কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ২

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ২
লাবণ্য ইয়াসমিন

পৃথিবী যেনো থমকে গেলো। অরিত্রীর বিরহে আজ আকাশে মেঘ জমেছে। থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। কিছুক্ষণ আগে গালিবের লা/শ এসেছে বাড়িতে। ড্রয়িং রুমের ফ্লরে ওকে রাখা হয়েছে। কি থেকে কি হয়ে গেলো সবটা এলোমেলো লাগছে। গতকাল রাতে আসা ছবিগুলো দেখে অরিত্রী নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি।

প্রচণ্ড ক্ষি/প্ত হয়ে হাসপাতালে গিয়েছিলো। গালিবের তখন সবে ঘুম ভেঙেছে। মাথা ঝিমঝিম করছিলো। এক সাইড নড়াচড়া করতে পারছিলোনা। মন থেকে ভেঙে পড়েছে। কথা বলতে পারছে না মুখ বেকিয়ে যাচ্ছে। কঠিন এই সময় প্রিয় মানুষটার সাপোর্ট খুব করে চেয়েছিলো গালিব কিন্তু আফসোস তেমন কিছুই হলো না। অরিত্রী দ্রুত কেবিনে এসে ফোনের ছবিগুলো ওর সামনে তুলে ধরে রাগে ফেটে পড়লো। ঝাঝালো কণ্ঠে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বিশ্বাসঘা/তক অকৃ/তজ্ঞ বেই/মান লো/ভী লজ্জা করলোনা আমাকে ঠকাতে? চরি/ত্রহীন ল/ম্পট লজ্জা করলো না এই কঠিন সত্যটা আমার থেকে লুকিয়ে রাখতে? সামান্য একটা বাচ্চার জন্য আমাকে ঠকাতে হলো? কিসের লোভে এমন করলে উত্তর দাও? খুব না তোমার ভালোবাসার বড়াই ছিল? ভালোবাসা সব মিথ্যা।আমাকে ঠকানোই তোমার উদ্দেশ্য ছিল।তুমি সফল গালিব তুমি সফল।আমি ঠকে গেলাম তোমার মতো চরি/ত্রহীন লোককে ভালোবেসে। আমি থাকবোনা তোমার মতো বেইমানের সঙ্গে সংসার করতে। আমি আজকের মধ্যে তোমাকে ডিভোর্স দিবো।

অরিত্রী ইচ্ছে মতো নিজের রাগটা ঝালিয়ে নিলো। শরীর কাঁপছে থরথর করে। লোকটা সুস্থ থাকলে কয়েকটা থা/প্পড় বসিয়ে দিতে ওর হাত কাঁপতোনা। স্বামীর রঙ্গ-লিলা সহ্য করার মতো ধৈর্য ওর নেই। মেজাজ অযথাই খারাপ হচ্ছে। আসার আগে বাড়িতে এই ছবিগুলো দেখিয়ে এসেছে। গালিব চারভাইয়ের মধ্যে তৃতীয়।ভাইয়েরা মোটামুটি সবাই প্রতিষ্ঠিত। বাবা নেই মা সংসারের কত্রী।

উনি শক্ত হাতে চার ছেলেকে বড় করেছেন। বিয়ে দিয়ে ভেবেছিলেন ধর্মকর্মে মনোযোগ দিবেন কিন্তু সেটা আর হয়ে উঠছে না। বিপদ পিছু ছাড়ে না। অরিত্রীর আনা অভিযোগ উনি খুটিয়ে দেখেছেন। ডাক্তার বলেছিল গালিবকে পুরোপুরি বিশ্রামে রাখতে। টেনশন ফ্রি রাখতে কিন্তু সব উল্টো হলো। ছবি গুলো দেখে ও আঙুল উচু করে কিছু বলতে চেয়েছিলো কিন্তু পারেনি। অরিত্রী যা নয় তাই বলে অপমান করে চলে এসেছে ফলাফল হিসেবে গালিব দ্বিতীয় দফায় আবার স্টোক করে বসে। অবস্থা ততক্ষণে হাতের বাইরে। ঘন্টা খানিকটা পরেই বাড়িতে খবর পৌঁছে যায় গালিব আর নেই।

ইহকালিন মায়া ত্যাগ করেছে। অরিত্রী বুঝতে পেরেছে কতটা ভুল করে ফেলেছে। এখন কেঁদে কেটে কিছুই হবে না। যে চলে যাওয়ার সে চলে গেছে। চিৎকার চেচামেচি করে খুব করে কাঁদলো। ছন্নছাড়া লাগছে। গালিবের লা/শ এখানেই সমাধিত করা হলো। দোতলা বিশিষ্ঠ বিশাল বাড়িটা থমথমে হয়ে আছে। অরিত্রী কক্ষের বাইরে বের হয়নি। গতকাল থেকে কাঁদতে কাঁদতে আপাতত অনুভূতি শূন্য।

মেয়েটাকে কোলে নিয়ে চুপচাপ বসে আছে। গালিব অসুস্থ হওয়ার আগেই এই বাচ্চার নামে নিজের সব সম্পত্তি লিখে দিয়েছে। লকেট রহস্য হয়তো ওরই করা। সব ফর্মালিটি গালিব ঠিকঠাক করে গেছে। মেয়েটার বার্থ সার্টিফিকেট পযর্ন্ত করিয়ে ফেলেছে। ডাক্তার মানুষ হাতে ক্ষমতা ছিল সঙ্গে টাকা। এসব করতে ওর খুব একটা অসুবিধা হয়নি। যার কিছুই অরিত্রীর জানা ছিল না। আরও কতকিছু লোকটা ওর থেকে গোপন করেছে আল্লাহ ভালো জানে।

যেটুকু ভালোবাসা অবশিষ্ট ছিল সেসব বিষয়ে ভেবে ওর প্রচণ্ড অভিমান হচ্ছে মৃত মানুষটার প্রতি। তাই সিদ্ধান্ত নিলো এখানে আর এক মূহুর্তেও থাকবে না। মেয়ে নিয়ে নিজের মতো একা থাকবে। ভাবনা অনুযায়ী লাগেজ গুছিয়ে মেয়েটাকে নিয়ে শাশুড়ির কাছে বিদাই নিতে গিয়ে থমকে গেলো। দরজা ভেতর থেকে ভাজা করা আছে। সামান্য উঁকি দিয়ে ও দাঁড়িয়ে পড়লো। ভেতরে তিন ছেলেকে নিয়ে উনি বৈঠক বসিয়েছেন। শাশুড়িমা চাপা কন্ঠে ছোট ছেলেকে বলছেন,

গালিব নেই আমি চাইছি তুমি অরিত্রীকে বিয়ে করো। মেয়েটা সুন্দরী সঙ্গে শিক্ষিতা। তাছাড়া মেয়েটার প্রতি তোমার ভাই অবিচার করেছে। আমি চাইনা মেয়েটার ভবিষ্যৎ নষ্ট হোক। ওর জীবনের কিছু হয়নি। এইটুকু একটা মেয়ে এতোকিছু কিভাবে সহ্য করবে বলো? তোমার ভাই একটা অকর্মণ্য। নিজে মরেছে আবার একটাকে রেখে গিয়েছে। কার না কার মেয়ে তার নামে সব কিছু লিখে দিয়েছে। তুমি ওকে গ্রহণ করো। আর সেটা আজকের মধ্যেই।

মায়ের কথা শুনে রিজু চমকে উঠলো। সমাজের ভয় ওর নেই। কিন্তু ওতো বিবাহিত বাংলাদেশে বউ বাচ্চা আছে তবে মা কেনো এমন বললো? উত্তেজনা থামাতে পারলোনা।ভ্রু কুচকে বলল,
মা তুমি পাগল হয়েছো? বউ বাচ্চা রেখে এখন আবারও বিয়ে করবো?

কেনো পারবেনা রিজু? ওরা বাংলাদেশ থাকবে কখনও এখানে আসবেনা। তাছাড়া অরিত্রীর কখনও বাচ্চা হবে না তবে কিসের এতো অসুবিধা? বাড়ির বউ বাড়িতে থাকবে। এসব বাইরের মানুষকে বুঝতে দিবনা। তুমি যেমন ছিলে তেমনই থাকবে। তোমাকে ওর দায়িত্ব নিতে হবে না। গালিবের যা আছে সবকিছু ও দেখাশোনা করবে। তুমি জানো গালিবের সম্পত্তির কাছে তুমি কিছুই না। কোনো ঝামেলা করোনা। যাও বিয়ের জন্য প্রস্তুত হও।

শাশুড়ির কথা শুনে অরিত্রীর মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো। বলে কি এই মহিলা? রিজুর সঙ্গে বিয়ে কেমনে কি? অরিত্রী হুড়মুড় করে ভেতরে ঢুকে পড়লো। গম্ভীর কন্ঠে বলল,
মা আপনি ভুল করছেন আমি এই বিয়ে কখনও করবোনা। গালিব আমাকে ঠকিয়েছে কিন্তু যাওয়ার আগে চমৎকার একটা উপহার দিয়ে গেছে। আমি একে নিয়ে বাকিটা জীবন পার করতে পারবো। আমাকে নিয়ে আপনি ভাববেন না। আল্লাহ যা লিখেছেন তাই হবে।
অরিত্রীর কথা শুনে ভদ্রমহিলা খুশী হতে পারলেন না। উনি কঠিন হয়ে বললেন,

আমাকে যদি নিজের মায়ের মতো ভেবে থাকো তবে আর কোনো ঝামেলা করোনা। আমি তোমাদের ভালোর জন্যই বলেছি। রিজুকে নিয়ে চিন্তা করোনা। আমি কথা দিচ্ছি সবটা সামলে নিবো। রিজুর বউ বাচ্চা তোমার সামনে আসবে না। ওরা আলাদা থাকবে।
আমি ওকে মানতে পারবোনা মা। ক্ষমা করুক প্লিজ।
ভদ্রমহিলা চোখ বন্ধ করে দম দিয়ে বললেন,

বেশি কথা বলছো বউমা। তুমি যাও আমি এদের সঙ্গে কথা বলবো। রুমে গিয়ে রেডি হও। স্বামী মারা গেলে স্ত্রীদের জীবন থমকে যায়না। আমি তোমার আবারও বিয়ে দিব। আমাকে রাগিওনা।
অরিত্রী চুপচাপ বেরিয়ে আসলো। জানা আছে শাশুড়ির কথার উপরে একটা কথাও আর বলতে পারবেনা। কি করবে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। চুপচাপ নিজের কক্ষে ফিরে আসলো। বিয়ে করবে না করবে না বললেও কেউ ওর কথা শুনলোনা। দুপুরের পর পরিবারিকভাবে বিয়েটা হয়ে গেলো।

গভীর রাত,হঠাৎ গ্রীষ্মের গরমের পর হালকা তুষারপাত হয়েছে। জানালার পর্দা মৃদু মৃদু উড়ছে। রুমে লাল নীল বাহারি আলোর মেলা বসেছে। ফুলদানিতে একগুচ্ছ সাদা ফুল সেই গন্ধ চার‍দিকে ছড়িয়ে পড়েছে। সাদা বিছানার মাঝখানে লাল রঙের শাড়িতে বসে আছে অরিত্রী। রিজু এখনো বাইরে আছে। হঠাৎ মৃদু শব্দে রুমের দরজা খুলে গেলো। অরিত্রী খানিকটা নড়েচড়ে বসলো। আবছা আলোতে কেউ কাউকে দেখতে পারছে না তবুও আন্দাজ করে রিজু দরজা বন্ধ করে বিছানার দিকে এগিয়ে আসলো। বিছানায় বসতে চাইলো তার আগেই অরিত্রী গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,

একদম বিছানায় বসবে না। কি ভেবেছো বিয়ে করেছি বলে মাথা কিনে নিয়েছো? সব পুরুষ মানুষ এক। কাউকেই আমি আর বিশ্বাস করিনা। চরি/ত্রহীন ল/ম্পট।
অরিত্রীর কণ্ঠে আগুন ঝরছে। বুঝতে পেরে রিজুর ওষ্ঠে হাসি ফুটে উঠলো। শব্দ করে হাসতে গিয়েও থেমে গেলো। বেশ মজা পাচ্ছে তবুও কিছু বলা দরকার ভেবে উত্তর দিলো,

ইসলামে কিন্তু ছেলেদের চারটা বিয়ের হুকুম আছে। আমি কিন্তু রুশীর থেকে বিয়ের অনুমতি নিয়েই তোমাকে গ্রহণ করেছি । ভাইয়ের মতো ধোকা দিবো না বিশ্বাস করো।
অরিত্রী দাঁতে দাঁত লাগিয়ে চাপা কন্ঠে বলল,
একদম ভালো সাজার নাটক করবে না। আমাকে রুশী ভেবোনা যে তোমার সবটা আমি মেনে নিবো। আমার থেকে দুরে থাকো নয়তো কিন্তু ফল ভালো হবে না।

অরিত্রীর আঙুল উঁচু করে দেওয়া হুমকিতে রিজু ভয় পাওয়ার বদলে এবার শব্দ করে হেসে ফেলল। মনের মধ্যে অদ্ভুত অদ্ভুত ইচ্ছারা আশকারা দিচ্ছে। বিছানায় সদ্য বিবাহিত স্ত্রীর মুখটা দেখতে বড্ড ইচ্ছা করছে। রিজু আর সময় নষ্ট করলোনা। হাতের থাকা ফোনের টর্চ অন করে অরিত্রীর সামনে বসে পড়লো। আলোটা পাশে রেখে হাতের মুঠোয় রাখা লকেটটা মেলে ধরলো।

অরিত্রী বিস্ময়কর দৃষ্টি মেলে রিজুর দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলেটা কোনো কিছুর পরোয়া না করে অরিত্রীর হাতটা টেনে নিজের কাছে নিয়ে এসে লকেটটা ওর গলাতে পরিয়ে দিলো। অরিত্রীর হাত দুখানা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে ওষ্ঠখানা চেপে ধরলো। অরিত্রী হাত টেনে নিজের কাছে আনতে চাইলো কিন্তু পারলোনা। রিজু মাথা তুলে চাইলো এবার দুজনের চোখাচোখি হয়ে গেলো। দুজনের চোখেই মুগ্ধতা বিরাজ করছে।

রিজু ভ্রু নাচিয়ে কিছু একটা ইঙ্গিত করতেই অরিত্রী হেসে ফেলল। তারপর দুজন মিলে দম ফাটিয়ে হাসতে শুরু করলো। গড়াগড়ি করে দুজনে বেশ খানিকটা হাসলো। তারপর আবারও সেই নির্জনতা ঘিরে ধরলো। অরিত্রীর চোখের কোনে পানি চলে এসেছে হাসির জন্য। রিজু মাথা উচু করে ওর কপালে চুমু দিয়ে হাতের আঙুলের ভাজে নিজের হাতটা চেপে ধরে দম নিয়ে বলল,

সরি অরু আমি ইচ্ছা করে রুশীকে বিয়ে করিনি। ভাইয়া জোর করে বিয়ে দিয়েছিলো। তাছাড়া ওর বাচ্চাটা আমার না। তোমাকে ছেড়ে ওর মতো মেয়েকে নিজের স্ত্রী ভাববো কিভাবে ভাবলে। ভীষণ ভালোবাসি তোমাকে।
রিজুর কথায় অরিত্রী ওষ্ঠ ফুলিয়ে বলল,

গালিব আমাকে ঠকিয়েছে রিজু। ও বেইমানি করেছে । কারনা কার বাচ্চা তার নামে নিজের সবকিছু লিখে দিয়েছে। তুমি বলো কাজটা কি ঠিক করেছে?
অরিত্রীর কথা শুনে রিজু কিছু একটা ভাবলো। তারপর হাতটা শক্ত করে ধরে বলল,
ভেবোনা আমি কিছু একটা ভেবে সমাধান করে ফেলবো। আজকের রাতটুকু অনেক কাঙ্ক্ষিত রাত।কতদিনের তপস্যার পর তোমাকে নিজের করে পেলাম। এক সময় ভেবেছিলাম তোমাকে বুঝি আর ফিরে পাবোনা তবুও পেলাম। সামান্য একটা বাচ্চা ওকে নিয়ে ভাবা বাদ দিয়ে আমাকে নিয়ে ভাবো।

আজ থেকে তোমার ভাবনায় শুধুমাত্র আমি থাকবো। শুধুই আমি।
রিজুর কথা শুনে অরিত্রী খুশি হয়ে গেলো। পৃথিবীতে কত ধরণের মানুষের বসবাস। যাকে ভুক্তভোগী মনে হয় আসলে মোটেও কি তাই? কখনও না। চোখের দেখাতেও ভুল থাকে। অরিত্রী রিজুর দিকে ফিরে তাকাতেই রিনরিনে মেয়েলী হাসির শব্দ ওর কানে এসে লাগলো।

বেলকনির দরজা খোলা আছে পর্দা উড়ছে। অরিত্রী উঠে বসলো। রিজুকে ফ্রেস হয়ে আসতে বলে উঠে গেলো বেলকনিতে। আশেপাশে নজর ঘুরিয়ে বাগানের দিকে ওর নজর আটকে গেলো। আকাশে থালার মতো পূর্ণিমার চাঁদ উঠেছে। সেই আলোতে দুজন মানব মানবির অবয়ব দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি দুজনের কাধে মাথা রেখে বেঞ্চে বসে আছে। আকাশের দিকে তাঁকিয়ে। অরিত্রীর মনে প্রশ্ন জাগলো কি দেখছে ওরা? রিজুর ডাক শুনে ওর ঘোর কাটলো। পেছনে ফিরে চাইলো। রিজু লাল রঙের পাঞ্জাবী পরেছে। ছেলেটার থেকে চোখ ফেরানো কষ্ট। কি যে সুন্দর লাগছে ওর চোখে। অরিত্রীর ঘোর লেগে গেলো। রিজুর বুকের সঙ্গে মাথা লাগিয়ে ফিসফিস করে বলল,

ভীষণ সুন্দর তুমি। একদম রূপকথার মতো। তুমি আমার প্রথম এবং শেষ ভালোবাসা।
রিজু ডান হাতটা অরিত্রীর কাধে রেখে মৃদু হেসে উত্তর দিলো,
রুমে চলো এখানে কি তোমার?

রিজুর কথা শুনে অরিত্রী ঝটপট সরে আসলো। বাগানের দিকে তাঁকিয়ে দেখলো সেখানে কেউ নেই। শূন্য বেঞ্চ পড়ে আছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই যারা ছিল তারা গায়েব। ও অস্থির হয়ে উঠলো। দ্রুতগতিতে বাইরে আসতে চাইলো কিন্তু পারলোনা। রিজু ওকে আটকে দিলো ঠিক তখনই দরজাই কেউ কড়া নাড়লো। হঠাৎ এমন শব্দে দুজনেই বেশ বিরক্ত তবুও অরিত্রী গিয়ে দরজা খুলে দিলো। কাজের মেয়েটা বাচ্চা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দুজনকে দেখে অরিত্রী ভ্রু কুচকে বলল,

কি সমস্যা?
ম্যাম বাবু কাঁদছে কিছুতেই থামছে না। মনে হচ্ছে পেটে ব্যাথা করছে।
মেয়েটার কথা শুনে রিজু কিছু বলতে চাইলো কিন্তু অরিত্রী আটকে দিলো। মেয়েটার কোল থেকে বাচ্চাটাকে নিয়ে দরজা বন্ধ করলো। কোলে নিতেই কহিনুর হাসলো। অরিত্রী এতোক্ষন বাচ্চাটার মুখের দিকে তাঁকিয়ে ছিল। ওর হাসি দেখে অরিত্রী বিরক্ত হয়ে বলল,

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ১

রিজু এই বাচ্চাটা আমাকে দেখে কেমন তাচ্ছিল্যপূর্ণ হাসে।আমার মনে হচ্ছে আমাদের উপরেও কেউ একজন আছে যে অন্যরকম ভাবে গেম খেঁলছে।যাকে আমরা দেখতে পাচ্ছি না। দূর থেকে সে সবটা দেখছে। রিজু তুমিতো জানতে আমি গালিবকে মোটেই পছন্দ করতাম না? শুধুমাত্র তোমার কথায় ওকে বিয়ে করলাম। ভেবেছিলাম ওর সবকিছু আমাদের হবে কিন্তু হলো কোথায়? কেউ একজন সবটা উল্টে দিলো। লোকটা কে হতে পারে রিজু? গালিব তো না। কিন্তু এই বাচ্চার সঙ্গে গালিবের কিসের সম্পর্ক?

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ৩