একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি পর্ব ৩৬

একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি পর্ব ৩৬
সাদিয়া জাহান উম্মি

প্রাহি বেশ ঘাবড়ে আছে সেই ঘটনার পর থেকে।অর্থ প্রাহিকে নিজের মুখোমুখি আনলো।প্রাহির গালে হাত রেখে বলে,
~’ এভাবে ঘাবড়ানোর কি আছে প্রাহি?যে খারাপ তার শাস্তি হবেই।আর তা হয়েছেই।একদিন না একদিন তো ওর কোনভাবে শাস্তি পাওয়ার কথা ছিলো তাই নাহ?আমার ফোর্স, সাথে পুলিশও ওকে খুজছিলো।ও তাদের হাতে পড়লেও ওর সাথে এমনটাই হতো।তাই নাহ?’
প্রাহি বিরস হয়ে বলে,

~’ কিন্তু ওকে এইভাবে মারলো টা কে?’
~’ জয় অনেক মাফিয়াদের সাথে জড়িত ছিলো সেই তথ্য আমরা পেয়েছি।আমার মনে হয় তারাই কিছু করেছে।সো এতো চিন্তা করে লাভ নেই।’ বললো অর্থ। প্রাহি মুখটা একটুখানি করে মাথা নাড়ালো।যাক ভালোই হয়েছে যা হয়েছে।অবশেষে ওর বাবার হত্যাকারির শাস্তি হয়েছে। কিন্তু প্রাহি নিজের হাতে শাস্তি দিতে পারলে ওর মনটা শান্তি পেতো।প্রাহি চোখ বুজে নিশ্বাস ছাড়ালো।হঠাৎ অর্থ হেঁচকা টানে প্রাহিকে বিছানায় সুইয়ে দিয়ে প্রাহির উপর নিজের শরীরের ভর ছেড়ে দিলো।প্রাহি আশ্চর্যজনক চাহনী নিক্ষেপ করলো অর্থ’র দিক।ডাগর আঁখি জোড়া মেলে তাকিয়ে তাকিয়ে ও।অর্থ দুষ্টু হাসলো প্রাহির এমন চাহনী দেখে।বললো,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

~’ কি এইভাবে তাকিয়ে আছো কেন?’
প্রাহি অবাক হয়ে বলে,
~’ আ..আপনি হঠাৎ এমন করলেন কেন?’
~’ কারন আমার এখন আদর করতে ইচ্ছে হচ্ছে বউকে!বুঝেছো মেয়ে?’
~’ কিন্তু আপনি তো….!’
প্রাহির কথা মাঝপথেই থেমে গেলো। কারন ততোক্ষনে অর্থ প্রাহির ঠোঁটজোড়া নিজ আয়ত্ত্বে নিয়ে নিয়েছে।ঠোঁট ছেড়ে প্রাহির গলার ভাজে মুখ গুজলো অর্থ।ভালোবাসার আবেশে ভরিয়ে দিতে লাগলো নিজের প্রিয়তমা স্ত্রীকে।প্রাহিও স্বামির ভালোবাসার জোয়ারে নিজেকে ভাসিয়ে দিলো।যেমনটা ও সর্বদা করে।

~’ কি খবর এনেছো জলদি বলো?’ হিমশীতল কন্ঠ কানে পৌছাতেই কেঁপে উঠলো রিফাত নামের ছেলেটি।রিফাতের কোন শব্দ না পেয়ে ব্যাক্তিটি হুংকার করলো,
~’ কি হলো বলছো না কেন রিফাত?’
রিফাতের যেন কলিজা বেড়িয়ে আসার জোগাঢ় এমন হংকারে।নিজেকে সামলে নিয়ে কাঁপা গলায় বললো,
~’স্যার,আমরা কোন খবর নিতে পারছি না।ওই অর্থ শিকদার ওদের পরিবারের প্রতিটি মানুষের সেফটির জন্যে সিকিউরিটি দ্বিগুন বাড়িয়ে দিয়েছে।তাই আমরা চেয়েও পারছি না কিছু করতে।’

রিফাতের মুখে এহন কথা শুনে যেন রক্ত ছলকে উঠলো ব্যাক্তিটির।রাগে লাল হয়ে যাওয়া হিংস্র চোখজোড়ার বাণ ছুড়ে মারলো রিফাতের দিকে।রিফাত ভয় পেয়ে দু-পা পিছিয়ে যায়।ব্যাক্তিটি চিৎকার করে বলে,
~’আমি এসব শুনতে চাইছি তোদের থেকে।রাস্কে`ল্সগুলা।আ…আমি ওদের মৃত্যু সংবাদ চাই মৃত্যু।বলেছিলাম না আমি?বলেছিলাম না তোদের?যে করে হোক ওদের বোনকে নাহলে প্রাহিকে মেরে ফেল।নাহলে এমন কিছু কর ওদের সাথে যাতে ওই অর্থ পুরোপুরি ভেঙ্গে পরে।তাহলে আমাকে এইসব শুনাচ্ছিস কেন?একটা কাজও তোদের দ্বারা হয়না।যা দূর হো আমার চোখের সামনে থেকে নাহলে আ’ম গোন্না কিল ইউ ড্যাম ইট।জাস্ট গো টু হেল ইডিয়ট!’

এমং ভয়ানক হুমকিতে আর একমুহূর্তও অপেক্ষা করলো না রিফাত।দ্রুত পায়ে সেই কক্ষ থেকে বেড়িয়ে আসলো।এতোক্ষনে যেন প্রানটা ফিরে এলো।আর একটু হলে ওর মৃত্যু নিশ্চিত ছিলো।রিফাত কেন যে এই ব্যাক্তির কাছে কাজের জন্যে এসেছিলো।যদি আগে জানতো এই ব্যাক্তি এতো খারাপ রিফাত কোনদিন এই ব্যাক্তির ধারপাশও আসতো না।কিন্তু এখন তো চেয়েও কোন উপায় পাবে না রিফাত।নাহলে যে ওর মৃত্যু ছাড়া আর কোন উপায় নেই।রিফাত দীর্ঘশ্বাস ফেলে কাজে চলে গেলো।এদিকে ওই কক্ষের ভীতর হতে ক্রমাগত ভাংচুরের শব্দ আর চিৎকারের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।

ঘুমন্ত অর্থ’র মুখশ্রীর দিকে তাকিয়ে আছে প্রাহি।লোকটার খোলা লোমহীন প্রসস্থ বুকের সাথে লেপ্টে আছে ও।অর্থ’ও দু’হাতে জড়িয়ে রেখেছে প্রাহিকে।প্রাহি মুগ্ধ দৃষ্টিতে ওকেই দেখছে।এই লোকটাকে যতোই দেখে মন ভরেনা প্রাহির।ওর ভালোবাসার মানুষ অর্থ।দীর্ঘ সাত বছরের প্রতিক্ষার ফল।যাকে ঘিরে ছিলো প্রাহির কতোশতো পাগলামি।প্রতি নামাজের দোয়ায় অর্থকে চাইতো প্রাহি।কতো শতো নফল নামাজ পরেছে।রোজা রেখেছে।যাতে যে করেই হোক অর্থ যেন ওরই হয়।অবশেষে উপরওয়ালা ওর দোয়া কবুল করেছে।

অর্থ’কে স্বামি হিসেবে পেয়েছে।সেই সাথে পেয়েছে অর্থ অর্থ’র অসীম ভালোবাসা।লোকটা ওকে এতো এতো ভালোবাসে যে মাঝে মাঝে প্রাহির মনে হয় ওর এতো বছরের ভালোবাসাও যেন ফিঁকে পরে যায় অর্থ’র ভালোবাসার কাছে।মুচঁকি হাসে প্রাহি।অর্থ’র কপালে,গালে ঠোঁটে নিজের ওষ্ঠ দ্বারা আদর দিয়ে উঠে পরে।ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেস হতে।ফ্রেস হয়ে আয়নার সামনে বসলো।একটু সাজঁলে কেমন হয়?মন্দ হয়না।নিজের স্বামির জন্যেই তো সাজঁবে।যেই ভাবা সেই কাজ।চোখে কাজল, আইলাইনার দিলো প্রাহি।ঠোঁটে হালকা গোলাপি রঙের লিপগ্লোস,হাতে সাদা চুরি পরলো।কারন আজ প্রাহি সাদা সুতি শাড়ি পরেছে।অর্থ’র সাদা রঙ খুব পছন্দ।আজ শুক্রবার লোকটা বাড়িতেই আছে।তাই ভাবলো একটু শাড়ি পরা যাক।প্রাহির ঠোঁটের কোনে লাজুক হাসি।নিজের লম্বা চুলগুলো আঁচড়াতে ব্যস্ত হয়ে পরলো।এদিকে চুরির রিনিঝিনি শব্দে ঘুম ভেঙে যায় অর্থ’র।চোখজোড়া খুলে তাকাতেই দৃষ্টি নীবদ্ধ হয় এক শুভ্র পরীতে।অর্থ মুগ্ধ হলো।থমকালো দৃষ্টি।হৃদস্পন্দন বেড়ে দ্বিগুন হলো।ঘোড়ার ন্যায় ছুটতে লাগলো যেন।

চুল আঁচড়ানো শেষে প্রাহি উঠে দাড়ালো।যাওয়ার জন্যে পিছনে ঘুরেই ধাক্কা খেলো কারো বলিষ্ট দেহের সাথে।চোখ তুলে তাকাতেই সম্মুখে একজোড়া মুগ্ধ দৃষ্টি দেখতে পেলো।যা ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।অর্থ প্রাহির কোমড়ে একহাত রেখে আরেকহাত প্রাহির গালে রাখলো।প্রাহির সর্বাঙ্গ যেন ভীষনভাবে কেঁপে উঠলো।অর্থ ঘোরলাগা কন্ঠে বলে,
~’ কাঁপছো কেন মেয়ে?কাঁপাকাঁপি করার কথা তো আমার।সকাল সকাল এ কোন রূপে হাজির হলে আমার সামনে বলোতো?নিজের এই বেষামাল হৃদয়টাকে এইবার কিভাবে সামলাবো আমি বলতো?কেন এতো জ্বালাও আমায় মেয়ে?এইভাবে শুভ্রতায় নিজেকে মুরিয়ে স্নিগ্ধ আর মায়াময় রূপে কে আসতে বলেছে বলো তো তোমাকে?এখন তোমার এই রূপের আগুনে যে আমি ভষ্ম হয়ে যাচ্ছি।তার দায় কে নিবে শুনি?’

অর্থ’র প্রতিটি কথায় যেন প্রাহির শিরা-উপশিরা শুদ্ধ কাঁপছে।প্রতিটি বাক্যগুলো এতো নেশাক্ত কেন অর্থ’র? কেন এইভাবে ওর হৃদস্পন্দনের গতি বাড়িয়ে দেয় শতগুনে।
অর্থ প্রাহির গালটা আরেকটু শক্ত করে ধরে ওর বরাবর করলো।অর্থ পলকহীন তাকিয়ে প্রাহির দিকে।অর্থ আবিষ্ট কন্ঠে অওড়ালো,
~’ কি জানি কোন মায়ার গ্রহ থেকে এসেছো তুমি, তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে কখন যে সময় কেটে যায়.. নিজেও বুঝে উঠতে পারিনা। বলতে পারো কি তুমি এত মায়া কিসের?
প্রাহির জবাব কোন জবাব নেই।শুধু নির্নিমেষ তাকিয়ে অর্থ’র দিকে।অর্থ আবরও বললো,
~’ তোমাকে এতো দেখি তাও কেন আমার মন ভরে নাহ।কেন আমার হৃদয়টা এমন অস্থির হয় বারবার।’
প্রাহি দৃষ্টি নত করলো।রিনরিনে কন্ঠে বলে,

~’ তাহলে তাকান কেন?এইভাবে তাকিয়ে থাকাটা যে অনেক বড় অপরাধ আপনি জানেন?আপনার এইভাবে তাকিয়ে থাকা যে আমায় ভীষন ভাবে এলোমেলো করে দেয়।লজ্জায় আমি চোখ তুলে চাইতে পারি না।এটা অপরাধ না বলুন?’
অর্থ প্রাহির কপালে কপাল ঠেকালো।ঠোঁটের কোনে অমায়িক হাসি ফুটিয়ে তুলে বললো,
~’তোমার দিয়ে তাকিয়ে থাকাটা যদি বড্ড বড় অপরাধ হয়ে থাকে, তবে আমি এই অপরাধ হাজার বার করার জন্য প্রস্তুত আছি। হোক না তবে শাস্তি আমার।’

প্রাহি অর্থ শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।আর কিছু বলার সাহস হলো না ওর।মূলত ওর গলার স্বর যেন কোথাও উধাও হয়ে গিয়েছে।লজ্জা’রা যেন ঘীরে ধরেছে ওর সর্বাঙ্গ।রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়েছে ওর গালে।সেই লজ্জা ঢাকতেই মুখ লুকালো অর্থ’র বুকে।অর্থও প্রাহিকে দুহাতে আঁকড়ে নিয়ে।চোখ বুঝে নেশাক্ত কন্ঠে আওড়ালো,
~’আমি তোমার চোখে তাকিয়ে থাকার মধ্যেই পৃথিবীর সব সুখ খুঁজে পাই আমি।সে কি জানো তুমি?’

একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি পর্ব ৩৫

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।ভুল হলে ধরিয়ে দিবেনআসলে আমার একটা বদঅভ্যাস আছে আর সেটা হলো গল্প লিখা শেষে আমি রি-চেইক দেই না।তাই অনেক ভুল রয়ে যায় গল্পে।তাই আমায় ক্ষমা করবেন।

একথোকা কৃষ্ণচূড়া এবং আপনি পর্ব ৩৭