সে আমার সুকেশিনী পর্ব ১৫

সে আমার সুকেশিনী পর্ব ১৫
রাউফুন

মিনহাজ বেরিয়ে গেলে সায়র বিউটির সামনে এলো হুট করেই। বিউটি চমকে নিজের বুকে থুথু দিলো।
‘ভয় পেয়ে গেছি। এইভাবে মানুষ ভুতের মতো সামনে আসে? আপনি আবার কোথা থেকে এলেন বলুন তো? আশ্চর্য আপনি আমাকে ফলো করছেন নাকি?’

‘উঁহু! একদমই না! আমি তো আপনার সঙ্গে সঙ্গে থাকার চেষ্টা করছি। আপনি মিষ্টার মিনহাজের হাতে হাত রেখে কি বলছিলেন? এত্তো হেসে হেসে কথা বলার কি আছে? আমার সঙ্গে তো সব সময় তেঁতো তেঁতো কথা বলেন। আর ঐ টক্সিক মানবের সঙ্গে হাত ধরে হেসে হেসে কথা বললেন?’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘আমি কার হাত ধরবো, কার হাত ছাডবো সেটা সম্পুর্ন আমার ব্যাপার৷ আপনার কি তাতে?’
‘আপনি আমার হবু স্ত্রী ভুলে যাবেন না মিস বিউটি। আপনি একজনের সঙ্গে দেখা করতেই পারেন কিন্তু আমি ব্যতীত অন্য কোনো পুরুষকে স্পর্শ করতে পারেন না।’

বিউটি সায়রের তার প্রতি অধিকার বোধ দেখে অবাক হয় না। সে এই ক’দিনে অনেকটাই বুঝেছে সায়রকে। সে সায়রকে পুরোপুরি উপেক্ষা করে রেস্ট্রন্ট থেকে বের হলো। হঠাৎই সায়র তার একদম গা ঘেঁষে হাঁটছে। সায়র এভাবে তার গা ঘেঁষে হাঁটায় যথেষ্ট বিরক্ত হলো বিউটি। তবে লোকজন আছে বলেই সে চেঁচাতে পারলো না।
‘মিষ্টার সায়র, আপনি এভাবে লোকজনের সামনে আমার পিঠ ঘেঁষে হাঁটছেন কোন সাহসে?’

‘আমার সাহসে। এখানে লোকজন আছে বলেই এভাবে হাঁটছি। দ্রুত হাঁটুন। না হলে আবার রেস্ট্রন্টের ভেতরে প্রবেশ করুন। কুইক!’
‘পারবো না। আমি হঠাৎই আবার কেন রেস্ট্রন্টের ভেতরে যাবো। আশ্চর্য!’

কথা শেষ করেই বিউটি সামনে ঘুরলে সায়র তার সঙ্গে ঘুরে একই ভাবে পেছনে মুড়লো৷ বিউটির চুলের বিনুনি খুলতে শুরু করলো সায়র। এমন ত্যাদড় মেয়েকে কথা শোনানো যাবে না। তার চুলে হাত দিতে দেখে বিউটি অত্যন্ত রাগে সায়রের গালে চ’ড় বসিয়ে দিলো। তখন সায়র আর বিউটির দিকে সবার নজর। সায়র তার শরীর থেকে সাদা শার্ট খানা খুলে বিউটির গায়ে লেপ্টে দিলো দ্রুত।

‘শার্ট টা সরাবেন না মিস বিউটি। আপনার ড্রেস ছিড়ে গেছে কোনো ভাবে। পিঠ দেখা যাচ্ছিলো বলে আপনার লম্বা বিনুনি খুলে দিচ্ছিলাম। আপনার এতো লম্বা চুল বলে দেরি লাগছিলো গোড়া থেকে খুলতে। আবার লজ্জায় বলতেও পারছিলাম না আপনার ড্রেস ছেড়া ‘
‘আশ্চর্য তো ড্রেস ছেড়া মানে?’

‘লোকজন আছে বলেই বলতে পারছিলাম না। শার্ট টাও খুলতে পারছিলাম না। আজকে আমি টি-শার্ট পড়িনি নিচে।’
বিউটি সায়রের চোখের দিকে তাকালো। সায়রের চোখ রক্ত জবার মতো লাল। বিউটির অনুতাপ হচ্ছিল। সে এবারে নিজেই বিনুনি খুলে সারা পিঠে নিজের চুল ছড়িয়ে দিলো। জামাটা ছিড়লো কিভাবে তার মনে পড়ছে না। নাকি আগে থেকেই ছেড়া ছিলো সে খেয়াল করেনি। আশ্চর্য নতুন ড্রেস টা ছিড়ে গেলো কিভাবে? বিউটি অত্যন্ত বিব্রত হয়ে সায়রের দিকে শার্ট বাড়িয়ে দিলো। সায়র স্বাভাবিক ভাবে নিয়ে শার্ট গায়ে জড়াতে জড়াতে বললো, ‘উফফ বাঁচালেন। কি যে লজ্জা লাগছিলো।

‘আপনাকে চ’ড় মা’র’লাম আপনার আমার উপর রাগ হচ্ছে না?’
‘উঁহু। রাগ হবে কেন? আপনি তো আর ইচ্ছে করে মা’রে’ন নি।’
‘আপনার চোখ লাল হয়ে গেছে!’
‘ওও তাই? এমনিতেই লাল আমার চোখ।’
বিউটি মিনমিন করে বললো,’স্যরি মিষ্টার সায়র।’

‘ইটস ওকে। চলুন। আবার যে-কোনো সময় আপনার উপর অ্যাটাক আসতে পারে। তাই আপনাকে একা ছাড়তে ভয় লাগে!’
‘এতো মায়ায় জড়াবেন না। পরে ক্ষ’ত হবে।’
সায়র নির্বিকার। ছোট্ট ছোট্ট করে স্বগোতক্তি করলো, ‘ কিছু কিছু ক্ষ’ত ভালো। এই যে আপনি আজকে চ’ড় বসিয়ে হলেও আমাকে স্পর্শ করেছেন। আমি কতটা লাকি উফফ!’

বিউটি স্পষ্ট বুঝল সায়রের কতটা খারাপ লেগেছে। সায়রের চোখ লাল নয় বরং সবসময় মেঘের মতো সাদা থাকে। ঠিক তার সুপ্রিয় ভাইয়ের মতো। সে খেয়াল করে দেখলো সুপ্রিয় ভাইয়ের কথা সে আবারও ভুলে গেছিলো। চোখের মিল আছে বলে তার এখন বর্ণনা করতে গিয়ে মনে পরলো। আশ্চর্য এই বিষয়টা বার বার কেন ঘটছে তার সঙ্গে? তারপর সায়রের শেষ কথা শুনে ভীষণ খারাপ লাগলো বিউটির। সায়র মানুষ টা খারাপ না কিন্তু সেও কোনো ভাবে সায়রকে নিজের মনে জায়গা দিতে পারবে না।

‘ওহো, বিউটি আপনাকে চুল ছেড়ে ভীষণ সুন্দর লাগছে। বিনুনি করতে করতে রিং পেঁকে গেছে। কার্লি লাগছে। আর কার্লি হেয়ার লম্বা হলে অনেক সুন্দর লাগে। আপনার চুল গুলো আমার ভীষণ পছন্দের! আপনি সব সময় চুল বিনুনি করেই রাখবেন। না-হলে চুলে নজর লাগবে!’

এই প্রথম সায়রের প্রশংসায় একটু লজ্জা পেলো বিউটি। কিঞ্চিৎ হাসলোও বোধহয়! সায়র লক্ষ্য করেছে সেটা তবে বুঝতে না দিয়ে রিকশা ডেকে নিয়ে এলো। সায়র বিউটিকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো নিজের বাড়িতে৷ অন্যান্য দিনের মতো সে আজ বকবক করেনি। চুপচাপ ছিলো পুরোটা সময়। বিউটি অবশ্য এতো মাথা ঘামাইনি।

বিউটি বাড়ি গিয়েই সবাইকে জানিয়ে দিলো তার মেহমান আসবে আজকে। সন্দিপ্তা আর শাহানা বেগম অবাক হয়ে বিউটির দিকে তাকালো। শাহানা বেগম জিজ্ঞেস করলেন, ‘তো কে আসবে? তোর বন্ধু?’
‘হ্যাঁ!’
‘কেমন বন্ধু? ছেলে না মেয়ে?’
‘ছেলে বন্ধু আম্মু। তোমরা তাকে চেনো!’
‘তোর বাবা জানে?’
‘নাহ তোমরা জানাও।’
‘কেন তুমি জানাও গিয়ে!’ বললো সন্দিপ্তা।

‘ভাবি, আমার এখন একটু রিফ্রেশমেন্টের প্রয়োজন। ঠান্ডা ঠান্ডা শাওয়ার নিতে হবে। রেডি হতে হবে। আমি গেলাম!’
‘তোমাদের বন্ধুত্বটা কেমন?’
‘আশ্চর্য, উনি আমাদের অফিসের বস মিনহাজ স্যার। হয়েছে জানা? আর উনি আর উনার বোন আসবেন বিকেলে। আশা করছি আর কিছু বুঝাতে হবে না।’ বলল বিউটি।
‘তুমি তাকে পছন্দ করো?’

সন্দিপ্তার প্রশ্নের উত্তর দিলো না বিউটি। শাহানা বেগম অবাক হয়ে জানতে চাইলেন, ‘তোর বিয়ে ঠিক হয়ে যাওয়ার পরেও কোন আক্কেলে তাদের আসতে বললি?’
বিউটির বাম চোখ থেকে পানি বেরিয়ে এলো। শাহানা বেগম খেয়াল করেও কিছু বললেন না। মেয়ের কাছ থেকে উত্তরের আশায় তাকিয়ে রইলেন। বিউটি চোখ মুছে চলে গেলো নিজের রুমে।
‘সন্দিপ্তা দেখলে? দেখলে মেয়ের ত্বেজ?’

‘মা আমি রান্নাবান্না শুরু করছি। যদি মেহমান আসে, এরপর সাদামাটা আয়োজন হয় তখন লজ্জা পাবো আমরা। আর বাবাকে বুঝানোর বিষয়টা আমি দেখছি।’
বিকেলে মিনহাজ আর রাহেলা উপস্থিত হলো সঠিক সময়ে বিউটির বাসায়। তাদের বাড়িতে আয়োজন বেশ ভালোই হয়েছে। খাবারের গন্ধে মোঁ মোঁ করছে।
মিনহাজ বেশ অস্বস্তিতে ভুগছে।

হাশেম আলী তাদের সামনে বসে আছে। মিনহাজের পাশে বসা মেয়েটিকে কেমন চেনা চেনা লাগছে তার কাছে। রাহেলাও কেমন হাসফাস করছিলো। ড্রয়িংরুমে তখন পিন ড্রপ সাইলেন্স। সন্দিপ্তা, লিপন, মারিয়াম, শাহানা বেগম পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। বেশ কিছুক্ষণ মৌন থেকে প্রথমে হাশেম আলী-ই মুখ খুললেন।
‘বাবা মিনহাজ, তুমি ঠিক কি বিষয়ে কথা বলতে চাইছো বা এসেছো আমি বুঝতে পারছি। কিন্তু আমার মেয়ের ষোল তারিখে বিয়ে। মানে আর দুই দিন বাকি আছে। তোমরা এমন সময়ে এসেছো,…!’

‘আই আন্ডারস্ট্যান্ড ইয়্যুর সিচুয়েশন আংকেল। বাট আই হ্যাভ নাথিং ইন হ্যান্ড। আ’ম টু লেট টু আন্ডারস্ট্যান্ড মাই ফিলিংস। বাট নাউ দ্যাট আই ন্যো মিস বিউটি অলসো লাইকস মী দ্যান আই কান্ট পারসেকিউট মাইসেল্ফ!’
‘ইয়্যু ডিড হোয়াট ইয়্যু থ্যোট ওয়াজ রাইট। আই লাইক ইয়্যুর ক্যান্ডিড কানফেশান। বাট আই হ্যাভ টু থিংক এবাউট ইট।’
মিনহাজ মাথা নত করলো। বিউটি তখনো ঘরে বসে আছে। রাহেলা উশখুশ করছিলো ভীষণ। হাশেম আলী তা লক্ষ্য করে সন্তপর্ণে বললেন, ‘মা তুমি কি কিছু বলতে চাও?’

রাহেলা একটু চমকালো। কাষ্ঠ হেসে বললো, ‘চাচা, আপনার সঙ্গে কি আমি আলাদা কিছু কথা বলতে পারি? প্লিজ।’
সবাই চলে গেলো। লিপন কিছু বলতে চাইলেও সন্দিপ্তা টেনে নিয়ে চলে গেলো। মিনহাজ বসে ছিলো বলে রাহেলা তাকেও যেতে বললো। মিনহাজ কি করবে ভেবে পেলো না।
হাশেম আলী সেটাও লক্ষ্য করে বিউটিকে ডাকলো। বিউটি এলো ভেতর থেকে। মিনহাজ হেসে ফেলে তাকে দেখে। বিউটিও বিনিময়ে হাসলো। বললো, ‘চলুন ছাদে যাওয়া যাক।’

‘চলুন!’
‘আবার আপনি?’
‘ওও স্যরি অভ্যাস হয়ে গেছে।’
‘আচ্ছা সমস্যা নেই চলুন!’
বিউটি আর মিনহাজ ছাদে চলে গেলে রাহেলা নিজের পরিচয় দিলো।
‘হাশেম চাচা আপনি আমাকে চিনতে পেরেছেন? আমি আপনার বন্ধু হিকমত আলীর মেয়ে কাকন।’

‘কাকন মা তুমি? তুমি বেঁচে আছো?’
‘হ্যাঁ চাচা। ভাগ্য জোরে আমি আর ভাই বেঁচে আছি।’
হাশেম আলী ফ্যাকাসে মুখে শুধালেন, ‘তোমার বাবা মায়ের কি হয়েছিলো বলো তো? আর সুপ্রিয়? সুপ্রিয়র র’ক্ত মা’খানো ড্রেস দেখে তো ঘাবড়ে গেছিলাম আমি।’

‘চাচা প্লিজ আস্তে বলুন। কেউ-ই যদি শুনে তবে বিষয়টা ভালো হবে না। আমার ভাই সুপ্রিয়র জন্য বিউটির হাত চাইতে এসেছি আপনার কাছে। আপনি যার সঙ্গে বিয়েটা ঠিক করেছেন কাকতালীয় ভাবে সে আমার-ই সৎ ছেলে সায়র। নওশের কে বিয়ে করি আমি তার সবটা সত্যি না জেনেই। সে বিয়ে করেছিলো আগে এটাও জানতাম না। সেসব ছাড়ুন।

শুধু সায়রের সঙ্গে বিউটির বিয়েটা প্লিজ দেবেন না। আমরা দুই ভাই বোন এখানে এসে গা ঢাঁকা দিয়েছিলাম বিশ বছর আগে। আমরা জানতাম আমাদের বাবা মায়ের খু/নি আমাদেরকেও ছাড়বে না। তাই সুপ্রিয়র নাম ধাম বদলে মিনহাজ রেখেছি। আর আমার কাকন নাম বদলে রাহেলা রেখেছি। দেখুন আংকেল বিউটি নিজেও কিন্তু চায়, সে তার ছোট বেলার সুপ্রিয় ভাইকে বিয়ে করবে। এখন আপনি যদি ওর মতের বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত নেন তবে সেটা কি ভালো হবে?’

‘না ভালো হবেনা। তাই ভাবছিলাম তোমাকে এতো চেনা চেনা লাগছে কেন? তোমার বাবা মায়ের সঙ্গে কি হয়েছিলো? তার কিছু জানো? আর তোমরা দুই ভাই-বোন বাঁচলে কিভাবে?’
‘সে অনেক কথা চাচা। আব্বা আম্মা আমাদের লুকিয়ে রেখেছিলো ডাকাত এসেছে আন্দাজ করতে পেরেই। আমাদের বাড়িতে সেদিন ছয় জন ডাকাত ঢুকেছিলো। জানেন-ই তো বন্যার সময় ডাকাত হামলা করে নিরবে। কেউ-ই টের পায় না।

তারা বাবা মাকে আমার চোখের সামনে মে’রে বস্তায় ভরে নিয়ে চলে গেছিলো। আমি আর ভাই আড়াল থেকে দেখেও কিছু করতে পারিনি। ডাকাতি করে ডাকাত রা আব্বার কাছে যত টাকা পয়সা ছিলো সব কিছু নিয়ে চলে গেছে। আম্মা আমার জন্য গয়না গড়িয়েছিলো শুধু সেগুলো নিতে পারেনি।’
কথা শেষ করেই রাহেলা শব্দ করে কাঁন্না করে দিলো।

‘এভাবে কেঁদো না মা প্লিজ!’ হাশেম আলী রাহেলার মাথায় হাত রেখে বললেন।
‘কিন্তু, কিন্তু চাচা জানেন কি? আমার কেন যেনো মনে হয়, আব্বার কোনো শত্র আব্বা আম্মাকে মে’রে ফেলেছে। ঐ গ্রামে তো স্বচ্ছল ব্যাক্তিদের মধ্যে আমার আব্বাই ধনি ছিলেন। তারা জেনেই এসেছিলো সেটা। কিন্তু টাকা পয়সা নেওয়ার পরেও তারা আব্বা আম্মাকে মে’রে ফেলেছে।

তাদের যদি শুধু ডাকাতি করারই ছিলো তবে তারা টাকা পয়সাই নিয়ে যেতো। তারা আব্বা আম্মাকে মা’র’লো কেন? আমার সন্দেহ হলো কোনো শত্রু আছে। তাই সেই রাতেই আমরা আমাদের নানি বাড়িতে চলে আসি। এরপর থেকে দুই ভাই বোনের পরিচয় লুকিয়ে আমাদের গোপনে থাকতে হয়েছে। নানা নানির শেষ সম্পত্তি আমাদের নামে লিখে দিয়ে গেছেন মৃ’ত্যুর আগে। আমাদের নানা নানির বাড়িতেই এখন আমরা থাকি। আমাদের পরিচয় লুকিয়ে রাখার কারণ যেনো আমাদের গোপন কোনো শত্রু অ্যাটাক না করতে পারে। বুঝতে পারছেন চাচা?’

‘আমি বুঝতে পারছি সবটা। কিন্তু সায়র? ওকে কিভাবে এই বিয়ের জন্য মানা করবো? ওর দাদিকে যে কথা দিয়েছি আমি।’
রাহেলা হাশেম সাহেবের পায়ে পরলো।
‘আরে আরে কি করছো পা থেকে ওঠো মা। এভাবে পা ধরবে না। ওঠো।’
‘নাহ চাচা আপনি প্রথমে মিনহাজ মানে আমার ভাই সুপ্রিয় আর বিউটির বিয়ে ফিক্সড করুন তারপর উঠবো তাছাড়া এভাবেই পা ধরেই বসে থাকবো।’

‘আচ্ছা ওঠো। আমি একটা না একটা ব্যবস্থা ঠিক করবো।’
রাহেলা চোখ মুছে অদ্ভুত ভাবে হাসলো। মিনহাজকে সুখী করতে সে সব করতে পারে সব। সে শুধু চাই মিনহাজ সুখী হোক বিউটির সঙ্গে! এবার যা কিছু হবে সবটা ভালো হবে। সে বললো, ‘চাচা সায়রকে এই বিয়ের জন্য মানা করবেন না। বিয়ের দিনই বর বদল হবে। সায়র বিয়েতে আসবে না সেদিন। আর সায়র না আসলে মানে বর না আসার জন্য মিনহাজের সঙ্গেই বিয়ে দেবেন সম্মান বাঁচাতে। বিয়ের দিন ষোল তারিখেই ফিক্সড রাখুন তবে। তাহলে আপনার সম্মান এবং কথা রাখাও হলো আর আমার ভাই ও বিউটিকে আপন করে পেলো।

‘ঠিক আছে। তুমি যা বলবে তাই হবে।’
‘আর চাচা আর একটা রিকোয়েস্ট, আমি যে আপনার কাছে এসব বললাম, আপনি প্লিজ আর কাউকেই বলবেন না। আমি চাই কথা গুলো আপনার আর আমার মধ্যেই থাকুক।’
‘ঠিক আছে মা!’

রাহেলা কল করে মিনহাজকে নিচে আসতে বললো। রাহেলা উঠে ঘুরে দাঁড়াতেই দেখলো বিউটি দাঁড়িয়ে আছে। কিঞ্চিৎ ঘাবড়ে গেলো রাহেলা। বিউটি নিজেকে স্বাভাবিক করে হাসার চেষ্টা করলো। বললো, ‘উঠছেন কেন? বসুন আপু। আমি টেবিল সাজাতে বলি।’
‘হ্যাঁ বসো মা। মিনহাজও আসুক নিচে।’

সে আমার সুকেশিনী পর্ব ১৪

রাহেলা শুধু মনে মনে ভাবছে বিউটি নিচে কখন এসেছে? আগে থেকেই দাঁড়িয়ে ছিলো নাকি এখনি নিচে নেমেছে? পাঁচ তলা থেকে সিড়ি বেয়ে নিচে নামলে তো একটু হলেও হয়রান হওয়ার কথা। কিন্তু বিউটিকে দেখে তো সেরকম কিছু মনে হয়নি। তবে কি বিউটি আড়ি পাঁতছিলো?

সে আমার সুকেশিনী পর্ব ১৬