এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ২১ || নুর নাফিসা খুশি || SA Alhaj

এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ২১
নুর নাফিসা খুশি

সকাল ৪ টায় ঘুম ভাঙ্গে খুশির। মাথা টা অনেক ব্যাথা করছে। উঠে বালিশে হেলান দিয়ে বসে খুশি পিট পিট করে চোখ খুলে চারি পাশ দেখতে লাগে। দেখেই চমকে যায় খুশি।লাফিয়ে বেড থেকে নামে।এতো জোরে উঠার কারনে পায়ে ব্যাথা লাগে কিন্তু সেদিকে পাত্তা না দিয়ে চারিপাশ ঘুরে দেখতে লাগে।
“এই বাড়ি কার।আমি কোথায় আছি? কাল ঘুমানোর আগে তো আমি অথৈ এর বাড়িতে অথৈ এর রুমে ছিলাম। এটা কোথায়!দেখে তো কোন ফ্লাট মনে হচ্ছে।”

খুশির মনে ভয় ঢুকে যায় সে কোথায় এলো আর কে নিয়ে এলো ভেবে।কলিজা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে কাউকে দেখতেও পাচ্ছে না। খুশি ঘুমিয়েছিল অথৈ এর বাড়িতে কিন্তু ঘুম থেকে অন্য একটা জায়গায় নিজেকে আবিস্কার করে ভয় পেয়ে যায়। তখনি দরজা খুলার আওয়াজ পায় খুশি।পিছনে তাকিয়ে মাহির কে দেখতে পেয়ে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করতে থাকে খুশি। কারণ সত্যি অনেক ভয় পেয়েছিলো।মাহির খুশিকে এভাবে কান্না করতে দেখে ভাবে খুশির কষ্ট হচ্ছে তাই উত্তেজিত হয়ে বলে।,

” খুশি কি হয়েছে কোথাও ব্যাথা করে? কষ্ট হচ্ছে খুব? আমাকে বল কি হয়েছে কান্না করিস না প্লিজ।’
খুশি মাহিরের কষ্ট শুনে স্বাভাবিক হয় আর গতকালের কথা মনে করে মাহিরকে নিজের কাছ থেকে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দেয়। এতে মাহির অবাক হয়না তার জানা ছিলো এমন কিছুই করবে খুশি। খুশি বলে,
“আমি কোথায়? আমি তো অথৈ এর কাছে ছিলাম এটা কার ফ্লাট?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” আমার।”(শান্ত স্বরে)
“আমাকে হোস্টেলে দিয়ে আসো ভাইয়া আমি এখানে থাকব না।”
মাহির জবাব দেয় না।খুশির কাছে গিয়ে খুশিকে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে। খুশি ছাড়ানোর চেষ্টা করছে কিন্তু খুশির শরীরে বিন্দু মাত্র শক্তি নেই যে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিবে। খুশির চোখ থেকে টপ টপ করে পানি পরছে। মাহির খুশিকে ছেড়ে খুশির চোখের পানি মুছে দিয়ে চোখে কিস করে।খুশি চোখ বন্ধ করে নেয় আবেশে। মাহির খুশির ব্যান্ডেজ করা জায়গায় কিস করে। তখন খুশি ফিল করে তার গালে তরল কিছু।খুশি চোখ খুলে দেখে মাহিরের চোখে পানি।মাহির কান্না করছে। এতে খুশি ভিষণ অবাক হয়।মাহিরের চোখের পানি খুশির গালে পরছে। খুশি মাহিরকে ছেরে বলে,

” ভাইয়া কি হয়েছে তোমার? কান্না করছো কেন?”
মাহির আবার খুশি কে জরিয়ে ধরে বলে।
“সব আমার জন্য হয়েছে। আমি যদি আরও খেয়াল রাখতাম।সব দিকে খোঁজ রাখতাম তাহলে তোর এমন হতো না।আব্বু ও তোকে অপমান করার সাহস পেতো না। খুব কষ্ট হয়েছে তাই না তোর? আমি খুব সরি রে, খুব খুব সরি।”
খুশি মাহিরের কথা শুনে অভিমানি সুরে বলে।

” আমাকে অপমান করলো বা আমার কষ্ট হলে তোমার তাতে কি ভাইয়া? তুমি কেন কষ্ট পাচ্ছ?”
মাহির খুশির চোখের দিকে তাকায়।খুশিও তাকিয়ে আছে মাহিরের চোখের দিকে। খুশির চোখ মাহিরের মুখে উত্তর খুজছে। কিন্তু মাহিরের কাজে খুশি অবাকের চরম পর্যায়ে চলে যায়।কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না মাহির কি করছে। যখন বুঝল মাহির তাকে কিস করছে তাও লিপ কিস তখন খুশি মাহিরকে সরানোর চেষ্টা করে।কিন্তু মাহির ছাড়ে না।১২ বছরের স্বাদ যেনো আজই মিটাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর মাহির খুশিকে ছেড়ে দেয়,খুশি হাপাতে থাকে। মাহির খুশির কাছে গিয়ে খুশির সামনে হাটু গেড়ে বসে বলে,

“ভালোবাসি তোকে, অনেক বেশি ভালোবাসি। আমি সবার মতো রোমান্টিক ভাবে প্রোপজ করতে পারি না। জানু বাবু কলিজা এই সব বলতে পারি না। তোর ভাষায় রস কস হীন আমি। সব কিছু মেনে নিয়ে তুই কি আমাকে ভালোবাসবি?”
খুশির হাত নিজে নিজে মুখে চলে যায়।খুশি ভাবতেও পারে নি মাহির তাকে প্রোপজ করবে। খুশির চোখ থেকে আবার বন্যার মতো পানি ঝরতে লাগে। খুশি ও মাহিরের সামনে বসে মাহিরকে জরিয়ে ধরে কান্না করতে লাগে। মাহিরের মুখে বিজয়ের হাসি ফুটে উঠে। কারণ খুশি তাকে ভালোবাসে জেনে এতো বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটে মাহিরের। খুশি এখনো কান্না করেই যাচ্ছে। ১০ মিনিট ধরে কান্না করছে খুশি।এতোক্ষন মাহির কিছু বলেনি। কিন্তু এবার বেশি হচ্ছে ভেবে মাহির বলে,

” এখনো কান্না করবি?এবার তো থাম! তোর চোখের পানিতে এবার সাগর হয়ে যাবে সেখানে দুই জনে ডুবে মরব। ”
মাহিরের কথায় খুশি মাহিরের বুকে কয়েক টা কিল ঘুসি মেরে দেয়। মাহির আবার বলে,
“এবার থাম প্লিজ। ”
” আমার কান্না পাচ্ছে তো আমি কি করবো, আআ।”(কান্না করে বলে খুশি)
“ওহ আল্লাহ কাকে পেলাম।কান্না থামা বলছি।”
” থামছে না তো কি করবো আমি।আমার খুব কান্না পাচ্ছে। ”

মাহির এবার আর কোন উপায় না পেয়ে খুশির ঠোটে আবার কিস করে দেয় এতে খুশি একদম চুপ। মাহির ছেরে দিয়ে বলে,
“বললেই হতো তোমার আরোও আমার ঠোটের ছোঁয়া লাগবে।বললেই দিয়ে দিতাম,এতো কান্না করার কি আছে হুহ।”(মজা করে)
খুশি রেগে গিয়ে মাহিরকে মারতে থাকে আর বলে,
” বজ্জাত কোথাকার।লুচুমি করস শুধু।”
“আরে আস্তে তোর হাতে ব্যাথা লেগে যাবে তো। ফ্রেশ হয়ে নে আমি নাস্তা রেডি করছি।”
” কিন্তু এটা কার ফ্লাট?তোমার আব্বুর হলে আমি এখানে থাকবো না।আমাকে হোস্টেলে দিয়ে আস।”
“এটা আমার ফ্লাট।আমার নিজের টাকায় কেনা। আমার বাপের না।”
” কিন্তু আমি এখানে একা থাকতে পারবো না তাই
হোস্টেলেই দিয়ে আসো আমাকে ভাইয়া।”

“কে বলেছে তুই একা থাকবি? এখানে আমিও থাকব।”
” ওমা না না।তুমি বাড়ি যাবে ভাইয়া।খালামনি কষ্ট পাবে।আর আমাদের বিয়ে হয়নি লোকে দেখলে খারাপ বলবে।’
“আম্মু কিছু বলবে না আম্মুই আমাকে এই আইডিয়া দিয়েছে। আর বিয়ে হয়নি?সেটার ও ব্যাবস্থা আছে আমার কাছে। ”
” কি করবা?”
“উফ বড্ড বেশি প্রশ্ন করিস তুই।যা ফ্রেশ হয়ে আয়, আমি নাস্তা রেডি করছি।”
” কিন্তু…”
খুশিকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ওয়াশরুমে ঠেলে ঠুলে পাঠিয়ে দেয়।
খুশি ফ্রেশ হয়ে এসে বেডে বসে। তখন মাহির নাস্তা নিয়ে এসে খুশির সামনে বসে পরে। খুশি বলে,

“এগুলা কে বানালো?”
” আমি।”
“ভাইয়া তুমি পরোটা,আলু ভাজি করতে পারো!”(অবাক হয়ে)
” না, ইউটিউব দেখে করেছি।বাট খারাপ হয়নি দেখ।”
তখন খুশি একটা পরোটা তুলে দেখে ট্যারা, ইন্ডিয়ান ম্যাপকেও হার মানাবে। একদিক খুব কাঁচা হয়ে আছে আরেক দিক পুরে গেছে। খুশির অনেক হাসি পায় দেখে।তবুও চুপ করে আছে,মাহির মন খারাপ করবে তাই। মাহির বলে,
“খেয়ে দেখ।”
” তুমি খাইয়ে দাও।”

এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ২০

মাহির কিছু না বলে পরোটা ছিড়ে আলু ভাজি নিয়ে খাইয়ে দেয় খুশি কে।খুশি চিন্তায় ছিল আলুটা কেমন হয়েছে না জানি ভেবে। কিন্তু খেয়ে দেখে আলু ভাজি টা বেশ ভালোই হয়েছে। পরোটা একটু তেতো লাগছে শুধু পুরে যাওয়ার কারণে। এই ফ্লাটে কেউ থাকে না তাই তেমন কিছু কেনাও ছিল না।বাইরের খাবার নিয়ে আসেনি কারণ খুশি কে বাইরের খাবার খাওয়াবে না। তাই নিজেই রান্না করেছে।।মাহির বলে,
“তুই কি একাই খাবি?আমিও কিন্তু কিছু খায়নি। আমাকেও খাইয়ে দে। ”
” না না ভাইয়া খেলে তো বুঝে যাবে পরোটা ভালো হয়নি বেশি।তখন মন খারাপ করবে,ওকে খেতে দেওয়া যাবে না।”(মনে মনে বলে খুশি)

“আব,, ভাইয়া আমার বেশি ক্ষুধা লাগছে।আমি সব খাবো, তুমি খাবা না।”
” তুই এতো রাক্ষসী কি করে হলি?আগে তো খেতি না।”
“তুমি বানিয়েছ তাই। বেশি মজা,আমি সব খাব।”
” না না আমি বানিয়েছ,।আমি খেয়ে দেখব না কেমন হয়েছে? ”
বলেই এক টুকরো পরোটা ছিড়ে মুখে নিল মাহির।
আর পোড়ার কারনে এতো তিতা যে মাহির মুখ থেকেই ফেলে দিয়ে পাশ থেকে পানি নিয়ে ঢকঢক করে খেতে লাগে। পানি খাওয়া শেষ হলে,খুশির দিকে চোখ গরম করে তাকায় মাহির আর খুশি মাথা নিচু করে নেয়।

এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ২২