এলোকেশী কন্যা পর্ব ৩১+৩২+৩৩

এলোকেশী কন্যা পর্ব ৩১+৩২+৩৩
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

বৃষ্টির রাতে বাথরুমের যাওয়ার প্রয়োজনটা কেন জানি যেন বেড়ে যায়। কী কারণে? এই সমীকরণটা আদৌ কেউ মিলিছে নাকি তা জানা নেই। তন্মধ্যে বাথরুমটা যদি দূরে হয় তাহলে তো কথায় নেই।প্রকৃতির ডাকে দূরের বাথরুমে যাওয়া যে কী বিরক্তিকর, যারা যায় তারা’ই বুঝে। আজ সন্ধ্যার পরপরই বৃষ্টি শুরু হয়েছে।
টিনের চালে ঝমঝম শব্দ করে বৃষ্টি যেন নৃত্য শুরু করেছে। নিদারুণ তার নাচন ভঙ্গি! বাইরেও বইছে; শরীর শিউরে ওঠা শীতল বাতাস। পানির ঝাপটায় গাছগুলো যেন তাদের গ্লানি মুছতে মগ্ন। পাতাগুলোও নড়েচড়ে চড়ে আজ বৃষ্টি উপভোগে
নিমজ্জিত। এই বৃষ্টিতে শ্যাওলাযুক্ত উঠানে নামাও মুশকিল।

একবার পা পিছলে পড়লে নিজের না বাবার- বাবারও নাম ভোলার যাওয়ার সম্ভবনা বেশি।আর এর সঠিক প্রমান পেতে অবশ্য পড়ে গিয়ে দেখাটাই শ্রেয়। এতে টাটকা প্রমান পাওয়া যাবে। আর নিশ্চিতও হওয়া যাবে, কার কোমরে জয়েন্ট ঠিক কতটা মজবুত! পাশের পঁচা ডোবায় থেকে কোলা ব্যাঙের ডাক শোনা যাচ্ছে। চলতি কথায় আছে, ব্যাঙ ডাকলে নাকি বৃষ্টি হয়! এত বৃষ্টির মধ্যেও ব্যাঙ একনাগাড়ে ডেকেই যাচ্ছে ; অর্থাৎ ব্যাঙয়ের আরো বৃষ্টি চায়। এত বৃষ্টি চায় যে, গোসলের জন্য পুকুর নয় বরং রুমের মেঝেতেই গোসল’টা সারা যায়। নয়তো ব্যাঙ চাচ্ছে, মানব জাতি ওদের মতো পানিতে বসবাস শুরু করুক। তাদের সকল কর্ম পানিতে সম্পূর্ণ করুক। নতুবা হতচ্ছাড়া ব্যাঙ সবাইকে ডুবিয়ে মারার ফন্দি এঁটেছে। এজন্য এত বৃষ্টিতেও তার হচ্ছে না! আকাশের গম্ভীর অবস্থা দেখেও মনে হচ্ছে, ব্যাঙের ঘ্যাঙর ঘ্যাঙর ডাক শুনে আকাশ খুশিতে গদগদ হয়ে অঝরে বৃষ্টি ঝরাচ্ছে। যেন দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করেছে; মানব জাতির বৃষ্টি নিয়ে ন্যাকামি করার ভাব ছুটিয়ে ছাড়বে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

মেঘের গর্জনে বুকটাও দুরুদুর কাঁপছে। এমন হাবভাব যেন চালা ভেদ করে এই রুমে’ই আকাশ ভেঙ্গে পড়বে। উফ! কী যে জ্বালা! তবে এমন মুহূর্তে প্রিয় মানুষটার সঙ্গ পেলে মন্দ হয় না। প্রিয় মানুষটার বুকে পিঠ ঠেকিয়ে বৃষ্টি দেখাটাও যেন স্বার্থক। যদিও এটা প্রায় মেয়েদের আহ্লাদী ইচ্ছে। আর এমন সুখময় বৃষ্টিবিলাশ কে না চায়! এত সুন্দর কিছু ভাবনার মধ্যে প্রকৃতির ডাক আবার ব্যাগড়া বাঁধাল।
মুন আর থাকতে না পেরে পা টিপে বাথরুমের দিকে ছুটল। ওর পরনে কমলা রংয়ের থামিটা ভিজে জবজবে হয়ে গেল।বৃষ্টির যে তেজ ভেজা’টা যদিও স্বাভাবিক। এছাড়া কী আর করার! মুন কাজ সেরে বের হতেই অদূরে মকবুলকে দেখতে পেলো। বৃষ্টির মধ্যে ওকে দেখে, সে ভিজতে ভিজতে সেদিকে ছুটে গেল। আজ সন্ধ্যার দিকে মকবুল জেনেছিল, মুন আজ এখানে থাকবে। তাই দেখা করতে রাতেই এসেছে। কী করবে
মন’টা মানছিল না যে! দাদীমা পাশের রুমে ঘুমাচ্ছেন বিধায় মুন মকবুলের সাথে জঙ্গলের আড়ালে দাঁড়াল। যাতে কারো নজরে না আসে। নয়তো ওদের দু’জনকে কঠিন শাস্তি পেতে হবে। বৃষ্টি ওদের দু’জনকে পুরো দমে ভিজিয়ে দিয়ে যাচ্ছে।
তাও কারো হেলদোল নেই। একটা জায়গা দেখে শরীর ঘেষে বসল দু’জন। মকবুল মুনের হাতের উল্টো পিঠে আদর দিয়ে বলল,

“মুন তোলে আমি মেলা বালোবাছি।”
“আমিও।”
“এ্যাই মুন আমাদেল পোলার নাম চাঁদ লাগব, আচ্ছা! আল বেডির নাম ছপ্ন লাগব।”
একথা শুনে মুন মুখ বাঁকিয়ে মকবুলের বাহুতে কিল বসিয়ে দিলো। ওদের বিয়ে’ই হয়নি, অথচ কতশত স্বপ্ন সাজিয়ে বসে আছে। ঢং! আবার বাচ্চাদের নামও ঠিক করে ফেলেছে। মুন মকবুলের কথায় মনে মনে খুব খুশি হলেও প্রকাশ করল না। সেও রোজ এমন স্বপ্ন বুনে। কতশত স্বপ্নরা এসে ওর দু’চোখে ও ধরা দিয়ে যায়। আহামরি কিছু পাওয়ার আশা ওর’ও নেই। সে শুধু প্রিয় মানুষটাকে সারাজীবনের জন্য পাশে চায়। হঠাৎ কারো কথা শুনে মকবুল আর মুন সেদিকে তাকায়। একটা ছেলের সাথে দাদীমা জঙ্গল থেকে বেরিয়ে আসছেন। দাদীমা কোথায় গিয়েছিল? আর ছেলেটা কে? তাও এত রাতে বৃষ্টির মধ্যে! হঠাৎ দাদীমার হাতের টর্চের আলো মুনের উপর এসে পড়ল। ওদের দেখে দাদীমা এসে দাঁড়াতেই একটা ছেলে শুদ্ধ ভাষায় বলে উঠল,
“দাদীমা লাশ কবর দিবো নাকি পার্সেল করে পাঠিয়ে দিবো।”

ছেলেটার একথা শুনে মুন’রা দু’জনে আঁতকে উঠে দাদীমার দিকে তাকাল। উনি বিরক্তিকর চাহনি নিয়ে আঙ্গুল দিয়ে দুই ইশারা করলেন। অর্থাৎ পার্সেল করে পাঠাতে। লাশ পার্সেল! কী ভয়ংকর কাজ-কারবার! মৃত্যু আর লাশ যেন তুচ্ছ একটা খেলার অংশ। দাদীমার কথা শুনে ছেলেটা উপর-নিচ মাথা নাড়িয়ে স্থান ত্যাগ করল। বৃষ্টিতেও উনাদের কাজ থেমে নেই। এইতো কিছুক্ষণ আগেও পাঁচজনকে নির্মমভাবে জবেহ করা হয়েছে। চোখের সামনে’ই ছটফট করে নিঃশেষ হলো পাঁচটা প্রাণ। যদিও এরা মাতবরের লোক। আজ মাতবর নাকি হুকুম করেছিল,আলোকে তুলে নিয়ে যাওয়ার। দাদীমা খবর পেয়ে
সব প্রস্তুতও রেখেছিলেন। লোকগুলো আসলে, তাদেরকে দুইদিন আটকে রেখে লাশ বানিয়ে মাতবরের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। সেই সাথে কঠোর বার্তাও প্রেরণ করল। ‘এবার মান নয় তোর জান নিবো!’

এটা ছিলো মাতবরের জন্য দাদীমার সুমিষ্ট বার্তা। এর আগে মাতবর যতবার আলোর দিকে হাত বাড়িয়েছে ; দাদীমা ছায়া হয়ে ততবার আলোকে রক্ষা করেছে। উনার ভয়ংকর রুপ’টা আলোরও অচেনা। ক্ষুণাক্ষরেও কখনো আলোকে টের পেতে দেন নি , উনি সাধারণ অবলা নারী নন! উনার ভালো রুপের আড়ালে ভয়ংকর রুপ লুকায়িত আছে। যেটা রাতের আঁধার খুব ভালো মতো জানে। এর আগে দাদীমা নিজে মতির পিঠে কোপ বসিয়েছিলেন। শুধুমাত্র আলোকে নোংরা ইঙ্গিত করার জন্য। সেই আঘাতের দাগ মতির পিঠে আজও স্পষ্ট। গ্রামের কেউ দাদীমার কথা না জানলেও, মতি আর মাতবর উনার সব কার্য সম্পর্কে অবগত। মূলত এজন্যই ওরা মারাত্মক ভয় পেতো। পাহাড়ি এলাকায় একা মহিলা হয়ে সুন্দরী নাতনিকে বাঁচিয়ে রাখা মুখের কথা নয়। যেখানে মানুষরুপী অমানুষের অভাব নেই। আর দাদীমা অবলা নারী হলে; আলোর অস্তিত্ব এতদিনে বিলীন হয়ে যেতো, এটাও সত্য। এদিকে মুনদের’কে দেখে দাদীমা হাঁক ছেড়ে কাউকে ডাকলেন। গমগম শব্দ তুলে তখন মকবুলের চাচাতো ভাই মানিক এসে দাঁড়াল। মকবুল হতবার হয়ে তাকিয়ে রইল। দাদীমা মুনদের দিকে ইশারা করে ব্যাপারটা দেখতে বলে কয়েক পা বাড়িয়ে পেছন ফিরে বললেন,

“ঘুম পাড়িয়ে দে যাতে কথা ফাঁস না হয়।”
কথাটা বলে দাদীমা ধীর পায়ে বাড়ির দিকে চলে গেলেন। মুন জানা মানে, আলোর কানে কথা পৌঁছে যাওয়া। জেনে-শুনে এটা হতে দেওয়া যাবে না। দাদীমার কথা মোতাবেক, মানিক
এগিয়ে গিয়ে মুনের ভেজা শরীর দেখে বিশ্রীভাবে হাসল। ইস! মেরেই তো ফেলবে মজা নিতে সমস্যা কী? তবে দাদীমা এটা
জানলে ওর প্রাণ নিতেও দেরী করবে না। জানলে তো? ছেলে মানুষ আর কত’ই সাধু সেজে থাকা যায়। মন মানলেও শরীর তো মানে না। এসব ভেবে মানিক মকবুলের সামনে মুনের শরীরে হাত দিলো। মকবুল প্রচন্ড রেগে স্বজোরে একটা ঘুষি বসাল। একপর্যায়ে দু’জনের ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে গেল। তখন আরো কয়েকজন ছেলে এসে ওদেরকে কলাবাগানের দিকে গেল। যাতে কেউ টের না পায়। এতজনের সাথে পেরে উঠতে না পেরে মুন প্রাণপণে চিৎকার করে মকবুলকে ডাকছে। সে এদের নোংরা স্পর্শ সহ্য করতে পারছে না। ওর মরে যেতে ইচ্ছে করছে। মানিক তখনো মাকবুলকে মারছিল। মকবুল ততক্ষণে বুঝে গেছে, আজ ওদের নিস্তার নেই। সে মানিককে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে অস্ত্র কেড়ে আঘাত করল। মানিক প্রচন্ড ব্যাথায় মাটিতে লুটে পড়ল। মুনের ততক্ষণে করুণ অবস্থা।
মকবুল ছেলেগুলোকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালাতে থাকল।
ওরা সরছে না দেখে মকবুল এলোপাথাড়ি অস্ত্র ছুঁড়তেই ওরা মুনকে ধরে সামনে দাঁড় করিয়ে দিলো। ব্যস, ধারালো অস্ত্রে মুনের হাতে লেগে রক্ত ঝরতে লাগল। মকবুল হতবাক হয়ে তাকাতেই, ছেলেগুলো বিশ্রীভাবে হেসে মুনকে আবার ধরল। মুন ওদের থেকে ছাড়া পেতে চিৎকার করে কেঁদে মকবুলকে বলল,

”মখবুল, আমালে তুমি মাইলা ফালাও। তাও আমাল শলীলে দাগ লাগতে দিও না মকবুল। আমাদেল ভালোবাসার কসম, আমালে নুংলা শলীলে কবলে (কবর) যেতে দিও না। তোমার মুনের কসম মকবুল, আমাল কথা শুনো।”
মকবুল বাকশক্তি হারিয়ে মুনের কথাগুলো শুনল। এটা কী সম্ভব! সে ভালোবাসে, প্রচন্ড ভালোবাসে। আর ভালোবাসার মানুষের গলায় অস্ত্র চালানো যায়?মুন চিৎকার করে বারবার মকবুলকে ভালোবাসার কসম দিচ্ছে। ছেলেগুলোও ততক্ষণে আরো উন্মাদ হয়ে গেছে। শুধু কার্যসিদ্ধির অপেক্ষায়। আচ্ছা,
স্বচক্ষে কী প্রিয় মানুষটাকে ধর্ষণ হতে দেখা যায়? যায় কী?
ওর যে কষ্ট হচ্ছে; প্রচন্ড কষ্ট! সে অনুভব করছে এই কষ্ট মৃত্যু যন্ত্রণায় মতো অসহনীয়। ছেলেগুলো ততক্ষণে মুনের থামির অনেকটা খুলে ফেলেছে৷ মকবুল মানিকের পা ধরে আঁকুতি মিনতি করে কাঁদলেও ওরা মুনকে ছাড়ল না। মকবুল এটাও বলল, ওরা এখান থেকে চলে যাবে আর কোনোদিন ফিরবে না। এসব কাউকে জানাবেও না। তবুও কারো মন গললো না। তাৎক্ষণিক মকবুলের মস্তিষ্ক একটা কথা জানান দিলো। সে ছেলেগুলোকে অনেক কষ্টে অস্ত্রের আঘাতে সরিয়ে মুনের কথায় রাখল। সে ছুটে গিয়ে সত্যিই সত্যিই মুনের গলায় অস্ত্র চালাল।সাথে সাথে ফিনকির মতো রক্ত ছুটে পড়ল মকবুলের মুখে। অসহ্য ব্যথা নিয়েও মুনের মুখে হাসি ফুটল। ওর ইজ্জত আর ভালোবাসার মান রেখেছে ওর মানুষটা। তখন মুন কাটা মুরগির মতো ছটফট করে শেষ কথাটুকু বলল,
“আলোবু লে এসব জানিও না মকবুল। আলোবু এছব ছহ্য
করতে পালবে না। আল তুমাকে খুব ভালোবাছি মুকবুল। খুব ভালোবাছি।”

মকবুল মুনকে বুকে জড়িয়ে চিৎকার করে কাঁদতে লাগল।সে তো এমনটা চায়নি। সে মুনের সঙ্গে বাঁচতে চেয়েছিল। ওদের স্বপ্নগুলো বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিল। কিন্তু, হলো কই! মুন ধীরে ধীরে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করল। সে বিদায় নিলো পৃথিবী নামক রঙ্গশালা থেকে। সেখানে স্বার্থ ছাড়া কেউ অন্যের কথা ভাবে না। মকবুলের পুরো শরীর মুনের রক্তে লাল হয়ে গেছে। সে খুব করে চাইতো মুনের ভালোবাসায় নিজেকে রাঙাতে। অথচ মুন নিজের রক্তে ওকে রাঙিয়ে চলে গেল। এই কাজটা মকবুল করল; তাও নিজের হাতে।ওই ছেলেগুলো অদূরে চুপ করে দাঁড়িয়ে সবটা দেখল। ওদের খারাপ লাগা অথবা কষ্ট কোনোটাই অনুভব হলো না। মায়ের সামনে ছেলেকে, বোনের সামনে ভাইকে, বউয়ের সামনে স্বামীকে মারার অভিজ্ঞতাও ওদের আছে৷ এসবে ওরা অভ্যস্ত। আর এখন অবধি ঠিক কতজনকে মেরেছে তারও হিসাব নেই। হিসাব করে কী হবে, ওরা হুকুমের দাশ! বৃষ্টি নেই, অনেকক্ষণ আগেই থেমে গেছে। ডোবায় থাকা ব্যাঙটাও আর ডাকছে না। কেমন জানি নিস্তব্ধ চারপাশ! তখন মকবুল কিছু না ভেবে নিজের গলাতে অস্ত্র ধরল। কিছু ভাবার ইচ্ছে আর শক্তি ওর কোনোটাই নেই। মুন তো মরে গিয়ে বেঁচে গেল। কিন্তু সে বাঁচবে কীভাবে? পারবে না বাঁচতে, কিছুতেই পারবে না! এই বিভৎস স্মৃতি’টা ওকে বাঁচতে দিবে না। তারচেয়ে বরং মরে যাওয়াও ভালো। এটাই সঠিক সিদ্ধান্ত! তখন ছেলেগুলো দৌড়ে গিয়ে ওর থেকে অস্ত্র কেড়ে নিলো।

তারপর মকবুলকে জঙ্গল থেকে বের করে গাছের সাথে বেঁধে রাখল। যাতে মকবুল নিজের ক্ষতি না করে। কারণ এখানে
কে কাকে মারল, এটা মূখ্য বিষয় নয়। ওদেরকে মারার হুকুম এসেছে, তাই ওদের মরতে হবে ব্যস! এর উপরে কথা নেই। আর দু’জনেই মারা গেলে দায় চাপাবে কার উপরে? একসঙ্গে দু’জন মরলে গ্রামে নানান ঝামেলা সৃষ্টি হবে। সবাই ভাববে, এখানে তৃতীয় ব্যাক্তির হাত আছে। আর এই ভুলটা মোটেও করা যাবে না। তাই ওরা একজনকে মৃত করে আরেকজনকে বাঁচিয়ে রাখল। এখন সব দোষ মকবুলের। এসব কাজে ওরা এতটা পরিপক্ব যে; পরবর্তী ব্যাপারটাও নিঁখুতভাবে সাজিয়ে ফেলে। মুনের ব্যাপারটা যেমনটা হতে যাচ্ছে। তখন মকবুল মুনের গলা পার করে করেনি, সেই অসমাপ্ত কাজটা মানিক সম্পর্ণ করল। মুনের গলা’টা এক কোপে আলাদা করে, দেহ আর গলা দুই জায়গায় রেখে অস্ত্র’টা মকবুলের খাটের নিচে রেখে আসল। ব্যস, নির্মম মৃত্যুর কাহিনী নিদারুন ভাবে চাপা পড়ে গেল। আর কেউ আন্দাজও করল না এসব কে বা কারা করেছে। নির্দোষ মকবুলের কঠিন শাস্তিরও আয়োজন করা হলো।
কিন্তু এই কাহিনী কৌতুহলবশত আরো একজন জেনেছিল।
সে কৌশল অবলম্বন করে’ই মকবুলের থেকে সম্পর্ণ ঘটনা’টা শুনেছে। আর সেই ব্যাক্তি হলো; ‘রোদ মেহবুব।’

-‘এলোকেশী কন্যা’-
[৩২]
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

“আপনি সত্যিই অপরাধী?”
রোদ প্রশ্নটা করল ওর সামনের ছেলেটাকে। রক্তাক্ত শরীরে গাছে বাধা অবস্থায় ছেলেটাকে বিদ্ধস্ত লাগছে। মুখে কষ্টের ছাপ স্পষ্ট। আর দু’চোখ থেকে ঝরে যাচ্ছে অজস্র অশ্রু। ছেলেটা অশ্রুসিদ্ধ চোখে বার বার একটা বাড়ির দিকে তাকাচ্ছে। আলোদের বাড়ি থেকে দুই বাড়ি পরের বাড়িটা। এই বাড়িতে আলো ডিম আনতে গিয়েছিল, রোদ দেখেছিল। হ্যাঁ, এটা মুনের বাড়ি। গলাকাটা লাশ পাওয়া গিয়েছিল ;ওর নাম তো মুন’ই ছিল। কিন্তু ছেলেটা ওই দিকে তাকাচ্ছে কেন? সে কী কাউকে খুঁজছে নাকি কারো কথা ওর মনে পড়ছে? সমস্যা’টা আসলে কী? তাছাড়া অপরাধীদের মুখে এতটা মনঃকষ্টের ছাপ থাকে? তারা এভাবে অশ্রু ঝরায়? কাতর চেখে কাউকে খুঁজে? কই এমন অপরাধীর কথা তো রোদ পূর্বে শুনে নি; দেখেও নি! তাহলে, ছেলেটা কিছু লুকাচ্ছে? হঠাৎ করে রোদের মনে এ প্রশ্নগুলো উঁকি দিলো। ওর কেন জানি মনে হচ্ছে; ছেলেটা নির্দোষ। নয়তো এর পেছনে একটা কাহিনী আছে। আলো তখন ছেলেটার নাম কী যেন বলল, হ্যাঁ মকবুল।
মকবুল মাথা নিচু করে নিলো রোদের করা প্রশ্নে। কথা কাটাতে সে বলল,
“কে আপনে?”
“রোদ মেহবুব, আলোদের বাসার মেহমান।”
“ওহ।”
“আমার উত্তর’টা?”

মকবুল অশ্রুসিদ্ধ চোখে একবার আকাশের দিকে তাকাল। এই
প্রশ্নের জবাব ওর জানা নেই। সে নিজের হাতে ওর ভালোবাসার মানুষটাকে মেরেছে; অপরাধী তো বটেই। শুধু অপরাধী’ই নয়, সাথে খুনী, পাপী, পাষাণ এবং নিষ্ঠুর হৃদয়ের মানুষ। মকবুলকে
নিশ্চুপ দেখে রোদের মনে সন্দেহের তীর আরো প্রবল হলো। সে নিশ্চিত; এখানে অদৃশ্য একটা প্যাঁচ আছে। যেটা কেউ খেয়াল করছে না। কিন্তু, কী সেটা? রোদের একটা উত্তম গুন হচ্ছে, সে খুব সহজে মানুষের পেট থেকে কথা বের করাতে পারে। একাজে সে বরাবর’ই পটু। তাও সেটা নিপুণভাবে বুদ্ধিমত্তার সাথে। হোক সেটা যুক্তি দেখিয়ে অথবা আবেগী করে। কার্যসিদ্ধি হলেই হলো!
এখন সে সেই পন্থায় অবলম্বন করতে যাচ্ছে। রোদ আশেপাশে বার দু’য়ের তাকিয়ে আন্দাজে ঢিল ছুঁড়ল,
“কাউকে বাঁচাতে চাচ্ছেন? চুপ থাকলে পরবর্তীতে সেই ব্যাক্তি বিপদে পড়বে না, আপনি নিশ্চিত তো? আমার কিন্তু এটা ভুল সিদ্ধান্ত মনে হচ্ছে। ভেবে দেখুন, আপনার সিদ্ধান্তে যেন কারো প্রাণনাশ না হয়।”
রোদের কথাটা মকবুলের মাথায় এতক্ষণে কাজ করল। তাই তো! আলোবু কী দাদীমার কাছে নিরাপদ? নাকি তাকেও মাশুল গুনতে হবে? দাদীমা স্বার্থের জন্য সব করতে পারে, এর প্রমান ওরা নিজেরাই পেলো। নাকি নিজের নাতনির বেলায় উল্টো কিছু ঘটবে! আলোবুকে কী সব জানাবে? কীভাবে জানাবে, আলোবু কী বিশ্বাস করবে? রোদ মকবুলের চিন্তিত মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলেটা কিছু ভাবছে; তারমানে কাজ হচ্ছে। সে নির্দোষ হলে রোদ তাকে অবশ্যই সাহায্য করবে। না পারলেও যথাসাধ্য চেষ্টা করবে। মকবুল মাথা তুলে রোদের দিকে তাকাল। দেখে মনে হচ্ছে; রোদ ওর থেকে বয়সে বড়। অচেনা মানুষটাকে বলা কী ঠিক হবে? তখন মাকবুলের ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে রোদ মুচকি হেসে বলল,

“আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন। আপনার কাজে আমি যথাসাধ্য সাহায্য করব।”
“আলোবু কে হয় আপনের?”
“তেমন কেউ না। তবে ওর কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ। কারণ ওর উপকারে আমরা বেঁচে আছি। ওর জন্য কিছু করার সুযোগ পেলে দ্বিতীয়বার ভাববো না।”
“আলোবু লে বাঁচাতে পালবেন? আলোবুর একটা ছত্য জানা খু্ব জলুলি(জরুরি)।”
রোদের ভ্রু দু’টি কুঁচকে গেল এর মধ্যে আলোর নাম’টা শুনে। সে আসল কোথা থেকে? সাথে রোদের কৌতূহল দ্বিগুন বেড়ে গেল।
রোদ আশেপাশে তাকিয়ে দ্রুত ওর ফোনের রেকর্ডার অন করল।
তারপর ফোনটা উল্টো করে খাড়া অবস্থায় মকবুলের শার্টের পকেটে ঢুকিয়ে পুরো ঘটনা বলতে বলল। এতক্ষণ দাঁড়ালে কেউ সন্দেহ করতে পারে । তাই রোদ মকবুলের থেকে অনেকটা দূরে সরে দাঁড়াল। মকবুল ধীর কন্ঠে মুখটা নিচু করে ধরা গলায় সব বলতে থাকল। বলা শেষে, মকবুল অশ্রুসিদ্ধ চোখে রোদের দিকে তাকাল। অর্থাৎ শেষ। রোদ এক পা বাড়িয়ে একটা মেয়েকে দেখে উল্টো পথে হাঁটা ধরল। মেয়েটা হেলেদুলে চলে গেলে, রোদ দ্রুত ফোন’টা নিয়ে বাড়িতে ঢুকে গেল। আর মকবুলকে ইশারায় দূর থেকে’ই আশ্বস্ত করল। মেঘ তখন আলোর সাথে রান্নাঘরে ব্যস্ত।

রোদ আলোর রুমে গিয়ে ইয়ারফোনের সাহায্যে পুরো’টা শুনল। আর শুনে হতভম্ব হয়ে ভাষা হারিয়ে ফেলল। ওর বোধগম্য হলো না, এখানকার মানুষগুলো এত নিষ্ঠুর কেন? এরা কেন স্বাভাবিক চিন্তা করতে পারে না? তবে রোদ তখনো আলোকে কিছু বলার সুযোগ পেলো না। এজন্য ঢাকায় ফেরার আগের দিন আলোকে বলেছিল,
-”আলো, ভালোবাসা এবং ভালোবাসার মানুষগুলো নিষ্ঠুর নয়। পরিস্থিতি তাদের নিষ্ঠুর হতে বাধ্য করে। ভালোবাসার মানুষ যেমন উন্মাদের মতো ভালোবাসতে জানে। তেমনি ভালোবাসা রক্ষার্থে নিষ্ঠুরের মতো আঘাত হানতেও পারে। যদি পারো তো মকবুলকে বাঁচিও। এটা তোমার কাছে আমার অনুরোধ অথবা চাওয়া, যা ইচ্ছে ভাবতে পারো। তবে আমি জোর দিয়ে বলছি, ওর জায়গায় আমি থাকলে আমিও হয়তো এটা’ই করতাম। মকবুলের প্রতি আমার ঘৃণা নয় বরং সন্মানটা দ্বিগুন হারে বেড়েছে। তুমি সাবধানে থেকো, আসছি।”

রোদ চাইলে তখনো সব বলতে পারত। কিন্তু আলো ওকে বিশ্বাস করত না। কেন করবে? না করাই তো স্বাভাবিক। তবে রোদ এই ঘটনা’টা কাগজের লিখে আলোর বালিশের নিচে রেখে এসেছিল। যাতে শুতে গেলে আলোর চোখে পড়ে। কিন্তু তেমন কিছু হয়নি! আলো রোদদের এগিয়ে দিয়ে জানালার পাশে বসে কেঁদে সময় অতিবাহিত করেছে। আর গভীর রাতে কিছু ভেবে মকবুলের সাথে দেখা করতে বেরিয়েছিল। দাদীমা পাশের রুমে ঘুমাচ্ছিল,
সে পরখও করেছে। রোদও মকবুলকে বাঁচাতে বলেছিল। এছাড়া আলোও চেয়েছিল, মুন নেই, মকবুলকে অন্ত্যত বাঁচার একটা সুযোগ দিতে। যে গেছে, গেছে। কিন্তু যে আছে তাকে তো সুযোগ দেওয়াই যায়। তার পাপকর্মের ফল নাহয় সময় দিবে। এসব ভেবে আলো মকবুলের বাঁধন খুলে চলে যেতে বলেছিল, সে সময়
মকবুল আলোর বাহু ধরে প্রচন্ড জোরে দূরে ধাক্কা দিয়েছিল। ওর
ধাক্কা সহ্য করতে না পেরে আলো মুখ থুবকে আছড়ে পড়েছিল। প্রচন্ড ব্যথায় কুকিয়ে উঠতেই, পাহাড়ের অর্ধেক ধসে আলোদের বাড়িসহ মকবুল গায়ের উপর পড়েছিল। গ্রামটাও মাটির নিচে ঢাকা পড়েছিল। বৃষ্টির কারণে মাটি’টা ছিল; কাদা মাটি। এজন্য ওজন’ও বেশি ছিল। হঠাৎ করে মাথার উপর মাটির স্তুপ পড়লে কারো পক্ষে’ই বাঁচা সম্ভব নয়। মকবুলও পারে নি। এক মানুষ সমান মাটির নিচে সে চাপা পড়েছিল।

একদিকে মকবুল, দাদীমা, আর অন্যদিকে মুনের মা। চোখের সামনে এসব থেকে আলোর তখন পাগলপ্রায় অবস্থা। পরিস্থিতি
ওকে যেন হতভম্ব করে দিয়েছে। কিছুক্ষণ আগে সে দাদীমাকে দেখে আসল, আর মকবুলকে কয়েক মিনিট আগে নিজের হাতে খাওয়ালো। ওর সঙ্গে কথাও বলছিল, আর মুনের মা! এ কয়েক মিনিটে কান্নার আহাজারিতে চারপাশ ভারী হয়ে উঠল। উফ! খু্ব কষ্টের মুহূর্ত! পুরো গ্রামে তখন হুলস্থুল কান্ড। কে কার দিকে তাকাবে; কারো’ই হুশ নেই। সবাই সবার আপনজনদের নিয়ে ব্যস্ত। কাকে ডাকবে, আর ওকে সাহায্য করবে? সেদিন আলো এর-ওর পায়ে ধরে সাহায্য নিয়ে অনেক কষ্টর তিন’টে লাশ খুঁজে পেয়েছিল। ততক্ষণে ভোরের আলো ফুটে গিয়েছিল। আলো তখন কাউকে জীবিত অবস্থায় পায় নি। ব্যাকুল হয়ে কেঁদেও উনাদের উঠাতে পারে নি। উনারা কেউ উঠে ওর মাথায় স্নেহের হাত বুলায় নি। সেই নিষ্ঠুর রাতে সে একসাথে তিনজন কাছের মানুষকে হারিয়েছে। তবে তখন মকবুল চাইলে দ্রুত সরে যেতে পারত, অথচ সে সরে নি। নিঃস্বার্থভাবে আলোকে সরিয়ে নিজে প্রাণ হারিয়েছে। ওর একাজে আলো মৃত মকবুলের পা ধরে, বার বার মাফ চেয়েছিল। সে চিৎকার করে কেঁদে মকবুলের পা ধরে বলেছিল,
“মকবুল ভাই, মকবুল উঠেন, আমাকে ঋণী করে যাবেন না।
এই ঋণের ভার আমি বইতে পারব না। মুন! মুন দেখ মকবুল ভাই কথা শুনছে না। ভাইকে উঠতে বল, মুন! মুন রে, ভাইকে
উঠতে বল! আল্লাহর দোহায় লাগে মকবুল ভাই উঠেন, দয়া করেন ভাই! আমাকে ক্ষমা করে একটাবার বলেন ‘আলোবু আর কেঁদো না।’ আমার প্রতি এতটা নিষ্ঠুর হবেন না, মকবুল ভাই!”

সেদিন আলোর অার্তনাদে উনাদের কারোর মন গলে নি। কেউ আলোর ডাকে সাড়া দেন নি। কিভাবে দিবে? মৃত মানুষটা সাড়া দিতে পারে না। মৃত দাদীমার লোকজন এসে দাফনে শরীর না হয়ে চলে গিয়েছিল। দাদীমার অবর্তমানে এখন উনাদের রাজত্ব। মাতবরও আলোকে তুলে নিয়ে যেতে উত পেতেছিল, শুধুমাত্র রোদের জন্য সম্ভব হয়নি। রোদ উনার এত সুন্দর পরিকল্পনায় পানি ঢেলেছিল। সেদিন ম্যানেজারের সাহায্যে ওরা রাঙামাটিতে যেতে পেরেছিল৷ মানবিকতার খাতিরে ম্যানেজার ওদের অনেক সাহায্য করেছিলেন। তাৎক্ষণিক একটা গাড়ি এবং রাঙামাটির রিসোর্ট উনার সাহায্যেই পেয়েছিল। এত সাহায্য পেয়ে, মেঘ ওর পাখিগুলোকে উনাকে দিয়ে এসেছিল। রোদও জানত, মাতবরের লোকেরা আলোকে খুঁজতে আসবে। তাই সে একমুহূর্তও ওখানে থাকে নি৷ তারপরের ঘটনা সবার’ই জানা। তবে এই অধ্যায়ের অনেককিছু অজানার ভিড়ে প্রায় চাপা পড়ে গিয়েছিলো। কিন্তু গতরাতে রোদ নতুন করে এই অধ্যায় খুলে বসেছে। সে ইচ্ছে করে স্বজ্ঞানে আলোকে মকবুলের রেকর্ড’টা শুনিয়েছে। যেটা সে যত্ন করে রেখেছিল, শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষায়।

তবে এই অবধি এসে প্রশ্নরা ভিড় জমিয়ে মস্তিষ্কে কড়া নাড়ছে।
রোদ কেন আলোকে জানাতে গেল? না জানলে ভালো হতো! উনারা বেঁচে নেই এখন জানিয়ে কী হলো? এখন জেনে শুধু কষ্ট পাবে আলো, তাহলে? এসবের একটা উত্তরই হতে পারে ‘সবার ভালোর জন্য।’
রোদ যথেষ্ট বিচক্ষণ একজন ছেলে, সে জেনে বুঝেই কাজটা করেছে। যাতে পরে এসব জেনে আলো অভার রিয়েক্ট না করে। ভুলেও যেন মকবুলের ভালোবাসার দিকে আঙুল তুলতে না পারে
, বান্ধবি রুপী বোনের শেষ পরিণতিতে আফসোস না করে, ওর মৃত দাদীমার কাজের জন্য আল্লাহর কাছে যেন দোয়ার মাধ্যমে ক্ষমা চাইতে পারে। সেই দোয়া যাতে দাদীমার আমলনামায় সব যোগ হতে পারে। আলো ছাড়া উনাদের জন্য দোয়া করার কেউ নেই। তাই আলোকেই উনার সব পাপ কর্মের মাপের জন্য দোয়া করতে হবে। সেই সাথে ওর জীবনে শিক্ষা নিতে পারে। জীবন কতটা কঠিন সেটা বুঝতে পারে। সম্পর্কের বন্ধন কেমন? নিজে যেন উপলব্ধি করতে পারে। নিঃস্বার্থ ভাবে কিছু করার সাহসটুকু অর্জন করতে পারে৷ ভালোবাসার মর্ম বুঝতে পারে। অনুভুতি কতটা গাঢ় হলো; প্রিয় মানুষের হাতে মরার ইচ্ছে পোষণ করে, এটা যেন সে অনুভব করার চেষ্টা করে। যাদের জন্য প্রত্যেক’টা ভালোবাসার মানুষের উপর ঘৃণার তীর ছুড়েছিল, তারাও ঠিক ভালোবাসার জন্য কতটা ত্যাগ স্বীকার করেছে। সে জেনে ভুলটা যেন সংশোধন করতে পারে। বন্ধুত্বে কতটুকু ভালোবাসা থাকলে, মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড়িয়ে মুন ওর কথা চিন্তা করেছিল। এসব কিছু ওকে জানতে হবে৷ ওকে একটু একটু করে সব বুঝতে হবে; ওই মানুষগুলো ওকে কতটা ভালোবাসত। দাদীমা কীভাবে ওর ছায়া হয়ে রক্ষা করেছিল। সবার কাছে খারাপ হলেও ওকে কতটা ভালোবেসেছিলেন।

মন ছাড়া মানুষ হয় না। এটা চরম সত্য! সম্পূর্ণ নিজের ভেবে প্রিয় মানুষটাকে ভালোবাসতে পারলে মন পূর্ণতা পায়। আর ভালোবাসাও এসে মনের কানায় কানায় পূর্ণ হয়। এসব ভেবে রোদ আলোকে সব জানিয়েছে। আর এমন ভাব করছে, যেন সে কিচ্ছু জানে না৷ যা বলেছে; বেহুশে জ্বরের ঘোরে। আসলে তা না! এটাই রোদের কাছে মোক্ষম সুযোগ মনে হয়েছ। এজন্য সে জ্বরের ঘোরে কাজটা সেরে ফেলল। হ্যাঁ, আলোকে এসব জানানো ওর দায়িত্ব ছিলো। সেই দায়িত্ব সে পালন করতে সক্ষম হয়েছে।
তবে এতকিছুর পরে রোদ বুদ্ধি খাঁটিয়ে আলোকে বিয়ে করতেও বাধ্য করেছে। যেটা আলোর বোধগম্য হয় নি। এর কারণ কেউ আলোকে পরিপূর্ণভাবে পাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করেছে। আলো যে তার অজান্তেই কারো মনে ভালোবাসার পুষ্প ফুটিয়েছে। সেই পুষ্পকে আগলে রাখলে, কেউ আলোকে খুব করে চাইছিল। তাও রোদের কাছে সরাসরি।

-‘এলোকেশী কন্যা’-
[৩৩]
লেখনীতে:- নূরজাহান আক্তার (আলো)

বর্তমানে,
রোদ আলোর কপালে আলতো করে আদর দিয়ে বলল,
“আছি তো আমি।”
একথা শুনে আলো রোদের হাতটা আঁকড়ে ধরে শব্দ করে কাঁদতে লাগল। সে কি বলবে? কার দিকে আঙ্গুল তুলবে? সবাই ওর জন্য নিঃস্বার্থ ভাবে করে গেছে৷ মুন, মকবুল,আর দাদীমা, এই তিনজনেই ওকে ঋণের দায় চাপিয়ে চলে গেছে। ওর অজান্তে এতকিছু ঘটে গেছে অথচ সে টেরও পায়নি।এ ধাক্কা সে সামলাবে কীভাবে? আদৌও কী সামলে উঠতে পারবে? আলো পুরো কাহিনী জেনে হতভম্ব, নির্বাক, এবং কষ্টে কাতর মানবী। ওর বাকশক্তি যেন লোপ পেয়েছে।ওর মস্তিষ্কটাও
যেন বাক্য গঠন করতে অক্ষম। শরীরটাও ধীরে ধীরে হাল ছেড়ে অকেজো হয়ে আসছে। আলোর অবস্থা দেখে রোদ দ্রুত পানি খাইয়ে একটু শান্ত করল। আলোর রোদের হাতটা আঁকড়ে ধরে চুপ
বসে রইল। রোদ আলোর অশ্রু মুছে চোখে চোখ রেখে বলল,
“এভাবে ভেঙ্গে পড়লে হবে, হুম? আমরা আছি না! আমাদের জন্য বাঁচবে তুমি। তোমার অশ্রু যে আমাকেও কষ্ট দিচ্ছে।”
লালবর্ণ ভেজা চোখে আলো মুখ তুলে তাকাল। রোদ শান্ত দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।ওর
যেন আলোকে কতশত অজানা কথা জানাচ্ছে।

এই মানুষটা ওর জন্য কত কী না করে যাচ্ছে।সে এখন এই মানুষটার অর্ধাঙ্গীও। অর্থাৎ শরীরের অর্ধেক অংশ। আর এই রোদ নিজে থেকে ওকে দিয়েছে। আলো জবাবে কিছু বলার আগে,মেঘ ড্র্রয়িংরুমে বসে ডোরাকেক খেতে খেতে আলোকে ডেকে উঠল৷ আলোর সাড়া না পেয়ে সে পুনরায় ডাকল। রোদ তখন চেঁচিয়ে উত্তর দিলো,
“মেঘ, তোমার বউমনি একটু পরে আসছে।”
“না, এখনই আসতে বলো। আমি আর বউমনি ফুল কুড়াতে যাব।”
একথা শুনে রোদ বেশ বিরক্ত হলে আলো ওকে থামাল। আলো জানে, সে না গেলে মেঘ থামবে না।মেঘ আজ স্কুলে যাবে না অগ্রিম জানিয়েছে। মারামারির পরেরদিন স্কুলে যায়; বোকারা! মেঘ সেক্ষেত্রে মোটেও বোকা নয়।সে যথেষ্ট বুদ্ধিমান! জেনে শুনে বাঁশ খেতে সে ইচ্ছুক নয়।যদিও এই
কাজের পেছনে মূখ্য একটা কারণও আছে।গত কাল ছুটির পর মেঘ সাদমানকে ভালো ‘ই মার মেরেছে, মন্দ মারে নি! এই যেমন ধাক্কা দিয়ে ফেলে দাঁতের রক্ত বের করে দিয়েছে। চুল ধরে টেনে মাটিতে ফেলে শার্টের দু’টো বোতাম ছিঁড়ে দিয়েছে। মুখের মধ্যে বালু ঢুকিয়ে একটা থাপ্পড় মেরেছে। সবশেষে ওর পায়ের মোছা খুলে মোছার গন্ধ শুকিয়েছে। কারণ সাদমান ওকে সব সময়
খোঁচা মেরে বলে, ‘সে নাকি এতিম! ওর বাবা-মা কেউ নেই।রাস্তার টোকাইদের বাবা-মা থাকে না। মেঘও নাকি টোকাইদের মতো রাস্তার ছেলে।সে
রাস্তায় ছেলের পাশে বসবে না।’

একথা শুনে মেঘ রেগে সাদমানকে উচিত শিক্ষা দিয়েছে। সেই সাথে এটাও বলেছে;’বাসায় এসব
জানিয়ে,দাভাইকে অভিযোগ দিলে আরেকদফা দিবে, সাথে বাথরুমের বদনার পানি খাওয়াবে।’
সাদমান কাউকে বলবেনা তবুও মেঘ রিস্ক নিলো না। সাবধানের মাইর নেই। একথা সে রোদকেও জানাবে না। কারণ ওর সমস্যা’টা তো সমাধান হয়েই গেছে। এখন জানিয়েই বা কী হবে? দেখা যাবে ;সেই উল্টো বকা খাবে। আলোকে এখনো আসতে না দেখে, মেঘ শুয়ে গানের সুরে ডাকতে লাগল,
“বউমনি! ওহ বউমনি! এসো, এসো, তাড়াতাড়ি এসো। আর আমাকে ফু ফু ফুল কু কু কুড়াতে নিয়ে চলো গো।”
এসব বলে সে একা একাই বকবক করছে। মুখটা থামলেই যেন ঘোর বিপদ। রান্নাঘরে রাকা আর সাগর দাঁড়িয়ে ওর গান শুনে হাসছে৷ যাকে বলে জখা গান। আলো তখন নিজেকে সামলে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামল। ওর যে এখন অনেক দায়িত্ব, অনেক! যেমন এই দুষ্টুটার ওকে ছাড়া চলবে না।

ওকে খুঁজে না পেলে চিৎকার করে বাড়িটা মাথায় তুলবে। জ্বরের মানুষটার সামনে কাঁদলে সে কষ্ট পাবে। কী দরকার শুধু শুধু ওদের কষ্টের পাল্লা ভারী করার।ওর চিন্তা-চেতনা দু’জনকে ঘিরে’ই ৷ বলা যায়; রোদ আর মেঘ ওর জীবনের প্রদীপ।
যাদের উৎসাহে বার বার হোঁচট খেয়ে দাঁড়ানোর সাহস অর্জন করে। কষ্টগুলোকে বিতারিত করে ওকে হাসতে বাধ্য করে। সর্বদা ওকে আগলে রাখে।তাছাড়াও আলো দু’টো পরিচয়ে পরিচিত; একজনের বউমনিরুপী মা আর আরেকজনের প্রণয়রুপী অর্ধাঙ্গী হয়ে।এই দায়িত্ব ওর কাঁধে। আর এই দায়িত্বের দীর্ঘ মেয়াদ উত্তীর্ণ হবে, শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের পূর্ব মুহূর্তে।এদের পাশে পেলে সে সব ঝড় সামলে উঠতে পারবে।ওর বিভৎস অতীতকে ঢেকে পুনরায় বাঁচতে পারবে।পারতে ওকে হবেই! কষ্টে ভেঙ্গে চুরে চুর্ণ-বিচূর্ণ হয়েও পুনরায় বাঁচতে শিখলে সে মেয়ে হিসেবে স্বার্থক। কারণ একটা মেয়েই পারে ভাঙা জিনিস জোড়া লাগিয়ে নতুন রুপ দিতে। হয়তো দাগটা থেকে যায় তবুও মানিয়ে নেওয়া যায়। কারণ,মানিয়ে নেওয়া, ত্যাগ, সহ্য, ধৈর্য, যন্ত্রনা, এবং কষ্টের লড়াইয়ে আরেক যোদ্ধার নাম ‘মেয়ে।” অর্থাৎ ওর জীবন যুদ্ধের যোদ্ধা সে নিজে।
আলোকে আসতে দেখে মেঘ উঠে সোজা হয়ে বসে মিষ্টি হাসল। তবে আলোর মুখ মেঘের ভ্রু কুঁচকে গেল। বউমনির মুখ, চোখ, নাক লাল হয়ে আছে। নিশ্চয়ই দাভাই আবার বউমনিকে বকেছে। ওর তাকানোর মানে বুঝে আলো হেসে বলল,
“সর্দি লেগেছে মেঘবাবু তাই।”
”নাকি দাভাই বকেছে?”

“না তোতাপাখিটা। তোমার দাভাইয়ের খুব জ্বর এসেছিল, এখনো আছে। যাও, দাভাই তোমাকে ডাকছে।”
আলোর বলতে দেরী মেঘের ছুটতে দেরী হয় নি। আলো মেঘকে আস্তে যেতে বলে খাবার নিয়ে উপরে গেল।রোদের জ্বর সারেনি, এখনো শরীর গরম। সে রুমেই শুয়ে আছে। মেঘ দৌড়ে গিয়ে
রোদের কপালে হাত দিয়ে জ্বর পরীক্ষা করল। তারপর ছলছল চোখে দাভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
“এত্ত জ্বর কী করব আমি? কী করলে জ্বর কমবে দাভাই?”
মেঘের চিন্তির মুখে দেখে রোদ মৃদু হাসল।পুঁচকে মেঘটার এত পাকা পাকা কথা। রোদ মেঘের হাত ওর মাথায় রেখে চুল টানতে বলল। তাহলে জ্বর কমে যাবে।মেঘ রোদের কপালে আদর দিয়ে চুল টানতে থাকল। রোদও মেঘকে আদর দিয়ে চিন্তা করতে নিষেধ করল। একটুপরে আলো খাবার এনে দু’জনকে খাওয়াতে বসে বলল,
“যে খাবে না বলবে তাকে আমি লাল পিঁপড়ার সঙ্গে বিয়ে দিবে।”
আলো ওদের মুখ দেখে মিটিমিটি হেসে দু’জনকে খাওয়াতে লাগল। রোদ মেঘও একে অপরের দিকে একবার তাকিয়ে চুপ করে খেতে থাকল। মেঘ লাল পিঁপড়া বিয়ে করতে ইচ্ছুক নয়। সবাই ওকে পিঁপড়ার বর বলবে।ছিঃ! কী বিশ্রী একটা ব্যাপার। আর রোদ আলোর হাতে খাওয়া মিস করতে রাজি নয়। মেঘের মুখ দেখে আলো হেসে বলল,
”খেয়ে ওষুধ খেলেই দাভাইয়ের জ্বর কমে যাবে। চিন্তার কিছু নেই মেঘবাবু।”
”আচ্ছা।”

রোদ আর মেঘ গল্প করতে লাগল। আর আলো ভাবনার জগতে পাড়ি দিলো,
ওর জানামতে, দাদীমা বরিশাল জেলার মেয়ে। বিয়ের পরও উনি সেখানে দীর্ঘদিন শিক্ষকতায় নিয়োজিত ছিলেন। বিয়ের একবছর না গড়াতেই
উনার স্বামী রেজা শেখ মারা যান। আর স্বামীর অবর্তমানে উনি শশুড়বাড়িতেও টিকতে পারেন নি। মূখ্য কথা টিকতে দেয় নি। বাবার বাড়িতেও ঠাঁই হয় নি। গ্রামের মানুষের কটু কথা আর বদ নজর থেকে বাঁচতে ঢাকায় চলে আসেন। বাচ্চা
নেই, খেয়ে পরে একা বাঁচতে গার্মেন্টের কাজে যুক্ত হন। শিক্ষিক মহিলা বিধায় উনার ভালো পদে চাকরিটাও হয়। কিছুদিন পর, কারো সূত্র ধরে রাঙামাটিতে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। আলো উনার নিজের নাতনি নয়, এটা আলোও জানে। তবে আলোকে উনি কোথায় পেয়েছেন? একথা দাদীমা বলেন নি আর সেও জোর করে নি। প্রথমে একথা জেনে কষ্ট পেলেও দাদীমার আদর পেয়ে মানিয়ে নিয়েছে।গতরাতে
আলো সব জানার পর এটাও বুঝেছে ;দাদীমা গোপনীয় কোনো কাজে যুক্ত ছিলেন। এজন্য মানুষ মারার ভয়ংকর কাজেও পিছু পা হতেন না। কিন্তু কী সেই কাজ? কীভাবে করবে রহস্য উন্মোচন? কে জানাবে সত্যিটা? এসব ভাবনার ছেদ ঘটিয়ে আলো মেঘের দিকে তাকাল। মেঘ রোদকে প্রশ্ন করল,
”দাভাই, ওই দুষ্টু মানুষগুলো আমাদেরকে না মেরে ছেড়ে দিয়েছিল কেন?”
হঠাৎ একথা শুনে রোদের ভ্রু দু’টো কুঁচকে গেল।মেঘ রোদের ফোনে কার্টুন দেখছে। সেখানে মটু -পাতলু জঙ্গি সেজেছে। ওদের পোশাকে দেখে মেঘের সেদিনের কথা মনে পড়ে গেছে। আলোও সেদিনের ঘটনার কথা জানে।হঠাৎ রোদ আদর চেয়েছিল কেন? এটা ভেবে আলোর মনে ভুল ধারণা সৃষ্টি হতে পারে। তাই রোদের জ্বর কমলে নিজেই সব বলেছিল। ওদের তিন’জনের মাথায়
একটা প্রশ্ন কড়া নাড়ল,

এলোকেশী কন্যা পর্ব ২৮+২৯+৩০

“জঙ্গিরা ওদের না মেরে ছেড়ে দিয়েছিল কেন?”
ওদিকে মাতবরের গ্রামে অঘটন যেন পিছু ছাড়ছে না। পূর্ণির ছোঁড়া সেই অস্ত্রের কোপে মাতবরের করুণ অবস্থা। সেই স্থানে পঁচন ধরে;বিশ্রী গন্ধ ছড়াচ্ছে। কেউ উনার কাছে ঘেঁষতেও পারছে না।হাকিম আজ চিকিৎসার সময় খেয়াল করেছেন
;মাতবরের ক্ষতস্থানে পোকা কিলবিল করছে।এ কথা উনি কাউকে জানান নি। ধীরে ধীরে উনার
হাতের সাথে পুরো শরীরেও পঁচন ছড়িয়ে যাচ্ছে। হাকিম সর্বোচ্চ চেষ্টা করেও ঠেকাতে পারছে না। তবে ধারণা করা যাচ্ছে, ওই অস্ত্রে বিষাক্ত কিছু ছিলো। নাহলে এমন হওয়ার কথা না। হাকিমের এই ধারণা একদম নির্ভুল! পূ্র্ণি যার থেকে অস্ত্র নিয়ে ছুড়েছিল,সে ওই অস্ত্র দিয়ে’ই বিষাক্ত কিছু গাছ এবং পাহাড়ি জঙ্গল পরিষ্কার করেছিলেন।ওই জঙ্গলের ঝোঁপে বিষাক্ত পোকা- মাকড়ের বাসা ছিল। এছাড়া ওই লোক আসার পথে অস্ত্র দিয়ে একটা সাপের মাথায় কোপ বসিয়েছিলেন।

সাপটার বিষাক্ত এবং পেটে বাচ্চা ছিলো। কোপে ছটফট করতে করতে সাপটা মারা যায়। লোকটা অকারণে সাপটা মেরেছিলেন।এসব বিষাক্ত বিষ মাতবরের শরীর প্রবেশ করে শোচনীয় অবস্থা।ওই বিষগুলো উনার শরীরে পঁচনের সাথে সাথে শরীর কালচে হয়ে রক্ত চলাচলও অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। মাতবরের ছটফটাছফানি কান্না সহ্য করার মতো না।
কথায় আছে, সৃষ্টিকর্তা ছাড় দেন ছেড়ে দেন না। হয়তো এজন্য প্রকৃতির বিষ ঘুরে ফিরে মাতবরের শরীরে। নয়তো এমন হওয়ার কথা তো ছিল না।
এছাড়াও গত দুইদিন থেকে মতির খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। কলার গাছ কাটতে গিয়ে আর ফিরে নি। দলবল হন্ন হয়ে খুঁজেও তার খোঁজ মিলছে না। কোথায় গেছে, কে জানে! তবে ওখানকার অনেকে মোনাজাতে বসে কেঁদে মন থেকে দোয়া করছে,
“পাপ এবং পাপের চারা দু’টোই যেন নিঃশেষ হয়।”

এলোকেশী কন্যা পর্ব ৩৪+৩৫+৩৬