এক চিলতে রোদ সিজন ২ পর্ব ৬+৭+৮+৯+১০

এক চিলতে রোদ সিজন ২ পর্ব ৬+৭+৮+৯+১০
Writer Nondini Nila

বাসায় এসে মায়ের কাছে বকুনি খেতে হলো। তিনি আবার এসব কি করে জানলো আমার মাথায় ঢুকছে না। পরে জানতে পারলাম। পাশের বাসার রিতা আন্টি নাকি দেখেছে আমাকে রাস্তার মাঝখানে দাড়িয়ে থাকতে। তিনি বোনের বাড়িতে থেকে আসছিলো তখন দেখছে। এসেই মায়ের কাছে বলেছে। তখন থেকে আম্মু আমার চিন্তায় অস্থির হয়ে আছে। আমি আম্মুকে কোন ভাবে শান্ত করে রুমে আসলাম। ব্যাগ রেখে বারান্দায় এসে রিতা আন্টির রুমের দিকে তাকালাম। রিতা আন্টি বারান্দায় বসে বসে কি যেন খাচ্ছে আমাকে দেখেই জিজ্ঞেস করলো আমি ওই ভাবে দাড়িয়ে ছিলাম কেন? উনি আবার সন্দেহ চোখে তাকিয়ে বলেছে।

‘তোর এফেয়ার‌ চলে নাকি রে? বয়ফ্রেন্ড এর সাথে রাগ করে এসব করেছিস নাকি?তোকে একটা ছেলে বাঁচালো সেটা কি বয়ফ্রেন্ড ছিলো নাকি?’
রিতা আন্টির কথায় চোখ গুলো বড় হয়ে গেল। কি সব বলছে? এসব আম্মু- আব্বু কে বললে কি হবে?
এমন কিছু তো না ।
‘ কী সব বলছেন আন্টি। এমন কিছুই না। আপনি আমাকে ভুল বুঝছেন।’
‘ আরে লজ্জা পাই ও না। আমি তোমার মা বাবারে কিছু বলবো না। আমারে বলতে পারো।’
‘ আপনি আমাকে এমন ভাবেন আন্টি।’

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

‘ আরে আমি জানি তুমি খুব নম্র ভদ্র মেয়ে। কিন্তু প্রেম করা তো…..
‘ আন্টি আমার কোন বয়ফ্রেন্ড নাই‌। আর রাস্তায় আমি মরতে যাইনি। আমি রোড ক্রস করছিলাম তখন হঠাৎ বড় গাড়ি দেখে ভয় পেয়ে দাড়িয়ে পরেছিলাম।আমার সাথে আগেও এমন হয়েছে আমি একা রোড পার হতে পারিনা।’
বলেই আর দাঁড়ালাম না। দ্রুত চলে এলাম। রিতা আন্টি খুব একটা সুবিধার না। তিনি এই কথাটা সারা পাড়ায় বলে বেড়াবে। উনার এই গুনটা আছে।

কোথাও কিছু হলেই তা সবার কাছে বলে বলে নিন্দা করতে থাকে। আমাকে কিনা তার নজরেই পরতে হলো।
খাবার টেবিলে এ আব্বু ও কথাটা তুললো। আমি মাথা নিচু করে চুপচাপ খাচ্ছি। আব্বু এতো গুলো উপদেশ দিয়ে দিলো। সাথে কাল থেকে গাড়ি নিয়ে চলাচল করার নির্দেশ দিলো। আমি কিছু বলতে পারলাম না। আব্বু কে আমি খুব ভয় পাই। কারণটা জানি না। আব্বু আমাকে খুব ভালোবাসে তবুও তাকে আমার ভয় লাগে।
এরপর থেকে গাড়ি করেই বাসা থেকে বেরুতে হয়।

গাড়িতে বসে জানালার বাইরে তাকিয়ে আছি। ঘরের দিকে তাকিয়ে আছি। আজকে আগেই বের হয়েছি। তুলি অনেকবার করে বলেছে আজকে আগে যেতে কারনটা বলে নাই।
স্কুলে এসে গাড়ি থেকে নামতেই তুলি আমার হাত ধরে বলল,
‘তোর ড্রাইভার কে বল আজকে চলে যেতে।’
‘কেন?আজকেও কি শপিং করবি নাকি? না বাবা আমি আর তোর সাথে শপিংয়ে যাচ্ছি না!’
‘আরে আজকে কোন শপিং টপিং করব না আজকে আমরা ফ্রেন্ডরা সবাই মিলে বেড়াতে যাব।’
‘আমি কোথাও বেড়াতে যাব না বাড়িতে বলে আসি নাই!’

‘আরে কিছু হবে না সন্ধ্যা লাগেই বাসায় ফেরত যাবো। ঠিক আছে চিন্তা করিস না তো। সবকিছু তেই তোর ভয় কেন এতো। ভীতু কেন তুই এতো? আর কয়দিন পর আমরা কলেজ উঠে যাব। কিছুদিন পর তো সবাই আলাদা হয়ে যাব! কোথায় ভর্তি হব কে জানে? যে কটা দিন আছি সবাই মিলে
আনন্দ করি না। আজকে থেকে মেলা শুরু হচ্ছে আমরা সবাই মেলায় যাব।’
‘ কিসের মেলা? আর কোথায় সেটা? এসময় কোন মেলা আছে আমার তো জানা নাই।’
‘ এই মেলা এবছর থেকেই শুরু হয়েছে। খুব বড় আয়োজন করা হয়েছে। চল প্লিজ।’
এতো অনুরোধ করলে কি আর আমি না করতে পারি।
‘ আচ্ছা। কতোক্ষণ টাইম লাগবে যেতে? আর কলেজ শেষে গিয়ে ফিরে আসতে তো রাত হবে মনে হচ্ছে।’
‘ না আমরা তো টিফিনে চলে যাব। আর রাত হবে না তারাতাড়ি ফিরে আসবো।’
‘ আচ্ছা।’

ড্রাইভার কাকা’কে আসতে মানা করে দিলাম। টিফিনে পিরিয়ডে সবাই বলতে আমরা বারোজন বের হলাম স্কুল থেকে লুকিয়ে। আমার এইভাবে যেতে একদম ভাল্লাগছে না কিন্তু কিছু করার নাই। দুজন ছেলে আছে আর সব মেয়ে। দুই অটো ভাড়া করা হলো। আমাদের অটোতে সব মেয়ে বসলাম। কিছুদূর আসতেই বুঝতে পারলাম আবার আমাকে মিথ্যা বলেছে। আমি কটমট করে তুলির দিকে তাকালাম।
‘ এই তোর আধা ঘন্টা এক ঘন্টা ধরে বসে আছি।’
‘ সরি রে এসব না বললে তো তুই আসতি না তাই। আর একটু খানি রাস্তা।’
‘ আমার বাসায় যেতে রাত হবে বুঝতে পারছিস না আম্মু আব্বু চিন্তা করবে আর আমাকে বকবে।’
‘ ফোন করে বলবি আমার বাসায় গেছিস‌। ‘

‘ তুই আসলেই একটা। আজ প্রতিজ্ঞা করছি আর জীবনে আমি তোদের সাথে কোথাও যাব না।’
তুলি অসহায় মুখে তাকিয়ে র‌ইলো। দেরঘন্টা পর আমরা গন্তব্য এসে পৌঁছালাম।
গাড়িতে থেকে নামতেই মানুষের গিজগিজ লক্ষ্য করলাম। অসম্ভব মানুষ বিকেল বলে আরো বেশি। স্কুল ড্রেস পরা আরো অনেকে আছে। আমাদের কলেজের অনেকেই আছে ওরা ক্লাস না করেই এসেছে। তুলি আমার হাত ধরে নাগরদোলার কাছে নিয়ে এলো এটাতে আমার যে কি পরিমান ভয় লাগে বুঝাতে পারবো না।নিচে নামার সময় আমার হার্ট বের হ‌ওয়ার উপক্রম হয়। কিন্তু তুলি আমাকে জোর করে উঠালো। চারজন করে বসতে হয় সবাই উঠে গেছে আমাদের টায় আমি আর তুলি বসে আছি আর দুজন লাগবে।

‘ আমি নেমে যাই প্লিজ। আমার ভয় করে।’
‘ আমাকে ধরে থাকিস কিছু হবে না। বেশি ভয় লাগলে চোখ বন্ধ করে রাখিস।’
একটু পর কোথা থেকে ইহান এসে বসলো হাসিমুখে। আর আমাদের দিকে তাকালো।
‘ তোমরা এখানে?’
আমি কিছু বলার আগেই তুলি বললো, ‘ আমরা তো স্কুল থেকে এসেছি।
‘ ওহ আচ্ছা। ঊষা কেমন আছো?’
‘ আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি কেমন আছেন?’
‘ ভালো‌ আছি। ওদিনের বিহেভ এর জন্য সরি। আসলে মাথা গরম হয়ে গেছিলো ওসব দেখে।’
আমি আর কিছু বলতে পারলাম না। দুহাতে শক্ত করে তুলির হাত চেপে ধরে আছি চোখ বন্ধ করে।
‘ একটু আস্তে ধর। আমার হাতের মাংস উঠিয়ে নিবি তো সব।’

আমি শুনলাম না ওর কথা। জোর করে ওঠানোর সময় মনে ছিল না। এখন ওনার হাত ছাড়তে হবে। অসম্ভব আমি ছাড়বো না।হঠাৎ নড়াচড়ার শব্দ না পেয়ে চোখ মেলে দেখি আমি উপরে নিচের দিকে তাকিয়ে আমার আত্মা কেঁপে উঠলো। আমি ঢোক গিলে তাকিয়ে আছি সাথে সাথে নিচে নামতো আমার এবার চিৎকার করে কান্না আসছে নিচে নামার সময় আমার এত খারাপ লাগে। আমি কিছুতেই স্বস্তি পাচ্ছি না এবার আমি বাচ্চাদের মত কেঁদে উঠলাম। আমার কান্না দেখে আশেপাশের সবাই ভড়কে গেলো। ইহান ও আমার অবস্থা দেখে ভড়কে গেছে জিজ্ঞেস করছে কী হয়েছে কাঁদছি কেনো?

আমি যে এতটা ভয় পায় তুলিও বুঝতে পারে নাই এবার তুলিও ভয় পেয়ে গেছে আমার অবস্থা দেখে। তুলি ফটাফট সবকিছু বলে দিল ইহানকে। ততক্ষণে দোলনা নিচে চলে এসেছে দোলনা ইহান থামিয়ে দিল। উপরে ওঠার আগে আমাকে ধরে দোলনা থেকে নামিয়ে দিলো। আমি নিচে এসে ও স্বাভাবিক হয়নি। এখনো যেন আমার মাথা ঘুরছে। বুক ধুকপুক করছে। তুলি নামতে যাবে ইহান ওকে থামিয়ে বলে আমি আছি তুলি সম্পন্ন করেই আসো‌।
ইহান আমার এক হাত ধরে চেয়ার টেনে বসলো আর এক বোতল পানি এনে দিলো। আমি ঢকঢক করে পানি খেয়ে স্বাভাবিক হলাম। এবার শত রাজ্যের লজ্জা আমার চারপাশে এসে ঘিরে ধরল। আশেপাশের অনেকে এখনো আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আমার সামনে ইহান চিন্তিত মুখে তাকিয়ে আছে। সবাই কি ভাবছে এত বড় মেয়ে নাগরদোলায় উঠতে পারেনা।ইশ লজ্জায় আমার কান গরম হয়ে আসছে। আমি মাথা নিচু করে ছিলাম। ইহান মৃদু গলায় বললো,

‘এখন বেটার ফিল করছো কিছুটা ঊষা?’
আমি মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম। ইহান স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। ততক্ষণে তুলি দৌড়ে এসেছে। আর এটা ওটা জিজ্ঞেস করছে। এবার মন খারাপ করে বললো,
‘আমাকে ক্ষমা করে দিস ঊষা। আমি জানতাম না তুই যে এতোটা ভয় পাস। এবারের মত ক্ষমা করে দে বোন। আর কখনো কোনো কিছু নিয়ে তোকে জোর করব না। আল্লাহ তোর যদি এখন কিছু হয়ে যেত আমি আঙ্কেল আন্টি কে কি জবাব দিতাম।’

তুলি ও খুব ভয় পেয়েছে ওর মুখ থেকে স্পষ্ট। আমাদের সাথে যারা এসেছিলো ওরা সবাই নিজেদের মতো ঘোরাফেরা করছে আমি আর তুলিই একসাথে কিছুক্ষণ বসে র‌ইলাম। ইহান ও আমাদের সাথেই ছিলো। এই ভয় পাওয়ার পর তুলি আর আমাকে কোথাও নিয়ে গেল না কিন্তু আমাকে একা রেখে কোথাও যেতে পারছে না। ইহান তুলি ডেকে বলল অন্যদের সাথে ঘুরতে আমাকে তার সাথে রাখবে। নাম্বার দিয়ে দিলো যাওয়ার আগে ওদের কাছে পৌঁছে দিবে। আমি বললাম,

‘ আমি এখন ঠিক আছি। আর কিছু হবে না।’
কিন্তু একটা অবাক করা ব্যাপার ঘটলো ইহান জোর করেই আমাকে তার সাথে রাখলো। একটা ছেলের সাথে থাকাটা আমার জন্য খুব অস্বস্তিকর। আমি ধমক খেয়ে চুপ করে আছি। এই নিয়েই ইহান আমাকে দুইবার ধমক দিলো। ঐদিন রাস্তায় ইহান আমাকে সেভ করে। আর এমন একটা ধমক দেয় আমার ভয়ে হৃদপিণ্ড কেঁপে উঠে। আমি কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলি।
উনি বলেছিলেন, ‘আর ইউ ম্যাড? তোমার মাথায় কয়টা স্কু ঢিলা বলতো? এইভাবে কেউ রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে থাকে। চোখে দেখো না?কানে শোনো না? সামনে এতোবড় একটা গাড়ি আসছে দেখে সরার চেষ্টা করলে না। শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছো। পাগল নাকি তুমি? আশেপাশের কত মানুষই তোমাকে সরতে বলছে সেসব তোমার কানে যায়নি ইডিয়েট গার্ল!’

আরো কত কথা যে বলে সে বলে বুঝাতে পারব না আমি। আমি তার লাল টকটকে চোখ, ও রাগী মুখের দিকে তাকিয়ে চুপসে গেছিলাম কোন কথাই বলতে পারি নাই। কি ভয়ঙ্কর রাগ! আজকে যখন রাগী চোখের একটা ধমক দিলো আমি আর কিছুই বলতে পারলাম না। মেলা ভর্তি গিজগিজ মানুষ উনি আমাকে মেলার একদম পূর্ব প্রান্তে নিয়ে আসলো যেখানে মানুষের আনাগোনা খুবই কম। আমি ওনার পিছুপিছু এসে দাঁড়িয়ে আছি। উনি দাঁড়িয়ে কাকে যেন ফোন দিল তারপর কয়েকটা কথা বলে ফোন কেটে দিলো। তারপর আমার দিকে তাকালো।

‘ আর কিসে কিসে ভয় পাও?’
‘ কিছুতেই না!’
‘ সিরিয়াসলি?’
‘ হুম।’
‘ওকে তাহলে চলো তোমাকে এক জায়গায় নিয়ে যায় পরে ভয় পেলে কিন্তু খবর আছে!’
‘আমি এত ভীত না!’
‘কেমন সাহসী তা তো দেখলামই!’
আমি চুপ করে গেলাম এখন নিজেকে সাহসী বলতে পারবো না। এই লোকটার সামনে কিনা আমাকে বারবার ভীতু প্রমাণ হতে হয়।

‘ না আমি কোথাও যাবেনা।’
‘ কেন? তুমি না বলে খুব সাহসী?’
‘ আমি যাব না বললাম না।’
‘ আবার ভীতু হ‌ওয়ার ভয়। আচ্ছা না গেলে চলো তাহলে কেনাকাটা করি কিছু?’
‘ আমি কিছু কিনবো না।’
‘ কেন? টাকা নাই?’
‘ আপনাকে বলতে হবে নাকি কেনবো না মানে কেনবো না।’
‘ এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবে?’
‘ হুম।’

‘ আমি কিন্তু কেনাকাটা করতে যাবো তুমি চাইলে আমার সাথে আসতে পারো না। হলে তুমি থাকো আমি আবার তোমাকে নিতে আসবে নি।’
ইহান চলে গেল। আমি গাছের সাথে হেলান দিয়ে আছি ফোন বের করে আম্মুকে কল দিলাম। ফোন বের কিছুক্ষণ বকলো তারপর বললো তাড়াতাড়ি যেন ফিরে আসি। ঘড়িতে টাইম দেখে নিলাম চারটা বাজতে পনেরো মিনিট বাকি। সাড়ে চারটার ভেতরে রওনা দিতে হবে। না হলে রাত হয়ে যাবে।
হঠাৎ ও খেয়াল করলাম কিছুটা দূরে তিনটা ছেলে দাড়িয়ে আমার দিকে খারাপ নজরে তাকিয়ে আছে। ভয় পেয়ে আশেপাশে থাকালাম এদিকে বেশি লোক নেই। একা নিজে তাই আরো ভয় পেলাম। তারাতাড়ি দৃষ্টিতে সরিয়ে নিলাম। ইহান আসছে না কেন?

হুট করেই লক্ষ্য করলাম ছেলে গুলো আমার দিকে লোভাতুর দৃষ্টি তাকিয়ে এগিয়ে আসছে। আমি তা দেখে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে গেলাম। এখানে আর একা দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব না। ভয়ে আমি ইহান যে দিক দিয়ে গেছে সেদিকে হাঁটা ধরলাম আর আমি মেলার ভেতরে ঢুকে গেলাম। মেলায় ঢুকেই আমার ভয় একটু কমলো কারণ এখন মানুষের অভাব নাই। এতো মানুষের মধ্যে নিজের ভয় কমলো। কিন্তু হাঁসফাঁস লাগছে নড়া যাচ্ছে না।খালি ধাক্কা খেতে হচ্ছে আমি সবার মাঝেই তুলিকে খুঁজে চলেছি কোথায় আছে ওরা। একবার দেখা পেলে তো স্বস্তি পাবো। ইহান কেও দেখছি না। আমি একটা দোকানে দাঁড়িয়ে উঁকি ঝুঁকি দিয়ে ওদের খুঁজছি। দোকানে অনেক মানুষ ছেলে মেয়ে বয়স্ক সবাই আছে। তারা কেনাকাটা করছে আমি এক পা পিছিয়ে এলাম আমার পাশে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি কানের দুল দেখছে আমি ও তাকালাম। তিনি লাল পাথরে দেখছে কিন্তু আমার তার হাতের নীল পাথরের দুলটা খুব পছন্দ হলো। উনি লাল ঝুমকাটা হাতে নিয়ে বাকিগুলো ফিরিয়ে দিচ্ছিলো। তা দেখে আমি নিলাম হাতে আর দুলটা নিজের কানে দিয়ে দেখতে লাগলাম। খুব পছন্দ হয়েছে ব্যাগ থেকে টাকা দিয়ে আয়নার আবার তাকাতেই চমকে উঠলাম। আমার পেছনে সেই ছেলে তিনজন দাঁড়িয়ে আছে। আর একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

ছেলে গুলো কে দেখেই আমার হাত কাঁপতে লাগলো। আয়না সরিয়ে পেছনে তাকাতেই তারা দাঁত কেলিয়ে হাসলো। আমি ঝুমকা ব্যাগে রেখে সামনে পা বাড়ালাম। বুকে হাত গুজে হাঁটছি। আড়চোখে পেছনে তাকিয়ে দেখছি তারা এখনো আমার পেছনেই আছে। আমি কি করবো বুঝতে পারছি না। ফুলের দোকানের কাছে এসে থামলাম। ছেলেগুলো আমার থেকে কিছুটা দূরে থামলো। আমি ভয়ার্ত চোখে সামনে তাকিয়ে আছি হঠাৎ করেই ইহানকে তিন দোকান সামনের সানগ্লাস এর দোকানে দেখলাম। সাথে তার বন্ধুরা তিনি চিন্তিত হয়ে কিছু বলছে তাদের। আর এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। আচ্ছা উনি কি আমাকে খুঁজছে নাকি! উনার ফ্রেন্ডরা সানগ্লাস কিনছে আর উনি কাউকে খুঁজছে আমি সাথে সাথে চেঁচিয়ে উঠলাম। কিন্তু এতো মানুষ আর চেঁচামেচি এর মধ্যে আমার কথা হয়তো উনার কানে গেলো না। আমার ব্যাগ টেনে ধরেছে কেউ আমি পেছন ঘুরে তাকালাম। একটা ছোট বাবু আমার ব্যাগের পুতুল ধরে টানছে। আমি স্বস্তি পেলাম যেন।‌ভেবেছিলাম ওই খারাপ ছেলেগুলো।

আমি তারাতাড়ি সামনে তাকালাম কিন্তু এখন ইহান সেখানে নেই। আমার মাথায় হাত এবার কোথায় গেলো? এদিকে ভীড়ের মধ্যে আটকে পরেছি আমি বের হতে পারছি না। এবার আমার কান্না পাচ্ছে।‌গলা শুকিয়ে আসছে।‌তুলির জন্য আমাকে আবার বিপদে পরতে হলো। এখন এতো বড় মেলায় ওদের কোথায় পাব। আর কাউকে এখানে খুঁজে পাব না। আমাকে মেলা থেকে বের হতে হবে।
তুলি ইহান কে কল করছে কিন্তু ইহান কল রিসিভ করছে না। পাঁচটার উপরে বাজে। এবার যেতে হবে সবাই বাইরে এসে দাঁড়িয়েছে। তুলি একবার ঊষা কে তো একবার ইহানকে কল করছে।

ঊষার যদি কিছু হয় না না কেন যে ওকে ওই ছেলেটার কাছে রেখে গেলাম। এদিকে এক অটো চলে গেলো। রাত হয়ে আসছে। এটাও যাবার জন্য তারা দিচ্ছে কিন্তু তুলি যেতে পারছে না। ঊষাকে রেখে কি করে যাবে?
সবাই টেনেই তুলিকে নিয়ে গাড়িতে উঠলো। তুলি এবার কান্না করে দিলো চিন্তায়। তখন ইহান কল করলো,
‘ হ্যালো! ভাইয়া ঊষা কোথায়? আপনাকে এতো কল করলাম রিসিভ করলেন না কেন? আমরা আপনাদের না পেয়ে তো বাসায় চলে আসছি। আপনি প্লিজ ঊষাকে ওর বাসায় দিয়ে আসবেন দয়া করে। ওকে রেখে যাওয়ার আমার কোন ইচ্ছা ছিলো না কিন্তু সবাই রাত হয়েছে বলে জোর করে আমাকে নিয়ে যাচ্ছে‌। আমি আপনাকে বিশ্বাস করে ঊষাকে রেখে গেলাম ওর বাড়িতে একটু পৌঁছে দিবেন প্লিজ।’

‘ আচ্ছা তুমি চিন্তা করো না।রাখছি।’
ইহান তুলিকে কল করেছিলো ঊষা ওদের কাছে কিনা জিজ্ঞেস করতে কিন্তু এই মেয়ে তো ওদের কাছেও নাই। কোথায় গেলো। একটু দাঁড়াতে বলেছিলাম আর কোথায় চলে গেলো? কেন যে ওকে ওখানে রেখে গেলাম। এখন যদি কোন ক্ষতি হয় তাহদে আমি নিজেকে কিছুতেই ক্ষমা করতে পারবো না।
‘ এই ইহান যাবি না।’
‘ তোরা যা আমি আসছি।’
বলেই ইহান আবার মেলায় ঢুকে গেলো। আবার সেই জায়গায় গেলো নাই। ঊষার নাম্বার ছিলো ওর কাছে তাই কল করলো কিন্তু রিং হচ্ছে নো রিসিভ।
গাছের আড়ালে লুকিয়ে আছি। চারপাশ অন্ধকার হয়ে আসছে আবসা আলোতে দেখলাম ছয়টার উপরে বাজে একটু পর আযান দিবে। আমি বের হবো কি করে এই ছেলেগুলো লুকিয়ে। ভয়ে আমার সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে। মুখে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছি।

কারো সারা শব্দ না পেয়ে আস্তে আস্তে বের হয়ে উল্টো দিকে দৌড় দিলাম। কিছু দূর আসতেই কারো বুকের সাথে জোরে ধাক্কা খেয়ে কপাল ডলতে লাগলাম।
মেলার লাইটিং এ ইহানকে চিন্তে আমার ভুল হলো না। উনাকে দেখে আমি যেন প্রাণ ফিরে পেলাম। উনার বাহু খামচে ধরলাম শক্ত করে।
‘ ঊষা তুমি এখানে কি করছো? আর এভাবে দৌড়াচ্ছিলে কেন? কি হয়েছে?’
আমি ফুপাতে ফুপাতে বললাম, ‘ ওই….

বলে সামনে আঙুল দিয়ে সম্পূর্ণ কথা শেষ করবো তার আগেই ছেলে তিনজন এগিয়ে এলো।
আমি তাদের দেখে ইহানের পেছনে চলে গেলাম। আর তার পিঠের শার্ট খামচে ধরলাম। এবার আর ইহান কিছু জিজ্ঞেস করলো না ও যা বুঝার বুঝে গেছে।
ছেলে গুলো এগিয়ে এসে বাজে কথা বলতে লাগলো আর ইহান কে চলে যেতে বললো। ইহান ওদের কথায় কিছু বললো না। একজন সাহস কর আমার কাছে এগিয়ে আসে আমাকে স্পর্শ করতে চাইলো আমি ভয়ে আতকে উঠলাম। ইহান কিছু বলছে না কেন?

আমার হাত ধরে টান দিতে যাব তখন ইহান ছেলেটাকে ধাক্কা দিয়ে বাকি দুজনের উপর ফেলে দিলো। আর তরিৎ গতিতে আমার বাম হাত ধরে দৌড়াতে লাগলো। সাথে আমিও বোকার মতো দৌড় দিলাম। পেছনে ফিরে তাকিয়ে ছিলাম একবার ছেলেগুলো ও দৌড়াচ্ছে। আমরা মেলায় এসে থামলাম। ইহান আমার হাত ছেড়ে দিয়ে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। আমার মাথা ঘুরছে। কতোক্ষণ ধরে না খেয়ে আছি এজন্য আমি ক্লান্ত সাথে ক্ষুধার্ত।

‘ আর ইউ ওকে?’
আমি বললাম, ‘ আমাকে তুলিদের কাছে নিয়ে চলুন প্লিজ। খারাপ লাগছে আমার।’
‘ ওরা তো চলে গেছে।’
‘ কিহহ তাহলে আমি কিভাবে যাব। আমাকে একা রেখে ওরা চলে গেলো কেন?’
‘ চিন্তা করো না। আমি পৌঁছে দিবো। এবার বলো তো এসব কি হচ্ছিল। তুমি ওখানে থেকে চলে গেছিলে কেন? কতো খুঁজলাম তোমাকে আমি জানো?’
‘ আমার খুব খিদে পেয়েছে এখন আমি কিছু বলতে পারবো না।’
‘ আচ্ছা চলো কিছু খেয়ে নেওয়া যাক।’

‘ ওরা আবার আসবে না তো। আমি বাসায় গিয়ে খাব কতো লেট হয়ে গেছে আম্মু চিন্তা করছে মনে হয়।’
‘ এতো বার কল করলাম ধরলে না কেন?’
‘ আমার কথা বলতে ভালো লাগছে না। দয়া করে আমাকে বাসায় দিয়ে আসুন। আপনার সাথে এজন্য তখন আমি যেতে চাই নি। সব কিছু আপনার জন্য হয়েছে।’
‘ ওয়েট ওয়েট কি বললে তুমি এসব আমার জন্য হয়েছে?’
‘ হ্যা।’
‘ এজন্য কারো ভালো করতে নাই। এখন কে বাচালো আমি না আসলে কি হতো তোমার! ধন্যবাদ দেবে তা না দোষী সাব্যস্ত করছো!’
আমি কিছু বললাম না। উনি এক নিঃশ্বাস ফেলে বললো,’ চলো ‘
একটা ছেলের সাথে বাসায় যেতে হবে। তার উপর রাত হয়ে গেছে। আম্মু কতো চিন্তা করছে কে জানে। বাসায় গিয়ে আজ খুব কথা শুনতে হবে। আর তুলিও এভাবে আমাকে ফেলে চলে গেলো। একটু চিন্তা হলো না আমার জন্য। জোর করে নিয়ে এসে এখন ফেলে রেখে গেলো।
আমি উদাস হয়ে এসব ভাবছিলাম বাইরে দাঁড়িয়ে।

‘ এই যে ম্যাডাম উঠে আসুন তাড়াতাড়ি।’
সামনে তাকিয়ে চমকে উঠলাম। ইহান বাইকে বসে আছে। আমাকে এখন এই বাইকে উঠতে হবে নাকি।
অসম্ভব এই ছেলের সাথে আমি এক বাইকে কিছুতেই যাব না।
‘ দ্রুত করো।’

ইহানের পাশ কাটিয়ে খালি অটোর জন্য দাঁড়িয়ে আছি। দুই একটা অটো এলো কিন্তু থামলো না। শো শো করে আমার পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। আমার বাম সাইটে ইহান কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে। বিরক্ত কর মুখ করে। আমার তাকে বলেছি তার সাথে ওই বাইকে আমি যাব না। আমি অটোতে যাব। বলেই গাড়ির অপেক্ষা করছি। মেলায় থাকা লোকজন নিজের বাইক কার করে চলে যাচ্ছে যে যার মতো। রাত বলে গাড়ি ঠিক পাওয়া যায় না। আর যে কয়টা আসছে এতো মানুষ গাড়ির জন্য ওয়েট করছে যে আমি উঠার ই সুযোগ পাচ্ছি না।
বাইকের হণ বাজিয়ে আমাকে নিজের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করালো ইহান। আমি তার দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলাম তার বিরক্ত মাখা মুখ।

‘ তোমার মতো ঘাড়ত্যারা মেয়ে আমি খুব কম দেখেছি। সব মেয়েরা বাইকে চড়া পছন্দ করে আর তুমি এটাকে অবজ্ঞা করছো? আচ্ছা তোমার সমস্যা কি বলো তো?’
‘ আমি কতো বার বলবো আমি বাইকে যাব না। আমাকে অটো ঠিক করে দিন।’
‘ আমি কি এখন অটোর জন্য পাগলা দেওয়ানা হয়ে ঘুরবো। দেখতেই তো পাচ্ছো সবাই কেমন চালক পাখির মতো অটোর জন্য ওয়েট করছে। তোমার কি মনে হয় এরা থাকতে তুমি উঠার সুযোগ পাবে?’
‘ আপনি বাইকে বসে না থেকে নেমে চেষ্টা করুন না
তাহলেই সব হয়ে যাবে।’

‘ কিছু হবে না। এতো ঝামেলা না করে উঠে এসো রাত বারছে কিন্তু। তারাতাড়ি ফেরা উচিত। এমনিতেই এক ঝামেলা হলো ছেলেগুলো আবার এখানে না চলে আসে।দেখো আমার এখানে বর্তমান এ পরিচিত কেউ নাই তাই আমি একা কিন্তু ওদের সাথে তোমার জন্য মারামারি করতে পারবো না।’
‘ আমি কি বলেছি আমার জন্য মারামারি করেন। দরকার নাই।‌আপনি যে একটা ভীতুর ডিম আমি জানি। তাই তো ফাইট না করে দৌড় পালিয়ে এসেছিলেন।’

‘ তোমার সাহস তোমার কম না আমাকে ভীতু বলছো? আর তোমার জন্য আমি ফাইট করতে যাব কেন? কে হ‌ও তুমি? আমি এসবের জন্য কিছুটা দায়ী এজন্য জাস্ট সাহায্য করতে এসেছি। তোমার ফ্রেন্ড খুব করে রিকোয়েস্ট করেছে তোমাকে বাসায় ঠিক মতো পৌঁছে দিতে। এজন্য তোমাকে একা রেখে যেতে পারছি না। আমার তো মনুষ্যত্ব আছে এভাবে একটা মেয়েকে বিপদে পড়তে দেখেও ছেড়ে যাব। তাই এতো কিছু সহ্য করছি। না হলে কখন বাসায় গিয়ে লম্বা ঘুম দিতাম। তোমাকে নিয়ে ঝামেলা পোহাতাম না।’

ইহানের কথা শুনে হা হয়ে গেলো আমার মুখটা। আমি চুপচাপ সরে দাড়ালাম।‌একটা অটো আসছে আমি হাত বাড়িয়ে থামানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু নো রেসপন্স।রাগে আমার শরীর কাঁপছে। সাথে চোখ ছলছল করছে। এতো কথা বললো এখানে তো উনিই দোষী তখন দরদ দেখালো কেন আর কেন‌ই বা নিজের সাথে নিয়ে গেলো না এসব কিছুই হতো না। এখন আমাকে এতো কথা শুনালো। কিন্তু বর্তমানে কিছু বলতে চায়না। এখন ও অসহায়। সব দাঁত চেপে সহ্য করতে হবে। কারণ এখানে থেকে বাসা অবধি এই লোকটার সাথেই যেতে হবে। আমি এই রাতে একা বাসায় যেতে পারবো না। তারপর সাহায্য আমার দরকার তাই ইহানের কথায় খারাপ ও রাগ হলেও আমি চুপচাপ সহ্য করলাম।

বাইকে না উঠার কারণ হচ্ছে। আমি ছোট থেকেই বাইক পছন্দ করতাম। আমার জন্য বাবা বাইক কিনে ছিলো। আমাকে ছোট বেলায় স্কুলে দিয়ে আসতো অফিসে যাওয়ার সময়। বাবা কার রেখে বাইক ইউস করতো। একদিন আমি বাবাকে না ধরে বসে ছিলাম আর পেছনে থেকে পরে মাথা ফাটিয়ে ফেলেছিলাম। সেই থেকে আমার বাইকে উঠতে ভয় করে। এখনো মনে হয় উঠলেই আমি ঠাস করে পরে যাব। তাও এটা আমার বাবা থাকলে উঠতাম আর তাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরতাম কিন্তু এই অপরিচিত একটা ছেলের সাথে বাইকে উঠলে তাকে আমার জরিয়ে ধরতে হবে না না এই বাইকে আমি কিছু তেই উঠবো না।

এক ঘন্টার মতো দাঁড়িয়ে থাকতে একদিকে খিদের যন্ত্রণা অন্যদিকে এই দাড়িয়ে থেকে পা ব্যাথা করছে এখন অসহ্য লাগছে। হঠাৎ সেই তিনজন ছেলেকে এদিকে আসতে দেখেই চমকে উঠলাম। আর বাম সাইটে ইহান যে খানেই ছিলো সেদিকে তাকিয়ে থমকে গেলাম। বাইক সহ ইহান নাই। আমি ভয়ে এদিকে ওদিকে তাকালাম কোথাও নাই।মুখে হাত দিয়ে ভাবছি উনি আমাকে এই খানে একা ফেলে চলে গেলো? এখন কি হবে ওই ছেলে গুলো তো এদিকেই এগিয়ে আসছে ভয়ে আমার বুক ধুকপুক করছে। কেন তার সাথে তর্ক করলাম এখন আমার কি হবে? আমি বাসায় যাব কি করে? ছেলেগুলো আমার কাছাকাছি চলে এসেছে আমার মাথা ঘুরতে লাগলো। খুব খারাপ কিছু হবে আজকে ভাবতেই শরীর কাঁটা দিয়ে উঠছে।

আমি মাথায় হাত পেছনে ছেলের গতিবিধি দেখছি। আমার থেকে এখন এক হাত দূরে আমি কোন দিকে যাব ভাবছি তখন একটা পুরুষালী ঠান্ডা হাত আমাকে টেনে নিলো। আমি পেছনে ঘুরার আগেই আমাকে টেনে অটোতে তুলে নিলো আর সাথে সাথে অটো ছুটে চললো অজানা গন্তব্যে। আমার সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে এই তো বিপদে আমার দিকে ধেয়ে আসছিলো এখন আবার কে জানি আমাকে টেনে অটোতে তুললো হায় আল্লাহ এখন কি হবে আমাকে কি কিডন্যাপ করা হলো? ইহান এভাবে বিপদে ফেলে গেলো? যাবেই তো আমি কে তার কিছু না হলে কি সাহায্য করা যায় না মানুষ হিসেবে!!

আমি ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে উঠলাম। লোকটার দিকে তাকিয়ে আর ভয় পেতে ইচ্ছে করছে না।
‘ হোয়াট হ্যাপেনস ঊষা? কি হয়েছে তোমার কাঁদছো কেন?’
পরিচিত কন্ঠ লাগলো আমি ঘাড় বাঁকিয়ে ইহানের কুঁচকানো ভ্রু দেখে চমকে কান্না থামিয়ে দিলাম। বড় বড় চোখ করে তাকালো আমাকে কিডন্যাপ করলো তাকে ইহানের মতো লাগছে কেন? পাগল হয়ে গেলাম নাকি?
‘ আপনিইইইই.
‘ আমি থাকবো না তো কে থাকবে? কার এতো ঠেকা তোমাকে সাহায্য করার? এই অটো খুঁজতে আমার কতো কষ্ট হয়েছে জানো উফ কি জেদি মেয়ে তুমি। বাধ্য হয়ে অটো খুঁজে আনতে হলো কি আর করবো দায়িত্ব যেহেতু নিয়েছি পালন তো করতেই হবে!!’

‘ কিন্তু আমি তো ভেবেছিলাম আপনি আমাকে ফেলে চলে‌ গেছেন!’
‘ ভালো সেটা ভাবা স্বাভাবিক। আমি এমনটাই করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমি মনুষ্যত্ব হীন না। ‘
আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। কি ভয় পেয়ে গেছিলাম।‌ বুকে হাত রেখে জোরে শ্বাস নিলাম। এখন পানি না খেলেই নয়। আমি বললাম,
‘ একটু পানি খাব না। না হলেই গলা শুকিয়ে মরে যাব আমি।’
ইহান নিজের ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে দিল। সাথে বিস্কুট।
‘ বিস্কুট ক‌ই পেলেন?’

‘ কি জানি কবে কিনেছিলাম মনে পরছে না। ব্যাগ হাতালে অনেক জিনিস পাওয়া যাব। কারণ কতো কিছু রাখি কিন্তু কখনো চেক করে দেখি না। খেতে পারো ভালো এটা!’
আমি কিছু না বলেই গেলাম। উনাকে জিজ্ঞেস করলাম না করে দিলো। আমি দুইটা বিস্কুট খেয়ে পানি খেয়ে নিলাম। এক ঘন্টা লাগবে যেতে আমি ব্যাগ থেকে ফোন বের করলাম। ফোন খুলে চমকে উঠলাম দুইশ মিসকল। মা অনেকবার কল করেছে সাথে তুলি ও অচেনা নাম্বার। আমি মাকে কল করলাম।
মা খুব চিন্তা করছিলো। আমি আমতা আমতা করে শুকনো ঢোক গিলে জ্বিবা দিকে ঠোঁট ভিজিয়ে মিথ্যা বললাম অনবরত। মা ফোন রেখে দিলো। মাকে বলেছি তুলিদের বাসায় লেট হয়ে গেছে এখন তুলির বাবা আমাকে পৌঁছে দিতে আসছে। তারপর

তুলিকে কল করে ইচ্ছা মতো বকলাম ওকে কিছু বলার সুযোগ দিলাম না। ফোন কেটে ইহানের দিকে তাকিয়ে দেখি আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
‘ বাবারে কি ঝগড়ুটে মেয়ে!’
আমি নাক ফুলিয়ে বললাম, ‘ আপনি আমাকে ঝগড়ুটে বললেন?
‘ ইয়েস। আর ওই যে ওই নাম্বারটা আমার।’
বলেই ফোন ইশারা করলো ইহান।
আপনি আমার নাম্বার কোথায় পেলেন?’ অবাক হয়ে বললো।
‘ আজ কাল নাম্বার পাওয়াটা কি খুব কঠিন।’
‘ আপনি কোথায় পেলেন?’
‘ উফফ এটা তো তুলির থেকে নিয়েছি।’

মাথা যন্ত্রনা নিয়ে চুপ করে বসে ছিলাম। বাসায় আসতেই নেমে গেলাম। ইহান বাই বললো আমি তাকালাম ও না চলে এলাম। আম্মু কে কি বলবো আমি কে জানে এসব জানলে আম্মু আমাকে কি ভাববে একটা ছেলের সাথে এলাম খারাপ ভাববে খুব। কলিং বেল চাপ দিয়ে চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে আছি।

আম্মু কে বুঝাতে খুব কষ্ট হবে না। কিন্তু আব্বুর জন্য ভয়ে আমার বুক ধুকপুক করতে শুরু করেছে। আব্বু এতো আগেই বাসায় চলে এসেছে আজ। ঢোক গিলে ভেতরে যায়। হাত পা কাঁপছে অনবরত। যতটা ভয় পেয়েছিলাম তার কিছু হলো না। আব্বু খুব সুন্দর করে কথা বললো। আর বললো কখনো যেন রাত না করি কোথাও গিয়ে। আমি মাথা নেড়ে রুমে চলে এলাম। ফ্রেশ হয়ে এসেই দেখি আম্মু বিছানায় বসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি তাকাতেই আম্মু আমাকে যা বললো তাতে চমকে উঠলাম। আর আমার হাত থেকে তোয়ালে ফট করে নিচে পরে গেলো।
‘ তোমার সাথে ছেলেটা কে ছিলো?’

আমি ভয়ে আতকে উঠলাম। আম্মু ইহান কে দেখলো কি করে?এখন কি হবে? কি বলবো? আম্মু কি জেনে যাবে মিথ্যা কথা বলে আমি মেলায় গিয়েছিলাম। হায় আল্লাহ তাহলে তো খুব খারাপ হবে। আম্মু তেমন কিছুই না বললেও আব্বু তো খুব বকবে?
‘ কি হলো কথা বলছো না কেন? ওই ছেলেটা কে ছিলো যে তোমাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে গেলো?’
‘আসলে আম্মু…

‘ সত্যি বলো। আমি কিছু বলবো না। ‘
মায়ের কথায় ভরসা পেয়ে সব বলে দিলাম। সব শুনে আম্মু খুশি হলেও পরে একটু চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘ তোমার কোন ক্ষতি হয়নি তো? ভয় পেয়েছিলে?’
‘ খুব ভয় পেয়েছিলাম। কিন্তু সময় মতো ইহান না আসলে ক্ষতি হতে পারতো।’
‘ ছেলেটা তো খুব ভালো।’
‘ ভালো না ছাই। তার জন্য ই তো আমি বিপদে পরেছি তাই হেল্প করেছে এখানে ভালোর কি হলো?’
‘ কিছুনা আয় কিছু খেয়ে ঘুমিয়ে পর আজ।’
‘ হুম ‘
আম্মু চলে গেলো।

ফোনটা অনবরত বেজেই চলেছে হাতে নিয়ে দেখি তুলি রিসিভ করতেই চিন্তিত কন্ঠ ভেসে এলো। আমি ঠিক আছি আর বাসায় পৌঁছেছি বলেই কেটে দিলাম। তারপর খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পরলাম।
পরদিন স্কুলে এসে কারো কারো কথা বললাম না। ওদের ইগনোর করে আলাদা সিটে বসলাম। তুলি এখনো আসে নি। বাকিরা আমার কাছে এসে সরি বলেছে কারো সাথেই কথা বলিনি। আমি যথেষ্ট শান্ত লিষ্ঠ মেয়ে ওদের সাথে কখনো ঝগড়া বা উঁচু গলায় কথা বলিনি কিন্তু আজ বলেছি। ওদের কথা শুনেই ধমক দিয়েছি। আমার ওদের দেখলেই রাগে শরীর জ্বলে উঠছে। সবাই আমাকে কতো রিকোয়েস্ট করে নিয়ে গেলো আর ওরা আমার খবর না নিয়ে চলে এলো‌।

এটা কোনো কথা এতোটা কান্ড জ্ঞান হীন‌। ওদের কথায় আমি রাজি হয়ে কতোটা ভুল করেছি তা হারে হারে টের পেলাম। ওরা আমাকে রাগতে দেখে আর কিছু বললো না। তুলি এসে আমার এমন রাগারাগীর কথা শুনে ঢোক গিললো। আমি ওকে দেখে ও না দেখার ভান করে আছি। ওর উপর আমার রাগ বেশি আছে । সবাই চলে গেলেও আমি কষ্ট পেতাম না ও কি করে আমাকে এভাবে ফেলে গেলো। আমার পাশে এসে বসলো আমি ফট করে উঠে দাঁড়িয়ে জায়গা পরিবর্তন করলাম। ও অসহায় মুখে আমার দিকে তাকিয়ে র‌ইলো। কান থেকে হাজার বার সরি বললো আমি কথা বললাম না। দুইদিন রাগ নিয়ে থাকলাম। সারা দিন কল করে আমি রিসিভ করি না। স্কুলে এসেও কথা বলিনা।

শুক্রবার ঘুম ভাঙলো তুলির চেঁচামেচি তে। ওর চিৎকার শুনেই ধরফরিয়ে উঠে বসলাম। আমার সামনে বসে আছে। ওকে দেখে এতো খুশি হলাম যে রাগের কথা ভুলে ওকে জরিয়ে ধরে কথা বলতে লাগলাম।
‘ ওই তুই আমার কল রিসিভ করিস না কেন? এতো রাগ কেনো রে বাবা সরি বলছি তো যা আর জীবনে তোর এইভাবে ফেলে আসমু না।ইহান ভাই আছে আমার কেনো জানি মনে হচ্ছিল উনি তোকে বিপদে পরতেই দিবে না ঠিক বাসায় পৌছে দিবে। আর তাছাড়া আমি আসতে চায়নি তোকে ফোনে পাচ্ছিলাম না তাই সবাই জোর করে আমাকে গাড়ি উঠয়েছিলো। তারপর কতো যে চিন্তা করেছি আমি জানিস। তোর সাথে কথা বলে আমি স্বস্তি পেয়েছি।

‘ এই আমি তোর সাথে কথা বলছি কেন? আমি তো তোর সাথে রাগ করেছি!
বলেই মুখ ঘুরিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। তুলি আমাকে জাপ্টে ধরে বললো, ‘ প্লিজ ক্ষমা কর তুই যা বলবি আমি তাই শুনবো এবারের মতো মাফ কর প্লিজ।’
‘ আচ্ছা করতে পারি একটা শর্তে!’
‘ বল কি শর্ত?’
‘ আজ আমাদের বাসায় থাকতে হবে আর এখন কান রে উঠ বস কর!
‘ এ্য্যা কি সব বলছিস আমি কান ধরে উঠবস করবো?
‘ হুম।
তুলি থাকবে বলে রাজি হলো। আম্মুকে দিয়ে ওর বাসায় কথা বলানো হলো। কান ধরে দশবার উঠবস করালাম। সারাদিন দুজন অনেক আনন্দ করলাম। রাত জেগে মুভি দেখলাম। গল্প করে একটা পর্যন্ত জেগে ছিলাম পরদিন সকালেই চলে গেলো তুলি বাসায় গিয়ে স্কুলের জন্য রেডি হতে। স্কুলে গিয়ে সবার সাথে মিলমিশ করে নিলাম।
কয়েকদিন পর

একটা বাজে ঘটনা ঘটে গেলো আমার চোখের সামনে।স্কুলে থেকে বাসায় ফিরছিলাম। আমি জানালা খোলা রেখে জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকতে পছন্দ করি। আজ ও ছিলাম। তখন একটা বাইক এর সাথে কার ধাক্কা লেগে কি বীভৎস অবস্থা। আমি হাঁ করে তাকিয়ে আছি। হাত পা থরথরিয়ে কাঁপছে। আশেপাশের লোক জড়ো হয়ে গেল। সবাই ধরাধরি করে কার থেকে একটা আহত মেয়েকে বের করে আনল। আমাদের গাড়ি তাদের গাড়ির কিছুটা সামনে ছিলো। মেয়েটিকে হসপিটালে নিতে হবে ইমিডিয়েটলি না হলে তার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। সবাই বলাবলি করছে আর গাড়ি খুঁজছে কিন্তু গাড়ি পাচ্ছে না।আমি শুকনো মুখে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছি। কি সুন্দর দেখতে। মেয়েটার কপালে আঘাত পেয়ে রক্ত পড়ে তার গাল বেয়ে পরছে। আকাশী কামিজ ডিজে একাকার। তখন মেয়েটিকে আমাদের দিকে আনা হলো আমি আতঙ্কে চোখ মুখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছি এদিকে আনছে কেন?

লোক গুলো আমাদের গাড়ির সামনে এসে ড্রাইভার আঙ্কেলকে বলছে আমাদের গাড়িতে মেয়েটিকে হসপিটালে নিতে চান। কিন্তু ড্রাইভার আঙ্কেল রাজি হতে পারছে না। কারণ তিনি ভয় পাচ্ছেন। তিনি ভাবছেন যদি আমি কিছু বলি কারণ আমি এই সবে খুব ভয় পায়। এখন ও আমি ভয় পাচ্ছি। আমার হাত-পা কাঁপছে। অসম্ভবরকম কাঁপছে। কিন্তু শুধুমাত্র নিজের ভয়ে জন্য একজন মানুষের প্রাণ চলে যাবে। না এটা হতে পারে না। আমার যত ভয় করুক না কেন! আমাদের সাহায্য করতে হবে। আমি সাহস করে এবার কাঁপা গলায় ড্রাইভার আঙ্কেলকে রাজি হতে বললাম।

আর মেয়েটিকে ধরে আমার পাশে শুইয়ে দেওয়া হলো। রক্ত দেখে আমার হাত কাপছে। আমার মাথা ঘুরছে তবু আমি নিজেকে যথাসাধ্য চেষ্টা করলাম নিজেকে ঠিক রাখার। আমাদের সাথে আর কেউ আসলো না কারণ এখানে যে কয়টা পুরুষ ছিল সবাই নিজেদের কাজে ব্যস্ত। আমাকে আর ড্রাইভার আংকেলকে বলে গেল আমরা যেন ওনাকে হসপিটালে ভর্তি করে দেই আর ওনার ফোনটা আমার হাতে দিয়ে বলল। পরিবারের কাউকে কল করার জন্য। আমি কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা হাতে নিলাম। ২৫ মিনিট পর আমরা সিটি হসপিটাল এসে গাড়ি থামালো।

ফোন লক করা আমি কিভাবে কাউকে কল করবো। তাই কাউকে কল করা হলো না। কিন্তু হসপিটালে এসে দেখলাম রোগীকে সবাই চিনে। তিনি নাকি ডক্টর। তার নাম ডক্টর ইমা।হসপিটাল থেকে তার বাড়িতে খবর দিয়ে দিয়েছে কিন্তু তার আগেই ডাক্তার জানালো ইমিডিয়েটলি ও পজেটিভ রক্ত লাগবে। দরকারের সময় সবসময়ই সবকিছু ফুরিয়ে যায়। হসপিটালে ও পজেটিভ রক্ত নাই এখন বাইরে থেকে আনতে হবে। হাসপাতাল থেকে লোক পাঠানো হয়েছে কিন্তু তারা রক্ত পাচ্ছে না। কারন মাথায় আঘাত পেয়েছে গুরুতুর। ওখান থেকে রক্ত ব্লিডিং হচ্ছে তারা রক্ত বের হাওয়া থামিয়েছে। কিন্তু এখনই রক্ত দিতে না পারলে বড় ক্ষতি হয়ে যাবে এমনকি তার প্রাণ ও চলে যেতে পারে।

কিন্তু কারো রক্তের সাথে তার রক্ত মিলছে না। কি ঝামেলা? তখন আমার মাথায় এলো ও পজেটিভ তো আমার রক্তের গ্রুপ। আমি সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারকে সেটা জানিয়ে দিলাম। কিন্তু ডাক্তার আমার শরীর থেকে রক্ত নেবে না এত কম বয়সী কারো শরীর থেকে রক্ত নিবে না। এজন্য 18 বয়স লাগবে। আর আমার কেবল ষোলো। হায় আল্লাহ। আব্বুর অফিসে এখান থেকে কাছেই। আমি আব্বু কে ডেকে নিলাম কারণ আব্বুর রক্তের গ্রুপ ও পজেটিভ। আব্বু এলো ১০ মিনিটে এসেই রক্ত দিয়ে চলে গেল ততক্ষণে মেয়েটির মানে ইমা আপুর বাসা থেকে কেউ আসেনি। আমাকে এখানে থাকতে বলে চলে গেল। আমিও যেতাম না আপুটার খবর নিয়ে নিশ্চিন্তে বাড়ি যাব। তখন ইহানকে দেখলাম হন্তদন্ত হয়ে এই দিকে আসছে।ফর্সা মুখটা লাল হয়ে আছে চুলগুলো এলোমেলো ছুটে ছুটে আসছে আমাকে হয়তো খেয়ালই করেনি ডাক্তারের কাছে গেল একটু পরে জানতে পারলাম ইমা আপু উনার বড় বোন। কডিটরি সামনে এসে আমাকে দেখে কপাল কুঁচকালো।

আমি কিছু বলবো তার আগে আরো তিনজন একজন মহিলা দুইজন পুরুষ কান্না করতে করতে এলো।এসেই সেই মহিলা ইহান কে জরিয়ে ইমা ইমা বলে কাঁদতে লাগলো। উনি হয়তো আপুর মা তাই এতো কাঁদছে। আমি বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আছি।
ক্লান্ত লাগছে অনেক তাই বাসায় চলে এসেছি। জ্ঞান ফিরতেই কাঁচের জানালা দিয়ে উঁকি মেরে দেখেছি আপুটাকে। জ্ঞান ফিরেছে দের ঘন্টা পর। একজনের উপরে দেখ করতে দিবে না। ইমা আপুর মা দেখা করতে গিয়েছেন। তখন আমি চলে এসেছি। আশার আগে একটু কথা ইহান এর সাথে হয়েছে।
বাসায় আসতেই আম্মু জিজ্ঞেস করল কি অবস্থা এখন। আমি জ্ঞান ফিরেছে বললাম। আব্বু ও জিজ্ঞেস করলো। আমি ফোন ঘেঁটে ইহানের নাম্বার খোঁজে বের করলাম। তারপর ভাবলাম একবার কল করে জিজ্ঞেস করে নিবো খবর? যেই ভাবা সেই কাজ।
সেদিন কল দিয়েছিল মিসকল লিস্টে আছে। খোঁজে নাম্বার পেয়ে গেলাম আর কল করলাম। প্রথমবার রিসিভ করলো না দ্বিতীয় বার করলো।

‘হ্যালো আসসালামু আলাইকুম!’
‘ ওয়ালাইকুম আসসালাম।’
‘ আমাকে চিনতে পেরেছেন?’
‘হুম ঊষা থ্যাংক ইউ সো মাচ। কালকে তুমি না থাকলে কি যে হত।’
‘আমি না থাকলেও কেউ নাই কেউ আপুকে ঠিক হসপিটালে নিয়ে যেতো। তাই চিন্তা করবেন না। আপু এখন কেমন আছে?’
‘আগের থেকে বেটার। ডক্টর বলেছে বিপদমুক্ত এখন।’
‘ও আচ্ছা। তখন তো দেখা করতে পারলাম না। আর জ্ঞান ফিরেছে শুনে সন্ধ্যা হয়ে আসছিল তাই চলে এসেছি।হসপিটালে থাকবে আপু?’
‘কয়দিন থাকতে হবে!’
‘ওহ।’
‘হুম। আমাকে দোকানে যেতে হবে রাখছি।’
‘ আপনি কি এখনো হাসপাতালে?’
‘ হুম!’
‘আপনি কী হাসপাতালে থাকবেন?’
‘ না মা থাকবে আমি একটু পর চলে যাব।’
‘ ওহ আচ্ছা রাখছি।’

ফোন রেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম। খুব টেনশন হচ্ছিল। ফোন রেখে দিলাম। এখনো চোখ বন্ধ করলে আমার সেই রক্তাক্ত দৃশ্যটা মনে পড়ে আর শরীরে কাঁটা দিয়ে ওঠে। রক্ত দেখলে আমার ভয় লাগে। আর আজকে তো আপুটা রক্তাক্ত অবস্থায় আমার পাশে ছিলো। আমি যে কিভাবে নিজেকে কন্ট্রোলে করেছিলাম আল্লাহ জানে। খুব ভয় পেয়েছিলাম। আপুটা সুস্থ আছে শুনে এখন ভালো লাগছে। কিন্তু আমি বোধহয় আজকে একা রুমে ঘুমাতে পারবো না। কেমন জানি লাগছে। আমি আম্মুকে ডেকে নিলাম। আজ আম্মুর সাথে ঘুমাবো। তাই হলো আম্মু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। আর আমি আম্মুকে জরিয়ে ধরে চোখ বন্ধ করলাম।
হালকা পাতলা জ্বর দেখা দিলো ভয় থেকে।পরদিন বাসা থেকে বের হতে দিলো না। কিন্তু আমি বিকেলে একবার ইমা আপুকে দেখতে যাওয়ার বায়না করলাম।

‘আম্মু প্লিজ যেতে দাও না। এখন আমার শরীর একদম ঠান্ডা দেখো তুমি।’
‘তুই তো হসপিটাল সহ্য করিস না। ভয় পাচ্ছ তাও কেন যেতে চাইছিস আবার অসুখ বাধাবি নাকি।’
‘আম্মু বিলিভ মি আমার কিছু হবে না। কালকে তো ছিলাম দেখো আমি বেশি ভয় পাইনি। আমার আসলেই এক্সিডেন্টের কথা মনে পড়ে ওই ভয় থেকে রাতে জ্বর এসেছিল। কিন্তু এখন আমি একদম ঠিক আছি।’
‘তোকে নিয়ে পারি না চারটা বেজে গেছে সন্ধ্যা হয়ে যাবে তো!’
‘কিছু হবে না এখান থেকে বেশি দূর না তোমাকে বললাম তো। সন্ধ্যার আগেই চলে আসবো।’
‘ ড্রাইভারও নাই তোর আব্বু গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছি তুই জানিস। ড্রাইভার থাকলে আমি নিশ্চিন্ত হতে পারতাম।’
‘ প্লিজ।’
‘ আচ্ছা যা। রাজি না হওয়া পর্যন্ত তুই কানের কাছে ঘ্যানঘ্যান করতেই থাকবি। তার থেকে যা তাড়াতাড়ি ফিরে আসবি।’

‘ওকে থ্যাংক ইউ আম্মু।’
আম্মু রাজী হতেই ড্রেস চেঞ্জ করে নীল থ্রি-পিস বের করে পড়ে নিলাম ঝটপট। তারপর বেরিয়ে পড়লাম। রিকশা নিয়ে যেতে দশ মিনিট লাগবে। হসপিটালে ঢুকে সোজা ইমা আপুর কেবিনে চলে গেলাম। আশেপাশে কাউকে দেখলাম না। দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে আমার চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো। আমি বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছি। বেডের উপর ইমা বসে আছে আর তার সামনে সেম টু সেম ইমা আপুর কার্বন কঁপি দাঁড়িয়ে তার সাথে কিছু কথা বলছে। আপু ও তার দুর্বল গলায় একটা দুইটা কথা বলছে। আমি রসগোল্লার মত বড় বড় চোখ করে হা হয়ে তাকিয়ে আছি। দুইটা ইমা আপু। এটা কি করে সম্ভব? আমি কি চোখে ভুল দেখছি নাকি সত্যি? নাকি ভূত? ইমা আপুর মতো আরেকটা ভূত কি দাঁড়িয়ে আছে নাকি। এটা সিউর আমি নিশ্চিত। হসপিটালের বেডে যে শুয়ে আছে সে ইমা আপু। কারণ তিনি অসুস্থ। আর সুস্থ স্বাভাবিক ইমা ভূত।

তখন পেছন থেকে একটা পুরুষালী গলার আওয়াজ পেয়ে পেছনে তাকালাম। দেখি ইহান আমার দিকে ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।
‘আরে ঊষা! তুমি কখন এলে?’
আমি ঢোক গিলে বললাম,,”এইমাত্র।’
‘ও আপুর সাথে দেখা করতে এসেছ?’
‘ হুম।’
‘ভেতরে না গিয়ে এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?’
‘ভেতরের আমি যাব না। আমি ভূত দেখেছি।’
‘ হোয়াট?’
‘ ভেতরে দুই টা ইমা আপু একটা ভূত আপুর সাথে কি যেন কথা বলছে। আমি ভেতরে যাবো না। আমি চলে যাই। আমি ফোন করে জেনে নেবো আপুর খবর।’

‘ঊষা, আর ইউ ম্যাড! কি সব আবোল তাবোল বকছো! ভূত আসবে কোথা থেকে! তাও আবার এই দিনের বেলা। আর ভূত বলতে কিছু নাই ওকে। আজেবাজে বকা অফ করো।’
‘ আপনি আমার কথা বিশ্বাস করছেন না কেন? দাঁড়ান আমি আপনাকে দেখাচ্ছি!
বলে ঊষা ইহানের ডান হাতের বাহু শক্ত করে ধরে টেনে দরজা থেকে উঁকি দিয়ে বলল,
‘ ওই দেখুন দাঁড়িয়ে আছে ভূতটা। একদম ইমা আপুর মতো দেখতে।’ তোতলানো কন্ঠে বলল ঊষা। ভয়ে ওর শরীর থরথর করে কাঁপছে।
ইহান ঊষার কথা ও ওর অবস্থা দেখে হো হো করে হেসে দিলো। ইহানের হাসির শব্দ শুনে ইমা ইলা দুজনে দরজার দিকে তাকালো চমকে।

ঊষা ভীতু মুখ করে একবার ভেতরে ইমা-ইলার দিকে তো একবার ইহানের দিকে তাকাচ্ছে।
‘কি হয়েছে আপনি পাগল ছাগলের মত হাসছেন কেন? আমি এখানে হাসির কি বললাম? এটা সিরিয়াস কথার মাঝে কেউ হাসে অদ্ভুত!’ রাগে দাঁত কিড়মিড় করতে লাগলাম।
ইহান আমার হাত টেনে ইমা আপু ও ভূতের সামনে এনে দাড় করালো। আমি ভয়ে ইহানের হাতের শার্ট খামছে ধরলাম।

‘ ঊষা সি ইজ মাই সিস্টার ইলা।আর ইমা কে তো চিনোই। যাকে তুমি কালকে হসপিটালে ভর্তি করেছো।আর তোমার বাবা যাকে রক্ত দিয়েছিল। এরা দুজন টুইন। কোন ভুত-প্রেত না এত ভয় পাওয়ার কিছু নাই।’
বলেই আবার হেসে উঠলো। আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে আছি। ইহানের হাত ধরেছিলাম দেখে আমি আরো লজ্জা পেয়ে দূরে সরে দাঁড়ালাম।ইলা মেয়েটা কপাল কুঁচকে আমাকে পর্যবেক্ষণ করতে করতে বিদায় নিয়ে চলে গেলো। আমি তার যাওয়ার দিকে আড় চোখে তাকালাম।এরা টুইন। আমার টুইন বেবি খুব পছন্দ কিন্তু এরা তো বড়।একদম সেম টু সেম একটুও অমিল নাই। এদের তো আমি কখনোই চিনতে পারবোনা। দুজনকে গুলিয়ে ফেলতাম।

এক চিলতে রোদ সিজন ২ পর্ব ১+২+৩+৪+৫

ইমা আপু তখন আমাকে ডেকে তার পাশে বসতে বলল আমি গুটি গুটি পায়ে তার পাশে গিয়ে বসলাম।ইমা আপুর সাথে অনেকক্ষণ গল্প করলাম কি অমায়িক ব্যবহার। আর কি মিষ্টি হাসি। অসুস্থতার মাঝেও তিনি হেসেছে। আমাকে তো ছোটবোন বানিয়ে ফেলেছে। এত সুন্দর ব্যবহার আমিও তার গল্প করতে করতে সন্ধ্যা বানিয়ে ফেললাম। জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখতে পেলাম বাইরে অন্ধকার হয়ে আসছে। তা দেখে আমি লাফিয়ে উঠলাম বসা থেকে।রুমে আমি আর ইমা আপু গল্প করছিলাম এতক্ষণ। কখন দুই ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে বুঝতেই পারিনাই।

‘আপু আজ আসি সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আমাকে খুব বকা দিবে আম্মু। আম্মু সন্ধ্যার আগে ফিরতে বলেছিল। এখন আমি কিভাবে যাব। বাইরে তো অন্ধকার হয়ে আসছে। আযান কখন দিল আমিতো কিছুই শুনতে পেলাম না।’
‘আমি বুঝতে পারিনা! কিন্তু তুমি চিন্তা করো না দাড়াও আমি ইহান কে কল করছি।ও তোমাকে পৌছে দেবে।’
‘ তার দরকার নাই। আমি দেখি। একাই যেতে পারবো।’

‘না না তুমি একা গেলে আমার খুব চিন্তা লাগবে। তুমি বসো আমি ইহানকে কল করছি।’
আমার কথা শুনল না জোর করেই ইহান কে কল করে ডেকে আনলো। তারপর তার সাথেই যাওয়ার জন্য বললো।

এক চিলতে রোদ সিজন ২ পর্ব ১১+১২+১৩+১৪+১৫