খড়কুটোর বাসা পর্ব ২০

খড়কুটোর বাসা পর্ব ২০
Jhorna Islam

যুথি চারিদিকে চোখ বুলিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। ইরহান যুথির দিকে কিছু সময় তাকিয়ে রয় সেইদিকে ও যুথির কোনো খেয়াল নেই।
যুথিকে এভাবে ভাবনাতে ম’জে থাকতে দেখে আপনা আপনি ইরহানের ব্রু জোড়া কোচকে যায়।
–” যুথি কি হয়েছে তোমার শরীর কি বেশি খারাপ লাগছে? দেখি এখানে এসে বসো তারপর পানি খাও একটু ভালো লাগবে।” যুথিকে বিছানায় বসিয়ে ইরহান তারাতাড়ি করে পানি এনে দেয়।
— যুথি ইরহানের হাত থেকে গ্লাস টা নিতে নিতে বলে আমার কিছু হয়নি।আপনি টেনশন নিবেন না। বসেন তো এখানে চুপচাপ।

ইরহান কে কথা টা বলে,,যুথি পানি খেয়ে গ্লাস টা রেখে আসে।তারপর নিজের গায়ে জড়িয়ে যাওয়া পাতলা চাদর টা ভাজ করে চ’কির নিচে রাখা টিনের বাক্সের ভিতর রাখে। চাদর টা রাখার সময় শব্দ করে একটা নিশ্বাস ছাড়ে।
ইরহান শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে যুথির কাজ দেখছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

যুথি বিছানায় উঠতে উঠতে দেখে ইরহান তার দিকেই তাকিয়ে আছে। তাই মজার ছলে বলে,,কি ব্যাপার বলুন তো আজ কি আমায় একটু বেশিই সুন্দর লাগছে নাকি? আমার বোকা পুরুষ যে আমার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে!
আমার যুথি রানীকে কোনো বিশেষ দিন দেখে সুন্দর লাগে না। আর না লাাগার প্রয়োজন আছে।সে আমার চোখে সবচেয়ে সুন্দরতম নারী।

হ্যা জানা আছে আমার।ঐ দেশ গিয়ে সুন্দর সুন্দর নারী দেখে এই কা’লির কথা কি মনে থাকবে আপনার?
কি বলো এগুলো? আমি আমাদের সু- দিন ফিরানোর জন্য যাচ্ছি। অন্য নারীতে ম’ত্য হতে না।আর আমার বউ ছাড়া অন্য নারীতে আসক্ত হওয়া ও মুগ্ধ চোখে দেখার আগে যেনো আমার মরণ হয়।
যুথি তারাতাড়ি ইরহানের মুখ চেপে ধরে। ছলছল চোখে তাকিয়ে বলে,,, কি বলেন এগুলো বোকা পুরুষ? আমি মজা করছিলাম বিশ্বাস করুন।আমিতো জানি আমার মানুষ টা কেমন।

তাই নাকি মজা করছিলে তুমি?
বিশ্বাস হচ্ছে না আপনার?
হচ্ছে তো।তবে এরকম মজা করার জন্য এবার তোমাকে ক’ঠিন শাস্তি পেতে হবে বলেই চোখ টিপ দেয় ইরহান।
ইরহানের ইঙ্গিত বুঝতে পেরে যুথি তারাতাড়ি ইরহানের কাছ থেকে সরে যায়।শুয়ে পরতে পরতে বলে,,খবরদার না চুপচাপ ঘুমান।আমাকেও ঘুমাতে দেন।কাল কিন্তু আবার সকাল সকাল উঠতে হবে।
হলে হোক।সকালে উঠার ভয়ে কি আমি আমার বউকে ভালোবাসবো না নাকি? বলেই যুথিকে নিজের কাছে টেনে নেয় ইরহান।

বোকা পুরুষ!
চুপ থাকো মেয়ে আমি এখন আমার বউকে ভালোবাসা দিবো।
এএএ ঢং!
ঢং না তো ভালোবাসা।

কাজটা ঠিক ঠাক মতো করতে না পারায় দুই ভাইয়ের আফসোসের শেষ নেই।সব থেকে বড় আফসোস ইশানের। হাতের কাছে পেয়েও কাগজপত্র গুলো নিতে পারে নি।
ইমন রাতে রুমে ঢুকে দেখে তার বউ লিমা মোবাইলে মায়ের কাছে শ্বাশুড়ি আর শ্বশুর বাড়ি নিয়ে হাজারো নালিশ দিচ্ছে।
লিমা ইমন কে দেখে কল কেটে দেয়। ইমন কে মুখ ভেংচি দিয়ে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে থাকে।
ইমন লিমার দিকে এগিয়ে এসে বলে,,, সংসারে একটু ঝামেলা হলেই সেটা বাপের বাড়িতে জানাতে হবে তোমার?
স্বামী আর শ্বশুর বাড়ি কে ছোট করতে খুব ভালো লাগে তোমার তাই না?

শ্বশুর বাড়ি? এটা শ্বশুর বাড়ি নাকি।এটা তো শ্বাশুড়ির বাড়ি।
তা অবশ্য ঠিক বলেছো।
শুনুন আপনার মায়ের এসব হুকুম,, ক’টু কথা একদম আমার সহ্য হয় না।আমি বানের জলে ভেসে আসিনি। আমি ফ’কি’ন্নি’র মেয়ে না যে সব চুপচাপ মুখ বুঁ’জে স’হ্য করে নিবো।বা”ন্দি দা”সীর মতো খা’টতেও পারবো না।
এতো বড় সংসার আর আমার ভালো লাগে না। এবার সব কিছু আলাদা করুন।
লিমা তুমিকি পা’গল হয়ে গেছো? এসব তুমি কি বলছো?

কি বলছি মানে? ঠিকই তো বলছি রা’গে জোরে চিললিয়ে বলে উঠে লিমা।
ইমন তারাতাড়ি লিমার মুখ চেপে ধরে ফিসফিস করে বলে,, আরে আস্তে আস্তে। জানিতো ঠিকই বলছো।কিন্তু এখন তো আলাদা হওয়ার সময় না। আগে জায়গা জমি নিজের নামে পাই তারপর তোমার বলতে হবে না আমি নিজেই আলাদা হয়ে যাবো। এখন কিছু দিন সব কিছু স’হ্য করে নাও।আর পারলে মায়ের মন জুগিয়ে চলার চেষ্টা করো।
আপনার মায়ের মন আছে নাকি যে তা জুগিয়ে চলার চেষ্টা করবো? খা”ড়ু”স মহিলা একটা।
সে যাই হোক মায়ের কথা মতো চলবে।ভাগ একটু বেশি পেলেতো আমাদের ই লাভ।

মাথা গরম ইশানের মেজাজ খারাপ হয়ে আছে।কাজটা করতে না পারায় রা’গে ফোসফোস করছে। ইচ্ছে করছে সব কিছু ভেঙে গুড়িয়ে দিতে।
নিজের রা’গ কমানোর জন্য রুমের ভিতর এদিক ওদিক পায়চারি করছে।
তখনই পাশ থেকে দিনা এসে বলে হাঁ’ড়ি আলাদা করার কথা নয়তো সে বাপের বাড়ি চলে যাবে।থাকবে না এখানে। এতো জনের কাজ সে করতে পারবে না। যদিও ইশানকে এটা বলেছে ভ’য় দেখানোর জন্য।

দিনা কথাটা বলে শেষ করতে দেরি ইশানের হাতের চ’ড় দিনার গালে পরতে দেরি নেই। ঠা’স করে এক চ’ড় মেরে দেয়।শুধু চ’ড় মেরে থামেনি।চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে বলে উঠে,,,,,, চুপচাপ সংসারের কাজ করে খাবি।মেয়ে মানুষের তে’জ এই ইশান একদম স’হ্য করতে পারে না।
আমার সাথে তুই তে’জ দেখাস? বড় গলায় কথা বলস? আবার দেখি ভ’য় ও দেখাতে পারিস আমাকে। তুই বাপের বাড়ি চলে গেলে আমার কিছুই হবে না।

তোর মতো আর তোর থেকে ভালো ভালো মেয়েদের সাথে আমার উঠা বসা। তোর মতো একটা চলে গেলে আমার কিছুই হবে না। কিন্তু তোর অনেক কিছু হবে।
চুপচাপ মুখ বন্ধ রেখে চলবি।পরবর্তীতে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে দূরে থাক গলা উচিয়ে একটা কথা বললে জ্যা”ন্ত পুঁ”তে ফেলবো।
তোকে আমি আগেও বলেছি মায়ের মন জুগিয়ে চলবি।সব সময় মায়ের পিছন পিছন ঘুরবি।মায়ের সেবা করবি।আর তুই কি করিস ঝা”মেলা পাকিয়ে বসে থাকিস।

তোর জন্য যদি এক অংশ ও কম পাই জমির ভাগ দেখিস কি করি।তাই আগে থেকেই বলছি মায়ের সেবা কর।সম্পত্তি যেনো একটু বেশি পাই।গয়নার ভাগ যেনো বেশি দেয়।
মেয়ে মানুষ সব সময় মাথা নিচু করে চলবি।আজ শেষ বারের মতো বলছি।নয়তো তোকে ছুড়ে ফেলে আরেকজন নিয়ে আসতে দুইবার ভাববো না। বলেই চুলের মুঠি ছেড়ে দিয়ে চুপচাপ শুয়ে পরে ইশান।
চুল আর গালের ব্যাথায় কুঁ’কড়ে যায় দিনা।চোখ দিয়ে আপনা আপনি পানি পরছে।ভিতরে তার আগুন জ্বলছে এখন সব মুখ বুঁ’জে স’হ্য করছে।একদিন সব কিছুর শো’ধ সে নিবে।
ইশানের এই প্রতিদিন কিছু না কিছু নিয়ে হাত তোলার শাস্তি সে ঠিক দিবে।

শুধু ভাইয়ের বউয়ের জন্য এখনো এসব মার ধর আর ইশানের পর নারীতে আসক্ত সব কিছু সহ্য করে নিচ্ছে নয়তো কবেই এসবের উপর থু থু দিয়ে চলে যেতো।
দিনার বাবার টাকা পয়সা থাকলে কি হবে তার ভাবি এসব কিছুর পিছনে ছু”ড়ি ঘুরায়। দিনার মা তাই বলে দিয়েছে দুঃখ কষ্ট যাই পাস না কেনো ঐ বাড়িতে পরে থাক।টাকা লাগলে টাকা পাঠিয়ে দিবো।কিন্তু এ বাড়িতে একবারে চলে আসার নাম মুখে নিবি না।
তাই দিনা এখনো এখানে পরে আছে।

আজ হাট বার।সকাল থেকেই দোকানে প্রচুর ভি’ড় লেগে থাকবে বেচা কেনা নিয়ে। তাই ইরহান খেয়ে আজ সকাল সকাল ই বেরিয়ে গেছে।
যুথি খুব ভোরে উঠে ইরহানের জন্য রান্না করেছে।ইরহান বলে ছিল দরকার নেই এতো সকালে রান্না করার যুথি শুনেনি।সে সুস্থ থাকা অবস্থায় ইরহান কে না খেয়ে থাকতে দিবে না।
যুথির ও স্কুলে যাবার সময় হয়ে এসেছে। তৈরি হয়ে নেয় স্কুলে যাওয়ার জন্য। এমন সময় দাদির ফোন আসে কথা বলতে বলতে দরজা লাগায় ঠিকই কিন্তু তালা লাগাতে ভুলে যায়।

কথা বলতে বলতে ঘরের পিছনের রাস্তা দিয়ে এগোনের সময় ইশান কে দেখতে পায়।
ইশানের দিকে এক পলক তাকিয়ে কিছু না বলে মোবাইলে কথা বলতে বলতে গেইটের বাইরে চলে যায়।
ইশান এতো সময় এদিকেই উঁকি মেরে ছিলো।ওরা বেরিয়ে গেলেই তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে পরবে।কিন্তু মনে মনে বেশ ম’জা পেলো এটা দেখে যুথি ঘরে তালা না মেরেই চলে গেছে।
ছিটকিনি টা খুলে ঘরে ঢুকে পরে ইশান।এইবার আর এদিক ওদিক না তাকিয়ে সোজা চকির নিচে থেকে বাক্স টা বের করে খুলে ফেলে।

কিন্তু একি বাক্সে কয়েকটা কাপড় ছাড়া আর কিছুই নেই।কাপড় এলোমেলো করে ছুড়ে নিচে ফেলে দেয়। আবার পুরো ঘর ত’ন্ন ত’ন্ন করে খোঁজে। কোথাও একটা কাগজের টুকরো ও নেই।
রা’গে লাথি মেরে টিনের বাক্স টা দূরে ফেলে। এসব যে যুথির চা’লাকি বুঝতে একটুও অসুবিধা হয় নি ইশানের।
ইশান ঘর থেকে বের হয়ে রা’গে যুথিকে একটা বা’জে গা”লি দিয়ে নিজেদের বাড়িতে চলে যায়।
ইশান চলে যেতেই যুথি আড়াল থেকে বের হয়ে ঘরে ঢুকে আরাম করে বসে।এতো সময় সবই দেখেছে যুথি।হাসি৷ পেলেও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রেখেছে। নিজের ছোট হাত ব্যাগ টা বের করে কাগজ গুলো হাতে নেয়।

কাল যুথি ঘরে ঢুকেই বুঝতে পেরেছিলো ঘরে কেউ ঢুকেছে।নিজের গুছিয়ে রাখা জিনিস একটু এদিক ওদিক হলেই তা সহজেই বোঝা যায়। যুথির ও বুঝতে অসুবিধা হয় নি।
সব থেকে বড় কথা,, কাল বের হওয়ার সময় ঘরের বাতি নিভিয়ে গিয়েছিলো কিন্তু এসে দেখে বাতি জ্বালানো। ওরা চা”লাকি করেছে ঠিকই কিন্তু বড় ভুল করে গেছে। যুথির মন তখনই বুঝে গেছে ওরা এই ঘরে কেনো আসতে পারে।তাইতো কাল বাক্স চে’ক করেছিলো।কাগজ পত্র ঠিক দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছিলো।

খড়কুটোর বাসা পর্ব ১৯

যুথির ধারণা ছিলো আজও ওরা কিছু একটা করবে।তাই হলো।
যুথি মনে মনে আওড়ায় তোরা কি ভেবেছিলি? আমার নাকের ড’গা দিয়ে গিয়ে শ/য়তানি করবি আর আমি টে’র ও পাবো না হুহ!
তোরা চলবি ডালে ডালে আর আমি চলবো প্রতিটি পাতায় পাতায়। তোরা ভুলে গেছিস বাপের ও বাপ আছে।

খড়কুটোর বাসা পর্ব ২১