এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ৩ || নুর নাফিসা খুশি || SA Alhaj

এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ৩
নুর নাফিসা খুশি

“আআআআ”!
খুশির চিৎকার শুনে পিছে ঘুরে তাকায় মাহির। দেখে খুশি কোমড়ে হাত দিয়ে বসে আছে আর ব্যাথায় কোকরাচ্ছে। মাহির দৌড়ে খুশির কাছে যায়। খুশির কাছে গিয়ে বসে আর বলে,
” এই মেয়ে তুই সাবধানে চলতে পারিস না? কানা নাকি।”(রেগে)
খুশি কান্না করে যাচ্ছে পায়ে হাত দিয়ে, কিছু বলতে পারছে না। মাহির আবার বলে,

“অপদার্থ একটা তুই।শুকনো ফ্লোরে পরলি কি করে বল তো? ”
খুশি এবারও চুপ তবে এবার মাহিরের কথায় একটু ঘাবড়ে গেলো। কান্না থামিয়ে মাহিরকে বলে,
” তুই এতো কথা না বলে আমাকে রুমে দিয়ে আয় ভাইয়া।আমার ব্যাথা লাগছে অনেক পায়ে।”
খুশির কথায় মাহিরের একটু মায়া হলো।তাই খুশিকে কোলে তুলে খুশির রুমে নিয়ে বেডে শুইয়ে দিল মাহির,
“আমি ডাক্তার কে ফোন করছি।এসে দেখে যাবে। তুই শুয়ে থাক।”

” না না লাগবে না।একটুতেই ডাক্তার কেন লাগবে। আমার তো কিছুই হয়নি তেমন।”(ভয় পেয়ে)
“তুই আজও ডাক্তার কে ভয় পাস? সিরিয়াসলি?” (চোখ ছোট করে তাকিয়ে)
খুশি মাথা নিচু করে নেয়।মাহির বুঝতে পেরে কিছু বলে না।তবে কি যেনো ভেবে খুশির পায়ের কাছে বসে।খুশি একটু অবাক হয় মাহিরকে বসতে দেখে। মাহির বলে,

“তুই জানতে চেয়েছিস না আমি তোদের সঙ্গে যোগাযোগ কেন করিনি?”
“হুম হুম কেন করিস নি মানে করেন নি?”(অনেক আগ্রহী হয়ে শুনতে চায় খুশি)
মাহির খুশি কে আরো তার দিকে মনোযোগী করার জন্য বলে,
” সে অনেক কাহিনি।মনে আছে তোর, আমি তোদের গ্রামে গিয়েছিলাম একবার?”
“হুম হুম।”(খুশির কিছুই মনে নেই তবুও শুনার জন্যে মিত্থা বললো)
” তখন…….”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“আআআআ!”
মাহির কানে দুই হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে পরে।আর খুশি চিৎকার করেই যাচ্ছে।মাহির কথার ছলে খুশির মচকে যাওয়া পা কে আবার ধরে অন্য দিকে মচকে দিয়েছে। আর ব্যাথাই খুশি জোরে চিৎকার দিয়েছে।মাহির বলে,
” চুপ কর ফাজিল মেয়ে আমার কানটা গেলো। ”

“তুই এটা কি করলি?আমার পা টা আরো ভেংগে দিলি!এখন আমি হাটা চলা করতে পারবো না। সব সময় বেডে বসে থাকতে, শুয়ে থাকতে হবে। বিয়েও হবে না আর। আমার এতো বড় সর্বনাশ কেন করলি? ইয়া আল্লাহ এখন আমার কি হবে!”(কান্না করে)
মাহির খুশিকে এতো বলেও চুপ করাতে পারছে না তাই আচমকা খুশির হাত ধরে টেনে মাহিরের বুকে ফেলে মাহির।মাহিরের এমন আক্রমনে খুশি চুপ হয়ে যায় আর ড্যাব ড্যাব করে মাহিরের মুখের দিকে তাকায় খুশি। হঠাৎই বুকের মধ্যে কেউ যেনো হাতুরি পিটাচ্ছে।হার্ট অনেক জোরে জোরে বিট করছে।যেনো বেরিয়ে আসবে।মাহির খুশির দিকে তাকিয়েছিলো, কিন্তু হঠাৎই খুশি কে দূরে সরিয়ে দেয় আর নিজেও দূরে সরে দাঁড়ায়।মাহিরের এভাবে দূরে সরিয়ে দেওয়ায় খুশির ধ্যান আসে। নিজেকে সামলে নিয়ে আবার রেগে মাহিরের দিকে তেড়ে আসে,

“এই এই তুই কেন আমার পা ভেঙ্গে দিলি? এখন আমি চলব কি করে বল!”
“আগে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখ তুই দাঁড়িয়ে আছিস আর হাঁটতেও পারছিস।”(বিরক্ত হয়ে বলে মাহির)
খুশি এবার খেয়াল করে দেখে সত্যিই তো সে দাঁড়িয়ে আছে আর পায়ে ব্যাথাও লাগছে না। খুশি আনন্দে লাফাতে লাগে।মাহির বলে,
“পাগলের মতো লাফালাফি না করে চুপ করে থাক নয়তো আরেক টা পা ভাঙ্গবে। অসভ্য মেয়ে একটা।” (বলেই রুম থেকে বেরিয়ে যায়।)

খুশি চুপ করে মাহিরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। খুশি বুঝে না ছেলেটা এমন কেন।একটু ভালো করে কথা বললে কি এমন হয়?সব সময় মুখটা বাংলার পাঁচ করে রাখে। বজ্জাত একটা!
মাহির খুশির রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে যেতে লাগে,তখনই পা পিছলে পরে যেতে নেয় কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়ে সাইডে দাঁড়ায়। মাহির বুঝতে পারলো না এখানে স্লিপ করার কারন। কেননা মাহিরদের বাসা সব সময় পরিস্কার থাকে স্লিপ করার তো কথা না। মাহির নিচে বসে ফ্লোরে হাত বুলিয়ে দেখে কেমন পিচ্ছিল হয়ে আছে। মাহির হাত টা তুলে নাকে ধরে গন্ধ শুকের জন্যে। গন্ধ শুকে দেখে তেলের গন্ধ। মাহির উঠে লতিফা কে ডাক দেয়,

“লতিফা!”
মাহিরের ডাক শুনে লতিফা দৌড়ে আসে আর বলে,
“জি ভাইজান কিছু লাগতো আফনের?”
“তুমি আজ ফ্লোর পরিস্কার করোনি?”
” করছি তো ভাইজান। দুপুরেই করছি।”
“তাহলে ফ্লোরে তেল এলো কই থেকে?”(রেগে)
” জানি না ভাইজান আমি দুপুরে পরিস্কার করে আর ওপরে আসি নাই। মনে হয় খুশি আফাই ভুল করে ফেলছে।”
“খুশি কেন ফেলবে?”(ভ্রু কুচকে বলে মাহির)

” ভুল করে ফেলছে হয়তো ভাইজান।খুশি আফাকে রান্না ঘর থেক্কা তেল বার করে নিয়ে যেতে দেখছি মুই।”
মাহিরের আর বুঝতে বাকি রইলো না খুশি এটা ইচ্ছা করে করেছে।
“ওকে তুমি ফ্লোরটা পরিস্কার করে দাও নয়তো কেউ পরে যাবে।”
” জি ভাইজান।”

মাহির আবার খুশির রুমে গেলো। দরজা খোলাই ছিলো তাই রুমে ঢুকে যাই মাহির। রুমে গিয়ে দেখে খুশি বেডে পা দুলাচ্ছে আর নিজে নিজে কি যেনো বকবক করছে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে।মাহির যে এসেছে সেটা খুশি দেখেইনি।খুশি নিজে নিজে বলছে,
“দূর চুল নিজের জালে নিজেই কেন পরলাম বুঝছি না।তখন ওই তেলাপোকাটা আমার কাধে না পরলে কিছুই হতো না। যদিও আমি তেলাপোকা ভয় পাইনা কিন্তু আচমকা কাধে এসে পরায় ভয় পেয়ে গেলাম। দূর প্রতিশোধ টা নেওয়া হলো না।আমাকে মাঝ রাস্তায় একা ফেলে যাওয়ার শাস্তি টা পেল না বজ্জাত হাতি কচু একটা।”

“জ্যায়সে কারনি ও্যায়সে মারনি।”(মাহির)
খুশি চমকে ওপরে তাকায়।দেখে মাহির রাগি চোখে তাকিয়ে আছে।মাহির কে দেখে কলিজার পানি শুকিয়ে যায় খুশির।মনে মনে বলে,
“সব শুনে ফেললো নাকি বজ্জাত টা।”(মনে মনে)
” কাহিনি তুমি বলবে নাকি আমি বলবো?”
“ক..কি..সের কা..হি..নি ভাইয়া?”(ভয়ে ভয়ে বলে খুশি)
” ফ্লোরে তেল ফেলে আমার কোমড় ভাঙ্গার প্ল্যান ছিলো তাই তো? বাট পাপ বাপকেও ছাড়ে না বুঝলা? নিজের জালে নিজেই পরে শিক্ষা হয়েছে তোর?”(রেগে)

“সরি ভাইয়া আর এমন করবো না। মাফ করে দে।”(ছলছল নয়নে তাকিয়ে বলে খুশি)
” কান ধরে দাঁড়া এক পায়ে।”
“কি! কখনো না। একবার কান ধরাইছিস আর না।”
” আমাকে শাস্তি দেওয়ার প্ল্যান করা? আমাকে! আবার তুই আমাকে ভাইয়া বলে ডাকার শাস্তি স্বরুপ কান ধরে দঁাড়া।”(রেগে)
“আর বলবো না।ছেড়ে দেন।”
” তুই মানবি না দাঁড়া।”
বলেই মাহির খুশির পড়ার টেবিল থেকে একটা স্কেল নিয়ে এসে খুশির সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
“কান ধরবি নাকি স্কেলের বারি খাবি কোনটা?”

” আচ্ছা আমি কান ধরছি স্কেল লাগবে না।ওটা রেখে দিন আপনার হাতে ব্যাথা লাগবে নয়তো।” (ছলছল নয়নে তাকিয়ে বলে)
রুমের এক পাশে কান ধরে এক পায়ে দাঁড়িয়ে পরে খুশি।আর মনে মনে মাহিরের গুস্টি উদ্ধার করতে লাগে। কলেজ থেকে খুশি মাহিরের আগেই এসেছিলো। মাহিরের প্রতি রাগটা তখনও ছিলো খুশির।রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে মাহিরকে কি করে জব্দ করা যায় সেই পরিকল্পনাই করেছিলো খুশি। আর এই তেল ফেলে রাখার বুদ্ধিটাই মাথায় আসে।যেমন ভাবা তেমন কাজ।

পরে কি হবে সেটা না ভেবেই চলে যায় রান্নাঘরে সেখান থেকে তেল নিয়ে ওপরে আসে।আর লতিফা দেখে নেয় খুশিকে তেল নিয়ে যেতে।তবে ওতো গুরুত্ব দেয়নি। ভেবেছে লাগবে হয়তো কিছুতে। খুশি তেল নিয়ে মাহিরের রুমের একটু আগে ফেলে দেয় ভালো করে। মাহির রুমে গেলে এই দিক দিয়েই যাবে তাই।খালামনির কাছে কথায় কথায় জানতে পেরেছে মাহির সন্ধ্যার আজানের আগেই বাড়িতে আসে আর এখন ওই সময়।মানে চলে আসবে এখনই। খুশি একটা যায়গা দেখে লুকিয়ে পরে আর মাহিরের আসার অপেক্ষা করতে লাগে। ঠিক পাঁচ মিনিটের মাথায় মাহির আসে বাড়িতে।

মাহির ওপরে এসে তার রুমের দিকে যায় কিন্তু খুশি যেখানে তেল ফেলেছিলো সেই যায়গা টুকু মাহির পার হয়ে চলে যায় তেলে পা-ই পরেনি মাহিরের। খুশি যখন দেখলো মাহির কোন চিৎকার করলো না তখন বের হয়ে দেখে মাহির তেল পরে থাকা যায়গা থেকে দূরে চলে গেছে আর মাহির পরেও যায়নি। হতাশ হয়ে নিচে তাকায় খুশি। তখনই ফিল করে তার কাধে কিছু একটা সুরসুর করে যাচ্ছে। সেদিকে তাকিয়ে আচমকা তেলাপোকা দেখে ভয়ে সামনে এগিয়ে যায় আর তেলে পা পরে ধরাম করে নিচে পরে।তবে এমন ভাবে স্লিপ খেয়ে পরেছে যে পা টা মচকে গেছে।

এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ২

১০মিনিট যাবত কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে খুশি আর মাহির খুশির রুমের সোফায় শুয়ে পাবজি গেম খেলছে।কখনো কখনো বলছে, ‘এই মার মার মার’। খুশির বিরক্ত লাগছে আবার পায়ে ব্যাথাও লাগছে খুব। এক পায়ে এতোক্ষন থাকা যায় নাকি!
“ইয়া আল্লাহ দড়ি ফেলো এই সবজি বিক্রেতাকে উঠায় দেই থুক্কু মানে পাবজিওয়ালা রে উঠায় দেই।” (মনে মনে বলে খুশি)
খুশি মাহিরকে ডাক দেয়,
” শুনছেন আমার পায়ে ব্যাথা করছে এবার ছেরে দিন।”
মাহির চুপ।

“এই যে শুনেন না?”(খুশি)
” আমি কি তোর জামাই লাগি যে ‘এই যে শুনছেন’ বলে ডাক দিতে হবে?”(মাহির রেগে)
“সরি,আমাকে ছেরে দেন না। ব্যাথা লাগে পায়ে অনেক।”
” ওকে ছেড়ে দিলাম। পরেরবার কিছু উলটাপালটা কাজ করার আগে একবার নয় দুই বার নয় এক হাজার বার ভাববি ওকে?”
“ওকে।”(মুখ ভার করে)
মাহির রুম থেকে চলে যায়।খুশি ধপ করে বেডে শুয়ে পরে আর বলে,
” আব্বু আম্মু আমাকে নিয়ে যাও এখান থেকে।মাত্র দুই দিনে আমার অবস্থা শেষ করে দিয়েছে এই ব্যাটা। আমি কেন আসতে গেলাম এখানে। আমার গ্রামই ঠিক ছিলো।আগে যদি জানতাম এই বজ্জাত এখানে আছে কখনই আসতাম না।”(ন্যাকা কান্না করছে আর বলছে খুশি)

এই কেমন ভালোবাসা পর্ব ৪