এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ৪ || নুর নাফিসা খুশি || SA Alhaj

এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ৪
নুর নাফিসা খুশি

মাহির খুশির দুস্টু মিস্টি ঝগড়ায় কিছু দিন কেটে যায়।আজ খুশির কলেজে আসতে দেরি হয়ে গেছে। মাহির ও আজ খুশি কে না নিয়েই আগে চলে এসেছে কলেজ। খুশি তারাতারি ট্যাক্সি থেকে নেমে দ্রুত পা চালিয়ে কলেজের ভিতরে ঢুকে। কিন্তু ভিতরে যেতেই কার সঙ্গে যেনো ধাক্কা লেগে নিচে পরে যায় খুশি। রেগে তার দিকে তাকিয়ে দেখে একটা ছেলে। দেখতে বেশ সুন্দর। খুশি রেগে মেগে ছেলেটাকে বলে,

“ওই মিয়া চোখে দেখেন না? মেয়ে দেখলেই গায়ে পরতে ইচ্ছা করে?”
ছেলেটা কিছু বলে না ড্যাপ ড্যাপ করে খুশির দিকে তাকিয়ে আছে যেনো চোখ দিয়েই গিলে খাচ্ছে খুশি কে। খুশি ভ্রু কুচকে তাকায় ছেলেটার দিকে।খুশির কাছে ছেলেটার নজর অন্য রকম লাগে তাই কথা না বাড়িয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যায় খুশি।খুশির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলো ছেলেটা। তখনি একটা ছেলে বলে,

” নিউ এসেছে নীল ভাই।দেখতে পুরাই ঝাক্কাস।”
নীল ছেলেটার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে এক থাপ্পর দেয় ছেলেটাকে আর বলে,
“সন্মান দিয়ে কথা বলবি ভাবি লাগে তোদের।”
” সরি ভাই।”(গালে হাত দিয়ে মাথা নিচু করে বলে।)
“এই মেয়ের সব ডিটেলস আমার চাই।”(নীল)
” জি ভাই আমি সব জেনে তোমাকে বলছি।”
খুশি আর নীলের ধাক্কা লাগার সিন দূর থেকে কেউ একজন দেখে রাগে অন্য দিকে চলে যায়।
এই দিকে ক্লাসে খুশি বসে আছে একা।এখনো অথৈ আসে নি।খুশি বই নিয়ে নারাচারা করছিলো তখনি অথৈ এসে খুশির মাথায় বারি দেয়,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“আআ কুত্তি লেগেছে অনেক আমার।”
” হাহা ঠিক হয়েছে লেগেছে।এতো পড়াশোনা করে কি হবে কলেজ এসেই বই নিয়ে পরেছিস।”(অথৈ)
“পড়াশোনা করে অনেক কিছু হবে। তুই গল্পের নায়ক আর সব ছেলের উপর ক্রাশ খেয়ে বেরা।”
” আমি কই সব ছেলের ওপর ক্রাশ খেলাম।মাত্র তো ৭৯ টা ক্রাশ আমার।”(মন খারাপ করে)
“৭৯ টা মাত্র?”(খুশি চোখ বড় করে তাকিয়ে)
” হুম মাত্রই তো। আরে খুশি জানিস আমার একটা ক্রাশ আমাকে সেই লেভের ছ্যাকা দিয়েছে।”(মন খারাপ করে)
“বাব্বাহ তোকে ছ্যাকা দিয়েছে? আমি ভাবছি তুই সবাই কে ছ্যাকা দিয়ে বেরাস।”
” আরে দূর শুন আগে।”
“আচ্ছা বল।”

” আমাদের কলেজের মাহির চৌধুরী আছে না? কলেজের ভিপি।ছেলেটা কত্তো কিউট,আমি তো প্রথম দিনে দেখেই ক্রাশ খেয়ে বসেছি।”
অথৈ এর কথা শুনে খুশির কেন জানি একটু রাগ লাগছে। তবুও খুশি বললো,
“তারপর কি?”
“তারপর একদিন কলেজের ক্যান্টিনে দেখি মাহির আর তার ফ্রেন্ডরা বসে আড্ডা দিচ্ছে। আমিও একটু স্টাইল করে হেলেদুলে তাদের সামনে দিয়ে দুই তিন বার হেঁটে গেলাম কিন্তু পাত্তাই দিল না আমাকে। পরে মাহির আমাকে এমন কথা বললো আমার দিল টুট কার বিখার বিখার করে দিল।

“কেন কি বলেছিল?”
“বলেছিল ‘এই যে ছোট বোন তোমার মনে হয় কোন কাজ নেই তাই এভাবে যাওয়া আসা করছো।তোমার মাহির ভাই এর জন্য এক কাপ কফি নিয়ে আসো তো।’ ক্রাশ থেকে সোজা ভাইয়া বানিয়ে দিল আর আমাকে কি বললো? ছোট বোন।সেই দিন থেকে আমি তার বোন লাগি আর সে আমার ভাই। কতো বড় ছ্যাকা বুঝতে পারছিস?”(মন খারাপ করে)
অথৈ এর কথা শুনে খুশি হাসতে হাসতে নিচে পরে যাওয়ার উপক্রম।ক্লাসের সবাই খুশির দিকে তাকিয়ে আছে আর অথৈ তো রেগে বোম একদম। তখনই ক্লাসে স্যার ঢুকে।খুশি অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে ক্লসে মন দেয়। তবে খুশির এখনো হাসি পাচ্ছে খুব।স্যারের সামনে তো আর হাসতে পারবে না তাই হাসি গুলো পেটের মধ্যে রেখে দিল।
ক্লাস শেষে দুইজনে বেরিয়ে এলো। অথৈ চুপ করে আছে তা দেখে খুশি বলে,

” চুপ করে আছিস কেন?”
“তুই আমার কষ্ট দেখে হাসলি তাই।”
“ওহহো। আচ্ছা সরি আর হবে না এমন।তবে একটা কথা জানিস? মাহির আমারও ভাইয়া হয়।”
“কি করে?”
” তোকে তো বলেছি আমি গ্রামে থাকি।এখানে খালামনির বাড়ি থেকে পড়াশোনা করি। তো ওই আমার খালাতো ভাই হচ্ছে মাহির চৌধুরী।”
খুশির কথা শুনে অবাক হয়ে তাকায় অথৈ।
“তারমানে তোরা এক বাড়িতে থাকিস?”
” হ্যাঁ।”
“বাহ বাহ। আমার এখন একটা কথা খুব মনে পরছে।”
” কি?”
“খালাতো ভাই যখন জামাই,হাহা।”
” তবে রে দাঁড়া তুই।”

খুশি অথৈ এর পিছু নেয় ওকে ধরার জন্য। অথৈ আগে দৌড়াচ্ছে আর খুশি পিছনে।দৌড়াতে দৌড়াতে খুশি এক সময় মাহিরের সঙ্গে ধাক্কা লেগে দুইজনেই নিচে পরে যায়।অথৈ পিছনে তাকিয়ে দেখে খুশি মাহির নিচে পরে আছে। মাহির নিচে, খুশি উপরে। অথৈ জলদি জলদি ফোন বের করে কয়েক টা সুন্দর করে ছবি তুলে নেয়।
এই দিকে মাহির রেগে খুশি কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে উঠে দাঁড়ায়। খুশি ও উঠে দাঁড়ায়। খুশি কিছু বলতে যাবে তখনি সজোরে একটা থাপ্পর বসিয়ে দেয় মাহির খুশির গালে। খুশি থাপ্পর খেয়ে অবাক চোখে মাহিরের দিকে তাকায়।মাহির রেগে আগুন হয়ে আছে দেখেই বুঝা যাচ্ছে।

অথৈ থাপ্পরের শব্দে চমকে উঠে।অবাক হয় এভাবে খুশিকে থাপ্পর মারায়।মাহির বলে,
“দেখে চলতে পারিস না? সব সময় ছেলেদের গায়ে পরিস শুধু। নাকি ইচ্ছা করেই পরিস? ভালো লাগে তোর ছেলেদের গায়ে পরতে? তাই দিনে দুই তিন বার করে পরতেই হবে।অসভ্য মেয়ে একটা। লাজ লজ্জা কিছুই নেই।”
কথা গুলা বলেই মাহির সেখান থেকে চলে যায়। সকাল থেকে মাহিরের এমনিতেই রাগ উঠে ছিলো আর খুশির ওপরই সব রাগ ঝাড়ল মাহির সামান্য ভুলে। খুশি তো পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে গালে হাত দিয়ে। চোখ থেকে টপ টপ করে পানি পরছে।অথৈ এসে কিছু বলতে যাবে তার আগেই খুশি সেখান থেকে চলে যায় সোজা বাড়িতে।

রাত ৯ টায় বাড়িতে আসে মাহির।এসে নিজের রুমে চলে যায় ফ্রেশ হয়ে।এক ঘন্টা পরে নিচে আসে রাতের খাবার খেতে।এসে দেখে খুশি যেইখানে খেতে বসে সেই জায়গাটা খালি।মাহির অবাক হলো,কারন এই কয়দিনে রাতের খাবার খেতে খুশি সবার আগে আসে।তখনই খালামনি লতিফা কে বলে,
” লতিফা খুশিকে ডেকে নিয়ে আয়।”
“জি আনতাছি।”
বলেই লতিফা খুশির রুমে চলে যায়।পাঁচ মিনিট পরে লতিফা এসে বলে,
” খুশি আফা খাইবো না বললো। হেতির নাকি ক্ষিদা নাই।”

লতিফার কথা মাহির শুধু শুনল।মাহির এবার বুঝতে পারছে খুশি রাগ করে খাবে না বলেছে।কলেজে থাপ্পর মারা ঠিক হয়নি মাহিরের। এখন এগুলা ভেবেই রাগ লাগছে মাহিরের। রাগ কেন মাহির কন্ট্রল করতে পারে না বুঝতে পারছে না।এই রাগের জন্যে ছোট বেলায় অনেক বড় অঘটন করেছিলো সে।আজ আবার রাগে থাপ্পর দিল,
“কেন খাবে না?আচ্ছা আমি দেখছি।”(বলেই খালামনি উঠে যেতে নেয় কিন্তু মাহির থামিয়ে বলে)
” আম্মু তুমি থাকো আমি দেখছি।আর এক প্লেট খাবার বেড়ে দাও।”
“আচ্ছা। ”
তারপর খালামনি খাবার নিয়ে এসে মাহিরকে দেয় আর বলে,
“নে দুইজনেরই খাবার দিয়ে দিয়েছি।তুই ও খেয়ে নিস। আর হ্যাঁ রাগ দেখাবি না একদম। মনে থাকে যেন।”
“হুম।”

মাহির উপরে খুশির রুমে যায়। খুশির রুমের দরজা একটু চাপানো ছিলো, তাই মাহির ঠেলে ভিতরে ঢুকে। খুশি অন্যপাশে মুখ করে শুয়ে ছিলো। দরজা খোলার আওয়াজে খুশি ভাবে লতিফা আবার এসেছে তাই বলে,
“লতিফা আপু তুমি যাও আমি খাবো না।আমার ক্ষুধা নাই।”
” থাপ্পর খেয়ে কি পেট ভরে গেছে?”(মাহির)

খুশি বুঝতে পারলো এটা লতিফা না।মাহির এসেছে। তবুও উঠে বসল না খুশি।একই ভাবে শুয়ে থাকলো। খুশির রাগ হয়নি অভিমান হয়েছে।রাগ হলে এতোক্ষনে কোমড় বেঁধে ঝগড়া করতে লাগতো। মাহির খুব বুঝতে পারে ম্যাডামের খুব অভিমান হয়েছে। মাহির খাবারটা বেড সাইড টেবিলে রেখে বেডে বসে। খুশি এখনো অন্য দিকে মুখ করে শুয়ে আছে চোখ বন্ধ করে।যেনো একটা ভদ্র বাচ্চা ঘুমিয়ে আছে। মাহির খুশিকে ডাক দেয়,

“খুশি তুই উঠবি নাকি আমি টেনে তুলবো? ”
খুশি চুপ।
” খুশি আমাকে রাগাস না নয়তো আবার থাপ্পড় খাবি।”
এবারও চুপ খুশি।
মাহির এবার না পেরে খুশির বেনী করা চুল ধরে টেনে বসায় খুশি কে।চুলে ব্যাথা পেয়ে খুশি উঠে বসে বলে,
“সমস্যা কি ভাইয়া?এভাবে তুললেন কেন?”
” খাবার টা খেয়ে নে তারপর যা ইচ্ছা করিস।”(এখনো চুল ধরে আছে মাহির)
“আমার ব্যাথা লাগে চুলে ছাড়েন। আর আমি খাবো না।বললাম তো ক্ষুধা নেই।”
” তোর রাগ তুই তোর পকেটে রাখ। ওহ সরি তোর তো আবার পকেট নেই। তুই তোর ব্যাগে রাগ ভরে রাখ। এখন খাবারটা খেয়ে আমাকে উদ্ধার কর।”(চুল আরো একটু টেনে)

“আমি না খেলে তোর কি?”
” আমার অনেক কিছু।”(খুশির চোখের দিকে তাকিয়ে)
“কি অনেক কিছু?”
” অনেক কিছু মানে হলো তোর আম্মু আব্বু তোকে এখানে আমাদের ভরসায় রেখেছে।তুই যদি না খেয়ে মরে যাস তখন সব আমাদেরই কথা শুনাবে।”(কথা কাটিয়ে বলে মাহির)
“একদিন না খেলে কেউ মরে যায় না।”
” তুই মরবি আর না মরলেও আমি মেরে ফেলবো।নে এবার হা কর।”(ভাত মেখে খুশির মুখের সামনে ধরে)
খুশি খাবে না তাই অন্য পাশে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। মাহির ভাতের থালা টা বেডে রেখে এক হাতে খুশির মুখ শক্ত করে ধরে মুখে ভাত ভরে দেয়। খুশি চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে মাহিরের দিকে।মাহির যে এমন করবে ভাবতেও পারে নি। মুখের ভাত আর ফেলতে না পেরে খেয়ে ফেলে।

খুশি আর কিছু বলে না চুপচাপ মাহিরের হাতে খেতে থাকে।মাহিরের দিকে এক পলকে তাকিয়ে আছে খুশি।ছেলেটা কতো কেয়ারিং।শুধু রাগ দেখায়,এটাই। দিন দিন সে যে এই ছেলের ওপর দূর্বল হচ্ছে,খুশি তা বুঝতে পারছে না।তখনই মাহির বলে,
“কি রাক্ষসি রে!তুই দুইজনের খাবার একাই খেয়ে ফেললি!আমার জন্য এক দানাও রাখলি না?”
মাহিরের কথা শুনে খুশি প্লেটের দিকে তাকিয়ে দেখে সব ভাত খেয়ে ফেলেছে খুশি।মাহিরের হাতে খেতে এতোই মজা লাগছিলো যে সব কখন খেয়ে ফেলেছে বুঝতেই পারে নি।খুশি মাথা নিচু করে নেয়।মাহির বলে,

এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ৩

“থাক আর লজ্জা পেতে হবে না।গেলাম আমি।ঘুমা।”
বলেই মাহির চলে গেলো। খুশি মনে মনে বলে” বজ্জাত একটা সরি ও বললো না ” পরে আবার মাহির খাইয়ে দিয়েছে মনে করে খুশি মুচকি হেসে আবার শুয়ে পরলো। নিচে মাহির এসে খালামনি কে বলে,
“আম্মু খেতে দাও।আমার ক্ষুধা লাগছে।”
” দুইজনের খাবার যে দিলাম।খাসনি তুই?”

“তোমার রাক্ষস মেয়ে একাই খেয়ে ফেলেছে সব।”
” আহারে মেয়েটার কত্ত ক্ষুধা লেগেছিলো।যাক ঠিক আছে,আয় তোকে খেতে দেই।”
তারপরে মাহির খেয়ে তার রুমে চলে গেলো।

এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ৫