এক মুঠো প্রণয় পর্ব ২৬

এক মুঠো প্রণয় পর্ব ২৬
লেখনীতে একান্তিকা নাথ

জ্যোতি কথায় কথায় মেহুর কাছেই শুনেছে মেহেরাজরা যে চট্টগ্রামে বাসা নিয়েছে।সপ্তাহখানেক হলো চট্টগ্রামে শিফট করেছে।জ্যোতি সে খবরটা তিনদিন আগে শুনতে পেলেও এখন ও মেহুর সাথে দেখা করা হয়ে উঠেনি একবারও। মেহুই ব্যস্ত বাসা গোঁছাতে তাই আর দেখা করা হয়নি।

জ্যোতি ও আর জোর করে নি। কিন্তু মনে মনে ঠিক করে নিয়েছিল মেহুর জম্মদিনে অবশ্যই দেখা করবে।অবশেষে জম্মদিনের তারিখ এগিয়েই এল।আজ দিন শেষ হয়ে রাত বারোটা বাঁজলেই মেহুর জম্মদিন। তার কারণেই মেহুর জম্মদিনের উপহার দেওয়ার জন্য কিছু কিনতেি বের হয়েছিল জ্যোতি। কিন্তু পথেই বাঁধল বিপত্তি। রিক্সাটা সামনের গাড়িটার সাথে ধাক্কা খেয়েই সাংঘাতিকভাবে উল্টে পড়তে নিতেই জ্যোতি খসখসে রাস্তার জমিনে মুখ থুবড়ে পড়ল।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

মুহুর্তেই কপালের ডানপাশটায় কেঁটে জ্বালা ধরল। ঠোঁটের এককোণে রাস্তার খসখসে জমিতে কেঁটে রক্ত জমাট বাঁধল। গালের ডানপাশটাও ছিলে আছে। ডান পা টা কেঁটে গিয়ে বিচ্ছিরি রকম অবস্থা হলো।টের পেল ব্যাথায় টনটন করছে তার পা। এমনকি পা নাড়ানোতেও যন্ত্রনায় মুখ নীল হয়ে উঠছে ক্ষনে ক্ষনে। যন্ত্রনা তীব্র। ব্যাথায় জ্যোতির চোখ টলমল হলো। শুধু যে কাঁটার যন্ত্রনাই নয় এটা তা ঢের বুঝতে পারল।মুহুর্তেই লোকজন ঝড়ো হলো।

তাদের সহায়তাতেই হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হলো তাকে। সেখানেই এক্সরে করার পর জানতে পারল ডান পায়ের পাতায় হাড় ভাঙ্গার ফলস্বরূপই এই অসহনীয় ব্যাথা। অসহ্যকর যন্ত্রনা।পায়ের পাতা ফুলে বিচ্ছিরি হয়ে উঠছে ক্রমশ। ততক্ষনে অবশ্য তার রুমমেট এসে পৌঁছেছে।মেয়েটার নাম রিতু।

দেখতে অসম্ভব সুন্দরী হলেও মনটা খুব নরম। বলা যায় সরল মনের মেয়ে। জ্যোতিকে এমন অবস্থায় দেখেই যেন কেঁদে ফেলবে সে।জ্যোতি তাকে ফোন করে যতটুকু জানিয়েছিল তাতে তার মনে হয়েছিল খুবই সামান্য একটা এক্সিডেন্ট।খুবই সামান্য আঘাত পেয়েছে ।

কিন্তু এখানে এসেই সে ধারণা বদলে গেল। ডান পায়ের সাংঘাতিকভাবে জখম হওয়া,ফুলে যাওয়া, হাড় ভাঙ্গা, মুখের একপাশে ঘষে যাওয়া অংশ আর ফোলা ঠোঁটের কোণে জমাট রক্ত আর কপালের একপাশটায় কাঁটা দাগ সব মিলিয়ে বিধ্বস্ত দশা! রিতু ফুুঁপিয়ে কেঁদে দিল এবার ।দ্রুত এগিয়ে গিয়েই আবেগ আপ্লুত হয়ে জড়িয়ে ধরল জ্যোতিকে। বলে উঠল,

” কি করলি এসব জ্যোতি? কতটা কেঁটেছে৷কতটা আঘাত পেয়েছিস। কি করে হলো এসব ? এতক্ষন হয়ে গেল অথচ কোন চিকিৎস করেনি কেন? ”
জ্যোতি অল্প হাসল। এই মেয়েটা খুবই নরম মনের মেয়ে। তার এভাবে কেঁদে ফেলাটা অস্বাভাবিক নয়৷ তবুও বলল,
” কাঁদছিস কেন? খুবই সামান্য তো। এক্সরে করে রিপোর্ট নিতে টাইম লেগেছে তাই। ”
রিতু ঠোঁট উল্টিয়ে বলল,

” তুই বললে হলো?আমি চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি কি সাংঘাতিক অবস্থা আর তুই বলছিস সামান্য?”
জ্যোতি এবারেও হাসল৷ ইতস্থত করে বলল,
” তোকে কিছু টাকা আনতে বলেছিলাম।আসলে সাথে করে অতো টাকা নিয়ে বের হইনি আর এমনটা হবে তাও জানা ছিল না রে। ”
” চুপ কর তো। এখন টাকা নিয়ে ভাবার সময়? ”

জ্যোতি বিনিময়ে কিছু না বলে চুপ করে থাকল। তারপর অনেকক্ষন পর ডক্টর দেখিয়ে,পর্যাপ্ত চিকিৎসা করিয়ে, ঔষুধপত্র নিয়েই রিতুর সাহায্য নিয়ে বাসায় পৌঁছাল। কিন্তু বাসার সামনে এসেই গাড়ি থেকে নেমে বাকি পথটা যাওয়া নিয়েই দুশ্চিন্তায় পড়ল। পায়ের যন্ত্রনাটা ক্রমশ বাড়ছে। কাঁটাছেড়ার যন্ত্রনাকে তেমন একটা পাত্তা না দিলেও হাঁড় ভাঙ্গার ব্যাথায় যেন কুঁকড়ে উঠছে সে।

পা নাড়ানো নিষেধ। এদিকে সিঁড়ি বেয়ে দোতালায় নিজের বাসায় পৌঁছানোটাও জরুরী। অবশেষে নিজের মনকে মানিয়ে নিয়েই রিতুর সাহায্য নিয়ে ভাঙ্গা পা উঁচু করে রেখেই দাঁতে দাঁতে চেপে এগিয়ে গেল। একেকটা পদক্ষেপে যন্ত্রনায় চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল জল।ব্যাথায় নীল হয়ে উঠল মুখ। এবার আর চোখের জল আড়াল করা গেল না। আড়াল করা হলো না ব্যাথায় নীল হয়ে উঠা মুখটা। আড়াল করা গেল না প্রতি পদক্ষেপে অস্ফুট স্বরে আর্তনাদ করে উঠা, ব্যাথায় কুঁকড়ে মরা।

মেহেরাজদের নতুন বাসায় দুপুরের দিকেই এসে উপস্থিত হলো নাবিলা, নাফিসা। মূলত মেহুকে সরাসরি জম্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোর জন্যই প্লেন করে এতদূর ছুটে আসা।সামান্তা না আসলেও নাবিলার মধ্য দিয় পাঠাল উপহারস্বরূপ একটা ছোট বক্স। মেহু খুশি হলো। একে একে সবাই জম্মদিনের উইশ জানানোতে আনন্দে মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল।

বসার ঘরে সোফায় বসেই সবাই আড্ডা দিচ্ছিল তখন। এমন সময়ই হঠাৎ মনে পড়ল জ্যোতির কথা। মেয়েটা নিয়ম করে রাতের বেলা তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে ঠিক কিন্তু এত কাছে, একই শহরে থেকেও একবার দেখা করতে আসল না? অথচ বাকিসবাই অন্য শহর থেকে এই শহরে এতদূর পথ পাড়ি দিয়ে ছুটে এসেছে। মেহু ছোট শ্বাস টেনে মোবাইল হাতে নিয়ে কল দিল জ্যোতিকে। ওপাশ থেকে জ্যোতি প্রথমবার কল না তুললেও কিয়ৎক্ষন পর নিজেই কল করল।মেহু কল তুলেই বলল,

” কোথায় তুই? ”
জ্যোতির গলা নিস্তেজ শোনাল। উত্তরে বলল,
” রুমেই আপু। কেন? ”
মেহু তৎক্ষনাৎ বলে উঠল,

” আসতে পারবি? দেখা করবি বলছিলি না? আজ দেখা কর।বাসায় আয়।”
মেহুর কথা শুনে জ্যোতি বুঝে উঠল না কি বলবে। এতগুলো দিন যখন দেখা করার কথা বলেছিল মেহুই ব্যস্ত আছে বলেছিল। আর একদিনে পা ভেঙ্গে বিছানায় পড়ে থাকার মধ্যেই বলছে দেখা করতে। মুখটা চুপসে গেল মুহুর্তে। নরম গলায় বলল,

” আপু? আজ টিউশনি আছে। কিছুদিন পর দেখা করি?”
মেহু অভিমানী কন্ঠে বলল,
” আমার থেকে টিউশনি বেশি তোর কাছে?”
জ্যোতি বুঝল অভিমানটা।ঢোক গিলে বলল,
” না মানে, এখন তো রাত হয়ে গেছে আপু।একা একা তোমাদের বাসা কোথায় খুঁজব আমি?”
জ্যোতি ভেবেছিল এ অযুহাতে বেঁচে যাবে।কিন্তু পরমুহুর্তেই মেহুর চমৎকার কথাটা শুনেই মুখটা পুনরায় চুপসে গেল। মেহু বলল দ্রুত গলায়,

” সমস্যা নেই। ভাইয়া বাইরে থেকে ফিরলে ভাইয়াকে পাঠাব।ভাইয়ার সাথে আসতে পারবি না? এতে তো সমস্যা নেই।”
জ্যোতি দ্রুত গলায় বলে উঠল,
” না,উনাকে পাঠাতে হবে না। ”
” তাহলে? ”
” আসলেই আসতে পারব না আপু। একটু সমস্যায় পড়ে গিয়েছি।”
মেহু মানল না।বলল,

” জানি না আমি, ভাইয়া গেলে ভাইয়ার সাথে চলে আসবি। রাতে আমরা খুব আড্ডা দিব। আমি, তুই, নাবিলা, নাফিসা সবাই।”
তারপর আর কোন কথা না বলেই কল কাঁটল। ঠোঁট গোল করে শ্বাস ছাড়ল মুহুর্তেই। অপর পাশে থাকা জ্যোতির মুখটা শুকনো হয়ে উঠল। ব্যাথায়, যন্ত্রনায় কুঁকড়ে উঠার সাথে সাথে জড়ো হলো নতুন চিন্তা। মেহেরাজকে যদি পাঠায় ও এ পা নিয়ে কি যাওয়া সম্ভব? নিজের এই অবস্থার কথা জানানোটাও কি উচিত হবে?

বোনের আবদারে অবশেষে মেহেরাজকে আসতেই হলো জ্যোতিকে নিয়ে যেতে।শুধু যে বোনের আবদার তা বলা যায় না, মনে মন সেও অপেক্ষায় ছিল মেহুর জম্মদিনে জ্যোতির দেখা পাওয়ার। জ্যোতিদের বাসার সামনে এসে দাঁড়িয়েই লাগাতার কল দিল জ্যোতিকে৷ ওদিকে জ্যোতির কল তুলার কোন কথা নেই। এক পর্যায়ে বিরক্ত হলো মেহেরাজ। শেষবারের মতো কল দিতেই ওপাশ থেকে জ্যোতির ঘুমঘুম গলায় কথা আসল,

” মাত্রই ঘুমিয়েছিলাম, খেয়াল করিনি এতগুলো কল। দুঃখিত মেহেরাজ ভাই।”
মেহেরাজ কপাল কুঁচকাল। মাত্র নয়টা বাঁজে। এত তাড়াতাড়ি তো এই মেয়ে ঘুমানোর কথা নয়।এই নিয়ে কৌতুহল জাগলেও বিপরীতে প্রশ্ন করল না। বলল,

” বাসায় আছিস, রাইট?”
” হ্যাঁ।”
” পাঁচ মিনিটে নিচে আয়। আমি অপেক্ষা করছি।”
জ্যোতি ঘুমঘুম ভাব কেঁটে গেল মুহুর্তেই। গতরাতে ব্যাথায় ঘুম হয়নি, সারাদিনও তেমন একটা ঘুম হয়নি।অবশেষে এখন ঘুম পেলেও তা নিমিষেই মেহেরাজের কথা শুনে পালিয়ে গেল। তার মানে সত্যি সত্যিই তাকে বাসায় নিয়ে যেতে এসেছে? কিন্তু সে এই পা নিয়ে নিচে নামবে কি করে? বিনিময়ে কিই বা বলবে?ইতস্থত গলায় বলল,

” মেহেরাজ ভাই আমার আসলে…”
কথাটুকু বলেই থামল সে। একবার ভাবল কথাটা বলা উচিক হবে কিনা৷ অপরপাশে মেহেরাজ অপেক্ষা করল পুরো বাক্যটা শোনার জন্য। না শুনতে পেয়েই ভ্রু জোড়া কুঁচকে নিয়ে বলল,।
” কি?
জ্যোতি দীর্ঘশ্বাস ফেলল।গলা ঝেড়ে উত্তর দিল,

” পাঁচ মিনিট নয়, আমি বোধহয় পাঁচদিনেও নিচে যেতে পারব না। আপনি দয়া করে ফিরে যান। ”
মেহেরাজের রাগ লাগল। দাঁতে দাঁত চেপে শুধাল,
” নাটক করছিস? দেরি হচ্ছে জ্যোতি। কথা না বাড়িয়ে নিচে আয় ”
জ্যোতি নত গলায় অপরাধীর মতো করে বলল,

” আমি সত্যিই দুঃখিত মেহেরাজ ভাই।যদি সমস্যা না থাকত আমি নিজেই চলে যেতাম মেহু আপুর সাথে দেখা করতে।”
মেহেরাজ ভ্রু উঁচিয়ে শুধাল,
” তো কি সমস্যা? ”
জ্যোতি এবারও বলল না। মৃদু স্বরে বলল,
” কিছু নয়।”
” তো ? ”

জ্যোতি হঠাৎই বলল,
” আপনি চলে যান। ”
মেহেরাজের রাগ এবার দ্বিগুণ হলো। শীতল গলায় রাগ মিশিয়ে বলে উঠল,
” নামবি কি নামবি না? ”

ওপাশ থেকে উত্তর আসল না। মেহেরাজ আর কিছু না বলেই কল কাঁটল। দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেল সামনের বিল্ডিংটার দিকে। তারপর গেইট পার হয়ে সিঁড়ি বেয়ে দোতালায় গিয়েই কলিং বেল চাপল। বাসাটা চেনে কারণ গতবারও মেহুর জম্মদিনে জ্যোতিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য সেই এসেছিল।তাই চিনতে আর অসুবিধা হলো না৷ বারকয়েক কলিংবেল বাঁজাতেই দরজা খুলল একটা মেয়ে।মেয়েটাকে সে না চিনলেও একবার তাকিয়েই বলল,

” জ্যোতি বাসায় আছে না? ওকে একটু তাড়াতাড়ি বের হতে বলবেন? আমার হাতে বেশি সময় নেই। ”
মেয়েটা হতবাক হয়ে তাকাল মেহেরাজের দিকে। পরমুহুর্তেই মনে পড়ল বেলকনি থেকে এই ছেলেটাকেই সেদিন বাসার সামনে জ্যোতির পায়ে নুপূর পরাতে দেখেছিল সে।তাছাড়া একবছর আগেও একবার দেখেছিল এই ছেলেকে যখন ছেলেটা নিজেই জ্যোতির স্বামী হিসেবে পরিচয় দিয়েছিল। মেয়েটক হাসল কিঞ্চিৎ। বলল,

” জ্যোতির এক্সিডেন্ট হয়েছে কাল আর আপনি আসলেন আজ? ওয়াইফের অসুস্থতায় এত ব্যস্ততা দেখালে কি করে হবে ভাইয়া?হাতে সময় না থাকলে সময় করে নিতে হবে না? ”
মেহেরাজের ভ্রুজোড়া কুঁচকে গেল মুহুর্তেই। বলল,
“মানে? ”
মেয়েটা আবারও বলল,

” কি আশ্চর্য!আপনি জানেন না?আমি তো ভাবলাম আপনি এই কারণেই আসলেন দেখা করতে। ”
মেহেরাজ কিছুই বুঝল না। ভ্রু জোড়া আরো কুঁচকে নিয়ে শুধাল,
” জ্যোতি কোথায়? কি হয়েছে?”

মেয়েটা অবাক হলো। মেহেরাজ যে এই সম্বন্ধে কিছুই জানে না সে আসলেই ভাবেনি। তারপর পুরো ঘটনা খুলে বলল।মেহেরাজের মুখচোখ ততক্ষনে রাগে টানটান হলো।তবুও মেজাজ শান্ত রেখে বলল,
” বাসায় ডুকা যাবে? জ্যোতিকে নিয়ে যেতে চাইছি। ”
মেয়েটা মাথা নাড়িয়েই বলল,

” হ্যাঁ, অবশ্যই। জ্যোতি তো এমনিতেও হেঁটে এখানে আসতে পারবে না।”
মেহেরাজ আর অপেক্ষা করল না।সামনের মেয়েটার পিঁছু পিছু গিয়ে দাঁড়াল জ্যোতি যে রুমে থাকে সে রুমের সামনে। পাশাপাশি দুটো বেড রুমের ভেতর। টেবিলে বইয়ের স্তূপ। পাশাপাশি একটা চেয়ারে বসে আছে একটা মেয়ে আর তার পাশের বিছানাটায় চাদর মুড়িয়ে শুঁয়ে আছে জ্যোতি।কপালের দিকটায় ব্যান্ডেজ, ফোলা ঠোঁট আর ডান গালের ছিলে যাওয়া অংশটা মুহুর্তেই চোখে পড়ল মেহেরাজের।অপরদিকে জ্যোতি তখনও নিরস মুখে ফোনের দিকেই তাকিয়ে আছে। মনে মনে ভেবেছে মেহেরাজ কল কেঁটে দিয়ে ফিরে গেছে। সে ভাবনা মিথ্যে প্রমাণিত হলো যখন কানে আসল শীতল অথচ রাগী পুরুষালি গলা,

” নিজের খেয়াল নিজেই রাখতে পারবি, নিজের যত্ন নিজে করতে পারবি।যাদের খেয়াল রাখার কেউ থাকে না তাদের খেয়াল তারা নিজেরাই রাখে, যাদের যত্ন করার কেউ থাকে না তারা নিজেরাই নিজেদের যত্ন করে। এখন তোর সেসব বিখ্যাত বাণী কোথায় গেল?এই নমুনা নিজের খেয়াল নিজে রাখতে পারার?”
জ্যোতি অবাক হয়ে তাকাল। চোখের সামনে অপ্রত্যাশিত মুখটা ভেসে উঠতেই মুহুর্তেই শোয়া ছেড়ে লাফিয়ে বসল। ওড়নাটা ঠিকঠাক করে মাথায় টেনে চাইল ভালো করে। চোখের সামনে ভেসে উঠল মেহেরাজের লালাভ চোখ, শক্ত চোয়াল আর বুকে গুঁজা হাতজোড়া। বলল,

” আপনি?”
মেহেরাজ ভ্রু উঁচিয়েই বলল,
” হ্যাঁ, আমি।তো?”
জ্যোতি স্পষ্টভাবে বলল,
” কিছু নয়।”
মেহেরাজ তেঁতে উঠল।জোরে জোরে শ্বাস টেনে রাগ নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করে বলে উঠল,

” এই তোর সমস্যা? ”
জ্যোতি স্থির চাহনীতে তাকিয়ে উত্তর দিল,
” এটা একটা এক্সিডেন্ট ছিল মেহেরাজ ভাই। ”
“তুই তো নাকি নিজের খেয়াল নিজে রাখতে পারতি? ”
” আমার কোন দোষ ছিল না। ”

মেহেরাজ চুপ থাকল কিয়ৎক্ষন। তারপর দম ফেলে শক্ত গলায় বলল,
” মেহু অপেক্ষা করছে, জামাকাপড় কিছু গুঁছিয়ে নে। বাসায় ফিরছি। ”
” হ্ হু?”
দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

” বাসায় যাব।শুনিস না কানে? ”
” আমার পায়ের অবস্থা খারাপ মেহেরাজ ভাই।যেতে পারব না।”
মেহেরাজ শীতল চাহনীতে তাকাল। দৃঢ় গলায় বলল,
” সমস্যা নেই, তুই না যেতে পারলেও আমি নিয়ে যেতে পারব।”
” মিথ্যে বলছি না, সত্যিই পায়ের হাড় ভেঙ্গেছে। ”
মেহেরাজ বুক টানটান করে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে হাতজোড়া পকেটে গুঁজল। তারপর ডান ভ্রুটা উঁচু করেই দৃঢ় গলায় বলল,

এক মুঠো প্রণয় পর্ব ২৫

” হ্যাঁ জানি তো আমি।কোলে করে নিয়ে যাব।তোকে পা নাড়াতেও হবে না ”
আকস্মিক বলা কথাটা শুনে জ্যোতি অবাক হলো।কুঁচকে গেল ভ্রু জোড়া।চোখেমুখে খেলে গেল বিস্ময়। এমন একটা উত্তর সে মোটেও আশা করেনি। মোটেই ভাবেনি।স্থির চাহনীতে ভ্রু জোড়া কুঁচকে রেখে তাকিয়ে থাকল কেবল মেহেরাজের দিকে।

এক মুঠো প্রণয় পর্ব ২৭