এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ২২ || নুর নাফিসা খুশি || SA Alhaj

এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ২২
নুর নাফিসা খুশি

রোদ কাচুমাচু হয়ে বসে আছে আবির ও আবিরের আব্বু, আম্মুর সামনে। অথৈ আবিরের পাশে বসে মিটিমিটি হাসছে।রোদ তার আব্বু আম্মুকে নিয়ে অথৈকে দেখতে এসেছে কিন্তু রোদের ভাব দেখে মনে হচ্ছে রোদ নিজেই কনে আর অথৈ বর। রোদ এতো লজ্জা পাচ্ছে একটা কনেও এতো লজ্জা পায় না এখনের যুগে। রোদের এই অবস্থা দেখে আবির ও অথৈ দুইজনেই মজা পাচ্ছে, মিটিমিটি হাসছে। আবিরের আব্বু আম্মু আর রোদের আব্বু আম্মু আলাদা ভাবে কথা বলছে। আবির অথৈকে ফিসফিস করে বলে,

“এই ছেলে তোকে জোর করে বিয়ে করেছে?আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না।”(আবির মুখ টিপে হেসে)
” আমারও হচ্ছে না ভাই।”
“আয় একটু মজা নেই।”
বলেই আবির গম্ভীর হওয়ার চেষ্টা করে রোদকে প্রশ্ন করে,
” তো আমার বোনই কি তোমার প্রথম লাভ নাকি আরও অন্য কেউ ছিলো? আমি কিন্তু সেকেন্ড হ্যান্ড ছেলের সঙ্গে আমার বোনের বিয়ে দিব না।” (আবির)

আবিরের কথায় আরো ভয় পেয়ে যায় রোদ। যদিও রোদ আর কোন প্রেম করেনি।অথৈই প্রথম কিন্তু আবিরকে তার খুব ভয় লাগে। অথৈ রোদকে বলেছিল তার ভাই অনেক রাগী আর মাহির ও বলেছিল। তখন থেকেই জমের মতো ভয় পায় রোদ আবিরকে। রোদকে চুপ থাকতে দেখে আবির বলে,
“কি ব্যাপার এসি রুমেও ঘামছো কেন তুমি?আর উত্তর দিচ্ছ না যে?তাহলে কি আমি ধরে নিব আগেও প্রেম করতা?”(আবির)
আবিরের এমন কথায় শুকনা গলায় বিশম খায় রোদ। সামনে রাখা পানি নিয়ে ঢকঢক করে খেয়ে বলে,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” না না আমি প্রেম করিনি আগে।এটাই প্রথম,সত্যি!”
রোদের এই অবস্থা দেখে অথৈ নিজের হাসি কন্ট্রল করতে পারছে না।তবুও পেটের মধ্যে চেপে চুপে হাসি দাবিয়ে রাখে। কারণ শ্বশুর শ্বাশুড়ী বসে আছে। নতুন বউ কে এভাবে হাসতে দেখলে খারাপ দেখায় না?তাই পেটে গিজিমিজি হাসি থাকতেও চুপ করে আছে।
“আর না অনেক হয়েছে মজা নেওয়া।ছেলেটা এবার কেঁদেই দিবে এমন অবস্থা।” (আবির অথৈকে ফিসফিস করে বলে)
“অথৈ রোদকে তোর রুম দেখা যা।” (আবির)
“ওকে ভাই। আসুন।”

অথৈ এর আসুন বলতে দেড়ি হলেও রোদের উঠতে দেড়ি না। রোদ চাইছিলই এখান থেকে যেতে। অথৈ রোদ কে তার রুমে নিয়ে যায়। অথৈ রুমে গিয়ে আর তার পেটের মধ্যে হাসি চেপে রাখতে পারলো না।রোদের সামনেই খিল খিল করে হেসে উঠে। হাসতে হাসতে খাটে শুয়ে পরে অথৈ। রোদ রাগি চোখে অথৈ এর দিকে তাকিয়ে আছে। রোদ এবার অথৈ এর হাত ধরে বেড থেকে টেনে তুলে দেয়ালে চেপে ধরে। আচমকা এমন করায় অথৈ এর হাসি উবে যায়।

” খুব হাসি পাচ্ছে না?”
“ইয়ে মানে না মানে।”
” এখন কি হলো?হাসি কই গেলো?”
“আর হাসবো না ছাড়ুন।”
” তার আগে বলো তুমি খুশি তো? আমার
উপর রেগে নেই?”

“সেটা পরে দেখা যাবে।আর এই বিয়ে মেনে নিয়েছি কারণ আমার ভাই মেনে নিয়েছে।আমার ভাই এর কথা শেষ কথা।”
আবির মাহিরের কাছে রোদের ব্যাপারে শোনার পরও রোদের ব্যাপারে খবর নিয়েছে।রোদ অনেক ভালো একটা ছেলে। এমন ছেলেই আবির অথৈ এর জন্য খুঁজছিল। তাই বাড়ির সবাইকে রাজি করায়। অথৈ ও মেনে নেয় সব কিছু। বিয়ে তো একবার হয়েই গেছে তাই আর বিয়ের অনুষ্ঠান করবে না।রিসিপশনে ধার্মিক ভাবে বিয়ে পড়াবে।

খুশির পুরোপুরি ঠিক হতে বেশ কয়েকদিন সময় লাগে। এর মাঝে কলেজেও যাওয়া হয়নি খুশির। মাহির ও যায়নি বললেই চলে খুব দরকার ছাড়া। মাহির খুশির ঠিক না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতে ফিরেনি।এতে মাহিরের বাবা অনেক ক্ষেপে আছে। তার উপর মাহিরা মাহিরের আব্বুর সঙ্গে কথা বন্ধ করে দিয়েছে যেদিন জেনেছে খুশির এই বাড়ি ছাড়ার পিছনে তার নিজের স্বামী দায়ী। এই দিকে ফুফি অনেক টেনশনে পরে যায় তার প্ল্যান কিছুই কাজে লাগেনি। উল্টা মাহির এই বাড়ি ছেড়েছে। তার যে কিছু একটা করেই হোক,রুকশাকে মাহিরের বউ করতে হবে।

গাড়ি থেকে নেমে যায় খুশি আর মাহির।কলেজে এসেছে আজ তারা। তবে মাহির খুশিকে কলেজে রেখে তার নিজের বাড়িতে যাবে তার আব্বুর সঙ্গে বোঝাপড়া আছে তার তাই। এতোদিন খুশি অসুস্থ থাকায় কোথাও যেতে পারেনি।এই কয়দিনে মাহিরের বাবা অনেক বার ফোন করেছে ছেলেকে কিন্তু মাহির ফোন ধরে নি। মাহিরের এমন ব্যবহারে বুঝতে বাকি নেই তার ছেলে সব কিছু জেনে গেছে। বাড়িতেও মাহিরের আম্মু মাহিরের আব্বুর সঙ্গে কথা বলে না। সব নিয়ে অনেক চিন্তায় আছেন মাহিরের বাবা।

“কিছু অসুবিধা হলে আমাকে ফোন করবি খুশি।”
” আরে আমার কিছু হবে না আমি একদম ঠিক আছি।আর কলেজে তো অথৈ আছেই। কোন সমস্যা হবে না।”
“ওকে কলেজ শেষে আমার জন্য ওয়েট করবি।একা চলে যাবি না। ”
” ঠিক আছে। ”

মাহির খুশি কে জরিয়ে ধরে।মাহিরের ভালো লাগছে না খুশিকে একা রেখে চলে যেতে কিন্তু তার বাবার সঙ্গে কথা তাকে বলতেই হবে আজ। মাহির খুশির কপালে চুমু দিয়ে চলে যায়। খুশি ও হেটে কলেজের দিকে যেতে লাগে। মাহির কলেজ গেট থেকে একটু আগেই গাড়ি থামিয়েছিল। তাই হেঁটেই যেতে লাগে খুশি।
খুশি নিজের মতো হেঁটে যাচ্ছিলো যাচ্ছিলো তখনই পিছন থেকে কে যেনো রুমাল দিয়ে মুখ চেপে ধরে খুশির। খুশি কিছু করবে না বলবে তার ও সুযোগ পেল না। নেতিয়ে পরলো নিচে জ্ঞান হারিয়ে।

মাহির বাড়িতে ঢুকেই দেখল সোফায় বসে খবরের কাগজ পরছে মাহিরের আব্বু। অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে আছে। মাহির বাড়িতে ঢুকেই একটা ফুল দানি নিয়ে খুব জোরে ভেঙ্গে ফেললো। ভাংচুরের শব্দ পেয়ে মাহিরের আব্বু চমকে উঠে দাঁড়ায়।রান্না ঘর থেকে মাহিরের আম্মু বের হয়ে আসে। ওপর থেকে ফুফি আসে।রুকশা আসে না শুধু। মাহিরের আব্বু বলে,
“এটা কি হচ্ছে মাহির? ভদ্রতা কি ভুলে গেছ?”(রেগে বলে আব্বু)

মাহিরের আম্মু চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। কিছুই বলছে না। মাহির তার আম্মুর কাছে গিয়ে বলে,
” খুশি কে এই বাড়ি তে কে এনেছিল আম্মু।কার অর্ডারে খুশি এখানে এসেছে?”
“আমি তোমার সঙ্গে কথা বলছি। তুমি কি সেটা শুনতে পাও নি?”
মাহির তার আব্বুর দিকে হাত দেখিয়ে থামতে বলে আর বলে,
” আমি আমার আম্মুর সঙ্গে কথা বলছি এর মাঝে অন্য কেউ আসলে ভালো হবে না।”
মাহিরের কথায় তার আব্বু চুপ হয়ে যায়। মাহির আবার তার আম্মুর দিকে তাকিয়ে বলে,

“চুপ না করে থেকে জবাব দাও আম্মু।”
” তোর অর্ডারে তোর কথাতেই আনা হয়েছে।”
“এই কথাটা তোমার স্বামী কে ভালো করে জানিয়ে দাও যদি না জেনে থাকে।”
মাহির এবার তার ফুফির সামনে দাড়িয়ে বলে।

” তুমি কি ভুলে গেছ তুমি এখানে গেস্ট হয়ে এসেছ? ভুলে গিয়ে থাকলে মনে করিয়ে দিচ্ছি তুমি প্যারিস থেকে এখানে ঘুরতে এসেছ কিছু দিনের জন্য মনে থাকে যেনো। আর আমি তোমাকে কখনো বলেছি আমি তোমার মেয়েকে বিয়ে করবো? ”
“মাহির তুমি একটু বেশিই বলছো এবার।এভাবে আমাকে অপমান করতে পারো না।”(ফুফি রেগে)
” অপমানের কিছুই করিনি এখনো ফুফি।আমাকে বাধ্য করো না আরও কিছু বলতে। ভাইয়ের বাড়ি এসেছো ঘুরো, ফিরো খাও। আমার পার্সোনাল লাইফে ঢুকতে আসবে না। কোন অধিকারে খুশি কে অপমান করেছো তুমি।”

ফুফি চুপ করে আছে কিন্তু রাগে তার শরীর জ্বলে যাচ্ছে। পারলে মাহিরকে এখানেই মেরে ফেলবে এমন। কিন্তু তা সে কখনই করতে পারবে না।যা করার সেটা করে ফেলেছে ফুফি এই ভেবেই এতো অপমানের পরও শয়তানি হাসে ফুফি।এই হাসি কেউ দেখল না। মাহির এবার তার আব্বু কে বলে।
“তো মিস্টার চৌধুরী এবার আপনি বলুন খুশি কে মেনে না নেওয়ার কারণ?”
মাহিরের আব্বু রেগে জবাব দেয়,
” ওই মেয়ে ছোট থেকেই তোমার পিছু নিয়েছে,তুমি কি ভুলে গেছ ওই মেয়ের মা তোমাকে কতো অপমান করেছিল?এমন কি তোমাকে দেশ ছাড়তেও বাধ্য করেছিল।”

“অপমান টা দেখলে,দেশ ছাড়াটাই দেখলে তোমার ছেলের ভুল টা দেখলে না? আমার জন্য খুশি মরতে বসেছিলো। তোমার ছেলের যদি এমন অবস্থা হয় তো তুমি ঠিক থাকবে সেই সময়? খালামনির এক মাত্র মেয়ে সে।খুশি ছাড়া কেউ নেই তাদের আর সেই বিপদে পরেছিল আমার জন্য। এতে খালামনির ঠিক থাকার কথা?%(রেগে চিৎকার করে বলে মাহির)
মাহিরের কথায় আব্বু আর কোন জবাব দিতে পারল না। হয়তো বুঝেছে সে ভুল করেছে। মাহির আরও কিছু বলতে যাবে তখনি ফোন আসে মাহিরের।মাহির ফোন রিসিভ করে কানে দেয়। ফোন কানে দিতেই কেউ উচ্চস্বরে হেসে উঠে।মাহির ভ্রু কুচকে কান থেকে ফোন সরিয়ে দেখে অচেনা নাম্বার।আবার কানে দিয়ে বলে,

” কে?”
“ওহহো মাহির চৌধুরী এতো জলদি ভুলে গেলে হবে। ”
” নীল।” (রেগে)
“মনে আছে তাহলে দেখছি।এক্স
” কি চাই তোর?”(রেগে)
“ওই যে বলেছিলাম তোর পার্সোনাল সম্পত্তিতে আমার খুব লোভ।সেটা নিজের নামে না করা পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছি না। আজ সেই দিন আমার হা হা হা।”(বলেই আবার হেসে উঠে নীল)
” নীল খুশির কোন ক্ষতি হলে তোকে আমি মেরেই ফেলবো। খুশির থেকে দূরে থাক।”(রেগে)
“আয় তোর সঙ্গে একটা গেম খেলা যাক।”

” গেম কিসের গেম?”
“এক ঘন্টা সময় দিলাম। এই সময়ের মধ্যে তুই যদি খুশিকে খুঁজে পাস তো খুশি তোর আর যদি না পাস তো খুশি আমার। ”
” খুশি কোন পুতুল না যে তাকে নিয়ে গেম খেলা হবে।”(রেগে)
“ওহ তার মানে তুই আগেই আগেই হার মেনে নিচ্ছিস।বাহ! এতে অবশ্য আমারই ভালো।তাহলে আমি ভেবেই নিলাম খুশি আমার। ”
” না একদমই না।আমি রাজি।”
“ওকে তোর সময় শুরু এখন।খুঁজে নে ওকে এক ঘন্টার মধ্যে।”
বলেই ফোন কেটে দিল নীল।মাহির দৌড়ে বেরিয়ে যেতে লাগে তখনি মাহিরের আম্মু বলে,
” মাহির কি হয়েছে?কোথায় যাচ্ছিস?”
“আম্মু পরে বলবো। ”
বলেই চলে গেলো মাহির।এই দিকে ফুফি,

এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ২১

” খুঁজ খুঁজ,সারাদিন রাত খুজ। এক ঘন্টায় তোমাকে জাহান্নাম না দেখিয়েছি আমি তো আমিও রেহানা না। আমার মেয়ে কে অপমান,আমাকে অপমান করার সাজা ঠিকি তুমি পাবে।” (মনে মনে বলেই শয়তানি হাসে ফুফি)
রুকশা কলেজে গিয়েই খবর নিয়েছে নীলের মাহিরের সঙ্গে ঝামেলা আছে তাও খুশিকে নিয়ে। রেহানা রুকশা দুইজন মিলেই নীলকে খুঁজে বের করে আর প্ল্যান করে মাহির খুশি কে কি করে আলাদা করবে। নীলের খুশি চাই আর মাহির কে জব্দ করতেও প্রতিশোধের নেশায় রেহানা ও রুকশার সঙ্গে হাত মিলায় নীল। এতো দিন প্ল্যান করেই রেখেছে।কিন্তু খুশি মাহির কেউই বাইরে বের হচ্ছিলো না দেখে কিছুই করেনি তবে লোক লাগিয়ে রেখেছিল মাহির খুশি কি করে বা কই যায় সেই খবর নিতে। আজ কলেজের জন্য বের হয়েছে দেখেই নিজের প্ল্যান মতো কাজ করেছে তারা।

মাহির গাড়িতে বসে গাড়ি চালাতে শুরু করবে তখনই ফোনে মেসেজ আসে। হোয়াটস অ্যাপ অন করে দেখে একটা ভিডিও। মাহির ভিডিও অন করে দেখে খুশির হাত পা চেয়ারের সঙ্গে বেঁধে রেখেছে।খুশির এখনো জ্ঞান ফেরেনি।নীল তার হাত দিয়ে খুশির চুল সরিয়ে এক আঙ্গুল দিয়ে গালে স্লাইড করে।এটা দেখেই মাহির ক্ষেপে যায়। ফোন বন্ধ করে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যায় খুশিকে খুঁজতে।

এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ২৩