এলোকেশী কন্যা পর্ব ৩৪+৩৫+৩৬

এলোকেশী কন্যা পর্ব ৩৪+৩৫+৩৬
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

“ছালা, তর ত্যাজ’ই আইজ বাইল কলুম।”
কথাটা বলে একজন মাঝবয়সী মহিলা মতিকে পটাপট থাপ্পড় দিতে থাকলেন। থামার নাম গন্ধ নেই, ঠাস্ ঠাস্ শব্দে অনবরত এই কাজ চলমান রাখলেন। পুরুষালি হাতের মতো উনার শক্ত হাত। আর সেই হাতের অনবরত থাপ্পড়ে মতির গাল, কান, আর মাথা অবশ যেন অসাড় হয়ে যাচ্ছে। ঠোঁট কেটে রক্ত ঝরে মাথা ভনভন করে ঘুরছে। কী আশ্চর্য! মহিলাদের হাতের থাপ্পড়ও এত ব্যথাতুর হয়, মতির তো জানা ছিল না। জানবে কীভাবে? সে এতদিন ইচ্ছেমতো শাষণ চালিয়ে এসেছে, মারের আঘাত তো কখনো সহ্য করে নি। যদি শাষণের ছিঁটেফোঁটাও ওর কপালে জুটত তাহলে অমানুষ নয়; বরং মানুষ’ই হতো! নিষ্ঠুরের মতো কাজ করার আগে বিবেকে নাড়া দিতো। মাটিতে শুয়ে হাত বাঁধা অবস্থা সে থাপ্পড় হজম করেছে। ওই মহিলা ওর বুকের উপর চেপে বসে এতক্ষণ মারের কাজে মগ্নে ছিলেন। ক্লান্ত হয়ে স্বজোরে দুই হাতে দু’টো থাপ্পড় লাগিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। বেচারা হাঁপিয়ে গেছে এই মহৎ কাজ করতে বসে। মতির গলাকাঁটা মুরগির মতো খুব ছটফট করে অবশেষে জ্ঞান হারালো। কয়েকজন মেয়ে ওর অবস্থা দেখে খিলখিল শব্দে হেসে একে অপরের গায়ে লুটে পড়ল।ব্যাপারটা ওদের কাছে বিনোদনস্বরুপ! আর মতি ঠোঁটের কোণের রক্ত আর চোখের কোণের অশ্রু গড়িয়ে মাটিতে মিশে গেল। কেউ দেখেও যেন দেখল না। পার্থিব সত্য
, ‘ব্যথার মর্ম তখন’ই বোঝা যায়। যখন নিজের বুকে ব্যথার তীর’টা সরাসরি এসে বিঁধে।’
মতি হয়তো আজ উপলব্ধি করছে যে, ‘শরীরে আঘাত পড়লে কেমনে লাগে!’

ওদিকে মাতবরকে দেখতে গ্রামবাসীরা উপস্থিত হয়েছেন। ইস! মাতবরের কষ্ট চোখে দেখা যাচ্ছে না। মাতবরের বিছানায় শুলে শরীর জ্বলছে তাই মাটিতে শুয়ে ছটফট করছেন। মাংস পঁচার বিশ্রী গন্ধে নাকে চেপেও কেউ বেশিক্ষণ দাঁড়ালেন না। উনাদের গা গুলিয়ে বমি হওয়ার উপক্রম। কে বা স্ব-ইচ্ছায় বমি করতে চায়? তাই যে যার কাজের বাহানা আর সান্ত্বণার বাণী ছুঁড়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করল। মাতবরের সহধর্মিণীরা রান্নাঘরের কাজে ব্যস্ত। তাদের মুখে না আছে কষ্টের ছাপ আর না আফসোসের! রোজকার জীবন্ত লাশের ন্যায় যে যার কাজ করে যাচ্ছেন। রবি উঠানের এককোণে বসে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকিয়ে আছে। কিছুদিন আগে, মাতবর তােকে মেরে ঠোঁট কেটে দিয়েছিলেন। তার অপরাধ ছিল; খেলার ছলে
মাতবরের শখের আরশি’টা ভেঙ্গে ফেলেছিল।
আর সেদিনের মার খেয়ে রবি মাতবরকে প্রচুর ভয় পায়। এজন্য সর্বদা দূরে দূরে থাকে। মাতবর আজ সকাল থেকে কিছু খায়নি দেখে উনার এক সহধর্মিণী খাবার নিয়ে বললেন,
”খাওন খান, ওছুদ আচে।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

একথা শুনে মাতবর হাতের কাছে থাকা স্টিলের গ্লাস’টা ছুঁড়ে মারলেন। অসহনীয় ব্যথায় ছটফট করছেন আর উনি এসেছেন খাবার গিলাতে। এত ব্যথা আর কষ্ট নিয়ে খাবার কী গিলা যায়? এইটুকুন বোধ বুদ্ধিও নাই এদের মাথায়।গ্লাসটা ছিঁটকে গিয়ে লেগেছে সহধর্মিণীর নাকে। সাথে সাথে নাক থেকে রক্ত বেরিয়ে ঠোঁট বেয়ে গড়িয়ে গেল। প্রচন্ড ব্যথাতেও উনি টু শব্দ করলেন না। করে কিছু হবে কী? তাছাড়া এই অবধি এত মার খেয়েছেন যে, শরীরে সব সয়ে গেছে। এখন আর কিছু মনেও করেন না। কারণ এই অমানুষটা যে ভালো হওয়ার নন; উনি শুধু দেখতেই মানুষ। উনাকে নাক ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মাতবর রেগে গালি দিতে লাগলেন। গালিগুলো এতটাই বিশ্রী মুখে উচ্চারণ করা দায়। হাকিমকে আসতে দেখে মহিলা চক্ষু-লজ্জায় সরে গেলেন। নয়তো উনার সামনে মাতবরের এই বিশ্রীগালি চলতেই থাকত। হাকিম এসে গাছালি ওষুধ দিয়ে ক্ষত পরিষ্কার করতে লাগলেন। আর মাতবর তখন গলা ফাটিয়ে আতনার্দ করতে লাগল। ওহ মা, ওহ আব্বা গো, আল্লাহ! আল্লাহ গো রহম করো।

এসব বলে উনি প্রাণপণে কেঁদে আকুঁতি মিনুতি করতে লাগলেন। এত কষ্ট সহ্য করা যাচ্ছে না। মাতবর কাঁদছেন আর নাক কুঁচকাচ্ছেন, নিজের শরীরের গন্ধ’ই উনার সহ্য হচ্ছে না। এজন্য দুই বার বমিও করলেন। হাকিম উনার ক্ষতস্থানে কাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে পোকা পরিষ্কার করছেন।রক্ত, পুঁজ, পঁচা মাংসে সাদা পোকা কিলবিল করছে।
দেখতে ঠিক; বেশি পাঁকা পেয়ারার সাদা পোকার মতো। মাতবর কষ্ট সহ্য করতে না পেরে বার বার বলতে লাগলেন,
“আল্লাহ! আল্লাহ গো আমালে টুইল্লা লেও লে। আল ছহ্য হচ্ছে না। আমি আল পালছি না ,মা ওমা মা লে।”
হাকিম সময় নিয়ে চিকিৎসা করে বিদায় নিলো। আর মাতবর কাটা মুরগির মতো মাটিতে শুয়েই
আহাজারি করতে লাগলেন। এত কষ্ট-যন্ত্রণায়
উনার দম’টা যেন আঁটকে আসছে। চোখ দিয়ে ঝরঝর করে অশ্রু ঝরছে। শরীরের ব্যথায় নড়া যাচ্ছে না, নড়লে মনে হচ্ছে, শরীর সূচ ফুটছে।
কষ্টে কাতর হয়ে উনি নিজে থেকে’ই মৃত্যু কামনা করতে লাগলেন। মরার কথা শতবার বিরবির করে আওড়াতে লাগলেন। মৃত্যু ছাড়া গতি নেই উনিও বুঝে গেছেন।

এখন বাজে রাত বারো’টা তিন। সারাদিনের ব্যস্ততা পার করে রোদ কেবল বাসায় ফিরল।গত সপ্তাহে সে দু’টো বিরাট অঙ্কের ডিল পেয়েছে।এ ডিলটা ওর জন্য অপ্রত্যাশিত’ই ছিল; মূখ কথা আল্লাহ ওর সহায় ছিল বিধায় সুযোগটা সে হাতে এসেছে। এজন্য রোদ তাৎক্ষণিক আল্লাহর প্রতি শুকরিয়া আদায় করতে ভুলে নি। এই ডিলটাতে সফল হলে কয়েক কোটি টাকা লাভ’ও আসবে।
এজন্য সে প্রোড্রাক্ট রেডি করতে ব্যস্ত সময় পার করছে। ওর জ্বরটা এখন নেই; তবে শরীরটা বেশ ম্যাজম্যাজ করছে। রোদ রুমে প্রবেশ করে দেখে আলো আর মেঘ ঘুমিয়ে গেছে। ওদের ঘুমানোর ভঙ্গি হেসে রোদ মুচকি হাসল।আলোর একহাত মেঘের বুকের উপর আর অন্য হাত ওর কপালের উপর। আর ছোট সাহেবের এক’পা আলোর পেটের উপর অন্য পা কোলবালিশের নিচে।ডান হাতে আলোর ওড়নার কোণা মুঠ করা, তার বাম হাতে আলোর চুলের লম্বা বেনুনি পেঁচিয়ে রাখা।
যেন সে ঘুমালে বউমনি ওকে রেখে কোথাও না যায়। মেঘের কৌশল দেখে রোদ হেসে ফ্রেশ হয়ে
নিচে গেল। মাথা ব্যথা করছে, কফি খেলে মন্দ হয় না। রোদ নিজে কফি বানিয়ে মেঘদের দেখে ছাদে গেল। আজকের আকাশটা খুব গম্ভীর হয়ে আছে। চাঁদ, তারা, কারোর’ই দেখা নেই। ছাদের এককোণে অনেকগুলো নতুন গাছ দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, আজকেই যত্ন করে গাছানো হয়।ওই দু’জনের কাজ হয়তো। এ্যালোভেরা, জবা, ঘাস,
তুলসী, মেথি, মেহেদীসহ আরো অনেক গাছ।

এসব করে সময় অতিবাহিত হয় দু’জনের। আর
বাগানের একপাশে হরেক রকমের সবজির বাগানও করেছে। শসার গাছে দু’টো ফুল ফুটেছে দেখে দু’জনে সে কী খুশি। রোদকে যে কতবার জানিয়েছে তার অন্ত নেই। আলো যখন যা বলে তার সহকারী মেঘ সেটা করতে উঠে পড়ে লাগে। আর সাগর ওদের সেসব জিনিসের ব্যবস্থা দেয়। আলো আসার পর বাড়িতে যেন আনন্দ ফিরে এসেছে।হাসি, খুশি, আর খুনশুটিতে আজকাল সুখ সুখ ভাব অনুভব হয়। এসব ভেবে কফির মগে ঠোঁট ছোঁয়াতে রোদের চোখ পড়ল দোলনার দিকে। সেখানে গিয়ে আলোর চুলের কাঁটা দেখে রোদ মুচকি হাসল। হয়তো ছাদে এসে ভুলে রেখে গেছে।এই মেয়েটা বড্ড মনভোলা স্বভাবের।রোদ দোলনায় বসে কাঁটা’টার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে প্রায় এগারোদিন আগের কথা স্মরণ করল।
এগারোদিন আগে,

সেদিন সকালে রোদ মেঘকে আলোর হাতে খেতে দিচ্ছিল না। আর মেঘ আলোর হাতে খাওয়ার জেদ করছিল। আলোও জোর করে মেঘকে ধরে খাওয়াতে যাচ্ছিল। একপর্যায়ে দু’জনের ঝগড়া লেগে যায়। ওদের ঝগড়া দেখে মেঘ শব্দ করে কেঁদে দেয়। আলো উঠে থামাতে গেলে রোদ ওকে মেঘের কাছে ঘেষতে দেয় না। মেঘকে দূরে সরিয়ে দেয় এবং বকাবকির করে আলোর কাছে যেতে নিষেধ করে। একথা শুনে মেঘ ভয়ে আরো জোরে কাঁদতে থাকে। আর এক হাত বাড়িয়ে সে আলোকে ধরতে বলে। এক মিনিটেই কান্না করে মেঘের চোখ মুখের বেহাল দশা। তবুও রোদ ওকে আলোর কাছে যেতে দিচ্ছিল না। সকালবেলা রোদের এই কাজে আলো প্রচন্ড রেগে যায়।এটা কেমন ব্যবহার? মেঘকে অযথা কাঁদানোর মানে কী? আলো প্রচন্ড রেগে মেঘকে নিতে গেলে রোদ বলে,

“দূরে থাকো।”
“কেন?”
“তোমার অজানা নয়।”
“এটা ঠিক হচ্ছে? বাচ্চাটা কাঁদছে, কষ্ট পাচ্ছে।”
“আমি বুঝে নিবো।”
মেঘ ছুটে আলোর কাছে যেতে গেলে রোদ জোর করে কোলে তুলে নিলো। মেঘ কেঁদে হাত বাড়িয়ে ব্যাকুল হয়ে আলোকে ডাকছে। আলো বার বার রোদকে ধরা গলায় থামতে বলছে।মেঘের কান্না দেখে আলোর অঝরে অশ্রু ঝরছে। মনে হচ্ছে,
রোদ ওর বাচ্চাকে কেড়ে নিচ্ছে। সে হাত জোড় করে কেঁদে মেঘকে ছাড়তে বলছে। রোদ ওর কথা সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে মেঘকে নিয়ে উপরে চলে গেল। মেঘকে নামার জন্য ছটফট করলে রোদ ধমকে উঠে বলল,
” কান্নার শব্দ আমার কানে আসলে, তোর খবর আছে।”
মেঘ ফুঁপাতে ফুঁপাতে আলোর দিকে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে বলল, “ব ব বউমনি বাঁচাও!”
আলো ছলছল চোখে মেঘের দিকে তাকিয়ে অশ্রু ফেলছে। মেঘকে এভাবে ফুঁপাতে দেখে রোদ বলল,
“তোমার বউমনি না সে। তোমাকে আমি ভালো বউমনি এনে দিবে। তুমি ওকে ভালোবাসলেও, সে তোমাকে একটুও ভালোবাসে না। আজকের পর, ওকে বউমনি ডাকলে আমি আর বাসায় ফিরবো না। ”
কথাটা বলে রোদ গমগম করে মেঘকে নিয়ে রুমে ঢুকে গেল। আলো ওখানে বসে নিঃশব্দে কাঁদতে থাকল। রুম থেকে’ই মেঘের কান্নার শব্দ ভেসে আসছে। সে কেঁদে কেঁদে আলোর কাছে আসতে চাচ্ছে। কিছুক্ষণ পর আর শব্দ শোনা গেল না, মেঘ কাঁদতে কাঁদতে ওভাবে ঘুমিয়ে গেছে। রোদ
রেডি হয়ে অফিসের চলে গেল। আলোকে চুপ করে বসে থাকতে দেখেও কিছু বলল না।এমন ভাব যেন সে কিছু করেই নি। রোদ বেরিয়ে গেলে আলো দৌড়ে রোদের রুমের দিকে গেল। গিয়ে হতাশ হয়ে দরজার সামনে গিয়ে বসে কাঁদতে লাগল। রোদ দরজায় তালা আঁটকে গেছে যাতে আলো মেঘের কাছে যেতে না পারে। আলো চুপ করে ওখানেই ঘন্টার পর ঘন্টা বসে রইল।মেঘ ঘুমাচ্ছে বিধায় সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছে না।তিন ঘন্টা পর রোদ বাসায় ফিরে আলোকে দেখে ভ্রু কুঁচকে নিলো। আলো রোদের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে লালবর্ণ ফোলা চোখে তাকিয়ে বলল,

“ব্যবস্থা করুন।”
”কিসের?”
আলো বার দু’য়েক ঢোক গিলে নত মাথায় উত্তর দিলো,
“মেঘের বউমনি হওয়ার। আজকে মানে আজ’ই ব্যবস্থা করুন।”
আলোর কথা শুনে রোদ শব্দ করে হেসে দিলো। হাসির চোটে সে কথা বলতে পারছে না। ওর এই হাসির মানে বুঝে আলোর অপমানে চোখ থেকে নোনাজল ঝরতে লাগল। এই লোকটা সব সময় ওকে অপমান করে। আলোকে হাতের উল্টো পিঠ চোখ মুছতে দেখে, রোদ পকেটে হাত গুঁজে বলল,
“এখন আবেগে ডুবে সিদ্ধান্ত নিয়ে বিয়ের পর বলবে, ‘এই স্পর্শ করবেন না, কাছে আসবেনা, ফ্লোরে ঘুমান, মেঘের জন্য বিয়ে করেছি তাছাড়া কিছু না, আরো নানা রংয়ের ব্লা ব্লা! কিন্তু আমি
এসব ঝামেলায় আমার জীবন নষ্ট করতে ইচ্ছুক নই। যেটা হচ্ছে হতে দাও, এখন রুমে যাও।”
আলো ছলছল চোখে তাকিয়ে শব্দ করেই কেঁদে দিলো। লোকটা এমন কেন? এর কী মন বলে কিছু নেই? রোদ নিচের ঠোঁট কামড়ে দাঁড়িয়ে ওর কান্না দেখছে, না থামতে বলছে আর না প্রস্থান করছে। আলো হেঁচকি তুলে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
”এখন কী করতে হবে? কী করলে আপনি বিয়ে করবেন?”
রোদ ঠোঁট কামড়ে কিছু একটা ভাবার ভাণ করে
বলল,

“তুমি আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছো? মানে তুমি স্বজ্ঞানে আমাকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক?”
” হুম।”
” ভেবে বলছো?”
“হুম”
”সত্যি আমাকে বিয়ে করবা। আই মিন আমার বউ হবা?
“হুম।”
“বিয়ের পর আফসোস করবে না?
” উহুম।”
“আমি রাজি না হলে জোর করে বিয়ে করবা?”
” হুম।”
কথাটা বলে আলো চোখ বড় বড় করে রোদের দিকে তাকাল। ইস! স্লিপ করে কথাটা বের হয়ে গেছে।রোদের এই মুহূর্তে ব্যাপক হাসি পাচ্ছে।সে
অনেক কষ্ট হাসি আটকে ঠোঁট কামড়ে দাঁড়িয়ে আছে। অবশেষে পাখি নিজে এসে ধরা দিলো। আহা! প্রশান্তিতে যেন বুকটা ভরে যাচ্ছে। রোদ আলোর দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমার পাঁচটা শর্ত মানলে তোমার প্রস্তাব মেনে নিবো, নয়তো আমি আর মেঘ আলাদা বাসায় উঠব।”
“মানবো সব শর্ত মানবো। আপনি যা বলবেন সব শর্ত মেনে নিবো।
রোদ বিজ্ঞদের মতো কয়েকবার মাথা নাড়িয়ে আশেপাশে একবার তাকিয়ে বলল,

”১,আমাকে কোনো কাজে বাঁধা দেওয়া যাবে না। যা চাইব, চাহিবামাত্রই প্রস্তুত করতে হবে।হতে পারে সেটা কোনো বস্তু অথবা তুমি নিজে।
২. আমার স্পর্শ, আদর/আবদার, অত্যাচার সব সহ্য করতে হবে।গাইগুই করলেই শাস্তি!
৩. সংসারের ভার এবং সব দায়িত্ব ভালোবেসে পালন করতে হবে।
৪. আমার দায়িত্ববান বউ হতে হবে।
৫. আমাদেরকে রেখে কোথাও যাওয়া যাবে না।
এই পাঁচটা শর্ত মানলে আজকে আমাদের বিয়ে হবে। আমি ফ্রেশ হতে যাচ্ছি, আধাঘন্টার মধ্যে
সিদ্ধান্তটা জানাও। আমাকে আবার অফিসে যেতে হবে।”
কথাটা বলে রোদ দ্রুত পায়ে রুমে ঢুকে দরজা আটকে দিলো। আর আলো হতভম্ব হয়ে রোদের দিকে তাকিয়ে রইল।

-‘এলোকেশী কন্যা’-
[৩৫]
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

রোদের এমন কাজে আলো হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ওর রুমে চলে গেল। সুযোগ পেয়ে রোদ ওকে অপদস্থ করছে। লাজুক মেয়েটা যেঁচে বিয়ের কথা বলল, আর সে! আলো বেশ কয়েকবার পায়চারী করে কিছু ভেবে একটা চিরকুট লিখল। তারপর অনেকটা সাহস জুগিয়ে রোদের রুমের দরজা নক করল। রোদ তখন সোফায় বসে মিটিমিটি হাসছিল। সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিলে আলো এটা-ওটা বুঝিয়ে ফিরিয়ে দিতো। এজন্য সে মনে আঘাত করে মনে’ই ওর জায়গাটা পাকা পোক্ত ভাবে স্থাপন করে নিচ্ছে। ক্ষণিকের কষ্টে যদি সারাজীবনের সুখানুভব পাওয়া যায়; তাতে মন্দ কী! তাছাড়া এই টোপ না ফেললে এভাবেই ওদের দিন কাটতে থাকত। দরজা নক হতে দেখে রোদ নিজেকে সামলে নিলো। বোকামি করে এই
পরিকল্পনাটা ভেস্তে দেওয়া যাবে না।
আলো পুনরায় নক করার আগে রোদ দরজা খুলে ভ্রু কুঁচকে ঘড়ির দিকে তাকাল।এখনো প্রায় পঁচিশ মিনিট বাকি। আলো চিরকুট’টা রোদের দিকে এগিয়ে মাথা নিচু করে নিলো। রোদ সেটা
নিয়ে জোরেই পড়ল,’ আমি সব শর্তে রাজি।’
রোদ ঠোঁট কামড়ে কয়েকবার গলা পরিষ্কার করে আলোকে খোঁচা মেরে বলল,
“বিয়ের জন্য এত উতলা কেন, হুম? আজকাল
একটু বেশি’ই রোমান্টিক মুভি দেখো নাকি?”
একথা শুনে আলো চোখ মুখ খিঁচে নত মাথায় দাঁড়িয়ে রইল। এখন যদি রোদের পায়ে স্বজোরে
পাড়া দেয় অথবা রাম চিমটি দৌড় দেয়, তাহলে তো দোষ তো তার হবে। সবাই তো ওকেই বকবে।
নেহাৎ মেঘের জন্য এসব অত্যাচার সহ্য করছে। রোদ ওর থেকে উত্তর না পেয়ে ভ্রু কুঁচকে বলল,
“চিরকুট গ্রহনযোগ্য না, নিজের মুখে বলো।”
“আমি রাজি।”
“কিসে রাজি?”

আলো কটমট করে একবার তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে উত্তর দিলো,
“সব শর্ত মেনে আপনাকে স্বামী হিসেবে গ্রহনে করে, কেবল আপনার দায়িত্ববান অর্ধাঙ্গীর সব দায়িত্ব পালন এবং আপনার বাচ্চার মা হতেও আমি ইচ্ছুক। আমাকে সাদরে গ্রহন করে এবার চিরকৃতজ্ঞ করুন।”
“আমি বাসর অবধি আটকে গিয়েছিলাম। আর তুমি তো দেখি বাচ্চাতে চলে গেছো, সাধু! সাধু! তবে ব্যাপারটা কিন্তু বেশ রোমাঞ্চকর।”
কথাটা বলে রোদ এক ভ্রু উঁচু করে হাসল। আর আলো রেগে হনহন করে স্থান ত্যাগ করল। এই লোক অসভ্য তাও চুড়ান্ত পর্যায়ের। রোদ ওকে রেগে যেতে দেখে শব্দ করে হাসতে লাগল। ইস! রেগে কিছু বলতে না পেরে ফোসফাস করে চলেই গেল। বেচারা হবু বউ!
বিকালের দিকে রোহান, আকাশ, শোভন, এবং রিমিসহ সবাই বাসায় উপস্থিত হয়েছে। আলো রেগে দরজা আটকে ঘুমিয়েছে আর নিচে নামে নি। রিমি আর মেঘের ডাকাডাকি আলো দরজা খুলে জোরপূর্বক হাসল। কান্না করে ঘুমানোর ফলে চোখ মুখ ফুলে লাল হয়ে আছে, দেখতে কিন্তু বেশ লাগছে! রিমি দ্রুম আলোকে গোসলে পাঠিয়ে মেঘকে নিয়ে রোদের রুমে গেল। রোদের সঙ্গে ওর কথা আছে। বাকিরা ড্রয়িংরুমে বসে হইহুল্লোড় শুরু করেছে। রিমি রোদের রুমে নক করে প্রবেশ করল, তারপর সরাসরি একটা প্রশ্ন ছুঁড়ল,
“আলোর চোখ মুখ ফোলা কেন?”
রোদ ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে মেঘকে কোলে নিয়ে আদর দিলো। মেঘ অভিমান করে মুখ ফুলিয়ে অন্য দিকে তাকাল। রিমি উত্তর না পেয়ে বিরক্ত হয়ে কিছু বলার আগে রোদ বলল,

“জানি না।”
“আলোর মত আছে?”
“হুম, ওকে রেডি করে নিচে আয়।”
কথাটা বলে রোদ মেঘকে নিয়ে নিচে চলে গেল।
রিমি আলোর রুমি গিয়ে দেখে আলো বসে মুখ গোমরা করে চুল মুছছে। ওর লম্বা চুলের পানি গড়িয়ে কামিজটা ভিজে একাকার। তবুও তার হেলদোল নেই। সে নিজের একান্ত ভাবনায় ডুবে আছে। রিমি গল্পের ছলে দরজা আটকে নিজের কাজ করতে লাগল। ওইদিকে সব বন্ধুরা মিলে ড্রয়িংরুমটা ফুল দিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে। মেঘ রোদের কোলে থেকে চুপ করে সবার কাজ দেখছে। আজকে ওর না আছে দুষ্টমি আর না কথার বাহার। রোদ মেঘের চুলগুলো ঠিক করে দিয়ে বলল,
“বউমনিকে শেকল দিয়ে বাঁধতেই সকালে কষ্ট দিলাম। আমি খুব সরি; ছোট সাহেব। এখনো আমার উপর রাগ করে থাকবে?”
“বউমনি আর কোথাও যেতে পারবে না? এখানে সারাজীবন থাকবে?
” হুম, সে আর কোথাও যাবে না।”

এবার মেঘের মুখে বিশ্বজয় করা হাসি ফুটল।সে তাড়াহুড়ো করে কোল থেকে নেমে বলল,
”আমার দাভাইয়ের বিয়ে, আমি কাজ না করলে হবে?”
মেঘের কথা শুনে রোদসহ সবাই হেসে ওকে টেনে নিলো। একথা তো করোর মনেই ছিল না। মেঘ কাজ না করলে রোদের বিয়ে তো অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। না এটা তো কিছুতেই হতে দেওয়া যাবে না। এসব বলে সবাই দুষ্টমিতে মেতে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল। আকাশ আর রোহান গিয়ে কাজি ডেকে এনে রোদকে চোখের ইশারা করল। রোদ রিমিকে মেসেজ করে নিশ্চুপ হয়ে বসল। এখন সে জীবনের আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ধাঁপে পদার্পণ করতে যাচ্ছে; অথচ বাবা-মাকে ছাড়া। এমনটা তো কখনো চায়নি, তাহলে? বড় ছেলে হিসেবে ওর বিয়ে নিয়ে আম্মুর অনেক ইচ্ছে ছিলো।বাবা কতশত রীতিনীতি পালনের গল্প শুনিয়ে মজাও করেছিলেন। ওর আম্মু রোদের চুলে হাত বুলিয়ে বলতেন,
“এই যে রাজকুমার রাজকুমারী এনে দিবো, শুধু পালিয়ে বিয়ে করো না।”
রোদ একথার প্রত্যুউত্তর না করলেও শুধু মুচকি হেসেছিল। ভবিষ্যৎের কথা আগ-বাড়িয়ে বলা বোকামি। ওর বাবাও একদিন কাঁধ চাপড়ে হাসি মুখে বলেছিলেন,
“মেকাবে আবৃত করা চাকচিক্যময় নয়, সাধারণ একজনকে আনবে। যে হবে ঠিক তোমার আম্মুর মতো বরপাগল ঘরনি।”
উনাদের সব কথা রোদের মনে আছে, শুধু মানুষ গুলোই আর নেই। উনারাদের ছাড়া আজ ওকে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে উপনীত হতে হচ্ছে। তেমন কিছু না, শুধু কষ্টে ওর বুকটা ভারী হয়ে উঠেছে। তবে অদ্ভুত ওদের সংযোগ। রোদ আর আলোর কারো’রই শক্ত ছায়া নেই।
এজন্য কেউ সাহসও জুগাচ্ছে না, মাথায় হাত রেখে বলছেও না, ‘ভয় কিসের আমরা আছি।’
যদিও এমন কিছু আশা করেও আর লাভ নেই।

উনারা কেউ আর ফিরবেন না। রোদ বিয়ে নিয়ে মজা করলেও আলোর প্রতি নেওয়া ওর দায়িত্বটা মোটেও মজা নয়।সে পরিপূর্ণভাবে শেষ নিঃশ্বাস অবধি এই দায়িত্বে অটল থাকবে। এটা রোদের নিজের কাছে, নিজের ওয়াদা।
রিমি তখন আলোকে এনে রোদের পাশে বসিয়ে হাসতে হাসতে বলল,
“আরে বোকা মেয়ে ভয় কীসের, হুম? কাঁপছো কেন তুমি?”
ড্রয়িংরুমের সবার দৃষ্টি তখন লাল সুতির শাড়ি পরিহিত ঘোপটা দেওয়া আলোর দিকে।সাজহীন ছলছল চোখের মেয়েটাকে দেখতে বেশ লাগছে। কেঁদে লালবর্ণ মুখটা লাল আঁচলে অদ্ভুত সুন্দর
দেখাচ্ছে। সে এখনো শব্দহীনভাবে অঝরে অশ্রু ঝরাচ্ছে। শোভন’রা এই প্রথম আলোকে দেখে একে অপরের দিকে তাকাল। মেয়েটা ভারী মিষ্টি দেখতে; রোদের সঙ্গে বেশ মানিয়েছে। যাকে বলে ‘মেইড ফর ইচ আদার।’ কাজি ততক্ষণে বিয়ের
কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছেন। মেঘ চুপটি করে আলোর হাতটা ধরে ওর মুখে দিকে তাকাল।সে ভাবছে এটা কেমন শেকল? ভালো শেকল হলে বউমনি কাঁদছে কেন? সে যে বউমনির কান্না সহ্য করতে পারে না। কষ্ট হয়, প্রচুর কষ্ট হয়। কাজি তখন আলোকে কবুল বলতে বললেন। আলো
কবুল না বলে উল্টে ফুঁপিয়ে হেঁচকি তুলে কাঁদতে লাগল। ওর অভিভাবক বলতে কেউ নেই। ওর দাদীমা থাকলেও মনে জোর পেতো। অথচ কেউ নেই;কেউ না। এই কষ্ট আদৌ কেউ বুঝবে? কেউ অনুভব করবে এই নিরব কষ্টের গভীরতা? না, কেউ করবে না। আলোকে এভাবে কাঁদতে দেখে
মেঘ বলল,

“বউমনি এই শেকলের দরকার নাই। চলো রুমে চলো।”
আলো মেঘের হাতটা ওর কপালে ঠেঁকিয়ে শব্দ করে কাঁদতে থাকল। মেঘও আলোকে জড়িয়ে ধরে মুখ লুকিয়ে কেঁদে দিলো। এই মেঘের জন্য
সে এই পদক্ষেপ’টা নিতে বাধ্য হয়েছে, সে বুঝে একজন মা ছাড়া সন্তানের দুর্গতি। অভিভাবক ছাড়া বেঁচে থাকাটাও কতটা দূর্বিষহ। জানবে না কেন? সেও যে একই পথিক। এই পথের যাত্রা সে অনেক আগে থেকেই শুরু করেছে। কঠিন যাত্রা এখনো চলমান! কাজি ভাষাহীনভাবে স্তব্ধ হয়ে শুধু দেখছেন। যদিও এমন অনেক অভিজ্ঞতায় উনার আছে।মেঘ আলোকে টেনে উঠাতে গেলে, আলো উঠল না। বরং নিজেরসহ মেঘের চোখ মুছে একবার রোদের দিকে তাকাল। রোদ লাল চোখে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। এই চোখে না আছে রাগ আর না অভিযোগ! তাহলে উনার চোখ লাল কেন? কষ্ট পাচ্ছে নাকি, কষ্ট পেলে চোখ লাল হয়? রিমিসহ সবাই আলোকে কবুল বলতে তাগাদা দিলো। আলোর চুপ করে রোদের দিকে তাকিয়ে কিছু দেখছে। আজ রোদের চোখ
অনেক না বলা কথার জানান দিচ্ছে। আর সে
যেন এই ভাষা বোঝার’ই অপেক্ষায় ছিলো।রোদ তখন মৃদু স্বরে বলল,
“বলবে না?”

আলো রোদের চোখে চোখ রেখে তিনবার কবুল বলে দিলো। ‘বলবে না?’ এই কথাটার মধ্যে কী যেন একটা ছিল? কি ছিলো, সে জানে না! তবে কিছু একটা ছিল! বেশ অদ্ভুত শোনাল রোদের এই বাক্যটা। হয়তো একটু আবদার, অভিমান, আকাঙ্ক্ষা, আর অসীম ভালোবাসার সংমিশ্রণ ছিল। এজন্য আলো এই সাহসিকতার কাজটাও অনায়াসে করে ফেলল। কিন্তু পরক্ষনেই একরাশ লজ্জায় মাথা নিচু করে রাঙ্গা হয়ে উঠল। লাজে রাঙা রাঙাবউ যাকে বলে ! তারপর রোদও কবুল বলে, রেজিস্ট্রি পেপারের সাইন করে বিয়ে সম্পূর্ণ করল। আর বাঁধাও পড়ল অদৃশ্য এক শেকলে।
ওদের দু’জনের আসল অভিভাবক ‘আকাশ, রোহান, রিমি আর মেঘ।’ আলোর পক্ষে রোহান আর মেঘ, রোদের পক্ষে রিমি আর আকাশ।আর বাকিরা বিয়ের সাক্ষী।কাজিকে বিদায় দিয়ে
এবার সবাই মেতে উঠল হাসি-ঠাট্টায়।
সব ঠিকই ছিল। কিন্তু বিপত্তিটা ঘটল রাতে রোদ রুমে আসার পর। আলো খোলা চুলে বিছানার মাঝখানে বসে উশখুশ করছে। ওর ভেজা চুল
জবজব করছে। গোসল সেরে চুলে খোঁপা করাতে
চুল আর শুকায় নি। আর হেয়ার ড্রয়ারে সে চুল শুকায় না, চুল পেঁচিয়ে যাওয়ার ভয়ে। ওর চুলের পানিতে বেডশীটের অনেকটা ভিজে গেছে। রোদ ফ্রেশ হয় আলোর সামনে বসে বাঁকা হেসে বলল,

“রাঙাবউ!”
একথার প্রত্যুত্তরে আলো ফুঁপিয়ে ঝরঝর করে কেঁদে দিলো। ভয় আর অস্বস্তিতে ওর প্রাণপাখি যায় যায়। তবে ওর কাজল কালো চোখে বড় বড় অশ্রুফোঁটা গড়িয়ে পড়ার দৃশ্যটা অমায়ায়িক।এ
দৃশ্যটা রোদ মনের কোণে চিরবন্দী করতে ভুলল না। এই দৃশ্যটা সে সারাজীবন অবলোকন করে যাবে, তাও সবার অগোচরে। আলো ওর কান্না আটকে কিছু বলার আগেই রোদ চট করে উঠে বিছানা ঝাড়া ঝাড়ু এনে বলল,
“বাসর রাতে বউ পিটানোর শখটা আমার বহুদিনের। তো বউ, মার খাওয়ার জন্য প্রস্তুত হও।”
একথা শুনে আলো অসহায় হয়ে আবার কেঁদে দিলো। অবশেষে কি না ভাগ্যে ছিল, এই ঝাড়ুর বারি।”

-‘এলোকেশী কন্যা’-
[৩৬]
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

আলোকে ডুকরে কাঁদতে দেখে রোদ চঞ্চল পায়ে এগিয়ে গেল। সে মজা করছিল অথচ পাগলিটা সত্যি ভেবেছে। যাকে এত ভালোবাসে তাকে কী মারা যায়? তাও আবার ঝাড়ু দিয়ে। আসলে সে দেখতে চেয়েছিল ;আলো কী করে? কিছুই বলল না বরং কাঁদতে লাগল। আলোকে কাঁদতে দেখে
রোদ মুচকি হেসে বলল,
“আমি মজা করছিলাম গাধী। ইস! এভাবে কেউ কাঁদে? এখানে লাগে তো!”
রোদ ওর বুকের বাঁ পাশে হাত বুলিয়ে বলল।এই পাগলিটা আদৌও কিছু বুঝবে নাকি কে জানে!
আলো নাক টেনে কান্নাভেজা চোখে মুখ তুলল।
এই লোকটা নিশ্চয়ই পাগল হয়ে গেছে, নয়তো এসব কী বলছে? কাঁদিয়ে আবার ঢং করে বলাও হচ্ছে, ‘ইস! এভাবে কেউ কাঁদে?’ আহা! প্রাণ জুড়ানো আদুরে কথাবার্তা। না, এভাবে কেউ কাঁদে না, মানুষ তো ডিজে গানের তালে তালে কাঁদে। রোদ আলতো করে চোখের পানি মুছিয়ে কপালে একটা আদর দিয়ে বলল,
” কাঁদানোর জন্য সরি। আদর দিয়ে শোধ করে দিলাম।”

আলো ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রোদের মতিগতি বোঝার চেষ্টা করছে। আজ সকাল থেকে রোদ ওকে অনেক কাঁদিয়েছে। দিনশেষে এখন আবার বলছে, ‘আদর দিয়ে শোধ করে দিলো।’ কান্না শোধ করা যায়? এটা কেমন কথাবার্তা? খুশির ঠেলায় ভুলভাল বকছে নাকি? পাষাণ মানুষটা বুদ্ধি খাঁটিয়ে ওকে বিয়ের চাপে ফেলেছে। একথা সে ঠান্ডা মাথায় ভেবে বুঝতেও পেরেছে। যদিও এতে ওর অাফসোস নেই।সে মন থেকে সব মেনে নিয়েছে। শুধু মেঘ নয়, এই ফাজিল মানুষটারও দায়িত্ব নিয়েছে। রোদ ওকে কাঁদাক, রাগ দেখাক, বকা দিক, তবুও সে ওর। মূখ্য কথা, প্রণয় নামক অনুভূতির সঙ্গে সে একটু একটু করে পরিচিত’ও হচ্ছে। আর ওর অনুভূতির রাজ্যের রাজা,’রোদ মেহবুব।’ উহুম, একথা সে কাউকে বলবে না! কারণ কিছু কিছু অনুভূতির কথা জানাতে নেই।তাছাড়া বৈধভাবে পেয়েও মুখে কেন বলতে হবে?
তাকে বুঝে নিতে হবে! আর রোদকে সে পুরোপুরি না বুঝলেও কিছুটা বুঝতে শিখেছে।এই মানুষটা ভিন্ন জাতের, একে বুঝতে একটু সময় লাগবে।
আলোকে চুপ থাকতে দেখে রোদ ওকে নিচে দাঁড় করালো। তারপর ড্রয়ার থেকে একটা বক্স এনে আলোর সামনে বসল। আলো চুপ করে তাকিয়ে দেখছে। রোদ একজোড়া নীল পাথরের নুপূর বের করে আলোকে পরিয়ে দিলো। ফর্সা পায়ে নীল পাথর দারুণ মানিয়েছে। নুপূরে ঝুনঝুনি নেই বিধায় শব্দ হবে না! আলো চোখ বড় বড় হলো যখন দেখল; বক্সভর্তি নুপূর তাও বিভিন্ন ডিজাইনের। ডিজাইনগুলো বেশ নজরকাড়া!

রোদ উঠে আলোকে বক্সভর্তি নুপূর দিয়ে মুচকি হেসে বলল,
“এখানে আটষট্টি জোড়া নুপূর আছে। আর ওই ওয়ার্ডড্রোপের প্রতিটা ড্রয়ারে শাড়ি,গয়না, এবং অনান্য ড্রেস আছে।”
“এসব কী দরকার?”
“দরকার আছে! আর এবার থেকে হালকা গয়না পরবে। তোমার পছন্দমতো’ই নাহয় পরিও। আর ভালো লাগুক বা না লাগুক এই রুমেই থাকবে। এখন উঠে ফ্রেশ হয়ে চুল শুকিয়ে নাও, আমি মেঘকে দেখে আসছি।”
কথাটা বলে রোদ দ্রুত পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। না আলোকে কিছু বলার সুযোগ দিল; না শুনল। যেভাবে ঝাড়ু তুললো মনে হচ্ছিল, মেরে আজ আধমরা করে দিবে। ভয় দেখিয়ে কাঁদিয়ে আবার নিজেই চুপ করাবে। অদ্ভুত মানুষ! আর এতকিছু কবে কিনেছে? এই লোক আস্ত একটা পাগল। ভালোবাসে ঠিকই; না বুঝতে দেয় আর না প্রকাশ করে। তবে পছন্দ আছে বলতে হবে।
এসব ভেবে আলো নুপূরজোড়ার দিকে একবার তাকিয়ে হেসে চুল শুকানোর কাজে লেগে গেল।
এই চুল কখন শুকাবে, কে জানে! রাতও অনেক হয়েছে, ঘুমে চোখ দু’টো বুঝে আসছে। আলো আগে শাড়িটা বদলে ফ্রেশ হয়ে আসল। এভাবে আর কতক্ষণ বসে থাকবে। আগে তো সে থামি পরত, তারপর থ্রি-পিস, এখন আবার শাড়ি।
যদিও সে শাড়িতে অভ্যস্ত না, তবুও মন্দ লাগছে না। বউ বউ একটা ব্যাপার আসছে, কার বউ? রোদের বউ! ইস! কি লজ্জা, কি লজ্জা। এসব ভেবে আলো লজ্জায় দুই হাত দিয়ে মুখটা ঢেকে নিলো।তবে এখন বউ হয়েছে, মাঝে মাঝে শাড়ি পরলে মন্দ হয় না। এমন কতশত ভবনায় ডুবে
আলো ওভাবে বসেই ঘুমিয়ে গেল। আজ কান্নার পরিমান বেশি হওয়াতে শরীরও বেশ ক্লান্ত। আর ক্লান্ত শরীরে কতক্ষণ বসে থাকা যায়। চুলও তো শুকানো হলো না। রোদ মেঘকে দেখে রুমে এসে বিরবির করে বলল,
“ভেজা চুলে ঘুমাবে আর জ্বর আসলে কুইকুই করবে, ফাজিল একটা।”

একথা বলে সে ড্রায়ার দিয়ে ধীরে ধীরে আলোর চুল শুকাতে লাগল। আর এমনভাবে দাঁড়াল, যাতে আলো ঘুমের ঘোরে পড়ে না যায়। চুলের দায়িত্ব সে অনেক আগেই পেয়েছিল। তবে এর পূর্ণ কার্যক্রম শুরু হবে আজকে থেকে। এখন না থাকবে বাঁধা আর না দ্বিধাবোধ! এই এলোকেশ এবং এলোকেশী দু’টোই একান্ত ওর।
ওদের বিয়েটা মূলত এভাবেই হয়েছে। তবে ওদের সম্পর্কটা আরো একধাপ এগোতে না রোদের তাড়া আছে, না আলোর। সঠিক সময়’ই নাহয়
ওদেরকে আরো কাছাকাছি এনে দিবে। তাছাড়া
সব কাজে তাড়াহুড়ো করতে নেই, হিতে বিপরীত হয়। দিনও যাচ্ছে, সময়ও কাটছে, একে অপরের আরো কাছাকাছিও আসছে। সম্পর্কটাও আগের তুলনায় সহজ হচ্ছে, তাহলে তাড়া কিসের? সব জায়গায জোর কাজ করে না। কারণ জোর করে কার্যসিদ্ধি কাপুরুষের কাজ। আর সেটা নিজের বউয়ের ক্ষেত্রেও। আর বুদ্ধিমান পুরুষরা এটা কখনোই করবে না।
বর্তমানে,
রোদ ওর ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসল। কফি শেষ! আকাশে মেঘের ঘনঘটা। বাতাসের জোরও ধীরে ধীরে বাড়ছে। হয়তো বৃষ্টি আসবে।
রোদ আশেপাশে চোখ বুলিয়ে পুনরায় অন্য এক
ভাবনায় ডুব দিলো। ওদের বিয়ের দুইদিন আগে ঘটনা। সেদিন হুট করে রোহান রোদের অফিসে এসেছিল। সচরাচর সে খুব একটা অফিসে যায় না। খুব দরকার হলে সরাসরি বাসায় যায়।রোদ মিটিং সেরে কেবিনে এসে দেখে রোহান কফি খাচ্ছে আর গেম খেলছে। রোদ চেয়ারে শরীর এলিয়ে বসল। তখন রোহান বলল,
“একটা জিনিস চাইব ভাই, দিতে হবে কিন্তু।”
রোদ পানি খেয়ে অকপটে উত্তর দিলো,
“অবশ্যই দিবো, শুধু আমার ভাইয়ের হাসিটা চাস না। এটা আমার সাধ্যের বাইরে! জানিসই তো; মেঘের হাসি এখন আলোতে সীমাবদ্ধ।”

রোহান হাসল! সে জানত, এমনকিছু হবে। তাই
ব্যাপারটা ভালোলাগাতেই সীমাবদ্ধ রেখেছিল।
রোদ খুব চতুর। তাকে মুখে বলে কিছু বোঝাতে হয় না। সেদিন রোহানের দৃষ্টিতেই সে বাকিটুকু বুঝেছিল।একটা ছেলের চোখের ভাষা আরেকটা ছেলে খুব সহজে বুঝে। সে যদি বন্ধু হয়; তাহলে তো কথায় নেই! তাছাড়া মেঘ শুধু রোদের ভাই তা নয়। ছোট্ট মেঘ ওদের সবাই কলিজা। ধরা খেয়ে রোহান হেসে রোদের কাঁধে হাত রেখে বলল,
“আর তুই?”
“জানিস’ই তো।”
“রোদ এই ব্যাপারটা এখানেই শেষ করি। কারণ আমারটা ভালোলাগা, যেটা ক্ষণিকের। আমার অনুভূতি এতটাও গাঢ় নয়, একপ্রকার মোহ বলা যায়। কিন্তু তোরটা সম্পূর্ণ ভিন্ন, যে অনুভূতির গভীরতা আমার থেকে তুই ভালো জানিস। মন থেকে সত্যি বলছি ভাই, তোর ফুলকে বোনের আসনে বসিয়েছি। আমি জানতাম ওই ফুলটা তোর বাসাতেই শোভা পাবে, অন্য কোথাও নয়।
এবার ফুলটাকে বৈধভাবে তোর ঝুলিতেই তুলে নে।”
রোদ রোহানের দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাল।তবে ওর দৃষ্টিতে না আছে কষ্ট আর না অনুশোচনা।
চোখে হচ্ছে মনের আয়না, চোখের ভাষা কখনো মিথ্যা হতে পারে না। সত্যিই রোহানের আলোর প্রতি অনুভূতিটা ভালোলাগাতে সীমাবদ্ধ ছিল।

সুন্দর ফুলে সবাই হাত বাড়ায় সেও বাড়িয়েছিল।তবে না পেলে কষ্ট জর্জরিত হবে এমনটাও না।
মেঘের ভালোবাসা আর রোদের দায়িত্ববোধের সাথে অন্যকিছু তার চোখে পড়েছে।এজন্য সে
মনকে সামলে নিয়েছে। দুই বন্ধুর মাঝেই এসব মিটমাট হয়েগিয়েছিল। কিন্তু সাফির মা রোদের পিছু ছাড় ছিলেন না। সাফির বড় ভাইয়ের জন্য আলোকে উনি চাচ্ছেন। আলোকে উনার খুব পছন্দ হয়েছে আর সাফির ভাই সাব্বিরের সঙ্গেই নাকি বেশ মানাবে। রোদ পড়েছিল মহাবিপদে।
এজন্য রোদ ওর পাখিকে যথাশীঘ্রই শেকল’টা পরিয়ে দিলো। যাতে কেউ চাইলে জোর গলায় বলতে পারে, ‘এটা আমার সুখপাখি।’
এসব ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে রোদ হাসল।
তারপর উঠে আকাশের অবস্থা খারাপ দেখে
নিচে চলে গেল। রোদ আলো আর মেঘকে ঠিক ভাবে শুইয়ে নিজেও শুয়ে পড়ল। কাল সকাল
সকাল ওদের বেরিয়ে পড়তে হবে।গ্রামের বাড়িতে আকাশের বড় চাচ্চুর মৃত্যুবার্ষিকীর আয়োজন করা হয়েছে। ওরা কালকে সেখানে যাবে। আর
আকাশ বার বার বলেছে, ওদের সবাইকে যেতে’ই হবে। রাত পেরিয়ে সকাল হলো। সূর্য্যিমামা তার আলো ছড়িয়ে আঁধারকে বিতাড়িত করল।রিমি, রোহানসহ সব বন্ধু’রা একসাথে যাবে।যাতে ওরা মজা করতে করতে যেতে পারে। সকাল আট’টার দিকে একে একে সবাই রোদের বাসায় উপস্থিত হচ্ছে। রিমি, শোভনের বউ নিতু আর আলো গল্প জুড়ে দিয়েছে। মেয়েদের যা কাজ! একটুপরে রোহান ঘুমে ঢুলুঢুলু হয়ে হেলেদুলে উপস্থিত হলো। ওর জন্য’ই সবাই অপেক্ষা করছিল। ওকে দেখে শোভন বলল,
“চল যাওয়া যাক, অনেকদূরের রাস্তা।”
”হুম।”
রোদ তখন রোহানের দিকে তাকিয়ে বেশ বিরক্ত হয়ে বলল,
“তুই বাসায় পরা স্যান্ডেল পরে যাবি?”

রোদের কথা শুনে সবার দৃষ্টি তখন রোহানের পায়ের দিকে। রোহানও দেখে করুণ দৃষ্টিতে তাকাল। বেচারা গতরাতে তিন’টা পঞ্চাশে
বাসায় ফিরেছে। ফ্রেশ হয়ে খেতে খেতে চার’টা পনেরোতে ঘুমাতে গেছে। সাংবাদিক মানুষ খুব চাপ যাচ্ছে বিধায় হুশ নেই। রোদের একজোড়া কেডস্ পায়ে ঢুকিয়ে সে হাঁটা ধরল। রাকা গিয়ে
সবার খাবার গাড়িতে রেখে আসল। রোদ ওকে গতরাতে বলে রেখেছিল। তারপর সবাই বেরিয়ে গাড়িতে উঠে বসল। বড় হাইসের জন্য একটা গাড়িতে সবাইকে ধরে গেল। শামীম তখন হেসে ড্রাইভ করতে করতে বলল,
“যে যার বউয়ের পাশে বস আর বউকে সামলা,
গ্রামের রাস্তা’টা খুব খারাপ। বারি বুরি গেলে বউ চ্যাকা-ব্যাকা হয়ে গেলে ড্রাইভারের দোষ দিস না।
ওর কথা শুনে সবাই হাসল। অনেক মজা করে অনেকটা পথ পাড়ি দিলো। আর কিছুক্ষণ পরে ওরা গ্রামে ঢুকবে। গল্প যেন শেষ হচ্ছে না, চলছে তো চলছেই! রোহান বসে থাকতে থাকতে রিমির কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে গেছে। অনেকক্ষণ বসে থাকাতে রিমির একটু কষ্ট হচ্ছিল, তাই রোদ ওর কাঁধে রোহানের মাথাটা রাখল।আর এমন ভাবে রাখল যেন রোহানের ঘুম না ভাঙ্গে। বন্ধু যাদের স্থান কলিজায়। তাদের খেয়াল রাখাটা দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। এই দৃশ্যটা দেখে সবাই মৃদু হাসল।

এলোকেশী কন্যা পর্ব ৩১+৩২+৩৩

রোদ বরাবরই এভাবে সবার খেয়াল রাখে। কেন জানি সব ত্রুটি ওর চোখেই ধরা পড়ে। তখন সে যথাসাধ্য ত্রুটি সমাধানের চেষ্টা করে। মেঘ বসে
চিপস খাচ্ছে আর গেম খেলছে। এখনো চুপচাপ আছে। গ্রামের রাস্তা ভাঙা হওয়াতে রোহান বারি খেতে গেলে রোদ ধরে নিলো।এই ধাক্কায় ঘুমটাও ওর ভেঙে গেল। রোহান নিজেকে রোদের কাঁধে দেখে হাসল, এটা নতুন নয়। এই ঘটনা অনেক বার ঘটেছে। রোহান ঠিক হয়ে বসে চোখে মুখে পানি দিয়ে খাবারখেয়ে নিলো। সে বাদে সবাই খেয়েছে। প্রতিটা বন্ধুমহলে একটা প্রতিবন্ধী বন্ধু থাকেই। এখানেও আছে, তার নাম তানিম। সে প্রেমিকার সাথে কথা বলতে ব্যস্ত। সারারাস্তা সে তাই’ই করেছে। রাস্তা এত খারাপ যে কেউ কারো জায়গায় স্থির নেই। তার মধ্যে তানিমের গদগদ মার্কা প্রেমালাপ,
“আল্লাহ, আমাল বাবুটা কত্ত কিউত করে হাঁচি দিচ্ছে। আবার প্রেমে পড়ে গেলাম আমার টিয়া পাখিটার।”
এমন কথা শুনে রিমি মনে মনে গালি ছুঁড়লেও, আলো রোদের বাহুতে মুখ লুকিয়ে নিঃশব্দে হেসেই যাচ্ছে। নিতু মুখে ওড়না গুঁজে ব্যর্থ চেষ্টা চালাচ্ছে। তানিমের কথার ঢং দেখে না হেসে থাকাও যাচ্ছে না। বাকিরা শুনে শুনে অভ্যস্ত।
এমনিতে ভাঙা রাস্তা তারমধ্যে এসব কথা শুনে রোহান রেগে বলল,

“এটাকে কেউ থামাবি, নাকি দামদুম করে মেরে দিবো?”
এরমধ্যে মেঘ মুখ কাঁচুমাচু করে বলল,
“দাভাই, আমার তো ইয়ে ব্যথা হয়ে গেছে। রাস্তা এমন কেন?”
শোভনও বলে উঠল,
“আমারও বা*।”
তখন শামীম হাসতে হাসতে বলল,
“ওখানে গিয়ে যে যার ইয়ে’তে ব্যথানাশক স্প্রে মেরে নিস। নয়তো আসার সময় অ্যাম্বুলেন্স ডাকতে হবে।”

এলোকেশী কন্যা পর্ব ৩৭+৩৮+৩৯