কহিনুর তৃতীয় খণ্ড গল্পের লিংক || লাবণ্য ইয়াসমিন

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ১
লাবণ্য ইয়াসমিন

অরিত্রীর গৃহ পরিচারিকা মেয়েটা ফুটফুটে একটা কন্যার জন্ম দিয়ে যখন অসহনীয় যন্ত্রণায় ছটফট করছিলো ওর স্বামী গালিব রেজা ফিসফিস করে বলল,

অরু আমরা ইচ্ছে করলেই এই শিশু কন্যার বাবা মা হয়ে যেতে পারি। আল্লাহ চেয়েছেন বলেই না এই মেয়েটা আমাদের বাড়িতে এসেছে। ওর পরিচয় জানিনা তাই ভবিষ্যতে এই শিশুর কেউ দাবিদার আসবে না। কেউ ওকে খোঁজ করবে না।এর চেয়ে ভালো আর কিবা হয়?জানিনা মেয়েটার আদো বিয়ে হয়েছিলো কিনা। গৃহ পরিচারিকার সঙ্গে অন্যায় করতে মানুষের খুব একটা সাহসের প্রয়োজন হয়না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মেয়েটা আগুন সুন্দরী এমন মেয়েকে দেখে যেকোনো পুরুষের মাথা খারাপ হবে সন্দেহ নেই। আমি সিউর এই মেয়ের সঙ্গে কেউ খারাপ কিছু করেছে। তাই আমি যা বলবো তুমি না করো না প্লিজ।
গালিবের কথা শুনে অরিত্রীর বুকের মধ্যে অজানা আতঙ্কে ধক করে উঠলো।লোকটা কি বলতে চাইছে ও বুঝতে পারছে না। অন্য একজনের বাচ্চা কিভাবে ওদের হবে? দীর্ঘ দুই বছরের সংসারে একটা বাচ্চার জন্য হাহাকার করা বেশ হাস্যকর বিষয়। তবুও গালিব এই বাচ্চার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে।

অরিত্রী বন্ধা সন্তান জন্মদানে অক্ষম। সবটা জেনেও ওকে নিজের করতে দুবার ভাবেনি গালিব। ভালোবাসার কাছে ওসব তুচ্ছ। সন্তান সুখ থেকে বঞ্চিত থেকেও গালিব কখনও অসুখী ছিল বলে ওর মনে হয়নি তবে আজ কিসের এতো ছটফটানি? জার্মানির মতো রাষ্ট্রে ওরা বসবাস করছে। গালিব এখানকার সরকারি হাসপাতালের বড় একজন ডাক্তার। এই দম্পতির ঘরে ঐশ্বর্যের অভাব নেই। সুখ আছে কিন্তু পূর্ণতা নেই। আফসোস একটা থেকেই যায়। ভেবেছিলো নিকটস্থ কোনো আত্মীয় বা এতিমখানা থেকে বাচ্চা দত্তক নিবে কিন্তু গালিব তেমন সাড়াশব্দ করেনি। অরিত্রী কিছু একটা ভেবে বলল,

কি করতে চাইছ তুমি ? মেয়েটা নিজের বাচ্চা আমাদের কেনো দিবে?
গালিব পাশ থেকে কিসের একটা ইনজেকশন বের করে মেয়েটার ডান হাতে দিতে দিতে বলল,
বাবা মা ছাড়া এতিম শিশুটির জন্য একটা ভালো পরিবার দরকার অরু। ওকে আমরা দুজন সন্তানের মতো মানুষ করবো। কখনও ওকে বাবা মায়ের অভাব বুঝতেই দিব না। ও কখনও জানবে না ওর জন্ম কোনো সাধারণ গৃহ পরিচারিকার গর্ভে হয়েছে। পৃথিবীর কাছে আজকের এই কাহিনী সারাজীবনের জন্য গোপন থাকবে।

গালিব ইনজেকশন শেষ করে বাচ্চাটার দিকে তাঁকালো। অরিত্রী যা বোঝার বুঝে নিয়েছে তাছাড়া ওকে হাতে কলমে বোঝানোর কিছু নেই। মেয়েটা বুদ্ধিমতি ঠিক বুঝে যাবে। জীবনে কিছু পেতে হলে হালকা ছল চাতুরীর দরকার আছে। কথাটা ভেবেই ও বাচ্চাটার মুখে হাত ছোঁয়ালো তৎক্ষণাৎ অরিত্রী চাপা কণ্ঠে দাঁতে দাঁত লাগিয়ে বলল,

সামান্য একটা বাচ্চার জন্য একটা প্রাণ নিতে তোমার বিবেকে বাঁধছে না গালিব? ছিঃ এতো জঘণ্য তুমি? কেনো এমন করছো বলবে? আমরা চাইলে কোনো বাচ্চার দায়িত্ব নিতেই পারি তবে খু/নখারাপি করে না। ওর মায়ের দোষটা কোথায় বলবে? ওকে কেনো ইনজেকশন দিলে উত্তর দাও?

অরিত্রী রেগে গেছে বুঝতে গালিবের অসুবিধা হয়নি। তবুও ওর কিছু করার নেই। এই বাচ্চাটাকে ওর যেকোনো মূল্যে চাই। এই শিশুর জন্য ও একটা নয় অহরহ অন্যায় করতে পারে চোখ বন্ধ করে। একে ওর চাই মানে চাই। নিজের মন মর্জি আজ নিজের বশে নেই। কেউ অদৃশ্য থেকে ওকে নিয়ন্ত্রণ করছে। নির্জনতা কাটিয়ে ফ্লরে পড়ে থাকা মেয়েটা জার্মান ভাষায় বলে উঠলো,

ধন্যবাদ সাহেব। অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
কথাটা বলতে বলতে মেয়েটা মাথা সোজা করে ফ্লরে শুয়ে পড়লো। হাতটা মৃদু মৃদু কাঁপছে কিন্তু মেয়েটার মুখে রহস্যময় হাসির ফোয়ারা এসে ভীড় করেছে। এতো হাসির কি আছে গালিব বুঝতে পারলো না। বোরখা দ্বারা আবৃত শরীর শুধুমাত্র মুখটা দেখা যাচ্ছে। সাদা ফর্সা মুখটা কেমন ফ্যাকাশে লাগছে। কিছুক্ষণের মধ্যে প্রাণ ত্যাগ করবে বোঝা যাচ্ছে কিন্তু মেয়েটা সবটা জেনেও ওর মুখের হাসি কেনো?

মেয়েটা এতোক্ষনে জানতে পেরেছে গালিব ওকে সাধারণ কোনো ইনজেকশন না বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়ে মেরে ফেলতে চেয়েছে তবুও কেনো হাসছে? অরিত্রীর মন খচখচ করছে। ওর কোলে থাকা শিশুর ছোট্ট হাতের মুঠোয় ওর আঙুল মুষ্টিমেয় করে রাখা আছে। মনে হচ্ছে বড্ড ভরসা করে ধরে আছে। অরিত্রী বাচ্চাটাকে ন্যায় দিয়ে পারলো না। তার আগেই গালিব ওকে চিরতরে এতিম করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।

মেজাজ খারাপ হচ্ছে ওর। অরিত্রীর মাথায় হঠাৎ ভয়ংকর চিন্তার উদয় হলো। মনে হলো এই মেয়েটার সঙ্গে গালিবের অন্যরকম কোনো সম্পর্ক নেইতো? হতে পারে এটা গালিবের কোনো গার্লফ্রেন্ড। ও বাচ্চার জন্য অজ্ঞাত কোনো মেয়েকে ফাঁসিয়েছে তারপর এখন তাকে মেরে ফেলতে চাইছে। হতেই পারে কিন্তু গালিবের এতোদিনের ভালোবাসার প্রতি সন্দেহটা ঠিক আসছে না। ভোতা এক যন্ত্রণা ওকে দম আটকে দিচ্ছে।

মা হতে না পারার যন্ত্রণা এতোদিন যতটা না যন্ত্রণা দিয়েছিলো তার থেকে দ্বিগুণ কষ্ট আজ হচ্ছে। বাচ্চার জন্য স্বামীকে আজ খারাপ পথে নামতে হচ্ছে নিজেকে ছোট লাগছে। এতোটা লোভ গালিবের মধ্যে ছিল কখনও ভাবতে পারেনি। অরিত্রীর ভাবনার অবসান ঘটলো মেয়েটার কাতর কন্ঠের রিনরিনে শব্দে। মেয়েটা হাসতে হাসতে গালিবের দিকে তাঁকিয়ে বলল,

ওপারে দেখা হবে। হাসরের দিন আপনিও আমার আসামী হবেন। তার আগে দুনিয়ার হিসেব চুকিয়ে ফেলুন আপনার জন্য শুভকামনা।
কথাটা বলতে বলতে মেয়েটা হাসি মুখেই চোখ বন্ধ করলো। কি পবিত্র সেই মুখখানা। অরিত্রী এমন সুন্দর মেয়ে আগে কখনও দেখেছে কি মনে পড়লোনা। মাস দুয়েক আগে এক তুষারপাতের বিকেলে এই মেয়েটাকে বাড়ির বাইরে থেকে কাজের মেয়েটা নিয়ে এসেছিলো।

বোরখা দ্বারা আবৃত্ত শরীরের জন্য মেয়েটার বয়স বা চেহারা ভালো অনুমান করতে পারেনি। তাছাড়া এই বাড়ির সব সদস্যরা রোজার ঈদ সামনে রেখে বাংলাদেশ ঘুরতে গেছে। আসবে একবারে কোরবানির পরে। গালিব ডাক্তার মানুষ হাসপাতালের রুগী রেখে তার যাওয়া অসম্ভব ছিল তাই অরিত্রীরও যাওয়া হয়নি। বাড়িতে বেশ কিছু কাজের মানুষ আছে যাদেরকে বাংলাদেশ থেকে বা এজেন্সি থেকে আনা হয়েছে।

হঠাৎ একটা মেয়েকে এমন অসহায় দেখে অরিত্রী ওকে কাজে রেখেছিল। তবে খোঁজ নিতে পারেনি। প্রায় সময় ওকে ইউনিভার্সিটিতে থাকতে হয়। পিএইচডি শেষ হয়েছে। আপাতত শিক্ষক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতেই কিছুটা ব্যস্ত। গালিব যা করার করে ফেলেছে কিন্তু এই লা/শ কিভাবে লুকিয়ে রাখবে মাথায় আসছে না। জার্মানির আইন কানুন সম্পর্কে ওর ধারণা আছে।

একবার যদি বাইরে এই লা/শ নেওয়া হয় তবে সবটা সামনে চলে আসবে। স্বামী যতই অন্যায় করুক একজন স্ত্রী কিছুতেই তাকে ফাঁসিকাঠে ঝুলিয়ে দিতে পারেনা। অরিত্রী কাঁপা কাঁপা হাতে মেয়েটার পালস চেক করে থমকে গেলো। মারা গেছে। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম সঙ্গে ঘনঘন নিশ্বাস ফেলে ও নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলো। বাইরে জানাজানি হলে জেলে যেতে হবে।কান্না পাচ্ছে ভয়ে। ওকে ঘাবড়ে যেতে দেখে গালিব গম্ভীর কন্ঠে বলল,

ওকে আমি কোনো বিষাক্ত ইনজেকশন দিয়ে মারিনি অরু তবে দিতে চেয়েছিলাম। আমি ব্যাথা কমানোর জন্য ইনজেকশন দিয়েছি। পুলিশ আসলে কিছুই হবে না।ভয় কেনো পাচ্ছো? আমাকে কি তোমার খুনি মনে হয়? মেয়েটার অবস্থা ভালো নেই যখন তখন মারা যাবে দেখেই আমি কথাগুলো বলেছি আর তুমি আজেবাজে চিন্তা করে ফেলেছো? আমাকে কি তোমার খুনি মনে হয়? আমার প্রতি তোমার এহেন বিশ্বাস কিভাবে অরু?

গালিবের কথা শুনে অরিত্রীর কপালে চিন্তার ভাজ পড়লো। গালিবের কথার মধ্যে রহস্য খেলা করছে। কিছুক্ষণ আগে যখন ওকে খু/নি বলা হলো তখন মেনে নিলো। ইনজেকশন সম্পর্কে কিছুই বলেনি অথচ এখন কি সুন্দর করে মিথ্যা বলে দিলো। অরিত্রী আর ভাবতে পারছে না।যায়হোক হয়েছে এখন এই লা/শের একটা ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যদিকে গালিব পকেট থেকে ফোন বের করে হাসপাতালে ফোন করবে বলেও থেমে গেলো।

বাচ্চাটার কথা জানাজানি হলে ঝামেলা আছে। বাচ্চা এতিমখানাতে দিয়ে তবে দত্তক নিতে হবে। অনেক ঝামেলার কাজ। যেহেতু এই মেয়ের পরিচয় কেউ জানেনা সেহেতু এই লা/শ গুম করতে খুব একটা অসুবিধা হবে না। বাড়িতে কাজের মানুষ আছে ওরাই সাহায্য করবে। কথাটা ভেবে ও মেয়েটার মুখের উপরে কাপড় বিছিয়ে দিয়ে অরিত্রীকে নিয়ে বেরিয়ে আসলো। এখানে থাকার কোনো মানেই হয়না। বাচ্চাটা চুপচাপ ঘুমিয়ে আছে। নড়াচড়া করছে না। গালিব বাচ্চাসহ অরিত্রীকে কক্ষে রেখে কাজের লোকদের সঙ্গে কথা বলে মেয়েটার কক্ষে গিয়ে হতভম্ব হলো।

সেখানে কোনো লা*শ নেই।তবে বন্ধ জানালা খোলা। মেয়েটার গায়ের উপরে রাখা সাদা কাপড়টা ফ্লরে পড়ে আছে। মনে হচ্ছে কেউ লা/শ টেনে নিয়ে জানালার দিকে এগিয়ে গেছে কিন্তু কে করলো এমন? গালিবের গলা শুকিয়ে আসছে। মাথা ঘুরছে। বেশিক্ষণ ও এই কক্ষে অবস্থান করতে পারলো না। দ্রুত বেরিয়ে আসলো। বাড়ির আশেপাশে খুঁজেও মেয়েটাকে পাওয়া গেলো না। মনের মধ্যে হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে কিন্তু উত্তর জানা নেই।

মেয়েটা কোথা থেকে আসলো আর কোথায় চলে গেলো সবটা রহস্য থেকে গেলো। গালিব শিক্ষিত মানুষ তাই নিজের মতো উত্তর খুজে নিলো। মেয়েটা হয়তো মরার অভিনয় করে বাচ্চা রেখে পালিয়ে গেছে তবুও প্রশ্ন একটা থেকেই যায়। অরিত্রী আপাতত অন্য কিছু ভাবছে না। যেভাবেই হোক মা হতে পেরেছে। ছোট্ট একটা পিচ্চি দুদিন পরে ওকে মা বলে ডাকবে এর চেয়ে খুশির কিবা আছে। বাচ্চাটাকে ও নিজের সবটা দিয়ে মানুষ করবে।

গভীর রাত বাইরে ভারি বর্ষণ চলছে। জানালার কাচে বৃষ্টির ফোঁটা এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে। কক্ষের বাইরে এক পরিচারিকা বসে আছে। অরিত্রী মেয়ের মুখের দিকে তাঁকিয়ে আছে। ফুটফুটে বাচ্চাটার মুখে মায়া জড়ানো কেমন হৃদয়ে গিয়ে লাগে। কি নাম রাখবে ওর মাথায় আসছে না। মেয়েটাকে ও বুকের সঙ্গে জড়িয়ে নিয়ে চোখ বন্ধ করতেই ফোনটা বেঁজে উঠলো। অরিত্রী বিরক্ত হয়ে ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে গমগমে আওয়াজে বলল,

মিসেস গালিব রেজা আপনার স্বামী অসুস্থ দ্রুত হাসপাতালে আসুন। উনি ব্রেন স্টোক করেছেন।
অরিত্রীর হাত কেঁপে উঠলো। দ্রুত ও মেয়েকে পাশে রেখে বেরিয়ে পড়লো। কাজের মেয়েকে বলে গেলো ওকে দেখে রাখতে। আল্লাহ একদিকে সন্তান প্রাপ্তির আনন্দ দিলেন অন্যদিকে স্বামী হারানোর বেদনা । কিভাবে অরিত্রী সবটা সামলাবে বুঝতে পারলোনা। দ্রুতগতিতে হাসপাতালে গিয়ে অবাক হলো। সুস্থ মানুষ সকালে হাসপাতালে এসেছিল এর মধ্যেই অসুস্থ মানতে পারছে না।

হাসপাতালের প্রধান ডাক্তার উনি ভালো করে দেখেছেন। স্টোকের জন্য লোকটার এক সাইড প্যারালাইজড হয়ে গেছে। খুব সম্ভাবনা রয়েছে মানুষিক ভারসাম্য হারিয়েছে। অরিত্রী থপ করে বসে পড়লো। নিজের ভালোবাসার মানুষের এমন পরিণতি ও মানতে পারছে না। গলা শুকিয়ে আসছে। শব্দ করে কাঁদলো। আশেপাশে অনেকেই ওকে চিনে। গালিবের চাকরির সুবাদে ও এখানে প্রায় আসে। অনেকেই সান্ত্বনা দিচ্ছে।

গালিবের জ্ঞান নেই। ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশে ফোন করেছে বাড়ির বাকিরা দ্রুতই চলে আসবে। এতো কিছুর মধ্যে হঠাৎ অরিত্রীর মনে হলো সবকিছু ওই শিশুর জন্যই হয়েছে। মেয়েটা নিশ্চয়ই অশুভ। নয়তো বাড়িতে আসতে না আসতেই এমন বিপদ কেনো আসবে? ও কিছুতেই এই শিশুকে নিজের কাছে রাখবে না। দৌড়াদৌড়িতে হাসপাতালে কেটে গেলো দু’দিন।

তবে এই দু’দিনে অরিত্রী চিন্তার পরিবর্তন ঘটেছে। বাচ্চাটাকে ও নিজের কাছেই রাখবে। গালিব ছেড়ে গেলেও বাচ্চাটাতো কাছে থাকবে। তাছাড়া এই বাচ্চা ছাড়া মা হওয়ার সম্ভাবনা ওর একেবারেই নেই। বাচ্চার দোষ দিয়ে কি হবে সবটা নিয়তি। আল্লাহ চেয়েছেন তাই হয়েছে। তৃতীয় দিন শাশুড়িকে হাসপাতালে রেখে ও বাড়িতে ফিরে আসলো। ফ্রেস হয়ে বাচ্চাটাকে কাছে নিয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে বাচ্চাটাকে দেখে ওর কপালে চুমু দিয়ে বলল,

তুমি আমার, শুধুমাত্র আমার। তোমাকে আমি নিজের মতো করে মানুষ করবো। পৃথিবীর কেউ জানতেই পারবেনা তুমি আমার র/ক্তের কেউ না।
অরিত্রীর কথা শুনে বাচ্চাটা হাসলো। অরিত্রী মেয়ের হাতটা নিজের মুখের সম্মুখে রাখতেই ভ্রু কুচকে ফেললো। মেয়েটার গলাই একটা ছোট্ট লকেট । কে দিলো এই লকেট? অরিত্রী লকেট খুলতে পারলোনা। তবে হাতে নিয়ে দেখলো লকেটের উপরে ছোট্ট করে খোদাই করা “কহিনুর”।

তবেকি এই মেয়ের নাম কহিনুর রাখবে? অরিত্রীর কাছে সবটা কেমন অদ্ভুত লাগলো। অরিত্রী নামটা কয়েকবার উচ্চারণ করলো। ভাবতে ভাবতে ও এক প্রকার ঘোরের মধ্যে চলে গেলো হঠাৎ ফোনে টেক্সট আসার শব্দে ওর ঘোর কাটলো। অরিত্রী এক হাতে মেয়েকে আগলে নিয়ে অন্য হাতে টেক্সট অপেন করে হতভম্ভ হলো। শরীরে কম্পন ধরে যাচ্ছে। চোখের কোনে পানি জমতে শুরু করেছে।

কারণ সামনে ওর স্বামীর সঙ্গে অন্য একটা মেয়ের ছবি। সাধারণ ছবি না। এটা বিয়ের ছবি। অরিত্রী বাকী ছবিগুলো দেখতে থাকলো। ঘনিষ্ঠ ছবিগুলোতে দুজনের মুখেই হাসি। গালিব এমন করতে পারে অরিত্রী স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি। লোকটা এমন কেনো করলো? এতো বছরের ভালোবাসা সবকিছু কি মিথ্যা ছিল

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ২