ছদ্মবেশে লুকানো ভালোবাসা পর্ব ২২+২৩

ছদ্মবেশে লুকানো ভালোবাসা পর্ব ২২+২৩
মৌমি দত্ত

ভোরের আলো ফুঁটছে মৃদু ভাবে। ইনায়াতের বাসার সোফায় বসে আছে স্পন্দন মাথা নিচু করে। আফিম উন্মাদের মতো এদিক থেকে ওদিক হাঁটছে। কামাল ফোনে কথা বলছে সবার সাথে,, সবাইকে বুঝিয়ে দিচ্ছে ইনায়াতকে খুঁজবার ব্যাপারটা।
– কেমন ভাই তুমি স্পন্দন?? কেমন ভাই??
আফিম রেগে চিৎকার করে উঠলো। স্পন্দন ভ্রু কুঁচকে মাথা তুলে তাকালো আফিমের দিকে।

– যখন তুমি জানতে ইনায়াতের বিপদ আছে,,, তখন ওর দিকে নজর রাখার কথা কিভাবে ভুলতে পারো তুমি?? হাও??
আফিম রাগ সামাল দিতে না পেরে ছোট্ট একটা চেয়ারে জোড়ে লাথি দিলো। স্পন্দন আবারও মাথা নিচু করে ফেললো। আফিম স্পন্দনের পাশেই বসে পড়লো। সেকেন্ড খানেক সেভাবে বসে আফিম উঠে দাঁড়ালো।
– স্পন্দন!! ইনায়াতের আর তোমার কথা মতো ইরশাদ মির্জা তাহজিব খানের বাসায় বন্দী ছিলো। রাইট??
স্পন্দন ভ্রু কুঁচকে মাথা তুলে তাকিয়ে মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ জানালো। আফিম মাথার চুল খামচে কিছুক্ষন ভাবলো মন দিয়ে। এরপর স্পন্দনের পাশে বসে পড়লো হাসিমুখে ধুপ করে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

– তাহলে তো অর্ধেক চিন্তা শেষ!! তাহজিব খানকে ফোন করো,, দেখা করো। ইরশাদকে কয়েক ঘা দিলেই সবটা জানা যাবে।
স্পন্দনের চোখে মুখে বিষ্ময়। কথাটা মস্তিষ্কে আঘাত করতেই হাসি ফুঁটলো স্পন্দনের মুখে। আফিমকে জড়িয়ে ধরলো খুশী হয়ে। এরপর দুজনেই বের হয়ে এলো কামালের কাছে। কামাল কল শেষ করে সবে মোবাইলটা কান থেকে নামিয়েছে। দুজনকে একসাথে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
– কামাল!! তাহজিব খানের সাথে কন্ট্যাক্ট করো ইমিডিয়েটলি। কল করে আমাকে দেবে।
স্পন্দনের কথা বুঝতে না পারলেও কামাল বললো,,
– স্যার!! আমি এক্ষুনি কল করছি। চিন্তা করবেন না।
স্পন্দন আর আফিম দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে কামালের দিকে অধীর আগ্রহে। কামাল কল লাগালো আসিফের নাম্বারে। ৩ বার রিং হওয়ার পর আসিফ রিসিভ করলো,,

– হ্যালো!! এস.এ কথা বলবে!!
আফিম হা হয়ে গেলো। স্পন্দন আজাদ যে আন্ডারওয়ার্ল্ডের এস.এ তা মাথায় আসেনি এতোদিন আফিমের। কিন্তু মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললো সবটাই। এখন শুধুই ইনায়াত একমাত্র চিন্তার বিষয়। স্পন্দন একপ্রকার ছো মেরে কামালের হাত থেকে ফোন নিলো। আসিফও অপরদিকে ততোক্ষনে তাহজিবকে ফোন ধরিয়ে দিয়েছে।
– হ্যালো!! তাহজিব!! ইরশাদ কোথায়??
– এস.এ,, ইনায়াত কিডন্যাপ হয়ে গেছে। ইরশাদও আমার বন্দী থেকে পালিয়েছে। ও নিজের কোন বন্ধুর সাহায্য নিয়ে রুহিকে,, আই মিন আমার গার্লফ্রেন্ডকেও কিডন্যাপ করেছে। প্লিজ হ্যাল্প মি!! আপনার যা লাগবে তাই পাবেন। জাস্ট হ্যাল্প মি!!
– আমরা আসছি!!

স্পন্দন এই বলেই ফোন কাটলো। আফিম অধ্যির আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে আছে। স্পন্দন আফিমের দিকে তাকিয়ে বললো,,
– ইনায়াতকে কিডন্যাপের ব্যাপারটা তাহজিব জানে। তাহজিবের গার্লফ্রেন্ড রুহিকেও কিডন্যাপ করা হয়েছে। সবটাই ইরশাদ তার কোন বন্ধুর সাহায্য নিয়ে করছে। ইরশাদ আর তাহজিবের বন্দীত্বে নেই।
আফিম মেঝেতে জোড়ে পা আঘাত করলো সবটা শুনে। স্পন্দন কামালের সাথে আলাপ করছিলো সবটা নিয়ে। তখনই আফিম এসে দাঁড়ালো।

– স্পন্দন!! আমিও যাবো তোমার সাথে!! আমি এখানে থাকতে পারবো না।
স্পন্দন আফিমের কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। স্পন্দন আফিমের কাঁধে এক হাত রেখে বললো,,
– এটা কোন মজা না আফিম!! ওখানে অনেক বিপদ থাকবে পদে পদে।
আফিম স্পন্দনের হাত কাঁধ থেকে ঝাড়িয়ে নিলো।
– কি চাও তুমি স্পন্দন তাহলে?? আমি এখানে এক কাপ কফি নিয়ে অফিস এটেন্ড করি?? ইনায়াত বিপদে তা জেনেও স্বাভাবিক থাকি?? আরেহ এক কাপ কফি নিয়ে অফিস এটেন্ড করতে হলেও আমার ইনায়াতকে দরকার। ইনায়াত আমার লাইফে এমন ভাবে জড়িয়ে গেছে যে,, আমার থেকেও আমার লাইফে ওর বেশি প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আমি পারবো না ওকে ছাড়া এই শহরে থাকতে,,, ঐ অফিস,, ঐ রুম সবকিছু আমার মেরে ফেলবে স্পন্দন। তুমি চাইলে আমি তোমার কাছে হাতজোড় করবো। হাতজোড় করে বলছি আমিও যাবো। প্লিজ!!
আফিমের পাগলামো দেখে স্পন্দন চুপ হয়ে গেলো। মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানালো।

তাহজিব বর্তমানে দেশের ভিতরে যতো বড় বড় মাফিয়া আছে তাদের সম্পর্কের খোঁজ লাগাচ্ছে। এদের মধ্যে কেও ইরশাদকে সাহায্য করছে বলেই ধারনা তাহজিবের। আসিফও সেদিকে দৌড়াচ্ছে। একটু আগে স্পন্দনের সাথে কথা বলে যখন জানলো স্পন্দন আসছে। তখন মূহুর্তের জন্য অবাকই হয়েছে তাহজিব। এতো বড় একটা আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডন কিনা বিনা শর্তে আসবে বলে জানিয়ে দিলো?? কিন্তু পরক্ষনেই মাথা থেকে সব চিন্তা ঝেড়ে ফেললো। কেননা সে এখন রুহিকে ছাড়া আর কিছু নিয়ে ভাববার মতো অবস্থায় নেই।

রুহি নড়েচড়ে উঠলো। অনেক কষ্টে চোখ টেনে খুললো রুহি। চোখের সামনে সব কেমন যেন ঝাপসা লাগছে তার। দীর্ঘক্ষন চোখ বন্ধ থাকার কারনে এমন হচ্ছে বুঝতে কষ্ট হলো না রুহির। তবুও কোনমতে উঠে বসলো রুহি। চারপাশে চোখ বুলিয়ে দেখতেই বুক কেঁপে উঠলো তার। রুমটার কিছুই তার চেনা না। এটা তার রুম না। খাটে তার পাশে পড়ে থাকা মেয়েটির ছবি অসংখ্যবার দেখেছে সে তাহজিবের রুমে। মেয়েটি আর কেও না ইনায়াত!!

ইনায়াত কেও এখানে দেখে খুব অবাক হলো। বুঝতে অসুবিধা হলো না তারা দুইটি মেয়েই বিপদে আছে এখন। রুহি মাথা চেপে ধরলো। সব মনে পড়লো তার এক এক করে। সাথে এটাও মনে পড়লো যে সে অজ্ঞান হওয়ার আগে কোনমতে নিজের কাপড়ের ভাঁজে ফোন গুঁজে নিয়েছিলো। রুহি দ্রুত ফোনটা বের করলো। মোবাইল ওপেন করার চেষ্টা করে বুঝলো মোবাইল কোনভাবে চাপ পরে একেবারে অফ হয়ে গেছে। রুহি মোবাইল ওপেন করলো কোনভাবে। দ্রুত আগে মোবাইল সাইলেন্ট করে নিলো রুহি। এই মোবাইলটা কোনমতে শত্রুর চোখে পড়ুক তা চায় না সে। উঠে গিয়ে টলমল পায়ে দরজা ভিতর থেকে খিল দিয়ে দিলো দুটোই। এরপর খাটে এসে বসে কল লাগালো তাহজিবের নাম্বারে।

তাহজিব সবে একটা কল শেষ করে সোফায় ক্লান্ত শরীর এলিয়ে দিয়েছে। তখনই হঠাৎ ফোন বেজে উঠলো জোর শব্দে। হন্তদন্ত হয়ে তাহজিব ফোন চোখের সামনে ধরতেই বিষ্ময়ে ভ্রু কুঁচকে এলো। ফোনের স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করছে রুহির নাম। কাঁপা হাতে ফোন রিসিভ করলো তাহজিব। নিজের ভাগের কলটা শেষ করে তাহজিবের দিকে আসলো আসিফ।
– হ্যালো!!
তাহজিব কাঁপা কন্ঠে প্রশ্ন করলো যেন। রুহির মনটা ভরে গেলো।
– শুনুন!! আমার কাছে বেশি সময় কথা বলবার জন্য নেই। শুধু বলবো আমি আর ইনায়াত আপু বিপদে আছি। আর তা নিশ্চয় এতোক্ষনে জানা হয়ে গেছে আপনার। মোবাইলটা যে বুদ্ধি করে নিজের জামার ভিতর নিয়ে নিয়েছিলাম তা কেও খেয়াল করেনি বলেই আস্ত আছে। এখন আমি জিপিএস অন করছি। আপনি দ্রুত আমার ফোনের লোকেশন ট্রেস করান। যতো দ্রুত সম্ভব। আর হ্যাঁ!! আমি কোন বিপদ হলে কল করবো। নিজে কথা বলতে না পারলেও পারিপার্শ্বিক সবটা শুনানোর ব্যবস্থা করবো। ইনায়াত আপুকে বাঁচাতে হলে যা করবার দ্রুত করুন।

অস্থির আওয়াজে বললো রুহি। রুহির কন্ঠ শুনে যেন কলিজায় ঠান্ডা প্রবাহ হলো তাহজিবের। সবটা মনোযোগ দিয়ে শুনলো তাহজিব।
– রুহি!! নিজের খেয়াল রাখো। অন্ততপক্ষে আমার বিয়েটা হওয়া পর্যন্ত নিজেকে নিজে সামলে রাখো।
তাহজিব এই বলেই দ্রুত ফোনটা কেটে দিলো। ফোন কানে ধরেই রুহি বসে রইলো মূর্তীর মতো। তাহজিব কি বলেছে তা মস্তিষ্কে পৌছালেও বিশ্বাস হচ্ছে না যেন রুহির।
তাহজিব ফোন কেটেই সবটা খুলে বললো আসিফকে। আসিফ রুহির বুদ্ধির প্রশংসা করলো মনে মনে। দ্রুত নিজের জানা শোনা মানুষকে কল লাগালো আসিফ লোকেশন ট্রেস করতে।

আফিম দ্রুত বাসায় পৌছে লাবিবা ও জোসেফকে সবটা জানিয়ে বিদায় নিয়ে এসছে স্পন্দনের গাড়িতে। দুজনেই এখন যাচ্ছে অন্য শহরে। একজনের বোন ও অন্যজনের প্রেয়সীকে খুঁজতে লড়াই শুরু হবে ভাগ্যের সাথে।
গাড়ি এসে থামলো এয়ারপোর্টে। দ্রুততার সাথে সব ফর্মালিটিজ শেষ করে স্পন্দন এর নিজস্ব জেট এ গিয়ে উঠলো তারা।এখন বর্তমানে জেটে বসে আছে তিনজনই। দেখা যাক আগে আগে কি হয়!!
মোবাইলের প্রব্লেম থাকায় সকালে পোস্ট করা হয়নি গল্প। সরি খুব সরি আপু ও ভাইয়ারা। আই প্রমিজ কালকে থেকে আবারও সকালে আর রাতে মোট দুইটা পার্ট পোস্ট করবো। আর হ্যাঁ!! আসছে #পরানসখা তাই চোখ কান খোলা রাখবেন যদি নতুন কিছু আশা করেন

তাহজিব ইতোমধ্যে তার সামর্থ্যের সবটা যোগাড় করেছে। নিজের সব থেকে বেস্ট ফাইটার ও শ্যুটার গার্ডসদের নিয়েছে। লোকেশন ট্রেস হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। এই শহরেরই একদম শেষ মাথার এক পোড়াবাড়িতে লোকেশন দেখাচ্ছে। আসিফ খুব চিন্তায় আছে। তার ভয় হচ্ছে কোন ভুল না হয়ে যায়। তাহজিব ইতোমধ্যে একবার কল করেছে রুহিকে তারা ঠিক আছে কিনা জানবার জন্য। স্পন্দন,, কামাল আর আফিম এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করে সোজা তাহজিবের বাসার উদ্দেশ্যে উঠেছে গাড়িতে। ইন্টারন্যাশনাল লেভেলের একজন মাফিয়া হওয়াতে কম বেশি সব জায়গায় নিজের ক্ষমতা আছে স্পন্দনের। ফ্লাইটের উঠবার আগেই কল করে সে গাড়ি আর গার্ডসদের ব্যবস্থা করে ফেলেছে। পুরো রাস্তা আফিম হাতের নখ কামড়েছে আর নাহয় ঘেমে গেছে। স্পন্দনের অবস্থাও খুব একটা ভালো নয়। কলিজার বোন বলে কথা। তবে মাফিয়া লাইনে থেকে সবটা শান্ত মস্তিষ্কে সামাল দেওয়ার শিক্ষা তার আছে। আর কামালও স্পন্দনের থেকেই সবটা শিখেছে।

– আফিম!! খুব টেস্টি??
বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করলো স্পন্দন। আফিম বুঝলো না কি নিয়ে কথা বলছে স্পন্দন। তাই অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,,
– মানে কি?? কিসের টেস্ট??
আফিমের প্রশ্নে রাগ বাড়লো হুহু করে। এতোটা প্যানিক কেন করছে আফিম তা নিয়ে বিরক্ত স্পন্দন।
– তোমার নখ!! খুব টেস্টি??
আফিম এতোক্ষনে বুঝলো সে কতোটা বিচ্ছিরি ভাবে নিজের হাতের নখ কাটছিলো। আফিম হালকা কেশে হাত নামিয়ে নিলো।
তাহজিবের বাসার সামনে এসে গাড়ি থামলো স্পন্দনদের। আর তখনই তাহজিব গাড়ি নিয়ে বের হচ্ছিলো। স্পন্দন আর তাহজিবদের গাড়ি মুখোমুখি হতেই তাহজিবদের গাড়ি থেকে নেমে এলো আসিফ আর তাহজিব। আর স্পন্দনদের গাড়ি থেকে নেমে এলো স্পন্দন,, কামাল আর আফিম। এস.এ’কে কেও দেখেনি। তাই তাহজিব চিনতে পারলো না স্পন্দন আজাদই যে এস.এ। বিষয়টা কামাল বুঝতে পারলো।

– এস.এ এসেছে। আর কোন চিন্তা করবেন না খান স্যার!!
তাহজিব আর আসিফ ভ্রু কুঁচকে এতোক্ষন তাকিয়ে ছিলো স্পন্দনদের দিকে।কামালের কথা শুনে বুঝতে পারলো সবটা।
-এস.এ মানে স্পন্দন আজাদ,, নামকরা ডাক্তার ও বিজনেস ম্যান!!
আসিফ অবাক হয়ে বললো। আফিম বিরক্ত এদের সবার উপরেই। ওদিকে ইনায়াতের জান সংকট আর এরা এখানে হাই হ্যালো নিয়ে বসে আছে।
– হ্যালো!! সবটা পড়ে হবে। আগে আমরা রুহি আর ইনায়াতকে প্রায়োরিটি দিলে ভালো হয়।
আফিমের কথা শুনে তাহজিবের চোয়াল শক্ত হয়ে এলো। অন্যদিকে তাকিয়ে বললো,,
– আপনার এখানে কাজ ছিলো না।
আফিম রেগে বললো,,
– আমার জিন্দেগি,, আমার ইনায়াত ওখানে বন্দী। আর আপনি কি চাইছিলেন মিস্টার খান?? আমি আমার অফিসে বসে ক্রেস্ট’স এন্ড সার্টিফিকেটস মুছি??

আফিমের গলার টোনে কিছু একটা ছিলো যা শুমে স্পন্দন আর তাহজিব অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো। তাহজিব সবাইকে নিয়ে ভেতরে গেলো। ইতোমধ্যে তাহজিবদের বাসার সামনে ৬ টা বড় বড় জীপে করে তাহজিবের গার্ডস চলে এসেছে রেডি হয়ে। আর স্পন্দনও নিজের ফোর্স কাজে লাগিয়ে ৮ জীপ গার্ডস আনিয়েছে।
– আপনারা কোথাও বের হচ্ছিলেন মনে হয়। কোথায় যাচ্ছিলেন খান স্যার??
প্রশ্ন করলো কামাল। এতে করে স্পন্দন আর আফিমও তাকালো তাহজিবের দিকে। তাহজিবের মাথায় সবটা এলো।
– এস.এ,, রুহি,,ইনায়াতের লোকেশন ট্রেস করা হয়ে গেছে খুব ইজিলি।
স্পন্দন যেন অবাক হলো,,,
– মানে?? এতো ইজি কিভাবে সম্ভব??
জানতে চাইলো আফিম। তাহজিব বিজয়ী হেসে বললো,,

– আমার উডবি রুহি খান,,, সে পুলিশ কমিশনারের মেয়ে। বাবার কাছে কেস আর এসবের গল্প শুনে সে নিজেও একজন সাহসী হিসেবে নিজেকে গড়েছে। কিডন্যাপাররা যখন রুহিকে ক্লোরোফর্ম দিয়ে রুমাল মুখে চেপে ধরেছিলো। তখন অতি সন্তর্পনে রুহি সবার চোখ বাঁচিয়ে মোবাইল নিয়ে নিয়েছে নিজের সাথে। একটু আগেই সে কল দিয়েছে।
তাহজিব রুহির কল দেওয়া সম্পর্কে সবটা বললো। সবটা শুনে অবাক হলো স্পন্দন আর আফিম। আসলেই রুহি যে সাহসী তা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। নাহয় তেমন একটা সময়ে জাস্ট একটা ১৬/১৭ বছর বয়সী মেয়ে নিজেকে শান্ত রেখে এতোটা করতে পারে না। তাহজিব এর পাশাপাশি নিজের সাজানো প্ল্যানটাও বলতে লাগলো স্পন্দন ও আফিমকে। কে কোনদিক থেকে এট্যাক করবে,,, কয়জন থাকতে পারে এসব নিয়ে কথা চললো আরো কিছু মিনিট। তাহজিব সবাইকে বুঝিয়ে দিয়ে উঠে দাঁড়াতেই স্পন্দন ভ্রু কুঁচকে তাকালো তাহজিবের দিকে।

– রানা কোথায়?? ও ইরশাদের সাথে যাওয়ার মতো মানুষ না।
– রানা ইরশাদের সাথে যাওয়ার মতো মানুষ না বলেই হয়তো আল্লাহর কাছে চলে গেছে।
স্পন্দন আর আফিম অবাক হয়ে একে অপরের দিকে তাকালো। আসিফ খুলে বললো রানার মৃত্যুর খবর। স্পন্দনের ব্যাপারটাতে আসলেই খারাপ লাগলো। সেদিন একটু সতর্ক হয়ে রানাকে সাথে নিয়ে গেলে সে বেঁচে থাকতো। স্পন্দন বের হয়ে এলো। কামাল আর আসিফও নিজেদের মধ্যে প্ল্যান নিয়ে আলোচনা করতে করতে বের হয়ে এলো। আফিম তাহজিবের দিকে তাকাতেই মাথায় খেলে গেলো ভয়ানক এক প্রশ্ন।

– ইনায়াতকে বাঁচানোর পর তাহজিব দাবি করবে না তো??
পরক্ষনেই নিজেকেই নিজে গালাগালি দিলো।
– ধ্যাত!! ইনায়াত একটা মানুষ কোন পণ্য না। ওকে দাবি করলেই পাওয়া যাবে নাকি?? সেভাবে হলে আমিও দাবি করতাম আর পেয়ে যেতাম। কিন্তু আশা করি তাহজিব ইনায়াতকে সত্যিই ভালোবাসলে তেমন কিছু করবে না।
পরক্ষনেই আরো একটু প্রশ্ন মাথায় ধাক্কা খেলো আফিমের।
– তাহজিব কি ইনায়াতকে এখনো ভালোবাসে??
বিদ্ধস্ত অবস্থায় কিছু সেকেন্ড নিজের হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে থাকলো। পরক্ষনেই নিজের ভাবনায় নিজে হেসে দিলো।
– রিয়েলি আফিম?? আর ইউ ম্যাড?? তাহজিব তো বললো স্পষ্ট ” আমার উডবি রুহি খান “। তার মানে আমার ইনু অলরাইট থাকবে। ইয়েস!!

এই প্রশ্ন শেষ হতে আবারও মাথায় প্রশ্ন এলো আফিমের।
– ইনায়াতকে বাঁচানোর পর স্পন্দন যদি ইনুকে নিজের কাছে রাখে আর আমাকে না দেয়?? ইনুকে ছাড়া আমি তো ঘুম যেতে বা উঠতেও পারিনা। ও-ই সব করতো আমার।
আফিমের ধারনা সে মনে মনে কথা বলছে। কিন্তু অতিরিক্ত উত্তেজনায় আসলে যে সে মুখে জোড়ে জোড়েই কথা বলছে তা তার খেয়ালই হয়নি। স্পন্দন আর তাহজিব আফিমের দুই পাশে বুকের কাছে হাত ভাঁজ করে এতোক্ষন কথাগুলো শুনছিলো।
– মিস্টার আফিম!! আমি ছ্যাচড়া না!!

তাহজিবের গলার আওয়াজে চমকে উঠে তাকালো আফিম তার বাম পাশে। তাহজিবের ভ্রু কুঁচকে কড়া চাহনি দেখে অবাক হলো। সবে অবাকের রেশ কাটাতে চাইছিলো আফিম তখনই আফিমের ডান পাশ থেকে কথা বলে উঠলো স্পন্দন।
– এন্ড!! ইয়েস। ইনায়াত যদি না চায় তোমার ওকে পাওয়া যাতে কখনো না হয় তার খেয়াল আমি রাখবো।
হঠাৎ স্পন্দনের আওয়াজ শুনে চমকে স্পন্দনের দিকে তাকালো আফিম। বোকার মতো ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন স্পন্দনের দিকে।

– কিন্তু আমি কি ভাবছি তা এরা বুঝলো কিভাবে??
অতিরিক্ত চিন্তায় মাথা কাজ করছে না আফিমের। আর আফিমের এই বোকামো দেখে স্পন্দন তাহজিবের দিকে ইশারা করে বের হয়ে এলো রুম থেকে। তাহজিব জোড়ে একটা শ্বাস নিয়ে আফিমের কাঁধে চাপর মেরে বললো,,
– মিস্টার আফিম!! আপনি অতিরিক্ত উত্তেজনায় এতোটাই পাগল হয়ে গেছেন যে এটাও বুঝতে পারছেনা। আপনি মনে মনে না জোরে জোরে মুখ চালিয়ে কথা বলছেন।
আফিম চমকে উঠলো। ভাগ্যিস তাহজিব তাকে ধরিয়ে দিয়েছে। নাহয় সে রাস্তাতেও হয়তো কথা বলতো এভাবে। আফিম হালকা কেশে নিজের কোটের হাতা ঠিক করলো এমন ভাণ করে যেন কিছু হয়নি। তাহজিব আবারও আফিমের কাঁধে চাপড় মেরে বললো,,
– যাওয়া যাক?
আফিম মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানালো। তাহজিব বের হয়ে এলো। আর পিছন পিছন মাথা চুলকাতে চুলকাতে বের হয়ে এলো আফিম।

রুহি বসে বসে সবটা জায়গা দেখে নিচ্ছিলো রুমের। ইতোমধ্যেই রুমের দরজা সে খুলে দিয়েছে। এখন শুধু ইনায়াতের ঘুম ভাঙ্গার দেরি। ইনায়াত নড়েচড়ে উঠলো ধীরে। আড়মোড়া ভেঙ্গে উঠে নিজেকে অপরিচিত জায়গায় আবিষ্কার করে চিৎকার করতে যাচ্ছিলো ইনায়াত। তখনই রুহি মুখ চেপে ধরলো ইনায়াতের।
– আপি,, শান্ত হও। এখন চিৎকার করলে ওরা সব এসে যাবে।
রুহিকে দেখে অবাক হলো ইনায়াত। শান্ত হলো। রুহি ইনায়াতের মুখ থেকে হাত সড়িয়ে রুহির পাশে বসলো।
– আপি,,, সময় খুব কম। আমি যা বলছি কোন প্রশ্ন ছাড়া মন দিয়ে শুনো। আর আমি এও জানি তুমি প্রমাণ খুঁজবে। আর হ্যাঁ আমি জানি তুমি প্রমাণ পেয়েও যাবে। তবে আবেগের বশে পাগলামী করো না প্লিজ। আমরা দুজনেই খুব বিপদে আছি।

রুহির কথায় ইনায়াত অবাক হলো। তবুও মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানালো। রুহি এক এক করে তার বাবার ও তাহজিবের কাছে শোনা সবটা কথা বললো। ইরশাদ কতোটা খারাপ,, কিভাবে মহুয়াকে মেরেছে,, কিভাবে এতোদিন ভালোমানুষীর মুখোশ পড়েছিলো,, তাহজিব সবটা জানতে পেরে ইনায়াতকে বাঁচাতেই সবাইকে বন্দী করেছিলো তাও জানালো। আরো জানালো কিভাবে ইরশাদ তাদের দুজনকে এখানে ধরে এনেছে। নিজের বাবার সম্পর্কে এমন সব কথা জেনে ইনায়াত যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে। এতোকিছুর মধ্যে তো বেচারির জানাই হলো না যে ইরশাদ আসলে তার আসল বাবা না,, তার আসল বাবা হাবিব আজাদ। আর স্পন্দন তার আসল ভাই। কেননা এই কথা আরভিদ সাহেব বা তাহজিব জানতো না। তাই রুহিও জানেনা। আর তাই বলাও হয়নি। ইনায়াত বেখেয়ালি অবস্থাতেই বললো,,

ছদ্মবেশে লুকানো ভালোবাসা পর্ব ২০+২১

– তুমি পিচ্চি একটা মেয়ে। এগুলো বানানো গল্প। আমি স্বপ্ন দেখছি।
– আপি!! আমি পিচ্চি মেয়ে মানছি। তবে এসব সত্যি। আর এটা স্বপ্ন না।
– প্রমান কি তোমার এতোসব কথার??
– প্রমাণ!! একটু পরেই তোমার বাবা আসবে রুমে। তোমাকে কোন না কোন ভাবে,, কোন না কোন পেপারসে সাইন করতে বলবে। ওগুলো আসলে প্রোপার্টি পেপারস। দেখে নিও।

ইনায়াত শূন্যে উদ্দেশ্যহীন ভাবে তাকিয়ে আছে। সবটা যে তাকে অনেক আঘাত করেছে মানসিক ভাবে তা বুঝতে সমস্যা হলো না রুহির। তবে তারও বা কি করবার ছিলো?? নিজেদের বাঁচাতে বলতেই হতো।
– আপি!! এখন আমি যা বলি তা মন দিয়ে শুনো।
নিজেদের বাঁচানোর একটা প্ল্যান এতোক্ষন বানিয়েছিলো রুহি। তাই খুলে বললো ইনায়াতকে। ইনায়াত না চাইতেও মন দিয়ে শুনলো। কেন যেন রুহিকে দেখে মনে হচ্ছে না তার যে রুহি মিথ্যে বা বানোয়াট কোন গল্প বলে মজা নিচ্ছে।

ছদ্মবেশে লুকানো ভালোবাসা পর্ব ২৪+২৫