প্রেয়সী পর্ব ৫০

প্রেয়সী পর্ব ৫০
নন্দিনী নীলা

মধু সমুদ্রের রুমে দাড়িয়ে আছে। ওর হাত পা কাঁপছে ভয়ে। যদি ধরা খায় সর্বনাশ হয়ে যাবে। প্রথম দিন ভুলে সমুদ্রের রুমে এসেছিল তারপর আর কখনো এই রুমে ভুলেও পা রাখেনি। আজ অনেকদিন পর আবার সেই রুমে এসেছে সেদিন ও খুব ভয় পেয়েছিলো আজ ও খুব ভয় লাগছে।‌

রুমের যাবতীয় সব খানে খুঁজতে লেগে পড়ল মধু। দুইদিন পর ও এই রুমে এসে খোঁজার সুযোগ পেয়েছে এই সময় টা ও হাতছাড়া করতে চায় না। সারা রুম তন্ন তন্ন করে খোঁজে ও মোবাইল পাওয়া গেল না। সমুদ্র আলমারি খোলাই ছিল এজন্য সেটা তে ও পর্যন্ত খুঁজেছে মধু। বালিশের নিচে, তোশকের নিচে ড্রেসিং টেবিলে।,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সমুদ্র কি ফোনটা সব সময় নিজের কাছে রাখে তাহলে তো ওটা হাতে পাওয়া ইম্পসিবল। মধু ব্যথিত মুখ করে বেরিয়ে এল রুম থেকে। কোন লাভ ই হলো না এতোটা রিস্ক নিয়ে রুমে গেলাম খুঁজলাম কিন্তু আসল জিনিস ই পেলাম না‌। মধু মন খারাপ করে রুমে এসে বসে আছে। তিন্নি এসে জানাল রাহী দের বাসা থেকে নাকি আজকে ডিনারের দাওয়াত করেছে।‌ সবাই আজকে সেখানেই যাবে ডিনার করতে। মধু ওহ বলে বসে র‌ইল।

” তোর কি মুড অফ?” জিজ্ঞেস করল তিন্নি।
মধু বলল,” নাহ এমনি ভালো লাগছে না।”
” কেন কি হয়েছে বল আমাকে।”
” তেমন কিছুই না। আমার কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না।”
” আপুদের বাসায় তো এখনো যাস নাই চল যাই ভালো লাগবে তোর।”

” আমার ভালো লাগা সব তোর ভাই নিয়ে উধাও হয়েছে। এখন আমার আর ভালো লাগবে না কোথাও গিয়েও।”
তিন্নি কি বলবে বুঝতে পারছে না। মধু কে এমন গুমরে থাকতে দেখে ওর নিজেরও ভালো লাগে না। আবার সান্ত্বনা দেওয়ার মতো ও কিছু নাই।

মধু যাবে না এতে কারো মাথা ব্যথা নাই। কেউ ওকে জোর ও করে নি। যতটা জোর করা দরকার তিন্নি আর ফাহাদ করেছে। কিন্তু মধুর এক কথা ওর যাওয়ার মুড নাই। ওকে রেখেই বাসা ফাঁকা করে সবাই চলে গেল। তিন্নি অবশ্য থাকতে চাইছিল ওর সাথে ও একা থাকবে কিন্তু মধু ওকে জোর করেই পাঠিয়ে দিয়েছে। নিজের মন খারাপের মাঝে সবাইকে আনন্দ থেকে বঞ্চিত করতে চায় না। ওর জন্য তিন্নি কেন সাফার করবে।

মধু একা এতো বড়ো বাসায় আছে ভাবতেই ওর গা ছমছম করে উঠে। ও চুপ করে নিজের রুমে বসে আছে‌। বাইরে থেকে কারো ধুপধাপ পায়ের আওয়াজ আসতেই ও চমকে উঠে। কে আসলো? মধু দরজা একটু ফাঁক করে উঁকি দিয়ে দেখল সমুদ্র হেঁটে নিজের রুমে যাচ্ছে। তারমানে সমুদ্র ও যায় নি। সমুদ্র কি জানে ও বাসায় আছে? ঢোক গিলল মধু। ও চায় না সমুদ্র জানুক ও বাসায় আছে। জেনে থাকলে ওর খবর নিতে আসবে। একা বাসায় সমুদ্রের সাথে থাকাই রিস্ক‌ই। ও দরজা লক করে বসে আছে। দরজার ধাক্কায় ওর হৃদপিন্ড লাফিয়ে উঠল। সমুদ্র জোরে জোরে মধু বলে ডাকছে। তারপর মানে উনি জানেন আমি বাসায় আছি।

মধুর রাগ লাগল কেন যায় নি। মধু দরজা খুলবে না। কোন ভাবেই না। কিন্তু সমুদ্রের চিৎকার এ রুমে টিকে থাকা মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। মধুর ভয়ে হাত পা কাঁপছে। ও ভয়ার্ত মুখশ্রী করেই দরজা খুলল।
সমুদ্র ওকে পেয়েই বলল,,” কি করছিলে এতো ডাকছি সারা শব্দ নাই।”
” ঘুমিয়ে পরেছিলাম।” মধু ইচ্ছে করেই মিথ্যা বলল।
সমুদ্র বলল,,” এতো আগেই, খেয়েছো কিছু?”

মধুর শরীর জ্বলে যাচ্ছে কথা না বলতে রাগে গজগজ করেছে কিন্তু ইগনোর ও করতে পারছে না।
” না খিদে নাই। তাই ভাবছি ঘুমাই। সবাই কখন আসবে তার তো ঠিক নাই।”
” হুম তা আসো কিছু খেয়ে যাও। আমি বাইরে থেকে খাবার নিয়ে আসছি।”
” না আমার খিদে নাই। আপনি যান নাই কেন সবার সাথে।”

” তুমি একা বাসায় তাই তোমাকে পাহারা দিতে থেকে গেলাম। একা একা বোরিং ফিল করছিলে না?”
” না না। তা করব কেন আমি তো ঘুমিয়ে পরেছিলাম।”
” ওহ আচ্ছা নিচে আসো। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। একসাথে খাব।”
” আমি খাব আপনি খেয়ে নিয়েন আমি ঘুমাব।”
সমুদ্র চলে গেল। মধু ভেবেছিল সমুদ্র আর হয়তো ডাকতে আসবে না। কিন্তু দশ মিনিট পর আবার সমুদ্রের দরজার ধাক্কাধাক্কি শুরু হলো।

মধু খাবার টেবিলে বসে আছে। খাওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও ওর বসে থাকতে হচ্ছে। সমুদ্র একপ্রকার জোর করেই ওকে নিচে নিয়ে এসেছে। সমুদ্র এতো জেদি আজ জানল। কথা বাড়বে তাই বাধ্য হয়েই এসেছে। সমুদ্রের সাথে ভালো করে কথা বলতেও ওর ঘৃণা লাগে। সেখানে তার সাথে বসে খাবার খাবে। ফুয়াদ কী অবস্থায় আছে কি খাচ্ছে। আর আমি এখানে আয়েশ করে খাব। ওর গলা দিয়ে তো এক দানা ও নামবে না। মধু চুপ করে বসে আছে খাবার হাতে মুখে দিচ্ছে না একটুও তা দেখে সমুদ্র বলল,,” কি হলো খাচ্ছ না কেন?”

মধু চমকে উঠে বলল,,” আমি খেতে পারব না খেলেই বমি হবে। সত্যি আমি জোর করে খেতে পারি না।”
” তুমি কি অসুস্থ? বমি পাবে কেন? খারাপ লাগলে বলো হসপিটালে নিয়ে যাই।” উত্তেজিত কন্ঠে বলল সমুদ্র।
মধু দাঁতে দাঁত চেপে বলল,,” আমি ঠিক আছি। আমার কিচ্ছু হয়নি। এতো উত্তেজিত হতে হবে।”
সমুদ্র এই এক্সটা কেয়ার জাস্ট গায়ে জ্বালা ধরিয়ে দিচ্ছে। সমুদ্র ওর দিকে তাকালেও ওর অস্বস্তিতে গা ঝিমঝিম করে উঠে। সমুদ্র ওর প্রতি এতোটাই আসক্ত যে নিজের ভাইকে অবধি বন্দি অবস্থায় রেখেছে ভাবতেই ওর রাগে মুখটা লাল হয়ে উঠল।

সমুদ্রের ফোনে নিজের ছবি দেখার পর থেকে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে চলেছে সমুদ্রের থেকে। কিন্তু তাতে কি হলো সেই তো সমুদ্রের জালে ফেঁসে গেল ওরা দুজনেই।
মধু অন্যমনষ্ক হয়ে এসব ভাবছিল তখনি হঠাৎ একটা হাত ওর সামনে খাবার তুলে দিল ও সমুদ্র কে খাবার ধরে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ছিটকে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ল। এতোটাই ভয় পেয়েছে যে ও লাফিয়ে উঠেছে। সমুদ্র ওর আচমকা ভয় পাওয়া দেখে হাত গুটিয়ে নিয়ে অবাক হয়ে নিজেও দাঁড়িয়ে পরে। মধু ভয়ে থরথরিয়ে কাঁপছে। সমুদ্র হঠাৎ করেই মধুকে এমন অদ্ভুত বিহেভ করতে দেখে বোকা বনে যায়।

” হোয়াটস হাপেন্ড মধু? তুমি ঠিক আছো?” অবাক কন্ঠে বলল।
মধু বলল,,” আমি রুমে যাই। আপনি খান।”
বলেই মধু দ্রুত পা চালিয়ে উপরে চলে এল। সমুদ্র কে কিছু বলার ও সুযোগ দিল না। তিন্নি রা আসলো বাসায় পৌনে বারোটায়। মধু তিন্নির রুমে বসে ছটফট করছিল‌। সমুদ্র একা বাসায় পেয়ে আবার সুযোগ নিতে আসে নাকি সেই চিন্তায় কিন্তু তেমন কিছুই সমুদ্র করে নি। এমনকি খাবার টেবিলে থেকে আসার পর থেকে আর সমুদ্র ও ওকে ডাকে নি।
তিন্নি এসে ওকে জেগে থাকতে দেখে বলল,,” কি রে এখনো একা একা জেগে আছিস। যেতে বললাম গেলি না একা বাসায় কেমন লাগল?”

মধু বলল,” একা আর কোথায় সমুদ্র ভাইয়া তো বাসাতেই ছিল।”
তিন্নি বলল,,” বলিস কি? ভাইয়াকে ফোন করে এতো যেতে বললাম রাহী আপু ও বলল কিন্তু ভাইয়া বলল তিনি নাকি তার কোন বন্ধুর বাসায় গিয়েছে দাওয়াত এ আসতে পারবে না‌।”

মধু ও বিস্মিত গলায় বলল,,” ক‌ই তিনি তো সেই সন্ধ্যা থেকে ই বাসায়। তোরা যাওয়ার কিছুক্ষণ পর‌ই বাসায় এসেছে।”
তিন্নি বলল,,” তাহলে আমাদের সাথে কেন গেল না‌। মিথ্যা বলে বাসায় এসে ছিল।”
মধু তো ধরে ফেলেছে সমুদ্রের মিথ্যা বলার কারণ। তাও তিন্নি কে ভালো করে জিজ্ঞেস করল,,” আমি যে যাই নি এটা সমুদ্র ভাইয়া জানতো?”

” প্রথমে জানত না। যেতে বললাম জিজ্ঞেস করল তুই গিয়েছিস নাকি আমি না বললাম।”
” ওহ বাদ দে যা ফ্রেশ হয়ে আয়। ঘুম পাচ্ছে।”
” একা ছিলি তখন ঘুমাতে পারলিনা।”
” ভূতের ভয়ে ঘুম উবে গেছিল তোকে পেয়েই ঘুম চলে আসছে।”
তিন্নি ফ্রেশ হয়ে আসতেই দুজনে ঘুমিয়ে পরল।

পরদিন সকালে মধু খুব ভোরেই উঠল। উঠে বেরিয়ে এল রুম থেকে। ভাবল ছাদে যাবে। ছাদে গিয়ে একা একাই দাঁড়িয়ে ছিল হঠাৎ দেখতে পেল সমুদ্র এই ভোর সকালে বাইরে যাচ্ছে। এতো সকালে কোথায় যাচ্ছে? মধুর খুব সন্দেহ হলো। আচ্ছা সমুদ্র কে ফলো করলে কোন ক্লু পাওয়া যাবে না তো? মধু সমুদ্রের পিছু নেওয়ার ইচ্ছে জাগলো। ও তাড়াতাড়ি করে নিচে নেমে ফোন আর পার্স নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। ঘুম থেকে উঠেই চোখে মুখে পানি দিয়েছিল। সদর দরজা খুলে বের হতেই সমুদ্র গাড়িটা শো করে বামে চলে গেল। মধু গেইটের বাইরে যাচ্ছে দেখে দারোয়ান এটা ওটা জিজ্ঞেস করতে লাগল।

মধু কি বলবে বুঝতে পারছে না। মধু গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে আছে। একটা অটো আসতেই মধু তাতে উঠে বসল। দারোয়ান পিছনে থেকে ডেকে যাচ্ছে মধু তার ডাক অবহেলা করেই চলে গেল।
মধু গাড়িতে বসেই তাকে তাড়াতাড়ি চালাতে বলল। সমুদ্র গাড়ি কত দূর কোন দিকে চলে গেছে কে জানে। নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই খুঁজে পেতে হবে।

প্রেয়সী পর্ব ৪৯ (২)

টেনশনে মধু নখ কাটতে লাগল। সমুদ্রের পিছু করে যদি আজকেই ফুয়াদের খোঁজ পাওয়া যায় কত ভালো হবে। উত্তেজনা কাজ করছে মধুর।‌

প্রেয়সী পর্ব ৫১