একটা বসন্ত বিকেলে পর্ব ৩

একটা বসন্ত বিকেলে পর্ব ৩
অরনিশা সাথী

ব্যালকোনিতে বসে চায়ের আড্ডা দিচ্ছে আয়াত, দিহান আর রাফিয়া। রাফিয়া দিহান দুজনেই প্রচুর চঞ্চল প্রকৃতির মানুষ। আয়াতও ওদের থেকে কোনো অংশে কম যায় না চঞ্চলতায়। ফারাবীর বিয়ের ঘটনাটাই আয়াতকে নিশ্চুপ করে দিয়েছে। তবে আয়াত যে ধরনের মেয়ে ও এত সহজে ভেঙে পড়বে না৷

একটু সময় লাগবে বাট সবটা আবার আগের মতো করে নিবে। ফারাবী ওর লাইফে আসার আগেও আয়াত একাই ছিলো, তাহলে এখন কেন পারবে না? হ্যাঁ ফারাবীকে ভুলে যাওয়াটা সহজ হবে না। কিন্তু মনে না রাখার চেষ্টা-টাই করতে হবে ওর। ওর বাবা বলে না ও স্ট্রং? হ্যাঁ আয়াত এখন থেকে স্ট্রংই থাকবে৷ কেউ দমাতে পারবে না ওকে। মনে মনে এসব ভাবতে লাগলো আয়াত৷ এমন সময় রাফিয়া আয়াতের কাঁধে হাত রেখে বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

–“তুই এত চুপচাপ কেন আয়ু বল তো? কি ভাবছিস?”
আয়াত মুচকি হাসলো। বললো,
–“তোদের কথা শুনছিলাম তো।”
দিহান আয়াতের মাথায় টোকা মেরে বললো,
–“তোকে বড্ড উদাসীন লাগছে রে আয়ু, ছ্যাকা-ট্যাকা খেয়ে ব্যাকা হয়ে গেলি নাকি?”

দিহান কথাটা হাসির ছলে বললেও আয়াতের চেহারার রঙ বদলে গেলো। রাফিয়া আয়াতের হাতে হাত রাখলো। আয়াত ইশারায় বোঝালো ও ঠিক আছে। আয়াত হেসে বললো,
–“মুখ দেখে সবকিছু কবে থেকে বুঝতে শুরু করলে ভাইয়া? কি ব্যাপার? তুমিও কি তাহলে___”
ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো আয়াত। দিহান একগাল হেসে বললো,
–“আরে ধুর! ওরকম কিছু না। ভেবেছি একেবারে বিয়ে করে ফেলবো, জীবনের সাতাশ-টা বসন্ত তো একাই পার করলাম আর কতো বল?”

আয়াত কিছু বলবে এমন সময় গাড়ির হর্ন বেজে উঠলো। কেউ একজন অনবরত গাড়ির হর্ন বাজাচ্ছে। আয়াত রাফিয়া দিহান তিনজনেই শব্দ অনুসরণ করে রাস্তায় দিকে তাকালো। দেখতে পেলো মেহরাব ম্যানশনের গেটে কেউ গাড়ি নিয়ে অপেক্ষায় আছে। গেট খোলায় লেট হচ্ছে বিধায় সে একের পর এক হর্ন বাজাচ্ছে। দারোয়ান এসে দ্রুত গেট খুলে দিতেই গাড়িটি ভিতরে ঢুকে গেলো।

আয়াত তখনো ভ্রু কুঁচকে গাড়িটির দিকে তাকিয়ে আছে। গাড়ির মালিকের উপর ক্ষানিকটা বিরক্ত হয়েছে ও। এভাবে এত হর্ন বাজানোর কি আছে? হয়তো বিজি ছিলো তাই একটু গেট খুলতে লেট হয়েছে। দিহানদের বাসার পাশের বাসাটাই সানিয়া মেহরাবের। সাদা রঙের বিশাল বড় দোতলা ডুপ্লেক্স বাড়ি। দেখলে যে কারো চোখ জুড়িয়ে যাবে।

আয়াত বাড়িটির দিক থেকে চোখ সরিয়ে আবারো গাড়িটার দিকে তাকালো। কিছুক্ষণ পরই দেখা গেলো গাড়ির ভিতর থেকে লম্বা চওড়া একটা লোক বের হলো। কালো কোর্ট-প্যান্ট পরিহিত। গাড়ি থেকে বেরিয়ে লোকটা সোজা বাসার ভিতরে চলে গেলো। আয়াত দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো। রাফিয়া বললো,

–“ছেলেটাকে দেখেছিস?”
রাফিয়ার এমন প্রশ্নে ভ্রু কুঁচকালো আয়াত। রাফিয়া হেসে বললো,
–“একটু আগেই যে ওই বাড়ির ভিতরে চলে গেলো সে শ্রাবণ মেহরাব। শানের বড় ভাই। প্রচুর রগচটা, গোমড়ামুখো আর একগুঁয়ে স্বভাবের। আন্টি মাঝে মাঝে এসে বলেন শ্রাবণ ভাইয়ার কপালে কোন মেয়ে আছে আল্লাহ মালুম, মেয়েটা উনার এমন স্বভাব সামলে নিতে পারবে তো? আমার কাছে উনাকে ভালোই লাগে। বিশেষ করে উনার এটিটিউডের জন্য। কি এটিটিউড মাইরি, আমি তো বারে বারে ক্রাশ খাই শ্রাবণ ভাইয়ার উপর।”

গড়গড় করে এসব বলে থামলো রাফিয়া। দিহান রাফিয়ার মাথায় থাপ্পড় মেরে বললো,
–“তোর এই লাস্টের কথাগুলো যদি আমি শ্রাবণের কানে তুলি তাহলে ও নির্ঘাত তোকে ছাদের উপর থেকে নিচে ছুঁড়ে মারবে বেয়াদব, জানিস না ও বোন ভাবে তোকে?”
রাফিয়া মাথা ডলতে ডলতে বললো,

–“উনি বোন ভাবে বলে যে আমারও উনাকে ভাই ভাবতে হবে এমন কোথাও লেখা নেই।”
আয়াত সব শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। তারপর বললো,
–“তাহলে এসব আমাকে কেন বলছিস? আমি কি কিছু জানতে চেয়েছি তোর কাছে?”

–“আরেহ বলে রাখলাম। বলে রাখা ভালো না? নজর টজর দিস না আবার। শ্রাবণ ভাইয়ার গায়ের রংটা যদিওবা উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণ তবুও উনার চেহারায় আলাদা একটা মায়া আছে। ফর্সা ছেলেদেরও হার মানাবে উনি। উনার সারা মুখশ্রীতে যেন এক অন্যরকম মায়া লেপ্টে থাকে সবসময়।”
আয়াত উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
–“তুই ভাবতে থাক তোর শ্রাবণ ভাইয়াকে নিয়ে, আমি গেলাম। আমার এসব শোনার কোনো আগ্রহ নেই এই মূহুর্তে।”

আজ ঘুম থেকে উঠতে লেট হয়ে গেছে আয়াতের। কাল অনেক রাত অব্দি রাফিয়ার সাথে আড্ডা দিতে গিয়েই এই অবস্থা। আয়াত ফ্রেশ হয়ে ডাইনিংয়ে গেলো। দেখলো ওর দুই মামী কাজে ব্যস্ত। রাফিয়াকে দেখা যাচ্ছে না কোথাও। আয়াতের বড় মামী আয়াতকে টেবিলে বসতে বলে বললো,
–“টেবিলে বসে পড়ো আয়ু, খাবার ঢাকা দেওয়া আছে খেয়ে নাও।”
আয়াত টেবিলে বসতে বসতে বললো,

–“রাফু কোথায় মামি?”
–“কোথায় আর যাবে? নিশ্চয়ই শানদের বাড়ি গেছে। সানিয়া ভাবী ডেকে পাঠিয়েছিলো ওকে।”
আয়াত কিছু না বলে খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। খেয়ে ঘরে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই রাফিয়া আয়াতের হাত ধরে টেনে বেরিয়ে গেলো বাসা থেকে। আয়াত ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,

–“এভাবে টেনে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস?”
–“শ্রাবণ ভাইয়ার বাড়িতে। কাকিমা যেতে বলেছে।”
আয়াত আর কিছু বললো না। সানিয়া মেহরাবকে আয়াতের বেশ ভালো লেগেছে। বড্ড মিশুক মানুষ। আয়াতের সাথে খুব ফ্রেন্ডলি বিহেভ করেছে উনি। ঢাকায় এসেছে দুদিন হলো। এই দুদিনে উনার সাথে আর দেখা হয়নি। আয়াত ভাবলো এখন দেখা হয়ে যাবে ভালোই। জমিয়ে আড্ডা দেওয়া যাবে উনার সাথে।
সানিয়া মেহরাব কিচেনে রান্না করছিলো। আয়াতকে দেখে গ্যাস অফ করে এগিয়ে এলো। আয়াতকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে গাল ধরে বললো,

–“কেমন আছো আয়াত?”
–“আলহামদুলিল্লাহ আন্টি, আপনি?”
–“আমরাও আলহামদুলিল্লাহ। তা কি খাবে বলো? খেতে খেতে আড্ডা দেওয়া যাক?”
–“আমি মাত্রই ব্রেকফাস্ট করে এসেছি, এখন কিছু খাবো না।”
সানিয়া মুচকি হাসলো আয়াতের কথায়। সম্মতি জানিয়ে বললো,

–“আচ্ছা, তাহলে দুপুরে এখান থেকে খেয়ে তারপর যাবে কেমন? বিরিয়ানি রান্না করছি আজ। আমার শানের বিরিয়ানিটা আবার বড্ড পছন্দ, সপ্তাহে দু/তিন দিন ওর বিরিয়ানি চাই-ই চাই।”
বিরিয়ানির কথা শুনে রাফিয়ার জিবে জল চলে এলো। বললো,
–“ও নিয়ে তুমি চিন্তা করো না কাকিমা, বিরিয়ানি তো? ঠিক খেয়ে যাবো আমরা।”
আয়াত চোখ রাঙিয়ে তাকালো রাফিয়ার দিকে। রাফিয়া বোকাসোকা ভাবে হাসলো। এমন সময় শান সেখানে এসে আয়াতকে দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেললো। রসিকতা করে বললো,

–“এমা এটা কি ট্রেনের সেই খাদকটা না? যে কিনা খাবার দিয়ে ট্রেনের এক সিট বুকড করে রাখে?”
শানের কথায় আয়াত চটে গেলো। বললো,
–“দেখুন একদম খাদক বলবেন না, আমায় দেখে কি আপনার খাদক মনে হচ্ছে?”
শান ভালো ভাবে তাকালো আয়াতের দিকে। তারপর বললো,
–“দেখে তো মনে হয় না। আচ্ছা এত যে খাও সেগুলো যায় কোথায়?”
রাফিয়া শানের বাহুতে থাপ্পড় মেরে বললো,

–“যাকে দেখিস তার পেছনে লাগতেই তোর ভালো লাগে তাই না? ভুলেও আয়ুর পেছনে লাগতে আসবি না।”
শান রাফিয়ার চুল ধরে টেনে সোফায় গিয়ে বসলো। বললো,
–“ওর পেছনে লাগতে আমার বয়েই গেছে।”
আয়াত ভেংচি কেটে অন্যদিকে তাকালো। সানিয়া দুটো চকলেট এনে আয়াত আর রাফিয়ার হাতে দিলো। তারপর শানকে উদ্দেশ্য করে বললো,

–“দিনে দিনে বেয়াদব হচ্ছিস তুই। দেখা হয়েছে পর থেকে মেয়েটার পেছনে লাগছিস তুই। অসভ্য একটা।”
–“আম্মু আমি___”
–“শ্রাবণকে জানাতে হবে, তোর এইসকল বাঁদরামির কথা। ও যখন দুই/চার ঘাঁ লাগাবে তখন একদম তীরের মতো সোজা হয়ে যাবি।”
শান করুন চোখে তাকিয়ে বললো,

–“আম্মু, এসবে আবার ভাইয়াকে টানছো কেন? তোমার ছেলেকে দ্রুত বিয়ে করাও তো। বউ পেলে তোমার ওই ঘাড়ত্যাড়া ছেলে সোজা হয়ে যাবে দেখবে৷ আর আমাকেও এত ঝাড়তে পারবে না। তখন আমার পার্টনার চলে আসবে। দ্রুত ভাইয়ার বউ আর আমার ভাবী আনার ব্যবস্থা করো।”

কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে বলে দম নিলো শান। আয়াত ভ্রু কুঁচকে তাকালো। সানিয়া কিছুক্ষণ ভেবে বললো,
–“এবার তাই করতে হবে। ঘরে বউ নিয়ে আসতে হবে। তবে যদি আমার শ্রাবণটা একটু ঘরমুখো হয়, নয়তো সারাদিন কাজের মধ্যে ডুবে থাকে।”
শান খুশি হয়ে গেলো মায়ের কথায়। হাসিমুখে বললো,
–“আম্মু বলছিলাম কি তাহলে পাত্রী দুইটা দেখো। আমারো তো বিয়ের বয়স হয়েছে তাই না? ঘরে তো বউ দুজনই আনার দরকার।”

শানের কথায় আয়াত, রাফিয়া এবং সানিয়া তিনজনেই ভ্রু কুঁচকে তাকালো। সানিয়া শানের দিকে এগিয়ে গিয়ে ওর কান টেনে ধরলো। বললো,
–“ফাজিল ছেলে, এজন্যই ভাইয়ার বিয়ের এত তাড়া তাই না? যাতে তোর লাইন-ঘাট ক্লিয়ার হয়ে যায়?”
–“উফস আম্মু, দুইটা মেয়ের সামনে এভাবে কান টেনে ধরছো কেন? আমার একটা মান সম্মান আছে তো নাকি?”
–“আহা কি আমার মান সম্মান ওয়ালা ছেলে। কত মান সম্মান আছে তোর সেটা আমার খুব ভালো করেই জানা।
সানিয়া বেগমের কথায় আয়াত আর রাফিয়া ফিক করে হেসে দিলো। সানিয়া মুগ্ধ চোখে তাকালো আয়াতের দিকে। শান কাঁদোকাঁদো চেহারায় বললো,

–“ভাইয়াকে এখনই বলছি আমি ওয়েট, তুমি মেয়েদের সামনে আমার লেগপুল করছো। ভাইয়া নিশ্চয়ই বুঝবে আমায়।”
এমন সময় সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে শ্রাবণ৷ আজ শুক্রবার, অফডে। সে কারণেই বাসায় আছে শ্রাবণ। রাফিয়া খুশিতে গদগদ হয়ে তাকালো শ্রাবণের দিকে৷ শান রাফিয়ার মাথায় চাটি মেরে বললো,
–“একদম ভাইয়ার দিকে ওরকম লুতুপুতু নজরে তাকাবি না বলে দিলাম।”
রাফিয়া মাথা ডলে রাগী চোখে তাকালো শানের দিকে। শান দাত বের করে হাসলো। শ্রাবণ কে দেখে সানিয়া এগিয়ে গেলো। বললো,

–“বোস, আমি খাবার দিচ্ছি।”
এরপর সানিয়া শান, রাফিয়া আর আয়াতকে উদ্দেশ্য করে বললো,
–“তোরাও বসে পড়।”

শান আর রাফিয়া গিয়ে চেয়ার টেনে বসলো। আয়াতের অস্বস্তি হচ্ছে। তাই আগের জায়গায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। সানিয়া মেহরাব একে একে টেবিলে সবকিছু এনে রাখলো। খাবার টেবিলে বসেও শান আর রাফিয়া হাতাহাতি করছে। যা দেখে আয়াত প্রচুর বিরক্ত। শ্রাবণ ওদের দুজনকে ধমক দিয়ে বললো,

–“তোদের দুজনকে বলেছি না আমার সামনে এরকম করবি না? চড়িয়ে গাল লাল করে দিবো বেয়াদব গুলো।”
শ্রাবণের এমন ধমকে রাফিয়া কাচুমাচু হয়ে বসে রইলো। শানও একদম ভদ্র ছেলের মতো বসে রইলো। সানিয়া মেহরাব আয়াতকে দূরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো,
–“কি ব্যাপার আয়াত? তুমি ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন? এসে বসো।”
সানিয়ার কথায় আয়াত হেসে বললো,

–“আসলে আন্টি, আমি ব্রেকফাস্ট করেছি বেশিক্ষণ হয়নি। এখনই খেতে পারবো না।”
সানিয়া মেহরাব কিছু বলার আগেই শান বললো,
–“আরেহ মিস খাদক ওটা কোনো ব্যাপার না। আপনি খেতে পারবেন, এসে বসে পড়ুন।”

আয়াতের রাগ হলো প্রচুর। এই ছেলে সবসময় এভাবে ওর পেছনে কেন লাগে সেটাই বুঝে না আয়াত। শ্রাবণ চোখ রাঙিয়ে তাকালো শানের দিকে। শান কিছু না বলে চুপচাপ মাথা নিচু করে খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। আয়াত এতক্ষণে ভালো করে দৃষ্টি দিলো শ্রাবণের উপর। লোকটার উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণের সারা মুখশ্রী জুড়ে সত্যিই অন্যরকম এক মায়া লেপ্টে আছে। গালের খোচাখোচা চাপদাড়ির গুলো যেন সেই সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে তুলেছে। আয়াত দ্রুত চোখ সরিয়ে নিলো। ও রাফিয়ার মতো হতে শুরু করলো কবে থেকে সেটাই ভাবছে। সানিয়া মেহরাব আয়াতের হাত ধরে টেনে নিয়ে এবার টেবিলে বসালেন৷ প্লেটে অল্প করে বিরিয়ানি তুলে দিয়ে বললো,

–“এইটুকুন তো খেতেই পারবে৷ এখন খাও তো।”
আয়াত কিছু না বলে চুপচাপ খেতে শুরু করলো। এ বাড়ির তিনজন তিন মেরুর। শ্রাবণ মেহরাব গুরুগম্ভীর একজন লোক। যার চোখমুখে হাসির ছিঁটেফোঁটাও নেই। অন্যদিকে শান মেহরাব বড় ভাই শ্রাবণ মেহরাবের থেকে সম্পূর্ণ উলটো। মুখে হাসি যেন সবসময় লেগেই থাকে। আর প্রচন্ড কথা বলে। শ্রাবণ যতটাই গম্ভীর শান ততটাই হাসিখুশি আর মিশুক। অন্যদিকে ওদের মা সানিয়া মেহরাব, উনিও ভীষণ মিশুক আর হাসিখুশি একজন মানুষ সবার সাথেই ফ্রেন্ডলি বিহেভিয়ার করে।

রাফিয়া, আফিয়া আর আয়াত রেডি হচ্ছে। দিহান আজ ওদের ঘুরতে নিয়ে যাবে। সাথে আরাফও যাবে৷ শান তো রেডিমেডি হয়ে সেই কখন এসে বসে আছে। রাফিয়া আর আয়াত রেডি হয়ে নিচে নামতেই দেখতে পেলো শান আরাফের সাথে মেতে আছে। রাফিয়া পেছন থেকে শানের চুল টেনে ধরে বললো,
–“এই তুই এখানে কি করছিস? তোকে কে বলেছে যেতে?”
শান রাফিয়ার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে নিজের চুল ঠিক করতে করতে বললো,
–“তুই না বললে কি হবে? দিহান ভাই ঠিকই যেতে বলেছে আমায়।”

রাফিয়ার রাগ হলো দিহানের উপর। শান আয়াতের দিকে তাকালো। কালো চুড়িদারে ভীষণ ভালো লাগছে মেয়েটাকে। শান হাসিমুখে আয়াতের সামনে গিয়ে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
–“ফ্রেন্ডস?”
আয়াত শানের সাথে হাত মিলিয়ে হাসিমুখেই বললো,
–“ওকে ফ্রেন্ডস।”
শান একগাল হেসে বললো,

–“তোমাকে ভীষণ সুন্দর লাগছে, আয়াত অর আয়ু?”
আয়াত মুচকি হেসে বললো,
–“এজ ইউর উইশ। বাই দ্যা ওয়ে আপনাকেও সুন্দর লাগছে।”
–“আচ্ছা তাহলে আয়ু বলছি। আমি তোমার থেকে অতটাও বড় না যে আমায় আপনি বলে সম্বোধন করতে হবে। রাফুর মতো তুই/তুমি বলতে পারো।”
আয়াত একগাল হেসে বললো,

–“আচ্ছা তুমি।”
শান দুষ্টু হেসে বললো,
–“তোমায় সুন্দর লাগছে বলেছি বলে আবার আকাশে উড়ো না। অতটাও সুন্দর লাগছে না। কালো পেত্নীর মতো লাগছে।”
আয়াত চোখ রাঙিয়ে তাকালো শানের দিকে। তারপর আচমকাই ওর চুল ধরে টেনে দিলো। শান নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,

–“আরেহ আস্তে, আমি তো মজা করছিলাম এত সিরিয়াস হচ্ছো কেন?”
আয়াত ভেংচি কেটে অন্যদিকে তাকালো। শান উঠে আয়াতের পাশে দাঁড়িয়ে বললো,
–“তোমাকে এই এক ঝলক দেখে তো মনে হলো রাফুর মতোই বড্ড চঞ্চল স্বভাবের তুমি। তাহলে এরকম মুখ ভার করে থাকো কেন সবসময়?”
আয়াত নরম চোখে তাকালো শানের দিকে। রাফিয়া শানকে হুট করেই ফারাবীর কথা বলে দিলো। যাতে আয়াত বড্ড বিরক্ত। এই রাফিয়াটা কি কিচ্ছু বোঝে না? বিরক্তিতে অন্যদিকে তাকালো আয়াত। শান বললো,

একটা বসন্ত বিকেলে পর্ব ৩

–“আরে রিল্যাক্স আয়ু, ওসব ভেবে মন খারাপ করো না তো। আবার আগের মতো হয়ে যাও। একটা ছেলের জন্য এভাবে মনমরা হয়ে থেকো না। লাস্ট কয়েকটা বছর ভুলে থাকার চেষ্টা করো। নিজেকে পড়াশোনায় ব্যস্ত রাখো, লাইফে ফ্রেন্ডস কাজিনদের সাথে এঞ্জয় করো দেখবা জীবনটা অনেক কালারফুল। ওসব মন খারাপের কথা ভুলেও মাথায় এনো না।”
শানের কথায় মুচকি হাসলো আয়াত। ছেলেটা যেমন হাসি ঠাট্টায় ওস্তাদ, তেমন ভাবেই অনেক সুন্দর করে মানুষকে বোঝাতে পারে।

একটা বসন্ত বিকেলে পর্ব ৪