এক ফালি রোদ্দুর পর্ব ২১ || লেখনীতে: তানজিল মীম

এক ফালি রোদ্দুর পর্ব ২১
লেখনীতে: তানজিল মীম

“সিঁড়ি উপর থেকে উঁকি ঝুঁকি মারছে শিফা আর রুহি’!!দুজনের মনের ভিতরই কেমন কেমন করছে,শিফার উঁকি মারা দেখে রুহি ওর মাথায় একটা চাটি মেরে বললোঃ
—-“এভাবে কি উঁকি মারছিস বল তো মনে হচ্ছে চুরি করতে যাচ্ছি…
—-“আমি একা উঁকি মারছি নাকি তুইও তো মারছিস…
—-“তুই মারছিস দেখে তো আমিও মারছি….
—-“আচ্ছা আমরা উঁকি মারছি কেন?’
—-“সেটাই তো চল নিচে…
“এই বলে দুজনেই আস্তে আস্তে নামলো সিঁড়ির উপর থেকে…

“সহ্যের সীমা অতিক্রম করে ফেলেছি আমি কিন্তু তারপরও এখানে বসে থাকতে হচ্ছে, আমি বুঝতে পারছি না আমাকে এরা যেতে দিচ্ছে না কেন?আর রুহি শিফাও বা গেল কই আমরা এসেছি ওরা শোনে নি নাকি…আচমকা রিয়াদ ভাইয়া আমার দিকে ঝুঁকে কানে কানে বললোঃ
—-“ঠিক ভাবে বসতে পারিস না নাকি এভাবে কচ্ছপের মতো নড়াচড়া করছিস কেন?
“রিয়াদ ভাইয়ার কথা শুনে হাল্কা কেঁপে উঠলাম আমি’!!তারপর আস্তে আস্তে বললামঃ
—-“নড়বো না কি করবো বলো তো আর কতক্ষণ এইভাবে বসে থাকবো এখানে বসে থাকার জন্য আসছি নাকি,
—-“তোর কি সারাদিন লাফালাফি করা ছাড়া আর কিছু ভালো লাগে না….
—-“না, এইভাবে চুপচাপ থাকতে একদমই ভালো লাগে না,কেমন মরা মরা লাগছে….
—-“তুই যার কপালে আছিস তার জীবনটা পুরোই তেজপাতা হয়ে যাবে…
—-“তুমি আমায় ইনছাল্ট করছো…
—-“একদমই না…

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

—-“যাও আমিও তোমায় দোয়া দিয়ে দিলাম তোমার কপালে যেন আমার মতই একটা মেয়ে জুটে যার জন্য তোমার জীবনটা তেঁজপাতা হয়ে যায় হুহ(রেগে)
“তানজু কথাটা রহস্যের ছলে বললেও রিয়াদের ভালো লেগেছে!’নিশ্চুপে হাসলো সে…
“এমন সময় আমাদের সামনে এসে হাজির হলো রুহি আর শিফা’!!ওদের দেখেই বলে উঠলাম আমিঃ
—-“বাহ্ বা এতক্ষণ পর আসছিস তোরা আমি তো ভাবছিলাম আজকে তোরা আসবি না তা এতক্ষণ কি করছিলি তোরা…
—-“কিছুই করছিলাম না….(রুহি)
“এদিকে শিফা তাকিয়ে আছে আহানের দিকে,আহানও তাকিয়ে আছে শিফার দিকে’ দুজনই চোখে চোখে অনেক কিছু বলছে,
“ভালোবাসা হয়তো এমনি কখন কার প্রতি আসবে বোঝাই যায় না….
“আনমনেই মুচকি হাসে আহান আর শিফা!’

—-“ভালোবাসিস রিয়াদ ভাইয়াকে….
“আচমকা তানজুর মুখে এমন কথা শুনে পুরোই কেঁপে উঠল রুহি,সে একদমই ভাবতে পারে নি তানজু এমন কিছু বলবে…..
“রুহি তানজুর কথা শুনে আমতা আমতা করে বললোঃ
—-“মা…. নে…..
—-“আমি কিন্তু এমন কিছু বলি নি যেটা তুই বুঝতে পারিস নি..
—-“আমি সত্যিউ বুঝতে পারছি না….
—-“আচ্ছা ঠিক আছে আবারো বলছি,ভালোবাসিস রিয়াদ ভাইয়াকে….
—-“কিসব বলছিস তুই তানজু, আমি আর রিয়াদ ভাইয়া….
—-“না মানে তখন নিচে যখন তুই রিয়াদ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে হাসতে ছিলি তাই মনে হলো…
—-“তুই কি পাগল তানজু কারো দিকে তাকিয়ে হাসলেই তাকে ভালোবেসে ফেললাম….
—-“না মানে…

—-“দেখ তানজু তুই তো জানিস আমার অতীত তারপরও আবার..
“বলেই দীর্ঘ শ্বাস ফেললো রুহি’!!রুহির মন খারাপ দেখে আমার খারাপ লাগলো তাই ওকে জড়িয়ে ধরে বললামঃ
—-“সরি আমি তোকে থার্ট করার জন্য বলি নি….
—-“আমি সব জানি তানজু,তুই যা ভাবছিস তা একদমই ঠিক নয়…
—-“ওহ হয়তো ভুল হইছে ঠিক আছে কোনো ব্যাপার না….
“এমন সময় নিচ থেকে ডাক পরলো আমাদের ডিনার করার জন্য কারন আমি আর রুহি এতক্ষন ওদের রুমে দাঁড়িয়ে ছিলাম,খালামনির ডাক শুনে আমিও আর বেশি না বকে বললামঃ
—-“ঠিক আছে আবারো সরি ভুলভাল বলার জন্য চল এখন….
—-“তুই যা আমি আসছি….
—-“ঠিক আছে তাড়াতাড়ি আসিস….
—-“হুম যা তুই…..
“রুহির কথা শুনে আমিও কিছু না বলে বেরিয়ে আসলাম রুহির রুম থেকে’!!
—-“তার মানে আমি এতদিন হুদাই ভাবছি রুহি ভালোবাসে রিয়াদ ভাইয়াকে…
“এসব ভাবতে ভাবতে চললাম আমি!’

“এদিকে রুহি রুমে দাঁড়িয়ে….
—-“এখনই তোকে সবটা বলা যাবে না তানজু,কারন আমি চাই না আমার আগে কেউ রিয়াদকে বলুক আমি তাকে ভালোবাসি,আর তোকে বললে তো পুরো পরিবারই জেনে যাবে তাই সরি বোন মিথ্যে বলার জন্য,
“হুট করেই কিছু একটা ভেবে মনটা খারাপ হয়ে গেল রুহির,আজ অনেক দিন পর আবার তার কিছু পুরনো অতীতের কথা মনে পরলো,ছোট্ট একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো সে’!!তারপর আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে চললো সেও নিচে……

“রাত ১০ঃ৩০টা…..
“সবাই মিলে একসাথে ডিনার সেড়ে নিলাম,এখন বাড়ি যাওয়ার পালা’!!রুহিদের গেটের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছি আমি,আম্মু,খালামনি,রিয়াদ,আহানসহ সবাই,
—-“আজকের রাতটা থেকে গেলে হতো না….(রুহির মা)
—-“মন খারাপ করিস না বোন আমরা আবার আসবো কিন্তু আজ আর নয়,এমনিতেও বাড়িতে অনেক কাজ আছে রিয়াদ আবার চলে যাবে আমেরিকা তার জন্যও তো কিছু গোছগাছ করতে হবে তাই না,,(রিয়াদে মা)
“রিয়াদ ভাইয়া চলে যাবে,তার মানে তো আহানও চলে যাবে”—হুট করেই কথাটা শিফার মাথায় আসতেই মনটা খারাপ হয়ে গেল তার,এর মানে তো আবার কবে তাদের দেখা হবে ঠিক নেই….
“নিরাশ চোখে তাকালো শিফা আহানে দিকে’!!আহানও তাকিয়ে ছিল শিফার দিকে,হয়তো দুজনেই দুজনের চোখে ভাষা বুঝতে পেরেছে….

—-“তাহলে খালামনি এখন আমরা আসি আবার পরে দেখা হবে….
“রিয়াদের কথা শুনে শিফা আহান দুজনেই চোখ ফিরিয়ে নিল!’
—-“ঠিক আছে বাবা ভালো থাকিস… (রুহির মা)
“মুচকি হাসলো রিয়াদ’….
“তারপর একে একে আমরা সবাই সবার কাছ থেকে বিদায় জানিয়ে উঠে পরলাম গাড়িতে….
________
“রাত বারোটা বেজে চল্লিশ মিনিট….
“নিজের রুমের নিজের বিছানায় শুয়ে আছি আমি!’কতক্ষণ আগেই আমরা এসে পৌছালাম বাড়িতে,প্রচন্ড ক্লান্ত থাকাই রুমে এসে শুয়ে পরলাম আমি,,
“আচমকা মোবাইলে টুং করে আওয়াজ আসায় অবাক হলাম আমি’!!এত রাতে কে মেসেজ দিলো আমায়…
“ভেবেই মোবাইলটা হাতে নিলাম আমি,উপরে আহান ভাইয়ার নাম দেখে আরো চরম অবাক আমি….

“রিয়াদের রুমের দরজা নক করলো আহান,রিয়াদ বিছানায় বসে ল্যাপটপে মুভি দেখছিল এতরাতে কে দরজায় নক করলো ভেবেই রিয়াদ বিছানা থেকে নেমে দরজা খুলে দিল,দরজা খুলেই আহানকে দেখে অবাক হয়ে বললো সেঃ
—-“তুই এতরাতে আমার রুমে….
“আহান রিয়াদের প্রশ্নের কোনো উওর না দিয়ে হন হন করে ঢুকে পরলো রুমের ভিতরে,সে চলে যায় সোজা রিয়াদের রুমের বেলকনিতে কারন কিছুক্ষন আগেই আহান তানজুকে মেসেজ করে আসতে বলেছে তাদের বেলকনিতে কিছু জরুরি কথা আছে তার তানজুর সাথে….
“এদিকে আহানের কাজে তো রিয়াদ চরম অবাক,আহান কি করতে চাইছে ঠিক ভাবে বুঝতে পারছে না রিয়াদ,তাই সেও আস্তে চলে যায় বেলকনিতে….
“বেলকনিতে যেতেই তার চোখ চড়ুই গাছ’!কারন এতরাতে আহান তানজুর সাথে কথা বলতে তার রুমে এসেছে,
“আহান খুব হেঁসে হেঁসে তানজুর সাথে কথা বলছে যেটা একদমই সহ্য হচ্ছে না রিয়াদের!’
—“কিন্তু কি কথা বলছে ওঁরা….

—-“ঠিক আছে ভাইয়া সব হয়ে যাবে আপনি শুধু ঠিক টাইমে চলে আসবেন…
—-“ঠিক আছে তানজু,প্লিজ তুমি একটু সবটা হেন্ডেল করে নিও….
—-“আপনি চিন্তা করবেন না ভাইয়া আমি সবটা দেখে নিবো নে….
—-“ঠিক আছে বাকি কথা কাল হবে….
—-“ঠিক আছে….
—-“এখানে কি হচ্ছে শুনি…(রিয়াদ)
“রিয়াদের কন্ঠ শুনে আহান পিছন ফিরে বললোঃ
—-“তেমন কিছুই না ওই তানজুর একটা হেল্প লাগতো তাই আরকি,ঠিক আছে তানজু গুড নাইট কালকে দেখা হবে,
“বলেই রিয়াদকে গুড নাইট বলে চলে যায় আহান’!!
“আহান যেতেই রিয়াদ তানজুর দিকে তাকিয়ে বললোঃ
—-“এতক্ষণ তোদের মধ্যে কি কথা হয়েছিল বলতো….
—-“তেমন কিছুই না…
—-“আমায় বলবি না নাকি আহান বলতে বারন করেছে…
—-“না বারন করবে কেন?’তাহলে শোনো….
“রিয়াদ তো তানজুর মুখে সব শুনে হাসতে হাসতে শেষ!’
—-“যাহ বাবা তুমি হাসছো কেন?
—-“না কিছু না….

“এতক্ষণ কিসব ভাবছিল রিয়াদ!’ভাবতেই হাসি পাচ্ছে রিয়াদের….
“তারপর দুজন মিলে পাক্কা এক ঘন্টা গল্প করে চলে গেল তানজু তার রুমে’!!
“তানজুর যাওয়ার পানে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো রিয়াদ’!!তারপর আকাশের পানে তাকালো সে আজকের চাঁদটা ভিষন সুন্দর,,
“আজকের আকাশে কোনো তাঁরা নেই,যেটা আছে সেটা হলো ওই সুন্দর আকাশের মাঝে সূর্যের আলোতে আলোকিত হওয়া ওই চাঁদটা….
“আনমনেই মুচকি হাসলো রিয়াদ!’তারপর সেও চলে যায় তার রুমে,ঘুম পাচ্ছে তার….
“রুমে ঢুকে ল্যাপটপটা অফ করে, রুমের দরজা বন্ধ করে ঘুমিয়ে পরল রিয়াদ…….

এক ফালি রোদ্দুর পর্ব ২০

“পরেরদিন ভার্সিটি শেষে…..
“ভার্সিটির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি আমি, শিফা আর রুহি!’দুজনেই আমার কাজে অবাক কারন তাঁরা জানে না আমি কেন ওদের এখানে দাঁড়িয়ে রেখেছি?’
—-“তানজু তুই বলবি আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি কেন?(শিফা)
—-“আরে শপিং এ যাবো…
—-“এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শপিং এ যাবি নাকি….
—-“না গাড়ি আসবে তো তারপর….
“বলতে না বলতেই রিয়াদ আর আহান ভাইয়া গাড়ি নিয়ে হাজির আমাদের সামনে….
“শিফা রুহি তো ওদের দেখে চরম অবাক…..
“অবাক হয়ে বললো ওঁরাঃ

—-“রিয়াদ,আহান ভাইয়া এখানে কেন?
—-“চলতো আগে তারপর বলবো….
“বলেই শিফা আর রুহিকে নিয়ে ঢুকে পরলাম আমি গাড়িতে’!!ওদের নিয়ে বসতেই বলে উঠলাম আমিঃ
—-“তাহলে যাওয়া যাক রিয়াদ ভাইয়া….
—-“হুম….
“বলেই গাড়ি স্ট্যার্ট দিলো রিয়াদ,,
“আর শিফা রুহি দুজনেই অবাক চোখে জাস্ট তাকিয়ে তাকিয়ে সবার কান্ড দেখছে কিছুই বুঝতে পারছে না তাঁরা’….
“এঁরা ঠিক কি করতে চাইছে..?”

এক ফালি রোদ্দুর পর্ব ২২