খড়কুটোর বাসা পর্ব ৩৪

খড়কুটোর বাসা পর্ব ৩৪
Jhorna Islam

তাছলিমা বানু দুই ছেলে কে সব টাকা ভা’গ করে দেওয়ার আগে নিজের জন্য কিছু রেখেছিলো।
সেই টাকা ইশানের পিছনে খরচ করেছে।বাড়িতে ইশানের ভাগের নগদ যা টাকা পয়সা গয়না ছিল সব দিনা নিয়ে চলে গেছে।

ইশান কে হাসপাতালে রাখতে অনেক খরচ নিজের কাছে ও টাকা নেই তাই ইশানের ভাগের সম্পত্তি যা আছে বাইরে দিয়ে তা বিক্রি করে দিয়েছে। শুধু একটু জায়গা আছে বাইরে এখন।
তাছলিমা বানুর টাকা ইশানের পিছনে খরচ করায় অন্য দিকে ইমন খে’পে’ছে।ইশান ঐ টাকা পেলে সেখান থেকে সে ও পায়।
কই ইমনের অসুস্থতার সময় তো তাছলিমা একদম নিজের থেকে একটা টাকা ও দেয়নি।এখন ঠিকই নিজের ছোটো ছেলের জন্য খরচ করছে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

তাছলিমা বানু আসলে তাকে ভালোইবাসেনি।এতো এতো ভালোবাসা দেখাইছে শুধু শুধু। এসব আসলে নাটক। সব ভালোবাসা টাকা পয়সা তো ইশানের জন্য।
তাছলিমা বানু শত চেষ্টা করে ও ইমনকে বোঝাতে পারে না। নিজের ভাইয়ের সাথে কেউ এমন করে? তবুও যদি সে সুস্থ থাকতো তাহলে একটা কথা ছিলো।কিন্তু ছেলেটা তো ম’রা’র মতো পরে আছে। এমন কারো উপর হিংসে করে?
ইমনের মাথায় ভূ”ত চেপেছে।সে তাছলিমা বানুর একটা কথা শুনে নি।বলে দিয়েছে এমন মায়ের তার দরকার নাই। সে আর এইখানে আসবে ও না লিমাকে নিয়ে সে শ্বশুর বাড়িতেই থাকবে।

তাছলিমা বানু যেনো ইশান কে নিয়েই পরে থাকে।ইমনের কথা ভাবতে হবে না। সে ও মায়ের কথা ভাববে না
ইমন যেহেতু এখানে আর ফিরে আসবে না তাই সে সব তার নামে লিখা জায়গা সম্পত্তি বিক্রি করে দিবে।
তাছলিমা বানু হাজার বারণ করেছে এরকম করিস না। নিজের ভি’টে বাড়ি মানুষ বি’ক্রি করে? তাছলিমা বানু তো বিপদে পরে ইশানের জায়গা বেঁচেছে।নয়তো জীবনে ও বেচতো না।

ইমন সত্যি সত্যিই ঐ খানে বসে জায়গা বেচার জন্য লোক লাগিয়ে দেয়।পেয়েও যায়। কিন্তু জায়গা কে কিনবে তা ইমন জানে না। প্রথমে জানতে চেয়েছিলো লোকটা বলেনি।
এরপর আর ইমন তেমন মাথা ঘামায়নি।কে কিনলো সেটা বড় কথা না।তার টাকা পেলেই হলো।
ইমন তার সব জায়গা সম্পত্তি বেচে একে বারের জন্য শ্বশুর বাড়ি চলে গেছে। ঐখানেই থাকবে।এই দিকে আর সে মুখ ও দেখাবে না।
তাছলিমা বানু কে বলে দিয়েছে তিনি যেন তার ছোট ছেলেকে নিয়েই থাকে। বড় ছেলের কথা যেনো ভুলে যায়।

এরমধ্যে একদিন হুট করেই ইশানের জ্ঞান ফিরে। তাছলিমা বানু ঐদিন বাড়িতে ছিল। ইশান কে হাসপাতালে রাখলেও তাছলিমা বানু বেশির ভাগ বাড়িতে এসে পরে।
ঐদিন ও বাড়িতে ছিলো।নার্স ফোন দিয়ে জানায় ইশানের জ্ঞা’ন ফিরার কথা।
তাছলিমা বানু শুনে খুব খুশি হয়। এতোদিনে ছেলেটার জ্ঞা’ন ফিরেছে।কতো দোয়া করেছে ছেলেটার জন্য। কতো কতো টাকা খরচ করেছে ইশানের পিছনে।সব কিছু প্রায় শেষ করে ফেলেছে।

যতোটা খুশি নিয়ে তাছলিমা বানু হাসপাতালে এসেছেন ততোটাই নি”রাশ হয়েছেন ইশানের খবর শুনে।
ইশান কো’ মা থেকে বের হয়ে আসলেও তার কোনো বোধ শক্তি নেই। কাউকে চিনতে পারে কি না এটাও বলা যায় না। শুধু কেমন প্র’তি’ব’ন্ধী’দে’র মতো তাকিয়ে রয়।
একটা কথা ও বলে না। যেই দিকে তাকাবে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবে। তাছলিমা বানু ছেলের এই অবস্থা দেখে একেবারে ভেঙে পরে।।

কি হয়ে গেলো।তার সুখের সংসার টা শেষ হয়ে গেছে।
বড় ছেলে নিজের মায়ের সাথে সব শেষ করে নিজের শ্বশুর বাড়ি কে আপন করে নিয়েছে। আর ছোট ছেলের এই পরিণতি।
ইশানের বিষয়ে ডাক্তারের কাছে জানতে চাইলে ডাক্তার জানায়।ইশানের মাথায় প্রচন্ড আ’ঘাত পাওয়ায় এই অবস্থা হয়ে গেছে।

যুথির দিন যেমন কাটেই না। শুয়ে বসে থাকতে থাকতে এক প্রকার ক্লান্ত সে। কিছুই ভালো লাগে না।
সেই চঞ্চল মেয়েটা কে কতোটা শান্ত হয়ে থাকতে হয়।প্রতিটা কদম বুঝে শুনে ফেলতে হয়। নয়তো এই বুঝি ব্যাথা পেলো।তার বাবুটা বুঝি ব্যাথা পাবে।নিজেকে তাই আগলে রাখার চেষ্টা করে। নিজের পেটে হাত বোলায়। এখানে তার আর তার বোকা পুরুষের ভালোবাসার চিহ্ন।
ছোট একটা প্রানের অ’স্তি’ত্ব রয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই সে পৃথিবীর আলো দেখবে।হাত পা ছড়িয়ে খেলা করবে।ঠোঁট উল্টিয়ে কাঁদবে।

নিজের পেটে নিজেরই চুমু খেতে ইচ্ছে করছে যুথির। ইশশশ পারছে না। বোকা পুরুষ টা থাকলে কতো ভালো হতো তার ইচ্ছে না হয় ঐ লোকটাই পূরণ করে দিতো।
একজন পিতার স্বার্থকতাই হলো সন্তান পৃথিবীর আলো দেখার পর তাকে কোলে নেওয়া। কিন্তু ইরহান নিতে পারবে না। তাদের জীবনে স্বচ্ছলতা আনতে গিয়ে লোকটা তার সব স্বপ্ন আশা বি’স’র্জন দিচ্ছে।
মনটা নিমিষেই খারাপ হয়ে গেলো যুথির। জানালা দিয়ে বাইরের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়।কতোদিন হয়ে গেলো বকুল ফুল এনে মালা গাঁথা হয় না।

মাঝে মাঝে ইচ্ছে করতো গিয়ে ফুল কুড়াতে।কিন্তু দাদির বকুনি খাওয়ার ভ’য়ে যেতো না।
আর এখন নিজেই যায় না।
যুথির নানান ভাবনার মাঝেই যুথির দাদি ডেকে বলে,,,,,
যুথিরে দেখ কে এসেছে।
যুথি ভাবনা থেকে বের হয়ে দরজার দিকে দৃষ্টি দেয়। দরজার সামনে দাড়াতে থাকা মানুষ টা কে দেখে ঠোঁটের কোণে হাসি ফোটে উঠে।

মন খারাপের রেশ নিমিষেই কেটে গেছে। ঠোঁটে দখল করে নিয়েছে এক টুকরো হাসি।
প্রফুল্ল মনে যুথি কিছু বলার আগেই এসে যুথিকে ঝাপটে ধরে খুব সাবধানে । যুথি ও ধরে।
আমার কথা মনে আছে? ভেবেছি হয়তো মেয়েটা আমায় ভুলেই বুঝি গেছে।।।
মোটেও না। সংসারের কাজে ইচ্ছে থাকলেও সময় হয়ে উঠেনি।তাই বলে আমার বান্ধবী কে ভুলে যাবো?
কেমন আছিস সীমা?

এইতো ভালো আমার বান্ধবী কে দেখে আরো ভালো হয়ে গেছি।
সীমা কে দেখে যুথির মনে ইচ্ছে জাগলো পুকুর পাড়ে গিয়ে বসে একটু গল্প করতে। অনেক দিন হয়ে গেলো মন খুলে সীমার সাথে কথা বলা হয় না। সব কথা তো আর দাদি আর ইরহান কে বলতে পারে না।
তাই সীমা কে বলল আয় আমরা গিয়ে পুকুর পাড়ে খোলা জায়গাটায় গিয়ে বসি।ঘরের ভিতর কেমন দ’ম বন্ধ লাগছে।আজকে একটু বেশিই অ’স্ব’স্তি হচ্ছে আমার।খোলা জায়গায় গিয়ে বসলে একটু ভালো লাগবে।প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে পারবো।
সীমা যুথির দিকে কিছু সময় তাকিয়ে রয়। যুথিকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে আর বেশি সময় নেই ডে’লি’ভা’রি’র।
সীমা খুব সাবধানে যুথিকে ধরে নিয়ে যায় তারপর দুইজন পুকুর পাড়ে বসে। বাতাস টা খুবই ভালো লাগছে যুথির। চোখ বন্ধ করে প্রান ভরে শ্বাস টেনে নেয়।দুই বান্ধবি নানান কথা জুড়ে দেয়।

কতো শতো কথা তাদের। এতোদিনের জমানো সব কথা বলতে থাকে একজন আরেকজন কে।
সীমা তার সংসার জীবনের নানান কথা বলছে।শ্বশুর বাড়ির লোকেরা কেমন তার স্বামী নামক লোকটা কেমন তাও বলছে।
জানিস যুথি আমি মনে মনে চাইতাম ইরহান ভাইয়ের মতো যেনো একটা জীবন সঙ্গী পাই।তোদের ভালোবাসা দেখতে কি যে ভালো লাগে রে।ভাই দূর থেকে তোর কতো খেয়াল রাখে।এমন কয়জন পায়?
আল্লাহ আমার ইচ্ছে টা পূরণ করেছে।পেয়েছি আমিও।হয়তো ইরহান ভাইয়ের মতো ততোটা অন্য কেউ পারবে না। তবুও আমার জন আমায় অনেক ভালোবাসে।

একেকজনের ভালোবাসা একেকরকম সীমা। মানুষ আলাদা ভালোবাসার ধরণ ও আলাদা।
হুম।
সীমা আরো অনেক কথা বলতে থাকে।অনেক মজার কথাও বলে,,,যা শুনে যুথি খিলখিলিয়ে হাসে।
সীমা যুথির দিকে তাকিয়ে যুথির হাসি দেখে। কি সুন্দর লাগছে মেয়েটা কে।ফোলা শরীরে আরো কয়েকগুণ সৌন্দর্য বেড়ে গেছে। ইরহান ভাই সামনাসামনি দেখলে হয়তো আবার ও যুথির প্রেমে পরতো নতুন করে।
যুথির হাসির মাঝেই পেটে চিনচিনিয়ে ব্যাথা অনুভব করে। পেটে হাত রাখে যুথি।ব্যাথাটা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। স’হ্য করার মতো না।

নিজের পাশে বসে থাকা সীমার হাতটা খা’মচে ধরে। সীমা আ’ৎকে উঠে। কি হয়েছে যুথি ঠিক আছিস?
সী-সীমারে,,,
চোখ মুখ র’ক্তি’ম বর্ণ ধারণ করছে যুথির।
সীমা ভ’য় পেয়ে যায়। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে কি হয়েছে যুথি? ঠিকইতো ছিলি।কষ্ট হচ্ছে তোর?

খড়কুটোর বাসা পর্ব ৩৩

যুথি চোখ মুখ কোচকে মাথা উপর নিচ নাড়ায়।তার কষ্ট হচ্ছে প্রচন্ড কষ্ট হচ্ছে। ব্যাথাটা ক্রমশ বেড়ে চলেছে।
সীমা যুথিকে ছেড়ে উঠতে ও পারছে না। যুথি তার হাত সারছে না। সীমা এখান থেকেই দাদিকে জোরে ডাকতে থাকে।
যুথি ব্যাথাতুর মুখে একটা কথাই বলছে সীমারে আমার বোকা পুরুষ কে একটা কল দে।আমার বোকা পুরুষ কে আমি এক ন’জর দেখবো।আমার খুব ভ’য় করছে।আমাকে একটু ব্যবস্থা করে দে উনাকে দেখার।

খড়কুটোর বাসা পর্ব ৩৫