ছদ্মবেশে লুকানো ভালোবাসা পর্ব ১৬+১৭

ছদ্মবেশে লুকানো ভালোবাসা পর্ব ১৬+১৭
মৌমি দত্ত

ড্রয়িং রুমে মাথা চেপে ধরে বসে আছে আফিম। লজ্জায় মাথা তুলে তাকাতেও অস্বস্তি হচ্ছে তার। ড্রয়িং রুমে উপস্থিত আছে দীপ,, আফরা,, জোসেফ আর লাবিবা। আজ দুপুরের দিকে হঠাৎ বাসায় এসে আফিম ইনায়াতের জন্য যে পাগলামি শুরু করেছিলো। তা শেষ করতে ডাক্তার এনে ইঞ্জেকশন দিতে হয়েছে আফিমকে ঘুমের। পাক্কা ৫ ঘন্টার ঘুমের পর এখন এই এতো রাতে ঘুম থেকে উঠেছে আফিম। উঠেই নিচে এসে মাথা চেপে ধরে বসে আছে। আফিম আড়চোখে একবার তাকালো সবার দিকে। সবাই খুব সিরিয়াস মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। আফিম চোখ নামিয়ে ফেললো। এখন নিজেরই লজ্জা লাগছে তখনের করা ব্যবহারের জন্য।
– স্যার!! আপনি শিউর আপনি ইনায়াত স্যারকে ভালোবাসেন??
দীপের অমন একটা প্রশ্নে লাবিবা আর জোসেফও মাথা নাড়িয়ে তাল মেলালো। আফিম দাঁত কটমট করে তাকালো দীপের দিকে।

– এটা কেমন প্রশ্ন দীপ??
– না মানে ভাইয়া!! তুই তো কখনো ভালো বাসা নিয়ে কথা বলা বা কিছু ফিল করার কথা জানাসনি। তাই দীপও কনফিউশান নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তুই আসলেই ভালোবাসিস তো?? নাকি??
আফরার বলার ভঙ্গিমায় বিরক্ত হলো আফিম। মাথা চেপে ধরেই বসে রইলো।
সবাই একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করে হো হো করে হেসে উঠলো। আফিম মাথা তুলে বোকার মতো তাকিয়ে রইলো। কিই বা আর করবে সে?? এরা তো সবাই প্ল্যান করে পঁচাচ্ছে আফিমকে। এটা কি মাসুম আফিম জানে?? জোসেফ উঠে আফিমের পাশে এসে বসলো,,

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

– মাই ডিয়ার সান!! ভালো যখন বেসেছো তখন ছোট ছোট বিষয় জেলাস ফিল না করে নিজের কারিশমা দেখাও।
লাবিবা বললো,,
– ইনায়াত কেন বুঝবে যে তুমি ওকে ভালোবাসো?? কখনো তেমন কোন হিন্টস তো দাওনি ওকে আফিম।
– আর হিন্টস দিলেই যে ভাবী ধেই ধেই করে নাচতে নাচতে তোকে ভালোবাসবে তা কেন ভাবছিস ভাইয়া?? আফটার অল সেও আমার উড বি ভাবী,, একটু পার্টে থাকবে।
দীপ দাঁত কেলিয়ে বললো,,

– স্যার!! আপাতত রেডি সিনেমার ” ঢিংকা চিকা ” গানটা নিজের জীবন বানিয়ে ফেলুন। ১২ দিনে ১২ ভাবে তাকে ভালোবাসা উপলব্ধি করান। পরে আমার স্টেজে এসে যখন পৌছাবেন তখন নাহয় ” এ কি হলো ” গানটা সেট করবেন রিংটোন।
আফিম চোখ রাঙ্গিয়ে সবার দিকে তাকালো। দীপ চলে গেলো রান্নাঘরে। আফরা সেল্ফি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
– আফিম?? নিজের ভালোবাসার উপর যদি বিশ্বাস থেকে থাকে,,, তাহলে এগিয়ে যাও।
লাবিবা এতোটুকু বলেই চলে গেলেন ডাইনিংয়ের খাবার বাড়ার দিকটা দেখতে। জোসেফ আর আফরাও চলে এলো উঠে। আফিম একা বসে রইলো সোফায়।

– না,, সবাই ঠিকই বলছে। আমার কারিশমা দেখাতেই হবে তোমাকে মিস ইনায়াত!!
আফিম বাঁকা হেসে উঠে পড়লো। খিদে পেয়েছে তার খুব।
খাওয়াদাওয়া শেষে রুমে এসে আফরা চুল আঁচড়াচ্ছিলো। তখনই হারিয়ে গেলো আবারও সেই ছেলেটার খেয়ালে। ট্রিপে থাকাকালীন সময়ে একটা রোড এক্সিডেন্ট থেকে তাকে বাঁচিয়েছিলো দি স্পন্দন আজাদ।
কিছু একটা ভেবে ফেসবুকে স্পন্দন আজাদের নাম লিখে সার্চ করতেই তার প্রোফাইলটা পেয়ে গেলো। স্পন্দন আজাদের প্রোফাইলে ঢুকার আগেই একটা পোস্টে চোখ আটকে গেলো আফরার।
” বিবাহিত স্পন্দন আজাদ!! সবার থেকে লুকিয়ে স্ত্রীর সাথে মাঝরাস্তায় ভালোই উপভোগ করছেন নিজের দিন “।
খবরটা দেখেই কিছুক্ষন মূর্তীর মতো বসে রইলো আফরা। চুলের খাঁজে আটকে থাকা চিরুনি নিয়েই ঘুমিয়ে পড়লো কম্বল দিয়ে নাক মুখ ঢেকে।

তাহজিব ক্লান্ত শরীর নিয়ে নিজের রুমে ঢুকেই বিরক্ত হলো খুব। অন্যদিনের মতো ঘরটা সাজানো নেই। কোনমতে হাতাহাতি করে নিজের টাওয়েল খুঁজে ফ্রেশ হয়ে এলো তাহজিব। প্রতিদিনের মতো কেও কফি নিয়েও দাঁড়িয়ে নেই। তাহজিব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিচে এলো ডিনার করতে। কিন্তু খাবার দেখে খাওয়ার ইচ্ছে চলে গেলো। আর একা খেতে একদমই ভালো লাগছে না তার। তাহজিব না খেয়েই নিজের রুমে চলে যাচ্ছিলো। তখনই দেখলো আসিফ এক কোণায় দাঁড়িয়ে হাসছে তাহজিবের দিকে তাকিয়ে। তাহজিবের ভ্রু কুঁচকে এলো।

– হাসছো কেন আসিফ??
– স্যার!! আপনার ইনায়াতের খোঁজ তো পেয়েই গেছি। ধরে আনি??
আসিফের বলার ধরন পছন্দ হলো না তাহজিবের। বিরক্তি নিয়ে আসিফের দিকে তাকালো
– ওটা নিয়ে আমি ভাববো। তুমি না!!
ধুপাধুপ পা ফেলে চলে গেলো তাহজিব নিজের রুমে। খাটে শুয়েই অস্বস্তি জেঁকে ধরলো তাহজিবকে। কিছু একটা নেই। কিন্তু কি?? রুহি?? তাহলে কি সে একদিন যেতে না যেতেই রুহিকে মিস করতে শুরু করলো??
নিজের উপর নিজে বিরক্ত হলো তাহজিব। খাটের উপরেই বসে কিছুক্ষন হাতের আঙ্গুল গুনলো। কিন্তু ঘুম এলো না। এই রাত নিঃসন্দেহে অনেক যন্ত্রনাময় আর দীর্ঘ হবে তার জন্য তা জানা হয়ে গেছে তাহজিবের।

স্পন্দন বসে বসে আকাশের দিকে একমনে কি যেন দেখছিলো। তখনই দৌড়ে এলো কামাল।
– স্যার!! আপনাকে নিয়ে আবারও এক পেপার ফলস নিউজ স্প্রেড করেছে।
– কি নিউজ??
কোন ভাবনা ছাড়াই আকাশের দিকে চোখ রেখে বললো স্পন্দন।
– ঐদিন আপনি একটা মেয়েকে বাঁচিয়েছিলেন না?? ওই সময়ের অস্পষ্ট একটা ছবি তুলে লিখেছে ” বিবাহিত স্পন্দন আজাদ সবার থেকে লুকিয়ে স্ত্রীর সাথে মাঝরাস্তায় ভালোই উপভোগ করছেন নিজের দিন “।
স্পন্দন বাঁকা হাসলো। নিজের অজান্তে খুব ভালো লাগলো ” বিবাহিত স্পন্দন আজাদ ” কথাটা শুনেই।
– কামাল?? তুমি বিয়ে করেছো??
হঠাৎ এমন প্রশ্নে হকচকিয়ে গেলো কামাল। হালকা লজ্জা নিয়েই বললো।
– স্যার!! করবো। এখন না।
– আমারও একটা বিয়ে করা উচিত,, তাই না কামাল?? আফটার অল আমার বোনুকে নিয়ে এলে তার খেয়াল রাখতে একটা ভাবী তো দরকার।

কামাল কি বুঝলো সে নিজেও জানেনা। তবুও বেক্কলের মতো মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জানালো। স্পন্দন মৃদু হেসে বললো,,
– নিউজটা ভাইরাল করে দাও কামাল। তোমার ভাবীর চোখে যেন অবশ্যই পড়ে। আর হ্যাঁ,, তোমার ভাবী কে,, কিসে পড়ে,, কোথায় থাকে সব ডিটেইলস খুঁজে বের করো।
কামাল হা হয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো স্পন্দনের দিকে।
– স্যার!! ভাবী কে??
এতোক্ষনের ভালো মুড বিগড়ে গেলো স্পন্দনের। একটা মানুষ এতো বেক্কল কিভাবে হয় তা বুঝতে পারছে না স্পন্দন।
– আমি কোন মেয়েকে বাঁচিয়েছি??
– ঐ মেয়েকে!!
– আর তোমার বলা ” ঐ মেয়ে ” হবে আমার বৌ,, তোমার ভাবী!!
কামাল কিছুক্ষন পিটিপিটি করে তাকিয়ে রইলো। পরক্ষনেই সবগুলো দাঁত দেখিয়ে হেসে বললো,,
– কালকের মধ্যেই পেয়ে যাবেন স্যার।
এই বলেই কামাল খুশী খুশী বের হয়ে এলো রুম থেকে।

জনাথন মুলার বাংলাদেশে ল্যান্ড করলো সবেমাত্র। নিজের পুরানো এক ফ্রেন্ডের অনুরোধ রাখতে এসেছে জন এই দেশে। তার ফ্রেন্ড তাকে জানিয়েছে জনের পছন্দের মতোই কিছু জন পাবে যদি তার ফ্রেন্ডের একটা কাজ করে দেয়। জন রাজি হয়েছে। এখন সে হোটেলে যাচ্ছে গাড়ি ভাড়া করে। তার বন্ধুর সাথে দেখা করবার সময় এখনো হয়নি।
মাফিয়া হিসেবে কুখ্যাত নাম জনাথন মুলার বিদেশি একজন মাফিয়া। যতো খারাপ কাজ আছে সে সব করে। টাকার জন্য মাফিয়া লাইফের একটা সময়ে নিজের বৌ ও মেয়েকে বেঁচে দিয়েছে বলেও শোনা গেছে তার সম্পর্কে। এতোটাই জঘন্য সে। কিন্তু বাংলাদেশে কেন এলো সে?? কোন বিপদের সতর্কবার্তা নিয়ে?? নাকি সম্পূর্ন নিজের স্বার্থের জন্য??

রুহি বসে আছে ছাদে। ফোনে তাহজিবের কিছু ছবি দেখছে সে মন দিয়ে। তাহজিবকে নিয়ে চিন্তা করবে না ভেবেও চিন্তা হচ্ছে তার খুব। নিজেকে কড়া কিছু কথা শুনিয়ে গান ছেড়ে দিলো। তখনই কল এলো আসিফের। এতো রাতে আসিফের কল দেখে বুক কেঁপে উঠলো রুহির। কাঁপা কাঁপা হাতে কলটা রিসিভ করে কানে লাগিয়ে নিলো রুহি,,
– হ্যালো!!
– কি হয়েছে বোন?? তোর স্বর এমন শোনাচ্ছে কেন??
– সব ঠিক আছে ভাইয়া?? এতো রাতে কল করেছো??
– সব ঠিক আছে। কেন এতো চিন্তা করিস বল তো?? আচ্ছা শুন,, আমি পরিচিত একজনের সাথে সব কথা বলে নিয়েছি। সব কিছু রেডি হতে নাকি ৭ দিন লাগবে। আরো দেরি হয়,, তবে মেডিকেল ইমার্জেন্সি দেখিয়েছি। তাই ৭ দিন পরেই আমরা চলে যেতে পারবো।
রুহি চুপ করে রইলো। চলে যেতে হবে ভাবলেই তার বুক চাপ খাচ্ছে। তাহজিব আর ইনায়াত ভালো থাকবে বলে নিজেকে বুঝ দিয়ে আঘাত করছে রুহি বারবার।

– তুমি খেয়েছো?? উনি ঘুমিয়েছেন??
আসিফ চুপ হয়ে গেলো। তাহজিবের রুমে উঁকি সে মেরে এসেছে। তাহজিব যে বাচ্চাদের মতো আঙ্গুল গুণছে ঘুম আসবার জন্য। তা রুহিকে বলতে চায় না সে। রুহিকে বিদেশ নিতেই হবে। কেননা একেবারে দূরে না গেলে তাহজিব রুহির মূল্য বুঝবে না। আসিফ গলা পরিষ্কার করে বললো,,
– হ্যাঁ,, নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। তুইও খেয়ে ঘুমা বোন। বাই
আসিফ দ্রুত ফোন কেটে দিলো। নাহয় রুহি আরো একটা প্রশ্ন করে ফাঁসিয়ে দিতো তাকে। আর ফোনের এই প্রান্তে রুহি অবাক হলো। তাহজিব ঘুমাচ্ছে বিষয়টা শুনে মনে তার নিষিদ্ধ ইচ্ছে ডানা ঝাঁপটাচ্ছে বারবার।
– সে তো ঘুম। একবার দেখে আসবো??
নিজের সাথে যুদ্ধ করবার পর রুহি উঠে দাঁড়ালো। সে তাহজিবের বাসায় যাবে।

তাহজিব বিরক্তি নিয়ে চোখ বন্ধ করে পড়েছিলো খাটে। বুকের উপর ভারী কিছুর অস্তিত্ব নেই বলেই যে তার বিরক্ত লাগছে তা রাতের এই ১২ টায় সে বুঝতে পেরেছে। তাই ঘুমের আশায় চোখ বন্ধ করে মূর্তীর মতো পরে রইলো নিশ্চুপ। তখনই ব্যালকনিতে ধুপ করে আওয়াজ হলো। এই আওয়াজটা শুনে বুকে ধাক্কা লাগলো তাহজিবের। এই আওয়াজটা খুব করে চেনা তার। তাহজিব নড়লো না। সেভাবেই পড়ে রইলো। রুহি পা চিপে চিপে রুমের ভিতরে এসে দেখলো তাহজিব শুয়ে আছে। রুহির মুখে হাসি ফুঁটলো। টানা দশটা দিন এই মানুষটার আশপাশ জুড়ে থেকেছে সে। আজ কতো কষ্টে যে নিজেকে আটকেছে তাহজিবের কাছে আসা থেকে তা নিজেই জানে। রুহি ধীর পায়ে এগিয়ে এলো তাহজিবের কাছে। বিছানায় বসেই তাহজিবের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।

– প্রকৃতির নিয়মগুলো এমনই হয়। তুমি ইনায়াত আপুকে ভালোবাসে,, অথচ সে পাগলী আপু বুঝছে না। আর আমি তোমাকে ভালোবাসি। অথচ তুমিও তা বুঝছো না।
ফিসফিসিয়ে বললো রুহি তাহজিবের দিকে তাকিয়ে। তাহজিবের বুকে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো রুহি নিঃশব্দে।
– ভালোবাসি তোমাকে অনেক। আল্লাহ করুক!! আমি যেন না ফিরি সুস্থ হয়ে বিদেশ থেকে। তুমি ছাড়া জীবনের থেকে মৃত্যু অনেক ভালো।
তাহজিবের বুক কেঁপে উঠলো অজানা আশংকায়। সত্যিই কি ফিরবে না এই মেয়েটা?? তাহজিব ঘুমের ভাণ করেই শক্ত করে রুহিকে জড়িয়ে নিলো নিজের সাথে। রুহি চুপ করে পড়ে রইলো সেভাবেই তাহজিবের বুকে।
– নাটক কেন করলে ঘুমানোর??

বেশ অনেকটা সময় পর রুহি প্রশ্ন করলো। তাহজিব রুহিকে নিজের সাথেই জড়িয়ে রাখলো।
– আমি ভালো মানুষ না রুহি। একটা মেয়ে হয়ে আমার রুমে পড়ে থাকতে মন কাঁপে না তোমার?? তুমি তো বাচ্চা না।
রুহি মাথা তুলে চোখ বন্ধ করে রাখা তাহজিবের দিকে তাকালো। তাহজিব চিৎ হয়ে শুয়ে রুহিকে নিজের বুকের সাথে ধরে আছে। রুহি মৃদু হেসে তাহজিবের কপালে চুমু খেয়ে উঠে যেতে চাইছিলো। কিন্তু তাহজিব চোখ না খুলেই হাত ধরে আটকে দিলো।
– আমি যদি বলি,, আমি তোমাকে এখনো ভালোবাসি না। তাহলে কি তুমি চলে যাবে রুহি?? আমি যদি বলি তোমাকে চিরজীবনের জন্য আটকাতে চাইনা,,, শুধু আর কটাদিন রাতগুলো আমার বুকেই কাটাও। তাহলে কি থাকবে না তুমি??

তাহজিবের মুখে এই কথা শুনে বিষ্ময় নিয়ে ফিরে তাকালো রুহি। তাহজিবের মুখে এটুকুও তো সে কখনো আশা করেনি। হোক সে কিছুদিনের অতিথি,, তবুও তাহজিব তো তাকে মনের দ্বার খুলে ডেকেছে। রুহি নিঃশব্দে আবারও এসে শুয়ে পড়লো তাহজিবের বুকের উপর। তাহজিবের চোখ এখনো খুললো না। তবে মুখে ফুঁটলো হাসি।
– প্রশ্ন করেছো আমি ভয় পাইনা কেন এক ছেলের ঘরে থাকতে। উত্তর এটুকুই দেবো যে,,, তুমি আমাকে কিছুই করতে পারবে না। আর যদি কখনো আমায় তুমি নিজের অজান্তেও স্পর্শ করো। তাহলে তা হবে আমার কাছে তোমার অজান্তেই তোমার দেওয়া বিশেষ এক উপহার। আমি ধরে নেবো তোমার ঐ স্পর্শও আল্লাহর মর্জি ছিলো।

তাহজিব চোখ খুলে ফেললো। এতো কেন ভালোবাসে মেয়েটা তাকে?? ভাবতে ভাবতেই রুহিকে আরেকটু খানি নিজের সাথে জড়িয়ে গায়ে কম্বল টেনে নিলো তাহজিব। এখন তার ঘুম নির্দ্বিধায় ভালো হবে।
তাহজিব আর আফিম এতো গাধা কেন ভাই?? ভালোবাসা বুঝতে আর ভালোবাসতে এতো টাইম লাগে কেন?? লেখিকা হয়েই আমি রেগে যাচ্ছি। পাঠক / পাঠিকাদের কি অবস্থা??

আজকের সকালটা খুব সুন্দর আফিমের কাছে। খুব সকালে সে ঘুম থেকে উঠে আজকে নামাজ পড়েছে। কেন পড়েছে তা জানা নেই আফিমের। কিন্তু অনেকদিন পর পড়েছে। শুধু তাই না,, মোনাজাতে পরিবারের সুস্থতা ছাড়াও ইনায়াতের সুস্থতা কামনা করেছে সে। এও চেয়েছে যেন ইনায়াতকে সে না পেলেও ইনায়াত যেভাবেই থাকুক,, খুশী থাকুক। এটাই কি তাহলে ভালোবাসা?? যা এতোদিন আফিমকে মানসিক অত্যাচার করেছে বুঝতে না পারার শাস্তি স্বরুপ?? আর সেই জন্যই কি এই ভালোবাসা কিছুটা বিশুদ্ধ হয়েছে আফিমের অজান্তেই?? আফিম কালকের সিদ্ধান্তে অটল। সে যেভাবেই হোক আজকে থেকে ইনায়াতের মন জয়ের কাজ শুরু করবে। ইনায়াতকে নিজের ভালোবাসা বুঝাবে। প্রয়োজনে সরাসরি ইনায়াতকে ভালোবাসা নিবেদন করে কয়েকদিনের সময় দেবে তাকে বুঝতে। তবে আফিম একটা জিনিস ভালোই জানে। এই মেয়ে যাদু জানে,, যাদুকরী ইনায়াত। নাহয় আফিমের কেন এই কয়েকদিনে একটু মদের নেশা হলো না?? কেন কোন মেয়ের প্রতি আকর্ষন জন্মালো না?? কেনই বা সে আজ নামজ পড়লো?? এতো কেন যুক্ত প্রশ্নের কোন উত্তর নেই আফিমের কাছে। তবে উত্তর নেই বলেই যেন স্বস্তিবোধ করছে আফিম। ” মিশন ভালোবাসা ” শুরু হতে চলেছে আজ থেকে।

আফরাও আজকে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেছে। আজ থেকে সে আর ভাববে না স্পন্দন আজাদকে নিয়ে। শুধু কিছু সেকেন্ডের জন্যই তো সামনাসামনি দেখেছে সে স্পন্দনকে। এর মধ্যেই ভালোবাসা হয়ে গেলো?? না বলে নিজেকে বুঝ দিতে চাইলেও সম্ভব না আফরার পক্ষে। কারণ সে তো জানে!! ভালোবাসা যেকোন সময়,, যেকোন ভাবে,, যেকোন কারোর জন্য সৃষ্টি হয়। কিন্তু আর না!! এখন সম্পূর্ন নজর সে নিজের দিকে দেবে। অনেকদিন জগিং করা হয়না তার। তাই আজ আফিরা জগিংয়ে বের হয়েছে।
এই একই ভোর এসেছে তাহজিব আর রুহির জন্যও। তাহজিবের ঘুম আজকে নিজের অজান্তেই ভেঙ্গে গেছে নামাজের আগে। নিজের সাথে লেপ্টে থাকা রুহিকে একপলক দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো তাহজিব৷ পরক্ষনেই মাথায় এলো সে ভুল করছে না তো মেয়েটার সাথে?? স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছে না সে?? ইনায়াত নেই বলে আপাততর জন্য রুহিকে কাছে টেনে নিচ্ছে না তো তাহজিব?? এতোগুলো কেন প্রশ্নের উত্তর দিতে না পেরে হতাশ হলো তাহজিব। চোখ বন্ধ রেখে ঘুমের ভাণ ধরে পড়ে থেকেই দেখলো রুহির ঘুম থেকে উঠে যাওয়া,, নামাজ পড়া,, ঘর গুছানো,, ঘর গুছাতে গুছাতে তাহজিবের কাজকর্ম নিয়ে বিরক্ত হওয়া। আধ খোলা,, আধ বোজা চোখে এমন দৃশ্য উপভোগ করছে তাহজিব অনেক।

স্পন্দনও আজ ভোরবেলায় উঠে গেছে। আজকে সে ইনায়াতকে বলে দেবে নিজের আসল সত্য। আর নাহয় আফরাকে বলে দেবে ভালো লাগার কথা। কিন্তু দি এস.এ’র আজ খুব নার্ভাস লাগছে। আফরাকে তার এক পাক্ষিকই ভালো লাগে। আফরারও কি না চাইতেও তার কথা মনে পড়ে খুব করে??

অফিসে এসে আফিম অন্যদিনের মতো সবার সাথে গম্ভীর মুখে মাথা নাড়িয়ে কুশল বিনিময় করলো না। সবার সাথে হাত মিলিয়ে এই সুন্দর সকালের শুভেচ্ছা জানালো। আফিমের এক হাতে পুরো একটা লাল ফুলের ব্যুকে দেখে সবাই অবাক হচ্ছে। আর আফিমের মন মেজাজও সবাইকে অবাক করছে। আফিমের রুমে বসেই কিছু ফাইল চেক করছিলো ইনায়াত। তখনই গুনগুন করতে করতে আফিম রুমের ভেতর এলো। ইনায়াত কাজের ফাঁকেই দেখলো আফিমকে প্রবেশ করতে। আফিমকে দেখেই মুখ হা হয়ে গেলো ইনায়াতের। আরো অবাক হলো তখন যখন আফিম ইনায়াতের সামনে দাঁড়িয়ে ইনায়াতের দিকে ব্যুকে এগিয়ে দিলো।
– গুড মর্নিং ইনায়াত!! এই সকালটা তোমার মতোই সুন্দর।
ইনায়াত হা করে তাকিয়েই রইলো আফিমের দিকে। কিছু একটা যেন খাপছাড়া। ইনায়াতকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে আফিম মৃদু হেসে ইনায়াতের গাল টেনে দিলো। এরপর নিজের চেয়ারে বসে পড়লো ধুপ করে। ইনায়াত তখনও হা করে তাকিয়ে আছে আফিমের দিকে।

– ইনায়াত!! কাম হেয়ার!!
ইনায়াত যন্ত্রমানবীর মতো মালিকের আদেশ পূরণ করতে পা এগিয়ে নিলো আফিমের কাছে। আফিমের কিছুটা কাছে থাকতেই আফিম ইনায়াতের হাতে একটান দিয়ে নিজের কোলে বসিয়ে দিয়ে ঘুরতে লাগলো ধীরে ধীরে। ইনায়াতের কোমড় নিজের দুই হাত দিয়ে চেপে ধরা আর ইনায়াতের কাঁধে নিজের থুতনি রাখা আফিমের। ইনায়াত প্রথম ভালো বাচ্চার মতো সেভাবেই বসে রইলো কিছুক্ষন। পরক্ষনেই যখন নিজের অবস্থান বুঝতে পারলো৷ তখনই সড়ে আসবার জন্য ছুটাছুটি শুরু করলো। আফিম ইনায়াতের এমন ছুটাছুটি দেখে হাসলো হালকা শব্দ করে। আফিমের সবটা নিঃশ্বাস ইনায়াতের ঘাড়ে পড়ে মূহুর্তের জন্য যেন জমিয়ে দিলো ইনায়াতকে। ইনায়াত আফিমের হাতের উপর হাত চেপেই বসে রইলো আফিমের কোলে। আফিম ইনায়াতের পিঠে নিজের মাথা এলিয়ে দিলো।
– হেই ইনায়াত!! তুমি অনেক সুন্দর। তোমার মুখের জন্য না। তুমি সুন্দর কারণ তুমি আমার মনে ফিট হয়ে গেছো। ভাগ্যিস তুমি মেয়ে হলে। নাহয় আমি মিস্টার ইনায়াতের প্রতি ফিলিংস জমাতাম আর গে হিসেবে পরিচিত হতাম। ইউ আর কিউট ইনায়াত!!খুব কিউট।
আফিমের সবকথাগুলো যেন মাথার উপর দিয়ে গেলো ইনায়াতের। মুখের হা করা জায়গা আরো হা হলো। আফিম তৎক্ষনাৎ ইনায়াতকে ছেড়ে দিয়ে বললো,,

– উফফফ ইনায়াত!! এখনের জন্য এতোটুকুই আদর যথেষ্ট। সারাদিন আদর আদর করলে কাজ করবে কে??
সিরিয়াস মুড নিয়ে ফাইল ঘাটতে ঘাটতে বললো আফিম। ইনায়াত ভাবছে আজকে তার ” হা দিবস “। হা করে বিষ্ময় ভাব গিলে নিচ্ছে,,, আফিমের পাগলামো গিলে নিচ্ছে,,, হাওয়া বাতাস গিলে নিচ্ছে। তাই আজকে ইনায়াতের ” হা দিবস “।
– এখন আর আদর না ইনায়াত। আমার জন্য কফি আনো!!
ইনায়াত মাথা চুলকে নিজের দিকে একটা আঙ্গুল তাক করে বললো,,
– আমি আদর খুঁজেছি??

আফিম মাথা তুলে ইনায়াতের দিকে একবার তাকালো। ইনায়াতের এমন কনফিউজিং মুখ দেখে খুব হাসি পাচ্ছে আফিমের। তবুও আফিম হাসি চেপে ভ্রু নাচিয়ে সিরিয়াস ভাবে বললো,,
– তো ইনায়াত এখানে কে কে আছে?? তুমিই তো আছো মিসেস ইনায়াত আফিম আহসান। তাই না??
ইনায়াত মাথা নাড়িয়ে একবার হ্যাঁ জানালো। আবারও মাথা নাড়িয়ে না জানালো। আবারও হ্যাঁ জানালো। এরপরে ভাবনার দেশে হালকা ঘুরতে চলে গেলো দাঁড়িয়ে থেকেই।
– আমি আদর খুঁজেছি?? স্যারের কাছে?? মিসেস ইনায়াত আফিম আহসান?? আমি??
বিড়বিড়িয়ে এসব বলতে বলতে এগিয়ে গেলো কফি মেকারের দিকে। আফিম বাঁকা হেসে ফাইল চোখের সামনে ধরে ইনায়াতকে দেখতে লাগলো।
– এটা তো শুরু হিসেবেও ধরো না মিসেস আহসান। কেননা পাগলামী এখনো শুরু করিনি আমি। আগামী ৭ দিনেই তোমাকে নিজের করে নেবো আমি।

রুহি চলে গেলো নিজের বাসায়। তাহজিব ঘুমানোর নাটক করেই পরে রইলো। কেননা রুহিকে আটকাতে ইচ্ছে করছিলো তার। কিন্তু রুহিকে আটকানোর মতো মুখ নেই তার। রুহি বের হওয়ার কিছু সময় পর তাহজিব উঠে বসলো। দ্রুত ফ্রেশ হয়ে এসে বেডসাইড টেবিলে রুহির বানানো এখনো গরম কফিটা হাতে তুলে নিয়ে এক চুমুক দিলো।
– আর শুধু ৭ দিন,, এরপর রুহি বিদেশে চলে যাবে।
নিজেকেই নিজে শুনিয়ে বললো কথাটা।

স্পন্দন একটা ছোটখাটো ফুলের ব্যুকে নিয়ে বসে আছে গাড়ির ভেতর। গাড়ি পার্ক করা আছে আফরার ভার্সিটির সামনে। স্পন্দন জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে আর ছাড়ছে। তখনই কামাল এসে বললো,,
– স্যার!! ভাবী বের হয়েছে। ক্যান্টিনে যাচ্ছে।
স্পন্দন আবারও শ্বাস নিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখলো কিছু সেকেন্ড। এরপর নেমে আসলো গাড়ি থেকে। ভার্সিটির মাটিতে পা রাখার কিছু সেকেন্ডের মধ্যেই হৈ হৈ রৈ রৈ ব্যাপার শুরু হলো।
– কামাল??

বিরক্ত হয়ে ডাক ছাড়লো স্পন্দন। কামাল দ্রুত ইশারা করলো বডিগার্ডসদের। গার্ডরা এসে ঘিরে দাঁড়ালো স্পন্দনকে। মেয়েরা রীতিমতো পাগলামো শুরু করেছে একবার স্পন্দনকে ছুঁয়ে দিতে। কিন্তু গার্ডসদের জন্য হচ্ছে না। আফরা ক্যান্টিনের দিকে যাচ্ছিলো। তখনই স্পন্দনের দিকে চোখ পড়লো আফরার। হা হয়ে তাকিয়ে রইলো স্পন্দনের দিকে। নীল শার্ট ইন করে পড়া,,, ব্ল্যাক ডেনিম প্যান্ট,, হাতে বড় ডায়ালের ঘড়ি,,, চুলগুলো কিছুটা এলোমেলো হয়ে আছে বলেই যেন অসাধারণ লাগছে স্পন্দনকে। এই হা করে তাকিয়ে থাকার মাঝে কখন যে স্পন্দন একদম কাছে চলে এসেছে আফরার তা আফরা বুঝতেও পারেনি। হঠাৎ স্পন্দন ফুঁ দিলো আফরার মুখে। আফরা ঝট করে চোখ বন্ধ করে ফেললো। স্পন্দন এতোক্ষন দেখছিলো আফরা কিভাবে হা হয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। আফরার কোন রিয়েকশন না পেয়ে ফুঁ দিতেই আফরা চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে রইলো।

– আ,,আ,,আপনি??
– জ্বী,, আ,,আ,,আমি ম্যাম।
আফরা ঘাড় ঘুড়িয়ে একবার সবার দিকে তাকালো। সুন্দরী আফরার কাছেই স্পন্দনকে থামতে দেখে ছেলেরা আহত। আর মেয়েরা স্পন্দনের সাথে এই মেয়েকে সহ্য করতে রাজি না। দুই ছেলে ও মেয়ে সকলেই ভ্যাম্পায়ারের মতো চোখ করে তাকিয়ে আছে আফরার দিকে। আফরা শুকনো এক ঢোক গিলে বললো,,
– কিছু বলবেন??
– লাভ ইউ!!
আফরার ঠিক কানের কাছে,, বিশাল জায়গা জুড়ে মাঠে,, ঠিক মাঝখানে বজ্রপাত হলো। আফরা হা করে তাকিয়ে রইলো স্পন্দনের দিকে।
– কি??

বোকার মতো প্রশ্নও করে বসলো আফরা। স্পন্দন জানতো এমন কিছুই হবে। নিজের হাঁটুর ভরে মেঝেতে বসে হাতে থাকা ফুলের ব্যুকে উঁচিয়ে আফরার কাছে দিয়ে বললো,,
– ম্যারি মি আফরা,,, আমার হয়ে যাও।
এই ছোট্ট বাক্যের কথাটা বিশ্বাস হতে চাইছে না আফরার। নিজের হাত দুটো পিছনে নিয়ে,, নিজেরই ধারালো নখ দিয়ে আঁচড় কাটলো আফরা। ব্যাথা অনুভব করবার পর জ্বালা অনুভব করতেই জল টলমল চোখে তাকিয়ে রইলো স্পন্দনের দিকে। বিষ্ময় ভাব কাটছে না এখনো।
– আপনার স,,স্ত,,স্ত্রী??
তুতলিয়ে জানতে চাইলো আফরা। স্পন্দনের ভ্রু কুঁচকে এলো। মেয়েটা এতো গাধা আন্দাজ করতে পারেনি সে। স্পন্দন বিরক্তি নিয়েই উঠে দাঁড়ালো। তাচ্ছিল্য ভরে হাসলো আফরা। সে ভেবেছিলো স্পন্দন বিবাহিত। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সত্যিই বিবাহিত সে। নিউজটা মিথ্যা ছিলো না।

স্পন্দন আফরার বিষয়টা বুঝতে পেরে আফরার দিকে পিঠ দিয়ে ভীরের দিকে মুখ করে দাঁড়ালো।
– হেই গার্লস!! তোমরা বলো,,, আমি কি সিংগেল নাকি ম্যারিড??
সব মেয়েরা ” সিংগেল ” বলে চিৎকার করে উঠলো। স্পন্দন আফরার দিকে তাকাতেই দেখলো আফরা ভীরের দিকে তাকিয়ে আছে। আফরা কোনমতে চোখের জল চেঁপে স্পন্দনের দিকে তাকিয়ে বললো,,
– আর ঐ নিউজ??

– তোমাকে বাঁচিয়েছে দি স্পন্দন আজাদ মাঝরাস্তায়। মানুষ নিউজ করার সুযোগ ছাড়তে চায়নি।
স্পন্দন দাঁতে দাঁত ঘষে রাগ নিয়ে কথাটা বলেই হাঁটা শুরু করলো গাড়ির উদ্দেশ্যে। শুধু শুধু আগপিছ না ভেবে ইজ্জতের ফালুদা করে নিজেকেই নিজে গালাগাল দিচ্ছে স্পন্দন। আফরার চোখে জল। সে কতোটা গাধা তা সে আজকেই জেনেছে। স্পন্দনকে চলে যেতে দেখে বুক কেঁপে উঠলো আফরার। কল্পনায় কমবার এই মানুষকে তো চায়নি সে,,, প্রতিবার নতুন স্বপ্ন বেঁধেছে এই মানুষকে নিয়ে। এখন কি তাহলে স্পন্দন দূর হয়ে যাবে তার থেকে কাছে এসেও?? ভীরের থেকে মেয়েরা স্পন্দনকে রিজেক্ট করেছে বলে গালাগাল করছে আফরাকে। আর কেও কেও স্পন্দনকে ভালোবাসার জানান দিচ্ছে। স্পন্দন সবে গাড়ির কাছে পৌছেছে তখনই এক দৌড়ে আফরা স্পন্দনকে গিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। চিৎকার করে বললো,,
– আই লাভ ইউ মিস্টার স্পন্দন!! আই লাভ ইউ!!
স্পন্দন অবাক হলো। এই মেয়েকে কম সময় কল্পনা করেনি সে রাতে নিজের মিষ্টি স্বপ্নগুলোতে। এতো মানুষের সামনে এতোটা জোড় গলায় যে এই মেয়েটা ভালোবাসার জানান দেবে তা ভাবেনি স্পন্দন।

চোখ বন্ধ করে এতোক্ষন মাঠের মাঝে দাঁড়িয়েই কল্পনা করছিলো স্পন্দন সবটা। ভীর ভাট্টা সব একই আছে। কিন্তু আফরা এখনো দূরে দাঁড়িয়ে। স্পন্দনের দিকে মলিন মুখে দেখে আছে। বুক কেঁপে উঠলো স্পন্দনের। আফরার রিজেক্ট করতে পারার কথা ভাবেইনি সে। না!! রিস্ক নেওয়া যাবে না। স্পন্দন কোন প্রকার ভণিতা ছাড়াই কামালের দিকে ইশারা করে কাছে ডাকলো। কামাল এগিয়ে গেলো। কামালের কানে কানে কিছু একটা বললো স্পন্দন। কামাল দ্রুত দৌরে গেলো ভার্সিটির ভিতর। আফরা শেষ একবার স্পন্দনকে দেখে নিজেকে শাসিয়ে নিলো। তারপর অন্যদিকে পা বাড়ালো। তখনই কানে ভেসে এলো স্পন্দনের স্বর।
– হ্যালো গাইজ!! আজকে আমি অনেক খুশী। কেননা আজকে আমি আমার কুইনকে বলতে এসেছি ভালোবাসার কথা।
আফরার পা দুটো জমে গেলো। স্পন্দনের ভাগ্যবতী স্ত্রী যে এই ভার্সিটিতেই পড়ে তা জানা ছিলো না তার। চোখের কার্নিশে জমলো জল।

– মেয়েটাকে আমি দেখেছি শুধু কিছু সেকেন্ডের জন্য। রাস্তায় এক্সিডেন্ট হওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়েছি আমি।
আফরা হা হয়ে গেলো। তাকেও তো স্পন্দন বাঁচিয়েছে এক্সিডেন্ট থেকে। আফরা ফিরে তাকালো স্পন্দনের দিকে। স্পন্দন আফরার দিকে পিঠ দিয়ে কথা বলছে ভীরের দিকে তাকিয়ে।
– এরপর কেটে গেছে অনেক অনেক দিন। অথচ মেয়েটাকে আমি ভুলিনি। মেয়েটার জন্য খোঁজ খবর নিয়েছি। মেয়েটাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছি,, কল্পনা সাজিয়েছি। এখন গাইজ তোমরা বলো,,, মেয়েটাকে কি জানিয়ে দেবো আমার এতো সব স্বপ্ন,, কল্পনার কথা?? ভালোবাসার কথা??

ভীর চিৎকার করে উঠলো ” হ্যাঁ ” শব্দে। আফরার মুখে হাসি,, চোখে জল। লজ্জায় মাথা নিচু করে রেখেছে। বুক কাঁপছে কাঙ্ক্ষিত কিছু শুনবার আশায়। কিন্তু পরক্ষনেই মন বলছে ” পারবি তো শুনবার পর হ্যাঁ জানাতে,, উত্তর দিতে ভালোবাসার?? “।
– গাইজ,,, আমি জানি আমার স্বপ্নের পরী আমার সব শুনে হয়তো লজ্জায় লাল হচ্ছে। এতোগুলো দিনে আমরা কেও কারোর সাথে কথা বলিনি। তবে নীরবে একে অপরের সোশ্যাল প্রোফাইল ঘেটে ছবি দেখেছি। এতোদিন আমরা কেও কাওকে সামনে থেকে দেখিনি আর দ্বিতীয়বার। অথচ কল্পনা করেছি একদম কাছ থেকে। মাই কুইন,, মাই লাভ,,, তোমার জন্য আজকে তোমার প্রিয় ফুলের ব্যুকে এনেছি। কবিতার কিছু লাইন বলে কিভাবে মন জয় করে নিতে হয় আমার জানা নেই। শুধু জানি ভালোবেসে ফেলেছি তোমাকে। অনেকটা ভালোবাসি তোমাকে। তুমি কি আমাকে একটা সুযোগ দেবে সকালে তোমার মিষ্টি মুখ দেখে ঘুম থেকে জেগে উঠবার?? তোমার ছোট বড় সব আবদার পূরন করবার?? তোমার নামের সাথে আমার নাম মিশিয়ে নেবার?? ভালোবাসি আফরা আহসান,,, তুমি কি আমার শুধুমাত্রই আমার হবে??

ছদ্মবেশে লুকানো ভালোবাসা পর্ব ১৪+১৫

আফরা হেসে ফেললো মুখ চেপে। সবাই হাত তালি দিয়ে উঠলো। আফরার ক্লাসমেট সবাই আফরাকে আগিয়ে যেতে বললো স্পন্দনের দিকে। আফরা চোখের জল মুছে একদৌড়ে ছুটে এসে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো স্পন্দনকে। স্পন্দনের চিন্তিত মুখে ফুঁটে উঠলো হাসি। সবাই হাত তালি দিয়ে উঠলো। স্পন্দন আফরার হাত টেনে সামনে আনলো। আফরার হাতে নিজের ফুলের ব্যুকে তুলে দিয়ে আফরার কানে ফিসফিসিয়ে বললো,,
– ভালোবাসি আফরা,,, প্লিজ আমার মিসেস আহসান হয়ে যাও।

আফরা লজ্জায় মাথা নামিয়ে স্পন্দনের বুকে মুখ লুকালো। সবটা যেন স্বপ্ন মনে হচ্ছে তার কাছে। এতোদিন কল্পনায় যেমন স্বর,, ব্যবহার,, ভাষার ধরন,, ঠিক যেমনিটা কল্পনা করেছিলো আফরা স্পন্দনকে। আজকে তার সবটাই তেমনই ছিলো। এখন তো আফরার মনে হচ্ছে ওটা কল্পনা ছিলো না। মনের সাথে মনের অদ্ভুত এক সম্পর্ক ছিলো। কল্পনার ছদ্মবেশে লুকানো ভালোবাসা ছিলো।
আফরা আর স্পন্দন সেট হয়ে গেলো। এখন বাকি (তাহজিব + রুহি) এবং ( আফিম + ইনায়াত)। ওরাও হয়ে যাবে। কিন্তু আমি আপনাদের একটা কথা বুঝলাম না। রুহিকে তাহজিবের সাথে মেনে নিতে পারছেন না কারণ তাহজিব রুহিকে নয় ইনায়াতকে ভালোবাসে। আবার ইনায়াতকে তাহজিবের সাথে চাইছেন যার মনে তাহজিবের জন্য কিছুই নেই। এটা কেমন সমীকরণ?? যাই হোক!! পাশে থাকবেন,, ভালো থাকবেন। আজকে থেকে আর টানা দুই তিনদিন পর্যন্ত সকালে একটা আর রাতে একটা পার্ট দিবো গল্পের। যেহেতু শেষের পথে,, সেহেতু বোনাস পার্ট।

ছদ্মবেশে লুকানো ভালোবাসা পর্ব ১৮+১৯