এক ফালি রোদ্দুর পর্ব ২৬ || লেখনীতে: তানজিল মীম

এক ফালি রোদ্দুর পর্ব ২৬
লেখনীতে: তানজিল মীম

“নিজের রুমে পায়চারি করছি আমি,,কিছুতেই মাথায় আসছে না আম্মু এত তাড়াতাড়ি আমার ভিসা কি করে তৈরি করলো’!!আজকে আমেরিকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবো আমরা ভাবতেই কেমন একটা লাগছে আমার,ভালোলাগা খারাপ লাগা নিয়ে রুমের ভিতর পায়চারি করছি আমি,,এমন সময় হাতে পাসপোর্ট ভিসা নিয়ে রুমে ঢুকলো আম্মু আমায় এইভাবে পায়চারি করতে দেখে অবাক হয়ে বললো আম্মুঃ

—-“কি হলো তুই তৈরি হোস নি কেন?আর দু’ঘন্টার মধ্যে তোদের ফ্লাইট…
—-“আম্মু তোমায় একটা কথা বলি?’
—-“হুম বল না….(বিছানা উপর রাখা তানজুর ব্যাগের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে)
—-“তুমি এত তাড়াতাড়ি আমার ভিসা তৈরি করলে কি করে?’
—-“আরে তুই এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলি কয়েক মাস আগেই তো তোর আর দিহানের পাসপোর্ট ভিসা তৈরি করে ছিলাম,,অবশ্য কারনটা বলি নি,,
“তোকে আর দিহানকেও রিয়াদের মতো আমেরিকায় নিয়ে গিয়ে পড়াশোনা করানোর ইচ্ছে ছিল, কিন্তু হুট করে শিউলির বিয়ে পড়ে গেল,তারপর এই বিয়ে তালে তালে সব ভুলে গেছি,,সেদিন হর্ঠাৎই তোর ভিসার কথা মনে পরল তাই,আর সত্যি বলতে কি আমি নিজেও ভাবি এত তাড়াতাড়ি সবটা হয়ে যাবে,সব হয়েছে তোর বাবার বন্ধু শরীফের জন্য,,আজ ওনার ফ্লাইটেই যাবি তোরা…..
—-“ওহ,,,,
—-“হুম,,,এখন আর বেশি ভাবিস না তাড়াতাড়ি তৈরি হ….
“আম্মুর কথা শুনে আর বেশি মাথা গামালাম না আমি,,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

“এদিকে হসপিটালের করিডোরে বসে আছে রিয়াদ,,দু’দিন যাবৎ আফরিনের কোনো হুস নেই তবে শ্বাস চলছে তার,ভাগ্যক্রমে আফরিনের বেবিটা সুস্থ আছে,,কিন্তু আফরিনের অবস্থা খুব ক্রিটিকাল,রিয়াদ আর ভাবতে পারছে না কোথাও না কোথাও রিয়াদ নিজেকে এসবের জন্য দায়ী করছে কেন সে আফরিনের খেয়াল রাখলো না,কেন একটু কেয়ার নিলো না রিয়াদ আফরিনের,নিজের উপর নিজেরই রাগ হচ্ছে,রিয়াদের পাশেই সায়ান আফরিনের হাসবেন্ড ওনার বেবিটাকে কোলে নিয়ে বসে আছে,,অনেকটাই ভেঙে পরেছে সে তারপরও বেবির মুখের দিকে তাকিয়ে নিজেকে শক্ত রাখছে সায়ান’!!এমন সময় আহান আর রিয়াদের কিছু বন্ধুরা এসে দাঁড়ালো ওদের সামনে,দু’দিন যাবৎ ওরাই সবটা দেখছে……
“সবার চোখে মুখে অস্থিরতার ভাব!’

“এয়ারপোর্টের সামনে দাঁড়িয়ে আছি আমি আর খালামনি,,জীবনে প্রথম বার মা-বাবাকে ছেড়ে এতদূর যাচ্ছি,খালামনি তো যেন দৌড়ে চলে যাক আমেরিকা,…..
—-“কি হলো তানজু চল তাড়াতাড়ি….
“বলে আগেই ঢুকে পরলো খালামনি,আমিও আর বেশি কিছু না বলে আম্মু, রুহি,শিফাকে বিদায় জানিয়ে চলে গেলাম,সবাই খুব টেনশনে আছে, আফরিনের কিছু হলে ভাবতেই সবার কান্না পাচ্ছে…..

“মাঝখানে কেটে গেলো পুরো একটা ১৬ ঘন্টা,তানজুদের ফ্লাইটের যাত্রায় আর রিয়াদদের টেনশনে আর হতাশায়, রিয়াদ জানতো না তানজু আসছে তার মায়ের সাথে,,সে এই মুহুর্তে নিজের মধ্যেই নেই….
|| “ওয়েলকাম টু আমেরিকা…. ||
“আমেরিকার এয়ারপোর্টের বাহিরেই বড় সাইনবোর্ডে লেখা,,আমার আর খালামনির ফ্লাইট এসে ল্যান্ড করলো জাস্ট দু’মিনিট মিনিট হলো….

”আমি আর খালামনি তাড়াতাড়ি বের হয়ে গেলাম এয়ারপোর্ট থেকে,,আমাদের জন্য সায়ান দুলাভাই গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে অলরেডি হয়তো এখান থেকেই সরাসরি হসপিটালে চলে যাবো আমরা…..
“আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল একজন প্রাপ্ত বয়স্ক লোক,হয়তো গাড়ির ড্রাইভার উনি,,ওনার সাথে ছিল একটা ছোট সাইনবোর্ড, যেখানে নাম লেখা ছিল আমার,যা দেখে বুঝতে পেরেছি আমি উনি আমাদের নিতেই এসেছে,, আমি বেশি কিছু না ভেবে লোকটার সামনে এসে মুচকি হেঁসে বললামঃ

—-“হ্যালো, ইউ শাফিন,,
“আমার কথা শুনে ছেলেটি মুচকি হেঁসে বললোঃ
—-“ইউ তানজু….
—-“ইয়েস…
—-“চলুন তাড়াতাড়ি আপনাদের সায়ান ভাই হসপিটাল নিয়ে যেতে বলেছেন’!
—-“আপনি বাঙালি….
—-“হুম….
“তারপর আর বেশি কথা না বারিয়ে আমি আর খালামনি গিয়ে বসে পরলাম গাড়িতে,,আমরা বসতেই শাফিন গাড়ি চালাতে শুরু করলো….
“খালামনি তো গাড়িতে বসতেই আগে বললোঃ
—-“তাড়াতাড়ি গাড়ি চালিও….
—-“ডোন্ট ওয়ারি কাকিমা, তাড়াতাড়ি যাবো আমরা….
“মস্ত বড় শহর আমেরিকা,সব সাদা চামড়ার লোকজন,এদের সবাইকে দেখে আমি জাস্ট হা হয়ে তাকিয়ে আছি এদের দিকে, এক একটা কিউটের ডিব্বা,,

“আফরিনের বেডের পাশে দাঁড়িয়ে আছে রিয়াদ,সায়ান,আহান সহ একজন ডক্টর আর একজন নার্স সবার চোখে মুখে হাসির ঝলক কারন কিছুক্ষন আগেই আফরিনের জ্ঞান ফিরেছে,আগের চেয়ে অনেক বেটার আফরিন,ডাক্তার খুশি মনে বলে উঠল রিয়াদকে;
—-“ডোন্ট ওয়ারি রিয়াদ,ইউর সিস্টার ইস এপছুলেটলি ফাইন,,
“রিয়াদ মুচকি হেঁসে বললোঃ
—-“থ্যাংক ইউ সো মাচ ডক্টর….
“বিনিময়ে ডক্টর রিয়াদের কাঁধে হাত রেখে মুচকি হাসলেন’!!তারপর বেরিয়ে গেলেন রুম থেকে….
“এমন সময় হতভম্ব হয়ে হসপিটালের ভিতর ঢুকলো আফরিনের আম্মু,,হতভম্ব হয়ে বললেন উনিঃ
—-“আফরিন, কেমন আছে আফরিন….
“রিয়াদ দৌড়ে গিয়ে মাকে জড়িয়ে ধরে বললঃ

—-“ভালো মা,আপু এখন সুস্থ আছে,আর আপুর বেবিও খুব ভালো আছে,দেখো মা আপুর ছেলে হয়েছে….
“আফরিনের পাশেই বেডে শুয়ে থাকা একটা সুন্দর ফুটফুটে বাচ্চা, ঠোঁটে তার মিষ্টি হাসি,রিয়াদের মায়ের নাম মুক্তা বেগম,উনি দৌড়ে চলে গেলেন ওনার মেয়ের কাছে,আফরিনের মাথার কাছে বসে বললেনঃ
—-“কেমন আছিস তুই….
“মাকে এতদিন পর দেখে চোখে পানি চলে আসে আফরিনের, মুচকি হেঁসে বললো সেঃ
—-“মা তুমি কেমন আছো কতদিন পর তোমায় দেখছি….
—-“আমায় ছাড় তোর কথা বল….
—-“আমি তো ভালো আছি,এখন তুমি চলে এসেছো আরে ভালো থাকবো…..

“মুচকি হেঁসে মেয়ের হাতে চুমু কাটেন আফরিনের আম্মু….
“এমন সময় সায়ান সালাম দেয় মুক্তা বেগমকে’!!উনিও মুচকি হেঁসে সালামের উওর দেন….
—-“মা আপনার আসতে কোনো অসুবিধা হয় নি তো….
—-“তেমন কোনো অসুবিধা হয় নি সবচেয়ে বড় কথা তানজু ছিল তো আমার সাথে ওই সবটা দেখেছে….
“তানজু” নামটা শুনতেই বুকের ভিতর দক করে উঠল রিয়াদের’!!সে যেন বিশ্বাসই করতে পারছে না তানজু এসেছে নাকি ভুল শুনলো কিছু,,রিয়াদ অবাক চোখে বললোঃ
—-“তোমার সাথে কে এসেছে মা?’
—-“আরে তানজু….

“আর কিছু বলার আগেই আফরিনের রুমে প্রবেশ করল তানজু,তানজুকে দেখে কি রিয়েকশন দিবে রিয়াদ ভুলে গেছে,তার কথা যেন বন্ধ হয়ে গেছে নিমিষেই,সে শুধু অবাক চোখে তাকিয়ে আছে তানজুর দিকে,,প্রায় আড়াই মাস পর রিয়াদ দেখছে তানজুকে,বুকের ভিতর এক অদ্ভুত ফিলিংস হচ্ছে তার,বুকের বা পাশে অটোমেটিক হাত চলে যায় রিয়াদের….

“অবাক চোখে তাকিয়ে আছে সবাই আমার দিকে,নিজেকে কেমব ভিনদেশী মনে হচ্ছে,আমি এক চিলতে হাসি দিয়ে বললামঃ
—-” আরে তোমরা এভাবে তাকিয়ে আছো কেন,আমি তানজু আমায় তো সবাই চিনো তাই না,হয়তো সামনাসামনি দেখো নি কিন্তু শুনছো তো…..
“আহান তানজুর কথা শুনে অবাক হয়ে বললোঃ
—–“কি বলবো তানজু সত্যি খুব অবাক হয়েছি তোমায় দেখে….
—–“দেখো অবাক হওয়ার কিছু হয় নি আমরা আমরাই তো,আর আফরিন আপু তুমি কেমন আছো?
—-“ভালো(আফরিন)
—-“আর আমার পুচকো ছুনা…
“বলেই আফরিন আপুর বেবিটাকে কোলে তুলে নিলাম আমি একদম পুতুলের মতো দেখতে,পুচকুকে কোলে নিয়েই বলে উঠলাম আমি সায়ান ভাইয়াকেঃ
—-“আসসালামু আলাইকুম দুলা ভাই…
—-“ওলাইকুম আসসালাম…

—-“আপনার সাথে আমার প্রথম সাক্ষাৎ আমি কিন্তু আপনার শালিকা হই,আর শালিকাদের কিন্তু অনেক আবদার আছে সব কিন্তু আপনাকে পূরণ করতে হবে…
“হাল্কা হাসলেন উনি দু’মিনিটের মধ্যে পুরো রুম যেন হুল্লোড়ে ভরে গেছে,,সবাই এক নিমিষেই বুঝে গেছে এ মেয়ে ভাড়ি চঞ্চল,আর মিশুক টাইপের….
“দু’মিনিটের মধ্যে পুরো রুম কাঁপিয়ে ফেলেছে তানজু…
“রুমে এতো হইচই দেখে ডক্টর ছুটে আসলেন রুমে’!!হতভম্ব হয়ে বললেন উনিঃ
—-“এভরিথিং ইস রং….
—-“নো ডক্টর অল ফাইন….(সায়ান)
“কিছুক্ষনের মধ্যেই একে একে সবাই রুম থেকে বেরিয়ে গেল শুধু থাকলো আফরিনের আম্মু,,পেসেন্টের রুমে এত মানুষ না থাকাই ভালো তাই ডাক্তার একজনকে রেখে বাকি সবাইকে রুম থেকে বের হতে বললেন!’
“কেভিনের বাহিরে___
—-“রিয়াদ তুমি একটা কাজ করো তানজুকে নিয়ে বাড়ি চলে যাও কাল থেকে একবারও বাড়ি যাও নি চোখের মুখের কি অবস্থা করেছো,একটু ফ্রেশ হয়ে এসো,ততক্ষণ না হয় আমি আর আহান আছি এখানে,আর শাশুড়ী মাও তো আছে আফরিনের সাথে….
“আফরিনের রুম থেকে বেরিয়েই কথাটা বলে উঠল সায়ান রিয়াদকে’!!রিয়াদ কিছুক্ষন ভেবে বললোঃ
—-“ঠিক আছে….

“তারপর রিয়াদ আর তানজু দুজনেই বেরিয়ে হাঁটতে থাকে বাড়ির উদ্দেশ্যে’!!
—-“তারপর বলো ভাইয়া কেমন আছো তুমি?’
—-“হুম ভালো তুই?’
—-“আমি তো বিন্দাস আছি কিন্তু গত তিনদিন যাবৎ ভালো ছিলাম না কিন্তু এখন ভালো আছি?’
—-“ওহ(নীরবে)
—-“তোমার কি মন খারাপ হচ্ছে ভাইয়া আরে চিন্তা করো না আফরিন আপু খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে….
—-“হুম…
—-“কি কতক্ষণ যাবৎ হুম হুম করে যাচ্ছো বলো তো আমি এসেছি তুমি খুশি হও নি….
“তানজুর কথা শুনে রিয়াদ কি বলবে বুঝতে পারছে না,,সে যে কতটা খুশি হয়েছে সেটা যদি বলতে পারতো তানজুকে,এক্সাইটিংয়ে কথাই বলতে পারছে না রিয়াদ তাই তো ওহ,হুম বলে চালিয়ে যাচ্ছে?’
“রিয়াদ ভাইয়াকে চুপ থাকতে দেখে বলে উঠলাম আমিঃ
—-“কি হলো ভাইয়া কথা বলছো না কেন?’
“এতক্ষণ পর রিয়াদ মুখ খুললো বললো সেঃ
—-“কি বলবো বুঝতে পারছি না,আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না তুই আমার সামনে আছিস…
“হুট করেই তানজু স্পর্শ করলো রিয়াদের হাত,এতে হাল্কা চমকে উঠলো রিয়াদ’!!তানজু রিয়াদের হাত ধরেই বললোঃ
—-“এখন বিশ্বাস হলো ভাইয়া আমি এসেছি এখানে…
“মাথা নাড়ায় রিয়াদ,কিন্তু মুখে কিছু বললো না,সব কথা যেন ঠোঁট পর্যন্ত এসেই আঁটকে যাচ্ছে রিয়াদের, মুখ দিয়ে কিছু বের করতেই পারছে না সে’!!
“পুরো তিনতলার উপর থেকে সিঁড়ি বেয়ে কথা বলতে বলতে নিচে নামছে রিয়াদ আর তানজু,নিজেদের কথায় এতটাই বিভোর ছিল যে হসপিটালে লিফট আছে ভুলে গেছে তাঁরা…

এক ফালি রোদ্দুর পর্ব ২৫

“রিয়াদ তানজু একসাথে নিচে নেমে গিয়ে বসলো গাড়িতে,ওরা বসতেই শাফিন গাড়ি চালাতে শুরু করল…..
“গাড়ি চলতে শুরু করল তার আপন গতিতে,,সবকিছুই যেন স্বপ্নের মতো লাগছে রিয়াদের কাছে,তার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না তানজু তার সামনে বসে,তার তো এটাকে কোনো স্বপ্ন মনে হচ্ছে,যেন ঘুম ভেঙে গেলেই তানজু চলে যাবে তার কাছ থেকে….
“আমেরিকার ঠান্ডা শীতল মেশানো বাতাস এসে লাগছে রিয়াদ তানজু দু’জনের গায়ে,রিয়াদ মুগ্ধ নয়নে তাকালো তানজু দিকে,একটা রেড টিশার্ট সাথে ব্লাক লেডিস জ্যাকেট,ব্লাক লেডিস জিন্স,চুলগুলো বেনুনী করা, চোখে আজ কাজল নেই হয়তো তাড়াতাড়ি আসার ফলে তেমন সাজগোছ করে নি তানজু,তবে তানজু যেমন আছে সেভাবে ভালো লাগছে রিয়াদের কাছে,সামনে চুলগুলো বাতাসে উড়বে খুব,,রিয়াদের চোখ আঁটকে যায় সেখানে, তাড়াতাড়ি রিয়াদ চোখ ফিরিয়ে নেয় তানজুর ওপর থেকে,কারন____

—-“বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকার ক্ষমতা নেই রিয়াদের,হয়তো তানজুতেই হারিয়ে যেত সে….
“আর তানজু সে তো আমেরিকার শহর আর লোকজনদের দেখতে ব্যস্ত,কেউ যে তাকে খুব গভীর ভাবে দেখছে সেদিকে তার হুস নেই….
“বেশকিছুক্ষন পর…..

এক ফালি রোদ্দুর পর্ব ২৭