উষাকালে ঊর্মিমালা পর্ব ২২

উষাকালে ঊর্মিমালা পর্ব ২২
জিন্নাত চৌধুরী হাবিবা

আগ্রহী হাতে লিলির হাত থেকে চিঠিখানা তুলে নিলো শামীম। ভাঁজ খুলে চোখ রাখলো চিঠির প্রথমে। মৃদু শব্দ নিয়ে পড়া শুরু করলো।
❝প্রিয় পরিবার,

চিঠিখানা কার হাতে পৌঁছাবে আমার জানা নেই। যতক্ষণে চিঠি তোমাদের হাতে, ততক্ষণে আমি বহুদূরে। হয়তো কখনোই তোমাদের কাছে ফেরা হবেনা আমার। নিজেকে নিয়ে বাঁচার জন্য হলেও এতটুকু স্বা*র্থ*প*র হওয়া আমি উচিত মনে করি।
আমাকে দশ মাস দশদিন পেটে ধরা থেকে একত্রিশটি বছর আমার মা কষ্ট করেছেন। আমাকে পেটে ধরে কতরাত মা যন্ত্রণায় ঘুমাতে পারেন নি। জন্মের পর থেকে নিজের সবটুকু সময়, ভালোবাসা ব্যয় করেছেন আমাদের পেছনে। কোনদিন কোন চাওয়া অপূর্ণ থাকতে দেননি।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কোনদিন একগ্লাস পানি ঢেলে খেতে দেননি এই ভেবে যে, ছেলের কষ্ট হবে। আমার সামান্য অসুস্থতায় যে মা দিশেহারা হয়ে যেতেন জানিনা তিনি কিভাবে আমার ভালো চাইতে গিয়ে মনের শান্তিটা ন*ষ্ট করে দিলেন। ছোটবেলা থেকেই একজন মা ভক্ত সন্তান কিভাবে তার মায়ের মৃ*ত্যু মেনে নিতে পারে? আর যখন জানতে পারে মায়ের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃ*ত্যু*র জন্য সে নিজেই দায়ী হবে! আমি তখন একটা ট্রমার মধ্য দিয়ে গিয়েছি।

আমার দুজনকেই জীবিত দেখা প্রয়োজন ছিলো। নিজে কোন ধরনের সিদ্ধান্ত আমি নিতে পারিনি। সবাই শুধু আমার দো*ষ*টা*ই দেখছে। শুধু কি আমিই দো*ষী? পরিবারের প্রতিটি মানুষ কি দো*ষী নয়? আমার চলন, ভাবভঙ্গি দেখেও কি কেউ বুঝতে পারেনি আমি সুস্থ, স্বাভাবিক নেই। কেউ তো একবার এসে আমার কাঁধে হাত রাখলোনা। পুরুষ মানুষ শক্ত প্রকৃতির, তাদেরকে দুনিয়ার কোন কষ্টই ছুঁতে পারেনা। আসল সত্যি তো এটাই সবচেয়ে বেশি কষ্ট তাদের হয়। চাইলেই সবার সামনে দু’ফোটা চোখের পানি ঝরাতে পারেনা। ভেতরে যে দহন সৃষ্টি হয় তা কাউকে দেখাতে পারেনা।

আমার সবচেয়ে বড় অন্যা*য় ছিলো মায়ের ফাঁদে পা দিয়ে ঊর্মিকে ছেড়ে দেওয়া। যার প্রায়শ্চিত্ত করছি আমি।
ভীষণ কষ্ট হয়েছে আমার, যখন জানলাম মায়ের সবটা অভিনয় ছিলো। তিনি কখনোই নিজের ক্ষ*তি করতেন না। শুধু আমাকে রোখানোর জন্যই এতকিছু।
এরপর ও মায়ের প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা তিনি ভালো থাকুন।
বাবার কাছে আমার একটাই অনুরোধ, আমার ভু*লে আমি শা*স্তি পাচ্ছি। মাকে আর শা*স্তি দিও না। অনেক তো হলো, ফিরিয়ে আনো তাকে।

আর আমার নিরুদ্দেশ হওয়ার সিদ্ধান্তের জন্য ক্ষমা করো আমায়।
আমি চলে এসে সব ঝা*মে*লা*র সমাধান দিয়ে এসেছি। লিলির সাথে কথা হয়েছে আমার। আমি বাঁধন মুক্ত করে দিয়েছি। সে এমনিতেও চলে যেত। যদি বিয়ে করে নেয়, এতে আমার কোন আপত্তি নেই। সবাই ভালো থাকুক। যদি আ*ত্ম*হ*ত্যা হালাল হতো, তবে আমি সেটাই করতাম।

শামীমের কাছে আমার অনুরোধ! আমি ভালো সন্তান হতে পারিনি, ভালো স্বামী হতে পারিনি আর না ভালো ভাই হতে পেরেছি। সত্যি বলতে হয়তো আমি মানুষই হতে পারিনি। তুই কিন্তু আদর্শ একজন মানুষ হয়ে, মা-বাবা, বোন আর স্ত্রীর হক পালন করবি। সবাইকে দেখে রাখার দায়িত্ব তোর উপর দিয়ে গেলাম।
উষা, আমি জানি সে অবশ্যই ঊর্মির খেয়াল রাখবে। তবুও বলছি তাকে দেখে রেখো।
ইতি
রাহাত❞

স্তব্ধ হয়ে গেলো সকলে। আনোয়ার হোসেন নিরব হয়ে গেলেন। উষা এতটা ভাবতে পারেনি। সে চেয়েছে তার বোন সুখে থাকুক। রাহাত যথেষ্ট শা*স্তি পেয়েছে। তারপরও সে নিজের সারাজীবনের শা*স্তির ব্যবস্থা করলো!
শামীম চোয়াল শক্ত করে লিলিকে জিজ্ঞেস করলো,
-“আপনার সাথে কী কথা হয়েছে ভাইয়ার? বাঁধন মুক্ত করলো মানে কী? যদি আপনি ভাইয়ার নিরুদ্দেশ হওয়া সম্পর্কে অবগত হয়ে থাকেন, আমাদের কেন জানালেন না?”
লিলির চোখে পানি টলমল করে উঠলো। কাঁপা কাঁপা স্বরে বলল,

-“তিনি এভাবে বাড়ি ছাড়বেন আমার জানা ছিলোনা। গতকাল বিকেলে আমাদের মধ্যে টুকটাক কথা হয়। তিনি ঊর্মিকে ভালোবাসেন, আমার সাথে কখনোই সংসার সম্ভব নয় উনার পক্ষে। জোর করে সংসার হলেও সেই সংসারে কোনদিন সুখ আসবেনা। সারাজীবন আমার সাথে অ*বি*চা*র হবে।
আমি বলেছিলাম, ‘তবে আমায় মুক্ত করে দিন।’
তিনি সেটাই করলেন। সহজেই বলে দিলেন,
‘ আজ থেকে তুমি মুক্ত। ভালো কাউকে দেখে জীবন সঙ্গী করে নিও। বিয়ের আগে অবশ্যই খোঁজ খবর নিয়ে দেখবে সে যেন আমার মতো না হয়।’

আমি ভেবেছিলাম তিনি হয়তো আমার কথার জের ধরেই এমন একটা কথা বলে দিলেন। কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমি জানতাম না এমন কিছু ঘটবে। ”
রিয়া কোন শব্দ করলোনা। কেমন যেন পাথরে পরিণত হলো। তার জীবনেও তো কতগুলো মোড় সৃষ্টি হয়েছে।
বাড়ির পরিবেশ একেবারে শান্ত হয়ে গেলো। যেন কোন ভুতুড়ে আস্তানা। রিয়া দেরি করলোনা। মাকে খবরটা শুনিয়ে দিলো। ফোন করেই অনর্গল কাঁদতে কাঁদতে বলে দিলো,
-“সবার জীবন তুমি শেষ করে দিয়েছো, মা। সবার শান্তি নষ্ট করে দিয়েছো। তোমার জন্য আজ বড় ভাইয়া বাড়ি ছেড়েছে। জানো মা ভাইয়া চিঠিতে কি লিখেছে? তোমার উপর তার কোন অভিযোগ নেই। বাবাকে অনুরোধ করেছে তোমায় ফিরিয়ে নিতে।

আরো বলেছে, এ জীবনে তাকে আমাদের আর দেখা হবেনা। তুমি কিভাবে পারলে মা? এত জঘন্য হতে পারলে? তোমায় আমি মা ডাকি কিভাবে বলো আমায়।”
নাসিমা বেগমকে না শুনেই রিয়া কল কেটে দিলো।
এদিকে মেয়ের মুখে অনাকাঙ্ক্ষিত ঝ*ড়ে*র কথা শুনে শরীর অসাড় হয়ে এলো নাসিমা বেগমের। মাথায় তীব্রভাবে ব্যথা শুরু হলো। শ্বাস-প্রশ্বাস অস্বাভাবিক হয়ে শরীর ঘামতে লাগলো। কাঁপুনি ধরলো দেহে। নিজের হাতে সবটা শেষ করেছেন ভেবেই আরো হাঁসফাঁস করে উঠলেন। বসে থাকারও শক্তি পাচ্ছেন না। শরীর নাড়ানোর ক্ষমতা টুকু নেই। শুয়ে পড়লেন নিচে। কোনক্রমেই অস্থিরতা কমছেনা।

সকাল সকাল বাড়িতে চিঠি এলো। ঊর্মির নামে। চিঠিটা তার হাতে পৌঁছেও গেলো।
খাম ছিঁড়ে এক টুকরো কাগজ বের করলো ঊর্মি। নাম পড়ার প্রয়োজন পড়লোনা। গুটি গুটি অক্ষরে সাজানো হাতের লিখা দেখেই ঊর্মি চিঠি দাতাকে চিনে ফেললো। দুরুদুরু বুক নিয়ে পড়া শুরু করলো।
❝প্রিয় বলে সম্বোধন করলাম না। কারণ তুমি নিজেও জানো তুমি আমার কতটা প্রিয়। মাঝে মাঝে প্রিয় জিনিস হারাতে না চাইলেও নিয়তির কাছে হেরে গিয়ে হারিয়ে ফেলতে হয়। আজ আর তোমায় ফিরে আসতে বলবোনা আমি। আমি তোমায় হারিয়েও ভালোবাসি।

তুমি যেভাবে খুশি থাকো, সেভাবেই থেকো।
জানি চিঠির শেষ পর্যন্ত পড়ে তুমি খুব কাঁদবে। কারণ তুমি আমায় ভালোবাসো। এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া। মানুষ দূরে ঠে*লে দিয়ে ঘৃ*ণা ছাড়া কিছুই পায়না। অথচ আমাকে দেখো, তোমায় দূরে ঠে*লে দিয়েও তোমার তীব্র ভালোবাসায় পুড়ছি। এত কেন ভালোবাসলে আমায়?
কাঁদছো কি তুমি? আমি আশা করবো এটাই যেন আমার জন্য তোমার শেষ কান্না হয়। আমার মৃত্যু খবরও যেন তোমায় কাঁদাতে না পারে তার ব্যবস্থাও করে ফেলেছি।
কেমন মায়ায় বেঁধে তোমায় ভালোবাসি বলোতো?

তুমি যে আমার ভালোবাসা নিতে চাওনা। প্রতিবারই আমার শক্তপোক্ত মায়ার বাঁধন এক নিমেষেই ছিঁড়ে ফেলো।
তোমার যন্ত্রণার কাছে আমার ভালোবাসার বাঁধন হয়তো খুবই দুর্বল। যার কারনে তোমার কাছে আমার ভালোবাসারা টিকতে পারেনা। জীবনে সবচেয়ে বেশি কষ্টদায়ক হলো আমরা কাউকে ভালোবাসি আর বিপরীত মানুষটিও আমাদের ভালোবাসে। এটা জানার পরও আমরা চাইলেই তাকে এক পলক দেখতে পারিনা, একবার বুকে জড়িয়ে নিতে পারিনা। না চাইতেও দূরত্ব সৃষ্টি করতে হয়।

রাতগুলো আমার কাটতে চায়না। তোমায় ছাড়া বড্ড একা মনে হয়। তোমাকে বুকে নেওয়ার পিপাসা আমায় তাড়া করে বেড়ায়। কোথাও সুখ নেই, চারিদিকে অন্ধকারের হাতছানি। তোমায় নিয়ে সারাজীবন সংসার করার স্বপ্ন আমার কোনদিনও পূরণ হবেনা। আমাদের আর সংসার করা হবেনা, ঊর্মি। তোমার ভালোবাসায় গড়া যত্ন আমার আর পাওয়া হবেনা।
চলে যাচ্ছি আমি। হয়তো কোনদিন দেখা হবেনা আমাদের। যদি কখনো নিয়তি আমাদের দেখা হওয়ার সুযোগ করে দেয়, তোমায় দেখে ছুটে এসে ছুঁতে চাওয়ার পাগলামি করি? তুমি শক্ত থেকো। অচেনা মানুষের মতো পাশ কা*টি*য়ে চলে যেও।

আমি তোমায় মনে রাখার একশ একটা বাহানা খুঁজে বের করবো। কোনদিন মন থেকে মুছতেই দেবোনা। খুব কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তোমায়, না? তুমি আমায় কোনদিন ও ক্ষমা করোনা।
আমার হৃদয়ে বড্ড অভাব, ভালোবাসাকে পেয়ে হারানোর অভাব। এই অভাব কোনদিনও ঘুচবেনা।
কথাগুলো তোমায় সরাসরি বলার মতো সাহস আমার নেই। তোমায় দেখলে হয়তো কোন পাগলামি করে বসতাম। কিংবা নিজের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে আবারও তোমায় ফিরে পেতে চাইতাম।
এই ভু*ল করার সাহস আমার হলোনা। তুমি কোনদিন আমায় ক্ষমা করো না। তোমার অ*ভি*শা*পে আমি পুড়তে চাই। যতটুকু তোমায় পুড়িয়েছি, তারচেয়ে বেশি পুড়তে চাই।
ইতি
রাহাত❞

বিছানায় হাঁটু মুড়ে বসলো ঊর্মি। চোখের কোনে মুষলধারে বৃষ্টি নামলো। ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে একসময় চিৎকার করে কাঁদলো। পায়ে চাপ লেগে টনটনে ব্যথা শুরু হয়েছে। বুকের তীব্র ব্যথার কাছে সে ব্যথা অতি নগণ্য। নিদারুণ যন্ত্রণায় নিজের হাতে একের পর এক কামড় বসাতে লাগলো। জীবনের প্রতি তার বড্ড অভিযোগ৷ এমনটা না হলেও পারতো।
বাবা মা সবাই ঊর্মির কান্নায় দৌঁড়ে তার ঘরে এলেন। বিচলিত হয়ে মা জিজ্ঞেস করলেন,
-“কী হয়েছে, মা? পায়ে ব্যথা হচ্ছে?”
মোস্তফা সাহেব অস্থির হয়ে বললেন,

-“বাবা গাড়ি খবর দিচ্ছি। এক্ষুনি হাসপাতালে নিয়ে যাবো।”
তানজিনার চোখ পড়লো খাটের উপর পড়ে থাকা কাগজে। হাত বাড়িয়ে কাগজটি নিলো সে। শশুর-শাশুড়ীকে থামিয়ে দিলো। অস্ফুটস্বরে বলল,
-“পায়ের ব্যথায় কাঁদছেনা।”
চিঠি পড়ে রাহাতের ব্যাপারটা জানালো তানজিনা। বিষয়টি নিয়ে অবগত হতেই মোস্তফা সাহেব ঊর্মির মাথায় হাত রাখলেন। নরম স্বরে বললেন,
-“এভাবে নিজেকে আরো অসুস্থ বানিয়ে ফেলিস না, মা। রাহাত বাচ্চা ছেলে নয়, হারিয়ে যায়নি সে। নিজ ইচ্ছেতে বাড়ি ছেড়েছে। দেখবি সবাইকে ছেড়ে থাকতে না পেরে আবার ফিরে আসবে। তাছাড়া তুই নিজেও তো তার কাছে ফিরবিনা। তাহলে কাঁদছিস কেন?”

মেয়েকে হাজার বোঝালেও মোস্তফা সাহেব নিজেও আজ রাহাতের জন্য চিন্তিত হলেন। অনুতপ্ত তিনি। কী করবেন, মেয়েকে শান্তনা না দিলেও তো সে কেঁদেকেটে আরও অসুস্থ হয়ে পড়বে। প্রথম প্রথম রাহাতকেই বেশি দো*ষী মনে করলেও তার মায়ের ব্যাপারটা জানার পর কিছুটা নরম হলেন মোস্তফা সাহেব। তবে মেয়েকে ফিরিয়ে দেওয়ার সাহস পেলেন না। রাহাত যদি আবারও মায়ের বাধ্য ছেলের মতো মেয়েটার হাত ছেড়ে দেয়। দ্বিতীয়বার যদি ভুল করে বসে?
মৃ*ত্যু*র মুখ থেকে ফিরে আসা মেয়ে উনার। ঊর্মির অবস্থা দেখে সবাই ধরেই নিয়েছিল সে বাঁচবেনা। সে মেয়েকে কিভাবে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে ঠেলে দিতেন?

মা, ভাবি মিলে ঊর্মিকে শান্ত করে বের হলেন ঘন্টাখানেক পর। তারা বেরিয়ে যেতেই ঊর্মি দরজা চাপিয়ে দিলো।
চোখ মুছে উষাকে ফোন করলো। জানতে পারলো রাহাতের নিরুদ্দেশের খবর সত্যি। কথাগুলো বলতে উষার নিজেও খারাপ লাগলো।
ফোন রেখে ঊর্মি বালিশে মুখ গুঁজে চোখের জল বিসর্জন দিলো। তিক্ত বি*ষা*দে মাথার চুল খামছে ধরলো।
এই পা নিয়ে কোথায় যাবে সে, কোথায় খুঁজবে রাহাতকে?

সকালের পর থেকেই বাড়িতে নাসিমা বেগমের দেখা নেই। দুপুরে খাবার টেবিলেও দেখা যাচ্ছেনা উনাকে। ভাইপো বউ হম্বিতম্বি করে ডাকতে গিয়ে থমকে দাঁড়ালো। নাসিমা বেগম ফ্লোরে শুয়ে আছেন। ভ্রু কুঁচকে কয়েকবার ডাকলো উনাকে। উঠছেন না দেখে বিরক্তি নিয়ে বলল,
-“এভাবে নিচে শুয়ে আছেন কেন, ফুফু?”
নাসিমা বেগমের ভাবান্তর হলোনা। ভাইপো বউ হাত দিয়ে কয়েকবার মৃদু ধাক্কা দিলো। এবারও উঠছেন না দেখে সে ভয় পেয়ে গেলো। গলায় জোর দিয়ে শশুর – শাশুড়ীকে ডাক দিলো। তার ভয়ার্ত গলা শুনে একে একে সবাই নাসিমা বেগমের ঘরে উপস্থিত হলেন।

বাড়ির পরিস্থিতি ঠিক নেই। এক একজন এক এক জায়গায় থম ধরে বসে আছে। শামীম অফিস বাদ দিয়ে রাহাতের বন্ধুুবান্ধবের কাছ থেকে খোঁজ নিতে বেরিয়েছে। এখনো ফেরেনি৷ লিলি, রিয়া, আনোয়ার হোসেন কারোরই মন মেজাজ ভালো নেই। উষাও বিক্ষিপ্ত মন নিয়ে সবার জন্য রান্না করলো। অথচ কাউকেই খাওয়াতে পারলোনা।

উষাকালে ঊর্মিমালা পর্ব ২১

রাহাতের বন্ধুবান্ধব, কলিগ কেউই বলতে পারবেনা সে কোথায় গিয়েছে। শামীম যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে গেলো। হঠাৎ মামার নম্বর থেকে কল পেয়ে খোঁজাখুঁজি সেখানেই থামিয়ে দিলো। পা*গ*লে*র মতো হসপিটালে ছুটলো। দুনিয়াদারি অন্ধকার হয়ে আসছে তার। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে বারবার। মনে মনে আল্লাহকে ডেকে চলেছে। রক্তিম চোখে বিন্দু বিন্দু জলকণা জমে গেলো। অস্ফুট স্বরে আওড়ালো, “মা”।

উষাকালে ঊর্মিমালা পর্ব ২৩