হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ৪৪

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ৪৪
সাদিয়া জাহান উম্মি

জায়ানের সাথেই নিচে নেমে আসল আরাবী।উদ্দেশ্য ফুপা শশুড়ের সাথে সাক্ষাত করবে।আবার একটু কেমন যেন লাগছে।মিথিলা বেগম এসেছেন।তিনি তো আবার আরাবীকে দেখতে পারেন নাহ।জায়ান হয়তো বুঝতে পারল বিষয়টা।আরাবীর হাত ধরে ধীর আওয়াজে বলে,’ ডোন্ট ওয়েরি।ফুপা এসেছেন।ফুপার সামনে ফুপি কিছুই বলবেন না।আর যদি বলেনও আমি আছি তো।’

জায়ানের ভরসা পেয়ে মুঁচকি হাসল আরাবী।দুজনে বসার ঘরের দিকে অগ্রসর হলো।আরাবীকে দেখে আহানা এসে ওকে জড়িয়ে ধরল।আকস্মিকতায় অবাক হলো আরাবী।আহানা বলছে, ‘ তোমাকে অনেক মিস করেছি আমি আরাবী।তুমি এক্সিডে’ন্ট করেছ শুনে আমার অনেক খারাপ লেগেছে।কিন্তু ব্যস্ততার কারনে আসতে পারিনি আর ড্যাড এরও কাজ শেষ হচ্ছিলো না তাই আসতে পারছিলাম নাহ।’
আরাবী সরে আসল আহানার থেকে।জোড়পূর্বক হেসে বলে, ‘ ইট্স ওকে আপু।আমি এখন ঠিক আছি।তুমি ভালো আছ?’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘ হ্যা অনেক ভালো আছি।তোমার অবস্থা কেমন?’
‘ আ’ম নাও টোটালি ফাইন।’
‘ দেট্স গ্রেট।’
পরক্ষনে আবারও আহানা বলে,’ ওহ চলো আমার ড্যাডের সাথে তোমার মিট করাই।’
আহানা আরাবীর হাত টেনে নিয়ে গেল এক নিহান সাহেবের বয়সী একজন লোকের সামনে তারপর তাকে ইশারা করে বলে,’ হিজ মাই ড্যাট। আর ড্যাট ও হলো আরাবী।জায়ানের ওয়াইফ।’

‘ জি আসসালামু আলাইকুম।’
আহানার বাবা সালামের আরাবীর সালাম দেওয়া শুনে মুচকি হেসে বলেন,’ওয়া আলাইকুমুস সালাম। মাশা-আল্লাহ। জায়ান বাবার পছন্দ আছে দেখছি।একদম হুরপরি বউ এনেছে।’

আরাবী কিছুই বলল না।শুধু একধ্যানে তাকিয়ে রইল লোকটার দিকে।কেমন যেন লাগছে বুকের মাঝে।লোকটা প্রথম দেখাতেই আরাবী অদ্ভূত একটা টান অনুভব করছে লোকটার প্রতি।মনে হচ্ছে সোফায় বসা এই লোকটা আরাবীর চেনা।অনেক আগের চেনা।কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব?লোকটাকে দেখেই কেন যেন আরাবীর চোখ ভিজে উঠতে চাইছে বারবার।এমন সময় পাশে কারো উপস্থিতি লক্ষ্য করে তাকায় আরাবী।জায়ান আরাবীর হাত ধরল।তারপর দৃষ্টি তাক করল ওর ফুপার দিকে।বলল,’ ধন্যবাদ ফুপা।আর রইল আপনার কথা।আপনারই রক্ত রইছে ওর শরীরে।সুন্দর না হয়ে যাবে কই।’
আরাবী চমকে তাকাল।জায়ানের ফুপাও অবাক হয়ে বলেন,’ মানে কি বলছ তুমি জায়ান?’

জায়ান বাঁকা হেসে বলে,’ আরেহ ওই তো আপনি একবার বাবাকে রক্ত দিয়েছিলেন না?তখন জেনেছি আপনার রক্তের গ্রুপ ও পজেটিভ।আর আরাবীরও ও পজেটিভ।এখন আপনিই দেখতে সুন্দর।আমার আব্বুও সুন্দর।আরাবীও সুন্দর।ও পজেটিভ রক্তের অধিকারিরা বুঝি সবাই সুন্দর হয়। তাই তো বললাম আপনার শরীরের রক্তও ওর শরীরে বইছে।এইজন্যেই ও সুন্দর।’

জায়ান সবাইকে বিষয়টা বুঝিয়ে বলল।সবাই জায়ানের রসিকতায় হো হো হেসে দিল।কিন্তু আরাবীর কেন জানি জায়ানের অহেতুক লজিকটা ভালো লাগছে না।কিছু তো একটা জায়ান লুকোচ্ছে।আরাবীর মস্তিষ্ক কিলবিল করে উঠল।ছোটো মনে চিন্তারা এসে হানা দিল।মন বারবার কু ডাকছে তার।কিছু তো একটা খারাপ হতে চলেছে।কিন্তু কি হবে?মনের অস্থিরতা কাউকে বুঝতে না দিল না আরাবী।আস্তে করে বলে, ‘ আমি মায়ের কাছে গেলাম।টেবিলে খাবার দিতে হবে।’
‘হুম যাও।আজ কিন্তু তুমিই ফুপাকে সার্ভ করবে আরাবী।’

‘ জি আচ্ছা।’
জায়ানের অদ্ভূত সব কথাবার্তা আর ব্যবহারগুলো ভালো ঠেকছে না আরাবীর কাছে।তাও সেখান থেকে সরে আসল।সাথি আর মিলির সাথে খাবার সাজাতে হেল্প করল ও।নূর গিয়ে ডেকে আনল সবাইকে।সবাই এক এক করে চেয়ার টেনে বসল।আরাবী পোলাওয়ের বাটি নিয়ে সবাইকে সার্ভ করতে লাগল।তারপর জায়ানের ফুপার কাছে আসতেই জায়ান রহস্যময় হেসে বলে,’ ভালোভাবে খেয়ে নিন ফুপাজি। ও তো আপনারই সন্তান। মেয়ের হাতে সার্ভ করা খাবারটা পেট ভরে খাবেন কিন্তু।’

জায়ানের ফুপা ভ্রু-কুচকে তাকালেন।জায়ান তা দেখে বলে,’ মানে আহানা আপনার মেয়ে।আপনিই তো নূরকেও নিজের মেয়ে বলে দাবি করেন।আর আজ থেকে আরাবীও সেই তালিকায় যুক্ত হলো।কি ঠিক বললাম নাহ ফুপা?’
‘ হ্যা হ্যা অবশ্যই,অবশ্যই।আজ পেট ভরে খাবো।আরাবী দেও মা প্লেট ভরে খাবার দেও।আজ কতোদিন পর নিজের দেশে আসলাম।’

আরাবী তাকে সার্ভ করে জায়ানের দিকে তাকাল।জায়ান চোখের ইশারায় ওকে বসতে বলল।আরাবী বসল।এখন জায়ানের ফুপা আরাবীর একপাশে আর অন্যপাশে জায়ান।আরাবী এইবার ফিসফিস করে জায়ানকে বলে,’ আপনি আজ এমন অদ্ভূত বিহেইভ করছেন কেন?’
‘ কোথায় অদ্ভূত বিহেইভ করলাম আরাবী?’ এমন ভাব করল জায়ান।যেন সে কিছুই জানে না।
আরাবী চিন্তিত স্বরে বলে,’ আপনি তো খাবার সময় এতো কথা বলেন নাহ।’

‘আজ ফুপা এতো বছর পর এসেছে।তাকে সেই আমি ছোটো থাকতে সামনাসামনি দেখেছি।তাকে এতোদিন পর পেয়ে কথা যেন ফুরাচ্ছে না আমার।’
আরাবী কপালে ভাঁজ ফেলে তাকিয়ে রইল জায়ানের দিকে।জায়ানের সবার অগোচরে আরাবীর বামহাত চেপে ধরল।কণ্ঠ খাদে নামিয়ে বলে,’ এতো চিন্তা করো কেন শুধু শুধু বলো তো? আমি আছি তো।’

আরাবীর সকল চিন্তা যেন এক নিমিষেই গায়েব হয়ে গেল জায়ানের এই একটা বাক্যে। ও আর কথা বাড়াল না।চুপচাপ খাবারে মনোযোগী হলো।এদিকে খেতে খেতে নিহান সাহেব বলে উঠেন,’ শামিম দেশে এসেছেন এতোদিন পর।জায়ানের বিয়েটা তো এটেন্ড করতে পারেনি।তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি ইফতির বিয়েটা শামিম থাকতে থাকতেই সেরে নিব।কি বলো সবাই?’

ইফতি নিজের বিয়ের কথা শুনে খুক খুক করে কেশে উঠলো। নূর একগ্লাস পানি এগিয়ে দিল ওর দিকে।ইফতি ঢকঢক করে একগ্লাস পানি খেয়ে নিল।তারপর বড়ো বড়ো চোখে নিহান সাহেবের দিকে তাকাল।ওর এমন রিয়েকশনে নূর খিলখিল করে হেসে দিল।আর বাকি সবাই মুখ টিপে হাসছে।জায়ান বলে,’ হ্যা বাবা।তুমি আজ এই কথাটা না উঠালেও আমিই বলতাম।অলরেডি অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।এইবার আর না পিছানই ভালো।’

নিহান সাহেব মাথা দুলিয়ে সায় দিলেন ছেলের কথায়।তারপর শামিম মানে জায়ানের ফুপা।তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘ কি শামিম?থাকতে পারবে তো? আমি কিন্তু কোন এক্সকিউজ শুনব নাহ।’
জায়ান তাকাল শামিম সাহেবের দিকে।রহস্যময় হেসে বলে,’ ফুপার এইবার পালিয়ে যাবার কোন পথ নেই।এইবার আমি সব পথ বন্ধ করে দিয়েছি।সে চাইলেও পালাতে পারবে নাহ।আমি তা কখনই হতে দিব নাহ।’
শামিন সাহেব ভ্রু-কুচকে বলেন,’ পালিয়ে মানে?’

জায়ান হেসে হেসে বলে,’ উম, আমি ছোটো ছিলাম তখন তুমি আমাকে না জানিয়েই চলে গিয়েছেলি।মানে আমার থেকে একপ্রকার পালিয়েই তো গিয়েছিলে তাই নাহ? এখন তো আমি বড় হয়েছি তাই এখন আর আমানে না জানিয়ে আমাকে ফাকি দিয়ে পালিয়ে যেতে দিব নাহ।’
‘ ওহ তাই বলো।তুমি যে এতো রসিকতা করতে পারো জানতাম নাহ।’ বলেই শামিম সাহেব হো হো করে হেসে দিলেন।
আরাবীও বিরবির করল,’ আমিও জানতাম নাহ।যেই লোকের মুখে বো’ম মারলেও সহজে একটা কথা ঠিকঠাকভাবে বের হয় না কেউ কিছু জিজ্ঞেস করলে।সেখানে আজ যেন লোকটার মুখে খই ফুটেছে।এতো কথা তো সে আমার সাথেও বলে নাহ।’

‘ কি বিরবির করছ আরাবী?’
জায়ানের প্রশ্নে থেমে যায় আরাবী।বলে,’ না কিছু না।’
‘ জলদি খাও।সেই এক চামচ পোলাও নিয়েই বসে আছ।বাকি খাবার কখন খাবে?এখনও কতো কতো পদের রান্না করা খাবার বাকি।সব খাবার থেকে অল্প অল্প করে খাবে।সামনে তোমার অনেক শক্তির প্রয়োজন।’

টেবিলের দিকে তাকাল আরাবী।পুরো টেবিল জুড়ে কম হলেও দশ থেকে বারো পদের রান্না করা খাবার।সব খাবার থেকে অল্প করে খেলেও দুনিয়ার খাবার হবে আরাবীর জন্যে।এতো খাবার আরাবী ওর ইহ জনমে কোনদিন খায়নি।আরাবী চোখ বড়ো বড়ো করে পলক ঝাপ্টে বলে,’ আপনি কি পাগ’ল?এতোগুলো খাবার থেকে আমি অল্প করে নিলে ঠাসা ঠাসা একপ্লেটের থেকেও বেশি খাবার হবে।আমি এতো খাবার আমার জীবনে কনোদিন খায়নি।’
জায়ানের কোন হেলদোল দেখা গেল না আরাবীর কথায়।ও ডোন্ট কেয়ার মুড নিয়ে বলে,’ খাওনি তো কি হয়েছে?এখন থেকে খাবে।’

‘ কোনদিন নাহ।আমি পারব নাহ।’
‘পারতে হবে।’
‘ কেন?’
দুজনে আস্তে আস্তেই কথাগুলো বলছিল।কিন্তু এইবার জায়ান তরকারি বাটি নেওয়ার উছিলা দেখিয়ে ঝুকে আসল আরাবীর দিক।তার শীতল কণ্ঠে ধীর আওয়াজে বলে,’ কারন ভবিষ্যতে তুমি আমার বাচ্চার মা হবে এইজন্য।’

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ৪৩

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।দ্রুতই ইতি টানছি গল্পটার।গতকাল দিব বলেও দিতে পারিনি তার জন্যে দুঃখিত।তবে ইনশাআল্লাহ কাল দিব।ছোটো হয়েছে তার জন্যে দুঃখিত।

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ৪৫