সে আমার সুকেশিনী পর্ব ১৪

সে আমার সুকেশিনী পর্ব ১৪
রাউফুন

বিউটি বাড়ির গেটে পা রাখতেই আঁচানক সায়র উপস্থিত হলো তার ঠিক সামনে। সায়র বিউটিকে দেখে ক্যাবলামো করে হাসলো। বিউটির গায়ে জ্বালা ধরে গেলো সেই হাসির শব্দে। সে এখনো সায়রের পুরো মুখের দিকে তাকাইনি। তার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে বা আগ্রহ হয়নি তাকানোর। বরং এই ত্যাদড় সায়রের উপস্থিতিতে সে রেগে যায়৷

বিরক্তিকর একটা মানুষ সায়র। (আমার রিডার্সদের মতো বিউটির কাছেও বিরক্তিকর হেহেহেহে) বিউটি কোনো ভাবেই সায়রকে সহ্য করতে পারে না। সে তাকে দেখেও না দেখার ভান করে হাঁটতে শুরু করলো। কারণ সে জানে সায়র তার পিছু ছাড়বে না এখানে দাঁড়ালে। যতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবে কথা বলে বলে কানের পোকা নাড়িয়ে দেবে লোকটা। ননস্টপ বকবক করতে করতে মাথা ধরিয়ে দেবে। এই কদিনে সে তা ভালোভাবেই উপলব্ধি করেছে। সায়র তার পাশাপাশি হাঁটতে শুরু করেছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘কোথায় যাচ্ছেন? আপনার শরীর কিন্তু এখনো অনেক খারাপ!’
‘আশ্চর্য তো? আমার শরীর ভালো না খারাপ আপনার কি যায় আসে তাতে?’
‘যায় আসবে না বলছেন? আমার হবু বউ অসুস্থ শরীর নিয়ে বাইরে যাচ্ছে জিজ্ঞেস করবো না?’

‘আমি এই চার পাঁচ দিনে সুস্থ হয়ে গেছি। অনেক ধন্যবাদ আপনি আমার খোঁজ নিয়েছেন। এবারে আসতে পারেন।’
‘ঠিক আছে! সায়র বিউটির পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটতে শুরু করলো। বিউটি সেটা বুঝে কটমট করে তাকালো।
‘আপনার সাহস তো কম না এখনো আমার পিছু নিচ্ছেন। কেন আসছেন আমার পিছনে?’
‘আসবো না কেন? আপনি অসুস্থ এখনো। হঠাৎই রাস্তা ঘাটে বিপদ হলে কি করবেন তখন? আমি আপনার প্রটেকশন এর জন্য আপনার সঙ্গে যাচ্ছি।’

‘আমি যথেষ্ট ফিট্ আপনার কোনো সাহায্যের প্রয়োজন হবে না। আপনার বাদরামো সহ্য কর‍তে করতে আমি অতিষ্ঠ হয়ে গেছি ক’দিনে। এতো বিরক্তিকর কেন আপনি? একেবারে অসহ্য!’
‘এটা তো সবে শুরু। আমাকে আপনার পিছনে যেতে মানা করেছেন আপনার সঙ্গে সঙ্গে হাঁটতে তো মানা করেন নি!’

বিউটি দু-চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করছে। সায়র বিউটির দিকে তাকিয়ে হাসলো মুখ টিপে। এই মেয়েটার কাছে সে বার বার বেহায়া হতেও রাজি। যা কিছু হোক সে বিউটির পিছু ছাড়বে না। বাড়ি থেকে বেশ অনেকটা দূরে এসে বিউটি রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে পরলো। তার জন্য সব সময়ের ঠিক করা রিকশাওয়ালা অসুস্থ। সে রিকশা নিয়ে বেরোতে পারছে না। একবার যেতে হবে তার বাড়িতে। সে ভাবলো আসার সময় যাবে একবার।

সায়র ও দুই পকেটে হাত গুজে তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। অনিমন্ত্রিত, আকস্মিক ভাবে একটা গাড়ি থেকে কোনো তরল পদার্থ পরতে দেখে সায়র বিউটিকে নিয়ে ছিটকে সরে যায়। ঘটনাটা এতোটাই দ্রুত ঘটে যে চোখের পলক ফেলার আগেই ঘটনা টা ঘটে যায়। বিউটি তাজ্জব বনে গেলো এরকম আক্রমণে। কত গুলো লোকজন ছুটে এলো বিউটির চিৎকারে। হৈচৈ করে বললো, ‘এই এসি’ড মে’রে’ছে রে, এ’সি’ড মে’রে’ছে। ধর ধর।’

বিউটি তাদের বাড়ি থেকে হাঁটতে হাঁটতে বেশ দূরত্বে আছে। লোকজন ছুটে এসে এমন ঘটনা দেখে হুড়োহুড়ি করলো। একজন জিজ্ঞেস করলো,
‘এই মেয়ে ঠিক আছো তুমি? কি যুগ জামানা এলো। চলন্ত গাড়ি থেকে দিনে দুপুরে এ’সি’ড মা’র’ছে।
‘ও ঠিক আছে, আপনারা প্লিজ ভীড় জমাবেন না। এমনিতেই সে ঘাবড়ে গেছে।’
‘আপনি কে?’

‘আমি ওর হবু হাসবেন্ড! আপনারা কেউ একজন একটু পানি আনুন প্লিজ। ও ভীষণ ভয় পেয়ে গেছে।’
‘এক্ষুনি কত বড় একটা অঘটন ঘটে যেতো। আল্লাহ্ বাঁচিয়েছেন। এই তোমরা চলো সবাই। আর আপনারা থানায় কেস করুন, আমরা সাক্ষী দেবো।ঘটনা ঘটতে তো আমরা স্বচক্ষে দেখেছি।’
‘ধন্যবাদ আপনাদের। এবারে আমি ওকে সামলে নিবো।’

সায়র কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো তাদের কাছে। বিউটি নিজেকে সামলানোর জন্য সায়রের শার্ট খামচে ধরে আছে। তার হাতের ব্যাগটা নিচে পড়ে গেছে। সে এখন সম্পুর্ন সায়রের বুকের সঙ্গে লেপ্টে আছে। সায়রের বুকের ধুকপুকানির শব্দ সে স্পষ্ট শুনতে পেলো। সায়র ভীষণ উত্তেজিত হয়ে জোরে জোরে শ্বাস প্রশ্বাস নিচ্ছে। সে খেয়াল করেছে গাড়িতে কোনো নাম্বার প্লেট লাগানো নেই। আশ্চর্য! সায়র স্থির হয়ে দৌঁড়ে যেতে চাইলেও বিউটির জন্য পারলো না। লোকজন ভীড় কমালো।

সায়র পানি খাইয়ে দিলো বিউটিকে। সে ভীষণ ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে রাস্তায় বসে পরলো। সায়র তাকে সামলালো। এমন আক্রমণে সে সহ বিউটি থরথর করে কাঁপছিলো। বিউটিকে নিজেকে ধাতস্থ করে নিজের হ্যান্ডব্যাগ খুঁজে বের করলো। ব্যাগ যখন দেখলো তখন আরেকদফা থমকায় সে। ব্যাগের উপর সেই তরল পদার্থ পড়েছিলো। এবং ব্যাগটা পুঁড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এমন আক্রমণ কে করতে পারে তাকে? তার তো কোনো শত্রু নেই! আজ সায়র না থাকলে এ’সি’ড খানা তার মুখে পড়তো। সায়র অস্থিরতা নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

‘আর ইয়্যু ওকে মিস বিউটি! আপনার কোথাও লাগে নি তো?’
সায়রের অস্থিরতায় ভরা কন্ঠ। তার দু-চোখে পানি চিকচিক করছে। বিউটি তার র’ক্ত লাল চোখ দেখে ভড়কে গেলো। লোকটা কি তার জন্য কাঁদছে? তাকে নিয়ে এতো উৎকন্ঠা কেন এই চোখে? বিউটি তখন স্টেবল থাকতে পারছিলো না। গতানুগতিক ভাবে তার শরীরের কঁম্পন তখনো থামেনি। কোনো রকমে বললো,

‘আমি ঠিক আছি। ওঁরা কারা যে আমাকে এ’সি’ড মা’র’তে চাইছিলো? আমার তো কোনো শত্রু থাকার কথা নয়! কখনোই ছিলোও না। তাহলে? এমন ভয়াবহ একটা কাজ করতে চাইলো কেন? কে আমার শত্রু?’
‘আপনার শত্রু কখনোই ছিলো না বলে যে এখনো হবে না তা তো নয়! আজকে আমি না থাকলে এসিড টা আপনার মুখে লাগতো। আপনার এই সুন্দর মুখটা ঝলসে যেতো। ভাগ্যিস আমার চোখে পড়েছিলো।’

‘আশ্চর্য, আমি তো আহামরি কিছু সুন্দরী না। আমার চেহেরা এমনিতেই নষ্ট, এ’সি’ড দিয়ে আর কিই বা নষ্ট হতো! পুঁড়ে গেলে যেতো। আমি রোজ একই পোশাক পড়ি, একই ভাবে চলাফেরা করি, কোনো মাধুর্য নেই চেহারায়। আশ্চর্য আপনি তবুও কেন আমার পিছনে পরে আছেন? আমাকেই কেন বিয়ে করতে চাইছেন?’
সায়র বিউটির কথা শুনে কিছু যেনো ভাবলো। আড়ালে চোখ মুছে নিলো সে। বললো,

‘আই ডোন্ট কেয়ার ইফ ইয়্যু ওয়্যার নিউ ক্লথস অর নট। আই জাষ্ট ওয়ান্ট ইয়্যু মাই… সম্বোধন টা বিয়ের পরেই করবো না হয়! আপনাকে আমি কি বলে ডাকবো সেটা!’
বিউটি প্রতুত্তরে কিছু বলার মতো ভাষা পেলো না। হ্যাঁ সে সায়র কে একদমই সহ্য করতে পারে না কিন্তু এই সায়র নামক মানুষ টা না থাকলে আজ তার অবস্থা কতটা ভয়াবহ হতো ভাবতেই সম্পুর্ন শরীরে কেঁপে উঠছে। কিন্তু আজকে এই মুহুর্তে তার মিনহাজের সঙ্গে দেখা করাটা জরুরি। তাকে যেতে হবে যথাস্থানে!

বিউটি সামনে যেতে নিলে সায়র বিউটির হাত চেপে ধরলো। বিউটি কিছু বুঝে উঠার আগেই সায়র বললো, ‘কোনো কথা হবে না আমরা এক্ষুনি থানায় যাবো। কেস ফাইল করতে হবে। এমন ভাবে এতো ভয়াবহ বড় আক্রমণের চেষ্টা, এটার একটা হেস্তনেস্ত করতেই হবে। পরবর্তীতে আপনার উপর আবার এমন ভয়ানক অ্যাটাক করতে পারে তারা।’

‘আশ্চর্য! আমার হাত ছাড়ুন। যখন তখন আমার হাত ধরবেন না। আমি সেই অধিকার আপনাকে দেইনি।’
‘ঠিক আছে ছেড়ে দিলাম।’ সায়র বিউটির হাত ছেড়ে দিয়ে তার হলুদ উড়না চেপে ধরলো।
‘আশ্চর্য, কি হচ্ছে টা কি? হাত ছাড়তে বললাম আর আপনি উড়না চেপে ধরলেন।’
‘হাত ধরতে বারণ করেছেন, উড়না ধরতে বারণ করেন নি।’

‘আমি থানায় যাবো না। থানায় যাওয়ার থেকে আমার মিনহাজ স্যারের সঙ্গে দেখা করাটা জরুরি!’
‘আপনাকে না আমি বলেছিলাম ঐ চাকরি টা আপনি করবেন না আর।’
‘আমি অবশ্যই চাকরিটা করবো। ওও হ্যাঁ আপনি আমার জীবন বাঁচানোর জন্য ধন্যবাদ। এবারে ছাড়ুন আমাকে যেতেই হবে। নাকি সেটাও পারবো না আপনার জন্য!’

‘আপনি তার সঙ্গে দেখা করেন বা না করেন আমার কিছুই যায় আসে না! আমি জানি দিনশেষে আমার ব্যাক্তিগত মানুষ আমারই হবে। হবেই। তবে আপনি থানায় ছাড়া এখন অন্য কোথাও যেতে পারবেন না। কিছুতেই যেতে পারবেন না।’
‘যাবো না আমি থানায়!’

‘হ্যাভ ইয়্যু গোন ম্যাড, ড্যাম ইট? আজকে কি হতে যাচ্ছিলো কোনো ধারণা আছে আপনার হ্যাঁ? আমি না থাকলে আপনি এসিডে ঝলসে গিয়ে রাস্তায় পড়ে ছটফট করতেন। লোকজন ছুটে এসেও আপনার কিছু করতে পারতো না৷ ছুটোছুটি করে হসপিটাল নিয়ে যেতো শুধু। আর আপনি বলছেন থানায় যাওয়ার থেকেও বেশি জরুরি আপনার ঐ টক্সিক বসের সঙ্গে দেখা করা?’
সায়রের কন্ঠে কিছু একটা ছিলো। শান্ত মানুষ হঠাৎই রেগে গেলে যেমন হয় সেটাই। সে সায়রের কন্ঠ শুনেই বুঝলো শেষ কথাখানা সায়র ক্ষোভের সহিত বলেছে।

মিনহাজ ভারাক্রান্ত মন নিয়েই অফিসে প্রবেশ করলো। অফিসে ঢুকে কাঙ্ক্ষিত ব্যাক্তিকে আজও দেখতে পেলো না। পদে পদে প্রতিটি কাজ তার ভুল হচ্ছে। নিজের কেবিনে বসে সে ল্যাপটপে অনেক পুরনো একটা এলবামে ঢুকলো। সে তখন ভার্সিটিতে পড়াশোনা করে। সেই মেয়েটির ছবি বের করতেই দু-চোখ চিকচিক করে উঠলো। এখনো অব্দি সে তার প্রথমাকে ভুলতে পারেনি। সে নামে যেমন প্রথমা তেমনি তার জীবনের প্রথম নারী এই মেয়েটি।

প্রথমা তাকে এখনো কন্টাক্ট করার চেষ্টা করে। কারণ সে ব্যাক্তি জীবনে অসুখী। সে তখন সম্মান দ্বিতীয় বর্ষে৷ প্রথমা তার ব্যাচমেট ছিলো। সবচেয়ে সুন্দরী, এরোগেন্ট নারী। যাকে পাওয়ার জন্য কত শত ছেলে উৎকৃষ্ট থাকতো। মিনহাজের পুরোপুরি পড়াশোনার প্রতি মনোযোগ। দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষা সফরে গিয়ে প্রথমা তাকে প্রপোজ করেছিলো। সে রাজি হয়নি। কিন্তু আস্তে আস্তে প্রথমা তার মনে জায়গা করে নিয়েছিলো।

এরপর চার বছর সম্পর্ক ছিলো তাদের। মিনহাজ বিয়ের কথা বললেই প্রথমা সব সময় আপত্তি করতো। তার আরো সময় চায়। মিনহাজও জোর করেনি। কিন্তু মিনহাজ পরবর্তীতে আর দেরি করতে চাইনি। সে প্রথমার বাড়িতে রাহেলাকে নিয়ে সম্বন্ধ নিয়ে গেছিলো। তাকে নিয়ে কোনো রকম সমস্যা প্রথমার পরিবারের ছিলো না। কিন্তু মিনহাজ সম্পুর্ন একা। তার বাবা মা পরিবার পরিজন কেউ-ই নেই এমন নানান ছুঁতো দিয়ে সরাসরি তাকে প্রত্যাহার করেছিলো প্রথমার পরিবার।

পারিবারিকভাবে তাদের বিয়েটা হোক কেউ-ই মানতে চায়নি। এরপর মিনহাজের সঙ্গে সম্পুর্ন ভাবে যোগাযোগ বন্ধ করে দেই প্রথমা। প্রথমাকে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দেই তার পরিবার। মিনহাজ প্রচন্ড ভেঙে পরেছিলো। রাহেলা তাকে বড় বোনের মতো সব সময় আগলে রেখেছে। এখনো রাখছে। সে পরে অবশ্য খোঁজ নিয়ে জেনেছে প্রথমা তাকে শুধু ইউস করেছে। তার ভার্সিটি লাইফে একজন টাইম পাস করার জন্য সঙ্গীর প্রয়োজন ছিলো। মিনহাজকে কখনোই প্রথমা ভালোবাসেনি।

ভালোবাসতো শুধুই তার বাবার রেখে যাওয়া টাকাকে। টাকার জন্য বিয়ে করতে রাজি হলেও, যখন মিনহাজের থেকেও ব্যাটার কেউ প্রথমার লাইফে এলো, তখন প্রথমা তাকে পরিবারের অজুহাত দেখিয়ে ছেড়ে দিলো। তার হাসবেন্ড তাকে বিদেশে নিয়ে স্যাটেল্ড হলো। তার প্রথমা, তার ভালোবাসার মানুষ হলো অন্য কারোর স্ত্রী। অন্য কোনো ব্যাক্তির শয্যা সঙ্গী।

কিন্তু বিয়ের এক বছর পেরোতে না পেরোতেই প্রথমা তার কাছে আবার ফিরতে চাইছিলো কারণ প্রথমার হাসবেন্ড চারিত্রিক, মানসিক দিক থেকে বিকৃত। বিদেশে আলাদা আলাদা নারীর সঙ্গে রাত কাটিয়ে বাড়ি ফিরতো।
কিন্তু কোনো প্রতারকের জায়গা মিনহাজের হৃদয়ে নেই। এভাবেই তার জীবনে কেটে গেলো কত গুলো বছর। কোনো নারীর জায়গা হলো না তার জীবনে। একা, নিঃসঙ্গতায়, মৌন থেকে কাটিয়ে দিলো আট টা বছর।

কিন্তু যেদিন বিউটি তার অফিসে এলো না চাইতেও তার নজর আটকে গেছিলো বিউটিতে। কিছু একটা অনুভব করতো সে। বিউটির সরু, রঞ্জক বিহীন দুই ঠোঁট, লম্বা চুল, সাদা হলুদ রঙের ড্রেস, সুন্দর পদ্মলোচন আঁখি, একদম সাদা মাটা একটি নারী। পুরোটা সময় নত মস্তকে ইন্টারভিউ দিয়েছিলো বিউটজ। তার মনে নতুন কিছু সঞ্চার করেছিলো সেদিন। দুই বছর থেকে একটু একটু করে সে বিউটিকে নিজের মনে জায়গা দিয়েছিলো নিজের অজান্তে। ক্রমেই সে বিউটির প্রতি মুগ্ধ হতে থাকে। কিন্তু বিউটির বিয়ে ঠিক হওয়ার পর সে উপলব্ধি করে সে বিউটিকে ভালোবাসে।

মিনহাজের সম্পুর্ন মনোযোগ তখন ল্যাপটপে এক প্রতারক নারীর ছবি। পর পর সে ছবি গুলো সিলেক্ট করে ডিলিট করে দিলো। এই নারীর জন্য সে জীবনে অনেক কষ্ট করেছে আর নয়। যদিও কিঞ্চিৎ খারাপ লাগা কাজ করলো প্রথমার ছবি ডিলিট করার সময়। যতোই হোক এই নারী তার প্রথম ভালোবাসা ছিলো।

মিনহাজ তাকিয়ে দেখলো তার ফোন ভাইব্রেট হচ্ছে। স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করছে বিউটির নাম। মিনহাজ খুশি হবে নাকি বেজার হবে বুঝলো না। সে কলটা রিসিভ করলো। যেকোনো পরিস্থিতির জন্য সে প্রস্তুত!
‘হ্যালো!’

‘হ্যালো স্যার, আপনি আমার সঙ্গে একটু দেখা করুন সেদিনের সেই রেস্ট্রন্টে। আমি অপেক্ষা করছি আপনার জন্য!’
মিনহাজের বুক কাঁপছে দুরুদুরু করে। বিউটি তাকে ডেকেছে সে কিভাবে না গিয়ে থাকতে পারে। এই নারী তার জীবনের দ্বিতীয় তথা শেষ ভালোবাসা। সে কোনো ভাবেই এই নারীকে অগ্রাহ্য করতে পারবে না। মিনহাজ কোনো কিছু না ভেবেই বেরিয়ে পরলো। আধ ঘন্টার রাস্তা সে পনেরো মিনিটে পৌঁছে গেলো ফুল স্পিডে গাড়ি চালিয়ে। গিয়ে দেখলো সেই রোজকার মতো সাজে বিউটি বসে আছে।

অত্যন্ত বিব্রতকর অবস্থায় সে গলা খাকাড়ি দিয়ে বসলো বিউটির সামনে। বিউটি মিনহাজের মুখের দিকে পুরো পুরি ভাবে তাকালো। মিনহাজ থতমত খেলো তার চাহনিতে।
‘আপনি হসপিটালে যা কিছু বললেন তা কি সত্যিই? আপনিই আমার সুপ্রিয় ভাই?’

মিনহাজ শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো বিউটির পানে। মিনহাজকে অবাক করে প্রথমবার বিউটি নিজ থেকেই মিনহাজের হাত ধরলো। অনুনয় বিনয় করে বললো,’আমি বিশ্বাস করেছি আপনি আমার সুপ্রিয় ভাই। এতোটা নিখুঁত আর বাস্তব অভিনয় কেউ করতে পারে না৷ আপনার আমার প্রতি ভালোবাসা মিথ্যা না।

আপনি আমার আর সায়রের বিয়েটা আটকান সুপ্রিয় ভাই। আপনি বাড়িতে প্রস্তাব পাঠান। সায়রের সঙ্গে আর তিন দিন পর আমার বিয়ে হয়ে যাবে সুপ্রিয় ভাই৷ আপনি কিছু একটা করুন প্লিজ! আমি আপনাকে ছাড়া আর কাউকেই বিয়ে করতে পারবো না সুপ্রিয় ভাই। প্লিজ কিছু করুন।’

মিনহাজ যেনো নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। খুশিতে তার হৃদয় ছলকে উঠলো। দু-চোখের কোণে পানি জমা হলো। বিউটি মানছে সে তার সুপ্রিয় ভাই? এ যে অবিশ্বাস্য ব্যাপার।
‘আপনি সত্যি বলছেন বিউটি? আমি যাবো আপনার বাড়িতে?’
‘সেদিন কত সুন্দর তুই বললেন এখন আবার আপনি? ছোট বেলার মতো তুই বলবেন।’
‘আচ্ছা। কবে যাবো আমি তোর বাসায়?’

সে আমার সুকেশিনী পর্ব ১৩

‘আজই আসুন প্লিজ চলুন। বেশি সময় নেই আমাদের হাতে।’
‘ঠিক আছে। আমি আজই বিকেলে রাহেলা বুবুকে নিয়ে যাবো তোর বাসায়। আমি বুঝিয়ে বললে নিশ্চয়ই তিনি মানবেন!’
মিনহাজ খুশি মনে বাড়ি ফিরলো। বিউটির মাথায় এই মুহুর্তে কি খেলা করছে সে জানে না৷ তবে সে তার পরিকল্পনা কিছুতেই ধরতে দেবে না কাউকে।

সে আমার সুকেশিনী পর্ব ১৫