মাহির খুশি কে!অজানা ভয়ে বারবার বুক টা কেঁপে উঠছে মাহিরের। চোখ থেকে পানি পরে মাহিরের। মাহির খুশির জন্য কান্না করছে। এই শহরে খুশি তেমন কিছুই চিনে না। কই গেলো খুশি?খুশির কোন বিপদ হলো না তো!ভেবেই মাহিরের কলিজা শুকিয়ে আসছে। মাহিরের পাগল পাগল অবস্থা। কি করবে সে কিছুই বুঝতে পারছে। সেই কখন থেকে ফোন টা বেজে চলেছে তাতে কোন খেয়ালই নেই তার। ফোন কেটে গিয়ে আবার বাজতে শুরু করে এবার মাহিরের ফোনের ধ্যান আসে।ফোন নিয়ে দেখে আবিরের ফোন। ইচ্ছা না থাকলেও রিসিভ করে মাহির,

” মাহির তুই এই মুহুর্তে আমাদের বাড়িতে আয়।”(আবির)
“কেন? কি হয়েছে?”
” এসে দেখবি,তুই আয় জলদি।”
মাহিরকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন কেটে দেয় আবির। মাহির বুঝতে পারছে না কি করবে আবিরের বাড়ি যাবে নাকি খুশিকে খুঁজবে। অনেকক্ষন ভেবে মাহির আবিরের বাড়ির দিকে যায়। গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরে। যেতে যেতে আশেপাশের রাস্তাও দেখে। মাহির আবিরের বাড়িতে এসে কলিং বেল চাপে সঙ্গে সঙ্গে আবির দরজা খুলে দেয়। যেনো মাহিরের জন্যই ওয়েট করছিলো। মাহির বলে,

“কিছু কি হয়েছে?এমন করে ডেকে আনলি কেন?”
” খুশি কোথায় মাহির?”
আবিরের প্রশ্নে মাহির চমকে আবিরের দিকে তাকায়। আবির কি করে জানলো তাই ভাবে। মাহির মাথায় হাত দিয়ে সোফায় বসে পরে। আর কিছু খুলে বলে।
সব টা শুনে আবির বলে,
“আমার সঙ্গে আয়।”

বলেই উপরের রুমে নিয়ে যায় মাহিরকে আবির। রুম টা দেখেই বুঝা যায় এটা অথৈ এর রুম।মাহির অবাক হয় আবির তাকে অথৈ এর রুমে কেন নিয়ে আসছে দেখে।তখন চোখ যায় বেডে শুয়ে থাকা খুশির দিকে। পাশে অথৈ বসে আছে । দেখেই দৌড়ে খুশির কাছে যেতে লাগে কিন্তু আবির মাহিরের হাত ধরে টেনে আবিরের রুমে নিয়ে যায়।
“আবির করছিস কি?আমাকে খুশির কাছে যেতে দে। ওর কি হয়েছে?শুয়ে আছে কেন?মাথায় ব্যান্ডেজ করা কেন? যেতে দে আমাকে।আবির ছাড়।”

“বাচ্চাদের মতো করিস না মাহির। চুপ করে বস। খুশি মাত্রই ঘুমিয়েছে।ওর ঘুমানো জরুরি।”
মাহির এবার একটু শান্ত হয়ে নিজেই নিজেকে বুঝায়। তারপর আবির কে বলে,
” কি হয়েছে খুলে বল।খুশি এখানে কেন? ওর মাথায় ব্যান্ডেজ কেন?”
“অ্যাক্সিডেন্ট করেছে খুশি।”
“মানে!কখন আর কি করে?এখন কেমন আছে ও?”

এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ১৯

” আমি গাড়ি নিয়ে বাইরে গেছিলাম বিকেলে তখন খুশি আনমনা হয়ে রাস্তায় হাটছিল।হঠাৎ আমার গাড়ির সামনে চলে আসে।আচমকা গাড়ির সামনে পরায় আমি ব্রেক করতে পারি নি।গাড়িতে ধাক্কা লেগে নিচে পরে যায় খুশি।তবে বেশি ক্ষতি হয়নি। মাথায় একটু কেটে গেছে আর হাত ছিলে গেছে। আমি হসপিটাল থেকে আমাদের এখানেই নিয়ে আসি। কি হয়েছে জানতে চাইলে কিছু বলে না।আমি বলি আমি দিয়ে আসি বাড়িতে। তো বলে,আমি ওই বাড়িতে কখনো যাবো না। আমাকে হোস্টেলে দিয়ে আসুন। কিন্তু ওর শরীর খারাপ দেখে আমি যেতে দেইনি। এখানেই আজ থাকতে বলেছি,কাল দিয়ে আসবো। তখন বুঝিনি কেন যেতে চায় না তোদের বাড়ি কিন্তু এখন তোর কাছে সব শোনার পর বুঝতে পারছি কেন যেতে চায় না। আর আমি মনে করি খুশি ঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে,যেখানে ওকে অপমান করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে সেখানে কেন যাবে?”
একদমে পুরো কথা বলে থামলো আবির। মাহির এখনো চুপ করে আছে। আবির আবার বলে উঠে,

“মেয়েটাকে দেখেই বুঝা যায় তোকে কতটা ভালোবাসে।তুই কেন বলছিস না ওকে? তোর মনে হচ্ছে না তুই একটু বেশি বেশি করছিস নিজের ফিলিং লুকিয়ে রেখে?এমন করতে করতে খুব দেরি না হয়ে যায়,ভেবে দেখিস। আর হ্যাঁ এখন খুশির ঘুম ভাঙ্গবে না।ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়েছি।

বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো আবির। মাহির মাথা নিচু করে বসে আছে কিছু ভাবছে মাহির।সে নিজেই জানে না কি চলছে ওর মাথায়। অনেকক্ষন পরে উঠে অথৈ এর রুমে যায় মাহির। মাহিরকে তার রুমে দেখে অথৈ বের হয়ে যায়। খুশি এখনো ঘুমে। মাহির গিয়ে খুশির পাশে বসে। কপালের ক্ষত যায়গায় হাত বুলিয়ে কিস করে।খুশির মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,
” অনেক হয়েছে চুপ থাকা।আর না, এখন আমি আমার মন মতো সব কিছু করবো। খালামনি,ফুপি, আব্বু কিছুই করতে পারবে না।তাদের কথা আমি কিছুই মেনে চলব না।এখন আমি কি করি দেখ শুধু।”

এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ২১