এক ফালি রোদ্দুর পর্ব ২৪ || লেখনীতে: তানজিল মীম

এক ফালি রোদ্দুর পর্ব ২৪
লেখনীতে: তানজিল মীম

“রান্না ঘরে দাঁড়িয়ে আছি আমি,অবশ্যও দাঁড়িয়ে আছি বললে ভুল হবে খুন্তি নাড়ছি,আজকে রিয়াদ ভাইয়া চলে যাবে তার জন্য আম্মু নিজ হাতে রান্না করেছে রিয়াদ ভাইয়ার জন্য,সব রান্না প্রায় শেষ শুধু এই ঝোল মাংস বাদে,তাই এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষন পর পর খুন্তি দিয়ে মাংস নাড়ছি আমি,ঘেমে পুরো নাজেহাল অবস্থা,তারওপর কাল রাতে ঠিক মতো ঘুম হয় নি সব মিলিয়ে অবস্থা বেহাল,তবে এসবের মধ্যে সবচেয়ে ভালো যেটা ছিল সেটা হলো বৃষ্টির ভিতর পাগলামি সত্যি কাল খুব মজা হয়েছে,
—-“ইস ভাইয়া চলে যাবে না হলে আমরা প্রায় ওইভাবে ঘুরতে যেতাম….
“কথাটা বলে আনমনে হেঁসে উঠলাম আমি!’

“এদিকে রান্না ঘরের দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে রিয়াদ কিছুক্ষন আগেই সে এসেছে এখানে,তানজুর দিকে তাকিয়ে আছে রিয়াদ কেমন যেন লাগছে তানজুকে,,
“ব্লাক ট্রাউজার, সাথে ওয়াইউ টিশার্ট, চুলগুলো উঁচু করে কাঁকড়া ব্যান্ট দিয়ে আটকানো,কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম, অনেকগুলো ছোট ছোট চুল পড়ে আছে কপালের সামনে,হাতে খুন্তি সবমিলিয়ে একটু অন্যরকম দেখাচ্ছে তানজুকে,এক কথায় বলতে গেলে বউ বউ লাগছে,,,

“নিজের অজান্তেই হেঁসে উঠলো রিয়াদ’!!তারপর দু’পা এগিয়ে গিয়ে তানজুর সামনে দাঁড়িয়ে বললো সেঃ
—-“কি করছিস তুই….
“আচমকা রিয়াদ ভাইয়া কন্ঠ শুনে কিছুটা চমকে উঠলাম আমি’!!তারপর হাল্কা হেঁসে বললামঃ
—-“কিছুই করছি না জাস্ট খুন্তি নাড়ছি….
“আমার কথা শুনে হাসলো রিয়াদ ভাইয়া’!!তারপর বললোঃ
—-“তুই রান্না করতে পারিস….
—-“একটু আকটু…
“রিয়াদ কিছুটা অবাক হয়ে বললোঃ
—-“রিয়েলি…
—-“সব পারি না বাট টুকটাক….
—-“খুব ভালো…
—-“তুমি একা আহান ভাইয়া আসে নি?’
—-“হুম আসছে তো তার প্রেমিকাকে নিয়ে ব্যস্ত…

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“রিয়াদ ভাইয়ার কথা শুনে আমি হেঁসে উঠলাম সাথে রিয়াদ ভাইয়াও হাসলো’!!এমন সময় রান্না ঘরে প্রবেশ করল রুহি,আমাদের হাসতে দেখে বললো সেঃ
—-“কি হলো তোমরা হাসছো কেন?
—-“এমনি হাসছি…(রিয়াদ)
—-“এমনি এমনি কেউ হাসে নাকি…
—-“আমরা হাসি,তাই না তানজু…(রিয়াদ)
—-“একদম ভাইয়া…
“বলে আবারো হেঁসে উঠলো দুজন’!!
“এদিকে রুহি সন্দেহ চোখে তাকিয়ে রইল রিয়াদ আর তানজুর দিকে’!!আজ একটু কেমন লাগছে ওদের কথায় কথায় হাসে?’বিষয়টা একদমই ভালো লাগে নি রুহির তাই সে আর বেশি কিছু না বলে চলে যায় রান্না ঘর থেকে…..

“১ ঘন্টার শাওয়ার নিয়ে ডাইনিং টেবিলে হাজির আমি,অবশ্য আমি আসার আগেই সবাই খাওয়া শুরু করে দিয়েছে,,এই মুহূর্তে সবাই আমরা একসাথে আম্মু, আব্বু, দিহান ভাইয়া, আহান ভাইয়া, শিফা, রুহি,দুই খালামনি,দুই খালু সাথে রিয়াদ ভাইয়া আর আমি,,একটা জমজমাট পরিবেশ বলতে গেলে,আমিও আর বেশি কিছু না ভেবে গিয়ে বসে পরলাম আব্বুর পাশ দিয়ে,তারপর সবাই মিলে একসাথে গল্প করতে করতে দুপুরের খাবার শেষ করলাম,,মনে হলো সময়টা খুব তাড়াতাড়ি চলে গেল….
“জীবন তো এমনি কখন কিভাবে সময় কেটে যাবে বোঝাই যায় না,আজ সময় হয়ে এসেছে রিয়াদ ভাইয়া আমেরিকায় ফিরে যাওয়ার তাই সেও চলে যাচ্ছে….

“খাবার শেষে আমরা ছোটরা সবাই মিলে একসাথে উঠলাম আমাদের বাসার ছাঁদে’!!দশ তালার উঁচু ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছি আমরা,আমাদের পুরো এলাকাটাই এখান থেকে দেখা যাচ্ছে,সময়টা কম হলে দুপুর ৩ঃ৩০ টা বাজে,রোদ্দুরের আনা গোনা আছে অল্প স্বল্প,কিছুক্ষণ পর পর চিলিক মেরে উঠছে “এক ফালি রোদ্দুর”, রিয়াদ মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে ওই আকাশের দূর সীমানায় থাকা সূর্যের দিকে,মনটা বড্ডই খারাপ লাগছে তার,কিন্তু এই মুহুর্তে মনখারাপটা মটেও প্রকাশ করতে চাইছে না রিয়াদ’!!এমন সময় কাঁধে দিয়ে বললো কেউ রিয়াদকেঃ

—-“ভাইয়া তোমার কি মন খারাপ?
“শুরুতে রিয়াদ তানজু ভাবলেও পিছন ঘুরে রুহিকে দেখে তেমন কোনো রিয়েকশন দিলো না,হাল্কা হেঁসে বললো সেঃ
—-“না মন খারাপ হবে কেন?’
—-“না তুমি আজ সবাইকে ছেড়ে চলে যাবে তাই…
—-“তেমন কোনো ব্যাপার নয় এমনি দাঁড়িয়ে আছি,,
—-“ওহ,,
—-“হুম…
“নেমে আসলো রুহি,রিয়াদের মধ্যে নীরবতা!’

—-“দিহান ভাইয়া এটা ঠিক না তুমি আমার সেভেন আপ নিয়ে নিলে এটা ঠিক না,,
“তুমুল বেগে দৌড়াতে দৌড়াতে কথাটা বললাম আমি দিহান ভাইয়াকে,
“কিছুক্ষন আগেই হাতে একটা হাফ লিটারের সেভেন আপ নিয়ে ছাঁদে উঠে ছিলাম আমি, কিন্তু ঢুকতে না ঢুকতেই দিহান ভাইয়া টান মেরে আমার হাত থেকে সেভেন আপ টা নিয়ে গিয়ে ঢকঢক করে অর্ধেক খেয়ে ফেললো’!!রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে আমার,,ওদিকে দিহান সেভেন আপ খেতে খেতে দৌড়াচ্ছে…
—-“ভাইয়া দাঁড়াও বলছি, আজকে তোমার একদিন কি আমার একদিন হুহ…
—-“আরে বোন রাগ করছিস কেন?
—-“রাগ করছি কেন মানে তুমি আমার সাধের সেভেনআপটা খেয়ে ফেললে…
“পুরো ছাঁদ জুড়ে ছোটাছুটি করছি আমি আর দিহান ভাইয়া’!!আর আমাদের কান্ডে হাসছে আহান ভাইয়া, শিফা আর রুহি….
“এদিকে রিয়াদ এদের কান্ড দেখে আবারো তাকালো সেই সূর্যের দিকে!’এই মুহূর্তে কোনোকিছুই তার ভালো লাগছে না…..

“দিহান ভাইয়ার মাথার চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে রেগে চলে গেলাম আমি রিয়াদ ভাইয়ার সামনে’!!কারন উনি ছাঁদের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে’!!এই মুহূর্তে প্রচন্ড রাগ হচ্ছে আমার দিহান ভাইয়ার উপর!’কিছুক্ষনের মধ্যে নিজেকে শান্ত করে বলে উঠলাম আমি রিয়াদ ভাইয়াকেঃ
—-“কি হলো ভাইয়া এখানে একা একা দাঁড়িয়ে আছো কেন?
—-“তেমন কোনো কারন নেই এমনি দাঁড়িয়ে আছি,,
—-“ওহ,,আমি ভাবলাম তুমি হয়তো ওই গরুর গুলো দিকে তাকিয়ে আছো,(সামনেই খোলা মাঠের মাঝখানে থাকা একটা গরুকে দেখিয়ে)
“ভেবেছিলাম হয়তো রিয়াদ ভাইয়া কথাটা শুনে কিছু বলবে কিন্তু উনি তো রিয়াকশনই দিলো না’!!এতে বেশ অবাকই হলাম আমি,হুট করে চুপচাপ হয়ে গেল কেন?ভেবেই তাকিয়ে রইলাম আমি রিয়াদ ভাইয়ার দিকে,

—-“ওভাবে তাকিয়ে আছিস কেন আগে দেখিস নি আমায়?
“রিয়াদ ভাইয়ার কথা শুনে চমকে উঠলাম আমি’!!অবাক হয়ে বললামঃ
—-“তুমি বুঝলে কি করে আমি তোমার দিকে তাকিয়ে আছি….
—-“তোর যে টেরা টেরা চোখ যে কেউ বুঝে যাবে…
—-“কি আমি টেরা…
“বিনিময়ে আর কোনো উওর দিলো না রিয়াদ ভাইয়া,যা দেখে আমি বুঝে গেলাম “ভাইয়ার মুড অফ”তাই আর বেশি বকবক করলাম না আমিও চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলাম রিয়াদ ভাইয়ার পাশ দিয়ে…
“হর্ঠাৎই রিয়াদ ভাইয়া বলে উঠলঃ
—-“সময় খুব তাড়াতাড়ি চলে যায় তাই না তানজু…
“রিয়াদ ভাইয়ার কথা শুনে কিছুটা বিস্ময়ে বলে উঠলামঃ
—-“হুম তা তো যায়,হর্ঠাৎ এমন প্রশ্ন ভাইয়া…
—-“না এমনি,,আচ্ছা চল নিচে যাই,সবাই হয়তো অপেক্ষা করছে…
“বলেই চলে গেল রিয়াদ ভাইয়া’!!আমি জাস্ট হা হয়ে তাকিয়ে রইলাম রিয়াদ ভাইয়ার দিকে,যেন উনি কি বললেন সব মাথার উপর দিয়ে গেল!’

“রাত আটটা বেজে চল্লিশ মিনিট,,
“সবাই তড়িঘড়ি করে তৈরি হচ্ছে রিয়াদ ভাইয়াকে এয়ারপোর্টে পৌঁছে দেওয়ার জন্য!’আমিও তৈরি হচ্ছি,ভালো লাগছে নাকি খারাপ লাগছে ঠিক বুঝতে পারছি না,
“আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তৈরি হচ্ছি আমি,কাঁচা হলুদ রঙের জর্জেট থ্রি-পিচ পড়েছি ,চুলগুলো বেনুনী করা,চোখে কাজল, আর ঠোঁটে হাল্কা গোলাপি লিপস্টিক ব্যাস তৈরি আমি,,তারপর চললাম নিচে,,,

এয়ারপোর্টের ভিতর দাঁড়িয়ে আছি আমরা সবাই কিছুক্ষন আগেই আমরা এসে পৌঁছালাম এখানে,খালামনি(রিয়াদের মা) তো এখনই কান্না করা শুরু করে দিছে,যা দেখে মা শান্ত করছে তাকে,কতবছর পর আসলো রিয়াদ ভাইয়া এখন আবার চলে যাচ্ছে?’সত্যি আমারও একটু খারাপ লাগছে,সবার কান্না দেখে আস্তে সাইড হয়ে গেলাম আমি’!!কান্না কাটি একদম সহ্য হয় না আমার,তাই উল্টোদিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আছি…
“এদিকে রিয়াদ একে একে সবার কাছ থেকে বিদায় জানাচ্ছে,সে চাচ্ছে তানজুর কাছে গিয়ে কিছু বলতে আবার ভাবলো কি বলবে সে,,

“অন্যদিকে,শিফারও মন খারাপ আহান চলে যাচ্ছে আবার কবে তাদের দেখা হবে কোনো ঠিক নেই,মুড অফ করে দাঁড়িয়ে রইল শিফা’!!যা দেখে আহান ওর কানে কানে বললোঃ
—-“মন খারাপ করো না খুব তাড়াতাড়ি তোমার সাথে আমার দেখা হবে,আর পরেরবার দেখা হলে তোমায় আমি আমার সঙ্গে করে নিয়ে যাবো,,
“আহানের ইচ্ছে করছে শিফাকে একবার জড়িয়ে ধরতে,কিন্তু এই মুহুর্তে সেটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়’….
“আহান কিছুক্ষন শিফার দিকে’ তাকিয়ে থেকে চলে যায় রিয়াদের সামনে তারপর বললোঃ
—-“চল ফ্লাইটের সময় হয়ে গেছে,,
“রিয়াদ এতক্ষণ অন্যমনস্ক ছিলো আহানের কথা শুনে বললো সেঃ
—-“হুম চল…

“তারপর আহান রিয়াদ দুজনকেই সবার কাছ থেকে বিদায় জানিয়ে চললো তাদের গন্তব্যের দিকে,রিয়াদ চাইছে তানজু তাকাক তার দিকে’!আর আহান সে তাকিয়ে আছে শিফার দিকে,শিফাও তাকিয়ে আছে….
“রুহিও মন খারাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে ভেবেছিলো আজকে রিয়াদকে তার মনের কথা বলবে কিন্তু কোথাও এক ভয়ের কারণে কিছু বলে উঠতে পারলো না রুহি,,নিশব্দে দীর্ঘশ্বাস ফেললো সে’!!আর তানজু সে তো পিছন ঘুরে আছে তো পিছনে ঘুরেই আছে,,
“রিয়াদের ইচ্ছে ইচ্ছেই রয়ে গেল তানজু তাকাই নি তার দিকে,তাই মন খারাপ নিয়েই সে চলে গেল’…
“রিয়াদ ভিতরে ঢুকতেই পিছন ঘুরে তাকালো তানজু’,মন খারাপ তারও হচ্ছে তাই এতক্ষণ পিছন ঘুরে ছিল যাতে কেউ কিছু বুঝতে না পারে….

“অবশেষে সময়কে টেক্কা দিয়ে চলে গেল রিয়াদ আর আহান’!!তাদের প্লেনও চলে গেছে পাঁচ মিনিট হলো…..
“একে একে সবাই মন খারাপ নিয়ে বের হচ্ছে এয়ারপোর্টে থেকে,সবারই খারাপ লাগছে,এই মুহূর্তে সবার মনে হচ্ছে রিয়াদ না আসলেই হয়তো ভালো হতো….
“একে একে সবাই বের হয়ে গেছে এয়ারপোর্ট থেকে কিন্তু বাহিরে যাই নি তানজু,এই মুহূর্তে তার ভিতর কিছু একটা চলছে কিন্তু কি চলছে বুঝতে পারছে না তানজু,তানজুকে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে শিফা ওর কাঁধে হাত দিয়ে বললোঃ
—-“কি হলো এখানে দাঁড়িয়ে থাকবি নাকি, যাবি না বাড়ি….

“শিফার কন্ঠ শুনে তানজু জ্ঞানে আসলো এতক্ষণ যেন কোমায় ছিল সে…,আমতাআমতা করে বললো সেঃ
—-“হুম যাবো তো চল…
“তারপর শিফা তানজুর হাত ধরে বেরিয়ে গেল এয়ারপোর্ট থেকে….,রুহি অনেক আগেই বেরিয়ে গেছে তারও যে খুব কষ্ট হচ্ছে…
“সবাই গিয়ে বসে পরল যার যার নিজেদের গাড়িতে,গাড়িও চলতে শুরু করল তাদের আপন গতিতে….
“গাড়ির জানালায় মুখ দিয়ে বসে আছে তানজু,বড্ড মন খারাপ হচ্ছে তার,রাতের অন্ধকার আলোতে আনমনেই চলছে সে,গভীর ভাবনায় মগ্ন তানজু,কিন্তু কি ভাবছে তা সে নিজেও জানে না…..

“অন্যদিকে প্লেনের জানালার দিকে তাকিয়ে আছে রিয়াদ নিচের দিকে,রাতের অন্ধকারে মেঘের কোলে ভাসছে সে,,নিমিষেই কিছু একটা ভেবে চোখ বন্ধ নিলো রিয়াদ,চোখ বন্ধ করতেই ভেসে আসছে এই কয়েকদিনে তানজুর সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো,ভেসে আসছে বার বার তানজু মুখটা,চোখ খুলে নিলো রিয়াদ সবকিছু এলেমেলো লাগছে তার….
“আর তার পাশেই সিটে হেলান দিয়ে কানে হেডফোন গুঁজে গান শুনছে আহান,মন খারাপ তারও হচ্ছে তাই তো গান শুনে মুড অন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সে….
“রিয়াদ আবারো চোখ বুঝে নিলো,,আবারো ভেসে আসলো তার সামনে তানজুর মুখ,কিন্তু এবার আর চোখ খুললো না রিয়াদ,চোখ বুঝে ভাবছে সে ঘটে যাওয়া গত দিনগুলোর কথা……

“মাঝখানে কেটে গেল পুরো এক সপ্তাহ…
“এই এক সপ্তাহ রিয়াদ তানজুর দুজনেরই জ্বরের ঘোরে কেটেছে!’এয়ারপোর্ট থেকে ফিরেই গা কাপিয়ে জ্বর এসেছে তানজুর,আর রিয়াদের আমেরিকায় পৌঁছেই সকালে গা গরম গরম লাগলেও বাড়ি গিয়েই তার জ্বর চলে আসলো,আর এর একটাই কারন মাঝরাতে বৃষ্টিতে ভেজার পরিনতি,এই জিনিসটা বাকি কেউ না জানলেও রিয়াদ-তানজু ভালোই বুঝতে পেরেছে…..

“সূর্যের হাল্কা তাপে ঘুম ভাঙল রিয়াদের,গায়ের কম্বলটা সরিয়ে উঠে বসলো রিয়াদ,আজ অনেকটাই সুস্থ সে’!!রিয়াদ খাট থেকে নেমে চলে যায় ওয়াশরুমে,,
“আধ ঘন্টা সময় নিয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হয় সে’!!পরনে তার রেড কালারের ট্রাইজার আর ফুল হাতার ব্লাক টিশার্ট,শরীর অসম্ভব ক্লান্ত তার,রিয়াদ আস্তে চলে যায় আয়নার সামনে,নিজেকে আয়নায় দেখে কিছুটা বিষম খায় সে,কেমন দেখাচ্ছে তাকে, চোখদুটো এখনো হাল্কা হাল্কা লালচে হয়ে আছে,চুলগুলো এলেমেলো,কেমন পাগল পাগল লাগছে তাকে,রিয়াদ আয়নার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ…
“এমন সময় কফি হাতে রুমে ঢুকলো আফরিন’!!রিয়াদ আফরিনকে দেখেই বললোঃ

এক ফালি রোদ্দুর পর্ব ২৩

—-“উফ,আপু তুই আবার কেন এই অবস্থায় এসব নিয়ে আসতে গেলি,এমনতেও এই এক সপ্তাহ প্রচুর কষ্ট করেছিস তুই….
“আফরিন হাল্কা হেঁসে বললোঃ
—-“আমার আবার কিসের কষ্ট ভাইটা এতদিন পর আসলো তারপর এত অসুস্থ হয়ে পরলো আর আমি তার জন্য কিছু করবো না…
“রিয়াদ আফরিনের হাত থেকে কফিটা নিয়ে আফরিনকে বসিয়ে দেয় বিছানায় তারপর বললোঃ
—-“এখন আমি সুস্থ আপু,আর কোনো চিন্তা নেই…
“হাল্কা হাসলো আফরিন’!!রিয়াদ টেবিলে থাকা কফিটা হাতে নিয়ে চুমুক দিয়ে বললোঃ
—-“উমম,আপু কতদিন পর তোর হাতের কফি খাচ্ছি….
—-“ভালো লেগেছে….
—-“খুব…
“হাসলো আফরিন!’তারপর বললোঃ

—-“এখন বল তাহলে কেমন কাটালি বাংলাদেশে এ কয়দিন,,
“রিয়াদ কফির মগে চুমুক দিলো,আফরিনের কথা শুনতেই সবার আগে রিয়াদের মনে পরলো তানজুর কথা,এই এক সপ্তাহে রিয়াদ এতটুকু বুঝে গেছে তানজুর প্রতি তার একটু হলেও ফিলিংস আছে,কারন এই এক সপ্তাহে রিয়াদ জ্বরের থেকেও বেশি ফিল করেছে তানজুর শূন্যতা…
“হয়তো এটাও বুঝতে পেরেছে নিজের অজান্তেই সে ভালোবেসে ফেলেছে তানজুকে,যখন কাছে ছিল তখন এমনটা মনে হয়নি রিয়াদের, কিন্তু এখন ভাবতেই সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে তার……

এক ফালি রোদ্দুর পর্ব ২৫