এক মুঠো প্রণয় পর্ব ১২

এক মুঠো প্রণয় পর্ব ১২
লেখনীতে একান্তিকা নাথ

আব্বা বোধ হয় চোখের সামনে এমন দৃশ্য দেখার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না।মুখভঙ্গি বিদ্ঘুটে করে তাকালেন মেহেরাজ ভাইয়ের দিকেই।সামান্তা আপু দুই হাতে ঝাপটে জড়িয়ে আছেন মেহেরাজ ভাইকে।চোখজোড়া দিয়ে অঝোরে বইছে নোনা পানি।সেই নোনা পানি মুহুর্তেই ভিজিয়ে তুলল মেহেরাজ ভাইয়ের ছাঁইরাঙ্গা টিশার্টকে।নিষ্পলক তাকিয়ে থেকে সেই দৃশ্য অবলোকন করে কান্না পেল আমারও।

বুকের গহীনে কষ্টরা সুপ্তভাবে জানিয় গেল তাদের উপস্থিতি।তবে সেটা সামান্তা আপুর জন্য নয়।কষ্টটা নিজের অনুভূতির পুরুষকে অন্য কেউ আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে বলে।কান্নাটা নিজের সাধের পুরুষের বুকে অন্য কারো মুখ গোঁজা দেখে।শুধু আজ নয়, যখনই আমার চোখের সামনে সামান্তা আপু মেহেরাজ ভাইকে এমন ভাবে জড়িয়ে ধরেছেন তখনই আমি এই কষ্ট অনুভব করেছি।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

এই রুদ্ধশ্বাস অস্থিরতা আমি টের পেয়েছি।তবুও যে কান্না করা, কষ্ট পাওয়া বারণ আমার।কারণ যেখানে অধিকার নেই সেখানে এসব শুধুমাত্র তাচ্ছিল্যেরই চিহ্ন।আমি কষ্ট দমিয়ে স্বাভাবিক থাকলাম।তাকিয়ে রইলাম সেদিক পানেই। মেহেরাজ ভাই ক্রমশ নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলেন।প্রথম ধপায় ঠান্ডা মাথায় চেষ্টা করলেও পরের ধপায় আচমকায় বলিষ্ঠ হাত জোড়া দিয়ে সামান্তা আপুকে ঠেলে দূরে সরালেন। রক্তলাল চক্ষু নিয়ে কন্ঠ কঠিন করে বলে উঠলেন,

” সামান্তা, আগেও বলেছি। এখনও বলছি, এসব কোন ধরণের বেয়াদবি?একটা মেয়ে হয়ে তোমার নিজের কোন সম্মান নেই?এভাবে নিজের মানসম্মান বিসর্জন দিয়ে বেহায়ার মতো একজন পুরুষকে জড়িয়ে ধরা কোন ধরণের সভ্যতার প্রকাশ?”

সামান্তা আপু ফুঁফিয়ে কেঁদে উঠলেন মেহেরাজ ভাইয়ের ধমকে।হতবিহ্বল চোখে তাকিয়ে থেকে বলে উঠলেন,
” পুরুষটা তুমি বলেই জড়িয়ে ধরেছি।বিশ্বাস করো, রাজ ভাইয়া।আমি এটা এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না যে তুমি বিয়ে করে নিয়েছো। তুমি আর আমার নেই এটা আমি মানতে পারছি না।তুমি কেমন ভালোবেসেছিলে আমায়? ভালোবাসলে তো অন্য কাউকে বিয়ে করতে না রাজ ভাইয়া।এতগুলো দিনের সম্পর্ক ভুলে গিয়ে এক মুহুর্তেই বিয়ে করে নিলে?আমায় তুমি ভালোবাসোনি রাজ ভাইয়া।কোনদিনই বাসোনি।ঠকিয়েছো।”

শেষের কথাগুলো খুব অভিমান নিয়েই বললেন সামান্তা আপু।মেহেরাজ ভাই তপ্ত শ্বাস ফেলে একবার সামান্তা আপুর মুখের দিকে চাইলেন।তারপর বলে উঠলেন,

” তোমার নিজেকে স্বাভাবিক করা উচিত সামান্তা।নিজের স্বাভাবিক জীবনে ফেরা উচিত।এসব পাগলামো করে কদিন কাঁটবে? কিই বা হবে?তার থেকে সব ভুলে যাওয়া বেটার।ভালো থাকবে। আর,আমি যদি ভালো নাই বেসে থাকি।তোমাকে যদি ঠকিয়েই থাকি তবে তোমার তো উচিত আমার কাছেপাশে আর না ঘেষা।আমাকে ঘৃণা করা উচিত।তাই না?”

সামান্তা আপু জড়ানো গলায় বলে উঠলেন,
” তুমি না বাসলেও আমি তো বেসেছিলাম। এখনও ভালোবাসি।শুধু এই কয়েক মুহুর্তের ব্যবধানে তোমার আর জ্যোতির বিয়ে হওয়াটা আমায় ভালো থাকতে দিচ্ছে না।কান্না পাচ্ছে, অসহ্য লাগছে সব।বুকের ভেতর অস্থির লাগছে।কিচ্ছু ভাল্লাগছে না আমার রাজ ভাইয়া।সব আবার আগের মতো ঠিক করে দাও না। প্লিজ। আমি তোমায় ভালোবাসি। তুমি নামক সর্বনাশা প্রেমিক আমার জীবন থেকে চলে গিয়েই বুঝিয়ে দিলে আমার জীবনে কি ভীষণ সর্বনাশ ঘটেছে। ”

মেহেরাজ ভাই পকেটে হাত গুঁটিয়ে লম্বা শ্বাস টানলেন।শান্ত গলায় বললেন,
” বিয়েটা হয়ে গিয়েছে।এটাই সত্য।মেনে নাও, নিজেকে মানিয়ে নাও। ভালো থাকবে। বাসায় যাও এখন।”
সামান্তা আপু অশ্রুভরা চোখে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থাকলেন।তারপরই তীব্র অভিমান বুকে নিয়ে দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে গেলেন।আমি শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবটুকুই দেখে গেলাম।একনজর আব্বার দিকে তাকাতেই দেখলাম আব্বার মুখাবয়ব কঠিন রূপ নিয়েছে।বোধ হয় দৃষ্টিটাও প্রখর।পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা ফাতেমা আন্টি আর শিমা আপা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছেন।যেন কিছুক্ষন আগের দৃশ্যটা তাদের কাছে চমকপ্রদ কিছু।শিমা আপা কিছু না বললেও ফাতেমা আন্টি যেতে যেতেই মেহেরাজ ভাইকে বললেন,

” মেহেরাজ বিয়ে করেছো বললে সেদিন।বউ আছে বাসায়।বুঝলাম তোমার সাথে সামান্তার সম্পর্ক ছিল, তা বলে বিয়ের পর বউয়ের সামনেও প্রেমিকার সাথে প্রেম করাটা কেমন সভ্যতা?তোমার থেকে তো এটা আশা করা যায় না মেহেরাজ।”

কথাগুলো বলেই চলে গেলেন ফাতেমা আন্টি।মেহেরাজ ভাইয়ের মুখচোখ দেখে সুবিধার বোধ হলো না।বোধ হয় ভেতরে ভেতরে রাগে সমস্তটা জ্বলে যাচ্ছে তার।আমি ইতস্থত বোধ করে আব্বার উদ্দেশ্যে বলে উঠলাম,
” আব্বা ভেতরে আসুন না।বসুন।”

আব্বা চুপচাপ হাতে থাকা ব্যাগগুলো নিয়ে ভেতরে আসলেন।বাদবাকি বাবাদের মতোই মেয়ের শ্বশুড়বাড়িতে আসতে ব্যাগভর্তি জিনিস আনা আধৌ কতটুকু যুক্তিযুক্ত বুঝলাম না।আব্বা থম মেরে সোফায় বসে নির্বিকার ভাবে চেয়ে থাকলেন মেহেরাজ ভাইয়ের দিকে।ছোটবেলায় যখন আমার কিংবা চাচাতো ভাই বোনদের রেজাল্ট আব্বার আশানুযায়ী হতো না ঠিক তখনই আব্বা এমন করে তাকিয়ে থাকতেন।

যেন অনেক আশার জিনিসই আজ তাকে অপমানে অপমানে রাঙ্গিয়ে তুলেছে।বুঝলাম বিষয়টা অবশ্যই মেহেরাজ ভাই।আব্বাসহ বাড়ির সবার কাছেই মেহেরাজ ভাই মহান।সে কারণেই বোধহয় আব্বা আশাহত হলেন।পরমুহুর্তেই আব্বা আমার দিকে তাকালেন।বরাবরের মতোই গম্ভীর গলায় বললেন,

” তুই ভালো আছিস এখানে?”
আব্বার প্রশ্নে কেন জানি না ভালো লাগা কাজ করল।বোধহয় আব্বা সচারচর এমন প্রশ্ন করেননি বলেই।মনে হলো, ইশশ!বিয়ে করলে যদি অন্যদের বাবাদের মতো আব্বাও খোঁজখবর নেয়, আমাকে অন্য বাবাদের মতোই ভালোবাসেন তবে বোধহয় আরো কয়েকবছর আগেই বিয়ে করে ফেলা উচিত ছিল।আর কিছু পাই বা না পাই, আব্বার স্নেহ তো পেতাম।নিজের অবুঝ ভাবনায় নিজেই হাসলাম আনমনে। স্বাভাবিক ভাবে বললাম,

” ভালো থাকব না কেন আব্বা?”
আব্বা আর কিছু বললেন না।থমথমে মুখ করে বসে রইলেন।আমি পা বাড়িয়ে রান্নাঘরে গেলাম।শিমা আপার রান্না শেষ। তাই আর দেরি করল না।আমি রান্নাঘরে ডুকা মাত্রই আমাকে বলে চলে গেলেন দ্রুত।আমি একপলক তাকিয়ে নাস্তার ট্রে নিয়ে নাস্তা সাঁজালাম।জানালা দিয়ে চোখে পড়ল দুপুরবেলার তীব্র রোদ। তবুও চুলায় চা বসালাম।কারণ আব্বার কাছে রোদ, বৃষ্টি লাগে না। আব্বা সবসময়ই চা খেতে পারেন। বলা যায় চা তার অত্যাধিক পছন্দ!ট্রের একপাশে চায়ের কাপ রাখতেই পেছন থেকে মেহেরাজ ভাই বললেন,

” এই দুপুরে চা করছিস? চাচা এখন চা খাবে?পাগল তুই?”
আমি ঘাড় বাকিয়ে তাকালাম।মেহেরাজ ভাই চলাফেরা করেন একদম নিঃশব্দে।কখন আসে, কখন যায় বুঝায় যায় না।এই যে এখনও উনি রান্নাঘরে কবে ডুকলেন আমি টের পাইনি।এতটা নিঃশব্দে চলা যায় কি?কে জানে!মৃদু গলায় বললাম,

” আব্বা খায়। জিজ্ঞেস করবেন আব্বাকে?”
মেহেরাজ ভাই টানটান মুখ স্বাভাবিক করে পাশে এসে দাঁড়ালেন।বললেন,
” জিজ্ঞেস করার প্রশ্নই আসে না।চাচার সামনে দাঁড়াতে পারছি না।”
” আব্বার সামনে দাঁড়াতে না পারার মতো কিছু করলে অবশ্যই দাঁড়াতে পারবেন না।আর যদি না করেন, তবে কেন… ”

বাকিটা আর বলা হলো না আমার।মেহেরাজ ভাই ঠান্ডা গলায় বলে উঠলেন,
” অপরাধবোধ হচ্ছে।”
আমি চোখ তুলে চাইলাম।চেহারা কি ভীষণ মলিন।কপালে ভাজ। মানুষটাকে ক্লান্ত দেখাচ্ছে।হয়তো সবদিকের চাপ সহ্য করতে করতে ক্লান্তি এসে ভর করেছে সমস্ত শরীরজুড়ে।একমুহুর্তের জন্য মায়া হলো আমার।ইচ্ছে করল হাত ছুঁইয়ে কপালে রাখি।বলি,” এতোটা ক্লান্তি আপনাকে মানায় না মেহেরাজ ভাই।” কিন্তু বলা হলো না।চায়ের পাতিলে মনোযোগ দিয়ে স্পষ্ট গলায় বললাম,

” কোন অপরাধ করেছেন আপনি?”
উনি স্পষ্ট ভাবেই উত্তর দিলেন,
” না।”
আবারও প্রশ্ন ছুড়লাম,
” তবে? ”
মেহেরাজ ভাই মলিন গলায় শুধালেন,

” উনি আমার এককালের শিক্ষক ছিলেন।উনার সামনেই পরিস্থিতিটা তৈরি হবে কখনো ভাবিনি।”
আমি তাচ্ছিল্য নিয়ে হাসলাম।আব্বার কি আসলেই কিছু এসে যাবে?আব্বা কি আসলেই তার মেয়ের স্বামী অন্য কাউকে ভালোবেসে জেনে মেয়ের জীবনের জন্য অনুতপ্ত হবেন?হয়তো হবেন না।উনার কাছে আমি ছিলাম বোঝা।সে বোঝা যেখানেই যাক,যেভাবেই থাকুক, যার কাছেই যাক।উনি মুক্ত হলেই হলো।
বললাম,

” চিন্তা করবেন না মেহেরাজ ভাই।আব্বা কিছু বলবে না আপনাকে। আমার আব্বা বাকিসব আব্বাদের মতো নয় যে মেয়ের স্বামীকে অন্যকোন মেয়ের সাথে দেখে রেগে যাবে।মেয়ের সংসারের অধিকার চাইবে। আমার আব্বা ব্যাতিক্রম।দেখেননি? তখন সামান্তা আপুর সামনেও কিছু বলেননি। বললে তখনই বলে ফেলত। ”
মেহেরাজ ভাই এবার গাঢ় চাহনীতে তাকালেন আমার দিকে।বললেন,

” তোর কি অভিযোগ আছে সামান্তাকে নিয়ে?নাকি অভিমান?ও এমনই জ্যোতি।ছোটবেলায় খেলনা হারালেও নাকি এক সপ্তাহ এমন পাগলামি করত। অন্য কারো কাছে একই রকমের খেলনা দেখলেই কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করত।তুই কি কষ্ট পাস এসবে?”

আকস্মিক এই প্রশ্নে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম।কষ্ট পাই কিনা?হ্যাঁ, কষ্ট তো পাই। আঘাত ও পাই।কিন্তু তা প্রকাশ করাটা কি যৌক্তিক?যৌক্তিক নয়।তাচ্ছিল্য নিয়ে হেসে বললাম,
” কষ্ট কেন পাব মেহেরাজ ভাই?প্রেমের সম্পর্ক আপনার আর সামান্তা আপুর ছিল। তাই আপনাদের কষ্ট হচ্ছে একে অপরকে ছাড়তে।আমার সাথে তো ছিল না যে অন্য একজনকে মানতে না পেরে কষ্ট পাব।”
মেহেরাজ ভাই পকেটে হাত গুঁটিয়ে বুক টানটান করে দাম্ভিক ভাব নিয়ে দাঁড়ালেন।চলে যেতে যেতে শান্তস্বরে বললেন,

” আমি তোর কন্ঠে কষ্টের আওয়াজ শুনেছি।তোর চোখে বিষাদের ছোঁয়া দেখেছি।”
তারপর চলে গেলেন।নিষ্পলকভাবে সেই চলে যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে থাকলাম আমি।বুকের গহীন থেকে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসতেই ঠোঁট নাড়িয়ে হালকা স্বরে বলে উঠলাম,
” কষ্ট যাদের সঙ্গী তাদের কন্ঠে স্বভাবতই কষ্ট থাকতে পরে মেহেরাজ ভাই। স্বভাবতই তাদের চোখে বিষাদ ছুঁতে পারে।এটা বিশেষ কিছু নয়। ”

আব্বা নাস্তা ছুঁয়েও দেখলেন না।এমনকি উনার পছন্দের চাও হাত বাড়িয়ে নিলেন না।শুধু গম্ভীর গলায় বললেন,
” এসব নিয়ে যা জ্যোতি।মনমেজাজ ভালো লাগছে না।”
আমি তবুও বললাম,
” চা টা নিতে পারেন আব্বা।চা তো আ…”
বাকি কথাটা আমি বলতে পারলাম না।আব্বা তার আগেই ধমক দিয়ে কঠিন কন্ঠে বলে উঠলেন,
” কথা কানে যায় না তোর জ্যোতি?বললাম তো নিয়ে যা।”

আব্বার ধমকে চুপ হয়ে গেলাম।আব্বাকে দেখামাত্রই যে আনন্দস্রোত হৃদয়ে অনুভূত হয়েছিল তা মুহুর্তেই পরিণত হলো বিষাদ অনুভূতিতে।আব্বা ঠিক আগের মতোই আছেন।আগের মতোই আমাকে অপছন্দ করেন।আমিই হয়তো বেশি আশা করে ফেলেছিলাম।আব্বা কেন আমার খোঁজ নিতে এতদূর ছুটে আসবেন?আমি মরি, বাঁচি আব্বার কি তাতে আধৌ কিছু এসে যায়?না।ভাবতে ভাবতেই নাস্তার ট্রে নিয়ে চলে যেতে নিতেই আব্বা ফের বললেন,
” জ্যোতি শোন।”

আমি দাঁড়ালাম।পেছন ঘুরে তাকাতেই আব্বা উঠে আমার সামনে এলেন।পকেট থেকে কিছু টাকা বের করে আমার হাতে গুঁজে দিয়েই বললেন,
” এখানে হাজার দশ আছে।রাখ। তোর লাগবে।প্রতিমাসে এসে দিয়ে যাব আমি হাতখরচ।”

আমি অবাক হলাম না।আব্বা বরাবরই এই দায়িত্ব বেশ দক্ষভাবে পালন করে এসেছেন।গ্রামের বাড়িতে থাকাকালীনও পালন করেছেন।একমুহুর্তের জন্য মনে হলো টাকাগুলো আসলেই নেওয়া উচিত।অন্তত মেহেরাজ ভাইয়ের ঘাড়ে বোঝা হয়ে থাকার থেকে আব্বার কাছ থেকে টাকা নেওয়া খারাপ কিছু নয়।

আব্বার সাথে আমার রক্তের সম্পর্ক।আর মেহেরাজ ভাইয়ের সাথে স্বল্পদিনের একটা বাধ্যগত সম্পর্ক।দুদিনের সেই সম্পর্কের জেরে মেহেরাজ ভাইয়ের কাছে হাত পাতাটা ব্যাপক লজ্জ্বাজনক বিষয়।আমি টাকাগুলো নিলাম।জিজ্ঞেস করলাম,

” এইজন্যই এসেছিলেন আব্বা?”
আব্বা উত্তর দিলেন,
” হ্যাঁ। আবার চলে যাব। ”

আমি আর দাঁড়ালাম না। পা চালিয়ে ট্রে টা নিয়ে ফের রান্নাঘরে আসলাম। ভেবেছিলাম আব্বা আমার খোঁজ নিতে এসেছেন।আমি কেমন আছি তা দেখতে এসেছেন।আমার ভাবনা ভুল।আমি স্থির হয়ে স্বাভাবিক চাহনী ফেললাম জ্বলন্ত চুলায়। বসার ঘর থেকে মেহেরাজ ভাইয়ের গলা ঝাড়ার আওয়াজ পেলাম। মুহুর্তেই কান খাড়া হলো।মেহেরাজ ভাই বলতে লাগলেন,

” চাচা, আমার আর জ্যোতির বিয়েটা আকস্মিকভাবেই হয়েছিল। এটা তো আপনার জানাই ছিল। জ্যোতির সাথে যে আমার বিয়ের আগে থেকে সম্পর্ক ছিল এমন নয়।মিথ্যে বলব না, সামান্তার সাথে আমার সম্পর্ক ছিল।দীর্ঘ চারবছরের।জ্যোতির সাথে বিয়েটা সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃতই হয়েছিল।আর সামান্তা সে বিয়েটাই বোধ হয় মেনে নিতে পারে নি।সেদিনের পর থেকেই ও এমনই হয়ে আছে।তখনকার আকস্মিক জড়িয়ে ধরাটাও ওর পাগলামো ব্যাতীত কিছু নয়।আমি ছোট চাচাকে জানিয়েছি বিষয়টা।আমার মনে হলো সত্য না লুকিয়ে আপনাকে বলে ফেলাটাই বেটার হবে। তাই বলে দিলাম চাচা।”

এক মুঠো প্রণয় পর্ব ১১

কথাগুলো শুনেই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে আব্বার দিকে চাইলাম।আব্বার চাহনী তখনও থমথমে।কি বুঝেই উঠে দাঁড়ালেন আব্বা।তারপর মেহেরাজ ভাই আর আমাকে বলেই বিদায় নিলেন। আমি আগ বাড়িয়ে কিছু না বললেও মেহেরাজ ভাই আটকালেন। তবুও আব্বা থাকলেন না।চলে গেলেন।

এক মুঠো প্রণয় পর্ব ১৩