চৈত্রিকা পর্ব ৪৪

চৈত্রিকা পর্ব ৪৪
বোরহানা আক্তার রেশমী

দুর দুরান্তে কেবলই ফজরের আযান পড়েছে। নামাজে যাওয়া ব্যাক্তিগন বাদে সবাই ঘুমে। চৈত্রিকা সারা রাতই ঘুমায়নি। বলা বাহুল্য তার চোখে ঘুমেরা ধরা দেয়নি। আযান কানে আসতেই উঠে বসে। মন দিয়ে আযান শুনে উঠে গিয়ে নামাজ আদায় করে নেয়। জায়নামাজ উঠিয়ে একবার প্রহরের দিকে তাকায়। প্রহর ঘুমে বিভোর। চৈত্রিকা কু’টিল হেঁসে ঘর থেকে বের হয়।

শাড়ির আঁচল মাটিতে লুটোপুটি খাচ্ছে। চুলগুলো খোলা রাখা। এই মুহুর্তে চৈত্রিকাকে বিধ্বস্ত নারীর চেয়ে কম মনে হচ্ছে না। চৈত্রিকা গুটি গুটি পায়ে পিয়াসের ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। ঘরের দরজা ভেতর থেকে আটকানো। একবার নিজের হাতের ত’লোয়ারের দিকে তাকিয়ে দরজায় কড়া নাড়ে৷ একবার, দুইবার করে কয়েকবার কড়া নাড়ার পর পিয়াস বি’শ্রী একটা গা’লি দিয়ে ঘরের দরজা খুলে দেয়। রাগী কন্ঠে বলে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘সকাল সকাল কার এতো দরকার পড়ছে! দরজা খুলছি না মানে বুঝিস না যে আমি ব্যস্ত!’
ঘুম ঘুম চোখে মুখ না দেখেই নিজের মতো বকবক করে যায় পিয়াস। চৈত্রিকা ঠোঁট প্রসারিত করে হাসে। কন্ঠে দারুণ রকম শীতলতা টেনে বলে, ‘এতো ব্যস্ত থাকলে বড় ভাবীজানকে সময় কখন দেবেন দেবর ভাই? একটু ব্যস্ততা কাটিয়ে না হয় ভাবীজানের দিকেও নজর দিলেন!’

এই সময় চৈত্রিকার কন্ঠ শুনে সকল রকমের ঘুম উবে যায় পিয়াসের। ড্যাবড্যাব করে চৈত্রিকার দিকে তাকায়। চৈত্রিকা এতো সকালে এখানে কেনো? নিজের কন্ঠে অবাকতা ধরে রেখে বলে,
‘আপনি এই সময়! আমার ঘরে কেনো ভাবীজান?’

চৈত্রিকা ফের হাসে। তবে এই হাসি ছিলো হিং’সা’ত্মক হাসি। পিয়াসের বুঝে উঠার আগেই অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে ত’লোয়ার চা’লিয়ে দেয় পিয়াসের বুক বরাবর। বুক থেকে টেনে পেট অব্দি আ’ঘাত করে। ফলে বুকে থেকে পেট পর্যন্ত কে’টে যায় তবে খুব বেশি গভীর হয় নাহ। আকস্মিক আক্রমণে পিয়াস কিছুই বুঝে উঠে নাহ। চিনচিনে ব্যাথা, বুক থেকে পেটের জ্ব’লনে এবং আতঙ্কে চিৎকার করে ওঠে।

চৈত্রিকা সুযোগের সদ্ব্যবহার করে ধাক্কা মা’রে পিয়াসকে। পিয়াস মেঝেতে পড়ে গেলে নিজের শাড়ির একটা টুকরা মুখে পুড়ে দেয়। সাথে করে আনা দড়ি দিয়ে হাত পা বেধে ফেলে। সবকিছু এতো দ্রুত হয়ে যায় যে পিয়াস নিজেও নির্বাক হয়ে পড়ে। নিজে কিছু করার সুযোগই পায় না। শুধু পিটপিট করে তাকিয়ে থাকে। ব্যাথায় চোখ মুখ নীল হয়ে যায়। গোঙাতে থাকে।

চৈত্রিকা ততক্ষণে হিং’স্র হয়ে উঠেছে। চোখে মুখে ক্রো’ধ, রা’গ, প্রতিহিং’সা, প্রতি’শো’ধের নেশা স্পষ্ট। বড় বড় শ্বাস নিয়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। কিন্তু ফলাফল শূণ্য। রাগে ত’লোয়ার দিয়ে মেঝেতে খুঁটতে থাকে। পিয়াস ব্যাথায় তখনও ছটফট করছে। চৈত্রিকা পিয়াসের ছটফট করা দেখে হাসে। ত’লোয়ার এনে পিয়াসের চোখ বরাবর রেখে আফসোসের সুরে বলে,

‘আহারে! খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে দেবর ভাই? কোথায় কষ্ট হচ্ছে একটু দেখি! চোখ খু’লে কি হাতে এনে দিবো? দেখাবেন আপনি!’
পিয়াস আঁতকে ওঠে। মাথা দুপাশে বারংবার নাড়িয়ে বোঝায় তাকে আ’ঘাত না করতে! চৈত্রিকা বাঁকা হাসে। ত’লোয়ার একদম চোখের ১ ইঞ্চি দুর নেয়। পিয়াস চোখ বন্ধ করে ফেলে। মনে মনে এই প্রথমবার হয়তো আল্লাহকে স্মরণ করতে থাকে। মৃ’ত্যুর ভয় বুঝি জা’নোয়া’রদেরও মানুষ বানিয়ে দেয়! চৈত্রিকা সরিয়ে নেয় ত’লোয়ার। একবার দরজার দিকে তাকিয়ে উঠে গিয়ে দরজা আটকে দেয়। এরপর ফিরে এসে নিজের জায়গায় বসে শান্ত কন্ঠে শুধায়,

‘মৃ’ত্যুকে খুব ভয় লাগছে পিয়াস রেনওয়াজ? খুব বেশি? যখন অন্যদের প্রাণ কেড়ে নিতেন তখন বুঝি একটুও ভয় লাগতো না!’
পিয়াসের চোখের কোণা বেয়ে পানি গড়ায়। বার বার মাথা এদিক ওদিক করতে থাকে। যেনো বার বার একটাই কথা বোঝাতে চাচ্ছে ‘আমাকে মা’রবেন না।’ চৈত্রিকা বেশ মজা পেলো। ত’লোয়ারের একটা আ’ঘাত কপালের অংশে করলো। চুলের গোড়া থেকে ধীরে ধীরে তলোয়ার দিয়ে গভীর আ’ঘাত করতে থাকে। পিয়াস পারে না শুধু গলা ফাটিয়ে কাঁদতে। চৈত্রিকা একটু আ’ঘাত করে তলোয়ার আবার সরিয়ে নেয়। পিয়াসের চোখ থেকে তখন টুপটাপ পানি গড়াচ্ছে। চৈত্রিকা শব্দ করে হেঁসে দেয়। হাসতে হাসতেই বলে,

‘আহারে! খুব কান্না পাচ্ছে? আমারও না ভীষণ কান্না পাচ্ছে দেবর ভাই! আমি কিভাবে কাঁদি বলুন তো! আপনাকে শা’স্তি না দিয়ে তো মন খুলে শান্তি মতো কাঁদতেও পারবো নাহ। আজকে কিন্তু বাঁচার আশা রাইখেন না দেবর ভাই! আজ যদি আপনার বাপসহ ১৪ গো’ষ্ঠীও চলে আসে তাও আপনার মৃ’ত্যু অবধারিত। ম’রবেন মানে ম’রবেনই। যতক্ষণ না ম’রবেন ততক্ষণ আমি মা’রতেই থাকবো। আপনার দেহ থেকে প্রানভোমরা ছিনিয়ে নিয়েই আমি ক্ষ্যান্ত হবো।’

পিয়াস ভীতু দৃষ্টিতে তাকালো। এই প্রথম চৈত্রিকার ভ’য়ং’কর রুপ দেখে পিয়াসের আত্মা কাঁপতে শুরু করে। কাউকে ভয় না পাওয়া পিয়াস প্রথমবারের মতো মৃ’ত্যু ভয় পেলো তাও একজন নারীর কাছে। চৈত্রিকাকে এই রুপে দেখবে তা বোধহয় কখনো কল্পনাতেও আনেনি পিয়াস। ভয়ে, ব্যাথায় পিয়াস কাঁদতে থাকে। এই আটকা পড়া অবস্থাতে তার পক্ষে কোনো ভাবেই কিছু করা সম্ভব না। চৈত্রিকা কিছুটা সময় চুপচাপ বসে পিয়াসের আ’র্তনাদ, ছটফটানো দেখতে থাকে। মনের কোথাও যেনো একপ্রকার শান্তিরা দোলা দিয়ে যায়। একপর্যায়ে চৈত্রিকা পিয়াস মাথার র’ক্ত হাত দিয়ে চেপে ধরে। ভীষণ রকম ঠান্ডা গলায় বলে,

‘তোর মুখ খুলে দিবো। যা যা প্রশ্ন করবো সবগুলোর ঠিক ঠিক উত্তর দিবি। আর মুখ খোলার সাথে সাথে যদি চিৎকার করিস তাহলে তোর গ’লার মধ্যেই ত’লোয়ার ঢু’কিয়ে দেবো। মাথায় থাকবে?’
পিয়াস জানে চৈত্রিকা এখন যা বলবে তাই করবে। তাই ভদ্র ছেলের মতো মাথা নাড়াতে থাকে। চৈত্রিকা পিয়াসের মুখ থেকে কাপড় টেনে বের করে নেয়। পিয়াস ব্যাথায় দাঁতে দাঁত চেপে থাকে তবুও মুখ দিয়ে টু শব্দও বের করে না। চৈত্রিকার একটুও মায়া হয় নাহ। বরং পিয়াসকে মা’রার জন্য মন প্রাণ ছটফট করতে থাকে। তাই দেড়ি না করেই শুধাতে থাকে,
‘সাথীকে তুই মা’রছিস? সাথী আ’ত্ম’হ’ত্যা করে নাই তাই না!’

পিয়াস ফাঁকা ঢোক গিলে প্রথমে মাথা দুদিকে নাড়ায়। চৈত্রিকা ক্ষে’পে ত’লোয়ার নিয়ে পিয়াসের গলা বরাবর ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে, ‘সত্যি কথা বল!’
সাথে সাথেই পিয়াস মুখ খোলে৷ ব্যস্ত কন্ঠে বলে, ‘হ্যাঁ হ্যাঁ আমিই মা’রছি৷ সাথী আ’ত্ম’হ’ত্যা করে নাই। আমি মা’রছি ওরে!’
‘কেন? সাথী তোরে বিয়ে করছিলো কেন?’

পিয়াস ভয়ে গড়গড় করে সবটা বলতে থাকে, ‘আমি ওরে ভুলভাল বুঝিয়েছিলাম। বড় ভাইজানও যে আমাদের মতো প্র’তা’র’ক, বি’শ্বাস’ঘা’তক এটা বিশ্বাস করিয়েছিলাম। আপনার বিপদ এ বাড়ির কোণায় কোণায় এটা বুঝিয়েছি। সাথী খুব নরম মনের ছিলো। আপনাকে ভালোও বাসতো খুব তাই সবটা বিশ্বাস করে নেয়। এরপর ওকে আমাকে বিয়ে করার জন্য নানান রকম ভাবে জোড় করি।

আপনার, ওর বাবা-মায়ের ক্ষ’তি করার চেষ্টা করতে থাকি। চিত্রর ওই অবস্থা হওয়ার পর সাথী ভয় পায়। আর আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যায়। বোকা মেয়ে ছিলো! বুঝতে পারেনি ওকে ফাঁদে ফেলে মা’রার জন্যই এই বাড়িতে এনেছি! ‘ও’ আপনাকে সব বলে দিতে চেয়েছিলো কিন্তু আমার ভয়ে পারেনি। ওর মনে এটাও বসে গেছিলো যে বড় ভাইজানও ভালো নাহ।’

‘ওরে মা’ইরা ফেললি কেন?’
‘আপ-আপনারে ভে’ঙে দেওয়ার জন্য৷ ভাবছিলাম সা-সাথীর মৃ’ত্যুতে আপনি ভ-ভয় পাবেন। আ-আতঙ্কিত হবেন। শি-শিক্ষা পাবেন আমার সাথে লাগতে আসার! এরপর আমি অনায়াসে আপনাকেও মে-মে’রে ফেল-ফেলবো।’

শেষের কথাগুলো বলতে গিয়ে বার বার তোতলাতে থাকে পিয়াস। চৈত্রিকা পিয়াসের স্বীকারোক্তি শুনে রাগে বড় বড় নিঃশ্বাস নিয়ে ফের মুখের মধ্যে কাপড়ের টুকরা গুজে দেয়। নিজের চুল আঁকড়ে ধরে কয়েক সেকেন্ড দাঁতে দাঁত চেপে বসে থাকে। কিন্তু রাগ নিয়ন্ত্রণ হয় নাহ। মাথা ছেড়ে সাথে সাথেই ত’লোয়ার দিয়ে একদম এ’ফোঁড় ও’ফোঁড় করে দেয় পিয়াসের বু’ক। র’ক্ত ছিটকে এসে পড়ে চৈত্রিকার মুখে। পাগলের মতো বলতে থাকে,

‘তোর যতো শ’ত্রুতা ছিলো আমার সাথে। তুই ওই নির্দোষ মেয়েটাকে শা’স্তি দিলি কেনো? তোর তো বাঁ’ইচা থাকারই অধিকার নাই। তোরে যদি সেইদিন শুধু হাতে আ’ঘাত না করে বুক বরাবর আ’ঘাত করতাম তাইলে আজকে আমার সাথী বেচে থাকতো। আমাকে নিঃস্বার্থে ভালোবেসে যাওয়া ওই মানুষগুলাও ভালো থাকতো। তোর মতো জা’নো’য়া’ররে না মা’ইরা আমি যে অ’পরাধ করছি তার শা’স্তি ভ’য়াবহ। তুই যত পা’প করছিস তার সব শা’স্তি আজ তোরে একবারে দিয়ে দিবো।’

ব্যাথায় চোখ মুখ নীল বর্ণ ধারণ করে পিয়াসের। মুখে কাপড় থাকায় মুখ দিয়ে র’ক্ত বাহিরে বের হতে পারে নাহ। চৈত্রিকা ক্ষ্যান্ত হয় নাহ। পর পর আরো দুবার এক নাগাড়ে ত’লোয়ার বসিয়ে দেয় বু’কে। নোং’রা হৃয়টাকে যেনো টু’করো টু’করো করার চেষ্টায় মেতে ওঠে। পিয়াস সহ্য করতে পারে নাহ। চোখ মেলে দু বার শরীর ঝাঁকুনি দিয়েই স্থির হয়ে যায়। চোখ দুটো এক পানেই তাকিয়ে রয়।

চৈত্রিকা ত’লোয়ার বের করে নিয়ে ছুড়ে মা’রে। পাশ ফিরে আয়নার দিকে তাকাতেই নিজেই ভয় পায়। কাঁপা কাঁপা হাতে নিজের মুখে হাত ছোঁয়ায়। চোখ থেকে টপটপ করে দু ফোটা জল গড়ায়। পিয়াসের দিকে তাকিয়ে সব ভয়, ভীতি কেটে যায়। ভেতরের আ’গুন তাজা হয়। পিয়াসের মুখ থেকে কাপড় বের করে হাত পায়ের বাধন খুলে দেয়। পিয়াসকে মে’রেও যেনো মনে শান্তি পায় না।

মনে হয় আরো ভ’য়ং’কর শা’স্তি দিতে পারলে ভেতরটা শান্তি পেতো। চৈত্রিকা করেও তাই। পাগলের মতো ত’লোয়ার নিয়ে পুরো শ’রীরে আঘাত করে। এরপর কোনোরকমে পিয়াসকে টেনে বারান্দায় নিয়ে গিয়ে ফেলে দেয়। বাহিরে তখন কেবলই ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। চৈত্রিকা ওই অবস্থাতেই ঘর থেকে বের হয়। সাথে নিয়ে যায় সেই ত’লোয়ার। মাথায় কাপড় টেনে জমিদার বাড়ির সদর দরজা দিয়ে বের হয়ে যায়।

উপর থেকে সবটাই দেখে প্রহর। চোখে মুখে বিস্ময় কিংবা আতঙ্ক কোনোটাই নেই৷ একবার পিয়াসের ঘরে ঢুকে পুরো ঘরটা ভালো করে দেখে নেয়। এরপর বারান্দায় উঁকি দিয়ে নিচে পড়ে থাকা পিয়াসের লা’শ দেখে হাসে। ভেতরে শান্তির ঢেউ বয়ে যায়। বিড়বিড় করে বলে,
‘আফসোস তোরে আমি মা’রতে পারিনি! তবে আমার বউই তোরে মা’রছে। বিশ্বাস কর ভাই! তোর একেক ফোঁটা র’ক্ত আমার ভেতরটা শান্তিতে ভরিয়ে তুলতেছে।’

চৈত্রিকা র’ক্তাক্ত অবস্থাতেই সাথীর কবরের কাছে যায়। মসজিদ থেকে বেশ দুরেই কবরস্থান। এদিকটাই মানুষ কমই আসে। চৈত্রিকা নির্ভয়ে, বাকরুদ্ধ ভাবে সাথীর কবরের পাশে বসে। মাথার কাপড় নামিয়ে দিয়ে সাথীর কবরের মাটিতে হাত দেয়। কবরের ওপর নিজের ঠোঁট ছুঁইয়ে ফিসফিস করে বলে,

‘বোন দেখ! তোর খু’নীর র’ক্ত! ‘ও’ তোকে ঠিক যে পরিমাণ কষ্ট দিয়েছে আমি ওরে তার থেকেও দ্বিগুণ কষ্ট দিয়ে মা’রছি। আমার জন্য তুই এভাবে চলে যাবি জানলে কখনোই তো তোদের আমার সাথে জুড়তাম নাহ। আমি যদি আগেই ওই জা’নো’য়ার’টাকে মে’রে দিতাম তাহলে হয়তো আজ তুই আমার সাথে থাকতি! আমি তোরে আগলে রাখতে পারিনি বোন। আমার দেওয়া কথা আমি রাখতে পারিনি। তোরে বাঁচাতে পারিনি। তুই কি আমারে মাফ করবি সাথী? মাফ করবি!’

চৈত্রিকা কাঁদতে শুরু করে। কবরের ওপর মাথা রেখে হাউমাউ করে কাঁদে। ভোরের আলো যখন পুরোপুরি ফুটে গেছে তখন কবরস্থান থেকে বের হয়ে আসে। সামনেই পড়ে একটা বিশাল পুকুর। কোনো কিছু না ভেবে সেই পুকুরেই নেমে পড়ে। হাতে, মুখে লেগে থাকা সমস্ত র’ক্ত তুলে ভালো ভাবে গোসল করে নেয়। অনেকটা সময় পানিতেই থাকে। কোনোরকমে নিজেকে স্বাভাবিক করে উঠে আসে পানি থেকে।

এ সময় আজম আলী আর সনিয়া বেগম জমিদার বাড়িতে তাই চৈত্রিকা সরাসরি তাদের বাড়িতেই যায়। ঘরের দরজায় তালা ঝুলানো দেখে একটু হতাশই হয়। একবার নিজের ভেজা কাপড়ের দিকে তাকায় তো আরেকবার দরজার দিকে তাকায়। ফিরে চলে আসতে নিলেই চোখ পড়ে বারান্দার দড়িতে ঝুলানোর তারই একটা শাড়ির দিকে। মুহূর্তের চৈত্রিকার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে।

শাড়ি নিয়ে কলপাড়ে গিয়ে যত দ্রুত সম্ভব শাড়ি বদলে নেয়। এরপর হাঁটা লাগায় জমিদার বাড়ির উদ্দেশ্যে। জমিদার বাড়ির কাছে আসতেই সব কিছু চুপচাপ, শান্ত মনে হলো। চৈত্রিকা ভ্রু কুঁচকে বাড়িতে প্রবেশ করতেই দেখে কাল যেখানে সাথীকে শুইয়ে রাখা হয়েছিলো ঠিক সেখানেই আজ পিয়াসকেও শুইয়ে রাখা হয়েছে। মনে মনে হাসে চৈত্রিকা। আশে পাশে খেয়াল করে দেখে কেউ কাঁদছে নাহ।

গ্রামের লোকজনও তেমন নেই। পিয়াসের লা’শের পাশেই চয়ন মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। ছোট্ট অর্থি আঁচলে মুখ গুজে কাঁদছে। সে তো এতোকিছু বোঝে নাহ! সে বোঝে তার ভাই মা’রা গেছে। কেউ ভীষণ নৃ’শং’স ভাবে তার ভাইকে মে’রে ফেলেছে। পল্লবী, শায়লা, নাসিমা, অর্পিতা এমনকি নীরাও নিশ্চুপ। নাসিমা পিয়াসের মৃ’ত্যুতে আরো ভয় পেয়ে গেছে। সে জানে এই কাজটা হয় চৈত্রিকার নয়তো প্রহরের। এই দুজন ছাড়া কারোর এতো বড় কলিজা নেই যে পিয়াস রেনওয়াজকে মে’রে দেবে! চৈত্রিকাকে বাড়িতে ঢুকতে দেখেই চয়ন তেড়ে আসে। রুক্ষ কন্ঠে বলে,

‘তুমি আমার পিয়াসকে মে’রেছো তাই না!’
চৈত্রিকা কপালে ভাজ ফেলে চয়নকে এড়িয়ে আসতে আসতে বলে, ‘আমি কেনো মা’রবো আপনার ছেলেকে? মা’রলে তো আগে আপনাকে মা’রবো। তাছাড়া কেবল কাল আমার বোন মা’রা গেছে। আমার নিশ্চয় এখন ওই মানসিকতাটা আর নেই!’
চয়ন মানে নাহ। ফুঁসে উঠে বলে, ‘যুক্তি দিচ্ছো আমারে! চয়ন রেনওয়াজরে! যত যত যুক্তি দাঁড় করাও না কেনো! তবুও আমি জানি এসব কাজ একমাত্রই তোমার। এসবের পর তোমাকে আমি শান্তিমতো কখনোই বাঁচতে দেবো নাহ। র’ক্ত একটু একটু করে শু’ষে নিবো।’

চৈত্রিকা দাঁড়িয়ে পড়ে। পেছন ফিরে বলে, ‘কি করতে পারেন করে নেন!’
চয়ন ফুঁসতে থাকে। চৈত্রিকা সরাসরি নিজেদের ঘরের দিকে যায়। প্রহর দাঁড়িয়ে ছিলো রেলিং এর পাশে। প্রহরকে দেখেও চৈত্রিকা সেদিকে যায় নাহ। পিয়াসের ঘর পেড়িয়ে যাওয়ার সময় মনে হয় ঘরে কিছু পরিবর্তন ঘটেছে!

তাই যাওয়া থামিয়ে পিছু ফিরে ঘরের মাঝে ঢোকে। মেঝে একদম পরিষ্কার। এক ফোঁটা র’ক্তও কোথাও নেই। দেখলে মনেই হবে না এই ঘরেই কাউকে নৃ’শং’স ভাবে মে’রে ফেলা হয়েছে! চৈত্রিকা অবাক হলো। সে তো মেঝে পরিষ্কার করেনি। তার স্পষ্ট মনে আছে এই মেঝে র’ক্তে র’ঞ্জিত করেই সে ঘর থেকে বের হয়েছে। তবে! এর মাঝেই ঠান্ডা এক হাওয়া চৈত্রিকার মুখে লাগে। পরপরই কানের কাছে ফিসফিসানোর আওয়াজ পায়,

‘তুমি এতোটা করতে পারলে এটুকু করতে পারবো না চৈত্র? তুমি পা’প মুছে দিতে পারলে আমি বুঝি পাপের চিহ্ন মুছে দিতে পারি না! শত হলেও আমরা একই রাস্তার পথিক বউজান!’

চৈত্রিকা পর্ব ৪৩

(আসসালামু আলাইকুম। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। নিশ্চয় সবাই রেগে আছেন আমার ওপর! দুঃখিত। কিছুই করার ছিলো নাহ। যে আবেগ নিয়ে আমি চৈত্রিকা শুরু করেছিলাম এবং ৪১ পর্ব পর্যন্ত লিখেছি সেই আবেগটা আমি আর এখন কিছুতেই গল্পে টেনে আনতে পারছি নাহ। বিশ্বাস করুন এটার মতো য’ন্ত্রণাদায়ক কিছুই বোধহয় আর একজন লেখিকার জন্য নয়! শত চেষ্টা করেও আমি লিখতে পারছি নাহ। লিখলেও আবেগ খুঁজে পাচ্ছি নাহ। এই পর্বে কতটুকু কি করতে পেরেছি আমি সত্যিই জানি নাহ। আবেগটা হারিয়ে ফেলে আমি যেনো নিজের স্বপ্নটাকেই হারিয়ে ফেলেছি। লিখতে গিয়ে আমার কান্না পেয়ে গেছে। কিছুতেই যেনো শান্তি পাচ্ছি নাহ। পাঠক/পাঠিকার কাছে অনুরোধ একটু মানিয়ে নিবেন। আর এই পর্বে একটু উৎসাহমূলক মম্তব্যের আশা রাখছি🙂)

চৈত্রিকা পর্ব ৪৫

3 COMMENTS

  1. আজকের পর্ব টা দারুন হয়েছে আপু পরের পর্ব প্লিজ তারাতারি দিয়েন🥰🥰🥰🥰

Comments are closed.