এক চিলতে রোদ সিজন ২ পর্ব ১১+১২+১৩+১৪+১৫

এক চিলতে রোদ সিজন ২ পর্ব ১১+১২+১৩+১৪+১৫
Writer Nondini Nila

আজকে ইহানকে বাসায় যাওয়ার অফার করলাম কিন্তু কিছু বললো না।‌ যে রিকশায় এসেছি সেটায়‌ই চলে গেলো। আমি তাকিয়ে ছিলাম রিকশা যতক্ষণ ছিলো ততক্ষণ। চোখের আড়াল হতেই ভেতরে চলে গেলাম। আম্মু আজ আমাকে বকলো আমি চুপ করে বকা হজম করে নিলাম দোষ আমার তাই হজম তো করতেই হবে। ইহানের সাথে এক রিকশায় আসতে খুব অস্বস্তি লেগেছে। ইহান হয়তো তা বুঝতে পেরেছিলো তাই বলেছিলো,
‘ আমার সাথে এক রিকশায় যেতে তোমার প্রবলেম হলে ও যেতে হবে। কারণ এখন আমি আরেকটা রিকশা খুঁজতে পারবো না।’

আমি খুব অপ্রস্তুত হয়ে পড়ি ইহানের কথায় আর উনি আমার দিকে বিরক্তিকর চোখে তাকিয়ে থাকে। আমি আমতা আমতা করে বলি,
‘ সমস্যা নাই। চলুন।’
বলেই আমি একদম কোনা ঘেঁষে বসে ছিলাম‌। রিকশা ছারতেই আমি কিনারায় বসার জন্য পড়ে যেতে নেয় তা দেখে ইহান আমার ডান বাহু চেপে ধরে টেনে নেয় নিজের দিকে আর বলে,
‘ প্রবলেম কি তোমার? রিকশার নিচে পরে মরতে চাও নাকি? একদিন ট্রাকের নিচে একদিন রিক্সায় নিচে যতসব ফালতু!’
আমি চমকে উঠে বললাম, ‘ আমি মরতে চাইনি সেদিন কতো বার বলবো!’
‘ ভালো। তো এখন এমন করছো কেন? আমার সাথে গা ঘেঁষলে কি তোমার গায়ে ফোসকা পরবে নাকি?’
‘ না মানে আসলে…

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আমি চুপ করে যাই। কি বলবো? উনার কাছে থাকলে যে আমার বুক ধুকপুক করে, হাত পা কাঁপে, অস্থির লাগে তা উনাকে কি করে বুঝাবো। ইহান আমাকে আর কিছু বললো না। আমাকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো।আমি কথা বললেও তিনি কিছু না বলে চলে গেলো।
স্কুল থেকে ও আমি আরো দুইবার গেছি হাসপাতালে। কিন্তু পরিবারের কারো সাথে তেমন দেখা হয়নি। ইহানের সাথেও না। একদিন ইমা আপুর বাবা ছিলো। তার সাথে হালকা কথা বলেছি। কথা বলার থেকে আমি তার দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলাম বেশি।কারণ তিনি দেখতে একদম আমার আব্বুর মতো। আমি চমকে গেছিলাম। সেদিন বাসায় এসে রাতে আব্বুকে বললাম,

‘ জানো আব্বু আজ একদম তোমার মতো দেখতে একটা আঙ্কেল দেখেছি।’
আমার কথা শুনে আব্বু ও অবাক চোখে তাকালো। আমি বললাম,
‘ ওই সেদিন একটা আপুকে রক্ত দিয়েছিলে না। তার আব্বু তোমার মতো দেখতে অনেকটা।’
‘ ও আচ্ছা। এক রকম দেখতে অনেক মানুষ আছে এই পৃথিবীতে।’
‘ আমি ভেবেছিলাম যেন আমার কাকা ওটা। আচ্ছা আব্বু আমার কোন কাকা, দাদা দাদী নাই?’
‘ আছে থাকবে না কেন?’
‘ সত্যি তাহলে আমি তাদের চিনি না কেন?’
‘ একটা ঝামেলায় তাদের সাথে আমাদের যোগাযোগ নাই মা!’
‘ কি ঝামেলা আব্বু?’
‘ অন্য একদিন বলবো এখন যাও ঘুমাও।’
‘ আচ্ছা।’

এসব বিষয়ে যতবার জিজ্ঞেস করেছি এক কথায় বলেছে আব্বু। কিন্তু পরে আর কিছু জানায় নি।
ফেসবুক লগইন করে ফ্রেন্ডদের সাথে কথা বললাম কিছুক্ষণ তারপর কি মনে করে যেন ইহানের নাম করে সার্চ করলাম আর পেয়েও গেলাম তার আইডি। আইডি চেক করলাম। প্রোফাইলে পিক নীল শার্ট পরে স্টাইল করে দাঁড়িয়ে আছে। চোখে সানগ্লাস। হাতে ঘড়ি, ব্রাউন রঙের প্যান্ট। আমি এক দৃষ্টিতে কিছু ক্ষণ তাকিয়ে থেকে অফ লাইন হয়ে গেলাম।
কয়েকদিন পর

রিমঝিম আপুর বিয়ে। রিমঝিম হচ্ছে আমাদের ফ্রেন্ড রিমার বড় বোন‌। বিয়েতে দাওয়াত করলো আমাদের ফ্রেন্ড সবাইকে গায়ে হলুদ থেকে। আমি রাজি আছি শুধু সমস্যা বাবা মা কে নিয়ে তারা থাকতে দিবে ত? রিমা কে বললাম তুই আম্মুকে রাজি করা প্লিজ। আমরা বিয়ে অনুষ্ঠানে খুব পছন্দ তাই যাওয়ার আগ্রহ অনেক।তুলি তো যাবেই আমিও রাজি বাকিরা সিউর নাই। রিমা আমার সাথে বাসা গিয়ে আম্মু কে কার্ড দিলো আর অনেক অনুরোধ করলো রাজি হতে। আম্মু রাজি হলো না। আমি মন খারাপ করে র‌ইলাম। তিন দিন পর গায়ে হলুদ। আমার যাওয়া হবে না। আম্মু বলেছে বিয়ের দিন সকাল গিয়ে বিকেলে আসবো। আমার ভালো লাগছে না।

রুমে এসে মন খারাপ করে র‌ইলাম। রাতে আমি মুখ গোমড়া করে র‌ইলাম। পরদিন ও আব্বু তা দেখে জিজ্ঞেস করলো আমার মন খারাপ কেন? আমি বলে দিলাম আর এবার আম্মুর জায়গায় আব্বু রাজি হলো আমাকে অবাক করে দিয়ে।আমি আব্বুকে জরিয়ে ধরে ধন্যবাদ দিলাম। একটা সুন্দর
গিফট কিনলাম।‌‌এদিকে রিমা ওর আব্বুকে দিয়ে আমার আব্বুর সাথে কথা বলিয়ে ছে। একদিন আগেই রিমা এসেই আমাকে নিয়ে গেলো। তুলি কাল আসবে ও ফুপির বাসায় গেছে নাকি।
রিমঝিম আপু ও বাসার সবার সাথে পরিচয় হলাম। সবাই খুব মিশুক আর ভালো। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমার সাথে মিশে গেলো যেন আমি তাদের বাড়ির মেয়ে আমিও তেমন করেই চলছি।

বাসায় অনেক আত্মীয় স্বজন আছে। অনেকে ভালো আবার অনেক ঝামেলা জনক। একজন আছে সারা ক্ষণ চিৎকার করতে থাকে সব কিছু নিয়ে। রিমঝিম আপু এই চেঁচামেচি তে তার হবু বর সাইদ ভাই এর সাথে কথা বলতে পারছে না তাই আমাকে টেনে ছাদে নিয়ে এলো। আপুদের বাসার সাথে একটা খেলার মাঠ আছে সেখানেই বিয়ের আয়োজন হবে। আমি সেই মাঠের দিকে তাকিয়ে আছি। মনে হচ্ছে পরিচিত কাউকে দেখছি। কিন্তু কে আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে চেনার চেষ্টা করছি পারছি না। আপু কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে কথা বলেই যাচ্ছে।আমি তার দিকে তাকিয়ে দেখলাম আবার মাঠের দিকে তাকিয়ে দেখি নাই। কোথায় গেলো? খয়রে কালারের টি-শার্ট ছিলো। আমি উঁকি ঝুঁকি মেরে খুঁজছি তখন একটা পরিচিত কন্ঠস্বর ভেসে আসে কানে। আমি চমকে পেছনে তাকায়। আমার সামনে দাড়িয়ে আছে ইহান। আমি ভয় পেয়ে বুকে ফূ দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলি,

‘ আপনি এখানে কি করছেন?’
‘ আমার ও তো এক‌ই প্রশ্ন তুমি এখানেই কি করছো? ‘
‘ রিমার আমার ফ্রেন্ড। সেই সুবাদে!’
‘ ওহ আচ্ছা। তা আমার দিকে ওমন হা করে তাকিয়ে ছিলে কেন?’ ভ্রু কুঁচকে বললো।
আমি অবাক গলায় বললাম, ‘ কি বলছেন? আমি আপনার দিকে তাকিয়ে থাকলাম কখন?’
‘ এই মাত্র ওই মাঠে আমার দিকে হা করে তাকিয়ে ছিলে না তুমি?’
‘ আপনি ওইখানে ছিলেন?
বলেই ইহানকে ভালো করে দেখলো। খয়ের টি শার্ট ওনার গায়ে তার মানে উনি‌ই ওখানে ছিলো। আর আমার কাছে চেনা চেনা লাগছে। আমি তো বুঝতেই পারিনি।
রিমঝিম আপু এগিয়ে এসে বলল, ‘ ভাইয়া তুমি এখানে কি করছো?’

‘ কিছু না। আর তুই এতো রাতে এখানে কি করছিস যা রুমে যা। দুইদিন তর সইছে না!’
রিমঝিম আপু লজ্জা লাল হয়ে গেলো আর আমাকে টেনে নিচে চলে এলো।আমি জিজ্ঞেস করলাম ইহান উনার কি হয় বললো খালাতো ভাই।আমি ওহ আচ্ছা বলে বিছানায় পা গুটিয়ে বসলাম।
রিমা কি জানি কাজ করছে একটু পর এসে আমাকে নিয়ে খেতে গেলো। ইহান একপাশে বসে গপাগপ খাচ্ছে আমাকে তার সামনাসামনি বসতে হলো পাশে রিমা। আমি তার সামনে খেতে লজ্জা পাচ্ছি তাই খেতে পারছি না। একটু পর পর ইহানের দিকে তাকাচ্ছি কিন্তু ইহান একমনে খেয়ে যাচ্ছে। একবারও আমার দিকে বা আশেপাশে কোন দিকে তাকাচ্ছে না। আমি ভাতের মধ্যে শুধু আঙ্গুল চালাচ্ছি খেতে পারছি না তাই রিমা বলে উঠলো,

‘এই ঊষা খাচ্ছিস না কেন তাড়াতাড়ি খা। ঘুমাবো বারোটা বাজতে চলল প্রায়।’
ইহানসহ টেবিলের সবাই আমার দিকে তাকালো আমি ঢোক গিলে শুকনা ভাতে মুখে পুরে নিলাম। তা দেখে ইহান বললো,
‘বান্ধবীকে শুকনো ভাত দিয়ে রেখেছিস শুধু তরকারি দে ইডিয়েট।’
রিমা আমাকে গোস্ত মাছ সবকিছু দিয়ে দেখিয়ে বলেছে নিয়ে খেতে কিন্তু আমি নিজেই নিয়ে নি। এবার ইহানের কথা শুনে আমার প্লেটের দিকে তাকিয়ে বলল ,
‘তোকে না ইচ্ছামতো নিয়ে খেতে বললাম কিছুই নিস নি কেন?’
বলেই চিংড়ি মাছ দিতে এলে আমি তাড়াতাড়ি প্লেট সরিয়ে বললাম, ‘চিংড়ি দিস না।’

‘কেন চিংড়িতে কি হইছে খুব টেস্টি হয়েছে খেয়ে দেখ!’
‘আমি চিংড়ি খাইনা! আমাকে অন্য কিছু দে!’
‘কি এত মজা চিংড়ি তুই খাস না! মিস করলি।’
বলেই গরুর দোস্ত দিলো। ইহান আমার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে ছিলো।
আমি গোস্ত দিয়ে গেয়ে নিলাম চলে এলাম রুমে আর ধপাস করে বিছানায় শুয়ে পরলাম।
পরদিন তুলি চলে আসে সকাল সকাল। তুলি এসেই ইহানকে দেখে চমকে যায়। আর ইহানের কাছে গিয়ে কি যেন কথা বলে, আমি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছি। ও এসে আমার বাহু খামচে ধরে রুমে আসে। আর এসেই কিভাবে গায়ে হলুদ এ শাড়ি পরবে তা নিয়ে আলোচনা করতে লাগলো। রিমা এসে আমাদের নিয়ে মাঠে এলো। এখানে গায়ে হলুদ এর আয়োজন করা হচ্ছে। স্টেজ সাজানো হচ্ছে। আর পাশে দাঁড়িয়ে ইহান তাদেরকে দেখিয়ে দিচ্ছে কিভাবে কি করতে হবে। আমরা চারপাশে ঘুরে দেখছি।

‘আমার না পা ব্যাথা করছে রে।’ তুলি বলেই পা উঁচু করে দেখালো কাটা জায়গা।
‘ কাটলো কি করে?’ রিমা বললো।
‘ আর বলিস না। আমার শয়তান মামাতো ভাই এর জন্য। একটু বসার কিছু দে না মনে হচ্ছে পায়ে ময়লা গেছে।’
রিমা বললো , দাঁড়া দিচ্ছি।’
রিমা চেয়ার খুঁজবে এমন সময় বাসা থেকে ওর ডাক পরলো আঙ্কেল ডাকছে কোন দরকারে মনে হয়।
‘ এই আব্বু ডাকছে। আমি শুনে এসে তোকে চেয়ার দেবো একটু দাঁড়া।’
বলেই রিমা দৌড়ে বাসায় চলে গেলো।
এবার তুলি আমাকে চেয়ারে ব্যবস্থা করতে বললো।ওর নাকি পা চুলকাচ্ছে। না দিলে বসেই পরবে।
আমি বললাম, তাহলে চল বাসায় গিয়ে দেখি।
‘ যেতে পারলে তো।’

আমি বললাম, ‘ কি দিবো। এখানে কি আছে বসার? যে কয়টা চেয়ার সব তো দখল করা।’
‘ ওই যে ইহান ভাইয়ের পেছনে ওইটা দে না। ভাই তো না বসে ফোনে কথা বলছে তার ওইটা দরকার নাই। আমি একটু বসে দেখি ময়লা ঢুকে গেলো নাকি!’

বাধ্য হয়ে এগিয়ে গেলাম ইহানের দিকে তিনি অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছে বসছে না ওইটাই আনি। ইহান বাম হাত পকেটে রেখে ফোন কথা বলছে আমি পেছনে থেকে চেয়ার টেনে একটু সরাতেই ধপাস করে শব্দ চমকে পেছনে তাকিয়ে থমকে গেলাম। আমি চেয়ার টেনে ঘুরে গেছিলাম আর এদিকে ইহান আমি চেয়ার নিতেই চেয়ার বসতে গেছিলো আর ঘটলো অঘটন।চেয়ার না থাকায় তিনি ঘাসের উপর পড়ে গেছে। আমি মৃদু চিৎকার করে উঠলাম। ভয়ে আমি মুখে দুই হাত চেপে তাকিয়ে আছি। আমার জন্য ই তো পরে গেলো এখন আমি না জানি কতো বকা খাই।

ঢোক গিলে দাড়িয়ে আছি। আসে পাশের সবাই হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। তারপর হো হো করে হেসে উঠলো। ইহান রাগে গজগজ করছে। চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। বসা থেকেই পেছনে ঘুরে আমাকে দেখে আরো রেগে গেলো। অগ্নি দৃষ্টি আমার দিকে নিক্ষেপ করলো। চোখ দিয়ে গিলে খাবে এমন তার চাহনী। আমি তোতলানো কন্ঠে বললাম,
‘ আমি ইচ্ছে করে এটা করি নি বিশ্বাস করুন। আমি তো ভাবছি আপনি হয়তো বসতে চান না তাই এটা নিতে এসেছিলাম।’

ইহান বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায় আর কারো দিকে না তাকিয়ে সোজা চলে গেলো। আমি হাঁ করে উনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে র‌ইলাম। এটা কি হয়ে গেলো। আর উনি আমাকে কিছু বললো না কেন? পড়ে নিশ্চয়‌ই এর জন্য আমাকে ভুগতে হবে সব ওই তুলির জন্য। উনি ব্যাথা ভালোই পেয়েছে। মুখটা ব্যথিত ছিলো। পেছনে থেকে তুলি ডাকছে আমি রেগে ওর কাছে গেলাম চেয়ার ছাড়া। ওর সাথে এক দফা ঝগড়া করে বাসার ভেতরে ঢুকে গেলাম।
রিমা কে দেখলাম সিঁড়ি বেয়ে নামছে আমাদের কাছে যাওয়ার জন্য। আমার সামনে পরলো রিমার ফুফাতো ভাই বোনেরা তারা কেবল এসেছে বোধ হয় সাজ পোশাক দেখে মনে হল।তারা বোধহয় বাইরে যাচ্ছিল কি যেন বলে হাসছিল। আমি তখন ভেতরে আসছিলাম তাই গেটের কাছে দেখা হয়ে গেল।

তাদের পাশ কাটিয়ে ভেতরে গিয়ে দেখলাম ইহান সোফায় বসে আছে। আমি ঢোক গিললাম আবার। রিমা এসে বললো,
‘কিরে চলে আসলি কেনো? আমি তো তাদের কাছে যাচ্ছিলাম তুলি কোথায়!’
‘ জানিনা। ‘
বলেই রুমে চলে এলাম। রিমা হা করে আমার রাগ দেখলো। ও গিয়ে তুলির কাছে সব শুনে হাসতে হাসতে শেষ রিমা। আমি রুমে এসে রিমঝিম আপুর কাছে বসলাম।

বারোটার আগেই রিমঝিম আপু আমাকে আর তুলি কে নিয়ে পালারে চলে এলো।রিমাকে আনতে চেয়েছিল কিন্তু রিমার অনেক কাজ। মেয়েটা বোনের বিয়েতে একটু আনন্দ করতে পারছে না। এ ডাক দিয়ে একটা কাজ দিচ্ছে তো আরেকজন ডাক দেয়ার আরেকটা কাজ হাতে ধরিয়ে দিচ্ছে।

তাই ও আসে নি রাগ করে রয়ে গেছে। আর কেউ বউয়ের সাথে পার্লারে আসার সময় নেই। সবাই যার যার সাজ পোশাক নিয়ে চিন্তিত। কিন্তু আমি আর তুলি আনন্দের সাথেই আপুর সাথে চলে এসেছি। বসে আছি দুই ঘন্টা ধরে। এখনো সাজ কমপ্লিট হয়নি। আরো অনেক সময় লাগবে এদিকে যাওয়ার সময় ঘনিয়ে আসছে। তুলি রাগ করে নিজে নিজেই কাপড় পরতে লাগলো পার্লারের একজন তা দেখে সাহায্য করে। গায়ে হলুদে এত সময় বিয়ের দিন যে কত সময় লাগবে আল্লাহ। আমি গালে হাত দিয়ে বসে আছি।আমার অবশ্য সাজগোজ দেখতে ভালোই লাগছে কিন্তু মনে মনে ভাবছি। আমি যদি এখন রিমঝিম আপুর জায়গা থাকলাম পাগল হয়ে যেতাম এত সাজগোজ নিয়ে আমি উঠে দাড়াতে পারতাম না। পুতুল হয়ে বসে আছে রিমঝিম আপু আর পালারে মহিলা গুলো ইচ্ছে মতো নাচাচ্ছে।
সাজ কমপ্লিট হয়েছে যাওয়ার ও সময় হয়েছে।কিন্তু রিমঝিম আপু বসে আছে বলেছে আমাকে সাজানো দেন না হ‌ওয়া পর্যন্ত যাবে না যতই সময় যাক না কেন! আমি বলছি,

‘আপু আমি এমনিতেও সাজগোজ পছন্দ করিনা। আর শাড়ি পরে নিজেকে সামলাতে পারি না। আমাকে নিয়ে ভাবতে হবে না আমি হলুদ গাউন এনেছি বাসায় গিয়ে পড়ে নিবো। এখন চলো প্লিজ বাসায় থেকে কত বার ফোন এসেছে তোমার ফোনে জানো তুমি! অনেক বকবে আর লেট করলে।’
আমি বললো, ‘সেসব তোমার ভাবতে হবে না তাড়াতাড়ি তুমি বসে পড়ো। তোমার জন্য এখন কিন্তু লেট হচ্ছে ঊষা।’
বাঙালি স্টাইলে কাপড় পরিয়ে দিল আমাকে। হাতে চুড়ি ও মুখে হালকা করে সাজিয়ে দিতে বললাম। চুলগুলো বাধতে সময় লাগবে তাই খোলা রাখলাম। কপালে ছোট টিপ, ঠোটে হালকা লিপস্টিক, কানে ঝুমকা, চোখে মোটা করে কাজল।

আমার ফোনটা বেজে উঠলো গাড়িতে উঠতে ই।
সবাই ফোনের যন্ত্রণায় ফোন অফ করে রেখেছে শুধু আমার ফোনটা অন ছিলো আর আমার ফোনে কোনো কল আসছিল না। এখন থেকে আমার ফোনে বাজতে শুরু করলো পার্স থেকে ফোন বের করে দেখি ইহান কল করেছে‌। তার নাম্বারটা আমি ইমা আপু্য সাথে যোগাযোগ করার পরেই সেভ করে রেখেছি।‌
‘ হ্যালো! ‘
‘তোমরা কোথায় আছো?’
‘আমরা এইতো গাড়িতে কেন?’
‘এত সময় কারো লাগে! আর রিমঝিম কোথায়! ওর ফোন অফ কেন! ফোন রিসিভ করছো না কেন’
‘আপুতো আমার সাথে আছে আপুর ফোনে না চার্জ নাই তাই অফ হয়ে গেছে!’
ডাহা মিথ্যে কথা বললাম আসলে রিমঝিম আমার কানের সাথে কান লাগিয়ে কথাগুলো শুনে এই মিথ্যে কথাটা বলতে বলল।

‘রিমজিমে কাছে ফোনটা একটু দাও তো!’
‘আচ্ছা দিচ্ছি!’
আপু ফোন কানে ধরার পর দুই তিনটা ঝাড়ি খেলো।
গাড়িতে থেকে নেমে হেঁটে আপুকে নিয়ে স্টেজে বসে দিয়ে এলাম।দেখি রিমা শাড়ি পড়ে সাজগোজ করে দাঁড়িয়ে আছে। খুব সুন্দর লাগছে। এরা তো দেখি বাসায় ভালো সাজতে পারে। রিমা ফুফাতো ভাই-বোনরা ও সবাই খুব সুন্দর করে শাড়ি পরে সেজেগুজে বসে আছে। এজন্য এরা কেউ যায়নি
তারা জানত ওখানে গেলে বউ ছাড়া আর কেউ সাজার টাইম পাবে না। আমি রিমার ফুফাতো ভাই-বোনদের দিকে তাকাতে তাকাতে হাঁটছি তখন কারো বুকের সাথে ধাক্কা খেলাম। কপালে হাত দিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখি ‌ ইহান রেগে তাকিয়ে আছে। খুব হ্যান্ডসাম লাগছে ইহানকে। ইহান হলুদ পাঞ্জাবি পড়েছে।

‘ এ মেয়ে চোখে দেখো না? তোমার সব সময় সমস্ত ধাক্কা আমার সাথে খেতে হয় নাকি। ইচ্ছে করে ধাক্কা খাও তাইনা। হ্যান্ডসাম ছেলে দেখলেই ধাক্কা খেতে ইচ্ছে করে তাই না। আমার থেকে দূরে থাকবে সবসময় ইডিয়েট গার্ল!’
বলেই ইহান গটগট করে চলেই এলো। আমি হাঁ করে তাকিয়ে র‌ইলাম‌। নিজেকে নিজেই হ্যান্ডসাম বলল। কি ভাব আমার বয়েই গেছে ওনার সাথে ধাক্কা খেতে। ঊষা ভেংচি কাটলো।
সামনে ইমা আপু কে দেখে তারাতাড়ি গেলাম আর তাকে জড়িয়ে ধরলাম। আপু হয়তো আমাকে দেখে অবাক হয়েছে।

‘ ঊষা তুই এইখানে?’ আপু আমাকে এখন তুই করেই বলে।
‘হ্যাঁ এটাতো আমার ফ্রেন্ডের বাড়ি!’
‘ও আচ্ছা! ভালোই হয়েছে আবার আমাদের দেখা হয়ে গেল।’
‘ হুম তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে আপু।’
‘তাই তো কেউ খুব সুন্দর লাগছে।’
বাকিটা সময় আমি আপুর সাথে থাকলাম ওই বাসায় যাওয়ার সময় আপুর সাথে বসলাম আর অনেক কথা বললাম। অনেক আড্ডা দিলাম।

বরের গায়ে হলুদ দেওয়া শেষ করে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আবার গাড়িতে উঠে বসলাম। এইবার ইমা আপু আমার সাথে বসে নাই। তার গাড়ি ফুল এজন্য আমাকে অন্য কারে উঠতে হলো। কিন্তু এখানে এসে রিমাকে পেয়ে স্বস্তি পেলাম। দুজন দুই জানালায় বসে আছি মাঝখানে আরো দুজন বসা যাবে। তুলি পেছনের সিটে বসেছে। ওকে ডাকলাম কিন্তু আসলো না। কারণ ওর ও জানালা লাগবে। এবার রিমার মামাতো ভাই রাতুল এসে গাড়ি বসলো। ও একাই দুইজনের জায়গা দখল করে বসেছে।এতো মোটা এই ছেলেটা আমি চোরা চোখে ওকে একবার দেখে আল্লাহ আল্লাহ করছি।আর যেন কেউ না আসে তাহলে আমি চেপ্টা হয়ে যাব চিপায় পরে। রাতুল কে দেখে আমার ই অস্থির লাগছে। সব গাড়ি ছেড়ে দিয়েছে এবার আমাদের টা ছারবে কিন্তু সামনে থেকে অতুল ভাই ইহান ইহান করে ডাকছে। ইহান এগিয়ে এলো,

‘ ইহান পেছনের সিটে উঠে পর একটা সিট খালি আছে।’
‘থ্যাংক গড অবশেষে সিট পেলাম। মহিলা মেয়ে গুলোকে সিট দিতে দিতে আমিই গাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছি। ভাব একবার।’
‘ হুম দেখছি। উঠে পর। ‘
ইহান আমার পাশে এসে দরজা খুলল। আমি অসহায় মুখে তাকিয়ে আছি। একবার রাতুল এর দিকে তাকিয়ে ঢোক গিললাম।
ইহান আমার দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ ভেতরে যাও। ‘
আমি আঁতকে ওঠে বললাম, ‘ আমি জানলার পাশে বসবো। আপনি ভেতরে যান প্লিজ।’
ইহান গম্ভীর মুখ করেই বললো, ‘ নেমে দাঁড়াও।’

আমি নেমে পরলাম। ইহান ভেতরে গিয়ে বসলো আমি একটুখানি জায়গার দিকে তাকিয়ে আছি আজকে যে আমার কি অবস্থা হবে? কাঁদো কাঁদো মুখ করে উঠে বসলাম।
‘মুখ যতই মলিন করো না কেন? তোমাকে জন্য আমি এখন গাড়ি থেকে নামতে পারবো না সরি!’
ইহানের কথা চমকে তাকালাম।
‘ আমি আপনাকে কি বলেছে আমার জন্য গাড়ি থেকে নেমে যান!’ নাক ফুলিয়ে।
‘ বললে ও নামবো না সেটাই বলেছি।’
‘ আপনি একটা ফালতু লোক।’
আমি জানালার দিকে ঘুরে গেলাম।

এতো চিপা হয়েছে যে আমি বাম ঘুরলে ডান দিকে আর ঘুরতে পারিনা। দাঁত চেপে সহ্য করছি কখন গাড়ি থামবে আর এই ঝন্ত্রণা থেকে নামতে পারবো।
ইহান এই চিপার মধ্যে ও আমার থেকে দূরত্ব রেখে বসেছে আমি তাই একটু স্বস্তি পাচ্ছি। আমিও গাড়ির দরজার সাথে লেপ্টে আছি। রিমা চেঁচিয়ে উঠলো।

‘ আমি এতো চিপায় বসতে পারুম না গাড়ি থামা। আমি নাইমা যাই। নাইলে এই রাতুল নামবো। আল্লাহ আমি শেষ।’
বলেই চিল্লাচিল্লি করতে লাগলো। অজ্ঞতা রাতুল নেমে পেছনে বসলো আর রিমার ফুপাতো বোন মিনা আসলো। চিকন করে মেয়েটা এখন শান্তি। সবাই নড়েচড়ে বসলাম। আমি ইহানের দিকে তাকিয়ে দেখি ফোন টিপছে।
তার এসবে কোন হেলদোল নাই। আমি সিটে হেলান দিয়ে একবার বাইরে তো একবার সামনে তাকাচ্ছি। ওইভাবে কখন ঘুমিয়ে গেছি খেয়াল নেই। ঘুম ভাঙলো রিমার চিৎকার এ। চোখ মেলে দেখি গাড়িতে আমি একাই বসে আছি। সবাই নেমে গেছে। রিমা কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে রাগী চোখে। আমি বললাম,

‘ সবাই কোথায়?’
‘সবাই চলে গেছে।’
‘ ক‌ই গেছে? এটা কোন জায়গা?’
‘ ওরে আল্লাহ তারাতাড়ি নাম। আমরা চলে আসছি এটা আমাদের বাড়ি ভালো করে দেখ।’
আমি জানালা দিয়ে তাকিয়ে ফট করেই নেমে গেলাম। হামি দিতে দিতে হাঁটছি কখন ঘুমালাম কিছুই মনে নাই। ভেতরে আসতেই তুলি দুই হাত ভর্তি হলুদ নিয়ে গেছে আমার মুখে লাগিয়ে দিলো। আমি ঘুম ঘুম ঝুঁকে ওকে থামাতেও পারলাম না। রিমঝিম আপুকে হলুদ দিয়ে সবাই নিজেদের কেই লাগিয়ে ভূত করে দিচ্ছে। আমি যোগ হলাম সবার সাথে। লাফালাফি নাচানাচি করতে করতে একটা বেজে গেলো। রুমে এসে ড্রেস চেঞ্জ করেই থপ করে বিছানায় শুয়ে পরলাম।

পরদিন আর কাউকে পার্লারে নিয়ে যেতে হলো না। পার্লারে লোক বাসায় আসবে। আপু দশটায় দরজা বন্ধ করে বসলো আর খুললো একটার পর। এদিকে বর এলো তিনটায় আমরা ফিতা ফুল আর বিভিন্ন রঙের শরবত নিয়ে গেটে দাঁড়ালাম। ইহানকে আজ একবার ও দেখি নাই‌‌। পঞ্চাশ হাজার টাকার ত্রিশ হাজার এ গেট থেকে সরতে হলো‌। গেট থেকে ফুলের থালা হাতে পেছনে সরতে গিয়ে কার সাথে জানি একটা ধাক্কা খেলাম। বিরক্ত হয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখি ইহান।এদিকে আমার হাতের থালা ধাক্কা খেয়ে পরে গেলো আমি প্লেটের দিকে তাকিয়ে জ্বিভে কামড় দিলাম। তারাতাড়ি তুলে নিয়ে মুখে হাসি আনার চেষ্টা করে ইহানকে সরি একটা ভো দৌড়ে চলে এলাম। আসলে আমি আরেকটা আকাম করছি। তা হলো আমার এই হিল জুতো দিয়ে ইহানের কালো শো জুতায় পা লাগিয়ে ব্যাথা ও সাথে জুতো সাদা করে ফেলেছি। তা দেখে ভয়ে আমি দৌড় দিয়েছি।

এদিকে ইহান কটমট চোখে ঊষার চলে যাওয়া দেখলো।
আমি একদম রিমঝিম আপুর রুমে এসে থেমেছি। হাঁপাতে লাগলাম এসে। রিমঝিম আপু জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে? এমন করছি কেন আমি কিছু বললাম না। আপুর পাশে বসে র‌ইলাম। তখন তুলি এসে খাওয়ার জন্য নিয়ে গেলো আমাকে। খেতে বসে ও শান্তি নাই। ভিডিও ম্যান আমাদের এইখানেই দাঁড়িয়ে ভিডিও করছে। তাই খেতে ও পারছি না একটু পর পর দাঁত কেলিয়ে হাসছি। খাওয়া শেষে গাউনের এক কোনা ধরে হাত ধুয়ে এলাম। এবার ইহানকে দেখলাম। বরের সাথে স্টেজে আছে অনেকের সাথে। সেখানে বররা খাচ্ছে আর তার তদারকি করছে কয়েকজন। ইহান ও এটা ও জিজ্ঞেস করছে। লাল পাঞ্জাবি তে ইহানকে খুব সুন্দর লাগছে‌। আমি তাকিয়ে র‌ইলাম।

বিয়ে পরানো শেষ হলো সন্ধ্যায় পর। এবার বর ব‌উকে একসাথে বসানো হলো।আর ফটো তুলার ধুম পরলো এবার আমি একাই বাইরে এসে বসে র‌ইলাম। গরম লাগছে এতো মানুষের মধ্যে বসে থাকতে ভালো লাগে না। একটা ছেলেকে দেখলাম আমার পাশে এসে বসলো চেয়ার টেনে। আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালাম। ছেলেটা বর পক্ষের।
এসেই নাম কি জিজ্ঞেস করলো। আর নিজের নাম ধাম একাই বললো। কয়েকটা কথা শুনেই বুঝতে অসুবিধা হলো না কেন এমন করছে। ভাব জমানোর চেষ্টা করছে। ফোন নাম্বার চেয়ে থামলো ওই শাহিন ছেলেটা। ছেলেটার নাম শাহিন। আমিও সুন্দর নাম্বার দিয়ে দিলাম। কিন্তু এটা আমার নাম্বার না আমার তৈরি করা বানানো নাম্বার। যাইহোক ছেলেটা আমার নাম্বার পেয়ে খুশী বাক বাকুম হলো।

আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে বাসার ভেতরে ঢুকতে গিয়ে দেখি ইহান গেটের সামনে দাঁড়িয়ে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি তাকে দেখেই তখনকার পারা দেওয়ার কথা মনে পড়ে গেল। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। মারবে নাকি কিন্তু কিছু হলো না আমি কাচুমাচু মুখ করে তারাতাড়ি ভেতরে ঢুকে গেলাম। ইহান রাগে গজগজ করছে ওইখানে দাঁড়িয়েই।
বিদায়ের সময় আরেক দফা কান্নার রোল পরলো।
পরদিন ওই বাসা যাওয়ার পর শাহিনের সাথে দেখা হলো। ছেলেটা আমাদের খাবারের তদারকি করছে। আমার কাছে এসে এটা ওটা দিচ্ছে লাগবে কিনা জিজ্ঞেস করছে আমার বিরক্ত লাগছে কিন্তু কিছু বলতে পারছি না। হেসে না করছি। অসহ্য। আর তুলি তো সুযোগ পেয়ে খাটিয়ে মারছে এটা ওটা চেয়ে আবার হেসে একাকার। আমার কানে ফিসফিস করে বললো,

‘ দাঁড়া পোলাটারে শিক্ষা দেয়। তোরে পছন্দ করছে মনে হয়। এখন ই সুযোগ খাটানোর।’
একবার লবণ, একবার টমেটো, শশা, লেবু, হার খোশ, বলে ছেলেটাকে নাচাচ্ছে। আমি হাসতে হাসতে শেষ।
খাবার শেষে শাহিন আমাকে বললো , ‘ তোমার নাম্বার অফ কেন এতো বার কল করলাম ঢুকলো না।’
আমি হকচকিয়ে গেলাম।
‘ ওই আসলে চার্জ ছিলো না তাই বন্ধ হয়ে গেছে। বিয়ে বাড়ি বুঝতেই তো পারছেন। আর আপনি আমাকে এতো কল করেছেন কেন?’
আমার কথা শুনে শাহিন থতমত খেয়ে গেলো।

রিমঝিম আপুর রুমে আসলাম। এখনো রুমে ফুলের ছড়াছড়ি। আমি গিয়ে রুমটা ভালো করে দেখলাম। একটা ড্রেসিং টেবিল, আলমারি আর খাট ব্যতীত আর কিছু নাই রুমে। সবগুলোই নতুন মনে হয় বিয়ের আগে রুমটা নতুন করে সাজিয়েছে। রিমঝিম আপু বিছানায় বসে আছে তার পাশে আছে তার ননদ শাশুড়ি তাদের সাথে তার ফটো শুটিং হচ্ছে। আমি রুম থেকে বেরিয়ে এলাম তুলির হাত ধরে এক তলায় বাসাটা ঘুরে ঘুরে দেখলাম। এখানে রিমঝিম আপু ভালোই থাকবে মনে হচ্ছে বাসার প্রত্যেকটা মানুষই ভালো। শুধুই বড় ভাইয়ের বউ টা বাদে।

তেনার সাজ দেখে তো আমি ভড়কে গেছিলাম। ব‌উয়ের থেকেও তিনি বেশি সেজেছে একদম লাল টকটকে একটা বেনারসি পড়েছে ফর্সা এমনিতেই তার ওপর গর্জিয়াস আজ একদম নতুন বউ লাগছে তাকে। আর রিমঝিম আপু আজকে মিষ্টি কালারের শাড়ি পড়েছে তাকেও সুন্দর লাগছে কিন্তু ওই বড় ভাবি টা কে বেশি সুন্দর লাগছে। আমিতো রিমঝিম আপুর ওই বড় ভাবি টা কে দেখেছি আগে আর আমি ভেবেছি এ মা রিমঝিম আপুর চেহারা বদলে গেলে কিভাবে? আজকের সাজে রিমঝিম আপুকে একদম চেনাই যাচ্ছে। পরে দেখি না স্টেজে বসা মেয়েটা রিমঝিম আপু আর নিচে দাড়িয়ে স্টাইল করে ছবি তোলার মেয়েটা বড় ভাবি।

তারপরে আমি বিরক্ত মুখে ওই ভাবি টার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। ব‌উ এর থেকে বেশি সাঁজার কি দরকার? মনে হচ্ছে আজ উনার বিয়ে। আজকে তো বউ সাজবে সবচেয়ে বেশি সুন্দর করে। সবাই থেকে স্পেশাল হবে তার সাজ। আর এই মহিলাটা কিনা একদম নতুন বউ সেজে বসে আছে।
ফিরানির সবাই চলে গেছে শুধু দুইটা গাড়ি আছে সেখানে রিমা আমাকে আর তুলিকে রেখে দিয়েছে রিমঝিম আপুর সাথে আমরা যাব বলে।তাই আমাদের রাতেই যেতে হলো। বেশি রাত করতে দিল না কারণ আপুর সাথে অনেক গহনা আছে। আমাদের আগে বেরিয়ে পরাটাই ভালো রাস্তায় আবার ডাকাতের কবলে পড়ার চান্স থাকতে পারে। সাড়ে আটটার বের হতে হল তবুও।

এই সারাটা সময় শাহিন আমার পিছনে ঘুরঘুর করেছে।আমি পাত্তা দেইনি নিজের মত ঘোরাফেরা করেছি। পাশে ট্রেন রাস্তায় গেছিলাম তখন শাহিন কথা বলতে আসে। আমি বিরক্তি হলেও হাসিমুখেই তার সাথে কথা বলার মনস্থির করি।একদিনই তো কাল বাদে আর এর সাথে দেখা হবে না তাই একদিনে খারাপ ব্যবহার করতে মন চায়নি আমার।শাহিন হাসিমুখে এগিয়ে এসে আমাকে কি যেন বলতে যাবে তখন কোথা থেকে ইহান চলে আসে আর শাহিনের কাঁধে নিজের হাত রেখে ফিস ফিস করে কি যেন বলে উলটো ঘুরে যায়। দেখতে পেলাম শাহিন নের মুখেও হাসি সেই হাসিটা কেন জানি আমার লোকদেখানো মনে হলো। দুজনে কথা বলতে বলতে উল্টো দিকে ঘুরে সামনে এগিয়ে গেল আমি হা করে তাকিয়ে রইলাম দুজনের দিকে। এদের আবার এত সব ভালো সম্পর্ক কখন তৈরি হলো। একদম কাঁধে হাত রেখে হেসে হেসে কথা বলছে।

‘ এই ঊষা ওইভাবে কি দেখছিস?’
‘ কিছুনা।’
‘ ওইটা তোর শাহিন না?’ হাত উঁচু করে দূরের শাহিন আর ইহানকে দেখিয়ে বলে তুলি।
ওর কথা শুনে আমি রেগে বলি, ‘ আমার শাহিন মানে কি? একদম আলতো ফালতু কথা বলবি না।’
‘ ওকে রাগিস না। কিন্তু ওই ছেলের সাথে ইহান কি করে?’
‘ কি ভাবে বলবো?’
‘ হুম তাও কথা চল সবাই চলে যাচ্ছে।’
আমরা সবাই ফিরে আসি।
রিমঝিম আপুদের কারে আমরা বসলাম না। অন্যটায় বসলাম। ইহান ও আমাদের কারে সে ড্রাইভিং করছে। পাশে রিমঝিম আপুর শশুর বাড়ির লোক। যারা ভাইয়ার সাথে যাচ্ছে। পেছনে আমরা তিন বান্ধবী। আমি কিনারে মাঝখানে তুলি।

এই বাসায় আসার পর রান্না ঘরে উঁকি ঝুঁকি মারছি নতুন বরের জন্য পিঠা তৈরি হচ্ছে। আর আমার পিঠা খুব পছন্দ। রিমা সেটা জানে তাই তো বান্ধবী টা সবার আগে রান্না ঘরে থেকে লুকিয়ে পিঠা এনে দিলো। আমি লাফিয়ে খেতে লাগলাম।
‘লুকিয়ে খা। কেউ দেখলে বকবে। নতুন জামাইয়ের আগে তোকে পিঠা দিছি কিন্তু। বলেই রিমা চলে‌ গেলো।
রুমে এসে বিছানায় পা তুলে খাচ্ছি। হঠাৎ চোখ গেলো দরজার দিকে ইহান তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমার মুখে এখনো পিঠা।

আমি গোল গোল চোখ করে তাকিয়ে লজ্জা পেলাম। দেখে ফেললো! আমি মাথা নিচু করে সামনের বাটির দিকে তাকালাম এখনো তিনটা পিঠা আছে আমি দুটা খাইছি। ছিঃ কি লজ্জা!
আমি আবার ও মাথা উঁচু করতে তাকাতেই ইহান বললো, ‘ চোর,’
আমি লজ্জা ভুলে গেলাম। তার বলায় রাগ উঠে
গেলো। চাপা রাগ নিয়ে বললাম, ‘ কি বললেন?’
‘ পিঠা চোর’ নির্লিপ্ত ভাবে বললো।
লজ্জায় অপমানে আমার মুখ লাল হয়ে উঠলো। বললাম,’ আপনি আমাকে চোর বললেন?’
‘ চুরি করে পিঠা খাচ্ছ? তো চোর বলবো না তো কি বলবো?’

আমি বিছানায় থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পরলাম। ইহানের সামনে দরজার কাছে এসে দাঁড়িয়ে বললাম, ‘খবরদার আমাকে চোর বলবেন না! আমি চোর না এই পিঠা আমাকে রিমা দিয়েছে।’
‘ তো কি তুমি করো নি তো রিমা করেছে। সেই চুরি করা পিঠা এই তো হলো তাই না? না হলে তো আর রুমে লুকিয়ে বসে খেতে না! তুমি এত পিঠাখুর জানা ছিলো না তো। বাবাহ কেমন রাক্ষসীর মতো খাচ্ছিলে দম ও নিচ্ছিলে না…..
‘কি বললেন আমি রাক্ষসী?’ রাগে গজগজ করতে করতে বললাম আমি। সামান্য কয়টা পিঠার জন্য আমাকে রাক্ষসী বানিয়ে দিল কত বড় খচ্চর এই লোকটা।

‘ যেভাবে খাচ্ছিলে যে কেউ রাক্ষসী বলবে। আরেকটা কথা এইভাবে যদি অন্য খাবারগুলো খেতে তাহলে শরীরের এই হাল হতো না নাদুসনুদুস থাকতে শুটকি থাকতে না।’
‘ আপনি আমাকে আবার শুটকি বললেন? একবার চোর , একবার রাক্ষসী, এবার শুটকি বলছেন। নিজে কি তা দেখছেন একবার আয়না? আপনি একটা, হনুমান, গন্ডার, ইদুর, টিকটিকি, বিড়াল, খাটাশ…..
‘চুপপপ

ঠোঁটের উপর ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠলাম। ইহান আমার একদম কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। ডান হাতটা আমার ঠোঁটের উপর রেখে চুপ করিয়ে দিয়েছে।‌ইহানের স্পর্শ আমার সারা শরীর কেঁপে উঠলো। আমি ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম হাত। আর একপা পিছিয়ে এলাম।আমার হৃদস্পন্দন বেড়ে গেছে। ঢকঢক করে শব্দ হচ্ছে। আমি আরেক পা পেছতে গিয়ে ধপ করে পরে যায় মুখ থুবড়ে।

আমি থুতনিতে ব্যাথা পেয়ে আহ করে উঠে বসলাম। ইহান দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি মাথা উঁচু করে তাকালাম আরো একবার লজ্জা পেলাম। ইহান হো হো করে হেসে উঠলো। আমি লজ্জা পেয়ে উঠার চেষ্টা করেও পারছিনা কি বিরক্তকর একটা অবস্থা। লজ্জায় আমার মাথা কাটা। এইভাবে ওনার সামনে আমি পরে গেলাম ছিঃ। আবার কেমন আমাকে লজ্জা দিয়ে হাসছে। লজ্জায় আরো কুঁকড়ে গেলাম।‌হাঁটুতে ব্যথা পাওয়ার জন্য উঠতে পারছি না। ইহান এটা লক্ষ্য করেছে আমি ভাবছি হয়তো বা আমাকে সাহায্য করবে উঠতে। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে ইহান হাসতে হাসতে চলে গেলো। আমি হা করে তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলাম।

তুলি এসে বললো,’এই তুই এইভাবে ফ্লোরে বসে আছিস কেন?’
‘আমাকে টেনে তোল প্লিজ আমি উঠতে পারছিনা!’
‘কেন কি হয়েছে? উঠতে পারছিস না কেন?’
‘তোর পাল্টা প্রশ্ন করা একটা স্বভাব হয়ে গেছেরে তুলি। আমি কি এখানে শখ করে বসে আছি!একা উঠতে পড়তে পারলে নিশ্চয় ফ্লোরে বসে থাকতাম না।’
‘হ্যাঁ তাও ঠিক!’

‘বোন দয়াকরে তুই ঠিক ভুল পরে বিচার করিস আমাকে আগে টেনে তোল।’
তুলির সাহায্যে বিছানায় উঠে বসলাম। তারপর ওকে সব বললাম ও শুনে হাসতে হাসতে শেষ। আমি পড়ে গিয়ে ব্যথা পেয়েছি সেটা শুনে ওর হাসি পাচ্ছে কি অদ্ভুত মেয়ে রে বাবা।
আমার আর পিঠা খাওয়া হলো না। বাকি পিঠা তুলি গল্পের ছলে শেষ করে ফেলল। আমি রেগে বিরবির করে বললাম,
‘আমার পিঠাগুলো তুই শেষ করে ফেললি। রাক্ষসী তো তুই আমার থেকে ও। আর উনা কি না আমাকে রাক্ষসী বলে গেলো।’

তুলি বললো, ‘কি বললি তুই?’
‘কিছু না!’
‘এই তুই সবকিছুতে খালি কিছু না বলিস কেন রে?’
‘কিছু না!’
‘ ধ্যাত’
বলেই তুলি বিরক্ত নিয়ে চলে গেলো। ব্যথা পা নিয়ে এই উঠে দাঁড়ালাম। ওইভাবে পা ঝাড়তে লাগলাম। অতটাও ব্যথা না হাঁটতে পারব। আমি আরো ঝাড়তে লাগলাম মনে হচ্ছে ঝারতে ঝারতেই ঠিক করে ফেলব পা আহা কি বুদ্ধি আমার। খুরাতে খুরাতে রুম থেকে বেরিয়ে এলাম।

রিমা দের বাসা থেকে চলে এসেছি এক সপ্তাহ হলো। ফিরানির পর দিনই চলে এসেছি। সবাই অবশ্য আরো থাকতে বলেছিলো কিন্তু থাকি নি। এদিকে আব্বা আম্মুকে ছাড়া এতদিন আমি কখনো কোথাও গিয়ে থাকিনা। তবুও অনেক দিন থাকা হয়েছে জোর করেই চলে এসেছি। বাসায় এসে কেমন জানি খালি খালি লাগে। বিয়ে বাড়িতে এত লোকজন ছিল যে একাকীত্বটা বুঝতেই পারিনি। আম্মু নিজের কাজ কাজ নিয়ে থাকে। আর আমি একা থাকি নিজের মতো। তার মধ্যে আবার স্কুল অফ ছিল সেই দিন তো আমার আরো বেশি বোরিং লেগেছে।

একদিন স্কুলে গিয়ে আমি চমকে গেলাম। কারণ শাহিন হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে। এই ছেলে আমাদের স্কুলে কি করে? আমি রিমার হাতে ধাক্কা মেরে বললাম। ও নিজেও শাহিনকে আমাদের স্কুলে দেখে অবাক।
আমি নখ কামড়াচ্ছি চিন্তায়। এই ছেলে স্কুল পর্যন্ত চলে এসেছে।এটাকে যে আমি ভুল ফোন নাম্বার দিয়েছিলাম। এখন ও কি নাম্বার বন্ধ। আমার খোঁজ করতে করতে কি এখানছ চলে এসেছে। হায় আল্লাহ কি হবে!
আজকে তুলিও নাই। আর ওইসব কিছুই রিমা জানে না।

‘কিরে দাঁড়িয়ে পড়লি কেন? চল! গিয়ে কথা বলি উনি এখানে কি করছে?’
‘না তুই যা আমার না একটা দরকার আছে! ওই ছেলে আমার কথা জিজ্ঞেস করলে বলবি আমি স্কুলে আসি নাই।’
বলেই আমি পেছনে হাঁটা দিলাম।
‘ এই ঊষা কই যাচ্ছিস? স্কুল ছুটি আবার স্কুলে ঢুকিছ কেন?’ গলা উঁচিয়ে বললো রিমা।
আমি কিছু বললাম না। এই ছেলে এখান থেকে যাওয়া না পর্যন্ত আমি স্কুল থেকে বের হবো না।
রিমা বোকা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে চলে গেলো।

আমি আরও আধা ঘন্টা পর বের হলাম। বাইরে এসে দেখলাম শাহিন বা রিমা এবং স্কুলের সমস্ত স্টুডেন্ট চলে গেছে দুই একজন বাদে। যারা স্কুলে প্রাইভেট পড়ে তারা শুধু রয়ে গেছে। আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বাইরে চলে এলাম।
রাতে ব‌ই খুলে হা করে তাকিয়ে পরছি। শব্দ বিহীন তাই আম্মু কয়েকবার উঁকি মেরে গেছে। আবার যদি না পরে থাকি তাই। এজন্য আম্মু আমাকে শব্দ করে পরতে বলে কিছু আমি পারিনা। গুনগুনিয়ে পরা আমার অভ্যাস।
ডিনার করে একটু টিভির সামনে বসলাম। ভাল্লাগে না তাই রুমে এসে শুয়ে পরতে ফোন বেজে উঠল। আমি ছিটকে উঠে বসলাম। ভয় পেয়ে গেছি। সারাদিন আজ আমাকে ওই শাহিন ছেলেটাকে নিয়ে ভাবতে হয়েছে। ফোনের শব্দ পাওয়া মাত্র মনে হচ্ছে ওই শাহিন আমাকে কল করেছে। তারপর নিজের মাথায় গাট্টি মেরে বললাম,

‘ ধুর আমার নাম্বার ক‌ই থেকে পাবে ওই ছেলে। আমি একটু বেশিই ভয় পায়।’
ভেবে ফোন হাতে নিয়ে দেখি‌ স্ক্রিনের উপর জ্বল জ্বল করছে ‘ ইহান ‘ নামটা। আমি ভ্রু কুঁচকে ফোন কানে নিলাম। এই লোকটা আবার কল করেছে কেন?
‘ হ্যালো, আসসালামু আলাইকুম!’
‘ ওয়ালাইকুম আসসালাম।
‘ আপনি হঠাৎ করে ফোন করেছেন কেন?’ অবাক হয়ে জানতে চাইলাম।
ইহান একটা কথা বলেই কল কেটে দিলো আমি হাঁ করে ফোনের দিকে তাকিয়ে র‌ইলাম।সাথে সাথে নিজের পায়ের দিকে তাকালাম। এক পায়ে নূপুর আছে অন্য পা খালি। এতো দিন হয়ে গেছে আর আমি এটা লক্ষ্য ও করিনি। আসলেই আমি…

সাথে সাথে কল করলাম আবার ইহানকে কিন্তু বিজি দেখাচ্ছে।
নূপুর জোরা আমার খুব প্রিয়। সেটা হারিয়ে ফেললাম আর নিজে টের ও পেলাম না। এতো টা অন্য মনস্ক আমি। আম্মু দেখলে আমাকে কি যে করবে। আল্লাহ জানে।
ইহানের নাম্বারে আরো অনেক বার কল করলাম কিন্তু শুধু বিজি দেখাচ্ছে। এতো কার সাথে কথা বলছে? নিশ্চয়ই গার্লফ্রেন্ড। ধুর বিরক্ত হয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। বারোটার দিকে ফোনের রিংটোন এ জেগে উঠলাম আর ঘুম ঘুম চোখে দেখলাম বারোটা বাজে এই সময় আবার কে কল দিলো। ফোন কানে দিতেই ওপাশ থেকেই ইহান এর কন্ঠ শুনে ধপ করে বিছানায় উঠে বসলাম।

‘এত তাড়াতাড়ি অধৈর্য হয়ে ঘুমিয়ে পড়লে?’
‘আপনি এত রাতে আবার কল করেছেন কেন? তখনতো মুখের উপর কল কেটে দিলেন!’
‘তুমি এত বার কল দিয়ে আমাকে ডিস্টার্ব করলে আর আমি কল দিতে পারব না!’
‘ডিস্টার্ব কোথায় করলাম আপনার ফোনে তো। ঢুকেই নি ফোন!’
‘এই শুনো মাঝরাতে ফোন দিয়ে তোমার সাথে আমি প্রেম করবো না ওকে। তোমার জিনিস টা কি চাও নাকি না।’
‘ চাইবো না কেন আমার জিনিস আমাকে দিয়ে দিন‌। কাল কখন দিবেন বলুন।’

‘ কাল দিবো বলেছি কি?’
‘ বলেন নি বলুন এখন!’
‘সরি তা সম্ভব না।’
‘ কেন কেন আমার জিনিস আমাকে দেবেন না কেন? এটা কেমন ফাজলামি?’
‘ তোমাকে আমার একটা হেল্প করতে হবে তবেই পাবে!’
‘ মানে কিসের হেল্প? কি সব বলছেন আমি আপনাকে কিভাবে হেল্প করবো?’
‘ তুমি পারবে বলেই বলেছি না হলে তো বলতাম না!’
‘ আমি কোন হেল্প করতে পারবো না। আমার জিনিস চুপচাপ কাল দিয়ে দিবেন।’
‘ তাহলে আর এটা কখনো পাচ্ছ না। বাই গুড নাইট‌‌
‘ আরে পাগল নাকি শুনুন আপনি কিন্তু….

কল কেটে গেলো। রাগে আমার শরীর কাঁপছে। এইভাবে আমাকে ঝামেলায় ফেলছে লোকটা। লাগবে না আমার এই নূপুর থাকগা।
আম্মুর ডাকে চোখ কচলে তাকালাম। উঠে বসে আড়মোড় ভাঙলাম। বাথরুমে থেকে ফ্রেশ হয়ে বাইরে এসে দাঁড়ালাম। আম্মুর রান্না শেষ তিনি আমাকে রেডি হয়ে খেতে আসতে বললো। আমি আবার রুমে আসতে যাব তখন আম্মু আমার হাত টেনে সেলোয়ার উপরে তুলে পায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘এই তোর আরেক পা খালি কেন?’
আমি আঁতকে উঠলাম। ঢোক গিললাম। এখন কি হবে! সেই ধরা পরে গেলাম।
‘ কিরে কথা বলছিস না কেন?’
‘ আম্মু ওই আসলে..

‘ এটাও আবার হারিয়ে ফেলেছি তাইনা জানতাম এমন হবে। একটু নিজের জিনিস আগলে রাখতে পারিস না।
আম্মু অনেক কথা বলছে আমি ভয়ে বলে বসলাম,
‘ আমি এটা হারায়নি। এটার আরেকটা তো তুলির কাছে দুজনে মজা করে এক রকম নূপুর পায়ে দিয়েছিলাম কাল স্কুলে। আসার আগে নিয়ে নেবো ভেবেছিলাম কিন্তু মনে নাই।’
আম্মু দম নিলো।

‘ সত্যি?’
‘ হুম বিশ্বাস না হলে ওকে কল করে জেনে নাও।’
বলেই জ্বিভা দিয়ে ঠোট ভিজিয়ে নিলাম। ঠ্যাহা মিথ্যা কথা বললাম কাল তো তুলি স্কুল এই আসে নাই।
আম্মু কল করলেও ধরা পরে যাব। মনে মনে আল্লাহকে স্মরণ করছি যেন এ যাত্রায় বেঁচে যাই। ইহানের কথায় রাজি হয়ে নূপুর ফিরিয়ে আনতে হবে।
আম্মু সন্দেহ চোখে তাকিয়ে দেখে কি যেন ভাবলো তারপর চলে‌গেলো আমি হাফ ছেড়ে বাঁচলাম যেন তাঁরা তারি রুমে এসে তুলিকে কল করে সব জানালাম। আম্মু কল করলে যেন স্বীকার করে সেটা ও বলে দিলাম। ও অনেকে কথা জিজ্ঞেস করছে আমি এসে জানাবো বললাম।

স্কুলে আসতেই তুলি আমার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে মারল, ‘এই সকালে এসব কি বললি রে! তোর নুপুর আমার কাছে! কি সব বললি আবার আন্টি আমাকে সত্যিই ফোন করেছিল।’
‘জানতাম ফোন করবে! আমি তো মিথ্যে গুছিয়ে বলতে পারিনা। আমাকে সন্দেহ করেছে তার চোখমুখ দেখে বুঝেছি। সময় মতো তোকে ফোন করে না জানালে আমি আজ ধরা পড়তাম।প্রথমেই সত্যিটা বললে অবশ্য আম্মু বেশি বকা দিতো না

কিন্তু মিথ্যা বললাম কেন তার জন্য আমাকে অনেক কথা জিজ্ঞেস করত। ‘
‘মিথ্যে কেন বলবি তো নূপুর কি হয়েছে?’
‘ আমার নুপুর রিমা বাড়িদের হারিয়ে ফেলেছি!’
‘কি বললি নাতো আর তোর সেটা এতদিন পর মনে হলো?’
‘আর বলিস না আমি নিজেই তো জানিনা! আমি নিজেই নিজের পা খেয়াল করিনি।এর আগেও একবার এক মাস পর জানতে পেরেছিলাম আমার পায়েল হারিয়ে গেছে অথচ আমি বুঝতেই পারিনাই আমার পায়ে একমাস যাবত পায়েল নাই।’

‘তুই যে কি না?একটা জিনিস হারিয়ে গেল শরীর থেকে আর তুই সেটা ধরতেও পারিস না মাথামোটা একটা।’
‘ধুর বকিস না!’
‘আচ্ছা এখন আন্টিকে তো মিথ্যা বললি তুই নুপুর টা খুঁজে পাবি কোথায়?’
‘খুজে পেয়েছি!’
‘কই সেটা?’
‘আমার কাছে নাই সেটা ওই ইহান ছেলেটার কাছে!’
‘ইহান ওইযে রিমার খালাতো ভাই?’
‘হ্যাঁ ওনার কাছে!’
‘ঐটা ওনার কাছে গেল কিভাবে?’

‘আমি কিভাবে জানবো উনি কালকে ফোন করে জানালেন। নুপুর টা তার কাছে আছে! আরো কত কথা যে বলে সে জানিস না তো।
‘আর কি বলেছে? আর ওনার কাছে আছে যেহেতু ওনাকে ফোন করে ডেকে ফেরত নিয়ে নে। তাহলেই তো ঝামেলা চুকে যায়।’
‘সেটাইতো করেছিলাম। কিন্তু উনি আবার আমাকে শর্ত দিয়েছেন উনাকে হেল্প না করলে নাকি আমাকে নুপুর ফেরত দেবে না। কি ঝামেলা বলতো ? আমি কিভাবে কীসের হেল্প করব উনাকে?

আরেকটা ঝামেলা হয়েছে আম্মুকে কেন যে বললাম ওটা তোর কাছে দিয়েছি! সত্যিটা বলে দিলে ভালো হতো। এখন সত্যি বললে তো আমাকে চেপে ধরবে আমি মিথ্যা কেন বললাম তখন?
এবার নিজের জালেই নিজে ফেঁসে গেছি। আর আমার জিনিস ওনার কাছে রাখবোই বা কেন? নিজের জিনিস নিতেও তার শর্ত মানতে হবে কতো খচ্চর ভাব একবার!’
‘ আচ্ছা শুন তুই ফোন করে জিজ্ঞেস কর কি হেল্প করতে হবে। আমার মনে হয় না কঠিন কিছু হবে তোকে দিয়ে আর কি কাজি বা করাবে। হেল্প করে নিজের জিনিস নিজের কাছে নিয়ে নে।’
‘ হুম। ‘

রিকশায় ইহানের সাথে বসে আছি। রাগে আমার শরীর কাঁপছে। ঘাড় ঘুরিয়ে ইহানের দিকে তাকালাম ইহানের কোন হেলদোল নাই। ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ফোন টিপে যাচ্ছে। আমি চোখ সরিয়ে নিলাম। আমার এখন কি করা উচিত! মন চাচ্ছে এখান থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় এই বদমাইশ টাকে। পেটে পেটে এই ছিল। কিছু আগে ওনার সাথে দেখা এসেছিলাম।

‘ এইযে মিস্টার আমার জিনিস আমাকে ফেরত দিন।’
‘ তোমার তো এই জিনিসটার কথা মনে ছিল না। আমি না বললে বোধহয় মনে পড়তো না। এক সপ্তাহ তো তোমাকে জিনিসটা খুঁজতে দেখি নি। মানুষ কিছু হারালে তো 2 সেকেন্ড পর থেকেই পাগল হয়ে যায় খোঁজে। আর তুমি এই সপ্তাহে কিছুই করনি। ভেরি ইন্টারেস্টিং।এইটা যে তোমার কাছে খুব একটা মূল্যবান না আমি বুঝে গেছি। তাই আমি ভেবে নিয়েছি তোমার দ্বারা আমার কাজ হবে না।’
‘দেখুন আজেবাজে কথা বাদ দিয়ে আমার জিনিস ফেরত দিন। এটা আমার কাছে মূল্যবান নাকি না সেটা আমি বুঝে নেব এখন এই জিনিসটা আমার দরকার।’

‘তোমার কাছে এটা এতোটা ও মূল্যবান না তাই আমি ভাবছি এটা তোমাকে দেবো না তাইতো আমি জিনিসটা নিয়ে বের হয়নি।’
‘ কিহহহ চিৎকার করে উঠলাম। পাগল নাকি আপনি।আমার জিনিস আমি নিতে চাইবো না এটা কেমন কথা।আর যদি নিতে নয় চাই এটা যদি আমার কাছে এতটাই ফেলনা হয় তাহলে আমি আপনার সাথে দেখা করতে আসলাম কেন?’
‘আমি তোমাকে যা বলিস তাতে কি তুমি রাজি আছো? রাজি না হলে ও আমার সমস্যা নাই। তোমার জিনিস তোমাকে দেবো না আর আমার কাজের লোক আমি পেয়ে গেছি। তাই তোমাকে আমার এখন লাগবে না। আমি এটা জানানোর জন্যই এসেছি।’

রাগে আমি সামনের কফির কাপটা ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে বললাম, ‘আপনি কিন্তু এখন বেশি বেশি করছেন। আমি কালকে ওসবে রিয়েক্ট করেছিলাম। কিন্তু আমি আপনার শর্তে রাজি আছি সেটা বলার জন্য এসেছি। আর নূপুর নিতে এসেছি। আর এখন বলছেন সেটা আপনি আমায় দিবেন না। আর অন্য লোক পেয়ে গেছেন কাজের জন্য। এটা কিন্তু আমার সাথে অন্যায় করছেন! একই আমার জিনিস ফিরিয়ে দিতে আপনার কোন শর্ত দেওয়া উচিত হয়নি। তার উপর এখন বলছেন দিবেন না। আগে বলতেন তাহলে তো আর আমি আম্মুকে বলতাম না যে আমি নূপুর তুলিকে দিয়েছে আর তাঁরা তারি নিয়ে আসবো। এখন এটা আমি না নিলে আম্মু আমাকে কতো কথা শুনবে জানেন? একেতে টা হারিয়ে ফেলেছি তারপর আবার আমমুকে আমি মিথ্যে বলেছি।’

রেস্টুরেন্টে এর সবাই তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি উত্তেজিত হয়ে এতগুলো কথা বললাম তখন খেয়াল করে নিয়ে এসব। এখন সবাইকে নিজের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে লজ্জা পেলাম খুব। একজন এসে তো ইহান কে বলে বসলো,
‘ ভাই আপনার গার্লফ্রেন্ড তো খুব রাগী। দুজনের ঝগড়া হয়েছে তাই না? আমার গার্লফ্রেন্ড ও খুব রাগী। রাগ উঠলে এমন জিনিস ছুড়াছুরি করে আমাকে মারে অব্দি। আপনার গার্লফ্রেন্ড তো শুধু জিনিসের উপর রাগ দেখালো। আপনাকে মারল না আমার গার্লফ্রেন্ডের থেকে তাও ভালো আছে.

ছেলেটার কথা শুনে আমি আর ইহান দুজনেই অবাক হয়ে নিজেদের দিকে তাকালাম। আমি ছেলেটাকে পাগল বলছি মনে মনে। অসভ্য ছেলে কি যা তা বলছে। আমি নাকি ওনার গার্লফ্রেন্ড পাগল নাকি। যতসব ফালতু কথা।
আমি গলা উঁচিয়ে বললাম, ‘আপনি কী বলছেন এসব! আপনি জানেন আমাদের সম্পর্কে? কি যা তা বলছেন এসব কিছু..
ইহান ফট করেই আমার হাত ধরে টেনে রেস্টুরেন্টে এর বাইরে নিয়ে এলো। আমি হাত ছাড়িয়ে বললাম, ‘কি হলো এমন করে টেনে আনলেন কেন?’

‘ আর ইউ ম্যাড? কি করছিলে তুমি সবাই কেমন করে তাকিয়ে ছিলো দেখেছো?’
‘ আপনি আমার জিনিস দিবেন কিনা বলেন নাহলে আমি আরো সিনক্রিয়েট করব।’
‘ ওকে বাবা দেবো। আরে তোমার জিনিস আমি নিয়ে কি করবো বলতো। আমি কি মেয়ে যে তোমার জিনিস পরে ঘুরে বেড়াবো। আমি জাস্ট মজা করেছিলাম। কিন্তু এসব করার জন্য এখন তুমি নূপুর পাবে না আমার কাজটা করার পর‌ই পাবে।’
‘ অসম্ভব আমি কিছু করবো না।’
‘ তাহলে বাসায় চলে যাও গুড বাই।

বলেই ইহান চলে যায়। আমি কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। একটু পর ইহান রিকশা নিয়ে আসে। আর আমার পাশে থামায় আমি ইহানের দিকে তাকায়। তারপর কিছু না বলেই উঠে বসে। তারপর থেকেই এইভাবে বসে আছি‌।
বাসার সামনে আসতেই নেমে যায়। ইহান একবার ও আমার দিকে তাকালো না আর না কথা বললো। রিকশা চলে যাবে তখন আমি চেঁচিয়ে উঠলাম,
‘ দাঁড়ান।’
রিকশা ছেড়ে দিয়েছিলো। আমি দৌড়ে গেলাম। ইহান এবার আমার দিকে তাকালো ভ্রু কুঁচকে।
আমি বললাম, ‘ কালকে আমার নূপুর নিয়ে আসবেন।’
‘ কেন?’

‘ আমি রাজি। কিন্তু বাবাকে রাজি করাবো কিভাবে বুঝতে পারছি না।’
‘ সেটা তোমার মাথা ব্যাথা আমার না।’
‘ এতো ত্যারা কথা বলেন কেন? রাজি তো হয়েছি। আব্বু কেও রাজী করাবো নি। কিন্তু নূপুর কালকেই চাই।’
‘ ট্রিপে থেকে এসে পাবে সব।’
‘ না আমার কালকেই চাই। আমি রাজি তাও কেন দেবেন না?’
‘ পরে পাল্টি খাবে না তার কি গ্যারান্টি?’
‘ আপনি আমাকে সন্দেহ করছেন? আমি ওমন না ওকে। আমি কথা দিলে তা রাখি‌’
‘ ওকে আমাকে ছুঁয়ে প্রমিজ করো?’
বলেই ইহান হাত বাড়িয়ে দিলো।
রাগে দুঃখে হাত ছুঁয়ে বললাম। প্রমিজ।

তারপর গটগট করে বাসায় চলে এলাম। পরদিন ইহান কলেজে এলো তখন আমরা ক্লাসে ছিলাম। আমাদের ইংরেজি ক্লাস হচ্ছিলো। তখন ইহান ও ওর সাথে আরো দুজন ছেলে ও হেডমাস্টার এলো।আমরা সবাই দাঁড়িয়ে গেলাম।
হেডমাস্টার যা বললো শুনে চমকে উঠলাম। আমাদের শিক্ষাসফরে নিবে। যারা যেতে চায় এই সপ্তাহে নাম দিতে হবে। তুলি তো লাফিয়ে উঠলো ক্লাস শেষ হতেই,

এক চিলতে রোদ সিজন ২ পর্ব ৬+৭+৮+৯+১০

‘আমি তো যাবোইইই। ঊষা ইহান ভাইয়ের কতো বুদ্ধি দেখছিস? তোকে টেনশনে রেখে এখন যাওয়ার জন্য বাড়িতে রাজি করানোর সঠিক চাল দিলো। আমার তো মন খারাপ হয়েছিলো তুই একা যাবি আমি যেতে পারবো না।আমি বেড়াতে কতো পছন্দ করি জানিস তো। এমন একটা সারপ্রাইজ ভাবা যায়।’
আমি হাঁ করে বসে আছি। ইহানের উপর আমার রাগ আকাশ সমান ছিলো। তার উপর মাথার উপর টেনশন বাবাকে কিভাবে রাজি করবো সাজেক যেতে। এখন তো রাজি করানো সহজ হবে স্কুলে থেকে যাচ্ছি জানলে খুব একটা রিয়েক্ট করবেনা।বাঁচা গেলো।

কিছু একটা মনে পরতেই আমি দৌড়ে ক্লাস থেকে বেরিয়ে এলাম। তারাতাড়ি সিঁড়ি বেয়ে নামছি। সারা স্কুল ইহানকে খুঁজলাম পেলাম না।উপরে এসে গেটের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ইহানরা চলে যাচ্ছে। আমি রাগী চোখে তাকিয়ে র‌ইলাম। বাসায় এসে কল করেও কাজ হলো না।ইহান মেসেজ এ বলেছে ট্রিপে থেকে আসার আগে দেবে না। রাগে দুঃখে কান্না পাচ্ছে এখন আমার। গন্ডার একটা। আব্বুকে খুব সহজেই রাজি করতে পারলাম। স্কুল থেকে যাবে তাই ঝামেলা হয় নি। সামনে সপ্তাহে যেতে হবে তার আগে তুলি আমাকে নিয়ে মার্কেটে এলো। কিছু কেনাকাটা করবে আসবো না তাও জোর করে ধরে এনেছে আমাকে।

আজকে ও অনেক সময় নিয়ে শপিং করলো তুলি। আজকে কেনাকাটা ভালোই করলো সব কিছুই ঘুরতে যাওয়ার জন্য। আমাদের তিনদিনের ট্রিপ।
আমাকে তুলি কিনবো কিনা জিজ্ঞেস করলো আমি না বলে দিলাম। আম্মুর সাথে আমি কয়েকদিন আগেও শপিং করেছি। আমার একা করতে ভালো লাগে না।
কেটে গেলো পাঁচ দিন। আজ সেই যাওয়ার দিন তুলি সাতসকালে চলে এসেছে বাড়িতে। দুজনে একসাথে বের হলাম বাসায় থেকে।

এক চিলতে রোদ সিজন ২ পর্ব ১৬+১৭+১৮+১৯+২০