খড়কুটোর বাসা গল্পের লিঙ্ক || Jhorna Islam

খড়কুটোর বাসা পর্ব ১
Jhorna Islam

প্রবাস থেকে নিজের বউয়ের জন্য আনা গয়না ছোট ভাইয়ের বউরা ভাগাভাগি করে সব নিয়ে নিয়েছে। ইরহান শুধু দেখেছে কিছুই বলেনি।মুখ দিয়ে বলতেও পারে নি এগুুলো আমার বউয়ের তোমাদের তো অনেক দিলাম।এগুলো নিও না।তাদের হাসি মাখা মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে পারেনি।থাক নিয়ে নেক তার বউকে নাহয় আবার এনে দিবে।
দীর্ঘ বারো বছর পর দুই দিন হলো সৌদি আরব থেকে দেশে আসে ইরহান।

টাকা কামাতে কামাতে নিজের দিকে নজর দেয়নি। বাড়ি,গয়না, জায়গা,জমি সব করলো।
ছোট ভাইয়ের বউরা যখন গয়না গা’টি ভাগাভাগি করতে ব্যস্ত ইরহান তখন নিজের রুম থেকে মায়ের রুমের দিকে যেতে থাকে। তখনই তার বউয়ের ফোন আসে। কথা বলতে বলতে এগিয়ে যায় মায়ের রুমের দিকে। দেশে আসার পর ভালো করে কথা হয়নি মায়ের সাথে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

বারো বছর আগে ইরহান নিজের দেশ ছেড়ে টাকা কামানোর ও নিজের পরিবারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে পাড়ি দেয় নিজের দেশ ছেড়ে অন্য দেশে। কিশোর ছেলেটা নিজের সব শখ আ’ল্লা’দ ভুলে যায় নিজের পরিবার কে ভালো রাখতে।এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েই পাড়ি জমায় সুদূর প্রবাস।

এই বারো বছরে আর দেশে আসেনি ইরহান।নিজের শরীরের র/ক্ত পানি করে একমনে কাজ করে গেছে।মানুষ ভাবে প্রবাস জীবন কতোইনা সহজ।বসে বসেই বুঝি টাকা পাওয়া যায়। যে কাজ করে সে জানে কতোটা কঠিন।ইরহান কঠোর পরিশ্রমে আস্তে আস্তে সফল ও হয়েছে। হাজার টাকা থেকে লাখ টাকা বেতনে গেছে। এখন বিদেশি সেই কোম্পানিতে ভালো বেতনে কাজ করে। খারাপ দিন ঘুরে এসে ভালো দিনের দেখা মিলেছে।নিজের জন্য শুধু খাওয়ার টাকা রেখে সব দেশে পাঠিয়ে দিতো।

সে নিজে যা ইচ্ছে পূরণ করতে পারেনি তার ভাইরা যেনো করতে পারে। সব টাকা মায়ের কাছে পাঠিয়ে দিতো।মা কে জায়গা জমি কিনে বড় করে বাড়ি করতে বলেছে।মায়ের নামে বলেছে জায়গা কিনতে।
নিজের জন্য কিছুই রাখেনি সব পরিবার আর মা,ভাইদের জন্য করেছে।
নিজের বউয়ের সাথে কথা বলতে বলতে মায়ের রুমের সামনে এসে চলতি পা থেমে যায় রুমের ভিতর অবস্থিত মা আর ভাইদের কথা শুনে।

ইরহানের দুই ভাই ইমন ও ইশান মায়ের সঙ্গে তাকে নিয়েই কথা বলছে। কথা বলছে বললে ভুল হবে।টাকা পয়সা জায়গা জমি ভাগাভাগি করছে তারা।
দুইজন কে যেনো সমান ভাগ করে দেয় একটুও কম বেশি না দেয় কারণ দুইজনেরই সমান অধিকার।
তোরা চুপ করতো দুইজন। সমান সমানই পাবি।তোদের জন্যইতো এতো কিছু করলাম।টাকা পয়সা,জমি,গয়না সব নিজের নামে করলাম যেনো তোরাই পাস।

আমি তো তোদের মা।আমার নামের সব কিছু তোরাই পাবি ঐ ইরহান না।কয়েকটা দিন যেতে দে তারপর ইরহানকে এই বাড়ি থেকে ও বিদায় করবো। আমার ছেলে দুটো রাজার হালে থাকবে।
এই পুরো বাড়িটা অনেক চেষ্টা করে ও নিজের নামে লিখতে পারিনি ঐ বুড়োর কাছ থেকে। নয়তো এই বাড়িটা ও তোদের হতো বুঝলি? এখনতো এ ইরহান ও ভাগ পাবে।

সে যাই হোক এখান থেকে কতটুকুই বা পাবে? সব তো আমাদের নামে লিখে নিয়েছি।বোকা ইরহান নিজের নামে টাকা পয়সা জায়গা জমি না করে আমার নামে করেছে সব।
ইরহান এক জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে রয়।তার মুখ ভঙ্গি নির্বাক।কোনো পতিক্রিয়া নেই।চোখ দুটো মা আর ভাইদের হাসি মাখা মুখের উপর নিবদ্ধ।

আহারে আমার বোকা বড় ছেলেটা মায়ের কথায় উঠে বসে।টাকা চাইতে দেরি দিতে দেরি হয় না।চুপচাপ দিয়ে দেয়।জায়গা আমার নামে রাখতে বললাম চুপচাপ তা মেনে নিয়ে তাই করলো।
মা পা’গল ছেলে আমার কথাটা বলেই মুখ দিয়ে চ জাতীয় শব্দ করে কয়েক বার।তারপর খিলখিলিয়ে হেসে দেয়।
ইরহান এক দৃষ্টিতে তার মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রয়। তাকে ঠকাতে পেরে কি খুশি। অথচ তার মা মুখ ফোটে একবার বললে সে নিজেই সব দিয়ে দিতো এতোদিন যেমন দিতো।এতো ছলচাতুরী করার কোনো প্রয়োজন ও ছিলো না।

ইরহানের মা ইরহানের যখন পাঁচ বছর তখনই মারা যায়।ইরহানের দেখাশোনা ও ওর মায়ের অভাব পূরণ করার জন্য আবার বিয়ে করেন তার বাবা। ইরহান তাছলিমা বানুকেই নিজের মায়ের আসনে বসায়। অথচ তাছলিমা বানু সেই প্রথম থেকেই ইরহানের প্রতি উদাসীন। ছেলেটা কে না ভালোবেসে কাছে টানে না দূরে সরায়। ইরহান তাও সব মেনে নিতো। তারপর দুই ভাই হয়।

ইরহানের প্রতি তাছলিমা বানুর বিরক্ততা আসে তাও কিছু বলে না। ইরহান এইচএসসি দেওয়ার পরে তার বাবা ও চলে যায়। নিজেদের স্বচ্ছতার জন্য ইরহানকে প্রবাসে পাঠিয়ে দেয় তাছলিমা বানু।অথচ ইরহান পড়াশোনায় অনেক ভালো কতো স্বপ্ন ছিলো পড়াশোনা করে একদিন অনেক বড় কিছু করবে।সেই স্বপ্ন ও মাটি চাপা দিয়ে দিয়েছে মায়ের জন্য। হয়তো এইবার মা তাকে একটু ভালোবাসা দিবে।ইরহান বড্ড ভালোবাসার কা’ঙাল।
আরো আগে দেশে আসতে চেয়েছিলো ইরহান।তাছলিমা বানু নানান বাহানা এটা দরকার ওটা দরকার বলে আসা আঁটকে দিতো।ইরহান চুপচাপ মেনে নিতো।

বোকা ইরহান এদের কাছে ভালোবাসা চাইতো।অথচ এরা টাকা কামানোর মেশিন ছাড়া আর কিছুই ভাবতো না। ছোট দুই ভাই ইরহানের আগেই বিয়ে করে ফেলেছে।দুই ভাই ই অনেক বড় জায়গায় বিয়ে করেছে।ইরহান কে তাছলিমা বানু গরিব জায়গায় বিয়ে করিয়েছে। যার পরিবার বলতে এক দাদি ছাড়া আর কেউ নেই। মানুষের বাড়িতে কাজ করে দিন আনে দিন খায়। ইরহান চুপচাপ মায়ের পছন্দ মেনে নিয়েছে। বুঝতে ও পারলোনা ওদের চা’লাকি।
কয়েক মাস আগে ফোনে বিয়ে পরিয়েছে।কথা হয়েছে ইরহান দেশে আসলে দুই একজন গিয়ে উঠিয়ে নিয়ে আসবে নতুন বউকে।

তিনজন মিলে যখন ইরহানের সম্পত্তির ও টাকা পয়সা ভাগাভাগি নিয়ে ব্যস্ত ইরহান তখন চুপচাপ তার মায়ের রুমের দরজার পাশ থেকে নিজের রুমে চলে আসে।
ভাইয়ের বউরা গয়না গাটি নিয়ে চলে গেছে। মনে মনে হাসে ইরহান বাড়িতে সকলে ভাগাভাগি নিয়ে ব্যস্ত।
লোকে মনে হয় ঠিকই বলে পর কখনো আপন হয় না। তাছলিমা বানু যদি আজ ইরহানের নিজের মা হতো তাহলে কি এমন ভাবে পারতো তাকে ঠকাতে? জীবনে ও না। নিজের দুই ছেলের জন্য কতো চিন্তা। ইরহান কে ঠকাতে ও একবার বিবেকে বাধলোনা। এই ছেলে টা যে মা মা বলে মুখে ফেনা তুলে সেই মর্যাদা টা ও রাখলোনা।

মাথায় তার নানান চিন্তা। যাদের সে আপন ভাবতো তারা তার আসলে আপন নয়। শুধু টাকার জন্য তার সাথে ওমন ভালো ব্যবহার করে গেছে। আজ ইরহানের কাছে কিছু নেই।
হাত খরচের কয়েকটা টাকা ছাড়া সে এখন নিস্ব। এই নিয়ে তার চিন্তা ছিলো না সব নিয়ে গেছে নিয়ে যাক।কিন্তু আর কয়েক মাস আগে ওদের রুপটা সামনে আসলে হয়তো ভালো হতো।একটা জীবন বেঁচে যেতো।

এখন তো ইরহান একা নয় তার সাথে আরেকটা জীবন জড়িয়ে আছে। নয়তো আবার দেশ ছেড়ে একেবারের জন্য চলে যেতো আর এই দেশে ফিরতো না সে। এখন তো কোনো উপায় নেই। মেয়েটা তো তার সাথে সারাজীবনের জন্য জড়িয়ে গেছে।
মানুষের মুখের বিষাক্ত ভাষায় যে মেয়ে টা কে বাঁচতে দিবে না।যদি ইরহান মেয়েটাকে ছেড়ে দেয়।
সেই মনে হয় একমাত্র স্বামী প্রবাস থেকে এতোকিছু এনেও নিজের বউকে একটা সুতো ও দিতে পারলোনা।পারবেও হয়তো না।

ইরহান অনেক ভেবে চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেয় আবার প্রবাস পাড়ি জমাবে।তবে এইবার ঐ মানুষ গুলোর জন্য না।এইবার তার সাথে জড়িয়ে যাওয়া ঐ অসহায় মেয়েটার জন্য। এই বার নিজের জন্য কিছু করবে।অনেক তো হলো ওদের জন্য করা।
ইরহান নিজের রুমে বসে চারিপাশে চোখ বুলায়।তারপর তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে।এটা আর তার রুম নয়।নামে মাত্র তার।হয়তো কয়দিন পর এই রুম থেকে বিতাড়িত করবে।

ইরহান হয়তো জানে ও না যে মেয়েটার জন্য সে চিন্তা করছে। নিজে নতুন করে সব গড়ার স্বপ্ন দেখছে ঐসময় মোবাইলের ঐপাশ থেকে সব শুনে তারপরই কল কেটেছে।
মনেমনে তার বউ ও অনেক কিছু ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে।
যুথি তার দাদিকে ডাকতে থাকে,,,,
দাদি এই দাদি কই তুমি?

যুথির ডাক শুনে তার দাদি ঘরে ঢুকে। কিরে কি হইছে? এমনে চিল্লাস কেন?
আমি কল লাগায় দেই তোমার জামাইরে কও আমারে এখনই ঐ বাড়িতে আইসা নিয়ে যাইতে।
কি কস ছেরি?
যা বলছি তাই করো।
শরমের ব্যাপার আছে না? তোর কি তর সইতাছে না? জামাইর বাড়ি যাওয়ার লাই এমন পা’গল হয়নি কেউ? মাইনষে কি কইবো?

বিয়ে করছি জামাইর বাড়ি যাওয়ার জন্য পা’গল হবোনা?
ধুর তোমার বলা লাগবো না। এমনিতেই আমি চলে যাচ্ছি। তারপর তারাতাড়ি গিয়ে পরার জন্য যেই দুটো জামা আছে তা একটা শপিং ব্যাগে নিয়ে বেরিয়ে পরে যুথি তার স্বামীর বাড়ির উদ্দেশ্যে।

প্রবাস থেকে নিজের বউয়ের জন্য আনা গয়না ছোট ভাইয়ের বউরা ভাগাভাগি করে সব নিয়ে নিয়েছে। ইরহান শুধু দেখেছে কিছুই বলেনি।মুখ দিয়ে বলতেও পারে নি এগুুলো আমার বউয়ের তোমাদের তো অনেক দিলাম।এগুলো নিও না।তাদের হাসি মাখা মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে পারেনি।থাক নিয়ে নেক তার বউকে নাহয় আবার এনে দিবে।
দীর্ঘ বারো বছর পর দুই দিন হলো সৌদি আরব থেকে দেশে আসে ইরহান।

টাকা কামাতে কামাতে নিজের দিকে নজর দেয়নি। বাড়ি,গয়না, জায়গা,জমি সব করলো।
ছোট ভাইয়ের বউরা যখন গয়না গা’টি ভাগাভাগি করতে ব্যস্ত ইরহান তখন নিজের রুম থেকে মায়ের রুমের দিকে যেতে থাকে। তখনই তার বউয়ের ফোন আসে। কথা বলতে বলতে এগিয়ে যায় মায়ের রুমের দিকে। দেশে আসার পর ভালো করে কথা হয়নি মায়ের সাথে।

বারো বছর আগে ইরহান নিজের দেশ ছেড়ে টাকা কামানোর ও নিজের পরিবারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে পাড়ি দেয় নিজের দেশ ছেড়ে অন্য দেশে। কিশোর ছেলেটা নিজের সব শখ আ’ল্লা’দ ভুলে যায় নিজের পরিবার কে ভালো রাখতে।এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েই পাড়ি জমায় সুদূর প্রবাস।

এই বারো বছরে আর দেশে আসেনি ইরহান।নিজের শরীরের র/ক্ত পানি করে একমনে কাজ করে গেছে।মানুষ ভাবে প্রবাস জীবন কতোইনা সহজ।বসে বসেই বুঝি টাকা পাওয়া যায়। যে কাজ করে সে জানে কতোটা কঠিন।ইরহান কঠোর পরিশ্রমে আস্তে আস্তে সফল ও হয়েছে। হাজার টাকা থেকে লাখ টাকা বেতনে গেছে। এখন বিদেশি সেই কোম্পানিতে ভালো বেতনে কাজ করে। খারাপ দিন ঘুরে এসে ভালো দিনের দেখা মিলেছে।নিজের জন্য শুধু খাওয়ার টাকা রেখে সব দেশে পাঠিয়ে দিতো।

সে নিজে যা ইচ্ছে পূরণ করতে পারেনি তার ভাইরা যেনো করতে পারে। সব টাকা মায়ের কাছে পাঠিয়ে দিতো।মা কে জায়গা জমি কিনে বড় করে বাড়ি করতে বলেছে।মায়ের নামে বলেছে জায়গা কিনতে।
নিজের জন্য কিছুই রাখেনি সব পরিবার আর মা,ভাইদের জন্য করেছে।
নিজের বউয়ের সাথে কথা বলতে বলতে মায়ের রুমের সামনে এসে চলতি পা থেমে যায় রুমের ভিতর অবস্থিত মা আর ভাইদের কথা শুনে।

ইরহানের দুই ভাই ইমন ও ইশান মায়ের সঙ্গে তাকে নিয়েই কথা বলছে। কথা বলছে বললে ভুল হবে।টাকা পয়সা জায়গা জমি ভাগাভাগি করছে তারা।
দুইজন কে যেনো সমান ভাগ করে দেয় একটুও কম বেশি না দেয় কারণ দুইজনেরই সমান অধিকার।
তোরা চুপ করতো দুইজন। সমান সমানই পাবি।তোদের জন্যইতো এতো কিছু করলাম।টাকা পয়সা,জমি,গয়না সব নিজের নামে করলাম যেনো তোরাই পাস।

আমি তো তোদের মা।আমার নামের সব কিছু তোরাই পাবি ঐ ইরহান না।কয়েকটা দিন যেতে দে তারপর ইরহানকে এই বাড়ি থেকে ও বিদায় করবো। আমার ছেলে দুটো রাজার হালে থাকবে।
এই পুরো বাড়িটা অনেক চেষ্টা করে ও নিজের নামে লিখতে পারিনি ঐ বুড়োর কাছ থেকে। নয়তো এই বাড়িটা ও তোদের হতো বুঝলি? এখনতো এ ইরহান ও ভাগ পাবে।

সে যাই হোক এখান থেকে কতটুকুই বা পাবে? সব তো আমাদের নামে লিখে নিয়েছি।বোকা ইরহান নিজের নামে টাকা পয়সা জায়গা জমি না করে আমার নামে করেছে সব।
ইরহান এক জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে রয়।তার মুখ ভঙ্গি নির্বাক।কোনো পতিক্রিয়া নেই।চোখ দুটো মা আর ভাইদের হাসি মাখা মুখের উপর নিবদ্ধ।

আহারে আমার বোকা বড় ছেলেটা মায়ের কথায় উঠে বসে।টাকা চাইতে দেরি দিতে দেরি হয় না।চুপচাপ দিয়ে দেয়।জায়গা আমার নামে রাখতে বললাম চুপচাপ তা মেনে নিয়ে তাই করলো।
মা পা’গল ছেলে আমার কথাটা বলেই মুখ দিয়ে চ জাতীয় শব্দ করে কয়েক বার।তারপর খিলখিলিয়ে হেসে দেয়।
ইরহান এক দৃষ্টিতে তার মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রয়। তাকে ঠকাতে পেরে কি খুশি। অথচ তার মা মুখ ফোটে একবার বললে সে নিজেই সব দিয়ে দিতো এতোদিন যেমন দিতো।এতো ছলচাতুরী করার কোনো প্রয়োজন ও ছিলো না।

ইরহানের মা ইরহানের যখন পাঁচ বছর তখনই মারা যায়।ইরহানের দেখাশোনা ও ওর মায়ের অভাব পূরণ করার জন্য আবার বিয়ে করেন তার বাবা। ইরহান তাছলিমা বানুকেই নিজের মায়ের আসনে বসায়। অথচ তাছলিমা বানু সেই প্রথম থেকেই ইরহানের প্রতি উদাসীন। ছেলেটা কে না ভালোবেসে কাছে টানে না দূরে সরায়। ইরহান তাও সব মেনে নিতো। তারপর দুই ভাই হয়।

ইরহানের প্রতি তাছলিমা বানুর বিরক্ততা আসে তাও কিছু বলে না। ইরহান এইচএসসি দেওয়ার পরে তার বাবা ও চলে যায়। নিজেদের স্বচ্ছতার জন্য ইরহানকে প্রবাসে পাঠিয়ে দেয় তাছলিমা বানু।অথচ ইরহান পড়াশোনায় অনেক ভালো কতো স্বপ্ন ছিলো পড়াশোনা করে একদিন অনেক বড় কিছু করবে।সেই স্বপ্ন ও মাটি চাপা দিয়ে দিয়েছে মায়ের জন্য। হয়তো এইবার মা তাকে একটু ভালোবাসা দিবে।ইরহান বড্ড ভালোবাসার কা’ঙাল।
আরো আগে দেশে আসতে চেয়েছিলো ইরহান।তাছলিমা বানু নানান বাহানা এটা দরকার ওটা দরকার বলে আসা আঁটকে দিতো।ইরহান চুপচাপ মেনে নিতো।

বোকা ইরহান এদের কাছে ভালোবাসা চাইতো।অথচ এরা টাকা কামানোর মেশিন ছাড়া আর কিছুই ভাবতো না। ছোট দুই ভাই ইরহানের আগেই বিয়ে করে ফেলেছে।দুই ভাই ই অনেক বড় জায়গায় বিয়ে করেছে।ইরহান কে তাছলিমা বানু গরিব জায়গায় বিয়ে করিয়েছে। যার পরিবার বলতে এক দাদি ছাড়া আর কেউ নেই। মানুষের বাড়িতে কাজ করে দিন আনে দিন খায়। ইরহান চুপচাপ মায়ের পছন্দ মেনে নিয়েছে। বুঝতে ও পারলোনা ওদের চা’লাকি।
কয়েক মাস আগে ফোনে বিয়ে পরিয়েছে।কথা হয়েছে ইরহান দেশে আসলে দুই একজন গিয়ে উঠিয়ে নিয়ে আসবে নতুন বউকে।

তিনজন মিলে যখন ইরহানের সম্পত্তির ও টাকা পয়সা ভাগাভাগি নিয়ে ব্যস্ত ইরহান তখন চুপচাপ তার মায়ের রুমের দরজার পাশ থেকে নিজের রুমে চলে আসে।
ভাইয়ের বউরা গয়না গাটি নিয়ে চলে গেছে। মনে মনে হাসে ইরহান বাড়িতে সকলে ভাগাভাগি নিয়ে ব্যস্ত।
লোকে মনে হয় ঠিকই বলে পর কখনো আপন হয় না। তাছলিমা বানু যদি আজ ইরহানের নিজের মা হতো তাহলে কি এমন ভাবে পারতো তাকে ঠকাতে? জীবনে ও না। নিজের দুই ছেলের জন্য কতো চিন্তা। ইরহান কে ঠকাতে ও একবার বিবেকে বাধলোনা। এই ছেলে টা যে মা মা বলে মুখে ফেনা তুলে সেই মর্যাদা টা ও রাখলোনা।

মাথায় তার নানান চিন্তা। যাদের সে আপন ভাবতো তারা তার আসলে আপন নয়। শুধু টাকার জন্য তার সাথে ওমন ভালো ব্যবহার করে গেছে। আজ ইরহানের কাছে কিছু নেই।
হাত খরচের কয়েকটা টাকা ছাড়া সে এখন নিস্ব। এই নিয়ে তার চিন্তা ছিলো না সব নিয়ে গেছে নিয়ে যাক।কিন্তু আর কয়েক মাস আগে ওদের রুপটা সামনে আসলে হয়তো ভালো হতো।একটা জীবন বেঁচে যেতো।

এখন তো ইরহান একা নয় তার সাথে আরেকটা জীবন জড়িয়ে আছে। নয়তো আবার দেশ ছেড়ে একেবারের জন্য চলে যেতো আর এই দেশে ফিরতো না সে। এখন তো কোনো উপায় নেই। মেয়েটা তো তার সাথে সারাজীবনের জন্য জড়িয়ে গেছে।
মানুষের মুখের বিষাক্ত ভাষায় যে মেয়ে টা কে বাঁচতে দিবে না।যদি ইরহান মেয়েটাকে ছেড়ে দেয়।
সেই মনে হয় একমাত্র স্বামী প্রবাস থেকে এতোকিছু এনেও নিজের বউকে একটা সুতো ও দিতে পারলোনা।পারবেও হয়তো না।

ইরহান অনেক ভেবে চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নেয় আবার প্রবাস পাড়ি জমাবে।তবে এইবার ঐ মানুষ গুলোর জন্য না।এইবার তার সাথে জড়িয়ে যাওয়া ঐ অসহায় মেয়েটার জন্য। এই বার নিজের জন্য কিছু করবে।অনেক তো হলো ওদের জন্য করা।
ইরহান নিজের রুমে বসে চারিপাশে চোখ বুলায়।তারপর তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে।এটা আর তার রুম নয়।নামে মাত্র তার।হয়তো কয়দিন পর এই রুম থেকে বিতাড়িত করবে।

ইরহান হয়তো জানে ও না যে মেয়েটার জন্য সে চিন্তা করছে। নিজে নতুন করে সব গড়ার স্বপ্ন দেখছে ঐসময় মোবাইলের ঐপাশ থেকে সব শুনে তারপরই কল কেটেছে।
মনেমনে তার বউ ও অনেক কিছু ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে।
যুথি তার দাদিকে ডাকতে থাকে,,,,
দাদি এই দাদি কই তুমি?

যুথির ডাক শুনে তার দাদি ঘরে ঢুকে। কিরে কি হইছে? এমনে চিল্লাস কেন?
আমি কল লাগায় দেই তোমার জামাইরে কও আমারে এখনই ঐ বাড়িতে আইসা নিয়ে যাইতে।
কি কস ছেরি?
যা বলছি তাই করো।
শরমের ব্যাপার আছে না? তোর কি তর সইতাছে না? জামাইর বাড়ি যাওয়ার লাই এমন পা’গল হয়নি কেউ? মাইনষে কি কইবো?

বিয়ে করছি জামাইর বাড়ি যাওয়ার জন্য পা’গল হবোনা?
ধুর তোমার বলা লাগবো না। এমনিতেই আমি চলে যাচ্ছি। তারপর তারাতাড়ি গিয়ে পরার জন্য যেই দুটো জামা আছে তা একটা শপিং ব্যাগে নিয়ে বেরিয়ে পরে যুথি তার স্বামীর বাড়ির উদ্দেশ্যে।

খড়কুটোর বাসা পর্ব ২