এই মন তোমারি পর্ব ১৮

এই মন তোমারি পর্ব ১৮
নুজাইফা নূন

-” নাজমা দেওয়ান সবাইকে খাইয়ে দিয়ে নিচে প্লেট রাখতে যায়। শাফায়াত এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে রুমে নুজাইফা ও নাই। শাফায়াত এই সুযোগে সূরার দিকে এগিয়ে এসে সূরার হাত ধরে বললো, ঘুমোবে , রুমে চলো ।”
-” আপনি অনেক খারাপ একটা লোক।আমি যাবো না।”
-” তুমি তো আমাকে স্বামী হিসেবে মানো তাই না?”
-” সূরা মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো।”

-” তাহলে আমি খারাপের কি করেছি বলো তো? তোমাকে শুধু চুমু দিয়েছি। ইটস্ নরমাল। চুমু দিলে স্বামীরা খারাপ হয়ে যায় না গাধা। এবার তো চলো।
-“আমি যাবো না।”
-” কতো বড় বেয়াদব মেয়ে। বড়দের মুখে মুখে তর্ক করো? তুমি চায়ছো আমি তোমাকে কোলে করে নিয়ে যাই তাই না মেয়ে ?”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

-” আমি কখন বললাম আমাকে আপনি কোলে করে রুমে নিয়ে যান। আমি তো বলছি আমি আপনার সাথে যাবো না। আমি মায়ের সাথে থাকবো।”
-“ওকে চলো তাহলে বলে শাফায়াত সূরা কে কোলে তুলার আগেই নুজাইফা বললো,
-” ভাইয়া ভাবিমনি কখন বললো ‌সে তোমার কোলে উঠতে চায়?”
-” তুই এখনো যাস নি?”

-” আমি তো বেলকনিতে ছিলাম। তুমি নাকি ভাবি মনি কে তোমার স্ত্রী হিসেবে মানো না।”
-” শুধু আমি কেনো পৃথিবীর কোনো পুরুষ’ই এই বেয়াদব অ’স’ভ্য মেয়ে কে নিজের স্ত্রী হিসেবে মানতে পারবে না‌।”
-” ও তাই নাকি? যাকে স্ত্রী হিসেবে মানো না,তাকে তোমার রুমে নেওয়ার জন্য এতো পাঁয়তারা করছো কেন?”
-” আমার দায়িত্ব পালন করছি। তাছাড়া তুই খুব ভালো করে জানিস আম্মি নিজেই অসুস্থ্য। মেয়েটা এখানে থাকলে আম্মির সমস্যা হবে।”

-” ওহ্ তাই বুঝি?”
-” তোর এতো বোঝাবুঝির কোনো প্রয়োজন নেই। তুই যা ভাগ এখান থেকে।”
-” আমি তো আজ থেকে এখানেই থাকবো।”
-” এখানেই থাকবি মানে?”

-” যতোদিন না ভাবিমনি পুরোপুরি সুস্থ্য হচ্ছে ততোদিন আমি এখানেই ‌থাকবো।”
-” ঠিক আছে। আমি যাচ্ছি তাহলে। মেয়েটার খেয়াল রাখিস বলে শাফায়াত রুমের বাইরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই নাজমা দেওয়ান মলিন মুখে রুমে প্রবেশ করে।তাকে দেখে শাফায়াত বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করে,আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? কি হয়েছে আম্মি?”

-” তোর বাবা আমার উপর রাগ করে সেই রুমের দরজা বন্ধ করেছে আর এ পর্যন্ত দরজা খুলে নি।রাতে খায়
ও নি। মানুষ টার রাতের খাবার খেয়ে ঔষধ খেতে হয়। ঔষধ ও খায় নি। ঔষধ না খেলে ও তার হার্টের সমস্যা দেখা দিবে।হয়তো আজ মানুষ টাকে আমি একটু বেশিই বলে ফেলেছি বলে চোখের পানি মুছলেন নাজমা দেওয়ান।”

-” নাজমা দেওয়ান এর চোখের পানি সহ্য হলো না সূরা। মানুষ টা যে তাকে বড্ড বেশি ভালোবাসে।সূরা বিছানা থেকে নেমে খোঁড়া তে খোঁড়া তে এসে নাজমা দেওয়ান কে জড়িয়ে ধরে তার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো, আমি বুঝতে পারছি মা আমার জন্য এই পরিবারে অশান্তি সৃষ্টি হয়ছে।আব্বা আপনার সাথে কোট করছে।আমি এই বাড়ি থেকে চলে গেলে হয়তো আপনারা ভালো থাকবেন মা। আমি বরং এই বাড়ি থেকে চলে যায় মা। আমার জন্য আপনাদের অশান্তি হোক এটা আমি চাই না মা।”

-” তুই ইদানিং বড়দের মতো কথা বলতে শুরু করেছিস সূরা। ছোট মানুষ ছোট মানুষের মতো থাকবি।আর যদি কখনো এই বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার কথা বলিস ,তাহলে আমি তোকে অনেক মার মারবো সূরা।”
-” যে হাতের খাবার তৃপ্তি সহকারে খাই সে হাতের মার ও তৃপ্তি সহকারে খেতে পারবো মা। আমার জন্যই তো আব্বা রাতে খায় নি তাই না? আপনি খাবার নিয়ে আসেন মা। আমি নিজে আব্বার খাবার নিয়ে যাবো। দরকার হলে তার হাতে পায়ে ধরবো।”

-” শফিকুল এমনিতেই তোকে পছন্দ করে না। তুই খাবার নিয়ে গেলে সে আরো রেগে যাবে মা।”
-” নাজমা দেওয়ান এর কথা শুনে নুজাইফা বললো, ভাবি মনি যখন বলছে দেন না আম্মি।ভাবি মনি যদি সবসময় বাবার থেকে দূরে দূরে থাকে ,তাহলে বাবা কখনোই ভাবি মনি কে নিজের পুত্রবধূ হিসেবে মেনে নিবে না আম্মি। বরং ভাবি মনি যদি ‌বাবার আশেপাশে থাকে ,তার খেয়াল রাখে, বাবার আস্তে আস্তে ভাবি মনির প্রতি মায়া সৃষ্টি হবে।আর সেই মায়া থেকে একসময় ভালোবাসার সৃষ্টি হবে।”

-” এটা অবশ্য তুই ঠিক বলেছিস। আমি আগে কখনো এমন টা ভেবে দেখি নি। ঠিক আছে আমি খাবার নিয়ে আসছি বলে নাজমা দেওয়ান নিচে চলে গেল।তার যাওয়ার সাথে সাথে শাফায়াত এসে নুজাইফার মাথায় চাটি মেরে বললো, ইদানিং খুব ভালোবাসা নিয়ে পড়ছিস মনে হয়? কি ব্যাপার ?সামথিং সামথিং?”
-” তেমন কিছু না ভাইয়া। পুলিশের বোন দেখে কেউ কোনদিন কথা বলার’ই সাহস পায় না। তোমার কাছে লুকোনোর কোন কিছুই নেই ভাইয়া। আমার একটা ছেলেকে ভালো লাগে। যদিও তার আমাকে ভালো লাগে কিনা এটা আমি জানি না।”

-” কে সেই ছেলে?”
-” সময় হলে জানাবো ভাইয়া।”
-” ঠিক আছে।”
-” এর‌‌ই মধ্যে নাজমা দেওয়ান রুমে খাবার নিয়ে প্রবেশ করে। সূরা এক হাতে খাবার নিয়ে শফিকুল দেওয়ান এর রুমে এসে দরজায় নক করে। কিন্তু ভেতর থেকে শফিকুল দেওয়ান এর কোনো সাড়া শব্দ পাওয়া যায় না দেখে সূরা আবারো দরজায় নক করে।এক পর্যায়ে শফিকুল দেওয়ান বিরক্ত হয়ে দরজা খুলে দিয়ে তার সামনে সূরা কে দেখে বললো, তুমি কেনো এসেছো আমার রুমে? আমাদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে অশান্তি সৃষ্টি করেও তোমার শখ মেটেনি?”

-” আপনি ভুল ভাবছেন আব্বা। আমি আপনার জন্য খাবার নিয়ে এসেছি।”
-” শফিকুল তৎক্ষণাৎ সূরার দিকে তেড়ে গিয়ে বললো, তোমার সাহস হয় কি করে আমাকে আব্বা ডাকার?”
-“ছোটবেলায় মা বাবা কে হারিয়েছি। আমাদের গ্ৰামের বড়লোক বাড়ির ছেলেমেয়েদের তাদের বাপ মা যখন হাত ধরে স্কুলে নিয়ে যেতো, আমি চেয়ে চেয়ে দেখতাম।ঐ ছেলেমেয়েদের জায়গায় নিজেকে কল্পনা করতাম।

তখন খুব আফসোস হতো আমার। ভাবতাম ইশ্ আমার বাবা মা যদি আমার সাথে থাকতো তাহলে আমি ও কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে স্কুলে যেতে পারতাম। কিন্তু সবার ভাগ্যে তো আর সব কিছু থাকে না। আমার ভাগ্যে ও হয়তো বাপ মায়ের আদর ভালোবাসা লেখা ছিলো না।গ্ৰামের লোকেরা বলতো, বিয়ের পর নাকি শ্বশুর বাড়ি নিজের বাড়ি হয়ে যায়। নতুন করে বাবা মা পাওয়া যায়। সত্যিই আমি একজন মা পেয়েছি।

মা কে যদি মা ডাকতে পারি ,তাহলে আপনাকে আব্বা ডাকতে পারবো না কেন? আপনার রাগ আমার সাথে আব্বা। খাবারের সাথে তো না। দরকার হলে আপনি আমাকে মা’রে’ন , কা’টে’ন । তবু ও আপনি না খেয়ে থাকবেন না আব্বা।মা বললো রাতের খাবার শেষ করে আপনার ঔষধ খেতে হবে। ঔষধ না খেলে তো আপনার অসুখ করবে। অতঃপর সূরা কিছু একটা ভেবে শফিকুল এর দিকে নিজের গাল এগিয়ে দিয়ে বললো, এই যে আমি আমার গাল এগিয়ে দিলাম আপনার কাছে। আপনি আমাকে চড় মারেন। তবু ও খাবার খান আব্বা।”

এই মন তোমারি পর্ব ১৭

-” সূরার এহেন কথাবার্তায় শাফায়াত সহ সবাই অবাক হয়ে যায়। তাদের ধারণার বাইরে ছিলো যে সূরা এমনটা করতে বা বলতে পারবে। কিন্তু সূরার কথায় সবার মন গললেও পাষান শফিকুল দেওয়ান এর মন গলে না। তিনি সূরার হাত থেকে খাবারের প্লেট নিয়ে ছুড়ে মারলো ফ্লোরে। মূহুর্তের মধ্যে প্লেটে থাকা খাবার ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়লো রুমের চারিদিকে।

এই মন তোমারি পর্ব ১৯