এক মুঠো প্রণয় পর্ব ১৩

এক মুঠো প্রণয় পর্ব ১৩
লেখনীতে একান্তিকা নাথ

সকাল সকালই সামান্তা আপু আর ছোট চাচী সামান্তা আপুর মামাবাড়িতে রওনা দিলেন।মেহেরাজ ভাই সে খবর পেয়েই বোধ হয় বেলা বারোটা পর্যন্ত ঘুমোলেন।তখন শিমা আপা ও রান্না করে চলে গিয়েছেন।মেহু আপু বেরিয়েছেন আরো ঘন্টা দুয়েক আগে।বাসায় কেবল আমি আছি বলেই চা টা নিয়ে মেহেরাজ ভাইয়ের ঘরের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম।ঘরে ডুকে দেখলাম মেহেরাজ ভাই গম্ভীর মুখ করে বসে আছেন।সামান্তা আপুকে তার মামাবাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শটা উনিই দিয়েছিলেন।তাই বোধহয় প্রিয়মানুষের চলে যাওয়ার কারণেই মলিন হলো উনার মুখ।আমি পা বাড়িয়ে সামনে গেলাম।নিজ থেকে বললাম,

” একটা জটিল সম্পর্ক বয়ে নেওয়ার থেকে একটা সহজ সম্পর্ক বয়ে চলা সহজ মেহেরাজ ভাই।”
মেহেরাজ ভাই আমার দিকে চাইলেন।বিছানা ছেড়ে উঠে কপালে পড়া অগোচাল চুলগুলো পেছনে ঠেলে সোজা হয়ে দাঁড়ালেন। গলা ঝেড়ে বললেন,
” সামান্তার সাথে সম্পর্কটা আগে সহজ ছিল।এখন ক্রমশ জটিলই হবে। ”
আমি চায়ের কাপ এগিয়ে দিয়ে বললাম,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

” উল্টোটা ভাবলে?আমার আপনার সম্পর্কটা জটিল ছাড়া সহজ হবে বলে মনে হয় না।তার থেকে বরং যা সহজ আছে তাকে জটিল না করাই ভালো নয়? আমি দুদিনের অতিথি মেহেরাজ ভাই।বাড়ির অবস্থা স্বাভাবিক হলে ফিরে যাব।তারপর ভাগ্যে থাকলে এডমিশনে কোথাও চান্স মিললে বাড়ি ছেড়ে সেখানে চলে যাব।শুধু শুধু দায়িত্বের কথা ভেবে আমার বিষয়টা না ভাবলেও চলবে মেহেরাজ ভাই।”

মেহেরাজ ভাইয়ের চোয়াল শক্ত হলো।মুখ টানটান করে গম্ভীর স্বরে ধমকের ন্যায়ই জবাব দিলেন,
” আমাকে কি মেরুদন্ডহীন মনে হয় তোর?”
“না,তবে এমন একটা সম্পর্ক বয়ে ও কি লাভ আছে মেহেরাজ ভাই?আপনি বরং আমার বিষয়টা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন।ভাবুন মাঝখানে কোন ঘটনাই ঘটেনি, কোন দায়িত্বই আপনার কাঁধে নেই। আপনার জীবনে শুধু সামান্তা আপুই আছে এটাই কল্পনা করুন। ”

মেহেরাজ ভাই কিয়ৎক্ষন চুপ থাকলেন।হাত থেকে চায়ের কাপটা এগিয়ে নিতে নিতেই শান্তস্বরে বললেন,
” শোন জ্যোতি, আমি মেরুদন্ডহীন নই।স্বার্থপর ও নই।দায়িত্বজ্ঞানহীনও নই।এরপর থেকে কথাগুলো ভেবে বলবি।”
ঠোঁটে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটল আমার।শান্তস্বরে বললাম,

” দায়িত্ব নিয়ে আর যায় হোক সম্পর্ক টেনে নেওয়া যায়না মেহেরাজ ভাই।আব্বাও আমার প্রতি ছোট থেকে দায়িত্ব দেখিয়েছেন কিছু টাকার বিনিময়ে। আপনার কি মনে হয়?আব্বার আর আমার সম্পর্ক স্বাভাবিক?স্বাভাবিক নয়।আব্বার সাথে আমার নামমাত্র সম্পর্ক।সত্যি বলতে বাবা মেয়ের সম্পর্কের সেই সুখ, হাসি, স্নেহ কোনটার সাথেই আমি পরিচিত নই। এমন সম্পর্ক বয়ে চলার থেকে সূচনাতেই সমাপ্তি ঘটানো ভালো।”
মেহেরাজ ভাই শুনলেন।কিন্তু উত্তর দিলেন না।চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে কিছুক্ষন পর বললেন,

” তোকে তো কেউ সম্পর্ক নিয়ে ভাবতে বলেনি এখন।বলেছে?তোর তো পড়ায় ফোকাস করা প্রয়োজন।”
উত্তর দিলাম,

” একটা সম্পর্কের ভাঙ্গনের জন্য ডিরেক্টলি বা ইনডিরেক্টলি আমিই কেন দায়ী হবো?একটা সম্পর্কে তৃতীয় ব্যাক্তি হয়ে থেকে নিজেকে এতটা স্বস্তা কেন বানাবো আমি?আমি মোটেই অতোটা স্বস্তা নই যে একটা সম্পর্কে তৃতীয় ব্যাক্তি হয়ে আজীবন ঝুলে থাকব মেহেরাজ ভাই।”
মুহুর্তেই মেহেরাজ ভাই বলে উঠলেন,

” থাকিস না।”
মেহেরাজ ভাইয়ের স্পষ্ট বলা কথাটাই বুকে গিয়ে লাগল।লম্বা শ্বাস টেনে বলে উঠলাম,
” সেদিন মুক্ত হবো আমি। ”
কথাটা বলেই পা বাড়াতে নিলেই মেহেরাজ ভাই গলা ঝাড়লেন। বলে উঠলেন,
“চায়ের কাপটা নিয়ে যা।”
উল্টো ঘুরে তাকালাম।চায়ের কাপে এখনো অর্ধেকের বেশি চা।তাকিয়েই বললাম,

” মেহু আপু বলল ঘুম ছেড়ে চা লাগে আপনার?তাই নিজ থেকে করে এনেছিলাম।আমি করেছি বলেই রেখে দিলেন?”
মেহেরাজ ভাই শান্ত চাহনীতে তাকালেন।কপালের ভাজে হাত বুলিয়ে শান্তস্বরে বললেন,
” মাথা ধরেছে,তাই।মেহু থাকলে মাথা টিপে দিতে বলতাম। ও তো নেই।তাই বের হবো।”
মাথা ধরাটা স্বাভাবিক।উনার থম মেরে বসে থাকা, কপালে ভাজ দেখেই বুঝা যায় উনার মন মস্তিষ্কের অবস্থা ভালো নয়।

হঠাৎ আমার কি হলো কিজানি।একপলক উনার ক্লান্ত চেহারায় তাকিয়েই বলে উঠলাম,
” আমি দিব?”
ছোট দুই শব্দের বাক্যটা বলে ফেলেই তীব্র অস্বস্তিতে ছটফট করলাম।মনে মনে নিজেকে হাজার ভাবে শাসালাম।কি দরকার ছিল নিজ থেকে বলার?উনি কি ভাববেন আমি গায়ে পড়া মেয়েদের মতো গায়ে পড়ার চেষ্টা করছি?এইটুকু ভাবতেই চোখের সামনে চকচক করে উঠল দুইবছর আগের মেহেরাজ ভাইয়ের করা অপমান গুলো।

অনুভূতি জম্মেছে বলে এত অপমান করেছিলেন সেদিন।আজ কি তবে আরো এক ধপা অপমানের সম্মুখীন হবো আমি?উহ!আমি আসলেই বেহায়ার মতো কাজ করে বসলাম। নিজের আত্মসম্মানের হেলাফেলা করে মোটেই এই প্রশ্নটা করা উচিত হয়নি আমার।এইটুকু ভেবেই উনার হাত থেকে চায়ের কাপটা নিলাম।উল্টোঘুরে আবারও চলে আসতে নিতেই মেহেরাজ ভাই আমাকে অবাক করে দিয়ে বলে উঠলেন,

” চলে যাচ্ছিস যে?মাথা টিপে দিবি না?”
আমার পা থমকাল।অবাক করা বাক্যটা শুনেই বুকের ভেতর ধুপধুপ আওয়াজ হলো। এতকাল সকল দুঃখ কষ্টে স্থির থাকা আমি আজ হঠাৎ অস্থির হয়ে উঠলাম এক মুহুর্তে।কেন জানি না হাত পা কাঁপতে লাগল।ঘনঘন শ্বাস ফেললাম।যথাসম্ভব নিজেকে স্বাভাবিক করে বললাম,
” চায়ের কাপটা রেখে আসতেই যাচ্ছি।”

কথাটা বলে ধুপধাপ পা ফেলে রান্নাঘর পর্যন্ত পৌঁছালাম।বুকের ভেতর তখনও শিহরনের ছোঁয়া জ্বলন্ত।চায়ের কাপটা রেখে সেই জ্বলন্ত শিহরণ বয়ে নিয়েই ফের মেহেরাজ ভাইয়ের ঘরে গেলাম।উনি চোখ বুঝে ততক্ষনে পিঠে বালিশ ঠেকিয়ে খাটে হেলান দিয়ে আছেন।আমি ইতস্থত বোধ করে খাটের পাশে দাঁড়ালাম।কিয়ৎক্ষন তাকিয়ে থাকলাম উনার স্নিগ্ধ মুখের দিকে।বন্ধ রাখা চোখের পাতা, ভ্রু জোড়া, পুরু ঠোঁট, এমনকি মুখের খোঁচা দাঁড়ি সবই খুব কাছ থেকে স্থির চাহনী রেখে দেখলাম।তারপর হঠাৎই কাঁপা হাতে হাতটা বাড়ালাম উনার কপাল ছোঁয়ার জন্য।উনি চোখ খুললেন।আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

” পাঁচ মিনিট হলেই হবে।তারপর পড়তে যাবি।”
মুহুর্তেই স্পষ্টগলায় বললাম,
” আচ্ছা।”

মেহেরাজ ভাই পুনরায় চোখ বুঝলেন।আমি কাঁপা হাতটা এগিয়ে স্পর্শ করলাম মেহেরাজ ভাইয়ের কপাল।আলতো হাতে মাথা টিপে দিতে লাগলাম এক অজানা স্পন্দন হৃদয়ে স্থাপন করে।এক মিনিট, দুই মিনিট করে বোধহয় মিনিট দশ-পনেরো শেষ হওয়ার পরই আমি হাত সরালাম।মেহেরাজ ভাই চোখ বুঝে আছেন ভেবে ভেবেছিলাম ঘুমিয়ে আছেন।কিন্তু না।পুনরায় আমাকে অবাক করে দিয়ে উনি চোখ বুঝে রেখেই বললেন,

” এবার পড়তে যা।”
আমি আর দাঁড়ালাম না।মনে মনে ভাবলাম,মেহেরাজ ভাইয়ের প্রতি আমার অনুভূতি আছে।তবে সে অনুভূতি বিশেষ পরিণতি পাবে এমন কোন আশা দেখা অযৌক্তিক!সুখময় মিথ্যে স্বপ্নের থেকে দুঃখময় বাস্তব শতগুণে ভালো।কয়েক মুহুর্তের জন্য হৃদয়ের ভেতর সেই জ্বলন্ত শিহরন শুধুই মরিচীকাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা।এর বাইরে কিচ্ছুই নয়।ভেবেই দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।পা বাড়িয়ে নিজের ঘরে এসে চেয়ার টেনে আরাম করে বসলাম।কেন জানি না ঐ মুহুর্তে দাদীর কথা মনে পড়ল ভীষণ করে।দেরি না করে বাটন ফোনটা নিয়ে কল দিলাম মিনার ভাইকে। মিনার ভাই কল তুললেন কিছুক্ষন পর।বোধ হয় কল তুলেই দাদীকে মোবাইলটা ধরিয়ে দিলেন।সঙ্গে সঙ্গে ওপাশ থেকে দাদীর উঁচু গলা ভেসে আসল,

” জ্যোতি? আনোয়ার গিয়া এহন এমন থমথমে হইয়া আছে ক্যান? কিছু কইছস ওরে?কিছু হইছে ঐহানে?”
প্রথম ধপায় দাদীর এমন কথা শুনে মলিন হলো মুখ। নরম গলায় বললাম,
” না, আব্বাকে তেমন কিছু বলিনি আমি দাদী।তুমি কেমন আছো?”
দাদী আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ফের প্রশ্ন ছুড়লেন,

” কিছু হইছে কি ঐহানে?আনোয়াররে জিগাইলাম তুই কেমন আছস, কইল না কিছুই।সহাল থেইকা দেহি মুখ ভার কইরা আছে।”
আমি বললাম,
” আব্বাকে জিজ্ঞেস করোনি কিছু ঘটেছে কিনা?আব্বাকে জিজ্ঞেস করে নিও বরং। বলো, কেমন অবস্থা তোমার?”
দাদী এবারও আমার প্রশ্নের উত্তর দিলেন না।ফের নিজের গলা চালিয়ে বললেন,

” ভালা আছস তুই ঐহানে? ক্যান জানি মনে হইতাছে আনোয়ার কোন অন্যায়ের লাইগা অপরাধবোধে ভুগতাছে।”
আমি হেসে বললাম,
” ওসব তোমার মনের ধারণা দাদী।শরীর ঠিক আছে?”
” হ,ঠিক আছে।তোর পরীক্ষা না কবে থেইকা শুরু হইব? কহন হইব পরীক্ষা?”
আমি আবারও হাসলাম।দাদী পরীক্ষার কথা কেন জিজ্ঞেস করছে বুঝতে পেরেই বললাম,

” বাড়ি যাওয়ার জন্য দাদী?”
” না, এমনেই জানার লাইগা । ”
” বাড়ির অবস্থা স্বাভাবিক দাদী?আমি বাড়ি যেতে চাই।এখানে আর থাকব না।নিয়ে যেতে পারবে?”
দাদী মুহুর্তেই যেন চমকে গেলেন।আওয়াজ তুলে বললেন,
” কি কস? এহন বাড়ি ফিইরা আইলে মানুষ কইব কি?মানুষ কি দুইদিনেই ভুইলা গেছে সব?এহন আবার নতুন কইরা সমালোচনার আসর জমাইব।”

তাচ্ছ্যিলতায় ভরে গেল হৃদয়ের আনাচ কানাচ।আমি কি কোন অন্যায় করেছি?দাদী তবে এভাবে বলল কেন?জিজ্ঞেস করলাম,
” তুমি কি আমায় লুকিয়ে রেখেছো দাদী?তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে আমিই কোন বিশাল বড় অন্যায় করে ফেলেছি দাদী।আমি কি আসলেই অন্যায় করেছি?আমার কি লুকিয়ে থাকা প্রয়োজন?”

” লুকাইয়া রাখি নাই।এহন বাড়ি ফিরলে মানুষ জিগাইবে না কেন আইল? তহন তো পরীক্ষার কথা কওয়া যাবে।”
তাচ্ছিল্য নিয়ে হাসলাম।দাদীর যুক্তিটা যুক্তিযুক্ত বোধ হলো না।ছোট্ট শ্বাস ফেলেই বললাম,
” আচ্ছা দাদী।ভালো থেকো।নিজের যত্ন নিও।ঔষুধ খেও ঠিকঠাক মতো।”
দাদী ভীত গলায় জিজ্ঞেস করলেন,

” তুই কি ভালা নাই ঐহানে?”
” আছি।রাখছি।”
তারপর কল কাঁটলাম।মোবাইলটা টেবিলের এককোণে রেখে চোখ রাখলাম সাদা খসখসে খাতার পাতায়। কলম নিয়ে উল্টাতে লাগলাম বইয়ের পৃষ্ঠা।পড়ার জন্য নির্দিষ্ট অধ্যায়ে পৌঁছাতেই খেয়াল করলাম একটা পৃষ্ঠায় ছোট করে লাভ আকৃতির ভেতর ইংরেজী অক্ষর এম লেখা।অবাক হলাম।

নিঃসন্দেহে বলা যায় লেখাটা আমি লিখিনি।তবে?খেয়াল হলো, পরশু এই অধ্যায়টা সাঈদ ভাই পড়িয়েছিলেন।অন্যমনস্ক হয়েই কি লেখাটা লিখে ফেলেছেন?কিন্তু এম দিয়ে কি নাম?মেহেরিন?মানে, মেহু আপু?ভাবনাটা ভাবতেই চোখ চকচক করে উঠল।হতেই পারে!সাঈদ ভাইয়ের চোখে মেহু আপুর প্রতি কিছু একটা থাকে আমি খেয়াল করেছি।আবার মেহু আপুর চোখেও কেমন জানি এক ধারালো আঘাত থাকে সাঈদ ভাইয়ের সামনে।কি আশ্চর্য!উনাদের মধ্যে কিছু ছিল?বা আছে?নাকি ভবিষ্যৎ এ তৈরি হবে?

সাঈদ ভাই নিয়ম মতো পড়াতে আসল রাতে।মেহু আপু, মেহেরাজ ভাই বসার ঘরেই বসে আছেন। পড়ার একপর্যায়ে সাঈদ ভাইকে বইয়ের সেই পৃষ্ঠায় লাভ আকৃতি আর এম অক্ষরটা দেখিয়ে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম আমি,
” সাঈদ ভাই?আপনি লিখেছেন না এটা?”
সাঈদ ভাই বোধহয় থতমত খেয়ে গেলেন।দুয়েকবার বইয়ের দিকে তাকিয়েই আমার দিকে তাকালেন। বললেন,
” ধুররর!আমি কেন এসব লিখতে যাব মেয়ে?আমি লিখলে পুরো একটা প্রেমকাব্য লিখে ফেলব।শুধু একটা লাভ চিহ্ন এঁকে কোন লাভ আছে?”

আমি জোর দিয়ে বললাম,
” এটা আপনারই লেখা সাঈদ ভাই।আপনি পরশুদিন পড়িয়েছিলেন অধ্যায়টা।”
সাঈদভাই ফের অস্বীকার করে বলে উঠলেন,
” আরেহ, না না!তুমিই লিখেছো হয়তো জ্যোতি।তোমার বয়সটা প্রেমের বয়স মানছি।আমি বকা দিব না।বলো তো কার প্রেমে পড়েছো? কার নামের প্রথম অক্ষর লাভ শেডের ভিতর লিখে ফেলেছো বইয়ের পাতায়?ট্রাস্ট মি,আমি বকা দিব না।আমি তেমন টিচারই নই।বরং আমার স্টুডেন্টরা প্রেম করলে আমি প্রাউড ফিল করি। ”
আমি হতাশ হয়ে বললাম,

” আপনি মিথ্যে বলছেন সাঈদ ভাই।”
সাঈদ পাত্তা দিলেন না।দক্ষ ভাবে মিথ্যে বললেন,
” ধুররর!আমি এসব লাভ টাভ আঁকতেই পারি না।আমি আঁকলে সোজা হৃৎপিন্ড আঁকব। তারপর হৃৎপিন্ডে তার নামের অক্ষর স্থাপন করব।”
আমি গম্ভীর মুখচাহনী নিয়ে বসে থাকলাম।সাঈদ ভাই স্পষ্টভাবেই মিথ্যে বলছে।কি মিথ্যুক!ছোট ছোট চোখে তাকিয়ে বললাম,

” বোন হিসেবে জিজ্ঞেস করছি সাঈদ ভাই।বোনকে বিশ্বাস করে সত্যিটা বলতে পারেন।”
সাঈদ ভাই বোকা বোকা হাসলেন।কিছু একটা বলার জন্য প্রস্তুতি নিলেন কিছুক্ষন। তারপর মুখ খুলে সেই কথাটা বলবেন ঠিক সেই মুহুর্তেই আমার পেঁছনে কিছু দেখে বদলে গেল উনার মুখ চাহনী।আমি ঘাড় ঘুরালাম তৎক্ষনাৎ।দেখলাম, দরজায় দাঁড়িয়ে বুকে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছেন মেহেরাজ ভাই। ভ্রু উঁচিয়ে সাঈদ ভাইয়ের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুড়লেন ইশারায়। সাঈদ ভাই মুহুর্তেই চুপসে গেলেন।দাঁত কেলিয়ে হেসে নিজের সমস্ত দোষ আমার উপর চাপিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন,

” আরেহ, কি যে বলি তোকে।ছাত্রী হলো একটা পিচ্চি মেয়ে।প্রেম ভালোবাসার বয়স তার।এই বয়সে কাকে না কাকে ভালোবেসে বইয়ে পড়তে পড়তে কখন জানি লাভ এঁকে তার মধ্যে এম লিখে ফেলেছে।আমি চিন্তা করছি এম দিয়ে কোন কোন ছেলের নাম হতে পারে।ওয়ান মিনিট, তোর নামও তো এম দিয়েই তাই না?মেহেরাজ!হ্যাঁ, এম দিয়েই তো।”

সাঈদ ভাইয়ের আকস্মিক ডাহা মিথ্যে কথায় মস্তিষ্কে দাউদাউ করে আগুন জ্বলতে লাগল আমার।ছিঃ!মেহেরাজ ভাইয়ের সামনে আমার আত্নসম্মানের আ টাও রাখলেন না?আমি কখনোই এমন ইমম্যাচিউরডের মতো লাভ এঁকে ভালোবাসার মানুষের নামের অক্ষর লিখতাম না।জীবনেও না।মেহেরাজ ভাই কি ভাবছেন এখন?আমি তার প্রতি দুর্বল?দিনরাত তার কথা ভেবে ভেবে মরে যাচ্ছি?

এক মুঠো প্রণয় পর্ব ১২

তার কথা ভেবে ভেবে পড়ালেখায় মন বসছে না আমার?বই, খাতায়,টেবিলে সবজায়গায় উনার নাম লিখে বেড়াচ্ছি?কথাগুলো ভেবেই মেজাজ খারাপ হলো।রাগ লাগল। মেহেরাজ ভাইয়ের মুখের প্রতিক্রিয়া বুঝার জন্য আবারও ঘাড় ঘুরাতেই দেখলাম মেহেরাজ ভাই টানটান মুখ করে এক পলক তাকালেন। তারপর পা ঘুরিয়ে চলে গেলেন।আর আমি সেই যাওয়ার দিকেই তাকিয়ে থেকে একরাশ রাগ -জেদ পুষলাম অন্তরে।

এক মুঠো প্রণয় পর্ব ১৪