হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ৪৩

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ৪৩
সাদিয়া জাহান উম্মি

এখন পুরোপুরি সুস্থ আরাবী।নিজের সব কাজ নিজেই কর‍তে পারে।কোন সমস্যা হয় নাহ।তাই জায়ানও আজ দুদিন হয়েছে অফিস জয়েন করেছে।অবশ্য যেতে চায়নি।আরাবীই ঠেলেঠুলে পাঠিয়েছে।কতো আর ঘরে বসে থাকবে? জিহাদ সাহেব,মিহান সাহেব তো বয়স্ক মানুষ।বেচারা ইফতির উপরেই প্রেসার পরে যায় বেশি।আর তাছাড়া আলিফা আর ইফতির নতুন নতুন প্রেম।কয়েকদিন পর বিয়েও হবে।

অথচ ওর কারনে তারা ঠিকঠাকমতো যে একে-অপরের সাথে একটু ফোনালাপও করতে পারে না তা বেশ বুঝে আরাবী।আলিফা মেয়েটা যতোই নিজের মন খারাপ লুকিয়ে রাখুক।আরাবী ঠিকই বুঝে যায়।আরাবী আজ ভার্সিটি যাবে।কতোদিন হয়েছে যায় নাহ। বাড়িতেই জায়ান সব নোটসগুলো এনে দেয়।আবার আলিফাও মাঝে মাঝে এসে ওকে হেল্প করে।
ভার্সিটিতে এসে দেখে আলিফা আগেই দাঁড়িয়ে ভার্সিটর বড় মেহগনি গাছের নিচে।আরাবী এগিয়ে গেলো আলিফার কাছে।আলিফা ওকে দেখেই জড়িয়ে ধরল।ক্ষানিকটা সময় পর আরাবীকে ছেড়ে দিয়ে বলে,’ কেমন আছিস তুই?’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘আলহামদুলিল্লাহ ভালো।তোর কি খবর?’
‘ আমিও ভালো আছি।তোর শরীরের অবস্থা কেমন?এখনও কোথায় ব্যথা ট্যথা আছে নাকি?’
‘ নাহ নেই।তাই তো উনি আমায় আসতে দিলেন ভার্সিটিতে।নাহলে তো বিছানা থেকেও নামতে দেয় নাহ।’
‘ বাহ বাহ কত্তো প্রেম,কত্তো ভালোবাসা।’
আরাবী চোখ ছোটো ছোটো করে তাকাল।বলল,’ ওহ?আমার সময় এমন করছিস।তুই মনে হয় ধোঁয়া তুলসীপাতা। ইফতি ভাইয়ার সাথে মনে হয় অন্য মেয়ে প্রেম করে।’

জিভ কাটল আলিফা।বলল,’ আরেহ কি বলছিস।এমন কিছুই নাহ।’
‘ কেমন কিছু তা আমি ভালোভাবেই জানি।দুজনে যে বিয়ের জন্যে পাগল হয়ে গিয়েছ তা খুব ভালোভাবেই জানি।’ তিপ্পনি কাটল আরাবী।
আরাবীর কথায় তেতে উঠল আলিফা।বলে,’ নিজের কি হ্যা?নিজে তো বিয়ে করে দিব্বি জামাই নিয়ে সুখে আছ।আমি যে তোমার বেষ্টফ্রেন্ড আমার কথা একটু ভাবিস তুই?’

‘ ভাবি না কে বলল?আমিই তো সবচেয়ে বেশি ভাবি।’
‘ কি ভাবিস তুই?’
‘ এইযে তুই যেন ইফতি ভাইয়ার সাথে ভালোভাবে প্রেম করতে পারিস তাই তো নিজের বরকে ঠেলেঠুলে অফিসে পাঠালাম।’ বলল আরাবী।

আলিফা এইবার চুপ করে রইল।আরাবী বলে,’ আমি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ।তাই উনাকে বলব যাতে খুব শীঘ্রই তোদের বিয়ের ডেইট ফিক্স করেন।খুব তাড়াতাড়িই তোদের বাড়িতে যাবো আমরা।তৈরি থাকিস।’
বিয়ের কথা শুনে লজ্জা পেল আলিফা।প্রতিত্তরে মুঁচকি হাসল। তা দেখে আরাবী বলে,’ ইস,লজ্জায় টমেটো হয়ে গেল একদম।’

‘ তুই বুঝি লজ্জা পাসনি?জায়ান ভাইয়াকে দেখে তো পারলে লজ্জায় মাটির নিচে ঢুকে যাস।’ আরাবীকে খোটা দিতে পেরে গর্বে বুক ফুলে গেল আলিফার।
‘ আর তুই বুঝি তা লুকিয়ে লুকিয়ে দেখেছিস?’
‘ আমি কেন লুকিয়ে দেখতে যাব?চোখের সামনেই তো সব ঘটেছে।’
‘ হয়েছে চুপ কর।’

তুই বান্ধবী এইভাবে খুনশুটি করে ভার্সিটির সময়টুক পার করল।ভার্সিটি ছুটি হতেই দুজনেই বাড়ি ফিরে যায়।বাসায় এসে দেখে আরাবী বাড়িতে বেশ তোড়জোড় করে আয়োজন চলছে।কি হচ্ছে ব্যাপারটা বুঝল না আরাবী।তাই সোজা রান্না ঘরের দিকে এগোলে।দু শাশুড়ি মায়ের কাছে জিজ্ঞেস করলেই জানা যাবে।রান্না ঘরে যেতেই দেখে তারা খাবারের বেশ জমজমাট আয়োজন করছেন।আরাবী সাথি বেগমের পাশে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘ আজ এতো আয়োজন কিসের মা?মানে আজ কি কোন বিশেষ দিন?’

সাথি বেগম ইলিশ মাছ ভাজছিলেন।ছেলের বউয়ের প্রশ্ন শুনে তিনি হেসে বলেন, ‘ না কোন বিশেষ দিন নাহ।তোমার ফুপা শশুড় আসছেন আমেরিকা থেকে।অনেক বছর হয়েছে তিনি আসেন নাহ।অনেক বছর মানে অনেক।মিথিলা আপা আর অহনা তো সেই জন্যেই আমেরিকা ব্যাক করেছিল।মূলত তোমার বাবাই আপাকে বলেছিল তারা যেন ভাইয়াকে নিয়েই আবার এই বাড়িতে আসেন।জানো তো একটা বিষয় মিথিলা আপা যেমনই হোক ভাইয়া কিন্তু অনেক ভালো।একদম খাটি মনের মানুষ।’

সাথি বেগমের কথায় বেশ ভালো লাগল আরাবীর।সাথি বেগম যেহেতু বলেছেন তাহলে নিশ্চয়ই ভালো মনের মানুষ হবে লোকটা।আরাবী হাসিমুখে বলে,’ মা আমি কোন হেল্প করব?’
মিলি বেগম দ্রুত পায়ে ওর কাছে এসে বলে,’ কোন হেল্প লাগবে না তোমার। তুমি যাও রেস্ট কর।’
‘ টানা কতোদিন রেস্ট করেছি সেই হিসেব করেছেন আপনারা?আর কতো কাকিমা।ভারি কোন কাজ করব না তো।এইতো হালকা পাতলা কিছু হেল্প করি।’

দুজন হার মানলেন আরাবীর কাছে।মিলি বেগম বলেন, ‘ লেবুগুলো কেটে শরবত বানিয়ে ফ্রিজে রেখে দেও।তারপর গেস্টরুম দুটোতে গিয়ে দেখে আসো একটু ঠিকঠাকভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়েছে কিনা।’
‘ আচ্ছা কাকিমা।’

আরাবী মিলি বেগমের কথা মতো কাজ করতে চলে গেল।শরবত বানানোর কাজ শেষ করে আরাবী গেলো গেস্টরুমের পরিষ্কারের কাজ কতোটুক হয়েছে তা দেখার জন্যে।গিয়ে দেখল কাজ প্রায় শেষ তাও আরেকটু বলে কয়ে সবাইকে দ্রুত কাজ শেষ কর‍তে বলল আরাবী।সব কাজ শেষ করে আবার রান্নাঘরে ফিরে আসল।বলল,’ সব কাজ শেষ আম্মু,কাকিমা।আর কিছু বাকি আছে?যা আমি কর‍তে পারব?’
‘ নাহ, আর কিছু বাকি নেই।এইবার তুমি যাও ফ্রেস হয়ে আস।তোমার বাবা,কাকা,জায়ান আর ইফতি বোধহয় এখনই এসে পরবে।’

অবাক হলো আরাবী শুনে। জায়ানও যে তাদের এয়ারপোর্টে গিয়ে রিসিভ করতে যাবে তা তো বলেনি আরাবীকে। এমনকি যে তার ফুপা আসবে এটাও জানায়নি।যাক অতোশতো ভাবল নাহ আরাবী।মাথা থেকে সব ঝেড়ে ফেলে দিল।তারপর ফ্রেস হতে চলে গেল।বাড়িতে মেহমান আসবে তাই সুন্দর দেখে একটা বেবি পিংক কালারের জামদানি শাড়ি পরল ফ্রেস হয়ে।কানে,গলায়,হাতে স্বর্ণের গহনা পরে নিল।চুলগুলো বেনি করে নিল আরাবী।এমন সময় রুমে প্রবেশ করল জায়ান।আরাবী আয়নায় জায়ানকে দেখেই উঠে দাঁড়াল।জায়ান খেয়াল করেনি আরাবীকে। আরাবী কাছে যেতেই ওকে দেখে থমকে যায় জায়ান।পরক্ষনে মুঁচকি হেসে বলে,’ ভীষণ সুন্দর লাগছে।’

‘ ধন্যবাদ।’ লাজুক হেসে বলে আরাবী
তারপর জায়ানের গায়ের কোট খুলতে সাহায্য করল। জায়ান বলে,’ আজ ভার্সিটির দিন কেমন কাটল।’
আরাবী হেসে দিয়ে বলে,’ ক্লাস করলাম কোথায়?আজ দু বান্ধবী চুটিয়ে আড্ডা দিয়েছি।’
‘ এইজন্যেই কি তোমাকে আমি ভার্সিটি যাওয়ার পারমিশন দিয়েছি?’
‘ আহ, এমন করছেন কেন?আজ কতোদিন পর ভার্সিটিতে গেলাম।তাই আড্ডা দিয়েই দিন কাটিয়েছি।’ নিজের দোষ ঢাকতে তা বুঝার জন্যে বুঝালো আরাবী

‘ হয়েছে আর বলতে হবে নাহ।’
‘ হুম যান ফ্রেস হয়ে আসুন।’
‘ ফুপা এসেছে।’ আচমকা বলল জায়ান।
আরাবী মুঁচকি হেসে বলে, ‘ শুনেছি আমি।মা বলেছেন।আপনি কি মনে করেছেন আপনি না বললে মনে হয় আমি জানতে পারব নাহ।’
বলেই আরাবী আলমারির দিক চলল জায়ানের জামা কাপড় বের করে দিবে বলে।তার আগেই জায়ানের শীতল কন্ঠের ডাকে থেমে গেল।

‘ আরাবী?’
‘ হুঁ!’
‘ যদি কোনদিন এমন কোন সত্যের সম্মুখীন হও তুমি।যা তুমি কখনও কল্পনাও করোনি।তাহলে কি করবে তুমি?’
জায়ানের হঠাৎ এমন গম্ভীর কণ্ঠে বলা কথাগুলো শুনে থমকে গেল আরাবী।হঠাৎ জায়ান এমন একটা কেন বলল?কি এমন কারন? আরাবী বেশ ঠান্ডা গলায় বলে,’ হঠাৎ এসব বলার মানে কি? কেন আপনি এমন কথা বলছেন?’
জায়ান থমথমে গলায় বলে, ‘ আমি যা জিজ্ঞেস করছি তার উত্তর দেও। ‘

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ৪২

‘ কিছুই করব নাহ।হয়তো কষ্ট হবে।কিন্তু ভেঙে পরবো নাহ। আর বাদ বাকি রইল যা হবার হবে।আপনি আছেন তো।’
জায়ানের মনটা শান্ত হলো আরাবীর কথায়।আরাবী কাছে গিয়ে ওর কপালে চুমু খেয়ে বলে,’ হুম।আমি আছি তোমার কাছে পাশে সবসময়, আজীবন।’
‘ আমি জানি।’

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ৪৪