প্রণয় আসক্তি সিজন ২ পর্ব ১৫

প্রণয় আসক্তি সিজন ২ পর্ব ১৫
লেখিকাঃ মাহযাবীন

“তিতাস সাহেব আপনার জামাতার সাথে কথা বলে যা উপলব্ধি করতে পেরেছি তা বলার আগে আমি চাই আপনাকে আগে কিছু বিষয়ে একটু ধারণা দিয়ে নিতে।”
কপালে চিন্তের ছাপ স্পষ্ট প্রকাশ পেলো তিতাস সাহেবের।আর্শ সুস্থ হয়ে যাক এ দোয়া হয়তো এ ক’মাসে তার থেকে বেশি কেউ করেনি।পৃথিবীর কোন পিতা চাইবে তার মেয়ের সংসার ভাঙুক? কিন্তু একটা সংসার টিকিয়ে রাখবার জন্যে সে অবশ্যই নিজের মেয়েকে একটা কাটাপূর্ণ রাস্তায় হাঁটতে দিতে পারেন না।তাই তো এতোটা কঠোর হয়েছিলেন তিনি।

ভাঙতে চেয়েছিলেন এ সংসার,শুধু মাত্র যেনো তার কলিজার টুকরোটা ভালো থাকতে পারে।তবে একটা বিষয় ভুলে বসেছিলেন তিনি।ভুলে গিয়েছিলেন, মানুষ ভালোবাসা ছাড়াও বাঁচতে পারে কিন্তু মানুষের মন বাঁচে শুধুমাত্র ভালোবাসায়।নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে হারিয়ে আদৌতেও কী ভালো থাকতে পারে কেউ?মিয়ামিও কী ভালো থাকতে পারবে আর্শহীন?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

উত্তর টা পানির মতোনই পরিস্কার তিতাস সাহেবের কাছে।তিনি জানেন উত্তর হচ্ছে ‘না’। এইযে সবার নজর এড়িয়ে আর্শ মাঝেমধ্যে রাতের দিকে তাদের বাড়ি আসে।লুকিয়ে দেখা করে নিজ স্ত্রীর সাথে।তা অজানা নয় তিতাস সাহেবের।কিছু দিন আগেই এক রাতে তিনি আর্শ ও মিয়ামিকে দেখেছিলেন কফি বানিয়ে হাতে নিয়ে ছাঁদে গিয়ে জমিয়ে আড্ডা দিতে।দেখেও কিছু বলেননি তিনি। নিরবে তা দেখে নিজ কক্ষে ফিরে এসেছিলেন।তখন তার চোখে ভেসে বেড়াচ্ছিলো নিজ কন্যার মুখশ্রীতে প্রাণখোলা হাসি।কেবল আর্শের উপস্থিতিই মিয়ামির এ হাসির কারণ।ভালোবাসার মানুষটার উপস্থিতিটাই তো মানব মনের সবথেকে বড় স্বস্তির কারণ হয়।

এসবটা ভেবে নিয়ে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেললেন তিতাস সাহেব।সাইক্রিয়াটিস্ট এর কাছ হতে ইতিবাচক কিছু শোনার আশা নিয়ে তিনি বলে উঠলেন,
-জ্বি মিঃইরহান বলুন।
ইরহান সময় নিলো।শান্ত স্বাভাবিক কন্ঠে বলে উঠলো,
-একজন মাদকাসক্ত মানুষের মাঝে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়,তিতাস সাহেব।এ লক্ষণগুলো হলো,

১/ সমাজ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখা।
২/খিদে কমে যাওয়া।
৩/রোজকার জীবনের কাজকর্মের প্রতি উৎসাহ কমে যাওয়া।
৪/নিজের শখের কাজগুলি থেকে নিজেকে দূরে রাখা।
৫/পরিবারের সদস্যদের, বন্ধুদের অবহেলা করা এবং এড়িয়ে যাওয়া, ও হাসপাতালে যাওয়ার প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়া।
৬/অকারণে বিরক্ত হওয়া।
৭/অদ্ভুত এবং অস্থির আচরণ করা।
৮/অকারণে ওজন কমে যাওয়া।
৯/মানসিক অসাড়তা এবং আবেগজনিত কারণে সাড়া দেওয়া কমে যাওয়া ইত্যাদি।
এসব কোনো লক্ষণ কী এখন দেখেন আর্শের মাঝে?
উত্তরে মাথা ঝাঁকালেন তিতাস সাহেব।বলে উঠলেন,

-নাহ।
-জ্বি।আমিও আর্শের সাথে কথা বলার সময় তার প্রতিটি মুভমেন্ট লক্ষ্য করেছি।তার ব্যবহারে বিন্দু মাত্র অ্যাডিক্টেডের কোনো ছাপ নেই।দেখুন তিতাস সাহেব আমরা সাধারণ মানুষেরা ভাবি একবার মাদকাসক্ত হয়ে পড়লে তা ছাড়া অসম্ভব।কিন্তু বিষয়টা এমন না।
মাদককে না বলার জন্য শুধু একটা ‘না’ ই যথেষ্ট। যে ব্যক্তি মাদকাসক্ত সে যদি মন থেকে মাদককে না বলে এবং এ আসক্তি থেকে বেড়িয়ে আসতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয় তাহলে অবশ্যই এ থেকে বেরিয়ে এসে সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া সম্ভব।ঠিক যেমন আর্শ এখন সুস্থ। কারণ ওর মধ্যে এই দৃঢ় চেতনা আছে যে তাকে ড্রাগস ছাড়তেই হবে।তার মনোবলই তার সবথেকে বড় শক্তি আর আল্লাহর রহমত তো অবশ্যই আছে।

ক্লাস শেষ হবার পর কিছু শিটস গুছিয়ে নিয়ে কোচিং হতে বেরিয়ে এলো এহসান।আজ নিজের বাইকটা সাথে আনেনি সে।তাই রিকশা খুঁজতে দাঁড়িয়ে পরলো রাস্তার এক কোণে।হুট করে তার চোখ পরলো ফুচকার স্টলের দিকে।নিশি ও আর্শি উভয়ই দাঁড়িয়ে আছে সে স্টলের ধারে।নিশি ব্যস্ত প্রাণভরে ফুচকা উপভোগ করায়।তার পাশেই আর্শি একরাশ বিতৃষ্ণা ও বিরক্তি নিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।

আর্শির মুখের ছাপ এমন যেনো নিশি কোনো অখাদ্য বা কুখাদ্য পেটপুরে খাচ্ছে।
এ পানে তাকিয়ে আপন মনে হেসে উঠলো এহসান।রিকশা খোঁজার কথা যেনো ভুলেই বসলো সে।নিস্তব্ধ কয়েক প্রহর কাটিয়ে দিলো সে আর্শির চোখমুখ কুঁচকানো মুখশ্রীর পানে চেয়ে।অতঃপর সে এগিয়ে গেলো ঐ ফুচকার স্টলের ধারে।
আচমকা এহসানের আগমন অপ্রস্তুত করে তুললো নিশিকে।ফুচকা খাওয়ার সময় তার কোনো হুসই থাকে না।ভীষণ বাজে ভাবে খাচ্ছিলো কী সে?এহসান কী ভাবলো তাকে এভাবে দেখে?

উক্ত প্রশ্নগুলো মনে উদিত হতেই অস্বস্তি অনুভব করতে লাগলো নিশি।টিস্যু দিয়ে নিজের মুখ পরিস্কার করে নিয়ে সে চোরা চোখে চাইলো এহসানের মুখ পানে।ছেলেটার ঠোঁটের কোণে এক হৃদহরণকারী হাসি ফুটে আছে।নিশি পারলো না সে হাসি হতে নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নিতে।বেপরোয়া সে চেয়ে রইলো এ হাসির পানে।
এহসান এ গভীর দৃষ্টি বুঝলো না,পারলো না এ চাহনিতে লুকিয়ে থাকা একরাশ মুগ্ধতা পড়তে।সে আর্শির পানে চাইতে চাইতেই ঠোঁটে হাসি টেনে রেখে নিশিকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করে উঠলো,

-তোমার সাথের গরু স্যরি গাভী টা কী ফুচকা খায় না?
নিশি উত্তরে মাথা ঝাঁকালো।বুঝালো আর্শি খায় না ফুচকা।হাসি প্রশস্ত হলো এহসানের। সে নিশির দিকে ঝুঁকে বলে উঠলো,
-বান্দর কী আর আদার স্বার বোঝে?
বলেই চোখ মারলো এহসান।ঠোঁটে তার হাসি।হেসে উঠলো নিশিও।এহসানের তার দিকে ঝুঁকে তার কাছাকাছি এসে কথা বলায় এতো কেন ভালোলাগা কাজ করছে নিশির তা বুঝলো না নিশি।উত্তর খুঁজলো ও না সে।ভালোলাগা গুলো শুধু অনুভব করতে লাগলো।
এহসানের কথায় বিরক্তির পাশাপাশি ভীষণ রাগ উঠলো আর্শির।এগিয়ে এলো সে এহসানের দিকে।কপট রাগ দেখিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে সে প্রশ্ন করে উঠলো,

-সমস্যা কী আপনার?অযথা লাগতে আসেন কেন? একবার গরু তো একবার বানর।কী সব অভদ্রতা?
এহসান তার বাঁকা হাসি বজায়ে রেখে বলে উঠলো,
-অভদ্রতা নাহ।এটা হচ্ছে সদা সত্য বলার প্রবণতা। এখন তুমি যদি গরু,বানরদের মতো আচরণ করো তাহলে তা তো আমাকে বলতেই হবে।
-কেন? আপনাকে কেউ চাকরিতে রাখছে এগুলো বলার জন্য?
এ প্রশ্ন কানে এলেও তা উপেক্ষা করে এহসান নিজের দৃষ্টি তাক করলো ফুচকাওয়ালা মামার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,
-ঝাল ঝাল এক প্লেট ফুচকা দেও।
কথাখানা শেষে সে পুনরায় তার দৃষ্টি ফিরিয়ে এনে চাইলো আর্শির পানে।বলে উঠলো,

-বি অ্যা হিউম্যান মিস.ব্লাইন্ড।
বলেই এহসান আর্শির থেকে সরে নিশির পানে চাইলো।বিরক্ত কন্ঠে বলে উঠলো,
-এই গরুটারে একটু তোমার মতো নম্র-ভদ্র,মেধাবী বানাতে পারো নাই?
উত্তরে কিছু বললো না নিশি।তার কানে শুধু প্রতিধ্বনিত হতে লাগলো এহসানের উক্ত বাক্যখানা।এহসান তার সুনাম করলো?

একের পর এক এহসানের কথার তীর সহ্য হলো না আর্শির।সেই সাথে নিশির নিরবতাটাও আঘাত করলো তাকে।আজ নিশির জায়গায় মিয়ামি থাকলে এতোক্ষণে নির্ঘাত এহসানের গাল গরম করে ফেলতো।আর এমনটাই তো হওয়া উচিৎ, নয় কী? বন্ধুত্ব হলে এমন হওয়া উচিৎ যেনো তারা শরীর দুটো কিন্তু জান একটাই।তাদের মাঝে একজনকে ছোট করে কথা বলা হলে অপরজনও ব্যথিত হবে, প্রতিক্রিয়া দেখাবে।

একজন কষ্ট পেলে অপরজনও তা অনুভব করবে।একজনের বিপক্ষে কেউ কিছু বললে বা করলে অপরজন তার পক্ষ নিয়ে লড়বে।বন্ধুত্ব তো এটাই।এখানে নিশি যা করছে তাকে তো বন্ধুত্ব বলে না।
এসব ভেবে রাগ-দুঃখ বৃদ্ধি পেলো আর্শির।আবেগপ্রবণ হওয়ায় চোখের কোণ চিকচিক করে উঠলো তার।আর দাঁড়িয়ে রইতে পারলো না সে। রাগে দাঁতে দাঁত চেপে এহসানের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলে উঠলো,

-আই হেইট ইউ এহসান।
বলে আর এক মুহুর্তও দাঁড়ালো না আর্শি।দ্রুত পদে সে স্থান ত্যাগ করলো সে।নিশি হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ছুটতে আরম্ভ করলো আর্শির পেছন।বার কয়েক ডেকেও উঠলো তাকে।
এসবে মন নেই এহসানের।তার কানে অবিরাম বাজতে লাগলো, “আই হেইট ইউ এহসান”।সেই সাথে তার চোখ দুটোও আঁটকে রইলো আর্শির যাবার পানে।সেদিকে অপলক চেয়ে রইলো সে।হৃদয়ের এক কোণে তীক্ষ্ণ যন্ত্রণা উঁকি দিচ্ছে তার।এহসান তা চেপে মনে মনেই নিজেকে প্রশ্ন করে উঠলো,
“মজা টা কী খুব বেশিই করে ফেললাম? ভালোবাসার বদলে ঘৃণা কামালাম?”

মেহরিন বেগম ও তিতাস সাহেবের মুখোমুখি বসে আছেন আরহান সাহেব ও সানিয়া বেগম।পরিবেশ গম্ভীর।কারো মুখে কোনো কথা নেই।হটাৎ কী বলবার জন্যে তিতাস সাহেব ডাকলেন তাদের?এ ভেবে কপালে চিন্তের ছাপ ফেলে বসে আছেন সানিয়া বেগম ও আরহান সাহেব।তাদের পানে খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে হুট করে হেসে ফেললেন মেহরিন বেগম ও তিতাস সাহেব।ঠোঁটে হাসি টেনে রেখে মেহরিন বেগম বলে উঠলেন,
-চিন্তার দিন শেষ সানিয়া।এখন আমাদের উৎসবের দিন শুরু।

প্রণয় আসক্তি সিজন ২ পর্ব ১৪

[গল্প দিতে দেরি হওয়ার কারণ আমার রেজাল্ট।রেজাল্টের চিন্তায় কিচ্ছু লিখতে পারতেছিলাম নাহ।আলহামদুলিল্লাহ এখন আবারও আমি প্যারামুক্ত।এখন থেকে আবারও ১ দিন পর পর গল্প দিবো♥️
পাঠক মহল বলেন তো দেখি আপনারা কোনটা চান?
১. বিহান+আর্শি
২.এহসান+আর্শি
৩.এহসান+নিশি
যেকোনো একটি বেছে নিন😁]

প্রণয় আসক্তি সিজন ২ পর্ব ১৬

1 COMMENT

Comments are closed.