প্রণয় আসক্তি সিজন ২ পর্ব ১৬

প্রণয় আসক্তি সিজন ২ পর্ব ১৬
লেখিকাঃ মাহযাবীন

দরজা খুলে মেয়েকে দেখা মাত্রই তাকে বুকে জড়িয়ে নিলেন সানিয়া বেগম।তার আনন্দ আজ সীমাহীন।নিজের খুশীটাকে এবার তাকে ভাগ করে নিতেই হবে নয়তো এ তীব্র খুশি একা সামলে ওঠা অসম্ভব।
মগজ গরম নিয়ে বাড়ি ফিরলেও মায়ের এমন কান্ডে সব ভুলে বসলো আর্শি।কপালে চিন্তের ছাপ ফেলে জিজ্ঞেস করে উঠলো,

-কী হয়েছে?এতো খুশীর কারণ কী?ভাই আবার ২য় বিয়ে-টিয়ে করে তোমার জন্য নতুন বউমা নিয়ে আসলো নাকি?
মেয়ের প্রশ্নে ব্রু কুঁচকে ফেললেন সানিয়া বেগম।সরে আসলেন তিনি আর্শির কাছ হতে।মেয়ের মাথায় আলতো টোকা দিয়ে বলে উঠলেন,
-ভালো কিছু আসে না তোর মাথায়?
হাসলো আর্শি।বাড়ির ভেতর ঢুকতে ঢুকতে বলে উঠলো,
-ভালো কিছুই তো বললাম।তোমার বউমা তো বাপের বাড়ি উঠে বসে আছেন।তা এদিকটা তো কারো সামলাতে হবে, হবে না?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-যার সংসার সে-ই ফিরছে নিজের সংসার সামলাতে।
কদম থেমে গেলো আর্শির।পেছন ফিরে সে চাইলো তার মায়ের মুখ পানে।তার চোখ-মুখ জুড়ে ছেয়ে গেলো বিস্ময়। মিয়ামি ফিরছে?বিশ্বাস করতে কষ্ট হলো আর্শির।বিস্ময় বজায় রেখে সে পুনরায় প্রশ্ন করে উঠলো,
-মিয়ু আসতেছে?
-নাহ প্রিন্সেস ডায়না আসবে।ডায়নার সংসার না এটা?
এবার সবটা পরিস্কার হলো আর্শির কাছে।ঠোঁটে ফুটে উঠলো তার বিশ্ব জয়ের হাসি।মনে আনন্দের জোয়ার এলো মুহুর্তেই।খুশিতে ছুটে গিয়ে সে জড়িয়ে ধরলো সানিয়া বেগমকে।উত্তেজিত কন্ঠে প্রশ্ন ছুড়লো,

-কবে আসবে মিয়ু?আই কান্ট ওয়েট মা।আই অ্যাম সো সো সোওওওওও এক্সসাইটেড।
হাসলেন সানিয়া বেগম।মেয়ের মনের হাল বেশ ভালোই বুঝতে পারছেন তিনি।কারণ তার নিজের মনের হালও একই।ঠোঁটে হাসি টেনে রেখে তিনি বলে উঠলেন,
-এইতো ২ থেকে ৩ দিন পর।একটা ছোট আয়োজন করবো ভাবছি।ধর ঘরটর সাজিয়ে মিয়ুকে একটা সারপ্রাইজ দিলাম আর সাথে ভালো কয়েক পদ রান্নাবান্না করে দুই পরিবার একসাথে নাহয় কিছুটা ভালো সময় কাটালাম।কি বলিস?
-খুব ভালো ভেবেছো।এতো মাস পর ও ওর বাড়ি ফিরতেছে।কিছু তো বিশেষ করাই উচিৎ।

বাজারের লিস্ট বানিয়ে আরহান সাহেবের হাতে ধরিয়ে দিয়ে কেবলই বারান্দায় এসে দাঁড়ালো আর্শি।পড়ন্ত বিকেল।সন্ধ্যে নামবে নামবে ভাব।আকাশ লালচে-সোনালি বর্ণ ধারণ করে আছে।এ আকাশ পানে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে নিলো আর্শি।মুহূর্তেই মুগ্ধতায় ভরে উঠলো তার হৃদয়।আকাশ এতো অপরূপ কেনো?এ সৌন্দর্য যে হৃদয়ে ঝড় তোলে তা কী জানে ঐ অম্বর?
আর্শি তার ঠোঁটে হাসি টানলো।আকাশ পানে দৃষ্টি রেখে বলে উঠলো,

“প্রিয় অম্বর, আমার প্রেমিক হবা? জানো আমার একজন একান্ত ব্যাক্তিগত পুরুষ আছে।কিন্তু সেই পুরুষ টা না আমাকে ভালোবাসে না,হয় না আমার প্রেমিক।তুমি হবা? তোমার বিশালতায় আমায় একটুখানিই নাহয় ঠাঁই দিলা।আমি নাহয় নিজের দুঃখগুলো তোমার বুকে একটুখানি সমাধিত করলাম।একটু জড়িয়ে নেবে আমায় তোমার বিশালতায়? এইযে বুকে অসহ্য যন্ত্রণা হয়, মানুষটাকে হারানোর ভয় হয়,মানুষটাকে কাছে না পাওয়ায় শূন্য শূন্য লাগে নিজেকে,মানুষটার পরিবর্তনগুলো ক্ষতবিক্ষত করে এ হৃদয়, একটু শুষে নেবে এ পীড়াগুলো?আমাকে তোমার বানাবে?তুমি কী হবে আমার দুঃখ প্রশমনকারী?”

কথাগুলো বলতে বলতেই এক বিন্দু দুঃখ কণা গড়িয়ে পড়লো আর্শির ডান চোখের কোণ বেয়ে।এতো আবেগী কেনো সে?নিজেই যেনো এতে বিরক্ত হলো মেয়েটা।হাতে তুললো নিজের ফোন টা।স্ক্রিন অন করতেই একখানা ম্যাসেজ চোখে পড়লো আর্শির।নিশির তরফ থেকে এসেছে,
“দোস্ত স্যরি। দেখ আমি বুঝিনি তোর এতো খারাপ লেগে যাবে।এহসান ভাই তো শুধু মজা করে চেতায় তোকে।একটু মজাও বুঝিস না?”

এ ম্যাসেজে রাগ কমার বদলে বাড়লো আর্শির।ম্যাসেজ হতে চোখ ফিরিয়ে এক্টিভ ফ্রেন্ডস দেখতে গিয়েই তার চোখে পড়লো বিহানের আইডি।ছেলেটাকে কেনো যেনো অতিরিক্তই মনে পরছে তার।একটুখানি কথা বলার জন্য হৃদয়ে অসহ্য ছটফটানি হয় আজকাল,যা বাড়ছে প্রতি ক্ষণে।
খুব চেয়েও এবার নিজেকে নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলো আর্শি।না চাইতেও একখানা ম্যাসেজ দিয়েই বসলো সে।লিখলো,
-কেমন আছেন?

নদীর পাড়ে বসে সূর্যাস্ত দেখায় ব্যস্ত বিহান।প্রকৃতির মাঝে সীমাহীন মুগ্ধতা খুঁজে পায় সে।ক্ষণে ক্ষণে প্রেমে পড়ে সে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে।প্রকৃতির রূপে মুগ্ধ হওয়া,হৃদয়ের অন্তস্থল হতে তা অনুভব করা,উপভোগ করা সবটাই যেনো তীব্র সুখের।বিহান ভালোবাসে এ সুখ কুড়িয়ে নিতে।
হটাৎ ফোনে ম্যাসেজের শব্দ হতেই মুগ্ধতার ধ্যান ভাঙলো বিহানের।ফোনের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো সে।সূর্যাস্ত মেয়েটার ভীষণ প্রিয়।কিছু ছবি তুলে পাঠাবে কী সে আর্শিকে?
কয়েক মিনিট পর বিহানের ম্যাসেজ এলো,

-আলহামদুলিল্লাহ, আপনি?
বিহানের উত্তর পাওয়া মাত্রই অদ্ভুত খারাপ লাগারা এসে জায়গা করে নিলো আর্শির হৃদয়ে।সে কী বিহানের জন্যে এতোটাই পর হয়ে গিয়েছে যে এখন বিহান তাকে ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করছে!
নিজের খারাপ লাগাগুলো চেপে আর্শি লিখলো,
-আলহামদুলিল্লাহ। আপনি কী আমাকে মিস করেননি একটুও?
-নাহ।ব্যস্ত থাকি তো।

এ ম্যাসেজখানা পাঠিয়েও মৃদু হাসলো বিহান।যার সাথে দিন-রাত কথা হতো তার স্মৃতি না চাইতেও তো হৃদয়ে উঁকি দেয়ই।তাহলে এমন যুক্তিহীন প্রশ্ন কেন করে মেয়েটা?
অভিমান বাড়লো আর্শির,বাড়লো হৃদয়ের জ্বালাপোড়াও।শুধু শুধু কেন ম্যাসেজ দিয়ে মানুষটাকে বিরক্ত করলো সে?
অভিমানে সিক্ত চোখজোড়া নিয়ে সে লিখলো,
-ওহ, ওকে বাই।

বিহান বুঝলো আর্শির অভিমান,মেয়েটার বোকামি মৃদু হাসালোও তাকে।মেয়েটা কেন বুঝলো না যে সে মিথ্যে বলেছে?মুখের কথাই কী সবসময় বিশ্বাস করতে হয়?হৃদয়ের লুকোনো সত্য টা কী একটুও উপলব্ধি করা যায় না?
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ক’খানা ছবি তুলে নিলো বিহান মনোমুগ্ধকর সূর্যাস্তের।অতঃপর তা পাঠিয়ে দিলো আর্শির ইনবক্সে।
আর্শির অভিমানী হৃদয় ছবিগুলো দেখে মুহূর্তের মধ্যেই শান্তি অনুভব করলো।মনে মনেই সে বলে উঠলো,
“উফ কী সুন্দর!”

নিরবে যতনে নিজেদের মুঠোফোন দু’টো কানে চেপে ধরে রেখেছে দু’জন মানব-মানবী।শব্দ নেই তাদের দু’জোড়া ঠোঁটে।মনের সাথেই যেনো মনের সন্ধি ঘটেছে এথায়।দু’জনার স্বস্তিমাখা নিঃশ্বাসে যেনো পরিবেশে প্রেমের সুবাস ছড়াচ্ছে।
নিরব প্রেমের এবার ইতি টানলো আর্শ।ভোকাল কর্ড নড়েচড়ে উঠলো তার।সে ক্ষীণ স্বরে বলে উঠলো,
-ফাইনালি মিয়ু।

ঠোঁটে বিশ্ব জয়ের হাসি নিয়ে জোরে এক শ্বাস নিজের মাঝে টেনে নিলো মিয়ামি।আলতো শব্দ করে উঠলো সে,
-হু।
আবারও নিরবতা ছেয়ে গেলো দু’জনার মাঝে।অতি দুঃখে মানুষ যেমন করে পাথর হয় তেমনই অতি সুখেও তারা হয় বাকরুদ্ধ।
নিরবে কিছুটা সময় পাড় করবার পর মিয়ামি থেমে থেমে বলে উঠলো,

-আমাদের পুঁচকে সাত মাসের সময় আবারও নিজের বাসায় ফিরবে,আর্শ।
কথাখানা বলে চোখ বুঁজলো মিয়ামি।ঠোঁটে হাসি টেনে হাত রাখলো তার উঁচু পেটটার উপর।পুনরায় বলে উঠলো,
-এতোদিন নানুবাড়ির আদর লুটেপুটে নিয়েছে সে এখন দাদাবাড়ীর আদর নিবে।আমার কী মনে হয় জানো? ও হয়তো একটু বেশিই এক্সসাইটেড এতে।আজ পেটুর মধ্যে কেমন যেনো একটু বেশিই নড়াচড়া করতেছে সে।
হাসলো আর্শ।আফসোসের কন্ঠে বলে উঠলো,

-ইশ,ওর প্রথম লাত্থি,নড়াচড়া করা কোনোটাই অনুভব করতে পারলাম না,মিয়ু।
বলে একটু থামলো আর্শ।পুনরায় বলে উঠলো,
-একবার শুধু আসো তুমি, এক সেকেন্ডের জন্যও তোমাদের কাছ থেকে সরবো না।প্রতিটা মুহূর্ত আমার বাচ্চা ও তার মার সাথে থাকবো তাদের অনুভব করবো।এতো মাসের জমানো সব মানে সব আদর আদান-প্রদান করবো।
ঠোঁটে মুগ্ধতার হাসি প্রশস্ত হলো মিয়ামির।এতোটা সৌভাগ্য ক’জন নারীর ভাগ্যে জোটে?আচ্ছা কারো নজর লেগে যাবে না তো তার সৌভাগ্যে?

এ নিয়ে আর ভাবলো না মিয়ামি।প্রসন্ন মনে মিয়ামি দুষ্টুমি ভরা কন্ঠে বলে উঠলো,
-এতো লোভ কী ভালো হচ্ছে মিস্টার?জানেন না লোভে পাপ, পাপে মৃত্যু?
-আমার তো ভীষণ লোভ হচ্ছে মিয়ু।এ লোভ তো সামলে নেওয়া সম্ভব নাহ।তাহলে কী আমার মৃত্যু হবে?

প্রণয় আসক্তি সিজন ২ পর্ব ১৫

প্রশ্নখানা দুষ্টুমির ছলেই করলো আর্শ।কিন্তু এতে তৎক্ষনাৎ ক্ষত হলো তার প্রেয়সীর হৃদয়।আর্শের করা এ প্রশ্নটা যেনো বিষাক্ত তীরের মতো গিয়ে বিধলো মিয়ামির বুকের মাঝখানটায়।মুহুর্তেই চোখ ভিজে উঠলো তার,হৃৎস্পন্দনের গতি সর্বোচ্চে পৌঁছালো।নিঃশ্বাস নেওয়াটাও যেনো কঠিন হয়ে উঠলো মুহুর্তেই।এ মানুষটার কিছু হলে মিয়ামির নিঃশ্বাস কী চলবে আদৌও?

প্রণয় আসক্তি সিজন ২ পর্ব ১৭