এক ফালি রোদ্দুর পর্ব ২০ || লেখনীতে: তানজিল মীম

এক ফালি রোদ্দুর পর্ব ২০
লেখনীতে: তানজিল মীম

—-“ভাইয়া তুমি হাসছো আর আমার রাগ হচ্ছে…
“প্রচন্ড ক্ষিপ্ত মেজাজে কথাটা বলে উঠলাম আমি রিয়াদ ভাইয়াকে’!!আর আমার কথা শুনে রিয়াদ ভাইয়া বলে উঠলঃ
—-“আরে এতো রাগার কি আছে দোকানদার তো ভুল করে বলে ফেলেছে…
—-“তারপরও বলবে ক্যান?’
—-“হইছে এখন চল…
—-“ঠিক আছে চলো,না এক মিনিট দাঁড়াও…
“রিয়াদ এক পা এগিয়েও থেমে গিয়ে বললোঃ
—-“আবার কি হলো?’
—-“না আমার জন্য শাড়ি কিনলে রুহি শিফার জন্য কিনবে না ওঁরা দেখলে তো কষ্ট পাবে…
“তানজুর কথা শুনে রিয়াদ চরম প্রকার অবাক’!!অবাক চোখেই বললো সেঃ
—-“ওদের জন্যও কিনতে হবে…
—-“অবশ্যই ভাইয়া, তবে এই দোকান থেকে নয় অন্য দোকানে চলো…
“রিয়াদ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললোঃ
—-“আচ্ছা ঠিক আছে চল….
“তারপর আমরা মেলায় থাকা আরেকটা দোকান থেকে দুটো সুন্দর জামদানী শাড়ি কিনে নিলাম,তারপর আরো কিছুক্ষন ঘোরাঘুরি করে চলে আসলাম আমরা মেলার বাহিরে…

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

—-“তাহলে ভাইয়া এখন বাসায় যাওয়া যাক…
“গাড়ির সিট বেল্ট লাগাতে লাগাতে বললাম আমি’!!আমার কথা শুনে রিয়াদ ভাইয়াও গাড়ি স্ট্যার্ট দিতে দিতে বললোঃ
—-“হুম…
“কুটকুটে নীরবতা বিরাজ করেই,ব্যস্ত শহরের ব্যস্ত রাস্তা দিয়ে চললাম আমরা বাড়িতে….
“গাড়ির ভিতর বসেই একটা একটা জিনিস ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে লাগলাম আমি,অনেক কিছু কিনেছি আজকে,অবশ্য কিনেছি বললে ভুল হবে কিনে দিয়েছে রিয়াদ ভাইয়া,শাড়ি, শাড়ির সাথে মেচিং করা জুয়েলারি, কানের দুল সহ ছোট্ট টিকলি,টিকলি আমার মোস্ট ফেবারিট…,সবকিছু দেখতে দেখতে মুচকি হেঁসে বললাম আমিঃ
—-“থ্যাংক ইউ সো মাচ ভাইয়া আমায় এত কিছু গিফট করার জন্য,
“বিনিময়ে রিয়াদ আর কিছু বললো না,তানজুর হাসি মাখা মুখ দেখেই খুশি হলো সে,সামান্য শাড়ি জুয়েলারি পেয়ে এত খুশি হবে তানজু ভাবতে পারে নি রিয়াদ…
“ঠোঁটে প্রশান্তির হাসি নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে রিয়াদ….
“বেশকিছুক্ষন পর…..
“আমাদের গাড়ি এসে থামলো আমাদের দুজনের বাড়ির মাঝখানে…,
“খুশি মনেই নেমে গেলাম আমি গাড়ি থেকে,তারপর গাড়ির জানালার সামনে দাঁড়িয়ে রিয়াদ ভাইয়াকে বললামঃ

—-“ঠিক আছে ভাইয়া পরে দেখা হবে বাই…
“রিয়াদ তানজুর দিকে তাকিয়ে বললোঃ
—-“একটা কথা বলি…
—-“হুম বলো না…
—-“তুই কি সত্যি খুব রেগে গিয়েছিলি তখন…
—-“মানে কখন,,
—-“ওই যে দোকান আমাদের…
—-“ওহ তখন একটু-আধটু…
—-“আচ্ছা ধর দোকানদারের কথা যদি সত্যি হয় তখন…
—-“মানে…
—-“না কিছু না যা তুই….
—-“ঠিক আছে বাই…
“তারপর তানজু চলে গেল,রিয়াদ কিছুক্ষণ তানজুর দিকে’ তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো,সে বুঝতে পারছে না হুট করে সে কি বলে ফেললো তানজুকে…
“এসব ভাবতে ভাবতেই ঢুকে পরলো রিয়াদ গাড়ি নিয়েই বাড়ির ভিতর,গাড়িটা গেরেজে রেখে গাড়ির চাবি নিয়ে লিফটে উঠে পরলো রিয়াদ….

“নিজের রুমে ঢুকেই ফ্যানটা অন করে ব্যাগপএ গুলো টেবিলের উপর রেখে ধপাস করে শুয়ে পরলাম আমি বিছানার উপর,ক্লান্ত লাগছে খুব তাই চোখ বন্ধ করে নিলাম নিমিষেই…
“ফ্যানের ঠান্ডা বাতাস যেন ফিল করছি আমি,আজ সারাদিন ভালোই কাটলো,শুধু ওই দোকানদারের কাহিনিটা আর সকালের ওই বদমাশ ছেলেটার সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যাওয়া বাদে,,হুট করেই মাথায় এসে একটা কথা বারি মারলো আমার..
—-“তখন রিয়াদ ভাইয়া কি বোঝাতে চাইলো আমায়…
“ফট করেই চোখ খুলে তাকালাম আমি,উপরেই সাদা রঙের সিলিং ফ্যান ঘুরছে,কিসব আজগুবি চিন্তাভাবনা মাথায় আসছে,তাড়াতাড়ি মাথাটা ঝেরে ফেলে দিলাম আমি,এখন সবার আগে লম্বা সাওয়ার নিতে হবে,না হলে ক্লান্ত ভাবটা যাবে না,যেই ভাবা সেই কাজ,ড্রয়ার থেকে প্লাজু আর একটা টিশার্ট নিয়ে ঢুকে পরলাম আমি ওয়াশরুমে…..

—-“তারপর রিয়াদ ঠিক মতো তানজুকে নিয়ে আসতে পেরেছিস, কোনো সমস্যা হয় নি তো…
“রুমে ঢোকার সাথে সাথেই কথাটা বলে উঠল রিয়াদের আম্মু রিয়াদকে’!!রিয়াদ ক্লান্তি ভরা মুখ নিয়ে বললোঃ
—-“না আম্মু তেমন কোনো প্রবলেম হয় নি…
—-“ঠিক আছে তুই তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আয় আমি খাবার বাড়ছি..
—-“ঠিক আছে আম্মু…
“বলেই রিয়াদ চলে গেল তার রুমে’!!প্রচন্ড ক্লান্ত সে,
“রিয়াদ তানজু দুজনেই লম্বা সাওয়ার নিয়ে লাঞ্চ সেরে ঘুমিয়ে পরলো যে যার রুমে’!!

“বিকেল ৫ঃ০০টা….
“আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তৈরি হচ্ছি আর আম্মু,কারন এখন আমরা রুহি শিফাদের বাড়িতে যাবো!’দুপুরে খাওয়ার সময় জেনেছিলাম রিয়াদ ভাইয়া নাকি কাল বাদে পরশু চলে যাবে তাই আজকে রিয়াদ ভাইয়াকে নিয়ে রুহি শিফাদের বাসায় যাবে,সাথে আমারাও…
“খালামনি,রিয়াদ, আহান ওনারাও তৈরি হচ্ছে…
“সবাই মিলে একসাথে যাবো!’
—-“তোর হইছে তানজু…
—-“হুম হয়ে গেছে আম্মু…
“বলেই হাতে মোবাইলটা নিয়ে আর শিফা রুহির জন্য কেনা গিফটগুলো নিয়ে বেরিয়ে পরলাম আমি!’আজকে একটা লাল রঙের ওপর কাচ করা জর্জেট চুড়িদার পড়েছি,সাথে হাতে কিছু চুড়ি,চুলগুলো সামনে দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে বেনুরি করা আর হাল্কা মেকাপ, চোখে কাজল ব্যস তৈরি তানজু,
“সব জিনিসগুলো নিয়ে তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেরিয়ে পরলাম আমি,কারন আম্মু অনেক আগেই রুম থেকে বেরিয়ে গেছে….

“এদিকে রিয়াদ,,
“ব্লাক জিন্স, সাদা শার্ট শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত বোল্ড করা,হাতে ব্লাক ওয়াচ,চুলগুলো সুন্দর করে সাজিয়ে সাথে পারফিউম দিয়ে তৈরি সে,এই মুহূর্তে রিয়াদের কোনো ইচ্ছে নেই রুহিদের বাসায় যাওয়ার কিন্তু তারপরও তাকে বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে একবার আয়নায় দেখলো রিয়াদ এমন সময় আহান দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে থেকে বললোঃ
—“দোস্ত তোর হইছে আর কত সাজবি,,
”এই নিয়ে পাক্কা তিন বার এই কথা বলেছে আহান!’আহান তো খুব এক্সাইটিং এ আছে কখন শিফাদের বাসায় যাবে আর শিফাকে দেখবে’!!আজকে আহানও সেজেছে ব্লাক শার্ট, ব্লাক জিন্স শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত বোল্ড করা,হাতে ঘড়ি,চুলগুলো জেল দিয়ে সাজিয়েছে,এই মুহূর্তে আহান রিয়াদ দুজনকেই অসম্ভব সুন্দর লাগছে’!!রিয়াদ আহানের কথা শুনে কিছু না বলেই নিজের চুলগুলোতে একবার হাত দিয়ে পিছনে সরিয়ে এগিয়ে গেল আহানের সামনে তারপর বললোঃ
—-“চল এখন হয়ে গেছে…
—-“অবশেষে তোর হলো আমি তো ভেবেছিলাম তোর আজকে হবেই না…
—-“হইছে আর বকবক না করে চল এখন…
“বিনিময়ে আহান কিছু বললো না,হাল্কা হেঁসে চললো সে’!!

“৫ মিনিট যাবৎ দাঁড়িয়ে আছি আমি খালামনি আর আম্মু কিন্তু আহান আর রিয়াদ ভাইয়ার খবর নেই, না জানি এরা দুজন এতক্ষণ কি করছে…
“এসব ভাবতে ভাবতেই চলে আসলো দুজন আহান আর রিয়াদ ভাইয়া,তাদের দুজনকেই খুব সুন্দর লাগছে!’আজকে শিফা তো মনে হয় আহান ভাইয়াকে দেখেই ক্রাশ খাবে,আর রুহি এটা অবশ্য শিওর না….
“রিয়াদ আহান আমাদের সামনে আসতেই খালামনি বললোঃ
—-“এতক্ষণ কি করছিলি তোরা দুজন,
—-“আর বলো না এই আহান এত দেরি করে কি বলবো…
“আহানের তে রিয়াদের কথা শুনে চোখ বড় বড় হয়ে গেল’!!
—-“হইছে আর কথা না বারিয়ে চল তাড়াতাড়ি… (রিয়াদের আম্মু)
—-“ঠিক আছে আম্মু….
“ড্রাইভিং করছে রিয়াদ ওর পাশেই বসেছে আহান!’এপাশে আমি রিয়াদ ভাইয়ার পিছনে সিটে জানালার পাশ দিয়ে বসেছি তারপর আম্মু তারপর খালামনি!’আমরা সবাই ঠিকভাবে বসতেই রিয়াদ ভাইয়া বলে উঠলঃ
—-“তাহলে গাড়ি স্ট্যার্ট দেই…
—-“হুম…
“খালামনির কথা শুনে রিয়াদ ভাইয়াও গাড়ি চালাতে শুরু করল’!!গাড়ি চলতেই আমি গাড়ি জানালার ওপর ভর দিয়ে সুন্দর করে বসলাম,জানালা ভেদ করে বাতাস আসছে, গাড়ির ভিতর আম্মু আর খালামনি বকবক করছে আর আমি নাম নিশ্চুপে গাড়ি জানালায় হেলান দিয়ে বসে রইলাম…

“গাড়ির সামনে থাকা লুকিং গ্লাসে কিছু মিনিট পর তাকাচ্ছে রিয়াদ,কারন লুকিং গ্লাসে স্পষ্ট তানজুর ফেসটা দেখা যাচ্ছে রিয়াদ না চাইতেও বার বার শুধু দেখছে তানজুকে ভালো লাগছে তার….
“আনমনেই হেঁসে উঠলো সে’…..

“বেশকিছুক্ষন পর…..
“আমাদের গাড়ি এসে থামলো রুহি – শিফার বাড়ির সামনে,আমি খুশি হয়ে তাড়াতাড়ি নেমে পরলাম গাড়ি থেকে,উদ্দেশ্য এক দৌড়ে বাড়ির ভিতর ঢুকে যাবো,কিন্তু তা আর হলো কই তার আগেই আম্মু হাত চেপে ধরে বললঃ
—-“একদম দৌড়াবি না,চুপচাপ আস্তে আস্তে ভিতরে ঢুকবি….
“আম্মুর কথা শুনে আমার আশায় একটা বালতি পানি ঢেলে বলে উঠলামঃ
—-“ঠিক আছে……
“তারপর আস্তে আস্তে আমরা সবাই একসাথে ঢুকলাম বাড়ির ভিতর….

এক ফালি রোদ্দুর পর্ব ১৯

“আরেক দিকে বাসার ছাঁদের উপর থেকে তাকিয়ে আছে রুহি নিচের দিকে,রিয়াদকে দেখেই একদফা ক্রাশ খেলো রুহি,এক রাশ ভালোলাগা এসে গ্রাস করলো তাকে,ঠোঁটে এমনিতেই এসে পড়েছে মিষ্টি হাসি….
“এমন সময় ওর মাথায় চাটি মারলো শিফা তারপর বললো সেঃ
—-“তুই এখানে কি করছিস…
—-“কিছুই করছি না দুলাভাইকে দেখতে আসলাম আর তুই…?’
“রুহির কথা শুনে আমতাআমতা করে বললো শিফাঃ
—-“আমি তো তোকে নিতে এসেছি আম্মু ডাকছে…
—-“হুম সবই বুঝি কি জানো একটা বলে তানজু হুম মনে পরছে
“এহনো কি খাই সুজি তাই একটু হলেও বুঝি…
—-“কচু বুঝোস তুই আয় তাড়াতাড়ি নিচে…
“বলেই একপলক তাকালো শিফা নিচের দিকে যা দেখে রুহি হাসতে হাসতে বলে উঠলঃ
—-“এখন দেখে লাভ নেই চলে গেছে ভিতরে…
“রুহির কথা শুনে শিফা ঠোঁটে কামড় দিয়ে বললোঃ
—-“তাহলে তুই দাঁড়িয়ে আছিস কেন এখানে চল নিচে…
“বলেই রুহিকে টানতে টানতে নিয়ে যায় শিফা নিচে….

“রুহিদের বাসায় সোফায় গোল হয়ে বসে আছি আমি,আমার পাশে রিয়াদ ভাইয়া তারপর আহান ভাইয়া আর বাকি দুটো সোফায় একটায় আম্মু আরেকটায় খালামনি,,বিরক্ত লাগছে আমার ধূর এইভাবে বসে থাকার জন্য এখানে আসছি নাকি….
“ধূর ভালো লাগে না….
“এমন সময়…….

এক ফালি রোদ্দুর পর্ব ২১