এই শহর আমার পর্ব ৭ || Suraiya Aayat || SA Alhaj

এই শহর আমার পর্ব ৭
Suraiya Aayat

গুনে গুনে পাঁচ মিনিটের মধ্যে কাজী অফিস পৌছালো স্পর্শ আর মুগ্ধতা ৷
স্পর্শ গাড়ি থেকে নামতে না নামতেই মুগ্ধতা কাজী অফিসের দিকে ছুটলো , মুগ্ধতা দৌড়াচ্ছে আর বলছে
” স্পর্শ আর 10 মিনিট, প্লিজ তাড়াতাড়ি আসুন ৷”
স্পর্শর পেট ফেটে হাসি আসছে মুগ্ধতার কাজ দেখে, একেতো মেয়েটা হজমের ওষুধকে ঘুমের ওষুধ ভেবে খেয়েছে তার ওপর পাগলামি ৷ আসলে ঘুমের ওষুধ মুগ্ধতার বাসায় রাখা হয়না মুগ্ধতার জন্য ৷ রাখলেও খুব গোপনে লুকিয়ে রাখা হয় সব ওষুধের থেকে আলাদা করে, আর মুগ্ধতা সেই ভুলটাই করেছে ‌৷
স্পর্শ হাটছে আর ভীষনরকম হাসি পাচ্ছে ওর ৷
মুগ্ধতা স্পর্শকে হাত দিয়ে ইশারা করছে আর ডেকে বলছে

” প্লিজ আসুন না তাড়াতাড়ি , বিয়ে করবো, তারপর আমাকে হসপিটাল যেতে হবে ৷”
স্পর্শ আর পারছে না হাসি আটকে রাখতে, এবার হো হো করে উন্মাদের মতো করে হেসে গাড়িতে লুটোপুটি খাচ্ছে ৷
স্পর্শ হাসছে আর বলছে

” হজমের ওষুধ খেলে কেউ মরেনা আমার পিংকিশ নাগিন, আমার এতো হাসি পাচ্ছে কেন?? আচ্ছা হাসি পাচ্ছে যখন হেসেই নিই, এই সুযোগ বারবার আসবে না, পরেও আমাদের বেবিদের কেও তো বলতে হবে যে তার আম্মু বিয়ে করার জন্য কি পাগলামো টাই না করেছিলো ৷ যদিও তারা তার মায়ের মতোই ড্রামাবাজ হবে সিওর✌?? ৷”
মুগ্ধতার বিরক্তি লাগছে, ওষুধের এফেক্ট যতোটা না হচ্ছে তার থেকে বেশি ভয়ে ওর হাত পা কাঁপছে ৷
মুগ্ধতার চোখে জল চলে এসেছে, মৃত্যুকে মানুষ বড্ড ভয় পাই আর ভীষনভাবে বাঁচতে ইচ্ছে করে যখন তারা মৃত্যু তাদের খুব কাছে চলে আসে, মুগ্ধতার ও অবস্থা এখন ঠিক এমনই ৷
মুগ্ধতা ফুঁপিয়ে কাদছে আর বলছে,

” আপনি হাসছেন, আমি এখনই মরে যাই তাহলে তো আপনার ভালোই হয় তাইনা, আপনি আবার নতুন করে বিয়ে করতে পারবেন তাইনা ! আমি সব বুঝি, আপনি তো আমাকে ভালোই বাসেন না ৷ একবার আমি শুধু বেঁচে যাই আর কখনো এই সুইসাইড করার চেষ্টা করবো না,বাবা আজকে খুব ভয় লাগছে, কখন কি হয়ে যাই ৷ ?”
স্পর্শ ওর হাসি থামিয়ে মুগ্ধতার কাছে গিয়ে বলল
” প্রমিস করো কখনো আর এমন বোকামো করবে না ৷”
” আরে প্রমিস করছি তো আর এমন করবো না কখনো ,প্লিজ তাড়াতাড়ি চলুন আর বেশি সময় নেই, আমার হাত পা ভীষন রকম ভাবে কাঁপছে ৷”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

স্পর্শ মুগ্ধতাকে কোলে তুলে নিলো, মুগ্ধতা ভীষনভাবে ভয় পাচ্ছে, সত্তিই আজ ওর যদি কিছু হয়ে যাই তাহলে !
মুগ্ধতা স্পর্শর বুকে মাথা রাখলো ৷আর গলা জড়িয়ে আছে বেশ শক্ত করেই ৷
স্পর্শ মুগ্ধতাকে কাজী অফিসের ভিতরে নিয়ে গিয়ে বসালো ৷ মুগ্ধতা সবাইকে দেখলো সেখানে উপস্থিত আছে ৷ মুগ্ধতার বাবা চেয়ারে হাত পা ছেড়ে আবুলের মতো বসে আছেন, এটা ওনার মেয়ে কি করে ফেললেন ? এতো বোকা কেন মেয়েটা , এখন যদি সত্তিই মুগ্ধতার কিছু হয়ে যাই তাহলে ওনাদের কি হবে ? আর স্পর্শই বা মুগ্ধতাকে হসপিটালে না নিয়ে গিয়ে আগে বিয়ে করতে কেন এনেছে ? এগুলো ভেবেই ওনার আরো বেশি রাগ হচ্ছে ৷

মুগ্ধতার শরীর নেতিয়ে আসছে ভয়ে , সবার মুখে আতঙ্কের ছাপ ৷ সবাই শুধু স্পর্শর গতিপ্রকৃতি দেখছে, খুবই ঠান্ডা মাথায় সবটা সামলাচ্ছে স্পর্শ, এদিকে মুগ্ধতা একটু চোট পেলেই স্পর্শই পুরো বাড়ি মাথায় করে রাখে ফির সেখানে মূগথা ঘুমের ওষুধ খেয়েছে তাও স্পর্শর কোন হেলদোল নেই দেখে বিষয়টা সবাইকে ভাবাচ্ছে ৷
কাগজপত্র সব রেডিই ছিলো, 2 মিনিটের মধ্যে রেজিস্ট্রি পেপারটা মুগ্ধতার সামনে ধরলো স্পর্শ ৷
” সাইন ইট ৷ তোমার না ইচ্ছা ছিলো এই পিংকিশ বান্দরকে বিয়ে করে আহানাফ মুগ্ধতা হবে ৷ সো ডু ইট ৷”
মুগ্ধতা স্পর্শর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে নিষ্পলক ভাবে, চোখের কোনা জলে ভরা, স্পর্শকে ঝাপসা দেখছে ও, চোখের পাতা ফেলতেই স্পর্শর জল গড়ালো চোখ থেকে, স্পর্শর দিকে তাকিয়ে বলল

” আই রিয়েলি ওয়ান্ট টু বি আহানাফ মুগ্ধতা ৷ আই উইল ৷”
কথাটা বলে মুগ্ধতা কাঁপা কাঁপা হাতে সই করে দিলো ৷
মুগ্ধতা সই করে স্পর্শর বুকে মাথা রাখলো ৷ ক্লান্ত লাগছে খুব,মনের ভয়টা বেশি কাজ করছে তাই মুগ্ধতার জ্ঞান হারানোর উপক্রম ৷
স্পর্শ বাম হাত দিয়ে মুগ্ধতাকে জড়িয়ে ধরে ডান হাত দিয়ে সিগনেচার করলো ৷
তারপর দুজন তিনবার কবুল বললো ৷
মুগ্ধতা এক হাতে স্পর্শর হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে আর আরেক হাতে স্পর্শর শার্ট খামছি মেরে ধরেছে, বড্ড ভয় করছে ওর ৷

সবাইতো খুব খুশি কিন্তু ভয় ও লাগছে সবার মুগ্ধতাকে নিয়ে ৷
বিয়ে হয়ে যেতেই তামিম খান স্পর্শকে বললেন
” তুমি কি আমার মেয়েটাকে মারবে স্পর্শ ৷ দেখছো না ওর কি হাল? তোমার জন্য আমার মেয়েটার কিছু হয়ে গেলে আমি কিন্তু তোমাকে ছাড়বো না ৷”
মুগ্ধতার মা শিফা খান কাঁদতে কাঁদতে বললেন
” আমার মেয়েটা কেমন কাঁপছে ,প্লিজ ওকে তাড়াতাড়ি হসপিটালে নিয়ে চলো ৷”
স্পর্শর মা বললো
” কি রে স্পর্শ তোর সবার কথা কি কানে যাচ্ছে না? মেয়েটা তো মরে যাবে রে ?”
স্পর্শ এবার ধমক দিয়ে সবাই কে বলল

” কি এতো মেয়ে মেয়ে করছো ! মেয়ে যখন সুইসাইড করতে যাই তখন খেয়াল থাকে না, তখন তাকে আটকাতে পারো না ? মেয়েটাকে তো আদরে বাঁদর করেছো তোমরা ৷ আজ থেকে ও আমার বউ , ওর জন্য কি ব্যাবস্থা করতে হবে কি হবে না সেটা আমি বুঝবো, তোমরা এখান থেকে যাও, আমি ওকে নিয়ে আসছি ৷আর ওর কিছু হবে না, ডোন্ট ওয়ারি এবাউট হার ৷ ”

সবাই মনের মধ্যে একবার ভয় আর দোটানা নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ৷
তামিম খান গজগজ করতে করতে শিফা খানকে বললেন
” ঠিকিই তো, তুমিও মেয়েটার একটু খেয়াল রাখতে পারো না !”
উনি কিছু বললেন না, উনি কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে গেলেন ৷
সবাই রুম থেকে বেরিয়ে যেতেই স্পর্শ মুগ্ধতাকে ওর মুখোমুখি ধরে বসাতেই মুগ্ধতার মাথা নেতিয়ে গেল ৷ মুগ্ধতার চোখ ছোট ছোট হয়ে আসছে ৷
মুগ্ধতা ফিকে গলায় বলল

” আমার কাছে আর একটুও সময় নেই তাইনা বলুন! 30 মিনিট তো হয়ে গেছে ৷ আমি কি তাহলে আর বাঁচবো না ?”
স্পর্শ খুবই নরমাল থেকে বলল
” নাহ বাঁচবে না, পিংকিশ নাগিন উইল ডাই সুন ৷”
মুগ্ধতার চোখ দিয়ে জল পড়ছে,
” জানেন তো আমি না আপনাকে অনেক ভালোবাসি , অনেক অনেক, পাগলমিও করি আপনার জন্য,কিন্তু আপনাকে পেতে আমার এই সুইসাইড করার কাজটা ভুল, এই দেখুন এখন তো আমি আহানাফ মুগ্ধতা মানে পিংকিশ বান্দরের পিংকিশ নাগিন বউ, যদিও বন্দর আর নাগিন কখনো একসাথে থাকতে পারে না তাই হয়তো আমি চলে যাচ্ছি ৷ আমার এই কাজের জন্য আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবে না তাইনা ? ”
স্পর্শ সাবলীল ভাবেই মাথা নাড়ালো,যার অর্থ এর কোন ক্ষমা নেই ৷

” আত্মহত্যা মহা পাপ, আর আমি তাই করে ফেললাম ৷ কিন্তু আপনি আমি তো আমাকে হসপিটালে নিয়ে গেলেন না, তাহলে আমি বেঁচে গেলেও বেঁচে যেতে পারতাম ৷ ওহহ আপনি আবার আমাকে বাঁচাবেন কেন? আপনি তো আমাকে ভালোই বাসেন না, আপনি তো আবার বিয়ে করবেন, আপনি এটাও বললেনা যে ভালোবাসি ৷”
কথাটা বলে আবার ফুপিয়ে কাঁদলো মুগ্ধতা ৷
স্পর্শ ঠোঁট চেপে হাসছে তা দেখে মুগ্ধতার রাগ হলো, রেগে গিয়ে বলল
” তুই হসছিস তো ! দেখবি তোর বিয়ে হবে না স্পর্শ ? তুই চিরকুমার থাকবি , আর 30 মিনিট হয়ে গেছে তাই আমিও এখন মরে যাচ্ছি ৷ টাটা ?”
স্পর্শ মুগ্ধতাকে জাপটে ধরে বলল

” আমি তো বিবাহিতা এখন, আমার কলিজা মার্কা নাগিনের বর ৷ আর আমি আমার নিগিনটাকে পিংকিশ টাইপের ভালোবাসি , তোমাকে না বললেও মনে মনে নিজের থেকে ও তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি ৷”
” সত্তি ??”
” তুমি এখনো মরোনি?? আমি তো মজা করে বললাম ৷”
” ওহহ ভালো বাসেন না , তাহলে মরে যাচ্ছি বেঁচে থেকে কি লাভ !?”

স্পর্শ হো হো করে হাসছে ৷ মেয়েটার মাথার ঠিক নেই যে কি বলছে, জ্ঞান ফিরলেই আবার পাগলামো করবে ৷
স্পর্শ মুগ্ধতাকে কোলে তুলে নিলো, মুগ্ধতার সেন্স নেই, আজ থেকে মুগ্ধ ওর, শুধু ওর আর কারোর না ,নিজের মতো করে এবার থেকে মুগ্ধতাকে সামলাবে, কখনো ভালোবেসে, অখনো বকাঝকা করে তো কখনো আদর করে , কারন সেই অধিকার এখন স্পর্শর আছে ৷

” আমি কোথায় ? এটা আমি কি দেখছি ? আমি কি নাগিনদের রাজ্যে চলে এসেছি ?? কিন্তু না এটা তো পিংকিশ বান্দরের রুম, তাহলে আমি কি এখনো বেঁচে আছি??”
পাশ থেকে স্পর্শ বলে উঠলো
” এত ড্রামা বাজি বন্ধ করে পড়তে বসো , ফাস্ট ৷ পাঁচ মিনিটের মধ্যে যেন দেখি যে পড়তে বসেছো ?”
মুগ্ধতা স্পর্শর দিকে তাকিয়ে বলল
” আমি বেঁচে আছি??”

এই শহর আমার পর্ব ৬

” হমম, বেঁচে আছো, আরও পাঁচ ছয়টা তোমার মতো পিংকিশ নঅগানের জন্ম দেবে তাই ৷ হয়েছে আপনার ড্রামাবাজি ? যাও এবার পড়তে বসো ৷”
” ছয়টা বাচ্চা কে নেই ভাই, আমি নিজেই নিজেকে সামলাতে পারিনা?”
” আপনি চাইলে সব পারেন আফা শুধু আমাকে একটু উৎসাহ দিয়েন?”
“স্পর্শ ? ৷’
” অনেক ড্রামাবাজি হয়েছে এবার পড়তে বসো ৷”
কালকে কলেজ যাবে , আর সকাল সকাল উঠবে, আমাকে ঘুম থেকে ডাকতে হলে খবর আছে ৷ আরো রুলস আছে সেগুলো আমি সময় হলে আস্তে আস্তে বলে দেবো , নাও এখন পড়াশোনা করো ৷ আর কলেজের উটকো ঝামেলায় জড়ালে তোমার খবর আছে ৷
” আরো কিছু রুলস আছে কি ??”

” হমম আছে, সারাদিন রুলসের মধ্যে যা খুশি করবে সন্ধ্যার আমি বাসায় থাকি একসেপ্ট নাইট ডিউটি, ওই টাইমটা পুরোটা আমার জন্য ওকে ?”
” ? আরো কিছু থাকলে বলিয়েন!”
” আপাতত এটুকুই ৷”
” মুগ্ধতা বেইব তোমার ওপর ঠাডা পড়ছে, লে চিল করা বিবহিত লাইফ ✌??”
” কিছু বললে?”
” হমম, আপনি অনেক সুইট ?”

এই শহর আমার পর্ব ৮