এই শহর আমার পর্ব ৬ || Suraiya Aayat || SA Alhaj

এই শহর আমার পর্ব ৬
Suraiya Aayat

সিফাত sir ক্লাস নিচ্ছেন আর মুগ্ধতা বারবার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে ৷ সিফাত sir মুগ্ধতাদের ফিজিওলজির টিচার ৷ এই ফিজিওলজি এমন একটা সাবজেক্ট যার প্রতি মুগ্ধতার কোন ইন্টারেস্ট নেই , যদিও স্পর্শ ব্যাপারটা এখনো জানেনা ৷ যদি জানে তাহলে হয়তো এটাই হয়ে যাবে মুগ্ধতার ফেভারিট সাবজেক্ট , কারন স্পর্শ এই সাবজেক্ট এর প্রতি এত গুরুত্ব দেবে যে মুগ্ধতা বাধ্য হবে পড়তে ৷

মুগ্ধতা গালে হাত দিয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে আর ওর পাশে বসে আছে ওর বেস্ট ফ্রেন্ড শ্রুভতা ৷ মুগ্ধতা শুভ্রতা ছাড়া আর কারো সাথে মেশে না আর ও কারোর সাথে মিশতে ইন্টারেস্টেড ও নয় , যদিও এ নিয়ে স্পর্শ কখনো কিছু বলেনি কারণ মুগ্ধতা যেটাতে কম্ফোর্টেবল ফিল করে সেটাই স্পর্শ মেনে নেই ৷
ফিজিওলজি শুভ্রতার ফেভারিট সাবজেক্ট তাই শুভ্রতা খুব মন দিয়ে পড়া শুনছে কিন্তু এখন মুগ্ধতার ভীষণভাবে মন চাইছে যে শুভ্রতাকে বিরক্ত করতে , কিন্তু ও তা করবে না কারণ পড়াশোনার সঙ্গে কোনো আপস নয় ৷
শুভ্রতা কে ডাকতে গিয়েও মুগ্ধতা ডাকলো না , নিজে এবার একটু ক্লাসে কনসেনট্রেট করার চেষ্টা করলো ৷ স্যারের দিকে তাকাতেই দেখলো সিফাত sir ওর দিকে তাকিয়ে আছে, স্যারের সাথে মুগ্ধতার এমন চোখাচোখি হলেই মুগ্ধতা একটু ঘাবড়ে গেল, আর তখনই স্যার মুগ্ধতা কে বলল

” মুগ্ধ স্ট্যান্ডআপ ৷”
sir এর মুখে মুগ্ধ নামটা শুনে মুগ্ধতার খুব রাগ হয়ে গেলো ৷ মুগ্ধ নামটা শুধু কাছের মানুষদের জন্য সেই নামে ডাকার অধিকার সবার নেই তাই এখন ওনার মুখে ওর মুগ্ধ নামটা শুনে খুব রাগ লাগছে ৷ এরপর খানিকটা ভারী গলায় বললো
” My name is Farhar Khan Mugdhota sir,it’s Mean Mugdhota, not Mugdho . next time নামটা সঠিকভাবে ডাকবেন ৷”
ক্লাসের সবার মাঝখানে উনি যেন মুগ্ধতার এমন কথাতে অস্বস্তি বোধ করলেন ৷ উনি অনেকক্ষণ ধরে লক্ষ্য করছিলেন যে মুগ্ধতার কনসেনট্রে নেই ক্লাসে, ইভেন উনার ক্লাসে কখনোই মুগ্ধতাকে উনি এটেনটিভ দেখেন না ,অথচ সব টিচারাই মুগ্ধতার প্রশংসা করে ৷ তাই ওনার ক্লাসে মনোযোগ না দেওয়ার ব্যাপারটা ওনার বড্ড অবাক লাগে ৷ উনি নিজেকে সামলে বললেন

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” তোমার অ্যাটেনশন কোথায় থাকে পড়ানোর সময়?”
মুগ্ধতা স্ট্রেটকাট উত্তর দিল
” আমার মন ক্লাসেই আছে স্যার ৷”
ওনার রাগ হচ্ছে এবার, মুগ্ধতার এমন উত্তরে উনি এবার খানিকটা জোরে বললেন
” মুখে মুখে তর্ক করো,ম্যানারস জানো না ? তোমার প্যারেন্টস কে বলবে দেখা করতে, আর পুরোটা ক্লাস এভাবেই দাড়িয়ে থাকো ৷”
মুগ্ধতা কিছু বলতে যাবে তখনি শুভ্রতা ওর হাত চেপে ধরল, ফিসফিস করে বলল
” স্টপ মুগ্ধ তুই তো জানিস উনি এমনই , প্লিজ কন্ট্রোল ইউরসেলফ ৷”

Sir মুগ্ধতা কে বকেছে দেখে নীতু হাসছে,মধু কিছু বলছে না,এমনিতেই কালকের ঘটনার জন্য মধুর রাগ রয়েছে নীতুর ওপর ৷ মুগ্ধতা একবার নীতুর দিকে তকিয়ে নিতুর দিকে থেকে চোখ সরিয়ে নিলো ৷ মেয়েটাকে কোনদিন যদি ফাকা রাস্তায় একা পাই তাহলে মুগ্ধতা যে ওর কি করবে সেটা মুগ্ধতা নিজেও জানেনা ৷”

sir পুনরায় পড়ানো শুরু করেছেন, কিন্তু শুভ্রতার মন বসছে না পড়াতে,মুগ্ধকে দাঁড় করিয়ে রেখেছে , আর তাকে এমন ভাবে দেখতে শুভ্রতার একদমই ভালো লাগে না ৷ মুগ্ধতার হাতটা ধরে বসে আছে শুভ্রতা ৷ মুগ্ধতা ওর বেস্ট ফ্রেন্ড ৷ মুগ্ধতা পছন্দ করেনা যে শুভ্রতা ও ছাড়া আর কারোর সাথে বেশি কথা বলুক তাই শুভ্রতা অন্য কারো সাথে মেশার বেশি চেষ্টা করে না ৷ দুজনেই সেই ক্লাস ফাইভ থেকে বেস্ট ফ্রেন্ড ৷ শুভ্রতা স্পর্শ আর মুগ্ধতার বাড়ির কথা সবই জানে, এমন. কোন কথা নেই যে যেটা শুভ্রতা জানে নামুগ্ধতার ব্যাপারে ৷ স্পর্শ ও শুভ্রতাকে নিজের বোনের মতো ভাবে ৷ ক্লাস ফাইভে যখন মুগ্ধতার সাথে শুভ্রতার প্রথম দেখা হয় ৷ তখন ওদের দুজনের মাঝে নামের মিল আছে বলে মুগ্ধতা শুভ্রতার সাথে ফ্রেন্ডশিপ করে , তারপর ওরা দুজন বেস্ট ফ্রেন্ড হয় ৷শুভ্রতা যে খুব শান্তশিষ্ট তেমনটা একেবারেই নয়, ওউ খুব চঞ্চল কিন্তু মুগ্ধতার মতো এতোটা নয় ৷ কলেজে থাকতে একসাথে দুজন যে কতোবার কলেজ বাঙ্ক করেছে হিসাব নেই, আর প্রতিবারেই ধরা খেয়ে স্পর্শর কাছে পানিশমেন্ট পেয়েছে ৷

ক্লাস শেষে স্যার চলে যেতেই মুগ্ধতা ধপ করে বসে পড়ল, দাঁত কিড় কিড় করে বলল
” ওই নিতুর বাচ্চাকে যদি আমি একদিন আলাদা করে পেয়েছি তাহলে ওর যে আমি কি হাল করবো, দেখে নিস ৷”
শুভ্রতা মুগ্ধতার গাল দুটো টেনে দিয়ে বলল
” দোস্ত চিল ৷ ওই নীতুকে বাগে পাই আমিও কি ওকে ছেড়ে দেবো নাকি ! হাহ ! আমার বেস্ট ফ্রেন্ড এর উপর হাসা ৷ ওকে দেখে নেবো ৷ মুগ্ধতা শুভ্রতার গাল টেনে দিয়ে বলল
” হাই মেরি কালি নাগিন মেরি জান ৷”
শুভ্রতাও বলল
“হাই স্পর্শ ভাইয়ার পিংকিশ নাগিন ৷”
কথাটা বলে দুজনে দুজনের দিকে তাকাতে ডেভিল স্মাইল দিলো ৷ ওরা দুজন যখন একসাথে হয় তখন মনে হয় পুরো পৃথিবীটা ওদেরই জন্যই ৷

” স্পর্শ ভাইয়া যে এত রোমান্টিক, বাবা জানাই ছিলো না, স্পর্শ ভাইয়া তোকে রাতের ঢাকা শহর ঘোরালো ,ওয়াও কি কিউট আমার ভাইয়া টা !কি রোমান্টিক ৷”
শুভ্রতার কথা শুনে মুগ্ধতা থেমে গেল, থেমে বলল
” এই তুই ফকিন্নির মতো ওনার হয়ে কথা বলছিস কিল্লাই, উনি নিশ্চয়ই তোকে ঘুষ খাওয়াইছে,যার লাইগা তুই ওনার হয়ে কথা বলতাছোস ৷”
মুগ্ধতার কথা শুনে শুভ্রতা বলল

” দোস্ত তোর মুখের কি ভাষা ৷ তুই ও আমার দলে নাম লিখিয়েছিস আগে বলিস নি তো ৷”
” এতোদিন ধরে প্র্য৷কটিস করছিলাম , আজকে তোকে বলে চমকে দিলাম, ভালো না !?”
“পুরো চুমু দোস্ত, কিন্তু স্পর্শ ভাইয়া শুনলে তোর হাত পা ভেঙে রেখে দেবে ৷”
” নাগিনদের হাত পা হই নাকি দোস্ত আগে বলস নাই তো ?৷ সে যাই হোক তুই ওনার হয়ে কথা বলছিস, জানিস কি উনি কি কি করেছে ??”
” স্পর্শ ভাইয়াও ভুল করে ?”

” উনি আমার সেই ব্যান্ডটা ড্রেনে ফেলে দিয়েছে যেটা বাবা চিটাগং থেকে এনে দিয়েছিলো ৷ ওটা এখন আমি কোথাই পাই, ঢাকাতেও নাই, কালকে এক ফকিন্নি মার্কা শপিংমলে গিয়েও পাইনি ৷”
ওরা কথা বলতে বলতে গেটের দিকে যাচ্ছে, ছুটি হয়ে গেছে, অর্থাৎ স্পর্শ নিতে আসবে ৷ কিন্তু এখনো স্পর্শ আসেনি দেখে শুভ্রতা আর মুগ্ধতা এতখন ধরে গল্প করছিলো ৷ শুভ্রতাকে ওর বিএফ নিতে আসে, শুভ্রতার বিএফ এর সাথে শুভ্রতার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে ,পাঁচ বছর পর মেডিকেল কমপ্লিট হলে বিয়ে হবে ৷

ওরা দুজন দাঁড়িয়ে গল্প করছে তখনই পাশ থেকে একটা মেয়ে হাসতে হাসতে বলে উঠলো
” হাহা, পাগলদেরকে যে কেন শপিংমলে ঢুকতে দেই বুঝিনা, আমি যতদুর যানি পাগল কোন বড়ো শপিংমলে এলাও না, তাহলে হয়তো জোর করে ঢুকে গেছে, পয়সা ওয়ালা পিংকিশ নাগিন পাগল তো সেই জন্য হয়তো ৷”
মুগ্ধতা আর শুভ্রতার বুঝতে বাকি রইলো না যে কাকে উদ্দেশ্য করে বলছে ৷
তখনই পাশ থেকে নীতু ফোনের ভিডিওটা অফ করে বলল

” দেখলি তো ভিডিওটা, কীভাবে পাগলের মতো শপিংমলে ঝামেলা করছিলো ৷ আমি তো দেখলাম কতো লোক ভিডিও করছে তাই আমারও ফ্রিতে বিনোদন নিতে সমস্যা কি? আমি কেন একা হসবো, তোরাও হাস, তাই তোদেরকে দেখালাম, সবাই এই পাগলের থেকে দুরে থাকিস, কামড়ে টামড়েও দিতে পারে ৷ কীভাবে পাগলরা যে ঢাকা মেডিকেলে চান্স পেলো বুঝিনা ৷ ”
নীতুকে থামিয়ে দিয়ে ওর পাশ থেকে একটা মেয়ে বলে উঠলো
” এই ভিডিওটা শেয়ার করা না, ফেসবুকে আপলোড দেবো ৷”
কথাটা বলে আবার সবাই হাসাহাসি আরম্ভ করলো ৷
নীতু আবার বলতে লাগলো

” স্পর্শকে চিনিস তো ? ঢাকা মেডিকেলের সার্জন উনি তো এই মেয়েটার জ্বালাই অতিষ্ট, এতো ইরিটেটিং মেয়ে ৷ যেই দেখলো যে এতো বড়ো একটা ডক্টর অমনিই তার গলায় ঝুলে গেল, লজ্জা শরম কিছু নেই এই মেয়ের ৷”
পাশ থেকে আর একটা মেয়ে বলল
” বিছানায় ও হয়তো ,,,,,,,”
মেয়েটা কিছু বলতে যাবে তার আগে শুভ্রতা মেয়েটাকে উদ্দেশ্য করে বলল
” এই ফকিন্নির বাচ্চা ,লজ্জা লাগে না, একটা মেয়ে হয়ে আর একটা মেয়েকে এভাবে বলিস, ও কিছু বলছে না বলে ভেবেছিস পার পেয়ে যাবি ? বেয়াদপ কোথাকার, পরিবারের লোকজন এই করতে পাঠায় তোদেরকে ৷ ডক্টরি পড়তে এসেছিস এইসব করার জন্য, এইসব শেখার জন্য ! আর নীতু তুই কি জানিস এর ফলাফল ঠিক কি হতে পারে ?”
শুভ্রতার কথা শুনে ওরাও ঝামেলা করতে শুরূ করলো, কথা কাটাকাটি হচ্ছে বেশ ৷
শুভ্রতা পিছন ঘুরে তাকাতেই দেখলো মুগ্ধতা নেই ৷ ও অবাক হয়ে গেল ৷ বাকিরা সবাই আনন্দে হাসছে, আর বলছে যে

” ভয়ে পালিয়েছে ৷” বলে আবার হসতে শুরু করলো ৷
নীতু ওদের থেকে সরে এসে মুগ্ধতার ফোনে ফোন দিলো, রিং হচ্ছে মুগ্ধতা তুলছে না, হঠাৎ ফোন সুইচ অফ বলে উঠলো ৷
শুভ্রতা ভয় পেয়ে গেল, না জানি মেয়েটা কোথাৎ গেল ৷তাড়াতাড়ি করে স্পর্শকে ফোন করলো, ফোন করতেই তিনবারের বেলায় রিং হতেই স্পর্শ ফোন তুলে বলল
” শুভ্রতা তোমরা কোথায়? তোমাদের তো দেখছিনা, তুমি আর মুগ্ধ কি কলেজ থেকে বার হওনি এখনো ?”
” ভাইয়া একটা সমস্যা হয়েছে,মুগ্ধ কোথায় বেরিয়ে গেছে ৷,,,,,”
এরপর শুভ্রতা সবটা স্পর্শকে বলল ৷

স্পর্শর মাথয় রক্ত উঠে গেছে ৷ ফোনটা কেটে কলেজে ঢুকলো দেখলো নীতু আর ওর ফ্রেন্ডরা মিলে হাসাহাসি করছে ৷
স্পর্শ নীতুর নাম ধরে ডেকে বলল
” নীতু কাম হেয়ার ৷”
নীতু স্পর্শর কাছে যেতেই স্পর্শ প্রশ্ন করলো
” আমার মুগ্ধ কোথায় !”
নীতু ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল

” ভাইয়া ডোন্ট ওয়ারি এবাউট হার ৷ সি ইজ টোটালি ম্যাড, আ সাইকো , স্টুপিড ৷ না জানি মেয়েটা এত পাগলামির পরও আপনি এতো পোজেসিভ কেন? ইউ ডিসার্ভ আ বেটার গার্ল লাইক মি ৷”
কথাটা শেষ করতে না করতেই স্পর্শ নীতুকে ঠাস করে একটা চড় মারলো, এতো জোরে মেরেছে যে আশেপাশের সবাই চমকে গেছে ৷ সবাই ভয়ে চুপ হয়ে আছে ৷ নীতুর রাগ লাগছে আবার খারাপ ও লাগছে , এতো সকলের মাঝে ওকে চড় মারলো ৷
” ভাইয়া আপনি কি এটা ঠিক করলেন?” গালে হাত রেখে ‌৷”
স্পর্শ রেগে গিয়ে বলল

” জাস্ট একটা চড় মেরেছি, এর থেকে বেশি কিছুও করতে পারি ৷ আমার মুগ্ধর যদি কিছু হয়েছে তো আই উইল কিল ইউ নো ম্যাটার হোয়াট ৷”
কথাটা বলে স্পর্শ চলে গেল ৷ নীতু এবার ভয় পাচ্ছে স্পর্শর কথা শুনে ৷
স্পর্শ তাড়াতাড়ি করে গাড়িতে উঠে বলল
” শুভ্রতা আদিল এসেছে তোমাকে নিতে , তুমি চলে যাও এন্ড ডোন্ট ওয়ারি তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড এর কিছু হতে দেবো না ৷”
শুভ্রতা মুচকি হেসে বলল
” জানি ভাইয়া ৷”
স্পর্শ মুচকি হেসে চলে গেল ৷

এখন ও মুগ্ধতার বাসায় যাবে, স্পর্শর বাসায় যাবে না কারন মুগ্ধতা ঠিক ভালোভাবে জানে না যে স্পর্শর বাসায় ভালো সুইসাইড পয়েন্ট কোনটা ! মানে ছাদে গিয়ে নাকি অন্য কোথাও ৷ যেহেতু ওর নিজের বাসায় ও অনেকবার মরার চেষ্টা করেছে তাই ওর সেক্ষেত্রে সুবিধাই হবে ৷
তাড়াতাড়ি ড্রাইভ করে মুগ্ধতার বাসায় গেল , বাসায় ঢুকতে মুগ্ধতার আম্মুকে কোথাও দেখলো না স্পর্শ হয়তো ঘরৈ ঘুমাচ্ছে, আর রোজা ভাবিকেও দেখলো না ৷ রোজা হয়তো তার ছেলে নিবিড়কে কে নিয়ে ছাদে গেছে ৷
স্পর্শ তাড়াতাড়ি করে গেল ৷ দরজা ধাক্কা দিয়ে বলল
” মুগ্ধ দরজা খোলো ৷”

স্পর্শর গলার আওয়াজ শুনে মুগ্ধতা ভয় পেয়ে গেল ৷ এতখন ধরে ঘুমের ওষুধের শিশিটা খুজতে খুজতে ওর সময় চলে গেছে অনেক ৷ স্পর্শর গলার আওয়াজ শুনে মুগ্ধতা তাড়াতাড়ি করে গুনে গুনে 7 টা ঘুমের ওষুধ বার করলো, 7টার বেশি শিশিতে আর ছিলোও না৷ ওষুধ গুলো হাতে নিয়ে মুগ্ধতা বিড়বিড় করে বলল
” এবারই লাস্ট ,তারপর মুগ্ধতা ইউ আর গন ৷ তাড়াতাড়ি খেয়ে নে নাহলে ওই পিংকিশ বান্দর স্পর্শ তোকে আর খেতে দেবে না ৷ উনিই বা কেন আমাকে বাচাবে উনি তো ওই নীতুকে ভালোবাসে, আমাকে তো বাসে না ? ৷ ওই নীতু হলুদ নাগিন আজ আমাকে কতো উল্টোপাল্টা বললো, আমি কিনা ওনার বিছানায়,,,,ছিহ্ না, এতোকিছু বলার পরও তো উনি ওই নীতু বাচ্চাকে কিছু বলবে না তাহলে আমার বেচে থেকে কি লাভ ? ৷”

কথাটা বলে মুগ্ধতা ওষুধ গুলো খেয়ে নিলো , ওষুধ গুলো খেয়ে মুচকি হেসে বলল
” ফাইনালি ৷ এবার তো ওই পিংকিশ বান্দরকে একবার রুমে আসতে দেওয়াই যাই, দেওয়া যাই কি বলছি , আমি দরজা না খুললেও তো ওনার কাছে ডুপলিকেট চাবি আছে, উনি তো দরজা খুলেই ফেলবেন, তাই আমিই বরং দরজা খুলি তাতে মরার আগে ওনার কাছে আমার রেসপেক্টটা যদি বেড়ে যাই? পরে তো বলবে যে মুগ্ধ অনেক বাধ্য একটা মেয়ে ছিলো,আমার সব কথা শুনতো ৷?”

কথাটা বলে মুগ্ধতা দরজা খুলে দিলো ৷ স্পর্শ মুগ্ধতাকে ঠিকঠাক অবস্থায় দেখে একটু অবাক হলো, চারিপাশে তাকিয়ে দেখলো যে কোন গড়বড় আছে কিনা, নাহ সব তো ঠিকঠাক ৷
মুগ্ধতা হসিমুখে বলল
” আপনি এখানে যে ?”
” তুমি এখানে কেন?”
” আম্মুকে দেখতে ইচ্ছা করছিলো তাই চলে এলাম?৷”
“ওহহ, তাই নাকি ৷”
” হমম ৷”
মুগ্ধতা বিছানায় বসে বলল

” আর হয়তো 30 মিনিট মতো সময় আছে হাতে, কি খাবেন বলুন, চা নাকি কফি ? বিরিয়ানি বা অন্য কোন হেভি খাবার বলবেন না প্লিজ কারন আমি পারিনা, আর অত সময়ও আমার কাছে নেই ৷?”
স্পর্শর ভ্রু কুচকে এলো, মুগ্ধতা বারবার সময় কথাটা বলছে, ওর খটকা লাগছে একটু, তবুও বলল
” তুমি কফি বানতে পারো??”
“হমমম পারি তো, ওটাই শুধু পারি ৷?”
” ওকে কফি আনো ,ব্ল্যাক কফি ৷”

” ব্ল্যাক কফি ? কি করে বানাই ? হয়তো কফিতে হাফ মগ চকলেট দিয়ে হয়তো ব্ল্যাক বানিয়ে তারপর এক চামচ কফি দেই , কি ইজি ৷ বাই দাওয়ে এটা কে ব্ল্যাক কফি বলে কেন? চকলেট কফি বললেই পারে ৷” হোয়াটএভার শেষ বারের মতো উনি আমার হাতের কফি খেতে চাইছে আমি না দিয়ে পারি ৷ আজকে হাপ কাপের বদলে না হয় পুরো কাপই চকলেট দিয়ে দেবো ৷?”
(মুগ্ধতা মনে মনে বলতে লাগলো )
মুগ্ধতাকে চুপ থাকতে দেখে স্পর্শ বলল
” কি ভাবছো এতো ?”
” ওই যে ভাবছিলাম কফিতে কতোটা চকলেট দেবো তাই আরকি ৷”
“হোয়াট ?”

” না না কিছুনা, আপনি বসুন আমি আসছি ৷”
মুগ্ধতা উঠতে গেলেই স্পর্শ ওর হাত ধরে বসিয়ে দিয়ে বলল
” কটা ওষুধ খেয়েছো?”
মুগ্ধতা কিছু না বোঝার ভান করে বলল
“হুদাই ওষুধ কেন খেতে যাবো আমি ?”
” ওই যে তুমি পাগল তাই ৷”
কথাটা বলতেই মুগ্ধতা রেগে গেল, রেগে গিয়ে বলল
” আপনিও ওই ফকিন্নী নীতুর মতো বলছেন! ওই ফকিন্নীর জন্য জীবনে এই প্রথম 7টা ওষুধ একসাথে খেয়েছি ? ৷”
” তা কিসের ওষুধ খেয়েছো ?”
” ঘুমের ওষুধ ৷”
” সুইসাইড প্ল্যান ?”

” ইয়েস, এইবার সরিয়াস সুইসাইড আপনিও বাঁচাতে পারবেনা না, আর মাত্র 25 মিনিট ৷ হাত ছাড়ুন তাড়াতাড়ি কফি বানাই ৷”
” একটা গুড নিউজ দেওয়ার ছিলো, না শুনেই চলে যাবে ?”
” কি ?”
” আমি নীতুকে চড় মেরে এসেছি আর বলে এসেছি যে আমার মুগ্ধর কিছু হলে আমি তাকে খুন করবো ৷”
” সত্তি !? উইইইমা ৷ এবার তো তাহলে সুইসাইড ক্যান্সেল ৷ এই আপনাকে কফি আমি পরে খাওয়াবো আগে আমাকে হসপিটালে নিয়ে চলুন নাহলে আমি আর বাঁচবোনা ৷”
” এখন আর হসপিটালে যেতে মন চাইছে না, এখন যাবো না ৷”.
” যাবেন না মানে, তাহলে আমার কি হবে ?”

” তোমার কি হবে আমি কি করে জানবো, আমি তো এখন কাজী অফিস যাবো, আমার বিয়ে আছে আজকে ৷”
” আপনার বিয়ে আছে আমাকে বলেননি তো ! আমি নাগিন বলে কি আমাকে ইনভাইট দেননি ??”
“হমমম আজ তো তোমার আর আমার বিয়ে ৷ চলো এখন কাজী অফিস যাই , এমনিতেও তো 23 মিনিট আর, তুমি কথা বলতে বলতে 2 মিনিট নষ্ট করেছো ? সো স্য৷ড ৷”
“এই বেডা তোর মাথার ঠিক আছে? তোর সাথে এখন বিয়ে করতে গেলে ততখনে তো আমি মরেই যাবো, বিয়ে পরে করবো তুই আগে আমাকে বাঁচা স্পর্শ ?, এই কিউট পিংকিশ নাগিনটা নাহলে মরেই যাবে ৷?
” মরলে মরবে, আগে আমার বিয়ের স্বপ্নটাতো পূরন হোক ৷”
” আপনার কখনো বিয়ে হবে না দেখবেন ৷”

” অনেক দিন ধরেই বিয়ে করতে মন চাইছে, আজ কে তো বিয়ে করেই ছাড়বো ৷ আর তাছাড়া তুমি মরলে আরেকটা নতুন বউ পাবো, এসব ভাবলেই কি যে ভালো লাগে ৷”
” স্পর্শ?৷”
স্পর্শ চোখ মেরে মুগ্ধতার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে গাড়িতে উঠলো ৷
গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে ওর বাসার সবাইকে কল করে বলল কাজী অফিসে আসতে, আজ ওর আর মুগ্ধর বিয়ে হবে, সাথে মুগ্ধতার বাবাকেও বললো , উনি তো হার্ট অ্যাটাক করার মতো অবস্থা ৷”
” তাড়াতাড়ি গাড়ি চালান? ৷”

এই শহর আমার পর্ব ৫

” আচ্ছা তাড়াতাড়ি চালবো , যদি তুমি এখন একটা কিউট করে কবিতা শোনাও ৷”
” এখন আমার মাথায় কোন কবিতা আসছে না ৷”
” আচ্ছা তাহলে স্লো ভাবেই চলুক ৷”
“আরে ভাবতে তো দিবেন নাকি ?৷”
” টাইম কম, 17 মিনিট৷”

” আ্য ‌ওকে বলছি,বাট অন্যদিনের মতো ততটাও ভালো না হলে সরি ৷
আমি নাগিন তুমি বান্দর
হবেনা কখনো আমাদের মেলবন্ধন
তুমি লাম্বু আমি বেঁটে
হবে না আমাদের এই বিয়ে ৷
তুমি ড্রাইভ করো ফাস্ট
নয়তো আমি যাবো বনোবাস ৷”
মুগ্ধ হেসে বলল
” ওকে আফা সুন্দর হয়েছে, ফাস্ট ড্রাইভ করছি ?৷”
” তাড়াতাড়ি ৷ ”

এই শহর আমার পর্ব ৭