উষাকালে ঊর্মিমালা পর্ব ২৩

উষাকালে ঊর্মিমালা পর্ব ২৩
জিন্নাত চৌধুরী হাবিবা

হসপিটালের করিডোর জুড়ে লোকসমাগম। দৌঁড়ের উপর ছিলো শামীম। শীতের দিনেও তরতর করে ঘাম ঝরছে তার শরীর থেকে।
মামা বাড়ির লোকজনকে উপস্থিত দেখে ছুটে এলো সে। তাকে দেখে মামা এগিয়ে এলেন। নিভে আসা গলায় শামীম জিজ্ঞেস করলো,

-“কী হয়েছে মায়ের?”
-“সকাল থেকেই নাসিমাকে দেখা যাচ্ছিলো না। দুপুরে খাওয়ার সময় বড় বউমা ডাকতে গিয়ে দেখে নিচে শুয়ে আছে। কয়েকবার ডাকাডাকি করেও যখন সাড়া পেলোনা, তখন মৃদু ধাক্কা দিলো। নাসিমার সাড়া নেই। তারপরই হসপিটালে নিয়ে এসেছি।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মামাকে নিয়ে ডক্টরের চেম্বারে ডুকলো শামীম। কথাবার্তা বলে জানতে পারলো ব্যাপারটা খুবই সিরিয়াস। মায়ের ব্রেইন স্ট্রোক হয়েছে। শরীরের ডান পাশের ক্ষমতা হারিয়ে অকেজো হয়ে পড়েছে। মুখের এক পাশ ঝুলে গিয়েছে।
দীর্ঘশ্বাস ফেলে বেরিয়ে এলো। মাকে যে কেবিনে রাখা হয়েছে, সেখানে প্রবেশ করলো। ঘুমিয়ে আছে মা। ধীর পায়ে মায়ের দিকে এগোলো শামীম। সিটের পাশ ঘেঁষে চেয়ার টে*নে বসলো। মায়ের রুগ্‌ণ হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে হাতের উল্টো পিঠে চুমু খেলো। টুপ করেই একফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো। সঙ্গে সঙ্গে চোখ মুছে নাক টে*নে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলো। মায়ের চুলে হাত বুলিয়ে বেরিয়ে পড়লো। পকেট হাতড়ে মুঠোফোন বের করে উষার নম্বরে কল দিলো।
কল রিসিভ করেই উষা জিজ্ঞাসু গলায় বলল,

-“ভাইয়ার কোন খোঁজ পেয়েছেন?”
শামীম নিস্তেজ কন্ঠে জানালো,
-”নাহ্, মা স্ট্রোক করেছেন। আমি হাসপাতালে আছি।”
ওপাশ থেকে উষার আতঙ্কিত স্বর,
-“সে কি? কখন এমন হলো?”
-“একটু আগেই মামার ফোন পেয়ে হসপিটালে এসেছি। তুমি রিয়াকে দেখে রেখো। ও আবার কান্নাকাটি করবে। আমি বাবাকে জানাচ্ছি।”
উষা বলল,

-“কোন হসপিটালে? আমরা আসবো।”
মানা করলো শামীম।
-“এখন এসে ঝা*মে*লা করার দরকার নেই। আমি পরে তোমাদের নিয়ে আসবো।”
মায়ের কথা শোনার পর থেকেই রিয়াকে থামানো যাচ্ছেনা। নিজেকে দোষারোপ করে যাচ্ছে। তার কারণেই তো মা আজ হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছে। সে কেন মাকে ভাইয়ার কথা জানাতে গেলো?
এখনি মাকে দেখতে যাওয়ার জন্য পাগলামি শুরু করলো। উষা, আর লিলি তাকে কোনোভাবে মেনেজ করে। উষা বলল,

-“তোমার ভাইয়া এখনই যেতে না করেছে। তারচেয়ে বরং রাতের রান্না করে তোমার ভাইয়াকে কল দিলে আমাদের এসে নিয়ে যাবে। ততক্ষণ হয়তো মামা বাড়ির লোকজন থাকবেনা। এতজন একত্রে উপস্থিত হলে খা*রা*প দেখা যায়। তাছাড়া ডাক্তার, নার্স এমন ভীড় দেখলে কথা শোনাবে।”
রাহাতের চিন্তায় সবাই সকাল থেকেই না খাওয়া৷ উষাও এখনো খায়নি। লিলি বলল,
-“খেয়ে নাও। সংসারটা তোমাকেই সামলাতে হবে। তুমি সুস্থ না থাকলে সবাইকে দেখবে কিভাবে?”
উষা মলিন হেসে বলল,

-“সংসারটা আম্মার ছিল। একটা কঠিন সিদ্ধান্তেই সবটা তছনছ করে দিলেন।
ভালো মানুষ হিসেবেই জানতাম উনাকে। আমাকেও ভীষণ স্নেহ করতেন। কিন্তু উনার ভেতরটা যে রূপের মোহে অন্ধ ছিলো, তা কে জানতো? একটা ভুল সিদ্ধান্ত শুধু তিনটি জীবন এলোমেলো করেনি, পুরো একটা পরিবার ছিন্নভিন্ন করেছে। নিজের সংসারটিও হারাতে বসলেন। আমি চেয়েছি আমার বোনের কষ্ট উনি একবার উপলব্ধি করুক। কিন্তু উনার এমন করুণ অবস্থা চাইনি আমি। শেষ পর্যায়ে এসে এতটা পাষাণ হতে পারিনি আমি৷”
এটুকু বলেই থামলো উষা। অতঃপর ধরে আসা গলায় বলল,

-“কতদিক সামলাবো আমি? কোনদিন কোন দায়িত্ব পালন করতে হয়নি আমায়, অথচ এখন এত এত দায়িত্ব আমার। আমার আপু ভেঙে পড়েছে। তাকে সামলানো, এই পরিবারের মানুষগুলোকে সামলানো। সবাইকে সামলানো কি চারটে খানি কথা?
তারউপর শামীম, উনিও হয়তো নিজেকে বেশ শক্ত দেখাচ্ছেন, স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছেন। কিন্তু কতটা নিজেকে সাহস জোগাতে পারছেন?

প্রতিটি মানুষের জীবনেই কোন না কোন দুঃখ আছে। আপনার ও আছে, তাইনা?
এই যেমন, নতুন বিয়ে হতে না হতেই কতটা ঝড়ঝাপটা গেলো। এখন তো স্বামীও নিরুদ্দেশ।”
লিলি ম্নান কন্ঠে বলল,
-“আমি এমনিতেও চলে যেতাম। আম্মাকে বাড়ি আনা হোক, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই আমি চলে যাবো।”
উষা বলল,
-“কেন যাবেন? আমার আপু তো আপনার জায়গায় দখল দিতে আসবেনা।”
-“তোমার আপু দখল দিতে আসবে কী? আমি নিজেই তো অজান্তে তার জায়গা দখল দিয়ে বসে আছি।”

শান্তি আপা আর তার হাজবেন্ডকে হসপিটালে রেখে রাত আটটার পর বাড়ি ফিরলো শামীম। গোসল সেরে রিয়া, লিলি, উষাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। আনোয়ার হোসেন আর জে*দ চেপে রাখতে পারলেন না। তিনিও উপস্থিত হলেন।
উষার বাবা এসে দেখে গিয়েছেন। শত হলেও মেয়ের শাশুড়ী, অপরপক্ষে মুসলিম হিসেবে অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখা জরুরী মনে করলেন।

একে একে সবাই দেখে যাচ্ছে। নাসিমা বেগম তাকিয়ে দেখছেন। চোখের কার্ণিশ বেয়ে জল গড়াচ্ছে। রিয়া বারবার মায়ের চোখের পানি মুছে দিচ্ছে। সে নিজেও কাঁদছে। তবে শব্দ হচ্ছেনা৷ নাসিমা বেগম অনুতপ্ত হয়ে সকলের কাছে ক্ষ*মা চাওয়ার চেষ্টা করছেন। কিন্তু পারছেন না। বারবার কথা জড়িয়ে যাচ্ছে। তাই শামীম মানা করলো এখন কথা বলার দরকার নেই। আগে সুস্থ হয়ে নিক।
উষা আর লিলি জোর করে সবাইকে রাতের খাবার খাওয়ালো। শামীমের জন্য খাবার নিতেই সে বলল,
-“খিদে নেই এখন।”
সবাই কেবিনের বাইরে যেতেই হাত ধুয়ে শামীমের খাবার সামনে নিয়ে বসলো উষা। তার মুখের সামনে খাবার তুলে বলল,

-“আপনার এখন বিশাল দায়িত্ব। মা-বাবা, পরিবার সবার দায়িত্ব এখন আপনার। নিজে সুস্থ না থাকলে তাদের দেখবেন কিভাবে? আপনার উপর তো একজনের দায়িত্ব নয়। সবার পাশাপাশি একটা অবিবাহিত বোন ও আছে আপনার। ভেঙে না পড়ে নিজেকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরুন।”
দ্বিরুক্তি করলোনা শামীম। চুপচাপ উষার হাতে খেয়ে নিলো। খাওয়া শেষে গম্ভীর গলায় বলল,
-“সবাইকে সামলে নেবো আমি। তুমি শুধু আমায় সামলানোর দায়িত্ব নিয়ো।”
শামীমের কাঁধে হাত রেখে মৃূদু হেসে আশ্বস্ত করলো উষা।

রাতে সবাইকেই পাঠিয়ে শামীম, উষা দুজনেই থেকে গেলো। রিয়া বাড়াবাড়ি করলেও তাকে বুঝিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হলো। কান্নাকাটি করে সবার তুলনায় তার অবস্থা বেশি খা*রা*প। রাতে আরো অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। বাবাকেও কেমন নরম দেখাচ্ছে। তাকেও পাঠিয়ে দিল শামীম। শান্তি ছেলেমেয়ে রেখে এসেছে। সেও চলে গেলো স্বামীর সঙ্গে। লিলির সঙ্গে উষাকে পাঠিয়ে দিতে চাইলেও শামীমের কথা চিন্তা করে উষা গেলোনা। সকাল থেকেই ধকল যাচ্ছে মানুষটার উপর। একটু ঘুমিয়ে নিতে পারলে ভালো হতো৷

“একটু আসছি বলে ” শামীমকে রেখে বাইরে গেলো উষা। ভেবেছিল ঘুরে দেখবে কোন কেবিন খালি আছে কি-না। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কোন কেবিন খালি নেই। খালি থাকলে হয়তো শামীমকে কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম নিতে পাঠিয়ে দিতে পারতো। ফ্লোরে ভীষণ ঠান্ডা।
শূন্য হাতে কেবিনে ফিরতেই শামীম জিজ্ঞেস করল,

-“হুট করে কোথায় গিয়েছ?”
-“কোথাও না, একটু আশপাশটা দেখছিলাম৷ আপনি কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিন। এভাবে তো অসুস্থ হয়ে পড়বেন।”
-“ঘুমাতে হবেনা আমার, ঠিক আছি আমি। তোমাকে বলেছিলাম বাসায় চলে যাও। এখন ঘুমাবে কোথায়? তুমি নিজেও তো অসুস্থ হয়ে পড়বে।”

স্ট্রোকের সব রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়না। যেসকল রোগীদের আরো সমস্যা থাকে। ঝুঁকি এড়াতে তাদের ভর্তির প্রয়োজন হয়। নাসিমা বেগমের ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ থাকায় উনাকে ভর্তি করানো হয়েছে। হাসপাতালে থাকতে হবে শুনে নাসিমা বেগমের জন্য কিছু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আলাদা একটি ব্যাগে ভরে নিয়ে এসেছে উষা। সেখান থেকেই দুটো পাতলা কম্বল বের করে একটা ফ্লোরে বিছিয়ে অপরটি উপরে দিলো। বালিশ হিসেবে জামাকাপড়ের ব্যাগটা ব্যবহার করলো। শামীমকে বলল,

-“আপনি কিছুক্ষণ বিশ্বাস নিন। আমি জেগে আছি।”
বাঁধ সাধলো শামীম।
-“তোমার উপরও ধকল গিয়েছে। তুমি ঘুমিয়ে নাও।”
-“দুজনে ভাগাভাগি করে ঘুমিয়ে নিলেই হবে। আগে আপনি একটু ঘুমিয়ে নিন। পরে আমি ঘুমাবো, আপনি আম্মাকে পাহারা দেবেন।”

তপ্ত শ্বাস ফেলে ফ্লোরে করা বিছানায় শুয়ে পড়লো শামীম। সারাদিনের ক্লান্তিতে বিছানা পেতেই শরীরটা বিশ্রাম চাইলো। চোখ লেগে আসলো তার। উষা বসে বসে পাহারা দিলো ঘুমন্ত নাসিমা বেগমকে।
আহা! বড়ই বিচিত্র এই জীবন। প্রতিনিয়ত লড়াই চলে। কারো সুখে থাকার লড়াই, কারো জেতার লড়ায়, সব ছেড়ে ছুঁড়ে কারো বেঁচে থাকার লড়াই। আমরা মানুষরা খুবই লো*ভী, স্বার্থান্বেষী। সবাই নিজের ভালোটাই খুঁজে বেড়াই। অন্যের প্রতি দয়া দেখাবার বিন্দুমাত্র আগ্রহ আমাদের নেই।

আল্লাহ তায়ালা ঐ ব্যক্তির উপর রহম করেন না, যে মানুষের উপর রহম করেনা।
এক সময় নাসিমা বেগমও ঊর্মির উপর অনুগ্রহ দেখাবার প্রয়োজন মনে করেননি। নিজের স্বার্থটাই দেখলেন।
বিচার করতে গেলে শুধু নাসিমা বেগমই নয়, উষা নিজের কথাই ভেবে দেখলো। সে নিজেও নিজের পরিবারের স্বার্থে আজ শামীমের স্ত্রী।

ভাবনার মাঝে হঠাৎই দৃষ্টি পড়লো নাসিমা বেগমের উপর। অল্পস্বল্প নড়াচড়া করছেন। কিছু বলছেন হয়তো। কিন্তু মুখের জড়তার কারণে স্পষ্ট হয়ে উঠছেনা কথা।
কানের কাছে মুখ নিয়ে শুনতে চাইলো সে। বুঝতে পারলোনা। উষা জিজ্ঞেস করলো,
-“পানি?”

নাসিমা বেগম বাঁ হাতের ইশারায় আরেকটু কাছে ডাকলেন উষাকে। এগিয়ে যেতেই তার মাথায় হাত রাখলেন। চোখের পানি ছেড়ে আবার মৃদু শব্দে ঠোঁট নাড়ালেন। উষা আবারও মুখের কাছে কান পেতে রইলো। জড়িয়ে যাওয়া ভাঙা কিছু শব্দ তার কান ভেদ করে ভেতরে প্রবেশ করলো।
“ঊর্মি….. বলে…দিও….ক্ষমা।”
উষা বাকিটুকু বুঝে নিলো। মলিন হেসে বলল,

-“আপনি আগে সুস্থ হয়ে উঠুন। তারপর নিজে তাকে বুঝিয়ে বলবেন।”
শামীম ঘুমালেও আজ আর ভারি ঘুম হলোনা। চোখে রাজ্যের ঘুম নামলেও কান সজাগ রইলো। উষার মৃদু কথা বলার শব্দে তড়াক করে ঘুম ছেড়ে উঠলো সে। ভাবলো মায়ের বুঝি কিছু প্রয়োজন হলো!
উঠেই মা আর স্ত্রীর এমন সুন্দর দৃশ্য দেখে তাদের আর বিরক্ত করার ইচ্ছে হলোনা। পৃথিবীর সব ছেলেই বোধহয় চায় তার মা আর স্ত্রীর মধ্যাকার সম্পর্ক ভালো হোক।

মায়ের দো*ষে যে সবাই শা*স্তি পেয়েছে, মা পায়নি। এমনটা নয়। তিনিও শাস্তি পেয়েছেন। হয়তো বাকি জীবনটাও সন্তান হারানোর শোকে পার করবেন।
খানিকক্ষণ পর কথা বলল শামীম।
-“আমি অনেকক্ষণ ঘুমিয়েছি। এবার তুমি কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নাও। আমি বসছি মায়ের কাছে।”
উষা বিছানায় গেলো। একটা পাতলা কম্বলে শীত কাবার হচ্ছেনা। ফ্লোর থেকে ক্রমাগত ঠান্ডা উঠছে। কিছুক্ষণ এপাশ-ওপাশ করে চোখ বুজলো।

মায়ের হাত ধরে বসে রইলো শামীম। নাসিমা বেগম জড়ানো গলায় কিছু একটা বললেন। মায়ের ঠোঁটের দিকে তাকিয়েই কী সুন্দর বাক্যগুলো সাজিয়ে নিলো শামীম। এতক্ষণ উষা কান পেতেও যা বুঝতে পারেনি। ঠোঁট নাড়ানো দেখেই শামীম সেটা স্পষ্ট বুঝতে পারছে। এটাই হয়তো মায়ের সাথে সন্তানের কানেকশন।
নাসিমা বেগম বললেন,

-“আমার বড় আব্বা কোথায় গেল?”
এই মুহুর্তে নাসিমা বেগমকে দুশ্চিন্তায় ফেলা উনার জন্য বিপদজনক। তাই শামীম মিথ্যে আশ্বাস দিলো মাকে।
-“রা*গ করে বন্ধুর বাসায় উঠেছে। তাকে তোমার কথা জানাইনি। সেজন্যই আসেনি। চিন্তা করো না তুমি।”
নাসিমা বেগম তাচ্ছিল্য করে হাসলেন।

শামীমের মিথ্যেটা সহজেই ধরে ফেললেন, অথচ সেদিন রাহাতের ভেতরটা বুঝতে পারেননি৷ আমরা অনেক সময় কাছের মানুষের চোখ দেখে তার ভেতরটা পড়তে পারলেও জে*দ ধরে নিজের সিদ্ধান্ত তার উপর চাপিয়ে দিতে চাই। তার জন্য নাসিমা বেগম ভীষণ অনুতপ্ত। পা*পে*র শা*স্তি বোধহয় সৃষ্টিকর্তা দুনিয়াতেই দিয়ে দিচ্ছেন। ভাবলেন আজ ম*রে গেলেই হয়তো কষ্ট কমতো। এখনতো যতদিন বাঁচবেন, ততদিনই ম*র*ণ যন্ত্রণায় কাতরাবেন। অর্ধেক শরীরের যন্ত্রণায়, বাকি অর্ধেক অনুশোচনা আর সন্তান হারানোর বেদনায়। মায়ের চোখে চিকচিক করা পানি মুছে দিয়ে শামীম বলল,
-“আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। তুমি ঘুমানোর চেষ্টা করো।”

সকাল সকাল শান্তি নাস্তা নিয়ে হাসপাতালে হাজির। তাকে নামিয়ে দিতে তার হাজবেন্ড ও সাথে এসেছে। তিনি উষার সাথে জড়তার কারণে কথা বলছেনা৷ কখন আবার মাইন্ড করে বসে। তাদের পরিবারের মানুষগুলো খোলামেলা ধরনের। তিনিও তেমনভাবেই বড় হয়েছে। কিন্তু তারও বোঝা উচিত সবাই সবটা পছন্দ করেনা। নতুন বউ পেয়ে অনেকেই মজা করতে আসে। কিন্তু তাদের পরিস্থিতি ভাবার চেষ্টা করেনা। দুলাভাই হিসেবে রাহাতের সাথেও উষার রসিকতার সম্পর্ক ছিলনা। সে ভাবতো তার দুলাভাই নয়, রাহাত তার ভাই হয়ে এসেছে। পরক্ষণে আচমকা ঝড়ে সবটা ওলটপালট ওয়ে গেলো।
উষার হাতে নাস্তা ধরিয়ে শান্তি বলল,

-“তোমরা দুজন নাস্তা করে নাও। প্রায় ঠান্ডা হয়ে এসেছে। একেবারে ঠান্ডা হয়ে গেলে মজা পাবেনা।”
শামীম উষা দুজনেই নাস্তা করে নিলো।
মাকে নিয়ে আরও একদিন হাসপাতালে কাটিয়ে আজ বাড়ি ফিরলে শামীম। সবটা শান্ত হলেও কোথাও একটা শূন্যতা রয়ে গিয়েছে৷ ভাই থাকলে হয়তো পরিবারটি পূর্ণ হতো। মাঝেই লিলি তার চলে যাওয়ার কথা তুললো।
তার বাবা-মা রাহাতের কথা শুনে তার বিরুদ্ধে থানায় স্টেপ নিতে চাচ্ছেন। একের পর এক ঝা*মে*লা এসেই হাজির হচ্ছে। একটা বিদায় করে না দাঁড়াতেই অন্যজন এসে বলে ‘আমি হাজির’।

সবটা এখন শামীমের উপর দিয়েই যাচ্ছে। প্রচন্ড ক্লান্ত সে। বুঝতে পারলো সংসার ধর্ম পালন করা শুধু কঠিন নয়, কঠিনের চেয়েও বেশি কঠিন। যা এতদিন বাবা পালন করে এসেছে।

উষাকালে ঊর্মিমালা পর্ব ২২

(গল্পটিতে দু’দল পাঠক তৈরি হয়েছেন। সবাই নিজ নিজ অনুভূতি থেকে সমাধান চাচ্ছেন। এখন সবাইকে তো আর খুশি করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তাই আমি নিজের মতো করেই লিখছি। হ্যাপি রিডিং।)

উষাকালে ঊর্মিমালা পর্ব ২৪