খড়কুটোর বাসা পর্ব ১৫

খড়কুটোর বাসা পর্ব ১৫
Jhorna Islam

টুনা-টুনির সংসারে এর মধ্যে কেটে গেছে কয়েকটা দিন। দিন গুলো খুব ভালো কেটেছে। ইরহান যুথি কে দেখে হয়তো মানুষ বুঝতে পারবে বিলাসিতা ছাড়া ও মানুষ সুখে থাকতে পারে।
সুখে থাকার জন্য এতো বেশি বিলাসিতার প্রয়োজন নেই।অল্প তেও সুখে থাকা যায়।
তাদের ছোট্ট সংসারে এক মাসের মতো কেটে গেছে। যুথি যেমন ইরহান কে নিজের জীবন সঙ্গী হিসেবে পেয়ে প্রতিনিয়ত শুকরিয়া আদায় করে। ইরহান ও করে একে অপরের মোনাজাতে সব সময় থাকে দুইজন কিন্তু কেউ কাউকে মুখ ফোটে বলে না।

এর মধ্যে একদিন সকাল বেলা ইরহান দাঁত মাজতে মাজতে পুকুর পাড়ের পাশে এসে দেখতে পায় পুকুর পাড়ে অনেক জন লোক রয়েছে।
ইমন ইশান তাদের বউরা আর তাছলিমা বানু ও রয়েছে । প্রথমে কিছু বুঝতে না পারলেও পরে ব্যাপারটা বুঝতে সময় লাগে না।
পুকুরে জাল ফেলার আয়োজন চলছে।
ইরহান সামনে এগিয়ে যায়। তাছলিমা বানুর পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।
পুকুরে জাল ফেলতেছেন মাছ ধরতে।অথচ আমাকে বলার প্রয়োজন মনে করেন নি?
তাছলিমা বানু হুট করে ইরহানের কথা শুনে হকচকায়।তারপর ইরহানের দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে,, এটা আবার তোকে কি বলবো?

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

— “কি বলবেন মানে? আপনি হয়তো ভুলে গেছেন এটা আমার টাকায় কিনা পুকুর না যে জা’লি’য়া’তি করে নিয়ে যাবেন। এটা আমার বাবার জায়গায় করা পুকুর। এই পুকুরে সমান ভাগ রয়েছে আমার।তো আমাকে বলবেন না তো কাকে বলবেন?”
–” এতো কথা বলে কি কোনো লাভ আছে? তোকে নিশ্চয়ই আমি মাছ না দিয়ে খেয়ে উঠতাম না।কয়েকটা মাছ ঠিকই দিতাম।”

— ” আপনার কাছে কয়েকটা মাছ কে চাইছে? এমন ভাবে বলছেন যেনো আমায় দান করছেন।”
বাবার জায়গায় সব সন্তানের সমান অধিকার রয়েছে। আর আপনি হয়তো ভুলে গেছেন বাবার সব সম্পত্তির অর্ধেক সে আমার নামে করে গেছে। আপনি কি ভেবেছেন ছোট বেলা বাবা আমায় দেওয়ায় সব আমি ভুলে গেছি? আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনি ভুলে গেছেন। কিন্তু আমি ভুলিনি।
তাই কয়েকটা মাছ দেওয়ার কথা আসছে কোথা থেকে? ভাগ হবে।অর্ধেক অর্ধেক আপনার দুই ছেলে সব মিলিয়ে পাবে অর্ধেক। আর আমি একাই পাবো অর্ধেক।
কয়েকটা মাছ দেওয়ার কথা তাই ভুলে যান।

তারপর পুকুরে জাল ফেলার সময় ইরহান যুথি ঐখানেই ছিলো। বেশ বড় বড় মাছই হয়েছে। লেখিকা ঝর্ণা ইসলাম। জেলেরা জাল ফেলে মাছ ধরছে। পুকুরটা বেশ বড়। ইরহানদের বাড়ির পাশ দিয়ে দেওয়াল থাকলেও অন্য পাশ দিয়ে নেই।কারণ অনেকেই পুকুরে গোসল করে। নানান কাজে পুকুরের পানি নিয়ে ব্যবহার করে।
প্রায় অনেক লোকই দাড়িয়ে দাড়িয়ে মাছ ধরা দেখছে।
পুকুর থেকে প্রায় অনেক বড় একটা বোয়াল মাছ ধরেছে।

বোয়াল মাছ দেখে তাছলিমা বানু খুশিতে গদগদ। জেলে কে বলতেছে উনার পাশে এনে যেনো মাছ টা রাখে।তাছলিমা বানুর বোয়াল মাছ খুবই প্রিয়। মাছ টা নিজের পাশে নিয়ে বসে আছে।
পুকুরের মাছ ধরতে বেশি সময় লাগেনি।বেশ ভালোই মাছ উঠেছে।বন্যার পানিতে আসা মাছ।নানান ধরনের মাছ রয়েছে।
জেলেদের টাকা দিয়ে আনা হয়নি।তারা অর্ধাঅর্ধি মাছ নিবে। ভাগ করে জেলেদের ভাগের মাছ তারা নিয়ে চলে যায়।
এবার বাকি মাছ ভাগ করার পালা।যুথি আগেই দুইটা বড় পাতিল এনে রেখেছে কারণ মাছ আছে প্রচুর।
ইমনের সাথে ইরহান ও মাছ ভাগ করতে থাকে। সব গুলো মাছ দুই ভাগ করতে থাকে।

তাছলিমা বানু মাছ দুই ভাগ করা দেখে বলে,, ইরহান তুই কি শুরু করেছিস? এতো মাছ দিয়ে তুই কি করবি? দুইজন মানুষ দুইটা মাছ দিয়েই তো চারদিন চলে যাবে। তোর কি ফ্রিজ আছে যে তুই ফ্রিজে রেখে খাবি? এসব তো পচে যাবে।
ইরহান তাছলিমা বানুর দিকে তাকিয়ে বলে,, আমার ভাগের মাছ নিয়ে আমি কি করি না করি সেটা আপনাকে না দেখলেও চলবে। পচিয়ে ফেলি আর নাকি অন্য কিছু করি সেটা আমি বুঝবো আপনাকে বুঝতে হবে না।
তারপর পুকুরের মাছের পুরো অর্ধেক ভাগ ইরহান নিয়ে নেয়।

তাছলিমা বানু আর কথা বাড়ায় না। নিজের পাশে রাখা বোয়াল মাছ টা হাতে তুলে নিয়ে বাড়ির দিকে এগুতে নেয়।ঠিক তখনই যুথি দৌড়ে গিয়ে তাছলিমা বানুর পথ আটকে দাঁড়ায়।
— কি হলো মেয়ে আমার পথ আটকে দাঁড়ালে কেন? তাছলিমা বানু যুথি কে জিজ্ঞেস করে।
— আপনি মনে হয় কিছু একটা ভুলে গেছেন নকল শ্বাশুড়ি আম্মা।
— কিছু একটা ভুলে গেছি মানে? কি ভুলে গেছি আমি?

— যুথি চোখ দিয়ে তাছলিমা বানুর হাতে রাখা মাছের দিকে ইশারা করে বলে এটার কথা।
— তাছলিমা বানু হাতে রাখা মাছটা আরেকটু শক্ত করে ধরে।তারপর বলে এটা আমি নিবো এটার কথা ভুলে যাও।
— কেন ভুলে যাবো নকল শ্বাশুড়ি আম্মা? আপনার মাথায় হয়তো ঢুকেনি সব কিছুর ভাগ হবে অর্ধেক অর্ধেক।আপনার দুই ছেলে পাবে অর্ধেক।আর আমার স্বামী একাই পাবে অর্ধেক।আপনার কাছ থেকেই শিখছি কোনো কিছু তে ছাড় দেওয়া যাবে না। বড়দের থেকেই তো ছোটরা শিক্ষা গ্রহন করে।

তাই এই মাছ টা ও ছাড় পাবে না।যেহেতু এটাই এই পুকুরের সবচেয়ে বড় মাছ আর নাই।তাই এটা কে মাঝখান দিয়ে কাটুন।অর্ধেক আপনারা পাবেন অর্ধেক আমরা।
ইশান তার মায়ের পাশেই ছিলো।ইমন ভাগ করা মাছ বাড়ি নিয়ে গেছে।ইশান যুথির কথায় রা’গে ফুসে উঠে। মুখ খুলে বলতে নিবে তার আগেই ইরহানের কথা শুনে থেমে যায়।

খবরদার ইশান যুথিকে একটা কথা বললেও তোর আজ খবর আছে। ঐদিনের থাপ্পড় টা আশা করি ভুলে যাস নি।
বাহ্ ইরহান ভাই বাহ্ এখন একটা মাছে ও তোর ভাগ লাগবে? তুই জানিস মা বোয়াল মাছ কতোটা পছন্দ করে।
তো আমি কি করতে পারি? তোদের মা পছন্দ করে সেটা তোরা বুঝবি।আমার মা হলে আমার কথা ভাবতো আর আমি তার।আমার মা হলে পারলে আকাশের চাঁদ এনে দিতাম।কিন্তু এই মহিলা আমার কেউ না। না তোরা আমার কেউ। বলেই ইরহান মাছ নিয়ে যেতে যেতে যুথি কে উদ্দেশ্য করে বলে ঐ মাছের অর্ধেক নিয়ে আসার জন্য।
যুথি শয়তানি হাসি দিয়ে তাছলিমা বানুর দিকে তাকায়। তারপর মাছটা ছিনিয়ে নিয়ে দুই ভাগ করে লেজের অংশ টা তাছলিমা বানুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে মাথার অংশ টা নিজে নিয়ে এসে পরে।
তাছলিমা বানু নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে রয়।

মাছ সব কল পাড়ে এনে হাত পা ধুয়ে নেয়।ইরহান যুথিকে বলে এতো মাছ তো খাওয়া সম্ভব নয়। ফ্রিজ হলে অন্য হিসাব।ইরহানের নানুর বাড়িও অনেক দূর।মামাদের সাথে তেমন একটা যোগাযোগ নেই।তাই কিছু মাছ নিজেদের জন্য রেখে।কিছু যুথির দাদির জন্য পাঠাতে আর পাড়া প্রতিবেশিদের দিয়ে দিতে বাকি গুলো।
এতোগুলা মাছ সবাই কে দিয়ে দিবো?
তো কি করবে?

কিছু মাছ পানিতে জিইয়ে রাখবো আমাদের জন্য। কিছু পাড়া প্রতিবেশীদের দিবো।দাদিকে বেশি দিতে হবে না। দাদি মাছ তেমন একটা খায় না।
আর বাকি গুলো কি করবে?
বাজারে বেঁচে দিবো।

মানে? কে বেচতে যাবে? আমি এসব পারি না। এক মিনিট তুমি বেচতে যাওয়ার চিন্তা ভাবনা করছো না তো? করে থাকলে একদম মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো। আমি বেচে থাকতে জীবনে ও তোমাকে এসব করতে দিবো না।
আরে পা’গল নাকি? আমি যাবো না। আমাদের দিকে একটা কাকা বিক্রি করে মাছ কিনে। উনার নাম্বার আছে আমার কাছে আজতো হাট বসবে উনার কাছে বিক্রি করে দিবো।কিছু টাকা আসবে।
আচ্ছা ঠিক আছে তুমি যা বুঝো করো। কিন্তু ঐ বোয়াল মাছের অর্ধেক তুমি খেলে খাও নয়তো তোমার দাদিকে দিয়ে দিও। আমি খাবো না।

কেনো খাবেন না? বোয়াল মাছে তো তেমন কাটা নেই খেতে পারবেন।দরকার পরলে আমি বেছে খাওয়াবো।
যুথি বোঝার চেষ্টা করো আমার গলা দিয়ে ওটা নামবে না।
যুথি ইরহানের ব্যাপারটা বুঝতে পারে। যতোই কঠোরতা দেখাক এক সময় তো মায়ের আসনে বসিয়েছিলো ঐ মহিলা টা কে।

খড়কুটোর বাসা পর্ব ১৪

ঠিক আছে আপনি না খেলে আমিও খাবো না দাদিকেই দিয়ে দিবো।
ইরহান যুথির মাথায় হাত বুলিয়ে ঘরে ঢুকে যায়।
যুথি সব মাছ নিয়ে বসে।ঐ লোকটাকেও ফোন দেয় আসার জন্য। ঐ লোকটার কাছেই দাদির জন্য কিছু মাছ দিয়ে দিবে।

খড়কুটোর বাসা পর্ব ১৬