এক ফালি রোদ্দুর পর্ব ১৫ || লেখনীতে: তানজিল মীম

এক ফালি রোদ্দুর পর্ব ১৫
লেখনীতে: তানজিল মীম

“ভেজালো চুল নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছি আমি,নিজেকে কেমন নাইকা নাইকা মনে হচ্ছে,আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেই নিজেকে দেখে ক্রাশ খাইছি, জামাই দেখলে তো হার্টফেল করবে….
“এই রকম হাজারো আজগুবি চিন্তাভাবনা করে নিজে নিজেই হেঁসে দিলাম’!!কিছু একটা ভেবে রুমের দরজাটা হাল্কা চাপিয়ে দিলাম,তারপর রুমের মিউজিক সিস্টেমটা অন করে গান ছাড়লাম….

— “আজ বলবে হর্ঠাৎ কেউ এসে, হেঁসে আলতো চোখে চোখে,”আজ বলবে হর্ঠাৎ কেউ এসে, হেঁসে আলতো চোখে চোখে তোর জন্য এসেছি আমি ভালোবাসতে যে তোকে….
— “কিছু স্বপ্ন এনেছি কুড়িয়ে রেখে দে নয়তো দে উড়িয়ে, “কিছু স্বপ্ন এনেছি কুড়িয়ে রেখে দে নয়তো উড়িয়ে…
— “তোকে বলবো ভাবি কিছু অল্প কথায়,তুই স্বপ্নে ছিলি, ছিলি গল্প কথায়,আজ তোর নামে রাত নামে দিন কেটে যায়…….
–‘”চুপি চুপি বলো কেউ জেনে যাবে, জেনে যাবে কেউ জেনে যাবে….
“ফুল লাউডে “Love Mashup song”-টা ছেড়ে তার তালে তালে খাটের ওপর উঠে নাচতে লাগলাম আমি,,উফ কতদিন হলো এইভাবে নাচি না,,পুরো রুম জুড়ে নাচার চেয়ে লাফাচ্ছি বেশি,আর গলা ফাটিয়ে গানের সাথে সাথে গান গাইছি আমি,,

“এদিকে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে একটা গ্রীন কালার ট্রাউজার আর গ্রীন-ওয়াইট মিশ্রণে টিশার্ট পড়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে রিয়াদ,সদ্য গোসল করে আসায় তার চুল দিয়ে টপ টপ করে পানি পরছে,আচমকা কোনো লাউড মিউজিক বাজার শব্দ কানে আসতেই আশেপাশে তাকালো রিয়াদ,কারন মিউজিকটা খুব কাছ থেকেই শুনতে পাচ্ছে সে’!!কৌতুহলী রিয়াদ এগিয়ে যায় তার বেলকনির দিকে’!!রিয়াদের রুমের সোজাসুজি হচ্ছে তানজুর রুম খুব একটা দূরত্ব নেই বললেই চলে, রিয়াদের বেলকনি আর তানজুর রুমের বেলকনি একদমই কাছে,পুরো রুম জুড়ে থ্রাইগ্লাস থাকায় সবকিছুই একদমই পরিষ্কার দেখায়,রিয়াদ তো রীতিমতো তানজুর কান্ডে হা হয়ে তাকিয়ে আছে
—-“এই মেয়ে আর শুধরানোর নয় একটা পাগলী কোথাকার ,,
“বলেই হেঁসে ওঠে রিয়াদ!’তারপর হেঁটে যেতে নেয় সে তার রুমের ভিতর,দু’পা এগোতেই….
কিছু একটা পড়ে যাওয়ার শব্দ শুনে চমকে ওঠে রিয়াদ সামনে তাকাতেই অবাক সে…..

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

—-“ও মা গো আমার কোমড় গেল রে….
“বিছানার পাশে শুয়ে এক প্রকার চেঁচিয়ে কথাটা বলে উঠলাম আমি’!!কারন কিছুক্ষণ আগে নাচতে নাচতে বিছানা থেকে ঠাসস করে পড়ে গেছি আমি’!!এদিকে আমার চেঁচানো শুনে আম্মু দৌড়ে রুমে ঢুকলো আমায় মেজেতে পড়ে থাকতে দেখে অবাক হয়ে বললোঃ
—-“কি হয়েছে কি হয়েছে?
—-“আম্মু নাচতে নাচতে পড়ে গেছি….
—-“তা তো পড়বি ব্যাঙের মতো লাফালে পড়তে তো হবেই…
—-“উফ আম্মু একটু উঠাও আমারে….
—-“একলা একলা উঠ,এতক্ষণ নাচার আগে মনে ছিল বা….
—-“হইছি তোমাকে আর উঠাতে হবে না আমি একাই উঠছি,,
“বলেই বিছানা ধরে উঠে দাঁড়ালাম আমি’!!তারপর বললামঃ
—-“দেখছো তোমার আর উঠানো লাগে নাই আমি একাই দেড়শো….
—-“দেড়শো না ছাই,,নাচতে নাচতে পড়ে গেছে,ডিংগি মেয়ে কোথাকার….
—-“তুমি আমায় ডিংগি মেয়ে বলছো,আমি এক্ষুনি গিয়ে আব্বুকে বলছি….
—-“তুই আমাকে তোর বাপের ভয় দেখাচ্ছিস তবে রে,আজ তোর একদিন কি আমার একদিন…
“বলেই আম্মু তেড়ে আসলো আমার দিকে!’আমি তো ঘাবড়ে গিয়ে বলে উঠলামঃ
—-“আরে আম্মু তুমিও না আমি তো মজা করে বলেছিলাম…
—-“তোর মজা বের করছি আমি…

“তারপর শুরু হলো মা-মেয়ের রুম জুড়ে ছোটাছুটি!’
“কিছুক্ষণ দৌড়েই বলে উঠল আম্মুঃ
—-“তানজু তুই দাঁড়াবি নাকি তোর এই সাধের মিউজিক সিস্টেম ভেঙে ফেলবো আমি….
—-“এই মা না না এমনটা করো না আম্মু…
—-“তাহলে চুপচাপ আমার সামনে এসে দাঁড়া….
—-“মারবে না তো…
—-“না মারবো না…
—-“সত্যি বলছো তো…
—-“হুম সত্যি বলছি তুই আমার সামনে এসে দাঁড়া…
“আমিও বাধ্য হয়ে এসে দাঁড়ালাম মাথা নিচু করে’!!আমি সামনে আসতেই আম্মু বলে উঠলঃ
—-“১০ বার কান ধরে উঠ বস করবি তুই…..
—-“কি….?
—-“তুই যদি আমার কথা না শুনিস তাহলে এক্ষুনি দিহানকে বলে তোর মিউজিক সিস্টেম ওর রুমে ট্রান্সফার করে দিবো….

—-“আম্মু তুমি কিন্তু এমনটা করতে পারো না..?
“ইনোসেন্ট ফেস দেখিয়ে!’
—-“তোমার ওই ইনোসেন্ট ফেস দেখে তোমার বাবা-ভাই গলতে পারে কিন্তু আমি গলবো না তাই যা করতে বলছি তাই করো….
“শেষমেশ কোনো উপায় না পেয়ে কান ধরে উঠ বস করতে লাগলাম আমি’!!
—“১,৫,১০ আম্মু হয়ে গেছে…..
—-“তানজু…..(রাগী লুক দেখিয়ে)
—-“আরে আম্মু মজা করছিলাম…
“বলেই সুন্দর করে কান ধরে উঠবস করতে লাগলাম আমি,আর যাই হোক থোড়াই কেউ দেখছে কিনা…..

“অন্যদিকে নিজের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে তানজুর কান্ড দেখে হাসতে হাসতে শেষ রিয়াদ!’হাসতে হাসতেই ঢুকে পরলো সে রুমে’!!এরই ভিতর রিয়াদের আম্মু এসে ডাকলো রিয়াদকে কিছু খাওয়ার জন্য,রিয়াদেরও খুব খিদে পেয়েছে তাই বেশি কিছু না ভেবে চলে যায় সে খেতে….

“বিকাল_৪ঃ০০টা….
“হাত-পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে মেজেতে মাথা দিয়ে বিছানার উপর পা রেখে শুয়ে আছি আমি,আর হাতে মোবাইল নিয়ে ফেসবুকিং করছি,বহুতদিন হলো ফেসবুকে কোনো পোস্ট করা হয় না এখন একটা পোস্ট করবো…
“বিছানায় শুয়ে মেজেতে পা রেখে থুক্কু মেজেতে শুয়ে বিছানার উপর রেখে শুয়ে থাকা আমি…Feeling crazy…. ?
“এমন সময় এক প্রকার দৌড়ে রুমে ঢুকলো রুহি আর ওর পিছনে শিফা’!!আমাকে এইভাবে শুয়ে থাকতে দেখে ওরা হা হয়ে বললোঃ

—-“হায় রে কিভাবে শুয়ে আছিস তুই….(শিফা)
—-“তুই আমার সাথে কথা বলবি না তানজু নাগ করছে…
—-“আমার সাথে তো কথা বলবি তানজু..(রুহি)
—-“তানজু কারো সাথে কথা বলবে না…
—-“কেন আমি কি করলাম…(রুহি)
—-“তুই কি করলি মানে তুই তো শিফার মতো না বলে চলে এসেছিস,শিফা তো তাও চিরকুট লিখছিলো আর তুই তো চিরকুট তো দূর ছেড়া কাগজও দিয়ে আসিস নি….
—-“আমার কি দোষ আমি তো আসতেই চাই নি কিন্তু আব্বু জোর করে নিয়ে আসলো,তাই রাগ করে চলে আসাতে তোকে কিছু বলা হয় নি,,সরি বোইন….(কানে হাত দিয়ে)
“রুহির দেখাদেখি শিফাও কানে হাত দিয়ে বললোঃ
—-“আমিও সরি….

“দুজনকে এভাবে দেখে আমার বেশ মজা লাগলো’!!তাই হাল্কা হেঁসে বললামঃ
—-“ঠিক আছে আর কিছু বলতে হবে না…
“বলেই শোয়া থেকে উঠে ওদের জড়িয়ে ধরলাম আমি’!!ওঁরাও খুশি হয়ে জড়িয়ে ধরল আমায়…
“আমরা তিনজনই একে অপরকে প্রচন্ড ভালোবাসি,আমি চাই না কোনোদিন আমাদের এই ভালোবাসায় ফাটল ধরুক…
“শুয়ে বসে থেকে আর গল্প করতে করতে কেটে গেল পুরো ১ ঘন্টা’!!হর্ঠাৎই কথা মাঝখানে বলে উঠল রুহিঃ
—-“চল না সবাই মিলে রিয়াদ ভাইয়াদের বাড়ি যাই…
—-“কেনো শেখানে গিয়ে তুই কি করবি…
—-“না কিছুই করবো না একটু খালামনির সাথে দেখা করবো আর কি,কতদিন দেখা হয় নি বলতো….
“রুহির কথা শুনে শিফাও বলে উঠলঃ
—-“হুম চল না যাই,, (মিনতির স্বরে)
“ওদের দুজনের কান্ডে আমি অবাক হয়ে বললামঃ
—-“তোদের দুজনের হর্ঠাৎ হলো কি বলতো রিয়াদ ভাইয়াদের বাসায় যাওয়ার জন্য এতটা আগ্রহ….
—-“আমাদের আবার কি তুই যাবি কিনা বল না হলে আমরা গেলাম… (শিফা)
—-“আরে রাগ করছিস কেন আমি তো এমনি মজা করছিলাম জাস্ট দু মিনিট দে আমি এক্ষুনি আসছি….
—-“ঠিক আছে তুই আয় আমরা ড্রয়িং রুমে আছি..(রুহি)
—-“আচ্ছা ঠিক আছে,,
“তারপর রুহি আর শিফা দুজনেই চলে গেল বাহিরে’!!দুজনের মাথায় দুটি মানুষ ঘুরছে একজন আহানকে দেখার জন্য আর আরেকজন রিয়াদকে দেখার জন্য….

“সোফায় বসে টিভি দেখছে শিফা, আর রুহি টেবিলে থাকা একটা বই দেখছে’!!এরই ভিতর দরজা খুলে বের হলো তানজু পড়নে তার ব্লাক জিন্স আর মিষ্টি কালার টপস,চুলগুলো জুটি করা,মাথা একটা ওড়না মুড়িয়ে বললো সেঃ
—-“তাহলে যাওয়া যাক….
—-“হুম চল….
“তারপর আম্মুকে বলে আমরা তিনজনই বেরিয়ে পরলাম রিয়াদ ভাইয়াদের বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে….

“লিফটে চড়ে উপড়ে উঠছি আমরা তিনজন,কে জানে এই দুজন হর্ঠাৎ খালামনিদের বাসায় যাওয়ার জন্য এতটা উতোলা হয়ে গেল কেন,ব্যাপারটা তো দেখতে হচ্ছ,নিশ্চয়ই ঢাল মে কুচ কালা হে….
“লিফট এসে থামলো ১০ তলায় আমরাও তাড়াতাড়ি লিফট থেকে বেরিয়ে দাঁড়ালাম খালামনিদের রুমের দরজার সামনে’!!কলিং বেল টিপতেই রেহেলা আফায়(খালামনির বাসার কাজের লোক)এসে দরজা খুলে দিল’!!আমি ওকে দেখেই জড়িয়ে ধরে বললামঃ
—-“ওহ আমার রেহেলা সুন্দরী আফা কেমন আছো তুমি….
—-“ওহ তানজু আফা আমনেরা আইছেন, আমি ভালা আছি আপনেরা কেমন আছেন…
—-“আমরাও ভালো আছি খালামনি কোথায়..
—-“খালাম্মা তো রুমে শুয়ে আছে আর খালুজান বাহিরে গেছে,রিয়াদ দাদাবাবু রুমে আর আহান ভাইজানও তার রুমে…
—-“ওহ ঠিক আছে আমার জন্য এক গ্লাস ঠান্ডা পানি নিয়ে আসো তো…
—-“ঠিক আছে তানজু আফা আমনেরা বহেন আমি আনতাছি….
“বলেই চলে গেল রেহেলা আর আমি গিয়ে সোজা ধপাস করে বসে পরলাম খালামনিদের বাসার সোফায়,,রুহি ওঁরা গেল খালামনির রুমে…..

“টিভিটা অন করতেই একটা রুম থেকে বের হলো আহান ভাইয়া,পরনে তার ব্লাক ট্রাউজার আর ওয়াইট-টিশার্ট,আমি আহান ভাইয়াকে দেখে মিষ্টি হেঁসে বললামঃ
—-“হ্যালো ভাইয়া কেমন আছেন..??’
—-“হুম ভালো তানজু তুমি…
—-“আমি তে হেব্বি আছি ভাইয়া….
“হাসলেন উনি’!!তারপর বললোঃ
—-“তুমি একা এসেছো নাকি…
—-“না ভাইয়া একা নই রুহি শিফা ওঁরাও আসছে…
“শিফার কথা শুনেই মনে লাড্ডু ফুটলো আহানের’!!উওেজিত কন্ঠে বলে উঠল সেঃ
—–“শিফা এসেছে….
—-“কেন ভাইয়া শিফাকে খুঁজছিলেন নাকি..
—–“না না তেমন কোনো ব্যাপার নয়…

এক ফালি রোদ্দুর পর্ব ১৪

“আমাদের কথার মাঝখানে হর্ঠাৎই আহান ভাইয়ার পিছন থেকে বলে উঠল রিয়াদ ভাইয়াঃ
—-“এখানে কি হচ্ছে….?'(গম্ভীর কন্ঠে)
“রিয়াদ ভাইয়ার কন্ঠ শুনে আমি বলে উঠলামঃ
—-“তেমন কিছু নয় ভাইয়া, আহান ভাইয়া বলছিল…
“আর কিছু বলার আগেই আহান ভাইয়া বলে উঠলঃ
—-“আরে না না কিছু বলছিলাম না তুইও না রিয়াদ, তুই তো জানিস তানজু একটা পাগলী কি বলতে কি বলবে….
—-“কি বললে তুমি আমায়….
—-“না কিছু বলি নি তো…
“এখন আহান পড়েছে মহা বিপদে….
”ডাঙায় বাঘ পানিতে কুমির” এমন একটা ব্যাপার…
“এমন সময় খালামনির রুম টপকে এগিয়ে আসলো শিফা আর রুহি….

এক ফালি রোদ্দুর পর্ব ১৬