সে আমার সুকেশিনী পর্ব ১৬

সে আমার সুকেশিনী পর্ব ১৬
রাউফুন

কাল যেহেতু বিয়ে সেহেতু আজ বিউটির গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হয়েছে। একই সঙ্গে আজ তার জন্মদিনও পালন করা হয়েছে। এখন রাত দশটা বাজে। ক্লান্ত হয়ে বিউটি ঘুমাচ্ছে। বিউটির দু হাতে মেহেন্দি লাগিয়ে দিচ্ছে মারিয়াম। ভাগ্যিস বিউটি ঘুমাচ্ছে, জেগে থাকলে কি আর মেহেদী লাগাতে পারতো মারিয়াম? মেয়ের নাকি মেহেদী পরতে গেলেই হাতে সুরসুরি লাগে। এমন আজব কথা সে বিউটির থেকেই শুনেছে। তার বিয়ের সময় নিয়ে বিউটি এবারে দ্বিতীয় বার মেহেদী পরছে।

মারিয়ামের মন খারাপ হলো তার বিয়ের সময়কার কথা মনে পরাই। সিজান বিয়ের কয়েক বছর কতটা ভালো ব্যবহার করতো, কতটা ভালোবাসতো। তার শ্বশুর শাশুড়ীর কত আদরের ছিলো সে। সে মন দিয়ে সংসার করছিলো। সবটা ভালোই ছিলো। এরপর, যখন সিজানের চাকরি চলে গেলো তখন থেকেই সে দুর্ব্যবহার করতো। মারিয়াম ভাবতো পুরুষ মানুষ টাকা না থাকলে মাথা গরম থাকবেই।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সে তো পড়াশোনা করেছে তবে চাকরি করতে সমস্যা কোথায়? সে চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর আমূল পরিবর্তন আসে সিজানের মধ্যে। কথায় কথায় রেগে যাওয়া, গায়ে হাত তোলা, চুলে আঘাত দেওয়া। সে চাকরি করে ফিরে ক্লান্ত হয়ে যখন শুয়ে বিশ্রাম নিতো তখন সিজান ফিরে তার কাছে টাকা চাইতো৷ মা’র খাওয়ার ভয়ে সে টাকা দিতো।

সিজান তার থেকে টাকা নিতো আর জোয়া খেলা, মদ খাওয়া, আর আস্তে আস্তে তার গায়ে হাত দেওয়ার পরিমাণ বাড়ছিলো। এসব সে আর নিতে পারছিলো না। একবার বাইরে থেকে খুব নেশা করে ফিরলো সিজান। মারিয়াম ঠিক করেই রেখেছিলো আজকে যায় হয়ে যাক একটা হেস্তনেস্ত করতেই হবে। সেদিন সিজান নেশা করে ফিরে রাত দুটোর সময়। মারিয়াম না ঘুমিয়ে অপেক্ষা করেই ছিলো। সিজান চিৎকার করে বিভৎস গলায় বলে,

‘এই মারিয়াম, আমার সোনার ডিমপাড়া হাঁস, কোথায় তুই? দে টাকা দে। আরেক বোতল কিনে আনবো। তুই নাচবি আজকে। হেব্বি আনন্দ হবে আজ।’
মারিয়াম অত্যন্ত রেগে তেড়ে গিয়ে সিজানকে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। ক্ষীপ্র হয়ে বললো, ‘তোমার লজ্জা করে না? বেহায়া, কাপুরুষের মতো বউয়ের টাকায় মদ গিলতে? মদ যদি গিলতেই হয় তবে নিজের রোজগারে গেলো। আজকে তোমাকে, আমার আর তোমার ঐ সব বাজে দিক যেকোনো একটা বেছে নিতে হবে। বলো কোনটা চাও! আমাকে না ঐ সব নেশাকে।’

সিজান ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো তার গালে। চুলের মুঠি ধরে নোংরা গালি দিয়ে সবচেয়ে আঘাত দেওয়া কথাটা বললো,
‘একটা বাজা মেয়ে, নিঃকর্মা মেয়ে মানুষ! এতো দিনেও একটা বাচ্চা দিতে পারিস নাই আর এখন বড় বড় কথা? যাহ বের হো। তোকে দিয়ে আমি কি করবো। বেরিয়ে যা বাড়ি থেকে। তবে মাসে মাসে টাকাটা দিয়ে দিস হ্যাঁ? হাহা তাছাড়া আবার আমি চলবো কি করে?’

মারিয়ামের কলিজায় আঘাত করেছিলো সিজান তাকে বাজা বলে। মা’রে’র চেয়ে এই কথাগুলো তার হৃদয়ে বেশি তোলপাড় সৃষ্টি করেছিলো। সিজান নেশায় বুদ হয়ে সেখানেই পরে রয়। সেই রাতেই মারিয়াম চলে এসেছিলো নিজের বাবার বাড়িতে। সিজান জেগে গেলে তাকে আর আসতে দেবে না। বেঁধে হলেও আটকে রাখবে। তখন তাকে কেউ-ই সেখান থেকে বের করতে পারবে না। আর এতো অত্যাচার সহ্য করে থাকা আর সম্ভব হয়নি তার।

এরপর অনেক বার-ই যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছে সিজান। এখনো চেষ্টা করে যাচ্ছে জানুয়ার টা। বিউটির বাড়িতে সে আছে এটা কোনো ভাবে জেনে গেলে, তার তো বিপদ বাড়বেই সঙ্গে এই পরিবারেও আচ্ আসবে। সে এখন জানে তার বাবা মা কেন ঐ জানুয়ার টার কাছে তুলে দিতে চেয়েছিলো তাকে।

সেদিন তার বাবা মায়ের সঙ্গে কথা হয়েছে তার। ভীষণ কাঁদছিলো তার মা। কথা বলেই সে জানতে পারলো, তাদের নাকি হুমকি দিয়েছে, ‘আপনার মেয়েকে জা’ণে মে’রে দেবো আমার কাছে না পাঠালে। এমনিতে তবুও সে আমার কাছে সেইফ থাকবে। কিন্তু আমার কাছে না দিলে আপনাদের মেয়ের কথা ভুলে যেতে হবে। একেবারে ডেড বডিও খুঁজে পাবেন না৷ তাই মেয়ের ভালো চাইলে আমার হাতেই তুলে দিন। জা’ণে তো বাঁচবেই, আর ভালোও থাকবে।’

বাবা মায়ের কাছে সন্তানের জীবনের চাইতে বড় কিছুই না। মারিয়ামের জীবন বাঁচাতেই সিজানের কাছে যাওয়ার জন্য তাকে বার বার বুঝাচ্ছিলো। মারিয়ামের দুচোখ বেয়ে টুপটাপ জল গড়িয়ে পরলো। বিউটি নড়াচড়া করতেই দ্রুত সে চোখ মুছে নিলো। বিউটির হাতে মেহেদী পরানো শেষ হতেই সে তার রুমে চলে গেলো।

বিউটি তখন গভীর ঘুমে। আজ সে আগে ঘুমিয়ে গেছে বলে বারান্দার দরজাটা আটকানো হয়নি। বাইরে থেকে মৃ’দু কচকচ শব্দ এলো। অন্য দিকে ফ্যানের ঘরঘর শব্দ। বিউটি কানে বালিশ চেপে ধরলো ঘুমের ঘোরেই।

ঠিক এগারোটা পঞ্চান্ন মিনিটে একজন লম্বাচওড়া পুরুষ মানুষ নিঃশব্দে প্রবেশ করলো বিউটির রুমের বারান্দা দিয়ে। বিউটিকে নড়তে দেখে লোকটি সাবধান হলো। বিউটি পাশ ফিরে শুয়ে পরলো৷ পরক্ষণেই সে অনুভব করলো তার হাত কোনো ঠান্ডা হাত স্পর্শ করেছে। ঘুমের মধ্যে তার মনে হচ্ছে এটা তার ভ্রম। অথবা সে ভাবছে মারিয়াম তার সঙ্গে দুষ্টামি করছে। লোকটির কাজ শেষ হতেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। ঠিক যেভাবে রুমে প্রবেশ করেছিলো ঠিক সেইভাবেই প্রস্থানও করলো।

বিউটির ঘুম ভাঙলো যখন তখন ঘড়িতে রাত দুটো বাজে। বিউটি আড়মোড়া ভেঙে অনুভব করলো একটা সুন্দর পারফিউমের স্মেল। সে ভালো ভাবে নাক টেনে তা অনুভব করলো।
‘এই স্মেল? এটা তো মনে হচ্ছে আলাদা কোনো স্মেল্। কোথা থেকে আসছে এটা? উফফ খিদে পেয়েছে আমার৷ পেটে মোচড় দিচ্ছে। রাতে তারাতাড়ি খেয়ে ঘুমিয়েছিলাম তাই হইতো এখন খিদে পেয়েছে।’

একা একা বিড়বিড় করে লাইট জ্বালালো সে। লাইট জ্বালিয়ে ঘুম ঘুম চোখে সে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো। খিদেতে পেট জ্বলে যাচ্ছে। সে তার মেহেদী রাঙা হাত ধুয়ে নিলো। আয়না দেখলো তার গলায় কিছু একটা চকচক করছে। সে ভীষণ অবাক হলো বিউটি। এই প্লাটিনামের চেইন টা তার গলায় কিভাবে? এতো দামী নেকলেস তার গলায় দেখে সে ঘাবড়ে গেলো। ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে রুমে আসতেই আরেকটা ঝটকা খেলো সে। রুমের মধ্যে বেড সাইডে একটা বড় কেকের বক্স রাখা। বিউটি বিস্মিত হয়ে কেকের বক্সটা খুলে আরও একটা ঝটকা খেলো। কেকের উপর লেখা, ‘হ্যাপি বার্থডে আমার সুকেশিনী!’

সাথে একটা চিরকুট। বিউটির সারা শরীর অজানা কারণে কাঁপছে। সে কম্পনরত হাতে চিঠিটা খুললো। চিঠির শুরুর সম্বোধন টা ছিলো এমন,
‘প্রিয় সুকেশিনী,

চিঠির শুরুতেই জানাই আমার মনের গভীরতা থেকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা ও অভিনন্দন! তোর জন্মদিনে সবার শেষ উইশটা আমি করতাম মনে আছে? এটা হলো আমার সেই শেষ উইশ। কি চিনতে পারলি? আর শেষে উইশ করলাম বলে ছোট বেলার মতো গাল ফুলাবি না প্লিজ! কারণ গাল ফুলালে তোকে খুবই বাজে দেখতে লাগে। আর তুই যদি এখনো ছোট বেলার একই কালারের ড্রেস এখনো পরতে পারিস আমি কেন সেই ছোট বেলার স্টাইলে উইশ করতে পারবো না?

আমার একটা আক্ষেপ আছে জানিস? সেই আক্ষেপ টা এতো বছরে জমাট বেঁধে আস্তো এক পাহাড়ে পরিনত হয়েছে। আক্ষেপটা কি বলতো? আক্ষেপটা হলো, আমি তোকে প্রাণভরে দেখতে পারি না কতগুলো বছর। আঠারো বছরের আক্ষেপ তাই না? প্রতিটি মুহুর্ত মনটা আঁনচাঁন করতো তোকে একটা পলক দেখার জন্য। অবশেষে সেই কাঙ্ক্ষিত মুহুর্ত এলো। তোকে খুঁজে পেলাম।

তোর আর আমার ভালোবাসার গভীরতা কখনোই মাপা সম্ভব না। হয়তো এই পৃথিবীতে অনেক কিছুই মাপা সম্ভব কিন্তু কখনো ভালোবাসার গভীরতা মাপা সম্ভব না। তোকে কখনো বলে বোঝাতে পারবো না যে চোখের আড়ালে থেকেও তুই আমার মনের কতটা জায়গা জুড়ে রয়েছিস। আমি শুধু এতটুকু বলে দিতে পারি যে এই মনের গভীরতায় তোর জন্য যে জায়গা তৈরি হয়েছে এই জায়গা পৃথিবীর অন্য কাউকে দেওয়া সম্ভব না। তোর প্রতি আমার এই অবিরাম ভালোবাসা থেকে যাবে চিরদিন। তোর মোহতেই যেন আমার জীবন ধন্য! আমার শেষ নিঃশ্বাস যেনো তোর কোলে মাথা রেখেই ফেলতে পারি।

আর শোন আবারও বলছি, সর্বশেষ উইশ করলাম বলে রাগ করিস না! কেক টা কাটবি অবশ্যই!
অন্য কাউকে বিয়ে করার কথা ভাববিও না। আমি তাহলে সব শেষ করে দেবো। তোকে অনেক খুঁজে তারপর পেয়েছি আর হাঁরাতে চাই না। আমি জানি যখন চিঠিখানা পড়ছিস তখন তোর দু-চোখ ভরা জল। তোর সুন্দর গাল বেয়ে টুপটাপ করে গড়িয়ে পরছে চোখের পানি গলা অব্দি। কাঁদবি না একদম। তুই কাঁদলে আমার যে অনেক কষ্ট হইরে বিউটি। আমার কারণে তুই অনেক কষ্ট পেয়েছিস কিন্তু আর না প্লিজ! এখন আমি এসে গেছি। তোকে আর কোনো দুঃখ পেতে দেবো না।
ভালোবাসা আমার সুকেশিনী। আমার ছোট্ট গাল ফুলানো বিউটি। ভালোবাসা, ভালোবাসা, ভালোবাসা। আবারও জন্মদিনের শুভেচ্ছা!’

ইতি,
তোর কল্পনা মানব।
চিঠি পড়ে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো বিউটি। তার সর্বাঙ্গ দুলে উঠলো কান্নার দাপটে। তার অনুভূতি মিথ্যা না, তার মনে হওয়াটা মিথ্যা না। তার সুপ্রিয় ভাই এসে গেছে। তার কাছে, তার কাছে ফিরেছে। সে ডুকরে উঠে বললো,
‘সুপ্রিয় ভাই? আমার সুপ্রিয় ভাই। আপনি এসেছিলেন? আমায় ডাকেন নি কেন তবে? এতো লুকোচুরি কেন?’

বিউটি ছুটে বারান্দায় গেলো। চারিদিকে অন্ধকার। অন্ধকারে একটি পোঁকাও দেখা যাচ্ছে না। বিউটি ইতিউতি উঁকি দিয়েও কিছু পেলো না। আবার দৌঁড়ে রুমে এসে বিউটি তার গলার নেকলেস টা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলো। লকেটে এস্ লেখা। বিউটির চোখ থেকে অনবরত পানি পরছে। তার হাতের দিকে নজর পরলো। দু-হাত ভর্তি মেহেদী দেওয়া।

কি সুন্দর গাঢ় রঙ হয়েছে। হাতের মাঝ বরাবর তার চোখ পরলো৷ সুপ্রিয় নামটা লেখা। মেহেদীর ডিজাইনের রঙের থেকে সুপ্রিয় নাম লেখাটা হালকা রঙ। তার মানে এসব সুপ্রিয় ভাইয়ের ই কাজ। বিউটি তখনো কাঁপছিলো। তার অনুভূতি টা ঠিক কি সে বুঝাতে পারবে না। সে কেকটা কে’টে মুখে দিতেই আবারও কেঁদে উঠলো। সবাই হইতো ঘুমিয়ে আছে। কারণ বিউটির ধারণা সবাই অনুষ্ঠান শেষ করে ঘুমাতে ঘুমাতে রাত একটা বেজে গেছে।

সুপ্রিয় ভাইয়ের শেষ উইশ মিনিমাম এগারোটা পঞ্চান্ন মিনিটে কিংবা রাত বারোটার ঠিক আগে। সবাই জাগ্রত থাকা অবস্থায় কি করে সুপ্রিয় ভাই তার রুমে এলো? কি করে? বিউটি আবারও ডুকরে কেঁদে উঠলো।
‘কোথায় আপনি সুপ্রিয় ভাই? এভাবে দেখা না দিয়ে চলে গেলেন? আমি আপনাকে কোনোদিনও ক্ষমা করবো না সুপ্রিয় ভাই। আমার চোখের পানির দাম আপনাকে কড়াই গন্ডাই দিত হবে। এখন চিঠি, সুন্দর নেকলেস, কেক, জন্মদিনে উইশ করে ন্যাকামি হচ্ছে? আমি এতো সহজেই ভুলে যাবো সবকিছু ভাবছেন কেন? আশ্চর্য!’

অন্ধকার রুমে দুজন পুরুষের করুন হাহাকারের প্রতিধ্বনি শোনা যাচ্ছে। কি নির্মম, কি নিষ্ঠুরতম ভাবে নির্যাতন চলছে সে ঘরে। অনেক্ষন অত্যাচার চলার পর এবারে তা বন্ধ হলো। চেয়ার বেঁধে রাখা লোক দুটোর ঘাড় হেলে পড়েছে পেছনের দিকে। সেই মুহুর্তে একজন লম্বাচওড়া, সুদেহী পুরুষ ভেতরে প্রবেশ করলো। তার প্রতিটি পদক্ষেপ যেনো চেয়ারে বাধা ব্যাক্তি দুজনের হৃদয়ে ঝংকার তুলে দেওয়ার মতো।

লোকটার সাজ পোশাক ছিলো সম্পুর্ন ব্ল্যাক। কালো হুডি, কালো প্যান্ট, কালো জুতো, কালো মাস্ক, হাতে কালো রঙের ঘড়ি৷ ফর্সা হাতে কালো ফিতের ঘড়ি কি দারুন মানিয়েছে! তার চোখে যেনো আগুনের বর্ষণ হচ্ছিলো। মাস্কের আড়ালে তার ঠোঁটে বিস্তৃত রয়েছে এক অন্য রকম রহস্যময় হাসি। একটা চেয়ার টেনে নিয়ে ঠিক বেঁধে রাখা লোকের সামনে এসে বসলো। এর মধ্যে আধমরা একটি লোক গুনগুনিয়ে বললো, ‘আমাদের ছেড়ে দিন। আপনারা আমাদের কেন ধরেছেন? এভাবে অত্যাচার কেন করছেন?’

সেই পুরুষ খড়খড়ে তবু বরফ ঠান্ডা গলায় আওয়াজ তুলে বললো,
‘তোদের কি মনে হয়, আমি এতো সহজে তোদের ছেড়ে দেবো? আস্তে আস্তে তীলে তীলে শেষ করবো তোদের। এবারে, হাতটা একটু বেশিই লম্বা করার সাহস দেখিয়েছিস। এখন তোদের হাত টা থাকে কি না সেটাই দেখার।’
‘আপনি কে? কি বলছেন? কিছুই বুঝতে পারছি না।আপনার কি ক্ষতি করেছি? আমাদের জানা শোনায় আপনাকে আমরা চিনিই না। আমাদেরকে যেতে দিন।’

‘কথা গুলো এ”সিড মা’রা’র আগে ভাবা উচিত ছিলো না? আগে মনে ছিলো না কি করছিস? এর ভয়াবহতা কি হতে পারে মনে ছিলো না? আবার বলছিস কি ক্ষতি করেছিস? তুই আমার সুকেশিনীকে টার্গেট করেছিস, আমি তোদের খুঁজে পাবো না ভেবেছিস? শুধু মাত্র গাড়ির নাম্বার প্লেট বদলালেই কি তুই আমার থেকে বাঁচতে পারবি?’
‘আমরা তো কোনো সুকেশিনীকে চিনি না ভাই!’

‘তাই নাকি? গতকাল যাকে অ্যাটাক করলি তাকেই ভুলে গেলি? তা দিনে কতজনকে এসি’ড মা’রি’স?’
‘স্যার আমরা কিছু জানি না। আমাদেরকে এই কাজের জন্য ভাড়া করা হয়েছিলো। আমরা তার অনারেই মে’রে’ছি এসিড!’
‘নাম কি বসের?’
‘নাম বলবো না স্যার।’

লোকটি মুখ থেকে এই শব্দ বের করার সঙ্গে সঙ্গেই তার হাতে ভয়ংকর ভাবে, এসিড ঢেলে দিলো। হাতের মাংস সাথে সাথে ঝলসে গেলো। লোকটি গগন বিদারী চিৎকার করতে লাগলো। হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো। অপরজন স্বচক্ষে এটা দেখা মাত্র হড়বড়িয়ে বমি করে দিলো। কালো হুডি পরা লোকটা তার একজন গার্ডকে ইশারা করলো পানি ঢেলে দিতে। লোকটির জ্ঞান ফিরতেই আবার সেই ব্যাক্তি ঠান্ডা কন্ঠে বললো,
‘তোকেও কি এই ডোজ দিতে হবে? নাকি সরাসরি বলবি?’

‘না না স্যার বলছি। সিজান! স্যার বসের নাম সিজান। যাকে এসিড মা’র’তে গেছিলাম তার বান্ধবীর হাসবেন্ড। আমাদের বস হিংসাত্মক হয়ে ঐ মেয়েটাকে এসিড মা’র’তে বলেছিলো। বসের বউকে নাকি ঐ ম্যাডাম নিজের বাড়িতে রেখেছে। তার কাছে যেতে দিচ্ছে না। সেজন্য রাগের বশবর্তী হয়ে বস আমাদের নির্দেশ দেন যেনো বাড়ি থেকে বেরোলেই সুযোগ বুঝে এসিড ঢেলে দিই৷ কিন্তু আমরা আমাদের কাজে সফল হওয়ার আগেই ওঁকে বাচিয়ে নিয়েছিলো একটা ছেলে।’

‘মিন্টু, ঐ শুয়োরের বাচ্চাকে তুলে নিয়ে আয়৷ কুত্তার বাচ্চার এমন হাল করবো যে জীবনে কোনো মেয়ের দিকে নজর দেওয়ার স্পর্ধা করবে না।’
‘জ্বী ভাই কাজ হয়ে যাবে! ভাই এদের কি করবেন? এদের কি ছেড়ে দেবেন?’
‘তোদের কি মনে হয়? তোদের ভাবির উপর অ্যাটাক করা ব্যাক্তিদের ছেড়ে দেওয়া উচিত? আমি ওঁদের ছেড়ে দেবো?’
‘নাহ ভাই। তা বলছি না। আপনি তো অন্যায় কতটা বড় তা দেখে শাস্তি দেন। এই লোক গুলো তো চ্যালা। নিজের বসের কথায় করেছে কাজ।’

‘ওঁদের অন্যায় টা ছোট? আমার সুকেশিনী! আমার সুকেশিনীকে আঘাত করতে গেছিলো সা***লা**রা। এঁদের ছাড়ার প্রশ্নই আসে না।’
‘আচ্ছা ভাই!’

সে আমার সুকেশিনী পর্ব ১৫

‘যাহ। মেইন কালপ্রিট কে আধ ঘন্টার মধ্যে আমার সামনে চাই। চাই মানে চাই। কাউকে ছাড়বো না। একেকজনের অন্যায়ের শাস্তি একেকজন ঠিক পাবে।’

সে আমার সুকেশিনী পর্ব ১৭