হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ৪০

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ৪০
সাদিয়া জাহান উম্মি

‘জি অবশ্যই।ওর নাম হলো রাশেদ শেখ।’
জায়ানের মাঝে কোন ভাবান্তর দেখা গেলো নাহ।বেশ শান্ত দেখাচ্ছে ওকে।জায়ান শীতল গলায় বলল,’ উনার বাড়ির এড্রেসটা দিতে পারবেন?’

ডা.হোসনে আরা রোজি চিন্তিত গলায় বললেন,’ কিন্তু ও তো দেশে থাকে না।’
জায়ান গম্ভীর কণ্ঠে বলে, ‘সমস্যা নেই আপনি তার দেশের বাড়ির ঠিকানা দিলে-ই হবে।’
‘ আচ্ছা ঠিক আছে।একটু ওয়েট করো আমি লিখে দিচ্ছি।’
জায়ান মাথা দুলিয়ে হ্যা বোঝালো।ডা.রোজি ঠিকানাটা লিখে দিতেই।জায়ান সেটা হাতে নিয়ে বলে, ‘ ধন্যবাদ ডা….. ‘
জায়ানকে থামিয়ে দিয়ে ডা. রোজি বলেন, ‘ আন্টি বলতে পারো আমায় সমস্যা নেই।’
জায়ান হেসে বলে, ‘ ওকে আন্টি তাহলে আসি?আসলে আমার ওয়াইফ অসুস্থ।’
ডা.রোজি বলেন,’ ইয়াহ সিয়র।খেয়াল রাখবে ওর।’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘ ধন্যবাদ আসি তাহলে। ‘
জায়ান উঠে যেতে নিতেই আবারও ডা.রোজির কথায় থেমে গেলো।তিনি বলেন,’ কিচ্ছু মনে করো না বাবা।যদি পারো তোমার ওয়াইফ কি যে নাম?’
‘ আরাবী!’
‘ হ্যা, আরাবীকে পারলে একটু আমার কাছে এনে।মেয়েটাকে দেখার খুব ইচ্ছা।ওর কাছে যে ক্ষমা চাওয়া আমার এখনও বাকি।খুব অন্যায় করেছি আমি ওর সাথে।’

ডা.রোজির চোখজোড়া ভড়ে উঠল। জায়ান নরম গলায় বলে, ‘ আর কষ্ট পাবেন না আন্টি।আপনি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছেন এটাই অনেক।আর আমার স্ত্রী অনেক নরম মনের।আমি জানি আপনার ব্যাপারে সব জানতে পারলে কখনই আপনার উপর রাগ করে থাকবে নাহ।’
‘ তাই যেন হয়। ‘
‘ এটাই হবে।তাহলে আসি আন্টি?দেরি হচ্ছে।’
‘ এসো বাবা।’

জায়ান হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে গাড়িটে উঠে বসল।গাড়ির স্টেরিংয়ে মাথা ঠেকিয়ে অসহায় কণ্ঠে আওড়ালো,’ নিজের অস্তিত্বের সম্পর্কে জানার জন্যে যতোটা ছটফট করছিলে তুমি।এখন যদি সেটা জানতে পারো তাহলে তার থেকেও দ্বিগুন কষ্ট পাবে তুমি।বাবা মায়ের কথা জানতে পেরে যতোটা খুশি হবে তুমি।মায়ের মৃত্যুর কথা আর তার পিছনের রহস্য জানতে পারে এরথেকেও বেশি কষ্ট পাবে তুমি।পিতৃপরিচয়ের জন্য যতোটা কষ্ট পেয়েছে তার থেকেও বেশি ঘৃনা করবে তার সম্পর্কে জানলে।কি করব আমি আরাবী?কি করব?কি করলে তোমার কষ্ট পাবে না।কিভাবে এই সত্যি জানানোর পর আমার কাঠগোলাপকে আমি কষ্ট,যন্ত্রনা থেকে দূরে সরিয়ে রাখব।ওর চোখের একফোটা পানি যে আমার বুকে ম’রন যন্ত্র’না অনুভব হয়।বুক পু’ড়ে যায় আমার। কি করব আমি আরাবী।’

কথাগুলো বলেই নিজেকে শান্ত করার জন্য জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিলো জায়ান।অতঃপর নিজেকে সামলে গাড়ি স্টার্ট দিল।আরাবীকে ঘুমন্ত অবস্থায় রেখে এসেছে জায়ান।মেয়েটা এতোক্ষনে জেগে গিয়ে হয়তো ওকে খুজছে।

ঘুমের ঘোরে পাশ হাতরাচ্ছে আরাবী।কিন্তু কাংখিত মানুষটার অস্তিত্ব নিজের অস্তিত্বটুকু অনুভব কর‍তে না পেরে ভ্রু-কুচকে আসে আরাবীর। বিরক্তি নিয়ে পিটপিট করে চোখজোড়া খুলল আরাবী।ধীরে ধীরে উঠে বসল।বিছানার পাশে তাকিয়ে দেখে পাশটা খালি পরে আছে।লোকটা গেলো কোথায়?এভাবে হুটহাট কোথায় যায় লোকটা কে জানে?মাথাটায় চিনচিনে ব্যাথা করছে।ফ্রেস হওয়া দরকার। অতোশতো না ভেবে আরাবী উঠে দাঁড়ালো।পা’টা এখনও ঠিকঠাক রিক-ওভার করেনি।তাই এখনও ঠিকভাবে হাটতে পারেনা মেয়েটা।

খুরিয়ে খুরিয়ে হেটে ওয়াশরুমে গেলো আরাবী। ঝর্ণা ছেড়ে ফ্রেস হতে নিতেই।শরীরের বিভিন্ন জায়গায় হালকা জ্বলে উঠল। আরাবী ব্যাথা অনুভব করল নাহ একটুও।বরংচ শান্তি অনুভব করল।ওয়াশরুমের আয়নায় নিজেকে দেখছে আরাবী।ঘারে, গলায় স্বামি সোহাগের চিহ্ন ভেসে উঠেছে।লাজুক হাসল আরাবী।লোকটার ভালোবাসায় সিক্ত হয়েছে আজ আরাবী।মুহূর্তগুলোতে কেমন অস্থির হয়ে পরেছিলো লোকটা।আসলে এতোদিন পর প্রিয়তমাকে কাছে পেয়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রনে রাখা বড্ড কষ্ট হয়ে পরছিলো জায়ানের জন্যে।তবুও যথাসম্ভব আরাবীর কাছে নম্রভাবটা ধরে রেখেছে।

জায়ানের এতো ভালোবাসা পেয়ে আরাবী সত্যি নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করে।নাহলে ওর মতো অস্তিত্বহীন একজনকে কেউ কি করে কেউ এতোটা ভালোবাসতে পারে?সত্যি বলতে আরাবীর এখন আর কষ্ট লাগানা।এতো সুন্দর পরিবার যার আছে সে কি কষ্ট পেতে পারে?সবচেয়ে বড় কথা জায়ানের মতো এতো ভালোবাসার একজন স্বামি আছে।আরাবী তো সুখি একজন মানুষ।যার কাছে এতোসব কিছু আছে সে কি কখনও কষ্ট পেতে পারে?উহু পারে।আরাবীও আর কষ্ট পায় না।শুধু মনে একটু আফসোস রয়ে গেছে আরাবী।সেটা চাইলেও শেষ করতে পারবে নাহ আরাবী।

দীর্ঘশ্বাস ফেলল আরাবী।দ্রুত ফ্রেস হয়ে নিলো। কিন্তু বিপত্ত ঘটলো ও তো জামা-কাপড়ই আনেনি।নিজেকে নিজেই বকলো আরাবী।আসলে এতোদিন জায়ানই ওর সকল কাজ করে দিয়েছে।এইজন্যেই এমনটা হলো।লোকটার উপর পুরো নির্ভরযোগ্য হয়ে পরেছে ও।মুচঁকি হাসল আরাবী।তারপর শরীরে তোয়ালে পেঁচিয়ে নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আসল। আরাবী আশেপাশে না তাকিয়ে সোজা আলমারির সামনে চলে গেলো।জামা-কাপড় নিয়ে আলমারি বন্ধ করে সামনের দিকে ফিরতেই। থমকে যায় আরাবী।চোখজোড়া বড়বড় হয়ে আসে ওর।মস্তিষ্ক ফাঁকা হয়ে পরেছে আরাবীর।সামনে জায়ান দাঁড়িয়ে।জায়ানের অদ্ভুত চাহনী দেখে কেঁপে উঠল আরাবী।

শরীরের পশম দাঁড়িয়ে যাচ্ছে আরাবীর ওই চাহনী দেখে। লজ্জায় হতভম্ব হয়ে পরেছে আরাবী।কি করবে দিশা পাচ্ছে না। লজ্জায় আরাবী শেষমেষ বিছানার উলটো দিকে দৌড়ে চলে যেতে চাইল।কিন্তু পায়ে ব্যাথা থাকার কারনে পারে না মেয়েটা।পরে যেতে নিতেই জায়ান মৃদ্যু চিৎকার করে আরাবীকে বাহুডোরে আগলে নেয়।আরাবী ভয়ে চোখ বন্ধ করে জায়ানের শার্ট খামছে ধরে।যখন বুঝল ও জায়ানের বাহুতে ভয়টা কাটল আরাবীর।আস্তে আস্তে চোখজোড়া খুলে তাকাতেই জায়ানের লাল চোখ দুটো দেখে ভয়ে ঢোক গিললো আরাবী। আরাবীকে সোজা করে দাড় করাল জায়ান।পরমুহূর্তেই জোড়েসোড়ে ধমকে উঠে জায়ান, ‘পাগল হয়ে গেছো তুমি?কি করতে যাচ্ছিলে?এখনও পুরোপুরি সুস্থ হওনি তুমি।আর এভাবে ছোটাছুটি করার মানে কি আরাবী?আমি কি পরপুরুষ কেউ?যে আমাকে দেখে এইভাবে দৌড়ে পালাতে হবে?’

জায়ানের বকা খেয়ে মুখটা ছোটো হয়ে আসল আরাবীর।আবার প্রচুর লজ্জাও লাগছে জায়ানের সামনে এভাবে থাকতে।লজ্জা থেকে বাঁচতে আরাবী জায়ানের বুকেই মিশে গেলো।ঝাপ্টে ধরলো জায়ানকে।মিইয়ে গেলো জায়ানের বুকের মাঝে।প্রথমে একটু চমকালেও পরক্ষনে বিষয়টা বুঝতে পেরেই হেসে দিলো জায়ান।মেয়েটা লজ্জার হাত থেকে বাঁচার জন্যে এমনটা করেছে জায়ানের বুঝতে বাকি নেই।জায়ান নিজেও জড়িয়ে ধরলো আরাবীকে। একহাত আরাবীর পিঠে রেখে আরেকহাত আরাবীর মাথায় রেখে হাত বোলাতে বোলাতে ধীর স্বরে বলে,’ আমাকে দেখে লজ্জার হাত থেকে বাঁচার জন্যে সেই ঘুরে ফিরে আমার কাছে এসেছ লজ্জা লুকোতে।’

জায়ানের কথায় হাসল আরাবী।লাজুক কণ্ঠে বলল,’আপনিই আমায় লজ্জা দেবেন।আবার আপনিই আমায় লজ্জা লুকোতে আপনার বুক পেতে দিবেন।’
‘ আমার বুকখানা তো আপনার জন্যে সবসময়ের জন্যেই খালি আছে ম্যাডাম।যখন মন চায় ঝটপট এসে লুকিয়ে পরবেন এখানে।’ বলেই আরাবীর চুলের ভাঁজে চুমু খেলো আরাবী।খানিকটা সময় এইভাবেই অতিবাহিত হলো।একে-অপরকে অনুভব করে কেটে গেলো অনেকটা সময়।হুশ ফিরতেই আরাবী ছোটো কণ্ঠে বলে,’এইভাবেই থাকব আমি?’
চোখ বন্ধ করে জায়ান ধীর আওয়াজে বলে, ‘হুম! এইভাবেই থাকো নাহ।ভালো লাগছে তো।’

আরাবী জানে এতো সহজে জায়ান আরাবীকে ছাড়বে নাহ।তাই ও একটা ট্রিকস কাজে লাগাল।মিছে মিছে হাঁচি দেওয়ার অভিনয় করল।আরাবীকে হাঁচি দিতে দেখে জায়ান চমকে গেলো।আরাবীকে ছেড়ে ওর দিকে ভালোভাবে তাকিয়ে অস্থির হয়ে বলল, ‘ ইস, দেখলে তো ঠান্ডা লেগে গিয়েছে।ইস,আমিও নাহ।ভুলটা আমারই।চুলগুলোও ভেজা।দেখি এদিকে আসো।হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুলগুলো শুকিয়ে দেই।’

জায়ান আরাবীকে ধরে নিয়ে ড্রেসিংটেবিলের সামনে বসালো।তারপর হেয়ার ড্র‍য়ার দিয়ে আরাবীর চুলগুলো শুকিয়ে দিতে লাগল।আরাবী জায়ানকে দেখে মুঁচকি মুঁচকি হাসছে।জায়ান সেটা লক্ষ্য করল।ভ্রু-কুচকে জিজ্ঞেস করে,’ হাসছ যে?’
আরাবী হাসি মাখা ঠোঁটেই বলে,’ এমনিই।কেন আমি কি হাসতে পারি নাহ?’

‘হ্যা পারো।’
‘ তবে সমস্যা কোথায়?’
‘ সমস্যা কোথায় শুনবে?আবার লজ্জা পাবে না তো?’
আরাবী আনমনেই বলে, ‘ বারে আমি লজ্জা পাবো কেন?’
জায়ান আরাবী দুকাধে হাত রেখে আরাবীর কানের কাছে মুখ এগিয়ে নিলো।হুশ ফিরতেই চমকে উঠল আরাবী। দুরুদুরু বুক নিয়ে আয়নায় জায়ানের অবয়বের দিকে তাকিয়ে আরাবী।জায়ান ফিসফিস করে বলে, ‘ তোমার ওই হাসিমাখা মুখটা দেখতে আমার ভীষণ ভালোলাগে।

তখন ওই হাসি লেপ্টে থাকা ঠোঁট দুটো আমায় ভীষণভাবে টানে।একটা ডিপ কিস করতে ইচ্ছে করে।সমস্যা তো এখানেই।আমি আমার মনের ইচ্ছা পূরন করলে তো।আবার তুমি আমায় অস’ভ্য উপাধি দিবে।’
লজ্জায় লালাভ আভা ছড়িয়ে পরলো আরাবীর মুখশ্রী জুড়ে।লোকটার লাগামহীন কথাবার্তায় আরাবী ভীষণভাবে লজ্জা পায়।লজ্জা পাওয়া আরাবীকে দেখছে জায়ান।মেয়েটাকে দেখলে শুধু দেখতেই ইচ্ছে করে।ওই মায়াবী মুখশ্রীটা নজরে আটকে যায়।ইচ্ছে করে মেয়েটাকে আদরে আদরে ভড়িয়ে দিতে।জায়ান আলতো হাতে আরাবীর চুলগুলো একপাশে সরিয়ে আনে।তখনই স্পষ্ট ওর নজরে আসে আরাবীর দেহে ওর দেওয়া ভালোবাসার চিহ্নগুলো।জায়ান সেখানে নরমভাবে হাত বোলালো।কাঁপছে আরাবী।লোকটার স্পর্শে বুকের ভীতর তোলপাড় হচ্ছে আরাবীর।জায়ান গভীর কণ্ঠে বলে, ‘ ভীষণ ব্যাথা লেগেছে তাই নাহ?’

আরাবী মাথা নিচু না বোধক নাড়ালো।জায়ান গভীরভাবে ঠোঁটের স্পর্শ দিলো আরাবীর ঘারে।চোখ বন্ধ করে নিলো আরাবী।শ্বাস-প্রশ্বাস ভারি হয়ে আসল আরাবীর।থেমে নেই জায়ান।অধরের স্পর্শে ভড়িয়ে দিচ্ছে আরাবীকে।আরাবী হাত উঠিয়ে জায়ানের চুল খামছে ধরল।লোকটার স্পর্শগুলো পাগল করে তোলে ওকে।শিহরণ বয়ে যায় দেহের প্রতিটা অঙ্গে।ঘার থেকে সরে আসল জায়ান।আরাবীর কোমড় পেচিয়ে ধরে আরাবীকে ঘুরিয়ে নিজের দিকে ফিরিয়ে নেয়।কাল বিলম্ব না করে চোখ বন্ধ করে থাকা আরাবীর কাঁপতে থাকা অধরে অধর মিলিয়ে দিলো।

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ৩৯

কেঁপে উঠে আরাবী।দুহাতে খামছে ধরে জায়ানের পিঠ। ঠোঁট ছেড়ে এইবার গলায় নেমে আসল জায়ান।জায়ানের ঠোঁটজোড়া আস্তে আস্তে আরাবীর পুরো শরীরে বিচড়ন করতে লাগল।একপর্যায়ে আরাবীর গায়ে পেঁচিয়ে থাকা তোয়ালেটাও খসে পরলো।ভালোবাসায় উন্মাদ জায়ান দুহাতে কোলে তুলে নিলো আরাবীকে।আরাবীকে বিছিনায় সুইয়ে দিয়ে আবারও আরাবীর মাঝে ডুব দিলো জায়ান।আবারও একে-অপরের মাঝে হারিয়ে গেলো দুজন ভালোবাসার মানুষ।

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ৪১