এই মন তোমারি পর্ব ১৯

এই মন তোমারি পর্ব ১৯
নুজাইফা নূন

-” সময় বহমান।সময় তার আপন গতিতে বয়তে থাকে। নদীর স্রোত যেমন কারো জন্য অপেক্ষা করে না, তেমনি সময় ও কারো জন্য অপেক্ষা করে না। আমাদের প্রত্যেকের কাছে সময় খুবই মূল্যবান ও গুরুত্বপূর্ণ।সময় হচ্ছে এমন একটা সম্পদ যা মহান আল্লাহ তায়ালা সবাইকে দিয়েছেন।সময় যা একবার অতিক্রম করলে তা আর কখনো ফিরে আসে না।

ঠিক যেন চোখের পলকে দিন থেকে রাত,রাত থেকে দিন,দিন থেকে সপ্তাহ, সপ্তাহ থেকে মাস পেরিয়ে যায়।দেখতে দেখতে সবার জীবন থেকে হারিয়ে যায় বেশ কয়েকদিন।এই কয়েকদিনে সবার জীবনে’ই আমূল পরিবর্তন ঘটেছে।সূরা এখন পুরোপুরি সুস্থ্য হয়ে গিয়েছে।তার হাতের প্লাস্টার খুলে দেওয়া হয়েছে।সে এখন আগের মতো সারা বাড়ি ট‌ইট‌ই করে ঘুরে বেড়ায়।সবাই তাকে আপন করে নিয়েছে, শুধু মাত্র শফিকুল দেওয়ান ছাড়া।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তিনি সূরা কে দুচোখে সহ্য করতে পারেন না। সেদিন অনেক আশা নিয়ে সূরা শফিকুল দেওয়ান এর জন্য খাবার নিয়ে যায়। কিন্তু শফিকুল দেওয়ান যখন খাবার না খেয়ে নিচে ফেলে দেয় সূরার কোমল হৃদয় ব্যথিত হয়ে উঠে।সূরা আর কখনো তার মুখোমুখি হয় নি। যথাসম্ভব তাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করেছে। অবশ্য শাফায়াতের সাথে ও আগের থেকে ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে।

শাফায়াত রোজ থানা থেকে ফিরে সূরা কে খাইয়ে দেওয়া , চুলে তেল দেওয়া, চুল আঁচড়ে বেনি করে দেওয়া সবটা করেছে।যেটা চোখ এড়িয়ে যায় নি নাজমা দেওয়ান এর। নাজমা দেওয়ান এতো দিন সূরা কে শাফায়াতের রুমে যেতে দেয়নি । অবশ্য শাফায়াত ও জোর করে নি। কিন্তু সে নিজে ঠিকই ছটফট করেছে ।তার বিধ্বস্ত চেহারা দেখে নাজমা দেওয়ান স্পষ্ট বুঝতে পেরেছে তার ছেলে ব‌উকে ছাড়া ভালো নেই। তিনি ঠিক করেছেন আজ থেকে সূরা কে শাফায়াতের রুমে শিফট করবে। অনেক হয়েছে পরীক্ষা।তিনি তার ছেলের কষ্ট সহ্য করতে পারবেন না।”

-” শাফায়াত সবে শাওয়ার নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়েছে এমন সময় সূরা গুটি গুটি পায়ে তার রুমে প্রবেশ করে। শাফায়াত সূরার দিকে লক্ষ্য করে দেখে সে একটা তাঁতের থ্রি পিস পরেছে। লম্বা ভেজা চুলগুলো ছেড়ে দিয়েছে।যা থেকে টুপটাপ করে পানি পড়ে ফ্লোর ভিজে গিয়েছে। শাফায়াত কিছুদিন আগে কাজের জন্য সিলেট গিয়েছিলো।সেখান থেকে সূরা আর নুজাইফার জন্য নিজে পছন্দ করে দুই টা তাঁতের থ্রি পিস নিয়ে আসে।

শাফায়াত ভাবতে পারে নি থ্রি পিস টা এতো ভালো মানাবে সূরার গাঁয়ে। মেয়েটা শাড়ি , থ্রি পিস , কুর্তি যায় পরুক না কেন ,সবটা তে সুন্দর লাগে তাকে। শাফায়াত বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারে না সূরা দিকে।সে নেশাগ্রস্ত হয়ে যায়। শাফায়াত নিজেকে সামলে নিয়ে সূরা কে ধমক দিয়ে বললো, এতো সকালে শাওয়ার নিয়েছো কেন মেয়ে? অফিসে যাবে নাকি ভার্সিটি তে যাবে?”

-” কোনো উত্তর আসে না সূরার থেকে। শাফায়াত সূরার থেকে রেসপন্স না পেয়ে সূরার চুল নিজের হাতে পেঁচিয়ে তাকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে বললো, সুস্থ্য হয়েছো একদিন ও হয় নি, এর মধ্যে আবার চায়ছো চুলের পানি গাঁয়ে বসিয়ে ঠান্ডা লাগিয়ে জ্বর বাঁধাতে? তুমি আমার একটা কথাও শোনো না মেয়ে।তোমাকে কতোবার বলছি গোসল করে ভেজা চুল ভালো করে মুছে নিবে।”

-” আমি জানি আপনি প্রথমে আমাকে বকা দেবেন তারপর ঠিকই নিজে আমার ভেজা চুল মুছে দিবেন।তাই তো আমি আর কষ্ট করে চুল মুছতে যাই না বলেই দাঁত দিয়ে জিভ কাটে সূরা।”
-” ওহ্! তাহলে এই ব্যাপার? আমাকে জ্বালানোর নতুন ফন্দি এঁটেছো তাহলে?আমাকে তোমার বেতনভুক্ত কর্মচারী মনে হয়?”

-” হ্যাঁ।”
-“এই যে এতো গুলো দিন থানা থেকে ফিরেই তোমার পিছনে সময় ব্যয় করেছি, খেটেছি, কয় টাকা বেতন দিয়েছো ? বলো কয় টাকা দিয়েছো?”

-” শাফায়াতের কথা শুনে সূরা কোনো উত্তর না দিয়ে শাফায়াতের পায়ের উপর পা দিয়ে দাঁড়িয়ে উঁচু হয়ে শাফায়াতের গলা জড়িয়ে ধরে সোজা শাফায়াতের অধরে নিজের অধর মিলিয়ে দেয়। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব হয়ে যায় শাফায়াত। শাফায়াত তৎক্ষণাৎ সূরার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়।তার ঠোঁটে এখনো ভেজা ভেজা ভাব রয়েছে। সূরা এমনটা করবে শাফায়াতের ধারণার বাইরে ছিলো। অথচ সূরা স্বাভাবিক ভাবেই রয়েছে।যেনো কিছুই হয় নি। শাফায়াত অনেক টা রেগে গিয়ে সূরার দুই বাহু ধরে বললো, এটা কি করলে তুমি? তোমার সাহস হলো কি করে এমন টা করার? কে বলেছে তোমাকে এমন টা করতে? আম্মি?”

-” না ।আমি সিনেমায় দেখেছি নায়ক নায়িকার কাজ করে দেয় তাই নায়িকা উপহার স্বরূপ নায়কের সাথে এমনটা করে।এতে তো নায়ক খুশি হয় । কিন্তু আপনি রাগ করছেন কেন পুলিশ?”
-” তুমি বের হ‌ও আমার রুম থেকে।তোমাকে যেনো আমার রুমের আশেপাশে আর কখনো না দেখি বেয়াদব অ’স’ভ্য মেয়ে।আর শোনো আজ থেকে তোমার সিনেমা দেখা বন্ধ। সিনেমা দেখে এসব উল্টো পাল্টা জিনিস মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে তোমার। বেয়াদব হয়ে যাচ্ছো দিন দিন।”

-” আপনার কাছে ভালো কবেই বা ছিলাম পুলিশ। আপনি তো সবসময়’ই আমাকে বেয়াদব বলেন। সেদিন তো আপনি আমার সাথে কতো খারাপ কাজ করলেন, ক‌ই আমি তো আপনাকে বেয়াদব বলি নি। তাহলে আমাকে কেন আপনি সবসময় বেয়াদব অ’স’ভ্য বলেন?”

-” শাফায়াত কিছু বলতে যাবে তার আগেই নুজাইফা এসে বললো, ভাবি মনি আম্মি তোমাকে নিচে ডাকছে ।”
-” ঠিক আছে চলো।”
-” সূরার যাওয়ার পানে তাকিয়ে শাফায়াত দরজায় লাথি মেরে বললো, ড্যাম ইট! মেয়েটা দিন দিন আমাকে দূর্বল করে তুলছে।ও আমার কাছে আসলেই বেসামাল হয়ে যাই আমি। একদিকে বাবা চায়ছে আমি মেয়েটাকে দূরে সরিয়ে দেই । আবার অন্যদিকে আম্মি চায়ছে মেয়েটাকে আমি ভালোবেসে কাছে টেনে নেয়। ওহ্ গড! কোনদিকে যাবো আমি?

মেয়েটাকে দূরে ঠেলে দিলে আম্মি কষ্ট পাবে,কাছে টেনে নিলে বাবা কষ্ট পাবে। কিন্তু আমি কি করবো? আমার মন টা ইদানিং আমার কন্ট্রোলে নেই। নিজের খেয়ে অন্যের কথা ভাবছে।এতো বেপরোয়া মন তো আমার কখনো ছিলো না। মেয়েটা কি সত্যিই আমার দায়িত্ব , নাকি ভালোবাসা?”

-” আজ মাসের এক তারিখ।আরাবের দিনে নিজের ভার্সিটি , পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় রাতে এসেছে সূরা কে পড়াতে।আরাব কে ড্র‌য়িং রুমে বসতে দেওয়া হয়েছে। এইখানে আরাব সূরা কে পড়াবে।আরাব নাজমা দেওয়ান এর পাশের ফ্ল্যাটে থাকলেও কখনো তাদের বাসায় আসে নি। নাজমা দেওয়ান এর বাসায় প্রথম বার আসা উপলক্ষ্যে তিনি বিভিন্ন রকমের নাস্তা তৈরি করছেন আরাবের জন্য।

আরাব সবে কাঁটা চামচ দিয়ে একটা মিষ্টি মুখে তুলে নিয়েছে , এমন সময় সূরা কে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে দেখে তার হাত থেকে কাঁটা চামচ নিচে পড়ে যায়।সূরা বেগুনি কালারের থ্রি পিস পরেছে, চোখে হালকা কাজল আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক দিয়ে হাঁটু পর্যন্ত লম্বা চুলগুলো ছেড়ে দিয়েছে। সূরা কে দেখে আরাবের বুক ধুকপুক করে উঠলো।যা আগে কখনো হয়নি।তার মনে হচ্ছে সূরা তার দেখা সবচেয়ে সুন্দরী মেয়ে।

বড্ড হাঁসফাঁস লাগছে আরাবের নিজের কাছে।এক পর্যায়ে আরাব নিজেকে সামলে নিলো। নাজমা দেওয়ান এসে সূরার সাথে আরাবের পরিচয় করিয়ে দিলো। পরিচয় পর্ব শেষ হলে আরাব সূরা কে পড়াতে শুরু করলো। কিন্তু আরাবের পড়ানোর প্রতি কোনো মন নেই।তার বেহায়া মন বারবার সূরাকে এক নজর দেখতে চায়ছে। মন বলছে দেখ না আরাব দেখলে ক্ষতি কি?”

এই মন তোমারি পর্ব ১৮

-” রাত দশটার সময় শাফায়াত এসে কলিং বেল দিলে মাজেদা গিয়ে দরজা খুলে দেয়। শাফায়াত রুমে প্রবেশ করতেই দেখতে পায় , সূরা আজ সাজগোজ করেছে ।বেশ অন্যরকম লাগছে তাকে।সে নিজের মতো করে পড়ছে। তাদের থেকে একটু দূরে নুজাইফা বসে এক ধ্যানে আরাবের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।আর আরাব এক রাশ মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে রয়েছে সূরার দিকে।যা দেখে হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে আসে শাফায়াতের।

এই মন তোমারি পর্ব ২০