প্রণয় আসক্তি সিজন ২ পর্ব ১৪

প্রণয় আসক্তি সিজন ২ পর্ব ১৪
লেখিকাঃ মাহযাবীন

“হেই মিস. ব্রিলিয়ান্ট? হাও ইজ ইয়র স্টাডিজ গোয়িং?”
ঠোঁটে মৃদু হাসি টেনে রেখে এহসান উক্ত প্রশ্ন খানা করে নিশিকে উদ্দেশ্য করে।প্রশ্ন কানে আসতেই এহসানের দিকে তাকায় নিশি।ঠোঁটে টেনে নেয় এক চিলতে হাসি।দুষ্টু কন্ঠে বলে ওঠে,

-হেই মিস্টার. ব্রিলিয়ান্ট।ইট’স গোয়িং ভেরি ওয়েল।
-তা তো হবেই অবশ্য,ব্রিলিয়ান্ট বলে কথা?
এহসানের এ কথায় লাজুক হাসলো নিশি। বলে উঠলো,
-এতোটাও ব্রিলিয়ান্ট নই।
ঠোঁটে হাসি টেনে রেখেই এহসান কফির মগে চুমুক বসিয়ে জিজ্ঞেস করে উঠলো,
-তোমার সাথের গরু টা কই? ক্লাস তো ৫ মিনিটেই শুরু হয়ে যাবে।
-আজ আসবে না।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

উত্তরখানা কানে আসতেই এহসানের ঠোঁটের হাসিটা হ্রাস পেলো খানিক।এ উত্তরটি যেনো বড়ই অনাকাঙ্ক্ষিত ছিলো তার জন্যে।কোথাও কী খারাপ লাগছে তার?কোনোভাবে কী সে আর্শিকে মিস করছে?সে কী খুব করে আর্শির উপস্থিতি কামনা করছিলো এতোক্ষণ? উত্তর নেই।এহসান সামলে নিলো নিজেকে।হাসিহাসি মুখে আফসোসের কন্ঠে বলে উঠলো,
-আজ তাহলে পঁচানি দিয়ে বেঁচে গেলো গরু টা?
হেসে উঠলো নিশি।ব্রু কুঁচকে বলে উঠলো,

-জেন্ডারের উপর আপনার একটা ক্লাস নিবো, ভাইয়া?
-হু?
-মেয়েদের গরু বলতে হয় নাকি গাভি?
ব্রু নাচিয়ে উক্ত প্রশ্ন খানা করে উঠলো নিশি।হাসি প্রশস্ত হলো এহসানের।তৎক্ষনাৎ সে না জানার ভান ধরে জিজ্ঞেস করে উঠলো,
-গরুটা মেয়ে নাকি?খেয়াল করিনি তো।

সোফায় আরাম করে বসে আছেন মিয়ামির বাবা তিতাস সাহেব।খবরের কাগজে চোখ ডুবিয়ে রাখলেও তার ভাবুক মন অন্য চিন্তেয় ব্যস্ত।স্ত্রী মেহরিন বেগম হাতে দু’কাপ চা নিয়ে এসে বসলেন তার পাশে।একটি কাপ তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে উঠলেন,
-শুনছেন? আপনার চা।
ধ্যান ভাঙলো তিতাস সাহেবের।গলা খাঁকারি দিয়ে ঠিক হয়ে বসলেন তিনি।স্ত্রীর হাত থেকে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বলে উঠলেন,
-একটি বিষয় খুব ভাবাচ্ছে মেহরিন।
-কোন বিষয়?

-মিয়ামির কথায় তখন তৎক্ষনাৎ রাজি হওয়াটা কী আদৌও উচিৎ ছিলো?ভুল হয়ে গেলো না তো?
-এভাবে কেনো ভাবছেন?আর্শকে কত বছর ধরে চিনি আমরা।ওর উপর এতোটুকু ভরসা তো করাই যায়।
-মেহরিন, এইযে এতো বছর ধরে আর্শকে চিনি বললে তা এতো বছরে কখনো কী জানতে পেরেছিলাম ও মাদকাসক্ত?
নেতিবাচক মাথা নাড়ালেন মেহরিন বেগম। তিতাস সাহেব বলে উঠলেন,

-এ যুগে কেউকে বাইরে থেকে দেখেই তুমি যদি ভালো-মন্দ বিচার করে ফেলো তবে তুমি বোকা।প্রতিটা মানুষের মাঝেই লুকোনো কিছু সত্য থাকে, মেহরিন। কিছু এমন সত্য যা খুব গোপন।এতোটাই গোপন যে তা তার খুব কাছের মানুষটাও আঁচ করতে ব্যর্থ হয়।আর এই গোপন সত্যিটা আমরা জানতে পারি না দেখেই আমাদের ভালো-মন্দ বিচার করাটা কখনোই পুরোপুরি সঠিক হয় না।ভুল রয়েই যায়।

-ঠিক বলেছেন।তা এখন কী করবেন?
-ভাবছি।আর্শ আসলেই ড্রাগস থেকে মুক্ত হতে পেরেছে কিনা সে বিষয়ে সম্পূর্ণ নিশ্চিত হবো কী করে?ও এসে বললেই তো আর বিশ্বাস করে নিজের মেয়েকে ওর হাতে তুলে দিতে পারি না তাই না?
-জ্বি।মাদকাসক্তি তো আসলে মানসিক রোগ।তা ওকে সাইক্রিয়েটিস্ট এর কাছে নিয়ে গেলে হয় না? মানে ডাক্তার তো বলতে পারবে আর্শ সুস্থ হইছে কিনা।

-খারাপ বলোনি কথাটা।এ বিষয়ে আরেকটু ভাববো।আর আর্শের সাথেও বসবো শীগ্রই।
তিতাস সাহেবের কথা শেষ হতে না হতেই বাড়ির কলিং বেল বেজে উঠলো।মেহরিন বেগম উঠে গেলেন সদর দরজার উদ্দেশ্যে।দরজা খুলতেই ভূত দেখার মতো চমকে উঠলেন তিনি।
-আর্শ?
-আসসালামু আলাইকুম আম্মু।কেমন আছেন?
উত্তরে ঠোঁটে কেবল হাসি ফুটিয়ে তুললেন মেহরিন বেগম,কিছু বললেন না।এরই মধ্যে ভেতর থেকে তিতাস সাহেবের গলার স্বর ভেসে এলো।

“কে এসেছে?”
তিতাস সাহেবের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে আর্শকে ভেতরে ডাকলেন মেহরিন বেগম।দু’জনে এগোলেন তিতাস সাহেবের দিকে।
আর্শকে দেখে চেহারায় গম্ভীর ভাব খানা বজায় রাখলেন তিতাস সাহেব। আর্শ তাকে সালাম দিলো।উত্তর দিলেন তিনি। অতঃপর আর্শ বলে উঠলো,

-আব্বু, আসলে আপনারা অবশ্যই আমার থেকে বেশি অভিজ্ঞ তবুও নিজের স্বল্প জ্ঞানে যতটুকু জানি এ সময় মিয়ামির এভাবে একাধারে বাসায় বসে থাকাটা ওর মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য মোটেও ভালো না।এ অবস্থায় ওর উচিৎ হাসি-খুশি থাকা,মানুষের সমাগমে থাকা,খোলা পরিবেশে থাকা আর দিনে অন্তত এক বেলা বাইরে থেকে হেঁটে আসা।আব্বু, আমি আমার ভুলের জন্য আমার স্ত্রী, সন্তানের থেকে দূরে আছি।অথচ এখনই ওদের আমাকে সবথেকে বেশি প্রয়োজন।আর কিছু না হোক অন্তত প্রতিদিন মিয়ামিকে নিয়ে আধঘন্টা বাইরে হেঁটে আসার অনুমতি টুকু আমায় দিন।প্লিজ আব্বু।
সময় নিলেন তিতাস সাহেব। ভেবে বলে ওঠেন,

-ঠিক আছে।দিলাম অনুমতি।
বলে একটু থামলেন তিতাস সাহেব।জোরে এক শ্বাস ছেড়ে বলে ওঠেন,
-তোমাকে একটি কথা বলার ছিলো,আর্শ।তা হচ্ছে তোমাকে আমার সাথে একজন ডাক্তারের কাছে যদি যেতে বলি তবে তাতে কী কোনো আপত্তি আছে তোমার?আমি আসলে জানতে চাই তোমার বর্তমান অবস্থা। বুঝতে পেরেছো?
-জ্বি।যাবো আব্বু।

বিছানায় এলোমেলো শুয়ে আছে মিয়ামি।ঢিলেঢালা প্লাজু হাঁটু অব্দি উঠে এসেছে তার।উঁচু পেট হতে কাপড় অনেকটা সরে আছে।মুখের উজ্জ্বলতা, লাবণ্যতাটাও যেনো পূর্বের চেয়ে দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে মেয়েটার।আগের তুলনায় শরীরে মেদও জমেছে তার।

গভীর ঘুমে আছন্ন মিয়ামির রূপে হৃৎস্পন্দন বাড়ছে আর্শের।এক ঘোরের সমুদ্রে বিলীন হচ্ছে সে।এ ঘোর লাগা চোখে নিজের স্ত্রীকে পর্যবেক্ষণ করতে করতে তার খুব কাছে চলে এলো আর্শ।বসলো তার পাশে।মুখ নামিয়ে চুমু এঁকে দিলো উন্মুক্ত পেটের মাঝ বরাবর।খুব যত্নে মিয়ামির এলোমেলো কাপড় ঠিক করে দিলো সে।অতঃপর মিয়ামির কানের কাছে মুখ নিয়ে নিজের তপ্ত শ্বাস ফেলে নিন্ম স্বরে বলে উঠলো,

-আমার ঘুম হারাম করে এতো আরামে তোমার ঘুমানো বারণ মিয়ু।
আর্শের উপস্থিতি, তার সান্নিধ্য, তার তপ্ত নিঃশ্বাস, তার ঠোঁটের স্পর্শ, তার নিন্ম গলার স্বর সবটাই যেনো ঘুমের মাঝেও টের পেলো মিয়ামি।ধীরে ধীরে চোখ মেললো সে।খুব কাছে,নিজের খুব কাছে আর্শকে দেখে খানিক চমকালো সে।মুহূর্তেই ঠোঁটে হাসি টেনে বলে উঠলো,

-সত্যিই তুমি?
হাসলো আর্শ।চুমু আঁকলো মেয়েটার কপালে।বলে উঠলো,
-হু।
মুহুর্তেই চোখমুখে ভীত ভাব ফুটে উঠলো মেয়েটার।জিজ্ঞেস করে উঠলো,
-বাবা-মা দেখে ফেলবে তো।এখন তো দিন।
আবারও হাসলো আর্শ।বলে উঠলো,

-নাহ এখন তো রাত।আমাদের প্রণয়ের সময়।
বলেই চোখ মারলো আর্শ।মিয়ামি বুঝলো আর্শ কিছু একটা ব্যবস্থা করেই তার কাছে এসেছে নাহয় এতোটা চিন্তামুক্ত থাকতো না সে।
মিয়ামির এসব ভাবার মাঝেই আর্শ মুখ ডুবালো তার গলায়।ছোট ছোট চুমু আঁকতে আঁকতে ঘোরলাগা কন্ঠে সে বলে উঠলো,

-শোনো মায়াবতী, এতোটা আবেদনময়ী হওয়া বারণ তোমার।প্রেমিক হৃদয় জ্বলে ছারখার হয় জেনেও এমন নিষ্ঠুর হওয়া বারণ তোমার।
ঠোঁটে হাসি ফুটলো মিয়ামির।আর্শের মুখ উপরে তুলে তার গালে দু’হাত রাখলো মিয়ামি।চুমু আঁকলো ছেলেটার নাকের মাঝ বরাবর।ক্ষানিকক্ষণ চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে থেকে বলে উঠলো,
-শোনো আমার পুরুষ, চোখে এতো প্রেম জমিয়ে আমার দিকে তাকানো বারণ তোমার।এ চাহনিতে হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হয় জেনেও এমন নিষ্ঠুর প্রেমিক হওয়া বারণ তোমার।

সামনেই পহেলা ফাল্গুন, তারপর ভ্যালেন্টাইন’স ডে আর তার পর পরই বিহানের জন্মদিন।মনের মাঝের উত্তেজনা সীমাহীন আর্শির।তার আর বিহানের পরিচয়ের এতো বছরে কোনো জন্মদিনে তারা একে-অপরকে কখনো কোনো উপহার দেয়নি।তার অবশ্য বড় কারণ হচ্ছে ‘লং ডিস্টেন্স’। কিন্তু এই আধুনিকতার যুগে ‘লং ডিস্টেন্স’ কি আদৌও কোনো প্রতিবন্ধকতা হতে পারে? হয়তো নাহ।তাই আর্শি এবার বিশেষ পরিকল্পনা করলো।বিহানকে বিশেষ অনুভব করানোর জন্য এবার সে বিশেষ কিছু একটা করবে।

তার পরিকল্পনা অনুযায়ী ধীরে ধীরে এগোতে আরম্ভ করলো সে।প্রথমেই ফেসবুকে কাস্টমাইজড চকোলেটের পেজ খুঁজতে আরম্ভ করলো।এমন পেজ যাদের কাজ সুন্দর এবং যারা ঢাকার বাইরে ডেলিভারি দিতে সক্ষম।
মনের মাঝে বিশাল উত্তেজনা চেপে সে নিজের কাজ শুরু করলো।কিন্তু বুকের কোনো এক কোণে তীব্র ভয় উঁকি দিচ্ছে তার।
‘বিহান কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবে?’
এ প্রশ্নই ভয়ের প্রধান কারণ।তার আর বিহানের মাঝের বন্ধুত্বটা তো আগের মতো নেই,সেখানে কতো তিক্ততা এখন।এ সময় উপহার পাঠানোটা কী আদৌও ঠিক হবে?

প্রণয় আসক্তি সিজন ২ পর্ব ১৩

[সিজন ০১ এ মিয়ামির বাবার নাম কী লিখেছিলাম তা একদমই মনে নেই। ভুল হলে ক্ষমা প্রার্থী।
ভীষণ ঝামেলায় থাকায় ২ দিন গল্প দিতে পারিনি।এর জন্যেও দুঃখিত।
সবাইকে সুন্দর মন্তব্য করার অনুরোধ রইলো♥️♥️]

প্রণয় আসক্তি সিজন ২ পর্ব ১৫