এক মুঠো প্রণয় পর্ব ৩০

এক মুঠো প্রণয় পর্ব ৩০
লেখনীতে একান্তিকা নাথ

মেহেরাজ বাসায় ফিরল একেবারে রাত আটটায়। ঘর্মাক্ত মুখ, আর ক্লান্ত চাহনী। একনজর জ্যোতির দিকে তাকিয়েই ওয়াশরুমে পা বাড়াল। মুখে চোখে পানি দিয়ে ফের ফিরেও এল কিয়ৎক্ষনের মধ্যে। তোয়ালে দিয়ে মুখ মুঁছে জ্যোতির পাশে বসে হঠাৎ কপালে আসা ছোট ছোট চুল গুলো কানের পেছনে গুঁজে দিল। ঠান্ডা গলায় জিজ্ঞেস করল,
এখন কি অবস্থা পায়ের?ঠিকমতো ঔষুধ খেয়েছিস?”

জ্যোতি চোখ তুলে একবার মেহেরাজের দিকে চাইল। একই বিছানায় দিনরাত বসে থেকে কোমড় ব্যাথা করছে এখন।শরীর কেমন যেন ঝিমঝিম করছে।নিরস গলায় উত্তর দিল,
” খেয়েছি।”
মেহেরাজ সূক্ষ্ম চাহনি ফেলল। ঠোঁট বাকিয়ে হেসে বলে উঠল,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন হউন

” তোর ঠোঁটের ফোলা কমে এসেছে জ্যোতি। দেখলি আমার ঠোঁটের ছোঁয়া কতোটা কার্যকর!এবার থেকে আঘাত পেলেই বলবি। সব আঘাত ঠোঁটের ছোঁয়ায় সেরে যাবে।”
আকস্মিক কথাটায় জ্যোতি অস্বস্তিতে পড়ল। অপ্রস্তুত হয়ে গলা ঝাড়ল কিঞ্চিৎ।নড়েচড়ে বসে বার কয়েক ঢোকও গিলল। তারপর ঝিমঝিম করা মাথা আর কোমড় ব্যাথা নিয়ে প্রসঙ্গ বদলাতে বলে উঠল,

” আমার এইখানে এই বাসায় পড়ে থাকতে ভালো লাগছে না মেহেরাজ ভাই।”
মেহেরাজ ভ্রু উঁচু করল।বলল,
” বাসাটা তো তুই পছন্দ করেছিলি।এখন আর ভাল্লাগছে না?”

এই বাসাটা যে সে আর মেহেরাজ মিলে যে বাসাটা দেখে গিয়েছিল সে বাসাটাই তা জ্যোতি জানে। মেহু এই নিয়ে অনেক কিছু বলেছেও। মেহেরাজ নাকি তার সাথে সংসার করার জন্য এতদূর বাসা নিয়েছে, এতদূরে ছুটে এসেছে। আসলেই কি সত্য এই কথাগুলো? সত্য হলেও সংসার করাও কি মেহেরাজের কাছে কেবলই দায়িত্ব?আজকে সকালের আকস্মিক উদ্ভট কাজগুলোও কি কেবলই দায়িত্ব?

মন বলছে এসব শুধুই দায়িত্ব নয়। তবুও দায়িত্বের উর্ধ্বে গিয়েও কিছু ভাবতে সংশয় হলো।আসলেই কি এতগুলো দিনে সত্যিই কিছু একটা তৈরি হয়েছে তাদের মাঝে?সত্যিই মেহেরাজের মনে এটুকু হলেও জায়গা হয়েছে তার?শুকনো ঢোক গিলল জ্যোতি। মৃদু আওয়াজ তুলে বলে উঠল,
” এভাবে সারাক্ষন শুয়ে বসে থাকাটা কেমন জানি। আপনাদের ঝামেলায় ফেলে দিলাম শুধু শুধু ।”
মেহেরাজের মুখের উৎফুল্ল ভাব হঠাৎ উধাও হলো।গম্ভীর স্বরে বলে উঠল,

” কি বলতে চাইছিস খুলে বল।”
জ্যোতি ইতস্থত করে মৃদু আওয়াজে বলে উঠল,
” আমার পা ঠিক হতে বোধহয় বহু সময়। এতকাল এভাবে আপনার সাথে একঘরে থাকাটা অস্বস্তির নয়?তার উপর মেহু আপু আর আপনাকেও তো ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে।”
মেহেরাজ বুকে হাত গুঁজে টানটান গলায় ভ্রু উঁচিয়ে শুধাল,

” তো?তুই কি চাইছিস? ”
প্রশ্নটায় রাগ ছিল। বিনিময়ে জ্যোতি উত্তর দিল না।কিয়ৎক্ষন চুপ থেকে স্পষ্টস্বরে বলল,
” মেহেরাজ ভাই? কিছু কথার উত্তর দিবেন আমায়? ”
মেহেরাজ আগের ন্যায় টানটান স্বরে উত্তর দিল,

” বলে ফেল।”
জ্যোতি বলতে লাগল,
” নিজ শহর ছেড়ে এতদূর কেন আসলেন? নিজের বাসা থাকতে এতদূর এসে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছেন কেন? আর সেদিন আমায় মিথ্যেই বা বললেন কেন?আপনি তো বলেছিলেন আপনার কোন এক বন্ধুর জন্য বাসা খুঁজছেন। তাই না?”

মেহেরাজের মুখের রাগ রাগ ভাব বোধ হয় কমে এল। তবুও গম্ভীর ভাব কমল না। শীতল গলায় বলল,
” প্রশ্ন গুলোর উত্তর তোর কাছেও থাকার কথা।তুই তো এত বোকা নোস যে উত্তরগুলো অজানা থাকবে।ভেবে দেখ, পেয়ে যাবি উত্তর।”
জ্যোতি ফের স্পষ্টস্বরে বলে উঠল,

” আমি আপনার থেকে জানতে চাইছি।”
” কি?”
” এই শহরে আসার সিদ্ধান্ত কেন নিলেন?”
মেহেরাজ চুপ থাকল কিয়ৎক্ষন। তারপর ঠোঁট গোল করে শ্বাস ফেলে উঠে দাঁড়াল। বলল,
” শহরটা সুন্দর তাই । শহরের মানুষগুলোও সুন্দর।তবে সবথেকে সুন্দর হলো হৃদয় নিংড়ানো অনুভূতি।হৃদয়ের টানে চলে এসেছি।”

শেষের কথাটা শুনেই জ্যোতির বুকের ভেতর কেমন একটা অনুভব হলো। হৃদয়ের টানে? কার হৃদয়ের টানে?তবে কি মেহুর বলা কথা গুলো সত্যিই?এটুকু হলেও কি জ্যোতির জন্য কোন অনুভূতি তৈরি হয়েছে মেহেরাজের হৃদয়ে? জ্যোতি আর ভাবতে পারল না। অস্ফুট স্বরে বলল,
” হ্ হু?”
শীতল গলায় উত্তর এল,
” উত্তর বলেছি।আর কিছু?”

জ্যোতি ফের কিছু বলার সাহস পেল না৷ বুকের ভেতর কেমন জানি করছে তার। সত্যিই কি তাকে ঘিরে কোন অনুভূতি তৈরি হয়েছে মেহেরাজের হৃদয়ে?সত্যিই?এসব ভেবেই ইতস্থত বোধ করে নরম গলায় বলতে লাগল,
” মেহেরাজ ভাই?আরেকটা প্রশ্ন আছে।আপনার মনে কি আম্…”
বাকিটুকু বলা হলো না।তার আগেই মোবাইলের আওয়াজ শুনে চোখ ফিরিয়ে মোবাইলের দিকে চাইল৷ বাড়ি থেকে জ্যোতির বাবা কল করেছে।জ্যোতি বার কয়েক শুকনো ঢোক গিলে মোবাইল হাতে নিল। কল তুলে মৃদু আওয়াজে বলে উঠল,

” আসসালামু আলাইকুম আব্বা, কেমন আছেন?”
ওপাশ থেকে তার বাবার গম্ভীর স্বর ভেসে আসল,
“মেয়ে হয়ে সংসার ছেড়ে অতোদূরে পড়তে গেছিস, কিছু বলি নাই। কিন্তু তাই বলে এক্সিডেন্ট হয়েছে এইটা জানানোর প্রয়োজন মনে করিস না জ্যোতি?”
জ্যোতি অবাক হলো। সে তো জানায়নি। জিজ্ঞেস করল,

” আব্বা, আপনি কি করে জানলেন?”
তার বাবার তীক্ষ্ণ কন্ঠ ভেসে আসল মুহুর্তেই,
” মানছি আমার আর তোর সম্পর্কটা স্বাভাবিক বাবা মেয়ের সম্পর্ক ছিল না, নেইও। তবুও আমি কল করে খোঁজ নিই তো দুইতিনদিন পর পর।আমাকে জানালি না কেন? ”

” এমনিতেই। মনে হয়েছিল জানালেও যদি আপনার সময় হয়ে না উঠে , তাই বলা হয়নি আব্বা।”
” এবার আর আলাদা থাকতে যাবি না।বিয়ে হয়েছে তোর, সংসার আছে। রাজ যেহেতু ওখানেই থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এবার তোদের একসাথে থাকা উচিত জ্যোতি।অতোদূর একটা মেয়ে একা থাকা অতোটাও নিশ্চিন্ত হওয়ার মতো বিষয় নয়।”

জ্যোতড তাচ্ছিল্য নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
” মেয়ে বলে তুচ্ছ ভাবলেন আব্বা?”
ওপাশ থেকে শক্তপোক্ত জবাব এল,
” যাই ভাবি, যেটা বললাম সেটা মাথায় রাখবি।”
” মেহেরাজ ভাইদের বাসায় এভাবে পড়ে থাকাটা বিচ্ছিরি বোধ হবে আব্বা।”
” বেশি বুঝিস। তোকে তো অতো বুঝতে হচ্ছে না।”

” এই কথাটা বলেই বিয়ে দিয়েছিলেন। তখন নাহয় আপনার মতে আমার বুঝার বয়স ছিল না। এখনও কি নেই বুঝার বয়স?”
” না, নেই। ”

থমথমে কন্ঠে কথাটুকু বলেই কল কাঁটল জ্যোতির বাবা।জ্যোতি চোখ বুঝে তপ্তশ্বাস ফেলল।তার আব্বা এখনও আগের মতোই আছেন ভেবে বুকের ভেতর কষ্ট হলো। মেয়ের এক্সিডেন্ট হয়েছে অথচ একবারও জিজ্ঞেস করলেন না, সে কেমন আছে। এখন কি অবস্থা শরীরের। অথচ রাগ ঝেড়ে কয়েকটা আদেশ ঠিকই করতে পেরেছেন।একরাশ অভিযোগ নিয়ে মনে মনে কষ্ট পুষে কথা গুলো ভাবতেই চোখে পড়ল মেহেরাজকে। পরনে টাউজার আর ছাঁইরাঙ্গা শার্ট।শার্টের বোতামগুলো খোলাই রাখা।হাত দিয়ে একে একে বোতাম গুলো লাগাতে লাগাতেই এগিয়ে এল জ্যোতির সামনে। বুকের কাছে দুই তিনটে বোতাম খোলা রেখেই নজর ফেলল জ্যোতির দিকে। ধারালো চাহনী নিয়ে টানটান গলায় বলল,

” কি যেন বলছিলি চাচাকে? ”
জ্যোতি বুঝতে পারল না। ভ্রু বাঁকিয়ে শুধাল,
” কি?”
মেহেরাজ তপ্তশ্বাস ফেলল। চোখজোড়ায় রাগমিশ্রিত চাহনী নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠল,

” এই বাসায় থাকাটা বিচ্ছিরি বোধ হবে?”
জ্যোতি বুঝতে পারল এবার।বলতে লাগল,
” আসলে,… ”
পুরো বাক্যটা সম্পূর্ণ করার আগেই মেহেরাজ রাগ ঝেড়ে বলে উঠল,
” ঠিকাছে, থাকতে হবে না তোকে।চলে যা।”
জ্যোতি তাকাল।কিয়ৎক্ষন চুপ থেকে বলল,

” পা টা সুস্থ হলেই চলে যাব মেহেরাজ ভাই। এখন তো হেঁটে যেতে পারব না। ”
মেহেরাজের রাগ এবার তরতর করে বাড়ল। চোয়াল শক্ত করে, মুখ টানটান করে দাঁতে দাঁত চেপে শুধাল,
” আবার বল।”
জ্যোতি স্বাভাবিক গলায় বলল,
” পা সুস্থ হলেই চলে যাব।”
মেহেরাজের রাগটা বোধহয় আরো বাড়ল। সে রাগের বহিঃ প্রকাশ ঘটাতেই অত্যন্ত শীতল গলায় রাগ নিয়ে বলে উঠল,

” তোর পা পুরোপুরি সুস্থ হওয়া তো দূর, সুস্থ হওয়ার আগেই আবার পা ভেঙ্গে দিব। সবসময় এভাবে ভাঙ্গা পা নিয়ে পড়ে থাকবি এখানে। এবার বল, বাসাটা বিচ্ছিরি লাগবে নাকি লাগবে না?”
আকস্মিক হুমকিতে অবাক হলো জ্যোতি।অস্ফুট স্বরে বলল,
” হ্ হু?”
মেহেরাজ ফের বলল,

” শুনসিনি?এই বাসায় থেকে যাওয়ার কথা বললে হাত পা ভেঙ্গে এভাবেই রেখ দিব সবসময়।তাই দ্বিতীয়বার কথাটা বলার আগে ভেবে বলিস। ”
কথাগুলো বলেই পা বাড়িয়ে বেলকনিতে চলে গেল মেহেরাজ। জ্যোতি কেবল ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকল। এতোটা রাগ?এতোটা রাগ কি কেবলই তার চলে যাওয়ার প্রসঙ্গে?

জ্যোতি বিছানায় আলতো ভাবে শরীর এলিয়েই চোখ বুঝে নিয়েছিল। দুই রাত ঘুম না হওয়ার কারণেই শরীর ভেঙ্গে আসছে।ঘুম না আসলেও ক্লান্ত শরীরে চোখ মেলতে ইচ্ছে হলো না তার। কিয়ৎক্ষন পর আকস্মিক নিজের পাশে চেনা পুরুষের অস্তিত্ব টের পেয়ে নড়ে চড়ে উঠল জ্যোতি৷ চোখজোড়া মেলে ধরতেই দেখতে পেল নিজের দিকেই তাকিয়ে থাকা মেহেরাজকে।মেহেরাজের দৃষ্টির নড়চড় হলো না। বরং ভ্রু নাচিয়ে বলল,

” না ঘুমিয়ে জেগে থাকবি নাকি?”
” ক্লান্ত লাগছে, ঘুমও পাচ্ছে। কিন্তু চোখে ঘুম মিলছে না। ”
মেহেরাজ মাথা উঁচু করল। আকস্মিক জ্যোতির ঘন কালো চুলে হাত ডুবিয়ে বুলিয়ে দিতে লাগল। আদেশের সুরে বলে উঠল,
” চোখ বুঝ।”

জ্যোতি প্রথম দফায় স্তব্ধ হয়ে মেহেরাজের মুখপানে তাকিয়ে থাকলেও পরমুহুর্তেই চোখ বুঝে নিল। মুহুর্তেই মেহেরাজ অদ্ভুত এক কাজ করে বসল। জ্যোতির কপালে নিজের পুরো ঠোঁটের উষ্ণ ছোঁয়া দিয়েই গভীর চুমু দিল। পরমুহুর্তেই নিজের মুখচোখ এতটাই স্বাভাবিক করে নিল যেন কিছুই করেনি সে।অপরদিকে জ্যোতি যেন থমকে রইল। চোখ বোঝা মাত্রই আকস্মিক এমন শীতল ছোঁয়ার অস্তিত্ব টের পেয়েই চোখজোড়া বড় বড় করে চাইল। স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকল মেহেরাজের পানে।মেহেরাজ সেই চাহনী আমলে নিল না।স্বাভাবিক ভাবেই শীতল গলায় বলল,

” এবার ঘুম আসবে। ঘুমা। ”
জ্যোতি কি প্রতিক্রিয়া দিবে বুঝল না। আকস্মিক এমন একটা কাজ করে কেউ এতটা স্বাভাবিক থাকতে পারে? কেউ এতোটা নির্লিপ্ত হওয়ার ভান করতে পারে? জ্যোতির জানা নেই। মেহেরাজ ফের বলল,
” ওভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?কিছু করেছি তোকে?”
জ্যোতি বলতে পারল না মেহেরাজ কি করেছে। বলতে পারল না কি এক ভয়ানক আভা ছড়িয়ে দিল তার মাঝে। কি এক শীতল ছোঁয়ায় স্তব্ধ হয়ে রইল তার ভেতর বাহির।

মেহুর চোখে পানি।চোখের পানির মূল কারণ নাবিলার সাথে সাঈদের ঘন্টার পর ঘন্টা আলাপ।এখন প্রায় রাত বারোটা।প্রায় দুই ঘন্টা যাবৎই বেলকনিতে দাঁড়িয়ে সে কথা বলছে সাঈদের সাথে।মাঝেমাঝেই আবার খিলখিলিয়ে হেসে উঠছে। মেহুর যন্ত্রনা হলো৷ বুকের ভেতর জ্বলন্ত দুঃখ তরতাজা হয়ে উঠল। একপাশ হয়ে বালিশে মুখ গুঁজে রাখলেও সচেতন কান তাকে ঘুমোতে দিল না।

বার বার কানে আসল নাবিলার কথাগুলো।এতোটাই প্রেমবোধক কথা কেন হবে তাদের মাঝে? কি দরকার সাঈদের এতরাতে এতোটা প্রেম প্রেম ভাবে নাবিলার সাথে কথা বলার?মেহু আর শুঁয়ে থাকতে পারল না।অবশেষে উঠে দাঁড়িয়ে একবার বেলকনিতে উঁকি দিল। নাবিলাকে গলা উঁচিয়ে বলল,
” ঘুমাবি না?এভাবে হাসাহাসি করছিস কেন?আমার ঘুম আসছে না তোর এসব কথাবার্তার জন্য।”

কথাটা বলেই আবার পিঁছু ঘুরল। নিজের ঘরের জানালার পাশে হাঁটু গুঁজে বসে জানালাটা মেলে দিল। পাশাপাশি আরো একটা বিল্ডিং। দূরত্ব কয়েক হাত এর। মুখোমুখি অপর বিল্ডিংটার আরো একটা জানালা।জানালাটা এই পর্যন্ত সে কোনদিন খোলা দেখেনি। তবে আজ জানালাটার থাইগ্লাস একপ্রান্তে সরিয়ে রাখা।অপর প্রান্ত খোলা। স্পষ্ট চোখে পড়ল ঘরের আলো। ওপাশ থেকে কেউ একজন গিটারে সুর তুলে গান গাইছে,

” তুমি সুখ যদি নাহি পাও,
যাও সুখেরও সন্ধানে যাও,
আমি তোমারে পেয়েছি হৃদয়ো মাঝে,
আরও কিছু নাহি চাই গো ।
আমি তোমারও বিরহে রহিব বিলীন,
তোমাতে করিবো বাস,
দীর্ঘ দিবস, দীর্ঘ রজনী
দীর্ঘ বরষ্ মাস ।
যদি আরও কারে ভালোবাসো,
যদি আরও ফিরে নাহি আসো,
তবে তুমি যাহা চাও,
তাই যেন পাও,
আমি যত দুঃখ পাই গো ।…………”

এক মুঠো প্রণয় পর্ব ২৯

মেহু গানটা এর আগেও বহুবার শুনেছে।কিন্তু পুরুষালি গলায় এই প্রথম শুনল। পুরুষালি গলায়ও গানটা এতোটা সুন্দর শোনায় তা এই মুহুর্তেই বোধ হলো।মেহুর কাছে গলাটা পরিচিত ঠেকল।যেন বহুকাল আগে সে কোথাও এই গলা শুনেছিল। বহুকাল আগে যেন কোন পুরুষ তীব্র আকুতি নিয়ে এই গলায় ছুড়েছিল আবেদন।মেহুর উৎসাহ বাড়ল। উৎসুক হয়ে সমস্ত গানটাই নিশ্চুপে শ্রবণ করল মেহু। অচেনা পুরুষ, অচেনা যুবকের গানটি তার কাছে মনোমুগ্ধকর বোধ হলো মুহুর্তেই।দুয়েক নজর তাকিয়ে চেষ্টাও চালাল অচেনা পুরুষটিকে দেখার জন্য। কিন্তু আপসোস! দেখা হলো না।

এক মুঠো প্রণয় পর্ব ৩১