এক ফালি রোদ্দুর পর্ব ১৪ || লেখনীতে: তানজিল মীম

এক ফালি রোদ্দুর পর্ব ১৪
লেখনীতে: তানজিল মীম

—“প্লিজ প্লিজ ভাইয়া চলো না আমরা বসি এখানে..
“এক প্রকার মিনতির স্বরে কথাটা বললাম আমি রিয়াদ ভাইয়াকে’!!আর আমার কথা শুনে ভাইয়া শান্ত কন্ঠে বললোঃ
—-“এখানে বসলে যদি পড়ে যাই তখন…
—-“কিছু হবে না ভাইয়া,প্লিজ প্লিজ ভাইয়া চলো বসি, আমার অনেক দিনের ইচ্ছে এটা,
“শেষমেশ ভাইয়া আমার কথায় রাজি হয়ে বললোঃ
—-“আচ্ছা ঠিক আছে,
“সাথে সাথে আমি খুব খুশি হয়ে বললামঃ
—-“থ্যাংক ইউ ভাইয়া…

“আস্তে আস্তে আমি আর রিয়াদ ভাইয়া বসে পরলাম ট্রেনের দরজার কাছে,সিঁড়ির নিচে এক পা রেখে,আমি আর রিয়াদ ভাইয়া পাশাপাশি বসে,ট্রেন চলছে তার তুমুল গতিতে,হাল্কা হাল্কা ভয় লাগছে,কারন ট্রেনের গতি এতটাই তীব্র মনে হচ্ছে আমায় উড়িয়ে নিয়ে যাবে’!!হুট করেই আমি রিয়াদ ভাইয়ার হাত শক্ত করে ধরলাম কারন আমার বার বার মনে হচ্ছে আমি পড়ে যাবো…
“এদিকে রিয়াদ তানজুর কাজ দেখে সে বুঝে গেছে তানজু ভয় পাচ্ছে’!!রিয়াদও তানজুর হাত ধরে বললোঃ
—-“কুল ভয় নেই আমি তো আছি…
“রিয়াদ ভাইয়ার কথা শুনে এক বুক সাহস আসলো মনে’!!আমিও হাল্কা হেঁসে ”হ্যাঁ” নামক মাথা নাড়ালাম’!!
“সামনে তাকাতেই জোনাক রাতের জোছনা ভরা আলো,আকাশে কোনো তারা নেই,কালচে সাদা হয়ে আছে আকাশ,একের পর এক গাছপালা টপকে আমরা সামনে এগিয়ে চলেছি,মনের ভিতর এক অফুরন্ত ভালো লাগা কাজ করছে আমার,তার চেয়ে বেশি খুশি লাগছে এটা ভেবে অবশেষে আমার ইচ্ছেটা পূরণ হলো’!!আমি রিয়াদ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেঁসে বললামঃ

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

—-“থ্যাংক ইউ সো মাচ ভাইয়া আমার এত দিনের ইচ্ছেটা পূরণ করার জন্য…..
“বিনিময়ে রিয়াদ ভাইয়া কোনো জবাব দিলেন না’!!হাল্কা হাসলেন উনি’!!আমিও আর বেশি কিছু না ভেবে প্রকৃতির মায়া ভরা রাতের মজা নিতে শুরু করলাম’!!
“মুগ্ধতায় ঘেরা রাত,যেন স্বপ্নে ঘেরা আলোকিত ভ্রমন,চারপাশের ফুড়ফুড়ে হাওয়া,হাওয়ার গতি এতটাই তীব্র যে পুরো শরীর শিহরিত হয়ে যাচ্ছে,রেললাইনের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি আমি,কারন রেললাইনের ভিতর থাকা ছোট ছোট পাথর একাকটা ছিটকে চলে যাচ্ছে এখান থেকে ওখানে,এক অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছে আমার ভিতর,জীবনে ভালো থাকার জন্য হয়তো এমন সব মুহূর্তই দরকার,আনমনেই হাসলাম আমি’!!

“এদিকে রিয়াদ প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখার সাথে সাথে কয়েক মিনিট পর পর তাকাচ্ছে তানজুর দিকে,রাতের জোৎসা ভরা আলোতে তানজুর মুখ চকচক করছে, তার সাথে তানজুর ঠোঁটের মিষ্টি হাসি খুব ভালো লাগছে রিয়াদের’!!বুকের বাম পাশে দক দক করছে রিয়াদের,হয়তো তানজু তার বুকে মাথা দিলে তার হার্টবিট উঠা নামার শব্দ শুনতে পেল,এক অদ্ভুত ফিলিংস হচ্ছে তার,সাথে এক অফুরন্ত ভালো লাগা,হুট করে তার এমন কেন লাগছে বুঝতে পারছে না রিয়াদ….
“কিছুক্ষণ পর….

“হর্ঠাৎই রিয়াদ তার কাঁধে হাল্কা ভাড়ি কিছু অনুভব করলো’!!পাশ ফিরে তানজুর ঘুমন্ত ফেস দেখে চোখ আঁটকে যায় তার’!!রিয়াদের হাত জড়িয়ে ধরে ওর কাঁধে মাথা দিয়ে বাচ্চাদের মতো ঘুমিয়ে আছে তানজু’!!বাতাসে তানজুর চুলগুলো উড়ছে খুব,রিয়াদ আনমনেই তার হাত দিয়ে তানজুর চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে কানের পাশে গুঁজে দিল!’এক অদ্ভুত শিহরণ বয়ে যাচ্ছে রিয়াদের ভিতর,রিয়াদও তানজুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বসে রইলো চুপটি করে,জোৎসা ভরা রাত,বাহিরের তীব্রতায় ঘেরা বাতাস,আর খোলা আকাশের হাসি সত্যি খুব সুন্দর!’আনমনেই হেঁসে উঠল রিয়াদ….
“সে যেন কোনো এক ঘোরের মাঝে হারিয়ে গেছে, কেন?’ এমন হচ্ছে সেটা এখনো বুঝে উঠতে পারছে না রিয়াদ!’বার বার তার মাথায় এই প্রশ্ন ঘুরছেঃ
—-“এমন কেন হচ্ছে আমার,কই আগে তো এমন হয় নি,তাহলে হুট করে কি হলো আমার…..

“সময়টা ভোর_৬ঃ০০টা বেজে দু’মিনিট…..
“আকাশটা পুরো পরিষ্কার হয়ে গেছে,সাথে সূর্য্যিমামাও উঠে গেছে অনেক আগেই!’এখনও ট্রেন চলছে তার আপন গতিতে,আর রিয়াদ তানজু দুজনে এখনও বসে আছে ট্রেনের দরজার কাছে,বসে আছে বললে একটু ভুল হবে তানজু রিয়াদকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে আর রিয়াদ তাকিয়ে তাকিয়ে তাকে দেখছে,সারারাত আর ঘুম হয়নি রিয়াদের নানান ভাবনায় বিভক্ত ছিল সে’!!হর্ঠাৎই মনে হলো তার,এখন তানজুকে ডাকা উচিত,কারন এইভাবে তাদের কেউ দেখলে মটেও ভালো চোখে নিবে না….

“আস্তে আস্তে রিয়াদ তানজুকে ডাকতে শুরু করল’!!প্রথম ডাকে উঠলো না তানজু,হাল্কা নড়ে উঠলো,
—-“তানজু উঠ তাড়াতাড়ি….
“রিয়াদের কথা শুনে ঘুম ঘুম কন্ঠে বলে উঠল তানজুঃ
—-“উফ,এত ভোরে কেউ ডাকে নাকি….
—-“এখনই উঠতে হবে,কেউ আমাদের এইভাবে দেখে ফেললে কেলেংকারী হয়ে যাবে….
—-“কিসের কেলেংকারী হবে আমরা থোড়াই প্রেম-আলাপ করছি ভাইয়া….
“ঘুমের ঘোরে কি বলতে কি বলে ফেলেছি ভাবতেই চোখ খুলে তাকালাম’!!পাশেই নিজেকে রিয়াদ ভাইয়ার এতটা কাছাকাছি দেখে চমকে উঠলাম আমি’!!অতিরিক্ত উওেজনায় বলে উঠলামঃ

—-“সরি ভাইয়া,আসলে আমি বুঝতে পারি নি….
—-“আর সরি বলার দরকার নেই তাড়াতাড়ি গিয়ে নিজের জায়গায় বস কেউ কিছু বোঝার আগে…
“উওরে আমিও কিছু না বলে তাড়াতাড়ি উঠে চলে গেলাম ভিতরে,লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে আমার,ছিঃ ছিঃ সারারাত আমি ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে ছিলাম,না জানি আমায় কি ভাবলো ভাইয়া…..
“তানজু যেতেই রিয়াদ উঠে দাঁড়ালো, বাহিরের সকালের ফ্রেশ ঠান্ডা বাতাস এসে লাগছে তার গায়ে,সবুজ ঘাসের মাঠ পেরিয়ে এগিয়ে চলেছে তারা,রিয়াদ চোখ বন্ধ করে জোরে এক নিশ্বাস ফেললো’!!তারপর এগিয়ে চললো ট্রেনের ভিতরে,নিজের জায়গায়,সবাই বেঘোরে ঘুমিয়ে আছে এখনও….

“সকাল_৯ঃ০০টা…..
“সবাই দাঁড়িয়ে আছি ঢাকা রেলস্টেশনে!’কিছুক্ষণ আগেই আমরা এসে পৌছালাম এখানে,একে একে সবাই প্লাটফর্ম ছেড়ে চলছি এগিয়ে,সবকিছু যেন নতুন নতুন মনে হচ্ছে আমার,কতদিন পর পা রাখলাম ঢাকাতে,ভালো লাগা খারাপ লাগা দুটোই লাগছে এখন….
“হর্ঠাৎই মাথা একটা চাটি মেরে বলে উঠল দিহান ভাইয়াঃ
—-“দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি ভাবছিস এত…
—-“ভাবছি কতদিন পর আমরা ফিরলাম…
—-“হুম তা ঠিক, তবে বেশি না ভেবে তাড়াতাড়ি চল…
—-“হুম চলো ভাইয়া….

“ঢাকা রেলস্টেশনের বাহিরে বেরিয়ে আসতেই আমাদের গাড়ি এসে হাজির’!!আমরাও আর বেশি কিছু না ভেবে সবাই মিলে বসে পরলাম গাড়িতে….
“সবাই বসতেই ড্রাইভার কাক্কু গাড়ি চালাতে শুরু করল’!!গাড়িও চলছে তার আপন গতিতে….
“আমাদের আর রিয়াদ ভাইয়াদের বাড়ি পাশাপাশি, একি এলাকার পাশাপাশি দুটো বিল্ডিং জুড়েই আমাদের বাড়ি,,,রিয়াদ ভাইয়া হয়তো অনেকদিন পর বাড়িতে ঢুকবে কারন আমেরিকা থেকে সে সোজা গ্রামেই গিয়েছিল এদিকে আর আসে নি,মনে হয় ভাইয়া খুব এক্সাইটিং এ আছে,এরকম নানান কিছু ভেবে জানালার দিকে মুখ করে বসে রইলাম আমি,ঠোঁটে রইলো মিষ্টি হাসি…..
“বেশ ঘন্টাখানেক পর…….

“আমরা এসে পৌছালাম আমাদের বাড়ির মেইন রোডের সামনে,জানালা দিয়েই আমার পিচ্চি বন্ধু রনি,জেরিন,বাচ্চু,রিফাত,রিয়া,তওহিদ সহ আরো সবাইকে ক্রিকেট খেলতে দেখে মনটা নিমিষেই লাফিয়ে উঠলো’!!ইচ্ছে করছে চলন্ত গাড়ি থেকে লাফিয়ে নেমে যাই,কিন্তু সেটা তো পসিবল নয়…
“অবশেষে আমরা এসে পৌছালাম আমাদের বাড়ির গেটের সামনে!’একে একে সবাই নেমে পরলো গাড়ির ভিতর থেকে’!!আমি গাড়ি থেকে নেমেই আম্মুকে বললামঃ
—-“তোমরা যাও আমি আসছি…
—-“তুই আবার কোথায় যাস….
—-“তুমি যাও না আম্মু আমি আসছি….
—-“তুই ওকে আটকাতে পারবি,দেখিস নি সামনে ওর পিচ্চি বন্ধুরা ক্রিকেট খেলছে(খালামনি)
—-“তানজু,এখন কোনো খেলাখেলি নয় তুই সোজা রুমে যাবি এখন….
—-“আহ্,আম্মু আমি খেলতে নয় ওদের সাথে কথা বলতে যাচ্ছি….
“বলেই দৌড়!’আমায় আর পায় কে?এখন এখানে থাকলে আরো হাজার কথা শুনতে হবে!’এদিকে তানজু যেতেই আম্মু বলে উঠলঃ

—-“এই মেয়ে কোনোদিনও ঠিক হবে না,বাড়িতে এক দল রেখে এসেছে আর এখানে আরেক দল এসে হাজির….
—-“তুই ও না,তানজুকে বাদ দিয়ে চল এখন,(খালমনি)
“তারপর দু’দল দুদিকে চলে গেল,রিয়াদ ওরা অন্যদিকে আর দিহান ওঁরা অন্যদিকে,,
“রিয়াদ দাঁড়িয়ে আছে তাদের বাড়ির গেটের সামনে যা দেখে খালামনি বলে উঠলঃ
—-“কি হলো তুই আবার দাঁড়িয়ে পরলি কেন,,
—-“না মানে….
—-“ওহ বুঝতে পারছিস না কোনটা তোর বাড়ি….
—-“ওই আর কি….
—-“যেটার সামনে দাঁড়িয়ে আছিস ওটাই চল তাড়াতাড়ি….
—-“হুম….
“বলেই এক পলক তানজুর দিকে’ তাকিয়ে ভিতরে ঢুকে পরলো রিয়াদ’!!

“তুমুলবেগে দৌড়ে ওদের সামনে এসে চেঁচিয়ে বলে উঠলাম আমিঃ
—-“ওরে আমার পিচ্চি বন্ধুরা তোরা সবাই কেমন আছিস….
“সবাই খেলায় মগ্ন ছিল এমন সময় তানজুর ভয়েস শুনে তানজুর দিকে তাকাতেই সবাই খুশি হয়ে যায়’!!দৌড়ে ওর সামনে গিয়ে সবাই একসাথে চেঁচিয়ে বলে উঠলঃ
—-“ওহ তানজু আপু তুমি এসেছো….
—-“হুম তোরা সবাই কেমন আছিস….
—-“তোমায় ছাড়া ভালো কি করে থাকি আমরা,আর তুমি…
—-“আমার তোদের কথা একটু মনে পড়ে নি….

“সাথে সাথে সবাই মাথা নিচু করে দাঁড়ালো ওঁদের কান্ড দেখে আমি হেঁসে বলে উঠলামঃ
—-“হইছে আর মন খারাপ করতে হবে না আমারও খুব মনে পড়েছে তোদের কথা,,
“সাথে সাথে সবাই খুশি হয়ে বললোঃ
—-“ক্রিকেট খেলবে তো তানজু আপু….
—-“হুম খেলবো তবে এখন নয় বিকেলে এইমাএ আসলাম বুঝতেই পারছিস….
—-“ঠিক আছে তানজু আপু…..
—-“হুম,আর আমি না থাকাতে কে কি কি করেছিস সবকিছু শুনবো কিন্তু….
—-“ঠিক আছে তানজু আপু….
—-“ঠিক আছে এখন তোরা খেল আমি যাই,মাতাজি না হলে রাগ করবে….
—-“ওকে তানজু আপু….
“ওদের কথা শুনে মুচকি হেঁসে সবার কাছ থেকে বিদায় জানিয়ে চললাম আমি বাড়ির দিকে….

এক ফালি রোদ্দুর পর্ব ১৩

“নিজের রুমে ঢুকতেই সবকিছু নতুন লাগছে রিয়াদের কাছে,পুরো রুমটা এখনও আগের মতোই আছে সাদা চাঁদরের তুলতুলে নরম বিছানায় ঠাস করে শুয়ে পরলো রিয়াদ,কত স্মৃতি জুড়ে আছে তার এই রুমটায়,,,,,
“কিছুক্ষণ শুয়ে থেকে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো রিয়াদ,সাদা থাইগ্লাস টপকে এগিয়ে গেল বেলকনির দিকে,,পুরো দশ তালার উচু বিল্ডিং এর টপ ফ্লোরের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে রিয়াদ,কিছুক্ষণ আশেপাশের পরিবেশ দিকে তাকিয়ে চলে গেল রিয়াদ ওয়াশরুমের দিকে,গোসল করতে হবে তাকে……

“লাগাতার কলিং বেল টিপে চলেছি আমি,কিন্তু ভিতর থেকে দরজা খোলার নাম গন্ধ পাচ্ছি না,আশ্চর্য এতটুকু সময়ে সব গেল কই?
“এরই মধ্যে দিহান ভাইয়া এসে দরজা খুললো’!!তাকে দেখেই বললাম আমিঃ
—-“এতক্ষণ কি করছিলে দরজা খুলতে এত সময় লাগে নাকি,জানো আমার কত কষ্ট হয়েছে….
—-“এলি তো লিফটে কষ্ট হলো কোথায়…
—-“ওটা তুমি বুঝবে না…
“বলেই ভাইয়াকে পাশ কাটিয়ে চলে আসলাম আমি,,
“রুমে ঢুকেই কোনোকিছু না দেখেই ড্রয়ার থেকে প্লাজু আর টি-শার্ট নিয়ে চলে গেলাম আমি ওয়াশরুমে….
“বেশকিছুক্ষন পর….

এক ফালি রোদ্দুর পর্ব ১৫